মগমপুর মাহিন্দ রাজাপক্ষে বন্দর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
হাম্বানটোটা বন্দর
হাম্বানটোটা বন্দরে দুটি জাহাজ
মানচিত্র
অবস্থান
দেশ শ্রীলঙ্কা
অবস্থানহাম্বানটোটা
বিস্তারিত
চালু১৮ নভেম্বর ২০১০
মালিকশ্রীলঙ্কা সরকার
উপলব্ধ নোঙরের স্থান

মগমপুর মাহিন্দা রাজাপক্ষে বন্দর বা হাম্বানটোটা বন্দর হল দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার একটি সমুদ্র বন্দর। হাম্বানটোটা বন্দরটি শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় বৃহত্ত সমুদ্র বন্দর। বন্দরটি পৃথিবীর সর্ব্বোচ ব্যস্ত পূর্ব-পশ্চিম জাহাজ পথ থেকে মাত্র ৬ নটিকাল মাইল বা ১৯ কিলোমিটার দূরে। বন্দরটি শ্রীলঙ্কা দ্বীপের দক্ষিণ অংশের উপকূলে গরে উঠেছে। বন্দরটি নির্মাণে অর্থ ও প্রযুক্তি গত সহায়তা দিয়েছে চীন। এই বন্দরের নির্মাণের ৮৫% অর্থ চীন এর 'ইএক্স-ইম ব্যাঙ্ক' দিয়েছে। [১] এই বন্দরটি নির্মাণ করে ছে চীনের চীনা হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। বন্দরটি প্রথম ধাপ নির্মাণে মোট খরচ হয়ে ৩৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বন্দরটি নির্মাণের ফলে দেশের দক্ষিণ অংশের উন্নয়ন ও বিকাশে গতি বৃদ্বি পাচ্ছে। বন্দরটি কর্মসংস্তানে প্রচুর সম্ভবনা সৃষ্টি করেছে। বন্দরটি পরিচালনা করে হাম্বানটোটা বন্দর কর্তিপক্ষ। হাম্বানটোটা বন্দরটি ২০১০ সালের ১৮ ই নভেম্বর উদ্বোধন করা হয়। বন্দরটির পরিসেবা প্রথম গ্রহণ করে "জেটলাইনার" নামে একটি জাহাজ। বর্তমানে বন্দরটি দক্ষিণ এশিয়ার একটি প্রথম সারির বন্দর। সাবেক রাষ্ট্রপতি মাহিন্দা রাজাপক্ষে এর নামে এই বন্দরের নামকরণ করা হয়। [২][৩]

জানুয়ারী ২০০৮ সালে বন্দর নির্মাণ শুরু হয়। কলম্বো বন্দরের পর এটি শ্রীলঙ্কার বৃহত্তম বন্দর। হাম্বানটোটা বন্দর পূর্ব-পশ্চিমা জাহাজ পথের কাছেই অবস্থিত। এই জাহাজ পথ থেকে হাম্বানটোটার বন্দরে ভিরতে দক্ষিণে ৬ থেকে ১০ নটিক্যাল মাইল (১৯ কিমি) অতিক্রম করতে হবে। বন্দর প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে বাম্পার, জাহাজ মেরামত, জাহাজ নির্মাণ এবং ক্রু পরিবর্তন সুবিধা প্রদান করা হবে। [৪] পরে পর্যায়গুলি প্রতি বছর ২০ মিলিয়ন TEUs পর্যন্ত পোর্টের কনটেইনার পরিবহন ক্ষমতা বাড়ানো হবে। এটি দাবি করা হয় বন্দর নির্মাণ সম্পন্ন হলে, এটি ২১ শতকের শেষভাগে জমির উপর নির্মিত সবচেয়ে বড় বন্দর হবে। [৫]

যাইহোক, ২০১২ সালে হাম্বানটোটা বন্দরটি ১১.৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে এবং $ ১.৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অপারেটিং মুনাফা রিপোর্টের জন্য প্রত্যক্ষ এবং প্রশাসনিক খরচ ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। [৬]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

বন্দরটি নির্মাণের কথা প্রথম বলা হয় ২০০২ সালে।কারণ সেই সময় শ্রীলঙ্কার একটি মাত্র বড় বন্দর কলম্ব বন্দর দেশের পণ্য দ্রব্য পরিবহন করত। ফলে বন্দরটির উপর চাপ বাড়ছিল। এই কারণে হাম্বানটোটায় বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এই বন্দরটি নির্মাণে এগিয়ে আসে চীন তাদের মুক্ত মালা প্রকল্প নিয়।এর পর চীনের সঙ্গে শ্রীলঙ্কা বন্দর নির্মাণের চুক্তি সম্পর্ন করে। ২০০৮ সালের ১৫ ই জানুয়ারি থেকে "হাম্বানটোটা বন্দর" বা "মাগামপুরা মহিন্দ্রা রাজিপাকশে বন্দর" নির্মাণ শুরু হয়। ২০১০ সালের মধ্যে বন্দরটির প্রথম ধাপের নির্মাণ সম্পর্ন হয়। এর ১৮ নভেম্বর ২০১০ সালে বন্দরটির উদ্বোধন করা হয়।

অবস্থান[সম্পাদনা]

বন্দরটি ৬.০৭ উত্তর ও ৮১.০৬ পূর্বে অবস্থিত। এটি সমুদ্র সমতল থেকে ৩ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। হাম্বানটোটা বন্দর দেশের দক্ষিণ অংশে দক্ষিণ সমুদ্র তীরে অবস্থিত। বন্দরটি পূর্ব পশ্চিম জাহাজ রুটের খুব কাছে অবস্থিত। এই পথে প্রতি বছরে ৩৬ হাজার (৩৬,০০০) জাহাজ ও ৪,৫০০ তেলের টেঙ্কার চলাচল করে। বন্দরটি কলম্ব বন্দর থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটির দূরে অবস্থিত। এই বন্দর থেকে ভারতের তুতিকোরিন বন্দর ৭০০ কিলোমিটার ও চেন্নাই বন্দর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বন্দরটি হাম্বানটোটা শহরের পাশেই অবস্থিত।

পরিকাঠাম[সম্পাদনা]

শ্রীলঙ্কা নৌবাহিনীর এসএলএনএস সাধুদুরা এবং ইউএসএনএস ফসল নদী (টি-ইপিএফ-৪) ২০১৭ সালে হাম্বানটটা বন্দরে।
হাম্বানটোটা বন্দরে জাহাজ

হাম্বানটোটা বন্দরে[৭] মোট ৩ টি জেটি রয়েছে।এর মধ্যে ৬০০ মিটার এর দুটি জেটি রয়েছে।এছাড়া ৩১০ মিটারের একটি জেটি রয়েছে। ১২০ মিটারের একটি জ্বালানি তেলের জেটি রয়েছে। .[৮][৯] এই জেটি থেকে জাহাজের জ্বালানি নেওয়া হয়।এছাড়া বন্দরটিতে জাহাজ মেরামত এর ব্যবস্থা রয়েছে।[৫]

হাম্বানটোটা পোর্ট টাওয়ার

বন্দরটি প্রবেশ পথের গভীরতা ২২ মিটার ফলে সহজেই সমুদ্রগামী বড় জাহাজ বা "মাদার ভেসেল" সহজেই বন্দরে প্রবেশ করে পারে। দ্বিতীয় ধাপ নির্মাণ সম্পন্ন হলে বন্দরটির সম্পূর্ণ অংশ ১৭ মিটারের বেশি গভীর হবে যা কলম্বো বন্দরের ১৫ মিটার গভীরতার থেকে বেশি। বন্দরটির প্রবেশ পথের মুখটি ৬০০ মিটার টার্নিং বা পাঁক যুক্ত। [৫] নিকটবর্তী এলাকায় বন্যা প্রতিরোধের জন্য একটি বাঁধ নির্মিত হবে, এবং কংক্রিট ব্লকগুলির মধ্যবর্তী একটি উচ্চ সমুদ্রদেয়াল বন্দরকে রক্ষা করবে। [১০]

বন্দরের বাইরে একটি ৫৫০ মিলিয়ন ডলার খরচে কর-মুক্ত বন্দর এলাকা স্থাপন করা হয়েছে। [১১] ২০১৬ সালে একটি ১৫,০০০ একর এসইজেড প্রকল্প হিসাব্রে হ্যামনটোটায় ৫,০০০ একর এবং মনারগাল, অম্বিলিপিতিয়া ও মাতরা থেকে বাকি অংশ ঘোষণা করা হয়। [১২]

প্রকল্প শেষে ৫০,০০০ এর বেশি মানুষ পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। [৫]

ভবিষ্যত সম্প্রসারণ[সম্পাদনা]

হাম্বানটোটা বন্দর প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়, যা বন্দরে একটি কন্টেইনার টার্মিনাল অন্তর্ভুক্ত করবে। নির্মাণ কাজটি ২০১৪ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বন্দরের দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রায় ৭৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। [১৩] তৃতীয় পর্যায়ে একটি ডকইয়ার্ড থাকবে। [১১] সমাপ্তির পর, বন্দরটি ৪,০০০ একর (১৬ বর্গ কিমি) ভূমি অন্তর্ভুক্ত করবে এবং যে কোনও সময়ে ৩৩ টি নৌযান নোঙর করতে পাড়বে। এটি দক্ষিণ এশিয়ায় বৃহত্তম বন্দর হবে। [৫]

পশ্চিৎভূমি[সম্পাদনা]

বন্দরটির পশ্চাৎভূমি হল শীলঙ্কার দক্ষিণ ও পূর্ব অংশ।

পোতাশ্রয়[সম্পাদনা]

বন্দরের পোতাশ্রয়টি ১৭ থেকে ২২ মিটার গভীর। এই বন্দরের পোতাশ্রয় প্রাকৃতিক। বন্দরটি একটি চ্যানেলের দ্বার সমুদ্রের সঙ্গে যুক্ত।

আমদানি রপ্তানি দ্রব্য[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Archived copy"। ২০১০-০৩-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৩-১০ 
  2. "Hambantota Port to be opened on President's birthday: Chamal"Daily Mirror। ২০১০-০২-১৭। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০১০ 
  3. B. Muralidhar Reddy (২০১০-১১-১৮)। "Hambantota port opened"The Hindu। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১১-২০ 
  4. "Hambantota to ease Colombo Port congestion"Daily News। ২০১০-০২-২২। ২০১০-০২-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০১০ 
  5. Sirimane, Shirajiv (২০১০-০২-২১)। "Hambantota port, gateway to world"The Sunday Observer। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০১০ 
  6. http://www.dailymirror.lk/article/Hambantota-Port-sale-in-perspective-122278.html
  7. "হাম্বানটোটা বন্দর ব্যাবহারে প্রস্তাব শ্রীলঙ্কা হাইকমিশনারের"কালেরকন্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ১৫ নভেম্বর ২০১৬ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  8. "Hambantota will 'ease' Colombo congestion"Portworld News। ২০১০-০২-২২। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০১০ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  9. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; 'so-gateway নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  10. "Hambantota project 'can spearhead' developments"Portworld News। ২০০৯-০৯-২২। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০১০ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  11. Ondaatjie, Anusha (২০১০-০৩-০৮)। "Sri Lanka to Seek Tenants for $550 Million Tax-Free Port Zone"Businessweek। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০১০ 
  12. "Special Economic Zone at Hambantota port :State will keep ownership of land: Malik" 
  13. "More ships to call at H'tota port"Sunday Observer। ২০১০-১১-২১। ২০১০-১১-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১১-২১ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]