মাইকেল এইচ. হার্ট
মাইকেল এইচ. হার্ট | |
---|---|
জন্ম | নিউ ইয়র্ক সিটি, যুক্তরাষ্ট্র | ২৭ এপ্রিল ১৯৩২
মাতৃশিক্ষায়তন |
|
পরিচিতির কারণ |
মাইকেল এইচ. হার্ট (জন্ম: ২৭ এপ্রিল ১৯৩২) একজন মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞানী, লেখক এবং শ্বেত জাতীয়তাবাদী। ১৯৭৮ সাল থেকে তিনি পাঁচটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে তার বহুল বিক্রীত গ্রন্থ, The 100: A Ranking of the Most Influential Persons in History।
ফার্মি প্যারাডক্স
[সম্পাদনা]১৯৭৫ সালে হার্ট ফার্মি প্যারাডক্স বিষয়ক একটি বিশদ গবেষণা প্রকাশ করেন:[১] তিনি এতে মহাবিশ্বে প্রাণের উপস্থিতির অত্যন্ত সম্ভাব্যতা এবং একইসাথে এর কোনও প্রমাণ না পাওয়ার বিষয়টির মধ্যে থাকা বৈপরীত্য তুলে ধরেন। হার্টের এই কাজ পরবর্তীকালে ফার্মি প্যারাডক্স নিয়ে গবেষণার একটি তাত্ত্বিক ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়, যেটি অনেক সময় ফার্মি-হার্ট প্যারাডক্স নামেও পরিচিত।[২]
হার্টের অবদানের বিষয়ে জিওফ্রে এ. ল্যান্ডিস লিখেছেন: "এই প্যারাডক্সটির আরও যথাযথ নাম হওয়া উচিত ‘ফার্মি-হার্ট প্যারাডক্স’, কারণ ফার্মি যদিও প্রথমে প্রশ্নটি তুলেছিলেন, হার্টই প্রথম এটিকে কঠোর বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে উপস্থাপন করেন এবং ফলাফল প্রকাশ করেন।"[৩]
রবার্ট এইচ. গ্রে হার্টকেই এই যুক্তির প্রকৃত প্রণেতা হিসেবে বিবেচনা করেন এবং উল্লেখ করেন যে এটি হার্টের ১৯৭৫ সালের প্রবন্ধে উপস্থাপিত হয়। গ্রে দাবি করেন, “ফার্মি প্যারাডক্স” নামটি বিভ্রান্তিকর; এটি মূলত ফার্মির কাজ নয়, এবং প্রকৃত অর্থে এটি কোনো প্যারাডক্সও নয়, বরং একটি যুক্তি।[৪]
তিনি প্রস্তাব করেন যে প্রচলিত (কিন্তু তার মতে ভুল) নামের পরিবর্তে, এই যুক্তির নাম হওয়া উচিত হার্ট-টিপলার যুক্তি—যেখানে হার্টকে প্রাথমিক প্রণেতা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং ফ্রাঙ্ক জে. টিপলার-এর ১৯৮০ সালের প্রবন্ধে তার যুক্তির উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণকেও এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[৫]
হার্ট ‘রেয়ার আর্থ’ অনুমান-এর পক্ষে যুক্তি দেন। জলবায়ু সংক্রান্ত গবেষণার ভিত্তিতে তিনি একটি অত্যন্ত সীমিত বাসযোগ্য অঞ্চলের কথা বলেন। তিনি এই অনুমানকে সমর্থন করেন তার সহ-সম্পাদিত প্রভাবশালী গ্রন্থ Extraterrestrials: Where are They?-তে।[৬] এই গ্রন্থে তাঁর লেখা অধ্যায় "Atmospheric Evolution, the Drake Equation and DNA: Sparse Life in an Infinite Universe"-এ তিনি বিষয়টি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।[৬]:২১৫–২২৫
মাইকেল এইচ. হার্ট-এর সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০
[সম্পাদনা]হার্টের প্রথম গ্রন্থ ছিল The 100: A Ranking of the Most Influential Persons in History (১৯৭৮), যা হাজারের বেশি কপি বিক্রি হয়েছে এবং বহু ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এই গ্রন্থে হার্ট ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ জন ব্যক্তির তালিকা তৈরি করেন। তার তালিকার শীর্ষে ছিলেন মুহাম্মদ, যিনি যীশু খ্রিষ্ট বা মূসার চেয়ে অগ্রাধিকার পান।[৭] হার্ট এই নির্বাচনকে ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে যে মুহাম্মদ ধর্মীয় ও ধর্মনিরপেক্ষ উভয় ক্ষেত্রেই "অসাধারণভাবে সফল" ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, ইসলামের বিকাশে মুহাম্মদের অবদান খ্রিষ্টধর্মের বিকাশে যীশুর অবদানের চেয়ে অনেক বেশি প্রভাবশালী। হার্টের মতে, পল প্রেরিত ছিলেন খ্রিষ্টধর্ম বিস্তারে যীশুর চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
শ্বেত জাতীয়তাবাদ
[সম্পাদনা]হার্ট নিজেকে একজন শ্বেত পৃথকতাবাদী হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং শ্বেত পৃথকতাবাদী কর্মকাণ্ডে সক্রিয় রয়েছেন।[৮]
১৯৯৬ সালে, তিনি জ্যারেড টেলর-এর শ্বেত পৃথকতাবাদী সংগঠন New Century Foundation আয়োজিত এক সম্মেলনে ভাষণ দেন। এই সংগঠন American Renaissance প্রকাশ করে। ওই সম্মেলনে হার্ট প্রস্তাব দেন যুক্তরাষ্ট্রকে চারটি রাষ্ট্রে বিভক্ত করার জন্য—একটি শ্বেতাঙ্গ রাষ্ট্র, একটি আফ্রিকান-আমেরিকান রাষ্ট্র, একটি হিস্পানিক রাষ্ট্র এবং একটি মিশ্রজাতি রাষ্ট্র।[৮]
২০০৬ সালের আমেরিকান রেনেসাঁস সম্মেলনে, হার্ট (যিনি একজন ইহুদি) সাবেক কু ক্লাক্স ক্ল্যান নেতা ও লুইজিয়ানা রাজ্যের সাবেক প্রতিনিধি ডেভিড ডিউক-এর সঙ্গে প্রকাশ্য বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। ডিউকের ইহুদি-বিদ্বেষমূলক মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে হার্ট তাকে "নাজি" বলে অভিহিত করেন এবং সভা থেকে বেরিয়ে যান। এই ঘটনার সময় কিছু অংশগ্রহণকারী তাকে বিদ্রূপ করে।[৯][১০][১১] এই ঘটনার পর হার্ট আমেরিকান রেনেসাঁস থেকে সরে দাঁড়ান।[৯]
২০০৯ সালে হার্ট বাল্টিমোরে একটি বর্ণবাদী[৯] সম্মেলন আয়োজন করেন, যার শিরোনাম ছিল Preserving Western Civilization। এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল "আমেরিকার জুডিও-খ্রিষ্টীয় ঐতিহ্য এবং ইউরোপীয় পরিচয় রক্ষা"।[১২] আমন্ত্রিত বক্তাদের মধ্যে ছিলেন লরেন্স অস্টার, পিটার ব্রিমেলো, স্টিভেন ফ্যারন, জুলিয়া গোরিন, লিনো এ. গ্রালিয়া, হেনরি সি. হার্পেন্ডিং, রজার ডি. ম্যাকগ্রাথ, প্যাট রিচার্ডসন, জে. ফিলিপ রাশটন, সার্জা ট্রিফকোভিচ এবং ব্রেন্ডা ওয়াকার।[১৩]
এই সম্মেলনে হার্ট কুরআনকে মাইন কাম্পফ-এর সঙ্গে তুলনা করেন এবং ইসলামকে নাৎসিবাদের সঙ্গে তুলনা করে বক্তব্য দেন।[৯]
বই
[সম্পাদনা]- মাইকেল এইচ. হার্ট-এর সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০, ১৯৭8 (সংশোধিত সংস্করণ, ১৯৯২)
- এক্সট্রা-টেরেস্ট্রিয়ালস, তারা কোথায়? ( বেন জুকারম্যানের সাথে সহ-সম্পাদিত), ১৯৮২ (দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৯৯৫)
- ৩০০০ সাল থেকে একটি দৃশ্য (পসেইডন প্রেস, ১৯৯৯)
- মানব ইতিহাস বোঝা (ওয়াশিংটন সামিট পাবলিশার্স, ২০০৭)
- আমেরিকা পুনরুদ্ধার (ভিডেয়ার, ২০১৫)
- ↑ Hart, Michael H. (১৯৭৫)। "An Explanation for the Absence of Extraterrestrials on Earth"। Quarterly Journal of the Royal Astronomical Society। 16: 128–135। বিবকোড:1975QJRAS..16..128H।
- ↑ Wesson, Paul (১৯৯০)। "Cosmology, extraterrestrial intelligence, and a resolution of the Fermi-Hart paradox"। Quarterly Journal of the Royal Astronomical Society। 31: 161–170। বিবকোড:1990QJRAS..31..161W।
- ↑ Landis, Geoffrey A. (১৯৯৮)। "The Fermi Paradox: An Approach Based on Percolation Theory"। Journal of the British Interplanetary Society। 51 (5): 163–166। বিবকোড:1998JBIS...51..163L। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৬-১২।
- ↑ Gray, Robert H. (২০১৫)। "The Fermi paradox is neither Fermi's nor a paradox"। Astrobiology। 15 (3): 195–199। arXiv:1605.09187
। আইএসএসএন 1531-1074। এসটুসিআইডি 8753391। ডিওআই:10.1089/ast.2014.1247। পিএমআইডি 25719510। বিবকোড:2015AsBio..15..195G।
- ↑ Tipler, F.J. (সেপ্টেম্বর ১৯৮০)। "Extraterrestrial intelligent beings do not exist"। Quarterly Journal of the Royal Astronomical Society। 21: 267–281। বিবকোড:1980QJRAS..21..267T।
- ↑ ক খ Extraterrestrials: Where are They? 2nd ed., Eds. Ben Zuckerman and Michael H. Hart (Cambridge: Press Syndicate of the University of Cambridge, 1995)
- ↑ Alphonse Dougan, "Understanding Prophet Muhammad Beyond the Stereotypes", The Fountain, Issue 46 (April–June 2004).
- ↑ ক খ Interview with Michael H. Hart by Russell K. Neili, April 14, 2000. Swain, Carol M.; Nieli, Russell K. (২৪ মার্চ ২০০৩)। Contemporary Voices of White Nationalism in America। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 201। আইএসবিএন 978-0-521-81673-1 – Google Books-এর মাধ্যমে।
I (like other white separatists) resent being called a white supremacist.
- ↑ ক খ গ ঘ "Californians for Population Stabilization Board Chair Ben Zuckerman Co-Edited Book with White Nationalist"। Southern Poverty Law Center। ২০১৭-০৪-১৯।
- ↑ Beirich, Heidi; Potok, Mark (২০০৬)। "Irreconcilable Differences"। Intelligence Report। Southern Poverty Law Center। ২০১৪-০৪-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ Tilove, Jonathan (২০০৬-০৩-০৩)। "White Nationalist Conference Ponders Whether Jews and Nazis Can Get Along"। The Forward। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৪-০৮।
- ↑ "Statement of Purpose"। Preserving Western Civilization। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১।
- ↑ "Conference 2009"। Preserving Western Civilization। ২০২১-০৫-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২৬।