মন্তে আলবান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মন্তে আলবান
মন্তে আলবান পিরামিড অঞ্চলে পশ্চিমপ্রান্তের মঞ্চ।
মন্তে আলবান মেসোআমেরিকা-এ অবস্থিত
মন্তে আলবান
মন্তে আলবান মেসোআমেরিকায় অবস্থিত
বিকল্প নামদানিপাগাচে
অবস্থানওআজাচা, মেক্সিকো
অঞ্চলওআজাচা উপত্যকা
স্থানাঙ্ক১৭°২′৩৮″ উত্তর ৯৬°৪৬′৪″ পশ্চিম / ১৭.০৪৩৮৯° উত্তর ৯৬.৭৬৭৭৮° পশ্চিম / 17.04389; -96.76778
ইতিহাস
সময়কালমধ্য প্রাক্‌ক্লাসিক থেকে অন্ত ক্লাসিক
প্রাতিষ্ঠানিক নামওয়াহাকা ঐতিহাসিক কেন্দ্র এবং মন্তে আলবানের পুরাতাত্ত্বিক অঞ্চল
ধরনসাংস্কৃতিক
মানকi, ii, iii, iv
অন্তর্ভুক্তির তারিখ১৯৮৭ (১১তম সেশন)
রেফারেন্স নং৪১৫
স্টেট পার্টি মেক্সিকো
অঞ্চললাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান

মন্তে আলবান, দক্ষিণ মেক্সিকোর ওয়াহাকা রাজ্যের (১৭.০৪৩° উঃ, ৯৬.৭৬৭° পঃ) সান্তা ক্রুজ জোজোকোটলান পৌরসভার একটি বৃহৎ প্রাক্‌-কলম্বিয়ান প্রত্নতাত্ত্বিক ক্ষেত্র। ওয়াহাকা উপত্যকার মধ্যভাগে উত্তরের এটলা, পূর্বের লাকোলুলা, দক্ষিণের জিমাটলান এবং অকোটলানের (ভ্যালে গ্র্যান্ড) শাখাগুলি যেখানে মিলিত হয়েছে সেই সমতলের থেকে উচ্চে, নিচু পর্বতশ্রেণীর ওপর অবস্থিত এই প্রত্নতাত্ত্বিক ক্ষেত্র। এখনকার রাজ্য রাজধানী ওয়াহাকা সিটি মন্তে আলবান থেকে ৯ কিমি (৬মাইল) পূর্বে অবস্থিত।

আংশিক নিখাত এই মন্তে আলবানের পৌর-আনুষ্ঠানিক কেন্দ্র কৃত্রিম একটি ঢালের ওপর স্থাপিত; এই ঢালটি গড় সামুদ্রিক উচ্চতার থেকে ১৯৪০ মিঃ (৬৪০০ ফুঃ) উচ্চতায় অবস্থিত উপত্যকা তলের থেকে ৪০০ মিঃ (১৩০০ ফুঃ) উচ্চতায় স্থাপিত যাতে একে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা যায়। স্মৃতিসৌধের কেন্দ্রীয় অংশ ছাড়াও, এই স্থানে কয়েকশো কৃত্রিম সোপানশ্রেণী রয়েছে এবং সমগ্র ঢালটিকে ঘিরে রয়েছে এক ডজন ঢিপি আকৃতির স্থাপত্য এবং তার পার্শ্বদেশ।[১] উত্তরে আটজোম্পা এবং এল গাল্লো পাহাড়ের প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ প্রাচীন এই শহরেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মনে করা হয়ে থাকে।

মেসোআমেরিকার শহরগুলির মধ্যে অন্যতম এই শহর মন্তে আলবানের গুরুত্বের কারণ, বিশিষ্ট জাপোটেক সামাজিক-রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে এটির ইতিহাস প্রায় হাজার বছরের পুরোনো। মধ্য গঠন পর্যায়ের শেষে ৫০০ খ্রীঃপুঃ নাগাদ প্রতিষ্ঠিত এই মন্তে আলবান প্রান্তীয় গঠন পর্যায়ে (১০০ খ্রীঃপুঃ – ২০০ খ্রীঃ) একটি বড় মাপের বর্ধিষ্ণু রাষ্ট্রে পরিণত হয়; এই অঞ্চলটি ওয়াহাকা উচ্চভূমির অধিকাংশ অংশ নিয়ন্ত্রণ করত এবং উত্তরে টিয়েটোয়াকানের মত (প্যাডক ১৯৮৩; মার্কুস ১৯৮৩) অন্যান্য স্থানীয় মেসোআমেরিকা রাষ্ট্রগুলির সাথে যোগাযোগ রাখত। পরবর্তী ক্লাসিক (৫০০-৭৫০ খ্রীঃ) পর্যায়ের শেষে এই শহরটি তার রাজনৈতিক শ্রেষ্ঠত্ব হারায় এবং এরপর শীঘ্রই তা পরিত্যক্ত হয়। ঔপনিবেশিক কালে এই প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চলে অনেকবার ছোটখাটো পুনরাধিকার, স্বার্থসিদ্ধির কারণে পুরোনো নির্মাণ এবং সমাধিক্ষেত্রগুলিকে পুনর্ব্যবহার, এবং ধর্মীয় পরিদর্শন ঘটে।

এই স্থানটির বর্তমান নামের ব্যুৎপত্তিগত কারণ স্পষ্ট নয়, অনেক সময় বলা হয় এটি একটি দেশীয় জাপোটেক নামের অপভ্রংশ, অনেকে আবার একে ঔপনিবেশিক আমলের একজন স্পেনীয় সৈনিকের নাম মন্তালবানের সাথে মেলাতে চান আবার অনেকে তা ইতালীর আলবান পাহাড়ের নামের থেকে উৎপত্তি বলে মনে করেন। শহরটির নৃতাত্ত্বিক ইতিহাসের লেখ্য রূপের প্রাচীনতম নিদর্শন যে যুগের, শহরটি তারও কয়েক শতবছর পূর্বে পরিত্যক্ত হয়; এই কারণে এর প্রাচীন জাপোটেক নামটি জানা যায়নি।

গবেষণার ইতিহাস[সম্পাদনা]

মন্তে আলবানের আঞ্চলিক পরিকল্পনা।

ওয়াহাকা উপত্যকার যে কোন স্থান থেকে দর্শনযোগ্য এই মন্তে আলবান নামক অঞ্চলটি ঔপনিবেশিক এবং আধুনিক যুগে দর্শক এবং পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণকেন্দ্র। অন্যান্যদের মধ্যে, গিলার্মো ডুপেস্ক ১৯শ শতকের প্রথমার্ধে এই অঞ্চলটি অনুসন্ধান করেন, ১৮৫৯ সালে জে. এম. গার্সিয়া অঞ্চলটির একটি বিবরণী প্রকাশ করেন এবং এ. এফ. ব্যান্ডেলিয়ার ১৮৯০এর দশকে আরো অনুসন্ধান চালান এবং বিবরণী প্রকাশ করেন। পর্‌ফিরিও ডায়াজের অধীনে মেক্সিকো সরকারের তৎকালীন স্মৃতিসৌধের সাধারণ পরিদর্শক লিওপল্ডো বাট্রেস ১৯০২ সালে এই অঞ্চলে প্রথম নিবিড়ভাবে প্রত্নতাত্ত্বিক অন্বেষণ চালান।[২] যদিও মেক্সিকোর প্রত্নতাত্ত্বিক আলফনসো কাসোর নির্দেশে প্রথম ব্যাপকভাবে বৈজ্ঞানিক খননকার্য চালানো হয় ১৯৩১ সালে। ১৯৩৩ সালে, ইউলালিয়া গুজমান ৭ নং সমাধিটির খননকার্যে সহায়তা করেন।[৩] পরবর্তী আঠারো বছর ধরে কাসো এবং তার দুই সহকর্মী ইগ্নাসিও বার্নাল এবং জর্জ অ্যাকোস্টা এই অঞ্চলটির স্মৃতিসৌধের মূলকেন্দ্রগুলির অভ্যন্তরের বৃহৎ অংশগুলিতে খননকার্য চালান এবং আজকের দিনে যে সকল স্থানগুলি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত, তার বেশিরভাগই এই সময়ে পুনর্নির্মাণ করা হয়। খননকার্য চালাবার ফলে প্রচুর সংখ্যক আবাসভবন এবং পৌর-আনুষ্ঠানিক নির্মাণ ও কয়েকশো সমাধিক্ষেত্র আবিষ্কার ছাড়াও, কাসো এবং তার সহকর্মীদের আরও একটি দীর্ঘস্থায়ী কৃতিত্ব চোখে পড়ে; তা হল ৫০০ খ্রীঃপুঃ এই অঞ্চলটির প্রতিষ্ঠাকাল থেকে শুরু করে ১৫২১ খ্রীঃ পরবর্তী-ক্লাসিক যুগ পর্যন্ত (মন্তে আলবানের প্রথম থেকে পঞ্চম দশা) মৃৎশিল্পের কালনিরুপণ।

১৯৬০এর দশকের শেষভাগে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্ট ফ্ল্যানারি মন্তে আলবানের প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী যুগের অনুসন্ধান শুরু করেন যার প্রধান কেন্দ্র ছিল প্রাক্‌-ইতিহাস এবং মানব বাস্তুসংস্থান প্রকল্প। পরবর্তী দুই দশক ধরে এই প্রকল্পটির দ্বারা প্রাচীন কাল (৮০০০-২০০০ খ্রীঃপুঃ) থেকে রোজারিও যুগ (৭০০-৫০০খ্রীঃ) অর্থাৎ মন্তে আলবানের ঠিক পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত উক্ত উপত্যকাটির সামাজিক-রাজনৈতিক জটীলতার উদ্বর্তন নথিভুক্ত করা হয়; এইভাবে মন্তে আলবানের প্রতিষ্ঠা এবং এর ক্রমবিকাশের ধারা আমরা জানতে পারি। এই প্রসঙ্গে, ওয়াহাকায় ফ্ল্যানারির মূখ্য কাজগুলি হল, এই উপত্যকার এটলা শাখায় সান জোস্‌ মোগোট নামক গুরুত্বপূর্ণ গঠনকেন্দ্রে তার করা ব্যাপক খননকার্য; এই প্রকল্পটিতে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের জয়েস মার্কুস তার সাথে সহ-পরিচালকের কাজ করেন।[৪][৫]

১৯৭০এর দশকের প্রথমভাগে রিচার্ড ব্ল্যান্টন এবং তার কিছু সহকর্মী ওয়াহাকা প্রকল্প উপত্যকায় প্রাগৈতিহাসিক বন্দোবস্ত রীতি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন যা আমাদের মন্তে আলবান অঞ্চলের পেশাগত ইতিহাস জানবার ব্যাপারে সাহায্য করে। তাদের নিবিড়ভাবে জরিপকার্য চালানো এবং সমগ্র অঞ্চলটির মানচিত্রকরণের ফলে, কাসো কর্তৃক আবিষ্কৃত সীমাবদ্ধ মন্তে আলবানের প্রকৃত প্রসার সম্বন্ধে জানা যায়।[১] এরপর এই একই প্রকল্পের ওপর আরো অনেক কাজ চলে ব্ল্যান্টন, গ্যারি ফেইনম্যান, স্টিভ কোয়ালেউইস্কি, লিন্ডা নিকোলাস এবং অন্যান্যদের পরিচালনায় এবং এইভাবে সমগ্র অঞ্চলটির ব্যাপক অনুসন্ধানের ফলে এর সুপ্রাচীন কাল থেকে ১৫২১ খ্রীঃ স্পেনীয়দের আগমনের কাল পর্যন্ত অঞ্চলটির বসবাসের রীতি পরিবর্তন সম্বন্ধে কিছু অমূল্য তথ্য পাওয়া যায়।[৬][৭]

বলখেলার কোর্ট

অঞ্চলের ইতিহাস[সম্পাদনা]

অঞ্চলটিতে ব্ল্যান্টনের গবেষণার ফলে জানা গিয়েছে, মন্তে আলবান পাহাড় খ্রীঃপুঃ ৫০০ অব্দের আগে (রোজারিও সেরামিক সময়ের শেষে) সম্ভবত লোকবসতিশূন্য ছিল। সেই সময়ে, সান জোস মোগোট উপত্যকাটির প্রধান জনবসতি কেন্দ্র ছিল এবং একটি স্থানীয় সরকারের প্রধান উত্তর এটলা শাখার বেশিরভাগ অংশকেই নিয়ন্ত্রণ করত।[৫] সম্ভবত তিন থেকে চারটি অন্যান্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজত্ব উপত্যকাটির অঞ্চলগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করত; যেমন ভ্যালি গ্র্যান্ডে শাখার দক্ষিণে ছিল টিলকাজেট এবং পূর্বে লাকোলুলার ইয়্যাগুই। প্রতিযোগিতা এবং যুদ্ধবিবাদ রোজারিও যুগে সম্ভবত চলতেই থাকত এবং স্থানীয় অনুসন্ধানের ফলে জানা গেছে যে সান জোস মোগোট সরকার এবং এর দক্ষিণ ও পূর্বের মধ্যে একটি অংশ অনধিকৃত ছিল।[৫] রোজারিও যুগের শেষে এই মনুষ্যবসতিহীন অঞ্চলটিতে মন্তে আলবান গড়ে ওঠে, পরবর্তী মন্তে আলবান ১এ দশার শেষে (৩০০ খ্রীঃপুঃ) এই অঞ্চলের আনুমানিক জনসংখ্যা প্রায় ৫২০০তে পৌঁছোয়। জনসংখ্যার এই বিপুল বৃদ্ধির সাথে সাথে সান জোস মোগোট এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলির লোকসংখ্যা দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে; এতে মনে হয় ঐ অঞ্চলের অভিজাত সম্প্রদায় অঞ্চলটিকে ভবিষ্যতে জাপোটেকের রাজধানী রূপে গড়ে তোলবার ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেন। বিক্ষিপ্ত স্থানীয় বসতি থেকে একটি কেন্দ্রীয় পৌর অঞ্চলে (যা কিনা আগে একটি বসতিহীন অঞ্চল ছিল) জনগোষ্ঠীর এই দ্রুত স্থানান্তরণকে মার্কুস এবং ফ্ল্যানারি পুরাকালে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে প্রাপ্ত অনুরূপ নিদর্শন অনুসারে “মন্তে আলবান সিনইকিজম্‌” বলে অভিহিত করেছেন।[৫]১৪০-১৪৬ যদিও আগে মনে করা হত[১] যে ইয়েগুইথ এবং টিলকাজেটের মত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলিও অনুরূপভাবে বহুলপরিমাণে জনগোষ্ঠী স্থানান্তরণের মাধ্যমেই সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু বর্তমানে অন্তত টিলকাজেটের ক্ষেত্রে তা অসম্ভাব্য বলেই মনে হয়। নিউ ইয়র্কের প্রাকৃতিক ইতিহাসের আমেরিকান জাদুঘরের (আমেরিকান মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রি) চার্লস স্পেন্সার এবং এলসা রেডমণ্ড সম্প্রতি একটি প্রকল্প শুরু করেন যাতে বোঝা যাচ্ছে অঞ্চলটি পরিত্যক্ত তো দূরের কথা, বরং এখানে মন্তে আলবান প্রাথমিক ১ এবং পরবর্তী ১ (৫০০ – ৩০০ খ্রীঃপুঃ এবং ৩০০ – ১০০ খ্রীঃপুঃ) যুগে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং এরা সম্ভবত শক্তিশালী মন্তে আলবান রাজ্য গড়ে তোলবার ব্যাপারে বিরোধিতাও করে।[৮]

অন্তরীক্ষ থেকে তোলা মন্তে আলবানের ছবি

প্রান্তীয় গঠনমূলক যুগের শুরুতে (মন্তে আলবান দ্বিতীয় দশা, ১০০ খ্রীঃপুঃ – ২০০ খ্রীঃ) মন্তে আলবানে প্রায় ১৭,২০০ সংখ্যক অধিবাসী ছিল[৫]:১৩৯ যা কিনা তৎকালীন মেসোআমেরিকান শহরগুলির মধ্যে সর্ববৃহৎ। শহরটি সমস্ত দিক থেকে অসাধারণ দর্শনীয়। রাজনৈতিক ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে, মন্তে আলবান সামরিকভাবে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, সংযোজনের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায় এবং উত্তরে কানাডা ডি কুইকাটলান এবং দক্ষিণে এজুটলা এবং সোলা ডি ভেগা উপত্যকাসহ ওয়াহাকা উপত্যকার বাইরে কিছু অংশ সরাসরি দখল করেও তা বৃদ্ধি পায়।[৯][১০][১১] (ফেইনম্যান এবং নিকোলাস ১৯৯০) এই সময়ে এবং এর পরবর্তী প্রাক-ক্লাসিক যুগে (মন্তে আলবান ৩এ দশা, ২০০ – ৫০০ খ্রীঃ) মন্তে আলবান গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় রাজ্যগুলির রাজধানী ছিল; এটি ওয়াহাকা উপত্যকা এবং এর উচ্চভূমির অধিকাংশ অঞ্চল ওপর প্রভাব বিস্তার করত। আগেই বলা হয়েছে, মন্তে আলবান থেকে প্রাপ্ত নিদর্শন থেকে জানা যায় যে এই অঞ্চলের অভিজাতদের সাথে তেওতিহুয়াকান নামক মধ্য মেক্সিকোর একটি শহরের অভিজাতদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল; এখানে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা ওয়াহাকা উপত্যকার পার্শ্ববর্তী কিছু অঞ্চল পেয়েছেন যেখানে জাপোটেক গোষ্ঠী বসবাস করত (প্যাডক ১৯৮৩)। পরবর্তী ক্লাসিক পর্যায়ে (মন্তে আলবান ৩বি/৪, ৫০০ – ১০০০ খ্রীঃ) বাইরের প্রদেশে এবং এর অভ্যন্তরে এই অঞ্চলটির প্রভাব কমতে থাকে এবং ভ্যালে গ্র্যাণ্ডের কুইলাপান এবং জাচিলা ও পূর্ব লাকোলুলা শাখার লাম্বিটইয়েকো, মিটলা এবং এল পালমিল্লো প্রভৃতি অঞ্চলের রাজারা, যারা একসময় মন্তে আলবানের অধীনে ছিল, তারা স্ব স্ব স্বাধীনতা ঘোষণা করে। শিকাগোর ফিল্ড মিউজিয়ামের (ফেইনম্যান এবং নিকোলাস ২০০২) গ্যারি ফেইনম্যান এবং লিন্ডা নিকোলাস পূর্ব লাকোলুলা শাখা নিয়ে বর্তমানে গবেষণা করছেন। এই পর্যায়ের শেষে (৯০০ – ১০০০ খ্রীঃ) এই প্রাচীন রাজধানী শহরটির অধিকাংশ অঞ্চলই পরিত্যক্ত হয়, এবং একদা শক্তিশালী এই মন্তে আলবান রাজ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত হয়ে যায় যা স্পেনীয় অভ্যুত্থান পর্যন্ত স্থিতিশীল ছিল।[১২]

স্মৃতিসৌধ[সম্পাদনা]

উত্তর মঞ্চ থেকে মন্তে আলবানের দৃশ্য। দূর থেকে দক্ষিণ মঞ্চও দেখা যাচ্ছে।

মন্তে আলবানের কেন্দ্রীয় স্মৃতিসৌধ অঞ্চলটিই ছিল মূল প্রাণকেন্দ্র, যা দৈর্ঘ্যে ৩০০ মি. এবং প্রস্থে ২০০ মি. ছিল। এই অঞ্চলের প্রধান নগর-আনুষ্ঠানিক এবং অভিজাতদের বাসভবন একে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল অথবা এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলেই ছিল; এই অঞ্চলটিকে আলফানসো কাসো এবং তার সহকর্মীরা আবিষ্কার এবং পুনরুদ্ধার করেন। উত্তর এবং দক্ষিণে প্রধান পৌরঅঞ্চলটি বৃহৎ মঞ্চ দ্বারা বিভক্ত ছিল; এই মঞ্চগুলি স্মৃতিসৌধের সোপানের সঙ্গে যুক্ত থাকত। পৌরঅঞ্চলটির পূর্ব এবং পশ্চিম অংশ একইভাবে কিছু ছোট ছোট মঞ্চস্তুপ দ্বারা বেষ্টিত; যার ওপরে মন্দির এবং অভিজাতদের বাসভবন অবস্থিত এবং এছাড়াও সমগ্র অঞ্চলের দুটি বলকোর্টের মধ্যে একটির অবস্থান ছিল এখানে। উত্তর-দক্ষিণ বরাবর মঞ্চস্তুপের একটি শাখা পৌরঅঞ্চলটির কেন্দ্রে অবস্থিত ছিল এবং একইভাবে এটি আনুষ্ঠানিক ক্রিয়াকলাপের মঞ্চ হিসেবে ব্যবহৃত হত।

দক্ষিণ মঞ্চে ওঠবার জন্য আকর্ষণীয় সোপান।

মন্তে আলবানের একটি বৈশিষ্ট্য হল এর পৌরঅঞ্চলটিতে প্রবেশ করলে খোদাই করা পাথরের প্রচুর স্মৃতিসৌধ পাওয়া যায়। এর প্রাচীনতম উদাহরণগুলি হল তথাকথিত “ডানজানটেস” (আক্ষরিক অর্থে, নর্তক), এদের স্মৃতিসৌধগুলি L আকৃতির বিল্ডিংয়ের নিকটবর্তী অঞ্চললে পাওয়া যায় এবং এগুলিতে পেঁচানো ও মোচড়ানো অবস্থায় কিছু নগ্ন পুরুষের মূর্তি প্রতিরূপ তুলে ধরা হয়েছে, যাদের কারো কারো যৌনাঙ্গ কর্তিত। মূর্তিগুলি এহেন বিকৃত, অস্বাভাবিক অবস্থা দেখে মনে করা হয় এগুলি দুর্দশাগ্রস্ত কিছু মানুষকে উপস্থাপন করে। “ডানজানটেস” হল ওলমেক সংস্কৃতির বাহ্যিক প্রতিরূপ।[১৩] ১৯শ শতকের ধারণা অনুযায়ী এদেরকে নর্তক বলে মনে করা হত, এখন আর তা করা হয় না। এই অঞ্চলটির (১ম মন্তে আলবান যুগ) একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ের এই স্মৃতিসৌধগুলিকে এখন স্পষ্টতই অত্যাচারিত, বলিপ্রদত্ত যুদ্ধবন্দী হিসেবে মনে করা হয়, এদের কেউ কেউ স্বনামপরিচিত এবং ধারণা করা হয়, মন্তে আলবান যেসকল যুদ্ধরত অঞ্চল ও গ্রাম দখল করেছিল এরা তাদের নেতৃস্থানীয় ছিল।[৫] (ব্ল্যান্টন ও অন্যান্যরা, ১৯৯৬) ৩০০র অধিক “ডানজানটেস” প্রস্তর মূর্তি এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়েছে এবং ভালভাবে সংরক্ষিত কয়েকটি মূর্তি এই অঞ্চলের জাদুঘরে স্থান পেয়েছে। কিছু কিছু নিদর্শন থেকে মনে করা হয় জাপোটেকরা ক্যালেণ্ডার লিখতে ও এর প্রতীক ব্যবহার করতে পারত।

ভিন্ন প্রকৃতির কিছু খোদিত প্রস্তরখণ্ড মূল পৌরঅঞ্চলের কেন্দ্রে J আকৃতির বিল্ডিংয়ের নিকট পাওয়া গেছে। এই বিল্ডিংটির বৈশিষ্ট্য হল এটি একটি অস্বাভাবিক শরের ন্যায় আকৃতির এবং এর অভিমুখও এই অঞ্চলের অন্যান্য নির্মাণভবনের চাইতে আলাদা। এই বিল্ডিংয়ের দেওয়াল গাত্রে ২য় মন্তে আলবান যুগের ৪০টি বৃহদাকৃতি খোদাই করা ফলক প্রবেশ করানো আছে; এতে স্থানের নাম এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কিছু লেখা রয়েছে। বেশ কিছু ফলকে ওল্টানো মস্তকবিশিষ্ট মূর্তি খোদিত রয়েছে। আলফানসো কাসো এগুলিকে প্রথম “বিজয়ফলক” রূপে চিহ্নিত করেছেন এবং এগুলি সম্ভবত মন্তে আলবান কর্তৃক বিজিত অথবা নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলির নামের তালিকা। J আকৃতির বিল্ডিংয়ের ফলকে লিখিত কিছু নাম পরীক্ষামূলকভাবে নির্ণয় করা হয়েছে, এবং একটি ক্ষেত্রে (উত্তর ওয়াহাকার কানাডা ডে কুইকাটলান অঞ্চল) জাপোটেক বিজয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে, প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান এবং খননকার্যের মাধ্যমে।[১০][১১]

মন্তে আলবান অঞ্চলে এমন কিছু নিদর্শন পাওয়া গেছে যার দ্বারা বোঝা যায় উক্ত অঞ্চলটির সামাজিক স্তরবিন্যাস ছিল। বসতি অঞ্চলের চারিপাশ ঘিরে ন’মিটার লম্বা এবং কুড়ি মিটার চওড়া প্রাচীর নির্মিত ছিল এবং এটি শুধুমাত্র মন্তে আলবান এবং তৎসংলগ্ন বসতিগুলির মধ্যেকার সীমানাই ছিল না, বরং তা ছিল জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে অভিজাত শ্রেণীর ক্ষমতার প্রমাণ। মন্তে আলবানের সাধারণ মানুষ এবং অভিজাতদের মধ্যেকার সম্পর্ক কেমন ছিল তা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে স্কট হাটসন বলেছেন, এই অঞ্চলে প্রাপ্ত স্মৃতিসৌধের স্তুপগুলি গোটা অঞ্চল জুড়ে সমভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছে যাতে প্রত্যেকটি বাড়ি সৌধগুলির নিকটে অবস্থিত হয় এবং সহজেই এগুলির ওপর নজরদারি করা যায়। হাটসন এও বলেছেন যে সময়ের সাথে সাথে গৃহনির্মাণের রীতিও পরিবর্তন করা হয় যার ফলে গৃহে বসবাসরত ব্যক্তিরা আরো গোপনীয়তা অর্জন করতে পারে এবং বহিরাগতদের পক্ষে এদের সম্বন্ধে তথ্য জানা আরো কঠিন হয়ে পড়ে। এই পরিবর্তনের মাধ্যমে অভিজাতরা তাদের অধিবাসীদের ব্যক্তিগত জীবন সম্বন্ধে যে সমস্ত তথ্য জানতে পারত তা এই অঞ্চলের অন্তর্বর্তী রাজনৈতিক গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।[১৪]

মন্তে আলবান অঞ্চলে এক শতকব্যাপী পুরাতাত্ত্বিক অনুসন্ধানের ফলে প্রাপ্ত বহু শিল্পদ্রব্য মেক্সিকো শহরের জাতীয় পুরাতাত্ত্বিক জাদুঘর (Museo Nacional de Antropologia) এবং ওয়াহাকা শহরের সান্টো ডোমিঙ্গোর প্রাক্‌-সভ্যতায় (ex-convento de Santo Domingo) ওয়াহাকার আঞ্চলিক জাদুঘরে (Museo Regional de Oaxaca) প্রদর্শিত হয়। অন্যান্য অনেক জাদুঘরের মতই শেষের জাদুঘরটিতে, আলফানসো কাসো কর্তৃক ১৯৩২ সালে মন্তে আলবানের ৭ নং সমাধি থেকে আবিষ্কৃত হওয়া অনেক বস্তু সংরক্ষিত রয়েছে; এই ৭ নং সমাধিটি ক্লাসিক যুগের জাপোটেকদের সৌধ যেটি পরবর্তী ক্লাসিক পর্যায়ে সুবিধাজনক কারণে মিস্কটেক অভিজাতদের সমাধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। তাদের সমাধিগুলি দক্ষিণ আমেরিকার সবথেকে চমকপ্রদ সমাধিগুলির সাথে যুক্ত ছিল।[১৫]

ওয়াহাকা বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে এই অঞ্চলটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং এই অঞ্চলে একটি ছোট জাদুঘর রয়েছে যার বেশিরভাগই প্রকৃত খোদাই-করা প্রস্তরখণ্ড। এই অঞ্চলে জগার, হাইকার, পাখিশিকারীদের দ্বারা পায়ে চলা পথও তৈরি হয়ে গেছে।

দক্ষিণ মঞ্চ থেকে মন্তে আলবানের প্যানোরামা দৃশ্য।

বিপদ[সম্পাদনা]

এই পুরাতাত্ত্বিক অঞ্চলটির প্রাথমিক বিপদ হল নগরায়নের বৃদ্ধি এবং “এর বৃদ্ধি সেইসকল অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়বার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে যেগুলির পুরাতাত্ত্বিক মূল্য যথেষ্ট।”[১৬] জটিলতা আরো বাড়ল, যখন প্রশাসন সমগ্র অঞ্চলটিকে চারটি পৃথক পৌরসভায় বিভক্ত করে দিল এবং এর ফলে একযোগে নগরায়নের বৃদ্ধির বিরুদ্ধে একজোট হওয়ার পথও সংকুচিত হল।[১৬]

চিত্রাবলী[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

  • সান জোস মোগোটে, একটি পূর্বতন অঞ্চল এবং ওয়াহাকা উপত্যকায় মন্তে আলবানের পূর্বসূরী।
  • মিক্সটেকা অলটা গঠনমূলক প্রকল্প
  • দেশ অনুযায়ী প্রত্ন-জ্যোতির্বিদ্যা অঞ্চল

টীকা[সম্পাদনা]

  1. Blanton, Richard E. (1978). Monte Albán: Settlement Patterns at the Ancient Zapotec Capital. New York: Academic Press. 
  2. Batres, Leopoldo (1902). Exploraciones en Monte Albán. México: Casa Editorial Gante. 
  3. Presidencia CEN (February 12, 2015). "¿Sabías Que..?" (in Spanish). Partido Revolucionario Institucional. Retrieved 20 March 2015. 
  4. Marcus, Joyce (1983). Flannery, K.V.; Marcus, J., eds. In The Cloud People. New York: Academic Press. pp. 175–181. 
  5. Marcus, Joyce; Flannery, Kent V. (1996). Zapotec Civilization: How Urban Society Evolved in Mexico's Oaxaca Valley. London: Thames and Hudson. ISBN 0-500-05078-3. 
  6. Blanton, Richard E.; Kowalewski, Stephen A.; Feinman, Gary M.; Appel, Jill (1982). "Monte Albán's Hinterland, Part I: Prehispanic Settlement Patterns of the Central and Southern Parts of the Valley of Oaxaca, Mexico". University of Michigan, Ann Arbor Museum of Anthropology Memoir 15. 15. 
  7. Kowalewski, Stephen A.; Feinman, G.; Finsten, L.; Blanton, R.; Nicholas, L. (1989). "Monte Albán's Hinterland, Part II: The Prehispanic Settlement Patterns in Tlacolula, Etla and Ocotlán, the Valley of Oaxaca, Mexico". University of Michigan, Ann Arbor Museum of Anthropology Memoir 23. 23. 
  8. Spencer, Charles S; Redmond, Elsa M. (2001). "Multilevel Selection and Political Evolution in the Valley of Oaxaca, 500-100 B.C.". Journal of Anthropological Archaeology. 20: 195–229. doi:10.1006/jaar.2000.0371. 
  9. Balkansky, Andrew K. (2002). "The Sola Valley and the Monte Albán State. A Study of Zapotec Imperial Expansion". University of Michigan, Ann Arbor Museum of Anthropology Memoir 36. 36. 
  10. Spencer, Charles S. (1982). The Cuicatlán Cañada and Monte Albán: A Study of Primary State Formation. New York and London: Academic Press. 
  11. Redmond, Elsa M. (1983). "A Fuego y Sangre: Early Zapotec Imperialism in the Cuicatlán Cañada". University of Michigan, Ann Arbor Museum of Anthropology Memoir 16. 16. 
  12. Blanton, et al. (1999) 
  13. MexOnline, 2012 
  14. Hutson, Scott (2002). "Built Space and Bad Subjects". Journal of Social Archaeology. 2 (1): 53–80. doi:10.1177/1469605302002001597. Retrieved November 15, 2012. 
  15. Caso, Alfonso (1932). "Monte Albán, richest archaeological find in the Americas". National Geographic Magazine. 62: 487–512. 
  16. "World Heritage at Risk within Mexico". ICOMOS. Retrieved 2010-04-25. 

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]