মন্টপিলিয়ার, ভারমন্ট

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মন্টপিলিয়ার, ভারমন্ট স্টেট হাউজ

মন্টপিলিয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্মন্ট অঙ্গরাজ্যের রাজধানী ও ওয়াশিংটন কাউন্টির আসন। যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলোর রাজধানীর মধ্যে এটি জনসংখ্যায় ক্ষুদ্রতম।[১] ২০১০ এর আদমশুমারি অনুযায়ী এর জনসংখ্যা ছিল ৭,৮৫৫। তবে এখানে কর্মসংস্থানের প্রচুর সুযোগ থাকায় দিনের বেলা এখানে ২১,০০০ লোক অবস্থান করে। [২] এখানে ভার্মন্ট চারুকলা কলেজ ও নিউ ইংল্যান্ড রন্ধন ইনস্টিটিউট অবস্থিত। ফ্রান্সের মন্টপিলিয়ার শহরের নামানুসারে এর নাম "মন্টপিলিয়ার" রাখা হয়।[৩]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৬০০ থেকে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ইউরোপীয়রা এখানে বসতি স্থাপন করতে শুরু করে। [৪] যুদ্ধ, রোগশোকসহ নানাবিধ কারণে এখানকার আদিবাসী জনগণ ক্রমেই নিশ্চিহ্ন হতে শুরু করে। অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়েও এ এলাকায় আদিবাসী আমেরিকানদের অস্তিত্ব ছিল বলে জানা যায়।

১৭৮১ সালের ১৪ই আগস্ট মন্টপিলিয়ারকে ভার্মন্ট সাধারণ পরিষদ স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ক্ষমতা প্রদান করে।[৫] ১৭৮৭ সালের মে-তে কর্নেল জ্যাকব ডেভিস ও জেনারেল পার্লে ডেভিসের আগমনের মধ্য দিয়ে স্থায়ী বসতি নির্মাণ শুরু হয়। ঐ বছর শীতে কর্নেল ডেভিসের পরিবার এখানে বসবাস শুরু করে। কর্নেল ডেভিস শহরটির নামকরণ করেন "মন্টপিলিয়ার।"

আমেরিকার স্বাধীনতাযুদ্ধে ফ্রেঞ্চদের অবদানের কথা স্মরণ করে এখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে ফ্রান্সপ্রীতি গড়ে ওঠে। ১৭৯১ সালে এর জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১১৭।

১৭৯৯ সালে উইনুস্কি নদীর উপর দিয়ে ভার্মন্টের বার্লিন শহর ও মন্টপিলিয়ারের মধ্যে সেতু নির্মাণ করা হয়। ১৮০৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে ভূমিবণ্টনের লক্ষ্যে সনদ ইস্যু করা হয়। [৬]

১৮০৫ সালে জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১,২০০। ঐ বছর রাজ্য আইনসভা একটি স্থায়ী ভবন নির্মাণের জন্য জায়গা অনুসন্ধান করে। স্টেট স্ট্রিটে অতি দ্রুত আইনসভা ভবন নির্মাণ করা হয়।

১৮২৫ সালে আমেরিকার স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মারকুয়েস দি লাফোঁত মন্টপিলিয়ার সফরে আসেন।

১৮৪৯ সালের ২০শে জুন এখানে ভার্মন্টের কেন্দ্রীয় রেলসড়ক নির্মাণ করা হয়। ১৮৪৮ সালের ৯ নভেম্বর ভার্মন্টের বিধানসভা একে মন্টপিলিয়ার ও পূর্ব মন্টপিলিয়ার নামক দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়।

১৮৫৮ সালে নদীর সমান্তরালে অবস্থিত সড়কগুলো নির্মাণ করা হয়।

আমেরিকান গৃহযুদ্ধে ভার্মন্টের সৈনিকদের বীরত্ব উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জেনারেল ফিলিপ শেরিডান এখানে আগমন করেন। তখন ১০,০০০ লোক তাঁকে স্বাগত জানান।

১৮৮৪ সালে এখানে পানিচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু হয়। এটি ব্যবহার করে সড়কবাতি চালানো শুরু হয়।

১৮৯৪ সালে"মন্টপিলিয়ার নগর সনদ" জারি করা হয়। বার্লিন শহরের কিছু অংশ সংযোজনের জন্য ১৮৯৮ সালে এটি সংশোধন করা হয়। ১৯০০ ও ১৯১২ সালে এটি দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার সংশোধন করা হয়।

১৯২৭ সালে এখানে ভয়াবহ বন্যা হয়, যাতে বাঁধ,সেতু,বাড়িঘর ও দোকানপাট ধ্বংস হয়। এসময় নদীর পানি স্বাভাবিক সীমার ১৩ ফুট উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।[৭]

বন্যার পরে ভার্মন্ট শহরের উদ্ধার অভিযান ব্যাপক প্রশংসিত হয়। প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলিজ ভার্মন্টবাসীর উদ্যম লক্ষ্য করে খুশি হয়েছিলেন।

পরবর্তীতে ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৫ সালে এখানে রাইটসভিল বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ১৯৫৪ সালে বেইলি এভিনিউয়ে একটি সড়ক সেতু নির্মাণ করা হয় এবং শহরটিকে অটোমোবাইল চলাচলের উপযোগী করে পুনর্নির্মাণ করা হয়।

১৯৯২ সালে এখানে আবারো বন্যা সংঘটিত হয়। এতে ৫০টি পরিবার গৃহহীন হয় এবং ১২০টি ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ ডলারের ক্ষতি সাধিত হয়। [৮]

ভূগোল[সম্পাদনা]

আদমশুমারি অনুযায়ী মন্টপিলিয়ার শহরের আয়তন ১০.৩ বর্গমাইল (২৭ বর্গকিলোমিটার)। এর ১০.২ বর্গমাইল (২৬ বর্গকিলোমিটার) স্থল এবং বাকিটুকু জল। এর পশ্চিমে উইনুস্কি নদী অবস্থিত। [৯]

শহরের পশ্চিমে মিডলসেক্স, দক্ষিণে বার্লিন এবং উত্তর ও পূর্বে পূর্ব মন্টপিলিয়ার অবস্থিত।

জলবায়ু[সম্পাদনা]

মন্টপিলিয়ারের জলবায়ু আর্দ্র ধরনের। এর শীতকাল হয় দীর্ঘ এবং শরৎ ও বসন্তকাল হয় সংক্ষিপ্ত। প্রতিবছর গড়ে ৯৪.২ ইঞ্চি বা ২.৩৯ মিটার তুষারপাত হয়। [১০]

১৯৮১ সালের জানুয়ারিতে -৩৪ ডিগ্রি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ও ১৯৭৭ সালে ৯৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

প্রশাসন[সম্পাদনা]

ভার্মন্ট সিটি কাউন্সিল একজন মেয়র ও ছয়জন সাধারণ সদস্য নিয়ে গঠিত। নির্বাচিত সদস্যদের মেয়াদ দুই বছর। শহরের বাসিন্দাদের ভোটে দুই বছরের জন্য মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি একজন নগর ব্যবস্থাপক নিয়োগ দেন, যিনি নগরীর প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

জনমিতি[সম্পাদনা]

২০১০ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী মন্টপিলিয়ারের জনসংখ্যা ছিল ৭,৮৫৫। এর জনসংখ্যার ঘনত্ব ছিল প্রতি বর্গমাইলে ৭৮৪ জন। বাসিন্দাদের মধ্যে ৯৩.৭% শ্বেতাঙ্গ,১% আফ্রিকান আমেরিকান, ০.৩% আদিবাসী আমেরিকান, ২.২% এশিয়ান, ০.০১% প্রশান্ত মহাসাগরীয়। হিস্পানিক ও লাতিনোরা মোট জনসংখ্যার ২.১%।

বাসিন্দাদের গড় আয়ু ৪০ বছর। পুরুষ ও নারীদের সংখ্যার অনুপাত ১০০:৮৪.২।

শহরের মাথাপিছু আয় ২২,৫৯৯ মার্কিন ডলার। পুরুষদের মাথাপিছু আয় ৩৫,৯৫৭ মার্কিন ডলার ও নারীদের মাথাপিছু আয় ২৯,৪৪২ মার্কিন ডলার। পরিবারগুলোর মাথাপিছু আয় ৫১,৮১৮ মার্কিন ডলার। ৭.২% পরিবার ও ৯.৮% বাসিন্দা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে।

অর্থনীতি[সম্পাদনা]

সরকার,উচ্চশিক্ষা ও পর্যটন মন্টপিলিয়ারের অর্থনীতির প্রাণ।[১১]

এখানে ন্যাশনাল লাইফ গ্রুপ নামে জীবনবীমা কোম্পানির সদর দপ্তর অবস্থিত। এখানে আরো কতগুলো বীমা কোম্পানির কার্যালয় রয়েছে।

মন্টপিলিয়ার আমেরিকার একমাত্র শহর, যেখানে ম্যাকডোনাল্ডসের দোকান নেই।[১২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৬ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  2. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৬ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  3. http://www.virtualvermont.com/towns/montpelier.html
  4. https://www.montpelier-vt.org/552/About-Montpelier
  5. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৪ মে ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  6. https://web.archive.org/web/20180524222713/http://www.montpelier-vt.org/DocumentCenter/View/1454/City-Charter-PDF
  7. http://vermonthistory.org/research/research-resources-online/green-mountain-chronicles/the-flood-of-27-1927
  8. http://archive.boston.com/news/local/articles/2007/03/12/vermonts_capital_braces_for_possible_river_flooding/
  9. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৮ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  10. http://www.erh.noaa.gov/btv/climo/stations/montpelier.shtml
  11. http://www.city-data.com/us-cities/The-Northeast/Montpelier-Economy.html
  12. https://www.businessinsider.com/montpelier-doesnt-have-a-mcdonalds-2017-12