বিষয়বস্তুতে চলুন

মনোস্যাকারাইড

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মনোস্যাকারাইড

মনোস্যাকারাইড (গ্রীক শব্দ mono: এক, saccharin: চিনি), কার্বোহাইড্রেটের মৌলিক ও ক্ষুদ্রতম একক যাদের আর সরলতম পদার্থে বিশ্লেষণ সম্ভব নয়।[][] এর সাধারণ সূত্র CnH2nOn । সাধারণত এরা বর্ণহীন, পানিতে দ্রবণীয়। কিছু মনোস্যকারাইড মিষ্টি স্বাদযুক্ত। যেমন: গ্লুকোজ (dextrose), ফ্রুকটোজ (levulose) এবং গ্যালাক্টোজ

মনোস্যাকারাইড হলো ডাইস্যাকারাইড (যেমন সুক্রোজ এবং ল্যাক্টোজ) এবং পলিস্যাকারাইড (যেমন সেলুলোজ এবং শ্বেতসার) এর গাঠনিক একক। সাধারণত দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত টেবিল চিনি নিজেই একটি ডাইস্যাকারাইড সুক্রোজ যা দুটি মনোস্যাকারাইড আলফা ডি-গ্লুকোজ এবং বিটা ডি-ফ্রুক্টোজের প্রতিটির একটি করে অণু গঠিত।

অণুতে অবস্থিত যে কটি কার্বন পরমাণু হাইড্রক্সিল মূলকের সাথে যুক্ত হত তারা সকলেই অপ্রতিসম/কাইরাল প্রকৃতির। শেষ কার্বনটির জন্য সমাবয়বতার সৃষ্টি হয়।

কোষে এগুলি গ্লাইকোলাইসিসক্রেবস চক্র দ্বারা জারিত হয় ও শক্তি উৎপাদন করে।

গঠন ও নামকরণ

[সম্পাদনা]

কিছু ব্যতিক্রম (যেমন ডিঅক্সিরাইবোজ) ছাড়া মনোস্যাকারাইডের সাধারণ রাসায়নিক সংকেত (CH2O)x যেখানে x≥৩ । কার্বন সংখ্যার ভিত্তিতেই এদের নামকরণ করা হয়; যেমন: ট্রায়োজ (৩), টেট্রোজ (৪), পেন্টোজ (৫), হেক্সোজ (৬), হেপ্টোজ (৭) ইত্যাদি।

হেক্সোজদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো গ্লুকোজপেন্টোজ শর্করার উদাহরণ হলো রাইবোজডিঅক্সিরাইবোজ যা যথাক্রমে আরএনএডিএনএ-এর অংশ। আটটির বেশি কার্বন যুক্ত মনোস্যাকারাইড খুব বিরল, যার মূল কারণ গঠনগত অস্থিতিশীলতা। জলীয় দ্রবণে এরা সাধারণত চক্রাকার যৌগ গঠন করে।

সরল রৈখিক গঠন

[সম্পাদনা]

সাধারণত মনোস্যাকারাইডদের সরল রৈখিক হিসেবে গঠন প্রকাশ করা হয় যাতে একটি কার্বনিল মূলক বর্তমান। H(CHOH)n(C=O)(CHOH)mH, যেখানে n + 1 + m = x। তাই মূল সংকেত হল CxH2xOx

যদি কার্বনিলটি অ্যালডিহাইড হয়, তবে তা অ্যালডোজ শর্করা (যেমন গ্লুকোজ) ও কিটোন হলে কিটোজ শর্করা (যেমন ফ্রুক্টোজ)। অ্যালডোজে অ্যালডিহাইড গ্রুপ ১নং কার্বনে অবস্থান করে কিন্তু কিটোজে কিটোন গ্রুপ ২নং কার্বনে অবস্থান করে। অ্যালডোজের জন্য উপসর্গ হিসেবে "-ওজ" ও কিটোজের জন্য "-ইউলোজ" ব্যবহার করা হয়।

ত্রিমাত্রিক তলে স্টিরিওরসায়ন

[সম্পাদনা]

মনোস্যাকারাইডের কার্বনগুলি সাধারণত অপ্রতিসম হয় বা কাইরাল হয়। ফিশার প্রোজেকশন অঙ্কের মাধ্যমে বিষয়টি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত হওয়া সম্ভব।

কনফিগারেশন

[সম্পাদনা]

প্লেন পোলারাইজড আলোর প্রভাবে অণুগুলির ঘূর্ণন ঘটে, যা কনফিগারেশনের উদ্ভব ঘটায়। প্লেন পোলারাইজড আলোকে যদি কোনো অণু ডানদিকে ঘোরায় তবে অণুটিকে ডেক্সট্রোরোটেটোরি বা ডানাবর্তী অণু বলে (d & +) এবং বামদিকে ঘোরালে অণুটিকে লেভোরোটেটোরি বা বামাবর্তী অণু বলে ( বা –)।

ফিশার প্রোজেকশন অনুযায়ী নীচের দিক থেকে দ্বিতীয় কার্বনে হাইড্রক্সিল গ্রুপের অবস্থানের ভিত্তিতে দুই প্রকৃতির শর্করা দেখা যায় যা D ও L নামে পরিচিত। D-তে হাইড্রক্সিল গ্রুপ ডানদিকে ও L-এ বামদিকে থাকে।

D- ও L-গ্লুকোজ

চক্রাকার রূপ (হেমিঅ্যাসিটাল ও হেমিকিটাল গঠন)

[সম্পাদনা]

নিজ গঠনের মধ্যেই নিউক্লিওফাইল অ্যাটাকের দরুণ রৈখিক গঠনটি চক্রাকার গঠনে পরিণত হয়। কার্বনিল গ্রুপ ও হাইড্রক্সিল গ্রুপ যুক্ত হয়ে চক্রাকার যৌগ গঠন করে। অ্যালডোজ শর্করা হেমিঅ্যাসিটাল ও কিটোজ হেমিকিটালে রূপান্তরিত হয়।

চক্রাকার গঠনটি ফিউরান বা পাইরান চক্রের মতো দেখতে হবার জন্য এদের অপর নাম ফিউরানোজ (সাধারণত যেমন ফ্রুক্টোজ) বা পাইরানোজ (সাধারণত যেমন গ্লুকোজ)।

D-গ্লুকোজ এর ফিউরানোজ থেকে রৈখিক থেকে পাইরানোজ আকারের রূপান্তর
কিছু শর্করার পাইরানোজ আকার
কিছু হেক্সোজ শর্করার পাইরানোজ আকার

চক্রাকার রূপ ধারণ করার ফলে নতুন ধরনের সমাবয়বতার সৃষ্টি হয় যা অ্যানোমেরিজম নামে পরিচিত। এটিতে অক্সিজেন পরমাণুর ঠিক পার্শ্ববর্তী কার্বনে হাইড্রক্সিল গ্রুপের অবস্থানের ভিত্তিতে দুটি রূপ কল্পনা করা হয়, যথাক্রমে আলফা ও বিটা। রূপ দুটির আন্তঃপরিবর্তন হবার ঘটনাকে মিউটাঘূর্ণন বলে।[]

হাওয়ার্থ প্রোজেকশন

[সম্পাদনা]

[]

জাতকসমূহ

[সম্পাদনা]

গুরুত্বপূর্ণ মনোস্যকারাইডের জাতকসমূহ নিম্নরূপঃ

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Carbohydrates"Chemistry for Biologists। Royal Society of Chemistry। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০১৭ 
  2. Collins, Peter M.; Ferrier, Robert J. (১৯৯৫)। Monosaccharides : their chemistry and their roles in natural products (ইংরেজি ভাষায়)। Robert J. Ferrier। Chichester: Wiley & Sons। পৃষ্ঠা 4। আইএসবিএন 0-471-95343-1ওসিএলসি 30894482 
  3. Pigman, William Ward; Anet, E. F. L. J. (১৯৭২)। "Chapter 4: Mutarotations and Actions of Acids and Bases"। Pigman and Horton। The Carbohydrates: Chemistry and Biochemistry1A (2nd সংস্করণ)। San Diego: Academic Press। পৃষ্ঠা 165–194। 
  4. IUPAC, Compendium of Chemical Terminology, 2nd ed. (the "Gold Book") (1997). Online corrected version: (2006–) "Haworth representation". ডিওআই:10.1351/goldbook.H02749

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]