মধ্যযুগীয় রন্ধনশৈলী
মধ্যযুগীয় রন্ধন মূলত পাঁচশ থেকে পনের'শ শতক পর্যন্ত মধ্যযুগীয় সময়কার ইউরোপের নানা সংস্কৃতির রন্ধন প্রণালী, খাদ্য, খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে। তখনকার সময়ে মানুষের খাদ্যাভ্যাসের ও রন্ধনপ্রণালীর তেমন একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যেতনা যেমনটা বর্তমান সময়ে দেখা যায়। যদিও এ পরিবর্তনের হাত ধরেই বর্তমান ইউরোপীয় রন্ধনের সূচনা হয়। মধ্যযুগের শুরু থেকে খাদ্যশস্যই ছিল মানুষের প্রধান খাদ্য।পরবর্তীতে ভাত জাতীয় খাবারের সাথে মানুষ পরিচিত হয় এবং ১৫৩৬ সাল নাগাদ আলু কে প্রধান খাদ্য হিসেবে তুলে ধরা হয়। তখন বার্লি, ওট এবং যব এসব খাদ্যশস্যকে 'দরিদ্রের খাবার' হিসেবে ধরা হত। অভিজাতদের খাদ্য ছিল আটা ও ময়দায় তৈরি রুটি,জাউ,পাস্তা ইত্যাদি। মটরশুঁটি ও বিভিন্নপ্রকার সবজি দিয়ে এসব খাবার খাওয়া হত।
তখনকার যুগে মাংস ছিল বেশ দামী এবং মাংস খাওয়াকে বেশ সম্মানের চোখে দেখা হত। বিশেষ করে শিকার হতে প্রাপ্ত মাংস অভিজাত শ্রেণিদের টেবিলে শোভা পেত। শূকর ও মুরগির মাংস ছিল বহুল প্রচলিত। তবে গরু ও অন্যান্য বড় গৃহপালিত পশুপাখি পালনে বেশি খরচ হত বিধায় এসবের মাংসের খুব বেশি প্রচলন ছিলনা।
আবার উত্তর ইউরোপের মানুষের আমিষের প্রধান উৎস ছিল সামুদ্রিক ও নদীর মাছ। মাছের মধ্যে কড এবং হেরিং ছিল প্রধান। তারা এসব মাছকে ধোঁয়ায় শুকিয়ে সংরক্ষণ করে রাখতো। এর ফলে ধীরগতির যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং খাদ্য সংরক্ষণ প্রণালীর সময়সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য প্রক্রিয়া অনেক খাদ্যদ্রব্যসমূহ এবং দূরদূরান্তে বাণিজ্যকে অনেক ব্যয়বহুল করে তোলে। আর ঠিক একারণেই দরিদ্র শ্রেণির খাবারের তুলনায় অভিজাত শ্রেণির খাদ্যদ্রব্য এবং খাদ্যাভ্যাসে ভিনদেশিদের প্রভাব বেশিমাত্রায় পরিলক্ষিত হয়। বিদেশি মসলা আমদানি নির্ভর হওয়ায় বেশি খরচ পড়ত। আর সমাজের প্রত্যেক শ্রেণি তার চেয়ে ধনী শ্রেণিদের অনুকরণ ও তাদের সাথে প্রতিযোগিতা করত। এর ফলে ১২শ শতাব্দী থেকে ধীরেধীরে আন্তর্জাতিক ও বৈদেশিক বাণিজ্যিক যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে মধ্যযুগীয় নগরীসমূহের উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে।
বিলাসবহুল মসলার অর্থনৈতিক অপ্রতুলতা ছাড়াও কিছু নির্দিষ্ট শ্রেণির জনগোষ্ঠির জন্য কিছু নির্ধারিত খাদ্যবস্তু গ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়। ব্যয়নিয়ন্ত্রণ আইন দ্বারা ধনিক শ্রেণিদের বিলাস দ্রব্য ক্রয়ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করা হত। শ্রমিক শ্রেণির খাদ্য একটু কম পরিশোধিত হবে এমন সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রচলিত ছিল।
খাদ্যরীতি
[সম্পাদনা]প্রাচীনকাল থেকেই ভূমধ্যসাগরীয় অববাহিকায় রন্ধনপ্রণালী ছিল শস্যদানা নির্ভর। বিশেষকরে বিভিন্ন প্রকার গমের ব্যবহার ছিল লক্ষ্যণীয়।জাউ, মণ্ড এবং পরবর্তিতে রুটি হয়ে ওঠে প্রধান খাদ্য।তৎকালিন জনপদে এসব খাদ্যই সিংহভাগ মানুষের ক্ষুধা মেটাত। ৮ম থেকে ১১শ শতাব্দি পর্যন্ত খাদ্যে ব্যবহৃত খাদ্যশস্যের অনুপাত এক তৃতীয়াংশ থেকে তিন চতুর্থাংশে বৃদ্ধি পায়। পুরো মধ্যযুগীয় সময়কাল জুড়ে ইউরোপের খাদ্যব্যবস্থা ছিল গম নির্ভর। তাছাড়া সেসময় ইউরোপজুড়ে খ্রীষ্টধর্মের ব্যাপক প্রচার ও প্রসারের সাথে সাথে উত্তর ইউরোপের দেশগুলোতে খাদ্য হিসেবে গমের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারিত হয়। তবে শীতপ্রধান দেশগুলোতে তা ছিল সিংহভাগ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। কেবলমাত্র উচ্চশ্রেণির মানুষগণ এগুলো ভোগ করার মত যথেষ্ট সামর্থবান ছিল।
ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে অন্যান্য খাদ্যের তুলনায় রুটির গুরুত্ব ছিল অনেক বেশি যার প্রমাণ পাওয়া যায় যীশুর নৈশভোজের অনুষ্ঠানগুলোতে।