বিষয়বস্তুতে চলুন

মধু খান্না

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

মধু খান্না দিল্লিতে বসবাসকারী একজন ভারতীয় পণ্ডিত যিনি ভারতীয় অধ্যয়ন, ধর্মীয় অধ্যয়ন এবং তান্ত্রিক অধ্যয়নের ওপর কাজ করেন। তিনি ভারতের দেবীকেন্দ্রিক শাক্ত তান্ত্রিক ঐতিহ্যের একজন সুপরিচিত বিশেষজ্ঞ। বর্তমানে তিনি তন্ত্র ফাউণ্ডেশন এবং শ্রীকুঞ্জের পরিচালক ও প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বর্তমানে মধ্যপ্রদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিভাগ কর্তৃক তাদের ওঙ্কারেশ্বর প্রকল্পের জন্য প্রতিষ্ঠিত আচার্য শঙ্কর সাংস্কৃতিক একতা ন্যাসের একজন বিষয় বিশেষজ্ঞ হিসেবেও কাজ করছেন।[] বর্তমানে তিনি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল[] এবং সিমলার ইণ্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাডভান্সড স্টাডিজের ফেলোশিপ কাউন্সিলেও দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর অনেক গবেষণাপত্রের পাশাপাশি বেশ কিছু বই এবং প্রদর্শনী ক্যাটালগ রয়েছে। তিনি তিনটি জাতীয় প্রকল্পের পাশাপাশি ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় শিল্পকলা কেন্দ্রের (আইজিএনসিএ) বেশ কয়েকটি গবেষণা প্রকল্পে অবদান রেখেছেন।[]

শিক্ষা

[সম্পাদনা]

মধু খান্না ১৯৮৬ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্য অধ্যয়ন অনুষদ থেকে ভারততত্ত্ব / ধর্মীয় স্টাডিজে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অল সোলস কলেজের নীতিশাস্ত্র ও ধর্ম বিভাগের অধ্যাপক অ্যালেক্সিস স্যাণ্ডারসনের তত্ত্বাবধানে শিবানন্দের ত্রয়ী গ্রন্থের ওপর ভিত্তি করে দ্য কনসেপ্ট অ্যাণ্ড লিটার্জি অফ দ্য শ্রীচক্র শীর্ষক তাঁর পিএইচডি গবেষণা পত্রটি প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর বিষয় ছিল গূঢ় হিন্দুধর্ম, যেগুলি বিশেষ করে হিন্দু তন্ত্র এবং দেবী ঐতিহ্যের সাথে যুক্ত। তাঁর গবেষণায় দেখা গেছে যে শক্তিধর্মের কেন্দ্রীয় মতবাদ হিসেবে শ্রীবিদ্যার উৎপত্তি কাশ্মীরে[][][

কর্মজীবন

[সম্পাদনা]

মধু খান্না ধর্মীয় / ভারতীয় অধ্যয়নের অধ্যাপক এবং নতুন দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার তুলনামূলক ধর্ম ও সভ্যতা অধ্যয়ন কেন্দ্রের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেখানে তিনি হিন্দু অধ্যয়ন, ধর্ম ও লিঙ্গ, ধর্ম ও বাস্তুশাস্ত্র এবং ধর্ম ও শিল্পকলা ক্ষেত্রগুলিতে আন্তঃসাংস্কৃতিক অধ্যয়ন পড়াতেন। তাঁর প্রবর্তিত এই পাঠ্যক্রমগুলি ভারতে প্রথমবারের মতো জামিয়ায় পড়ানো হয়েছিল। জামিয়ায় প্রথম আন্তর্জাতিক ধর্মীয় অধ্যয়ন সম্মেলন আয়োজনের কৃতিত্বও তাঁর। জামিয়ায় তাঁর কর্মজীবন শেষ করার পর, তাঁকে নতুন দিল্লির জাতীয় জাদুঘর টেগোর জাতীয় ফেলোশিপ প্রদান করে।

এর আগে, তিনি আইজিএনসিএ-তে সহযোগী অধ্যাপক (ধর্মীয় অধ্যয়ন / ভারতীয় অধ্যয়ন) ছিলেন, যেখানে তিনি গবেষণা করেছিলেন এবং সমস্ত প্রধান, আন্তঃবিষয়ক গবেষণা প্রকল্প ও প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটির নাম: প্রকৃতি : ম্যান ইন হার্মনি উইথ দ্য এলিমেন্টস, এটি একটি আন্তঃসাংস্কৃতিক, আন্তঃবিষয়ক প্রকল্প; ঋত : কসমিক অর্ডার অ্যাণ্ড কেয়স, এটি একটি আন্তঃসাংস্কৃতিক সেমিনার যা ঋতের বহুমুখী বৈদিক ধারণাটি অন্বেষণ করে, সেইসঙ্গে জীবনের সকল দিক, প্রাকৃতিক শৃঙ্খলা, মানবজগৎ, সামাজিক ও নৈতিক জগৎ এবং শিল্পকলাকে বিস্তৃত করে; এবং রূপ-প্রতিরূপ: ম্যান, মাইণ্ড অ্যাণ্ড মাস্ক। তিনি দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল সেন্টার ফর দ্য আর্টস (আইজিএনসিএ) এর নারীবাদ: জেণ্ডার, কালচার অ্যাণ্ড সিভিলাইজেশন নেটওয়ার্ক -এর ধারণা তৈরি এবং বাস্তবায়ন করেছিলেন। তাঁর একটি অগ্রণী প্রকল্প নারদ, যা দক্ষিণ এশিয়ায় নারীর সাংস্কৃতিক সম্পদ এবং জ্ঞান ব্যবস্থাকে জেন্ডার বিদ্যার একটি অবিচ্ছেদ্য উপাদান হিসেবে সংশোধন এবং প্রাসঙ্গিক করে তোলে।

তিনি নতুন দিল্লির স্যাক্রেড ওয়ার্ল্ড রিসার্চ ল্যাবরেটরির সহযোগিতায় জাতীয় স্বার্থের সাথ জড়িত তিনটি গবেষণা-ভিত্তিক, বহু-মাধ্যম-প্রদর্শনী প্রকল্পের সাথেও জড়িত ছিলেন। এর মধ্যে সাম্প্রতিকতমটি ছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রকের আয়ুশ কর্তৃক নিয়োগ করা একটি প্রকল্প। প্রকল্পটির শিরোনাম ছিল প্ল্যানেট হেলথ: গ্রিন কনশাসনেস ইন আয়ুর্বেদ অ্যাণ্ড যোগ এ মাল্টিমিডিয়া এক্সিবিট (২০১০)। এই প্রকল্পের জন্য, বিষয়বস্তু গবেষণা (কন্টেন্ট রিসার্চ), দলিল রচনা (ডকুমেন্টেশন) এবং উৎপাদনের সাম্মানিক পরিচালক হিসেবে, তিনি ভারতীয় স্বাস্থ্য ঐতিহ্য, যেমন, আয়ুর্বেদ এবং যোগব্যায়ামের উপর ১৫০টি তথ্যচিত্র ভিডিও তৈরি করেছেন। এই প্রকল্পে পণ্ডিত, যোগব্যায়ামের গুরু এবং আয়ুর্বেদের বিশেষজ্ঞদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল। ২০০২ সালে ইটারনাল গান্ধী মাল্টিমিডিয়া মিউজিয়াম এক্সিবিট-এর জন্য তিনি মহাত্মা গান্ধীর জীবন ও দর্শনের ওপর গবেষণামূলক বিষয়বস্তু তৈরি করেছিলেন। ভিডিওগুলি ৫১টি ইন্টার-অ্যাক্টিভ স্থাপনায় প্রদর্শিত হয়। এগুলি স্থায়ীভাবে নতুন দিল্লির বিড়লা হাউসে অবস্থিত গান্ধী স্মৃতি স্মারকে অবস্থিত। এই স্থানে মহাত্মাকে হত্যা করা হয়েছিল। এই প্রকল্পে কাজের জন্য ২০০৫ সালে নতুন দিল্লির টাইমস ফাউণ্ডেশন মধু খান্নাকে মহাবীর মহাত্মা পুরস্কার প্রদান করে। জেরক্স পিএআরসি, পালো আল্টো রিসার্চ সেন্টার তাঁর দ্য ক্রসিং প্রজেক্ট: লিভিং, ডাইং অ্যাণ্ড ট্রান্সফর্মেশন ইন বেনারস (২০০২) -কে স্পনসর করেছিল। এই প্রকল্পের জন্য জেরক্স পিএআরসি তাঁকে এক্সেলেন্স ইন রিসার্চ সার্টিফিকেট প্রদান করেছে। ক্রসিং প্রজেক্ট নিম্নলিখিত পুরস্কারগুলি জিতেছে: অস্ট্রিয়ার লিনৎসের প্রিক্স আর্টস ইলেকট্রনিকা, ২০০২; নিউ ইয়র্কের আইডি ম্যাগাজিন গোল্ড প্রাইজ, ইন্টার-অ্যাক্টিভ রিভিউ, ২০০২; জাপানের জুরির সুপারিশ, সিজি আর্টস ফেস্টিভ্যাল, ২০০২। বর্তমানে, তিনি নতুন দিল্লিতে তন্ত্র ফাউণ্ডেশনের সভাপতি এবং প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তিনি সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের বামুনারা গ্রামে শ্রী কুঞ্জ - এ রুরাল সেন্টার ফর ইকো হেরিটেজ নামে একটি পরিবেশগত প্রকল্প শুরু করেছেন, যেখানে তিনি প্রাচীন হিন্দু ধর্মগ্রন্থের ওপর ভিত্তি করে ঐতিহ্যবাহী উদ্ভিদের একটি হার্বেরিয়াম (সংরক্ষিত উদ্ভিদ নমুনা সংগ্রহ) তৈরি করেছেন যাতে পরিবেশগত স্থায়িত্বের জন্য কর্মসূচি প্রচার করা যায়।

পুরস্কার

[সম্পাদনা]
  • ২০০৫: নতুন দিল্লির গান্ধী স্মৃতিতে ইটারনাল গান্ধী মাল্টিমিডিয়া মিউজিয়াম প্রদর্শনীর জন্য টাইমস ফাউণ্ডেশন, নতুন দিল্লি কর্তৃক মহাবীর মহাত্মা পুরস্কার প্রদান করা হয় ( রঞ্জিত মাক্কুনি, পবিত্র বিশ্ব গবেষণা পরীক্ষাগারের সাথে যৌথ পুরস্কার)।
  • ২০০২: দ্য ক্রসিং প্রজেক্ট: লিভিং, ডাইং অ্যাণ্ড ট্রান্সফর্মেশন ইন বেনারস -এর জন্য জেরক্স পিএআরসি, পালো আল্টো কর্তৃক গবেষণায় উৎকর্ষতার সনদ
  • ২০০০ তন্ত্র-অধ্যয়নে অবদানের জন্য সমরথ শিক্ষা সমিতি, দিল্লি কর্তৃক সরস্বতী রত্ন অভিষেক, ভারত গৌরব সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।
  • ১৯৯১-১৯৯৩: বোম্বের হোমি ভাবা ফেলোশিপ কাউন্সিল কর্তৃক উন্নত গবেষণার জন্য হোমি ভাবা ফেলোশিপ পুরস্কার।
  • ১৯৮০-১৯৮২ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত স্টাডিজে ডক্টরেট গবেষণার জন্য ইনলাক্স ফাউণ্ডেশন পুরস্কার।

নির্বাচিত কাজ

[সম্পাদনা]

প্রদর্শনী সূচী

[সম্পাদনা]
  • দ্য ক্রসিং প্রজেক্ট: লিভিং, ডাইং অ্যাণ্ড ট্রান্সফর্মেশন ইন বেনারস। সহ-লেখক। স্যাক্রেড ওয়ার্ল্ড ফাউণ্ডেশন, নতুন দিল্লি এবং সান ফ্রান্সিসকো, ২০০২।
  • টোকিওর শিনসোচা কর্তৃক তন্ত্র শিল্প সংগ্রহের উপর একটি প্রদর্শনী । অবদানকারী।
  • রূপ-প্রতিরূপ: ম্যান, মাইণ্ড অ্যাণ্ড মাস্ক: আইজিএনসিএ-র মুখোশ সংগ্রহের একটি প্রদর্শনী । সম্পাদক। ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় শিল্পকলা কেন্দ্র, ১৯৯৮।
  • ঋতা-ঋতু: কসমিক অর্ডার অ্যাণ্ড সাইকেল অফ সিজন। সম্পাদক। ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় শিল্পকলা কেন্দ্র, ১৯৯৬।
  • প্রকৃতি : ম্যান ইন হার্মনি উইথ দ্য এলিমেন্টস। সম্পাদক। ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় শিল্পকলা কেন্দ্র, ১৯৯৪।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Adi Sankaracarya Omkareshvar Project"। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মার্চ ২০২৫ 
  2. "Academic Council"Nalanda University (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-০৮ 
  3. "Indira Gandhi National Centre for the Arts Website"। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ডিসেম্বর ২০১৪ 
  4. "Madhu Khanna | EPFL Graph Search"graphsearch.epfl.ch। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০৩-১৬ 
  5. "International Seminar on Tantric Religion : Philosophy, Literature, Cults, Art, History & Continuities 25 - 29 September 2023" (পিডিএফ)Pondicherry University। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মার্চ ২০২৫  line feed character in |শিরোনাম= at position 25 (সাহায্য)

আরও পড়ুন

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]