মণিপুরি জাদুঘর
![]() | |
স্থাপিত | ১ অক্টোবর ২০০৬[১] |
---|---|
অবস্থান | ছনগাঁও, আদমপুর, কমলগঞ্জ মৌলভীবাজার, সিলেট, বাংলাদেশ |
স্থানাঙ্ক | ২৩°১৮′৩৪″ উত্তর ৯০°৩২′০৪″ পূর্ব / ২৩.৩০৯৪১৮৩° উত্তর ৯০.৫৩৪৫৫৮৬° পূর্ব |
ধরন | জাতিতাত্বিক জাদুঘর |
সংগ্রহের আকার | ৩০০+[২] |
প্রতিষ্ঠাতা | হামোম তনুবাবু |
মণিপুরি জাদুঘর (চাউবা মেমোরিয়াল মণিপুরি ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি মিউজিয়াম)[৩] বাংলাদেশের সিলেটের মৌলভীবাজারের একটি জাতিগত জাদুঘর। এটি কমলগঞ্জ উপজেলায় উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের ছনগাঁও গ্রামে অবস্থিত। এটি স্থানীয় মণিপুরি জনগোষ্ঠীর ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।[২] ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত জাদুঘরটি মণিপুরি জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে বিবেচিত। জাদুঘরটিতে মণিপুরিদের প্রাচীন বিলুপ্তপ্রায় সামগ্রীসহ প্রায় তিন শতাধিক উপকরণ স্থান পেয়েছে।[২] [৪] বাংলাদেশ তথা বিশ্বের ক্ষূদ্র নৃ-গোষ্ঠির প্রথম ও একমাত্র জাদুঘর হিসেবে বিবেচিত।[৫]
এই জাদুঘরে কয়েক শত বছরের পুরোনো ঘণ্টা, যুদ্ধের সময় ব্যবহৃত সরঞ্জাম, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের উপকরণ এবং মণিপুরি হস্তচালিত তাঁতের বিভিন্ন নিদর্শন সংগ্রহ ও প্রদর্শিত হয়েছে। জাদুঘরের সংগ্রহশালায় স্থানীয় মণিপুরি শিল্পীদের তৈরি হস্তশিল্পও প্রদর্শিত হয়, যা তাদের নান্দনিক দক্ষতার প্রমাণ বহন করে।[২] নৃতত্ত্ববিদ ও গবেষকরা মনে করেন, এটি বাংলাদেশের মধ্যে একক কোনো জাতিগোষ্ঠীকে ঘিরে প্রতিষ্ঠিত একমাত্র জাদুঘর হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।[২]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে প্রায় সোয়া লাখ মণিপুরি সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করে। এদের অধিকাংশ বসবাস করে সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ, হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট ও মাধবপুর, মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল, এবং সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক এলাকায়। এই সম্প্রদায় তাদের নিজস্ব ভাষা, ধর্ম, পোশাক ও সাংস্কৃতিক রীতিনীতির মাধ্যমে আলাদা পরিচয় বহন করে।
২০০৬ সালে স্থানীয় মণিপুরি বাসিন্দা হামোম তনুবাবু তার পিতার স্মৃতিকে কেন্দ্র করে নিজ বাড়িতে এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেন।[৬] প্রতিষ্ঠাকাল জাদুঘরটির নাম রাখা হয় চাউবা মেমোরিয়াল মণিপুরি ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি মিউজিয়াম।[২][৫]
জাদুঘরটি স্থানীয় জনগণের পাশাপাশি গবেষক, শিক্ষার্থী এবং দেশ-বিদেশের দর্শনার্থীদের কাছেও আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ২০২১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি এই জাদুঘরের ১৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।
সংগ্রহ
[সম্পাদনা]হামোম তনুবাবুর নিজ বাড়ির চারটি ঘরে বিস্তৃত এই জাদুঘরটির সংগ্রহে রয়েছে তিন শতাধিক উপকরণ,[৩] যেগুলোর অধিকাংশই মণিপুরি জনগোষ্ঠীর প্রাচীন ও বিলুপ্তপ্রায় সাংস্কৃতিক উপাদান। প্রতিটি উপকরণই মণিপুরি সমাজের নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিচয়ের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বিবেচিত।[২][৭] উল্লেখযোগ্য সংগ্রহের মধ্যে রয়েছে প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো মুদ্রা, মণিপুরি মহাকাব্যের চরিত্রভিত্তিক চিত্র, যুদ্ধ-সংক্রান্ত উপকরণ, নারীদের ব্যবহৃত অলঙ্কার ও সাজসজ্জার উপাদান। এছাড়াও রয়েছে প্রাচীন কাঁসা ও পিতলের গৃহস্থালির সামগ্রী; বাঁশ-বেতের দৈনন্দিন ব্যবহারের উপকরণ; ঐতিহ্যবাহী তাঁতের সরঞ্জাম; কৃষিকাজের যন্ত্রপাতি এবং বিভিন্ন প্রকার প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র।[৮][১]
প্রথম কক্ষে প্রদর্শিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিহিত মণিপুরি নারী ও পুরুষের ভাস্কর্য, যার পাশে রয়েছে বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত সামগ্রী। এতে মণিপুরি সংস্কৃতির নান্দনিক রূপ ও আচার-অনুষ্ঠানের সরাসরি প্রতিফলন ঘটে।[৩]
দ্বিতীয় কক্ষের সংগ্রহ মণিপুরি ধর্মীয় সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে, যেখনে স্থান পেয়েছে রাধা-কৃষ্ণের ভাস্কর্য এবং পূজায় ব্যবহৃত কাঁসার তৈজসপত্র, শঙ্খ ও অন্যান্য পূজাসামগ্রী।[৩]
তৃতীয় কক্ষটি তুলনামূলকভাবে বড়, যেখানে রয়েছে মণিপুরি নারীদের ব্যবহৃত সোনা, রুপা ও অন্যান্য ধাতব গয়না, সাজসজ্জার উপকরণ, তাঁতে কাপড় বোনার সরঞ্জাম, তাঁতে বোনা শাড়ি, গামছা, শালসহ উৎসবের পোশাক, প্রাচীন গ্রামোফোন ও বিভিন্ন ঐতিহাসিক ছবি। এখানে ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিহিত মণিপুরি মানুষের কিছু ভাস্কর্যও প্রদর্শিত হয়েছে।[৩]
চতুর্থ কক্ষটি সংগ্রহের দিক থেকে সবচেয়ে সমৃদ্ধ।[৩] এতে রয়েছে প্রাচীন কাঁসা ও পিতলের কলস, জগ, মগ, থালা ও খাদ্য সংরক্ষণের পাত্র; বাঁশ ও বেতের তৈরি ঝুড়ি, চালুনি, খলই, ছাতা, হাতপাখা, মাছ ধরার সরঞ্জাম, কাঠের চিরুনি, বসার টুল ইত্যাদি। এছাড়াও রয়েছে কৃষিকাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি এবং ঢোল, তবলা, প্রভৃতি প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র। সংগ্রহে মণিপুরি লিপি, যুদ্ধের অস্ত্র, মণিপুরি ভাষার গ্রন্থ এবং তামাক সেবনের পাত্রও রয়েছে।[৩][৮]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ রহমান ২০২৩, পৃ. ১৩৩।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ মৌলভীবাজার প্রতিনিধি (২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২)। "মণিপুরিদের স্মৃতি রক্ষায় ব্যক্তি উদ্যোগে জাদুঘর"। আজকের পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ২২ মে ২০২৫।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ তরফদার, শিমুল (৪ মে ২০১৯)। "মণিপুরিদের ঐতিহ্য যে জাদুঘরে"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মে ২০২৫।
- ↑ "মৌলভীবাজারে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে মনিপুরি যাদুঘর"। একুশে। ২০ জানুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২২ মে ২০২৫।
- ↑ ক খ রহমান ২০২৩, পৃ. ১৩২।
- ↑ আহমেদ, শামীম (৫ মার্চ ২০২২)। "মনিপুরী জাদুঘরের সংগ্রহশালায় ৩ শতাধিক উপকরণ"। ডিবিসি নিউজ। সংগ্রহের তারিখ ২২ মে ২০২৫।
- ↑ "মৌলভীবাজারে দেশের একমাত্র মনিপুরি জাদুঘর"। সুরমা মেইল ডটকম। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২। ২৫ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ মে ২০২৫।
- ↑ ক খ "মৌলভীবাজারে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে মণিপুরি জাদুঘর"। ফেনী: ঢাকা মেইল। ২২ মে ২০২৫। সংগ্রহের তারিখ ২২ মে ২০২৫।
- উৎস
রহমান, মো. মাহবুবর (২০২৩)। "তৃতীয় অধ্যায়: বাংলাদেশের কতিপয় জাদুঘর পরিচিতি"। বাংলাদেশের জাদুঘর (প্রথম প্রকাশ সংস্করণ)। ঢাকা: সুবর্ণ। আইএসবিএন 9789849762737।