মণিপাল
মণিপাল | |
---|---|
শহরতলী/শহর | |
মণিপাল স্কাইলাইন, মনিপাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি , মনিপাল একাডেমি অফ হায়ার এডুকেশন , মনিপাল এন্ড পয়েন্ট পার্ক, মনিপাল লেক | |
স্থানাঙ্ক: ১৩°২০′৪৯″ উত্তর ৭৪°৪৭′১৭″ পূর্ব / ১৩.৩৪৭° উত্তর ৭৪.৭৮৮° পূর্ব | |
দেশ | ![]() |
রাজ্য | কর্ণাটক |
জেলা | উড়ুপি |
অঞ্চল | টুলু নাড়ু |
আয়তন | |
• মোট | ২৯.৭১ বর্গকিমি (১১.৪৭ বর্গমাইল) |
উচ্চতা | ৭৩ মিটার (২৪০ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০২০) | |
• মোট | ৫০,০০১ |
• জনঘনত্ব | ১,৭০০/বর্গকিমি (৪,৪০০/বর্গমাইল) |
বিশেষণ | মণিপালি |
ভাষা | |
• সরকারি | কন্নড়, ইংরেজি |
সময় অঞ্চল | আইএসটি (ইউটিসি+৫:৩০) |
পিন | ৫৭৬ ১০৪ |
টেলিফোন কোড | ০৮২০ |
আইএসও ৩১৬৬ কোড | IN-KA |
যানবাহন নিবন্ধন | KA-20 |
ওয়েবসাইট | www |
মণিপাল হল ভারতের কর্ণাটকের উপকূলীয় উড়ুপি জেলার একটি উপশহর এবং বিশ্ববিদ্যালয় শহর। এটি উদুপি শহরের কেন্দ্র থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং উড়ুপি সিটি পৌরসভা দ্বারা পরিচালিত হয়। মণিপাল উপকূলীয় কর্ণাটকে, ম্যাঙ্গালোর থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তরে এবং আরব সাগর থেকে ৮ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৭৫ মিটার উচ্চতায় একটি মালভূমির উপর অবস্থিত, যেখানে থেকে পশ্চিমে আরব সাগর এবং পূর্বে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার মনোরম দৃশ্য দেখা যায়।
মণিপাল অ্যাকাডেমি অব হায়ার এডুকেশনের জন্য বিখ্যাত এই শহরে প্রতি বছর ২৫,০০০ এরও বেশি শিক্ষার্থী আসে। ফলে শহরের বেশিরভাগ জনগোষ্ঠী শিক্ষার্থী বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী।[১] ম্যাঙ্গালোর এবং উড়ুপি থেকে আসা শিক্ষার্থীদের আকর্ষণের জন্য শহরে এন্ড পয়েন্ট, মণিপাল লেক, মালপে বিচ, এবং পিকক পয়েন্ট এর মতো অনেক আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে। মণিপাল অ্যাকাডেমি অফ হায়ার এডুকেশন শহরটিকে একটি শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক শহরে রূপান্তরিত করার মূল কারিগর।[২] স্থানীয়রা একে "ক্যাম্পাস টাউন" বলেও ডাকেন।[৩]
একটি আঞ্চলিক তথ্য প্রযুক্তি কেন্দ্র হিসেবে, মণিপাল ভারতের অন্যতম উচ্চ মোবাইল ফোনের ঘনত্ব রয়েছে।[৪]
অবস্থান
[সম্পাদনা]মন্দির শহর উদুপির কেন্দ্র থেকে ৫ কিমি (৩.১ মাইল) পূর্বে এবং ম্যাঙ্গালোরের উত্তর দিকে ৬৫ কিমি (৪০ মাইল) দূরে অবস্থিত মণিপাল আগে শিবাল্লি গ্রামের পঞ্চায়েতের অংশ ছিল। এখন এটি উড়ুপির শহরের অংশ। নামটি "মুন্ন" এবং "পল্লা" থেকে উদ্ভূত, যা ইংরেজি রূপান্তরে "মণিপাল" হয়েছে। তুলু ভাষায় "মুন্ন" মানে "কাদা" এবং "পল্লা" মানে "হ্রদ"। এই হ্রদ, যা প্রায় ৫০০ মিটার ব্যাসার্ধের বৃত্তাকারে, মণিপাল নামে পরিচিত, এটি আরব সাগর থেকে প্রায় ৬ কিমি (৩.৭ মাইল) দূরে শহরের মাঝখানে অবস্থিত। এখানে নৌকায় ভ্রমণের সুবিধা রয়েছে। মণিপালের ঠিক উত্তরে স্বর্ণ নদী প্রবাহিত হয়। বিনোদনের জন্য এন্ড পয়েন্ট পার্ক এবং ট্রি পার্কের মতো সুবিধাগুলি উপলব্ধ।
মণিপাল একসময় ছিল একটি অনুর্বর পাহাড় যেখানে খুব অল্প গাছপালা ছিল। এই পাহাড়কে বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় নগরীতে রূপান্তরিত করেন ড. টি. এম. এ. পাই, যিনি ১৯৫৩ সালে প্রথমে কস্তুরবা মেডিকেল কলেজ স্থাপন করেন। এটি বর্তমানে মণিপাল একাডেমি অব হায়ার এডুকেশন-এর অংশ। কাছাকাছি পর্যটন স্থানের মধ্যে রয়েছে অগুম্বে, কুদ্রেমুখ, কাপু এবং মালপে।[৫]
জলবায়ু
[সম্পাদনা]সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মণিপালে আবহাওয়া উষ্ণমন্ডলীয় থাকে, যেখানে দৈনিক গড় তাপমাত্রা প্রায় ২৭ °C (৮১ °F)। জুন থেকে মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত মণিপাল বিশ্বের অন্যতম চরম মৌসুমী বৃষ্টিপাত প্রত্যক্ষ করে, যেখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫০০–৫৬০ সেমি (২০০–২২০ ইঞ্চি)। ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত আবহাওয়া গরম এবং আর্দ্র থাকে, তখন দৈনিক তাপমাত্রা সাধারণত ৩৫ °C (৯৫ °F)-এ পৌঁছে যায়।[৬]
বড় শহর থেকে দূরে থাকার কারণে এবং শহরের অত্যন্ত উষ্ণমন্ডলীয় আবহাওয়া অনেক পাখিকে আকর্ষণ করে। ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সালে ১৫৫টি ভিন্ন প্রজাতির পাখি নথিভুক্ত করা হয়, যার মধ্যে বিরল প্রজাতি যেমন টিকেলের থ্রাশ, ব্লু-ইয়ার্ড কিংফিশার এবং স্লেটি-ব্রেস্টেড রেইলও অন্তর্ভুক্ত।[৭]
পরিবহন
[সম্পাদনা]রাস্তা
[সম্পাদনা]মণিপাল সড়ক পথে ম্যাঙ্গালোরের সাথে সংযুক্ত (যাত্রায় প্রায় ৭৫ মিনিট সময় লাগে) এবং উদুপি, কারকালা ও কুন্ডাপুরের মতো শহরের সাথে বেশ কয়েকটি বেসরকারি বাস পরিষেবা এবং কেএসআরটিসি শহর বাসের মাধ্যমে সংযুক্ত, যা প্রতি ত্রিশ মিনিট অন্তর চলে।[৮]
শহরটি বেঙ্গালুরু, হায়দ্রাবাদ, গোয়া এবং মুম্বাইয়ের সাথে রাত্রিকালীন বাস পরিষেবা প্রদান করে।
এছাড়া মালপে বিচ, ডেল্টা বিচ এবং ধর্মস্থলের মতো জনপ্রিয় পর্যটন স্থানের সাথে সংযোগকারী বাস পরিষেবাও রয়েছে।
কর্ণাটক স্টেট রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন ম্যাঙ্গালোর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং মণিপালের মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস পরিষেবা পরিচালনা করে।[৯]
রেল
[সম্পাদনা]মণিপালের নিকটতম রেলস্টেশন হলো উদুপি স্টেশন, যা কঙ্কণ রেলওয়ে লাইনে অবস্থিত এবং শহর থেকে ৪ কিলোমিটার পশ্চিমে। এই স্টেশন বেঙ্গালুরু, মুম্বাই, গোয়া, কেরালা, নয়াদিল্লি, গুজরাট, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, তামিলনাড়ু, উত্তরাখণ্ড এবং পাঞ্জাবের সাথে সংযোগকারী ট্রেন পরিষেবা প্রদান করে। এটি জাতীয় সড়ক ১৬৯এ থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে।[১০]
নিকটতম প্রধান রেলস্টেশন হলো ম্যাঙ্গালোর সেন্ট্রাল, যা মণিপাল থেকে ৬৭ কিমি (৪২ মাইল) দক্ষিণে ম্যাঙ্গালোরে অবস্থিত।
আকাশ
[সম্পাদনা]নিকটতম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলো ম্যাঙ্গালোর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যা মণিপাল থেকে প্রায় ৬২ কিমি (৩৯ মাইল) দক্ষিণে অবস্থিত। এই বিমানবন্দর মুম্বাই, বেঙ্গালুরু, হায়দ্রাবাদ, চেন্নাই এবং দিল্লির মতো ভারতীয় শহরগুলির সাথে সংযোগ স্থাপন করে এবং আন্তর্জাতিকভাবে ওমান, কুয়েত, বাহরাইন, কাতার, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে সংযুক্ত। যাত্রীদের মণিপাল এবং উদুপি যাতায়াতের জন্য প্রি-পেইড ট্যাক্সি সুবিধা উপলব্ধ। কেএসআরটিসি মণিপাল এবং ম্যাঙ্গালোর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সরাসরি বাস পরিষেবা প্রদান করে।[৯]
বেঙ্গালুরুর কেম্পেগৌড়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সাথেও মণিপাল সরাসরি বাস পরিষেবা সংযুক্ত, যা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আন্তর্জাতিক ছাত্রদের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে। কেএসআরটিসি সম্প্রতি "ফ্লাইবাস" নামে একটি প্রিমিয়াম দৈনিক বাস পরিষেবা চালু করেছে, যা মণিপাল থেকে বেঙ্গালুরুর কেম্পেগৌড়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত চলাচল করে।
এছাড়াও উদুপি শহরের জন্য বাস পরিষেবাও উপলব্ধ, যেখানে যাত্রীরা রেলস্টেশনে যাতায়াতের সুবিধা নিতে পারেন।
শিক্ষা
[সম্পাদনা]

মণিপাল পরিচিতি লাভ করে যখন ড. টি. এম. এ. পাই ১৯৫৩ সালে কস্তুরবা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৫৭ সালে মণিপাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি প্রতিষ্ঠা করেন, যা প্রকৌশলের জন্য একটি জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান। পরবর্তী সময়ে তিনি আরও ২১টি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন, যা ১৯৯৩ সালে মণিপাল একাডেমি অব হায়ার এডুকেশনের অংশ হয়।[১১] মণিপাল একাডেমি অফ হায়ার এডুকেশন ২০১৮ সালে "ইনস্টিটিউট অব এমিনেন্স" মর্যাদা পায়।[১২] এটি ভারতের শীর্ষ দশটি বেসরকারি প্রকৌশল কলেজের মধ্যে স্থান পেয়েছে এবং কর্ণাটক রাজ্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে।[১৩] ড. পাই মণিপাল প্রি-ইউনিভার্সিটি কলেজও প্রতিষ্ঠা করেন।

মণিপাল একটি প্রধান প্রযুক্তি এবং চিকিৎসা গবেষণা কেন্দ্র, যেখানে প্রায় প্রতি সপ্তাহে বড় বড় সম্মেলন এবং সেমিনার আয়োজিত হয়। মণিপাল ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি অ্যান্ড বিজনেস ইনকিউবেটর, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ব্যবসা উন্নয়ন কেন্দ্র, প্রতিষ্ঠার পর থেকে অনেক ছাত্র-পরিচালিত প্রযুক্তি এবং গণমাধ্যম স্টার্টআপ গড়ে উঠেছে।[১৪]
আরো দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Tejaswi, Mini Joseph (২৯ জানুয়ারি ২০০৯)। "Mangalore a melting pot"। The Times of India। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১০-১২।
- ↑ "Manipal: How a barren hillock in Mangalore has transformed into a university town"। The Economic Times। ২০১৬-০২-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১২-১৭।
- ↑ "History | Manipal Academy of Higher Education (formerly, Manipal University)"। manipal.edu। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৩-২৭।
- ↑ "A cool crowd"। The Hindu। ২০০৬-০২-২৩। ২০০৭-১০-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৬-১১।
- ↑ "Manipal Karnataka"। Maps of India। ২০১২-১০-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৮-১৬।
- ↑ "Manipal Climate – Averages"। ২০১৩-০১-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "Birders record 155 species in Manipal – The Hindu"। The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
- ↑ "Manipal to Hyderabad Bus Tickets Booking, Save upto 25%"। redBus। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৩-২৭।
- ↑ ক খ "KSRTC introduces AC bus service to Mangaluru International Airport"। The Hindu। নভেম্বর ২০২২।
- ↑ Kumar, Vikas। "Trains to Udupi Station - 71 Arrivals KR/Konkan Zone - Railway Enquiry"। indiarailinfo.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-১০।
- ↑ "Mix it like Manipal"। indianexpress.com। ৭ এপ্রিল ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৮-১৩।
- ↑ "Six universities granted 'Institute of Eminence' status"। The Hindu BusinessLine। ৯ জুলাই ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৩-২৭।
- ↑ "Manipal Academy tops Karnataka's university rating"। Deccan Herald (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৯-১৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-১০।
- ↑ "Manipal varsity all set to run on solar power"। Deccan Herald (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১২-০৩-০৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-১০।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]