মঞ্চ শিল্পরীতি (বাংলার মন্দির স্থাপত্যরীতি)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রাধামাধব মন্দিরের বিশাল তুলসীমঞ্চ
রাস মঞ্চ, বিষ্ণুপুর, পশ্চিমবঙ্গ
দোল মঞ্চ, দামোদর মন্দির, রাউতারা, হাওড়া

মঞ্চ বা স্টেজের মত করে মন্দির করাকেই মঞ্চ শিল্প ধারার স্থাপত্য বলা হয়। নানা ধর্মীয় উত্সবের সময় বিগ্রহ এনে মঞ্চে বসানো হত বলে চার দিক থেকে দেখতে পাওয়ার জন্য খিলান সহযোগে খোলা থাকে। তবে এর ব্যতিক্রমও দেখা যায়।

প্রকারভেদ[সম্পাদনা]

মঞ্চ স্থাপত্যকে বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন উত্সবে ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়। সেই হিসাবে মূলত তিন প্রকার মঞ্চ স্থাপত্য শৈলী দেখা যায়।[১]

  • তুলসী মঞ্চ -এটি সাধারনত চার কোনাকৃতি হয়।
  • দোল মঞ্চ - দোল মঞ্চ সাধারনত চার কোনাকৃতি হয়।
  • রাস মঞ্চ - এটি সাধারনত আট কোনাকৃতি হয়।

রাস মঞ্চ[সম্পাদনা]

মঞ্চ কথাটার মানে হলো উঁচু প্যাভিলিয়ন। বিভিন্ন কারণে এই মঞ্চ করে পূজা আরাধনা করা হতো। ভগবান শ্রীকৃষ্ণর অন্যতম একটি উৎসব হলো রাস উৎসব। হেমন্তকালে এই রাস উৎসবের জন্য মূলত অষ্টভুজাকার মঞ্চ তৈরি করে কৃষ্ণ মূর্তি মন্দির থেকে বের করে সেখানে আনা হতো। যেহেতু উৎসবের সময় অনেক মানুষের সমাগম হয় তাই সবাই যাতে দেখতে পায় সেই জন্য চার দিক খোলা মঞ্চে মূর্তি রাখা হতো।[২]

মেদিনীপুরে একটি বিশেষ ধরনের চূড়া বিশিষ্ঠ রাস মঞ্চ করা হতো। অনেকটা মাঝখানটা কিছুটা স্ফীত উল্টানো ফুলের মতো দেখতে হতো চূড়াটি। স্থানীয়রা এটিকে রসুন চূড়া বলেন।

রাস মঞ্চ গুলো সাধারণত মূল মন্দিরের থেকে একটু ছোটো হতো কিন্তু সেটি মন্দির প্রাঙ্গনেই তৈরি করা হতো যাতে উৎসবের সময় ঠাকুর নিয়ে এনে রাখতে সুবিধা হয়।

তবে কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রমও দেখা যায়। যেমন বিষ্ণুপুরের পটুয়াতে। এখানে স্থানীয় বিভিন্ন মন্দির থেকে ঠাকুর উৎসবের দিন একটি রাস মঞ্চে আনা হতো। সেই কারণে রাস মঞ্চটি অনেক বড়ো।

মেদিনীপুরের কিছু রাস মঞ্চে টেরাকোটার ভাস্কর্য দেখা যায়। এগড়ার কাছে কিছু রাস মঞ্চে ভাস্কর্য দেখা যায়।

বিশালাকার রাস মঞ্চ দেখা যায় বিষ্ণুপুরে। বিষ্ণুপুরের রাজারা তাদের মূল ধর্মীয় উৎসব রাসের জন্য বিশালাকার রাস মঞ্চ করতেন।

দোল মঞ্চ[সম্পাদনা]

বসন্ত কালে বৈষ্ণবদের একটি বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলো দোল যাত্রা। এই দিন রাধা কৃষ্ণকে মন্দিরের থেকে এনে বাইরে তৈরি করা মঞ্চে রাখা হয়। সেই কারণেই বাইরে সুসজ্জিত মঞ্চ করা হয়।

দোলমঞ্চ গুলো সাধারণত চৌকো সোজা খিলান যুক্ত হয়ে থাকে। চারটি উঁচু স্তম্ভের উপরে চারচালা বা পঞ্চরত্ন কখনো বা দালান স্থাপত্যের তৈরি করা হতো।

গুরাপের কাছে নন্দ দুলাল মন্দিরের দোল মঞ্চটি খুবই সুন্দর ভাস্কর্যের নিদর্শন। এছাড়া বাংলাদেশে রাজশাহীতে বহুতল দোলমঞ্চে আছে। পাবনায় একটি দোলমঞ্চ অনেকটা পিরামিডের ন্যায়।

তুলসী মঞ্চ[সম্পাদনা]

তুলসী মঞ্চ বাড়ির জমি থেকে একটু উঁচু জায়গায় বানানো হয় । তুলসী গাছকে দেবী রুপে পূজা করা হয়। তুলসী শ্রীকৃষ্ণের খুব প্রিয় ।তাই তুলসী পূজা বৈষ্ণবদের নিত্য কর্ম। পুরাণ মতে তুলসী গাছ যেখানে থাকে সেখানে কোনো শোক থাকে না।তুলসী মঞ্চ রাখার কিছু নিয়ম রয়েছে। সন্ধ্যায় তুলসী মঞ্চে প্রদীপ জ্বালানো হয়।[৩]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Sthapatya" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-১০-৩১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১২-১২ 
  2. "Terracotta Temples of Bengal"Amit Guha (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-১১-১৫। ২০১৮-০৯-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১২-১১ 
  3. সংবাদদাতা, নিজস্ব। "বাড়িতে তুলসী মঞ্চ সঠিক নিয়মে রেখেছেন তো?"anandabazar.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-২৪