মঙ্গল সূত্র
বৌদ্ধধর্ম |
---|
এর ধারাবাহিক নিবন্ধের অংশ |
ত্রিপিটক |
---|
মঙ্গল সূত্র (বর্মী: မင်္ဂလသုတ် মিঙ্গালা থোক, থাই: มงคลสูตร, খ্মের: មង្គលសូត្រ মংখোল সুত, সংস্কৃত "মাহামাঙ্গালাসুত্রা", "महामङ्गलसूत्र", তিব্বতি "བཀྲ་ཤིས་ཆེན་པོའི་མདོ།") গৌতম বুদ্ধের বাণী। এই বাণী বা সূত্রটি থেরবাদ বৌদ্ধতত্তের খুদ্দক নিকায়ের দুই জায়গায়, খুদ্দকপাঠ (৫) ও সূত্ত নিপাত (২.৪)-এ উল্লেখ করা আছে।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]জম্বুদ্বীপে নগরীসমূহের দ্বারে ও সভাগৃহে বহুলোক সম্মিলিত হয়ে কথকদের থেকে বিবিধ গল্পসমূহ শ্রবণ করতেন।তেমনি এক সময় তাদের মধ্যে মঙ্গল নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হলো।কিসে মঙ্গল হয় এই নিয়ে তাদের মধ্যে বিভিন্ন রকম মতামতের অবতারণা হলো। কিন্তু কেউই সর্বজন গ্রাহ্য মতামত দিতে সক্ষম হলো না। ক্রমে দেবতাদের মধ্যেও মঙ্গল নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিলো।এভাবে বারো বছর অতিক্রান্ত হয়।কিন্তু কিসে মঙ্গল হয় তা নিয়ে উত্থাপিত প্রশ্নের কোনো সুরাহা হয় না।তখন দেবরাজ ইন্দ্রের পরামর্শ অনুয়ায়ী কয়েকজন দেবতা শ্রাবস্তীর জেতবন বিহারে গিয়ে তথাগত সম্যক বুদ্ধকে বন্দনা করে মঙ্গল কিসে হয় তা জিজ্ঞাসা করেন। তখন অনন্তর সম্যক সম্বুদ্ধ আটত্রিশ প্রকারের মঙ্গলের কথা বর্ণনা করেন।
সূত্র
[সম্পাদনা]পালি | বাংলা |
---|---|
এবং মে সুতং-
একাং সমযং ভগবা, সাবাত্থিযং বিহরতি, জেতবনে অনাথপিন্ডিকস্স আরামে। অথ খো অঞ্ঞাতরা দেবতা, আভিক্কন্তায রত্তিযা অভিক্কন্তাবন্না কেবলকপ্পং কেতবনং অভাসেত্বা, যেন ভগবা তেনুপসংকমি, উপসংকমিত্বা ভগবন্তং অভিবাদেত্বা একমন্তং অট্ঠাসি। একমন্তং ঠিতা খো সা দেবতা ভগবন্তং গাথায অজ্ঝভাসি-বহু দেবা মনুস্সা চ মঙ্গলানি অচিন্তযুং, আক খামানা সোত্থানং ব্র হি মঙ্গল মুত্তমং- |
আমি এইরূপ শুনেছি-
এক সময়ে ভগবান শ্রাবস্তীতে জেতবন উদ্যানে অনাথপিণ্ডিকের বিহারে অবস্থান করছিলেন। এরপর, একজন মনোহর দেবপুত্র স্বর্গীয় জ্যোতিতে সমস্ত জেতবন আলোকিত করে, রাতের শেষ প্রহরে ভগবানের কাছে এসে অভিবাদন জানিয়ে একপাশে দাঁড়ালেন এবং সম্বোধন করলেনঃ প্রভু, বহু দেবতা ও মানুষ মঙ্গল বিষয়ে চিন্তা করেছেন। কিন্তু কেউ এ সম্বন্ধে অবগত হতে পারেননি। আপনি দয়া করে দেব-মানুষের জন্য হিতকর মঙ্গল সমূহে অবগত করুন। তার প্রার্থনায় ভগবান বুদ্ধ বলতে লাগলেন- |
অসেবনা চ বালানাং পন্ডিতানাঞ্চ সেবনা, পূজা চ পূজানেয্যানাং, এতং মঙ্গল মুত্তমং। | মূর্খ লোকের সেবা না করে, জ্ঞানীলোকের সেবা করে ও শ্রদ্ধা করা যায় এমন ব্যক্তির শ্রদ্ধা করাই উত্তম মঙ্গল। |
পতিরূপ দেসবাসো চ পুব্বে চ কতপুঞ্ঞতা, অত্তসম্মাপনিধি চ, এতং মঙ্গল মুত্তমং। | ধর্মতঃ জীবন যাপনের উপযোগী, এমন দেশে বাস করা, পূর্ব কৃত পুণ্য প্রভাবে প্রভান্বিত থাকা ও নিজেকে সত্য পথে পরিচালনা করে- এই প্রকার কর্ম করাই উত্তম মঙ্গল। |
বহু স চঞ্চ সিপ্পঞ্চ, বিনযো চ সুসিক্খিতো, সুভাসিতা চ যা বাচা, এতং মঙ্গল মুত্তমং। | বহু সত্য বিষয়ক (অর্থাৎ প্রয়োজনীয়) জ্ঞান লাভ করা, নানা রকম কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করা, বিনয়ী ও সুশিক্ষিত হওয়া এবং সুবাক্য ভাষণ করা-এই প্রকার কাজ করাই উত্তম মঙ্গল। |
মাতা-পিতু উপট্ঠানং, পুত্তদারস্সা সঙ্গহো, অনাকুলা চ কম্মন্তা, এতং মঙ্গল মুত্তামং। | মা-বাবার সেবা করা, স্ত্রী-পুত্রের উপকার করা ও পাপ নয় এমন ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে জীবন যাপন করা-এই প্রকার কর্ম করাই উত্তম মঙ্গল। |
দানঞ্চ ধম্মচরিযা চ, ঞাতকানঞ্চ সঙ্গহো, অনবজ্জানি কম্মানি, এতং মঙ্গল মুত্তমং। | দান দেওয়া, কায়-বাক্য মনে ধর্ম আচরণ করা, জ্ঞাতির জন্য হিত সাধন করা ও সদ্ধর্মে অপ্রমত্ত থাকা- এই প্রকার কর্ম করাই উত্তম মঙ্গল। |
আরতি বিরতি পাপা, মজ্জপানা চ সঞ্ঞমো, অপ্পমাদো চ সম্মেসু, এতং মঙ্গল মুত্তমং। | কায়িক ও মানসিক পাপে অনাসক্তি, শারীরিক ও বাচনিক পাপ হতে ব্রত, মাদক গ্রহণে সংযম ও অপ্রমত্তভাবে ভাল কাজ করাই উত্তম মঙ্গল। |
গারবো চ নিবাতো চ, সন্তুট্ঠী চ কতঞ্ঞূতা, কালেন ধম্মসবনং, এতং মঙ্গল মুত্তমং। | গৌরবনীয় ব্যক্তির গৌরব করা, তাদের প্রতি বিনয় দেখানো, যা প্রাপ্ত তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা, উপকারীর উপকার স্বীকার করা ও যথাসময়ে ধর্ম শ্রবণ করে- এই প্রকার কর্ম করাই উত্তম মঙ্গল। |
খন্তী চ সোবচস্সতা, সমণানঞ্চ দস্সনং, কালেন ধম্মসাক ছা, এতং মঙ্গল মুত্তমং। | ক্ষমাশীল হওয়া, আদেশ পালনে সুবাধ্যতা, শীল্গুণে বিমণ্ডিত শ্রমঙণকে দর্শন করা ও যথাসময়ে ধর্মালোচনা করাই উত্তম মঙ্গল। |
তপো চ ব্রহ্মচরিযঞ্চ, অরিযস চান দস্সনং, নিব্বানং সছিকিরিযা চ, এতং মঙ্গল মুত্তমং। | পাপমোচনের জন্য তপস্যা চর্চা ও ব্রম্মচর্য্য পালন, চার আর্য সত্য (১। দুঃখ আছে, ২। দুঃখের কারণ আছে, ৩। দুঃখের নিরোধ আছে, ৪। দুঃখ নিরধের পথ আছে) হৃদয়ঙ্গম করা এবং পরমপদ নির্বাণ সাক্ষাত করা- এই প্রকার কর্ম করাই উত্তম মঙ্গল। |
ফুট্ঠস্স লোকধম্মেহি চিত্তং যস্স ন কম্পতি, অসোকং বিরজং খেমং, এতং মঙ্গল মুত্তমং। | লাভ-অলাভ, যশ-অযশ, নিন্দা-প্রশংসা, সুখদুঃখ এই সমস্ত লোকধর্মে অবিচলিত থাকা, শোকহীনতা, লোভ-দ্বেষ-মোহরূপ কলুষহীনতা এবং সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকা-এই প্রকার কর্ম করাই উত্তম মঙ্গল। |
এতাদিসানি কত্বান সব্বত্থ ম প্রাজিতা, সব্বত্থ সোত্থিং গ ছন্তি তং তেসং মঙ্গল মুত্তমং তি। | হে দেবপুত্র, এই সকল মঙ্গল কার্য্য সম্পাদন করে দেব-মানবগণ সকল বিষয়ে জয়লাভ ও সব জায়গায় নিরাপদ জীবন যাপন করতে পারবেন, তাই, এগুলো শ্রেষ্ঠ মঙ্গল কাজ বলে অবধারণ করুন। |