ভিক্তর হাম্বার্তজুমিয়ান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ভিক্তর আমাজাসপোভিচ হাম্বার্তজুমিয়ান

ভিক্তর আমাজাসপোভিচ হাম্বার্তজুমিয়ান (১৮ সেপ্টেম্বর ১৯০৮-১২ আগস্ট ১৯৯৬) একজন সোভিয়েত-আর্মেনীয়[১] জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান প্রশাসক ছিলেন। তিনি বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও সোভিয়েত ইউনিয়নে তাত্ত্বিক জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের প্রবক্তা হিসেবে সুপরিচিত।

হাম্বার্তজুমিয়ান লেনিনগ্রাদ স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলকোভো মানমন্দিরে শিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি শুরুতে। লেনিনগ্রাদ স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। সেখানে ১৯৩৪ সালে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি পরবর্তীতে সোভিয়েত আর্মেনিয়ায় চলে যান,যেখানে তিনি ১৯৪৬ সালে বিয়ুরাকান মানমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। এটি জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান চর্চার অন্যতম কেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায়। তিনি আর্মেনীয় বিজ্ঞান একাডেমির-ও সহপ্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। প্রায় পঞ্চাশ বছর তিনি এর নেতৃত্ব দান করেন। একজন ধারাভাষ্যকার বলেন- "আর্মেনিয়ায় বিজ্ঞানচর্চা ও হাম্বার্তজুমিয়ান নামটি সমার্থক।"১৯৬৫ সালে তিনি অ্যাস্ট্রোফিজিকা জার্নাল বের করেন ও পরবর্তী বিশ বছর এর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

হাম্বার্তজুমিয়ান যেসব পদ অধিকৃত করেছিলেন, ৮০ বছর বয়সে সেগুলো থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি বিয়ুরাকানে তার বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। সেখানেই তার প্রতিষ্ঠিত মানমন্দিরে তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত। ১৯৯৪ সালে তাকে আর্মেনিয়ার জাতীয় বীর ঘোষণা করা হয়।

পটভূমি[সম্পাদনা]

হাম্বার্তজুমিয়ান তিফলিসে (বর্তমান তিবলিসি) ১৯০৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর (গ্রেগরীয় দিনপঞ্জি অনুসারে ৮ সেপ্টেম্বর) জন্মগ্রহণ করেন। [২] তাঁর বাবার নাম হামাজাস্প হাম্বার্তজুমিয়ান ও মার নাম রিপসিমে খাকারিয়ান। রিপসিমের পিতা শিখানভ্যালির একজন আর্মেনীয় অ্যাপোস্তলীয় ধর্মের পুরোহিত ছিলেন। অপরদিকে হামাজাস্পের জন্ম ভার্দেনিস শহরে। রুশ-তুর্কি যুদ্ধের পর তাঁর পূর্বসূরিরা দিয়াদিন (বর্তমান তুরস্ক) থেকে সেভান হ্রদের দক্ষিণ তীরে বসবাস করা শুরু করেন। হামাজাস্প সেন্ট পিটার্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন। তিনি একজন স্বনামধন্য লেখক ও অনুবাদক ছিলেন, যিনি হোমার রচিত ইলিয়াড ধ্রুপদি গ্রিক থেকে আর্মেনীয় ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন। ১৯১২ সালে তিনি "ককেশীয় অঞ্চলের আর্মেনীয় লেখক সমিতি" প্রতিষ্ঠা করেন,১৯২১ সাল পর্যন্ত যার কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। [৩] হাম্বার্তজুমিয়ান এর সচিব ছিলেন।

ভিক্তরের বাবা-মা ১৯০৪ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর লেভন নামে এক ভাই ও গোহার নামে এক বোন ছিল। লেভন ভূ-প্রকৃতি নিয়ে পড়াশোনা করতেন। উরাল পর্বতে এক অভিযাত্রার সময় ২৩-২৪ বছর বয়সে লেভন ইহলোক ত্যাগ করেন। [৪] গোহার(১৯০৭-১৯৭৯) একজন গণিতবিদ এবং শেষ বয়সে ইয়েরেভান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাবনাতত্ত্ব ও গাণিতিক পরিসংখ্যান বিভাগের সভাপতি ছিলেন।

শিক্ষা[সম্পাদনা]

হাম্বার্তজুমিয়ান ছোটবেলা থেকেই গণিতের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। চার বছর বয়সেই তিনি গুণ করতে জানতেন। ১১ বছর বয়সে ওর্মসবি এম মিশেল রচিত একটি বইয়ের রুশ অনুবাদ পড়ে তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রতি অধিক আকৃষ্ট হন। তার নিজস্ব ভাষ্যমতে, ১২ বছর বয়সে তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞানী হন। [২] ১৯১৭-১৯২৪ সালে তিনি তিবলিসির ৩ নং ও ৪ নং জিমনেসিয়ামে অধ্যয়ন করেন। সেখানে রুশ ও আর্মেনীয় উভয় ভাষায় লেখাপড়া করানো হত। ১৯২১ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানী নিকোলাই ইগনাশিয়েভিচ সুদাকভের অধীনে পড়াশোনা করতে তিনি ৪ নং জিমনেসিয়ামে ভর্তি হন। হাম্বার্তজুমিয়ান সুদাকভের সঙ্গে বিদ্যলয়ের মানমন্দিরে গবেষণা করেছেন। বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থাতেই তিনি সৌরজগতের উৎপত্তি ও বহির্জাগতিক প্রাণ নিয়ে বক্তব্য প্রদান করেন। এছাড়াও জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে তিনি কতগুলো গবেষণাপত্র রচনা করেন। ২৪ বছর বয়সে হাম্বার্তজুমিয়ান ইয়েরেভান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে আপেক্ষিকতা তত্ত্ব নিয়ে বক্তব্য প্রদান করেন। এছাড়াও তিনি আর্মেনিয়ার সাম্যবাদী নেতা আশোত হোভহানিসিয়ান ও আলেক্সান্ডার মিয়াসনিকিয়ানের সাথে সাক্ষাৎ করেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "NEW ERA AHEAD, ASTRONOMER SAYS; Photos of the Moon Cited at World Science Parley"। ২৬ আগস্ট ১৯৬৪ – NYTimes.com-এর মাধ্যমে। 
  2. "V. A. Ambartsumian - American Institute of Physics"web.archive.org। ২ ডিসেম্বর ২০১৯। Archived from the original on ২ ডিসেম্বর ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২ অক্টোবর ২০২০ 
  3. Hacikyan, Agop Jack (২ অক্টোবর ২০২০)। "The Heritage of Armenian Literature: From the eighteenth century to modern times"। Wayne State University Press – Google Books-এর মাধ্যমে। 
  4. https://web.archive.org/web/20191214120349/http://old.journal.spbu.ru/2003/22/3.shtml