ভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০১৪

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(ভারতীয় সাধারণ নির্বাচন, ২০১৪ থেকে পুনর্নির্দেশিত)
ভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০১৪

← ২০০৯ ৭ এপ্রিল - ১২ মে, ২০১৪ ২০১৯ →

লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে,
সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য দরকার ২৭২টিটি আসন
ভোটের হার৬৬.৩৮%
  প্রথম দল দ্বিতীয় দল
 
নেতা/নেত্রী নরেন্দ্র মোদী রাহুল গান্ধী
দল বিজেপি কংগ্রেস
জোট এনডিএ ইউপিএ
নেতা হয়েছেন ১০ জুন ২০১৩ ১৯ জানুয়ারি ২০১৩
নেতার আসন বারাণসী আমেঠি
গত নির্বাচন ১১৬ ২০৬
আসন লাভ ২৮২ ৪৪
আসন পরিবর্তন বৃদ্ধি ১৬৬ হ্রাস ১৬২
জনপ্রিয় ভোট ১৭১,৪৫৯,২৮৬ ১০৬,৭৬০,০০১
শতকরা ৩১.৩৪% ১৯.৩%
সুইং বৃদ্ধি ১৪.৩৭% হ্রাস ১৬.২২%

  তৃতীয় দল চতুর্থ দল
 
নেতা/নেত্রী জয়ললিতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
দল এআইএডিএমকে তৃণমূল
নেতা হয়েছেন ১৯৮৯ ১৯৯৮
নেতার আসন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি
গত নির্বাচন ১৯
আসন লাভ ৩৭ ৩৪
আসন পরিবর্তন বৃদ্ধি ২৮ বৃদ্ধি ১৫
জনপ্রিয় ভোট ১৮,১১৫,৮২৫ ২১,২৫৯,৬৮১
শতকরা ৩.৩% ৩.৮৪%
সুইং ১.৬৩% বৃদ্ধি.৩৪%

নির্বাচনের পূর্বে প্রধানমন্ত্রী

মনমোহন সিংহ
কংগ্রেস

নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী

নরেন্দ্র মোদী
বিজেপি

ভারতে ষোড়শ লোকসভা গঠনের জন্য সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালের ৭ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত। লোকসভার ৫৪৩টি আসনের সাংসদ নির্বাচনের জন্য এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।[১] ফল ঘোষিত হয় ১৬ মে। ভারতের সাংবিধানিক বিধি অনুসারে, ৩১ মে পঞ্চদশ লোকসভার মেয়াদ শেষ হয়।[২]

ভারতের নির্বাচন কমিশনের মতে, ২০১৪ সালে ভারতের ভোটার সংখ্যা ৮১.৪৫ কোটি, যা বিশ্বে সর্বাধিক।[৩] এই নির্বাচনে নতুন ভোটারের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১০ লক্ষ।[৪] কমিশনের হিসেব অনুযায়ী, এই নির্বাচনের আনুমানিক খরচ নিরাপত্তা খরচ ও রাজনৈতিক দলগুলির নিজস্ব খরচ বাদে ৩,৫০০ কোটি টাকা। এটিই ভারতের ইতিহাসে দীর্ঘতম এবং সবচেয়ে ব্যয়সাপেক্ষ নির্বাচন।[৫] সেন্টার ফর মিডিয়া স্টাডিজের হিসেব অনুসারে, রাজনৈতিক দলগুলির আনুমানিক নির্বাচনী খরচ ৩০,৫০০ কোটি টাকা। এটি ২০০৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের তুলনায় তিন গুণ বেশি এবং বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বাধিক (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই ব্যয় সর্বাধিক। ২০১২ সালে সেদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মোট ৭ বিলয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয়েছিল এই খাতে।)।[৬]

প্রেক্ষাপট[সম্পাদনা]

সাংবিধানিক বিধি অনুসারে, ভারতের রাষ্ট্রপতি লোকসভা ভেঙে দেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে দেশে সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করতে হয়। পূর্ববর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৯ সালের এপ্রিল-মে মাসে। ২০১৪ সালের ৩১ মে সেই লোকসভার মেয়াদ শেষ হয়।ভারতের নির্বাচন কমিশন এই নির্বাচনের আয়োজন করে। ভোটারদের সংখ্যা ও নিরাপত্তার জন্য একাধিক পর্যায়ে ভোট হয়।

২০০৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর ২০১১ সালে আন্না হাজারে প্রমুখ সমাজকর্মীদের দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলন বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছিল।[৭] ২০১২ সালে গোয়াপাঞ্জাবের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জয়লাভ করেছিল। যদিও ক্ষমতাসীন উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশকর্ণাটক রাজ্যের বিধানসভা ভোটে জাতীয় কংগ্রেসের কাছে পরাজিত হয়েছিল। ২০১২ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও বিজেপি নিজের প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়নি। কারণ, সেই নির্বাচনে শিবসেনা ও জনতা দল (সংযুক্ত) বিজেপির সঙ্গে জোট করতে চায়নি। অন্যদিকে, অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের উদ্দেশ্যে তেলেঙ্গানা আন্দোলন চলেছিল। কেন্দ্রীয় সরকার প্রথমে তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনে রাজি না হওয়ায় আন্দোলন জোরদার হয়। বিদর্ভগোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবিতেও আন্দোলন চলতে থাকে। অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওয়াই. এস. আর. রেড্ডির ছেলে ওয়াই. এস. জগন্মোহন রেড্ডি কংগ্রেস পরিত্যাগ করে পৃথক ওয়াইএসআর কংগ্রেস গঠন করলে ওই রাজ্যের পরিস্থিতি বদলে যায়। কারণ, অন্ধ্রের অনেক রাজনীতিবিদ তাঁকে সমর্থন করেন।

২০১৩ সালের ৮ ডিসেম্বর চারটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি সব কটিতেই জয় লাভ করে বা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। রাজস্থানে বিজেপি কংগ্রেসকে পরাজিত করে। দীর্ঘদিন কংগ্রেসের দখলে থাকা দিল্লিতেও বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। এছাড়া মধ্যপ্রদেশছত্তীসগঢ় রাজ্যেও নিজেদের সরকার টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়। গণমাধ্যম দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীকেই বিজেপির এই জয়ের কারণ বলে চিহ্নিত করে।[৮][৯] যদিও দলের জাতীয় উপ-সভাপতি ও সাংসদ প্রভাত ঝায় মুসলমান ভোট সম্পর্কে বলেন: "অবশ্যই ওঁরা আমাদের ভোট দিয়েছেন। ৭০ শতাংশেরও বেশি ভোটার বিজেপির কর্মসূচি ও নীতিকে সমর্থন করেন।" ইন্দোরের কাজি আব্দুল রহমান ফারুকি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানই বিজেপির এই জয়ের কারণ এবং "বিজেপি মোদিকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী না করলে, চৌহান আরও মুসলমান ভোট পেতেন।"[১০] বিজেপির অরুণ জেটলির মতে কংগ্রেস-নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার বর্তমানে একটি খোঁড়া হাঁসে পরিণত হয়েছে।[১১]

পরিচালনা[সম্পাদনা]

অঞ্চলভিত্তিক নির্বাচনের তারিখ

প্রযুক্তির ব্যবহার[সম্পাদনা]

২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে ভারতের নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করে যে, নির্বাচনের সময় একটি এসএমএস-ভিত্তিক সতর্কীকরণ ব্যবস্থা চালু করা হবে। এই ব্যবস্থার নাম হবে কমিউনিকেশন প্ল্যান ফর ইলেকশন (কমেট)। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্বাচনে কর্তব্যরত সরকারি আধিকারিকদের বার্তা পাঠানো যাবে। ২০১২ সালের গোড়ায় গোয়া, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডমণিপুর এবং শেষ দিকে হিমাচল প্রদেশগুজরাত রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে এই ব্যবস্থা চালু ছিল।

আধিকারিকদের সম্পর্কে তথ্য, কর্মীদের বুথে পৌঁছানো, প্রশিক্ষণমূলক নকল ভোটদান কর্মশালার আয়োজন, নির্বাচন শুরু হওয়া, প্রতি ঘণ্টায় প্রদত্ত ভোটের শতাংশ সম্পর্কে নজর রাখা, নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলে উপস্থিত ভোটারদের সংখ্যার হিসেব রাখা, এবং নির্বাচনের পর পোলিং পার্টি বৈদ্যুতিক ভোটযন্ত্র জমা রাখার জায়গায় পৌঁছেতে পেরেছে কিনা - এই সব অথ্য কমেট ব্যবস্থার মাধ্যমে জানা যায়। নির্বাচনে বিঘ্ন ঘটলে এই ব্যবস্থার দ্বারা স্থানীয় পুলিশকেও খবর দেওয়া যায়।[১২]

তারিখ[সম্পাদনা]

এপ্রিল ও মে মাসে একাধিক পর্যায়ে নির্বাচন আয়োজিত হবে।[১৩] সংসদের সর্বশেষ অধিবেশন ৬ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়েছে। সর্বশেষ অধিবেশনে লোকপাল ও লোকায়ুক্ত বিল, ২০১৩ পাস হয় এবং তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠিত হয়।[১৪] নির্বাচন কমিশনার ভি. এস. সম্পথ বলেছেন, তামিলনাড়ুতে একদফায় ভোট হবে। যদিও স্বচ্ছভাবে নির্বাচন পরিচালনার স্বার্থে দ্রাবিড় মুন্নেত্রা কড়গম যে তামিলনাড়ু পুলিশের ডেপুটি জেনারেল কে. রামানুজমকে অপসারণের প্রস্তাব দিয়েছে, তাও বিবেচনা করা হবে।[১৫] একই সঙ্গে অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশাসিক্কিম রাজ্যেও বিধানসভা নির্বাচন আয়োজিত হবে।[১৬]

নির্বাচন কমিশনার ভি. এস. সম্পথ ৫ মার্চ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করেছেন। ৭ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত নয় দফায় নির্বাচন হবে। ১৬ মে ফল ঘোষণা করা হবে।[১৭]

নির্ঘণ্ট[সম্পাদনা]

অঞ্চল মোট লোকসভা কেন্দ্র নির্বাচনের তারিখ ও লোকসভা কেন্দ্রের সংখ্যা[১৮]
  • পর্ব ১
  • ৭ এপ্রিল, ২০১৪
  • পর্ব ২
  • ৯ এপ্রিল, ২০১৪
  • পর্ব ৩
  • ১০ এপ্রিল, ২০১৪
  • পর্ব ৪
  • ১২ এপ্রিল, ২০১৪
  • পর্ব ৫
  • ১৭ এপ্রিল, ২০১৪
  • পর্ব ৬
  • ২৪ এপ্রিল, ২০১৪
  • পর্ব ৭
  • ৩০ এপ্রিল, ২০১৪
  • পর্ব ৮
  • ৭ মে, ২০১৪
  • পর্ব ৯
  • ১২ মে, ২০১৪
প্রগতি YesY YesY YesY YesY YesY YesY YesY YesY YesY
অন্ধ্রপ্রদেশ ৪২ - - - - - - ১৭ ২৫ -
অরুণাচল প্রদেশ - - - - - - - -
অসম ১৪ - - - - - -
বিহার ৪০ - - -
ছত্তীসগঢ় ১১ - - - - - -
গোয়া - - - - - - - -
গুজরাত ২৬ - - - - - - ২৬ - -
হরিয়াণা ১০ - - ১০ - - - - - -
হিমাচল প্রদেশ - - - - - - - -
জম্মু ও কাশ্মীর - - - -
ঝাড়খণ্ড ১৪ - - - - - -
কর্ণাটক ২৮ - - - - ২৮ - - - -
কেরল ২০ - - ২০ - - - - - -
মধ্যপ্রদেশ ২৯ - - - ১০ ১০ - - -
মহারাষ্ট্র ৪৮ - - ১০ - ১৯ ১৯ - - -
মণিপুর - - - - - - -
মেঘালয় - - - - - - - -
মিজোরাম - ১* - - - - - - -
নাগাল্যান্ড - - - - - - - -
ওড়িশা ২১ - - ১০ - ১১ - - - -
পাঞ্জাব ১৩ - - - - - - ১৩ - -
রাজস্থান ২৫ - - - - ২০ - - -
সিক্কিম - - - - - - - -
তামিলনাড়ু ৩৯ - - - - - ৩৯ - - -
ত্রিপুরা - - - - - - -
উত্তরপ্রদেশ ৮০ - - ১০ - ১১ ১২ ১৪ ১৫ ১৮
উত্তরাখণ্ড - - - - - - - -
পশ্চিমবঙ্গ ৪২ - - - - ১৭
আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ - - - - - - - -
চণ্ডীগড় - - - - - - - -
দাদরা ও নগর হাভেলি - - - - - - - -
দমন ও দিউ - - - - - - - -
লক্ষদ্বীপ - - - - - - - -
দিল্লি - - - - - - - -
পুদুচেরি - - - - - - - -
মোট লোকসভা কেন্দ্রে নির্বাচন ৫৪৩ ৭* ৯১ ১২১ ১১৭ ৮৯ ৬৪ ৪১

* - ১১ এপ্রিল মিজোরামে ভোট হবে বলে স্থির হয়েছে।[১৯]

প্রচার[সম্পাদনা]

প্রধান ইস্যু[সম্পাদনা]

মূল্যবৃদ্ধি, দুর্নীতি, অর্থনীতি, নিরাপত্তা, সড়ক, বিদ্যুৎ ও জল, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বেকারত্ব হল এই নির্বাচনের প্রধান ইস্যু।[২০]

মূল্যবৃদ্ধি[সম্পাদনা]

পিঁয়াজের দাম অত্যধিক বৃদ্ধি পাওয়া এই নির্বাচনের একটি প্রধান ইস্যু।[২১] নির্বাচনের আগে দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে শিল্পোৎপাদনের হারও কমে আসে। ফলে আর্থিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।[২২]

দুর্নীতি[সম্পাদনা]

ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলীয় নির্বাচনী ইস্তেহারে পাস-না-হওয়া দুর্নীতি-বিরোধী বিলগুলি পাস করানো ও কার্যকর করানোর ব্যাপারে দ্রুততার সঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

অর্থনীতি[সম্পাদনা]

ব্লুমবার্গ ২০১৩ সালের গ্রীষ্মে টাকার মূল্যহ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক বৃদ্ধির হার কমে যাওয়ার ব্যাপারটি তুলে ধরে। পরিকাঠামো বিনিয়োগের অভাব ও সরকারি ভর্তুকি নীতিকেই এর জন্য দায়ী করা হয়। এছাড়া নীতিনির্ধারণের অক্ষমতা ও অদক্ষ আমলাতন্ত্রকেও এর জন্য দায়ী করা হয়েছে।[২৩] প্রচারেও অর্থনীতি অন্যতম প্রধান ইস্যু।[২৪] নির্বাচনের পর স্থায়ী সরকার গঠিত না হলে সোনার দাম বাড়বে।[২৫][২৬] নরেন্দ্র মোদীও ঋণের বোঝা ও ফসল ভাল না হওয়ার জন্য কৃষক আত্মহত্যার বিষয়টি তুলে ধরেছেন।[২৭]

তেলেঙ্গানা[সম্পাদনা]

২০১৩ সালের ৩০ জুলাই, কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের একটি প্রস্তাব পাস করে। কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে কংগ্রেস-শাসিত কেন্দ্রীয় সরকারকে ভারতের সংবিধান অনুসারে অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যটিকে দ্বিখণ্ডিত করে পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্য স্থাপনের জন্য অনুরোধ জানায়। রায়ালসীমা ও উপকূলীয় অন্ধ্রে ওয়াইএসআর কংগ্রেসের উত্থানের ফলে জনসমর্থন হারিয়ে তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি ও কংগ্রেসকে এক করার প্রচেষ্টায় এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। অন্ধ্রপ্রদেশের ভারপ্রাপ্ত সারাভারত কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদক দিগ্বিজয় সিং বলেন, তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির নেতা কে চন্দ্রশেখর রাও "বারবার বলেছেন যে একবার তেলেঙ্গানা গঠিত হলেই তিনি তাঁর পার্টি নিয়ে কংগ্রেসে যোগ দেবেন।"[২৮] তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান। রাও বলেন, ১০ বছর হায়দ্রাবাদ উভয় রাজ্যের রাজধানী থাকলে তাঁর কোনো আপত্তি নেই।[২৯] অন্ধ্রপ্রদেশের নতুন রাজধানী হিসেবে ওঙ্গলের নাম প্রস্তাবিত হয়।[৩০] ওয়াইএসআর কংগ্রেসের নেতা জগন্মোহন রেড্ডি বলেন, তিনি এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করবেন এবং এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করবেন।[৩১] উক্ত দলের সব বিধায়ক এরপর পদত্যাগ করেন।[৩২] অন্ধ্রপ্রদেশ বিজেপি সভাপতি জি কিষান রেড্ডি নতুন রাজ্য স্থাপনের কৃতিত্ব গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দিয়ে বলেন, ১১ অগস্ট মোদি হায়দ্রাবাদ সফরে আসার পরেই কংগ্রেস এই ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে।[৩৩] বিজেপি জাতীয় মুখপাত্র প্রকাশ জাভাদকর বলেন যে কংগ্রেস চাপের মুখে পড়ে তেলেঙ্গানা গঠনের প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। তাই বিজেপি এই বিষয়টির উপর নজর রাখবে যতক্ষণ না তেলেঙ্গানা গঠিত হয়।[৩৪] তিনি আরও বলেন, বিজেপি তেলেঙ্গানা ও বিদর্ভ রাজ্য গঠনের পক্ষে। কংগ্রেস ২০০৪ সালেই তেলেঙ্গানা গঠনের কথা ঘোষণা করেছিল, কিন্তু নয় বছর বিষয়টি ফেলে রাখে। অন্যদিকে বিজেপির ১৯৯৯ সালের এজেন্ডায় তিনটি রাজ্য গঠনের প্রস্তাব ছিল এবং তা তৎক্ষণাৎ বাস্তবায়িত হয়েছিল। বিজেপি জাতীয় সভাপতি রাজনাথ সিংহ বলেন, তাঁরা গোর্খাল্যান্ডবোড়োল্যান্ড গঠনের বিষয়টিও বিবেচনা করবেন। তিনি জানান যে তাঁরা দ্বিতীয় রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠনের পক্ষে।[৩৫] গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা এরপর অনির্দিষ্টকালের জন্য বনধ ডাকে গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবিতে।[৩৬] অন্যদিকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানায়, প্রস্তাবিত অঞ্চলের অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা এবং নিষিদ্ধ মাওবাদী-অধ্যুষিত ছত্তীসগঢ়ের বস্তার জেলা ও মহারাষ্ট্রের গাদচিরোলির ভৌগোলিক নৈকট্যের জন্য এই বিষয়টির দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন।[৩৭] ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কিরণকুমার রেড্ডি রাজ্য-বিভাজনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে পদত্যাগ করেন। তিনি মার্চে সমৈক্যান্ধ্র পার্টি গঠন করেন। তাঁর মন্ত্রীসভার তিন জন মন্ত্রী তেলুগু দেশম পার্টিতে যোগ দেন।[৩৮]

অরাজনৈতিক প্রার্থী[সম্পাদনা]

রাজনৈতিক নেতা বা রাজনীতিবিদ নন, এমন বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এই নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: মহম্মদ কাইফ (কংগ্রেস), রবি কিষান (কংগ্রেস), নন্দন নিকালনি (কংগ্রেস), গুল পনাগ (আপ), মুনমুন সেন (তৃণমূল কংগ্রেস), দেব (তৃণমূল কংগ্রেস), ভাইচুং ভুটিয়া (তৃণমূল কংগ্রেস), বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় (তৃণমূল কংগ্রেস), ইন্দ্রনীল সেন (তৃণমূল কংগ্রেস), পরেশ রাওয়াল (বিজেপি), কিরণ খের (বিজেপি), পি. সি. সরকার, জুনিয়র (বিজেপি), বাবুল সুপ্রিয় (বিজেপি), পবন কল্যাণ (জনসেনা পার্টি),[৩৯] কামাল রাশিদ খান (সমাজবাদী পার্টি), মহেশ মঞ্জরেকর (মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা), রাখি সাওয়ান্ত (রাষ্ট্রীয় আম পার্টি),[৪০] জাভেদ জাফেরি (আপ),[৪১], বাপ্পি লাহিড়ি (বিজেপি)[৪২] ও জেনারেল বিজয়কুমার সিংহ (বিজেপি)।

দল ও জোট[সম্পাদনা]

জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট[সম্পাদনা]

জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটের অন্তর্ভুক্ত দল ও দলগুলির প্রার্থীসংখ্যা নিম্নরূপ:[৪৩][৪৪][৪৫][৪৬][৪৭]

পাদটীকা[সম্পাদনা]

  1. "India General Elections 2014" 
  2. "Terms of Houses, Election Commission of India"। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুন ২০১৩ 
  3. "Number of Registered Voters in India reaches 814.5 Mn in 2014"IANS। news.biharprabha.com। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ 
  4. "India announces election dates — Central & South Asia"। Al Jazeera English। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০১৪ 
  5. "About Lok Sabha Election 2014"। ১০ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 10 March2014  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  6. ' + val.created_at + ' (১০ মার্চ ২০১৪)। "India's spend on elections could challenge US record: report"। NDTV.com। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০১৪ 
  7. "Loksabha election 2014 predictions Survey — Opinion Poll"। Seekers Find .in। ২৮ জানুয়ারি ২০১৩। ৪ আগস্ট ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জুলাই ২০১৩ 
  8. "Narendra Modi's contribution to BJP win: the big debate"। NDTV.com। ৮ ডিসেম্বর ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ডিসেম্বর ২০১৩ 
  9. "Congress and the Modi juggernaut"। Deccan Chronicle। ৮ ডিসেম্বর ২০১৩। ১১ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ডিসেম্বর ২০১৩ 
  10. "Modi 'not a factor', MP Muslims voted for Chouhan"। Hindustan Times। ৮ ডিসেম্বর ২০১৩। ১০ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ডিসেম্বর ২০১৩ 
  11. "UPA is a lame duck government now: BJP's Arun Jaitley Video"। NDTV.com। ৮ ডিসেম্বর ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ডিসেম্বর ২০১৩ 
  12. "EC to use SMS alert system in 2014 Lok Sabha elections"। Times of India। ৭ জানুয়ারি ২০১৩। [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  13. "Lok Sabha Election 2014 to be held in mid April: EC sources"। first post.com। ৪ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১৪ 
  14. "Stormy session marks Indian Parliament's last session before 2014 elections"। Arabnews.com। ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ 
  15. "Election Commission yet to decide on Lok Sabha polls: CEC"। Timesofindia.indiatimes.com। ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ 
  16. "Election Commission may go for six-phase poll in April-May"। Timesofindia.indiatimes.com। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ 
  17. "Lok Sabha polls 2014: EC announces 9 phase schedule"। zeenews.india.com। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৪ 
  18. "General Elections - 2014 : Schedule of Elections" (পিডিএফ)। ৫ মার্চ ২০১৪। ৩ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৪ 
  19. "EC defers Mizoram poll date on Bru voters issue"PTI। Times of India। এপ্রিল ৮, ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ৮, ২০১৪ 
  20. http://www.dnaindia.com/india/report-price-rise-is-the-key-issue-in-lok-sabha-election-2014-zee-news-taleem-pre-poll-survey-1969117
  21. Annie Gowen (২০ নভেম্বর ২০১৩)। "Tears as India's onion prices soar"। Smh.com.au। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ডিসেম্বর ২০১৩ 
  22. Krishnan, Unni (১২ ডিসেম্বর ২০১৩)। "Rajan in India Rate Dilemma as CPI Tops 11% Amid Growth Woes"। Bloomberg। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ডিসেম্বর ২০১৩ 
  23. "India's Economy Needs an Early Election"Bloomberg। ২০ আগস্ট ২০১৩। 
  24. "India's election and the economy: A useful campaign"। The Economist। ১ মার্চ ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৪ 
  25. "Elections results to influence gold prices: Study"। Timesofindia.indiatimes.com। ১ জানুয়ারি ১৯৭০। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৪ 
  26. "Gold prices and equity markets to be affected by General elections says study"। Dnaindia.com। ২২ অক্টোবর ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৪ 
  27. "At next 'Chai pe Charcha', Narendra Modi will discuss farmer suicides"। NDTV.com। সংগ্রহের তারিখ ২১ মার্চ ২০১৪ 
  28. "Telangana demand met, Congress eyes merger with TRS"। Rediff.com। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জুলাই ২০১৩ 
  29. "Hyderabad joint capital as AP to be split into Telangana, Seemandhra"। Ibnlive.in.com। ৯ ডিসেম্বর ১৯৪৬। ২ আগস্ট ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জুলাই ২০১৩ 
  30. "Ongole, the capital of reconstituted Andhra Pradesh?"। Hindustan Times। ৩১ জুলাই ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জুলাই ২০১৩ 
  31. "YSR Congress terms Telangana decision undemocratic, threatens protest : Telangana"। Indiatoday.intoday.in। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জুলাই ২০১৩ 
  32. F wire। "YSR Congress seeks to cash in on 'united Andhra' sentiment"। Firstpost। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ 
  33. "Andhra Pradesh BJP gives Telangana credit to Modi"। The Asian Age। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জুলাই ২০১৩ 
  34. "BJP to monitor carefully UPA's intention on Telangana"। News.in.msn.com। ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯। ১ আগস্ট ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জুলাই ২০১৩ 
  35. "Telangana: Now set up commission for other states, says BJP"। Financialexpress.com। ১২ জুন ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জুলাই ২০১৩ 
  36. "After Telangana, GJM ratchets up Gorkhaland demand"। In.news.yahoo.com। ২২ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জুলাই ২০১৩ 
  37. "Telangana may witness spurt in Naxalism: Home Ministry"। Ibnlive.in.com। ২ আগস্ট ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জুলাই ২০১৩ 
  38. "Three cabinet colleagues of CM Kiran Kumar Reddy may join TDP"। The Indian Express। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৪ 
  39. "Will movie stars shine bright in elections 2014?"India Today। ২৩ মার্চ ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০১৪ 
  40. "Rakhi Sawant to contest LS polls from Mumbai"IBNLive। IBN। ২৬ মার্চ ২০১৪। ২৭ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মার্চ ২০১৪ 
  41. Gargi Parsai (২০১৪-০৩-৩১)। "AAP pits Jaaved Jaaferi against Rajnath Singh in Lucknow"। The Hindu। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৪-০৮ 
  42. "Know your Candidate"। Bjp.org। ২০১৭-১০-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৪-০৮ 
  43. "NDA hopeful of more pre-poll and post-poll friends"Business Standard। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মার্চ ২০১৪ 
  44. Tiwari, Ravish (৫ মার্চ ২০১৪)। "Partners & possibles in BJP's target 272 | Page 2"The Indian Express। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মার্চ ২০১৪ 
  45. Dutta, Debjani (১৩ মার্চ ২০১৪)। "Rangasamy in NDA, Names Ex-Speaker as LS Candidate"The New Indian Express। ৭ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মার্চ ২০১৪ 
  46. "BJP Forms State Chapter of NDA with 4 Parties"The New Indian Express। ১৬ মার্চ ২০১৪। ১৬ আগস্ট ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মার্চ ২০১৪ 
  47. "Apna Dal allies with NDA"The Hindu। ২৫ মার্চ ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মার্চ ২০১৪ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]