বিষয়বস্তুতে চলুন

ভাগমতী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ভাগমতীর সাথে মুহাম্মদ কুলি কুতুব শাহের বিয়ের মিছিল।

ভাগমতী (হায়দার মহল) সুলতান মুহাম্মদ কুলি কুতুব শাহের রানী ছিলেন। সম্ভবত তাঁর সম্মানে হায়দ্রাবাদ শহরের নামকরণ করা হয়েছিল।[] আদৌ কোনো ভগমতির অস্তিত্ব ছিল কিনা এবং তিনি নামকরণে কোন প্রভাব ফেলেছিলেন কিনা তা নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে।[][]

জনপ্রিয় আখ্যান

[সম্পাদনা]

ভাগমতী একটি হিন্দু পরিবারে 'চিচলাম' নামক কোন স্থানে (স্থানটি নিশ্চিতভাবে চিহ্নিত করা যায়নি) জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি একজন স্থানীয় নর্তকী ছিলেন।[] কুতুব শাহ ঘোড়ায় চড়ে যাওয়ার সময় তাঁকে দেখেছিলেন। তিনি ভাগমতীকে ভালোবেসে ফেলেন। তিনি এতটাই ভালোবেসে ফেলেছিলেন যে, তাঁর সঙ্গে নিয়মিত দেখা করার জন্য মুসী নদীর ওপর হায়দ্রাবাদের প্রথম সেতু তৈরি করান, যেটি পুরাণ পুল নামে বিখ্যাত হয়ে আছে। এরপর তিনি ভাগমতীকে বিবাহ করেন[][] বিবাহের পরে, সুলতান ভাগমতীর জন্মস্থানের চারপাশে একটি শহর প্রতিষ্ঠা করেন এবং তাঁর সম্মানে এর নামকরণ করেন "ভাগনগর" বা "ভাগ্যনগর"।[] ভাগমতী ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে হায়দার মহল উপাধি গ্রহণ করার পর, শহরের নাম পরিবর্তন করে হায়দ্রাবাদ রাখা হয়।[]

পণ্ডিতদের বিতর্ক

[সম্পাদনা]

সেই পুরাণ পুলের নির্মাণ কার্য ২ বছর ধরে চলার পর ১৫৭৮ সালে সম্পূর্ণ হয়েছিল; তাহলে বলতে হয়, কুতুব শাহ, যাঁর জন্ম ১৫৬৬ সালে, মাত্র দশ বছর বয়স থেকে ভাগমতীর সাথে প্রণয় শুরু করছিলেন।[] এ ছাড়াও আরো বলা যায় যে, রাজ দরবারের অন্যান্য বিখ্যাত মহিলা ব্যক্তিত্বদের মৃত্যুর পর সমাধি নির্মিত হলেও ভাগমতীর শেষ অবশেষের উপর কোন সমাধি নির্মিত হয়নি; সেই সময়ের কোনো শিলালিপি বা মুদ্রায় তাঁর নামের উল্লেখ নেই।[][] যে সব ইতিহাসবিদরা তাঁর কথা উল্লেখ করেছেন তাঁরা হয় সালতানাতের উত্তর দিকের মানুষ, যাঁরা হায়দ্রাবাদে যাননি; অথবা তাঁরা বিদেশী, যাঁরা তাঁর মৃত্যুর অনেক পরে এসেছিলেন। স্বয়ং কুতুব শাহ সহ সমসাময়িক দাক্ষিণাত্যের কোন তথ্যে তাঁর উল্লেখ নেই।[][] 'হায়দার' নামের মত অত্যন্ত পবিত্র ইসলামিক একটি নাম কোন নর্তকীকে দেওয়া হয়েছিল কিনা সেই বিষয়েও সন্দেহ রয়েছে।[][] এই সবগুলি তথ্যই ভাগমতীর অস্তিত্বের সত্যতা নিয়ে উল্লেখযোগ্য সন্দেহ পোষণ করে।[]

কেউ কেউ অবশ্য দাবি করেন যে একাধিক সূত্রের ঐতিহাসিকতা তাদের বিদেশী প্রকৃতির কারণে জনশ্রুতি বলে প্রত্যাখ্যান করা যায় না। অন্য সূত্রগুলি থেকে জানা যায় যে পাবলিক গার্ডেনের রাজ্য জাদুঘরে ১৭৫০ সাল নাগাদ লাগানো ভাগমতীর একটি প্রতিকৃতি রয়েছে, এবং দক্ষিণী উৎস থেকে তাঁর সুস্পষ্ট অনুপস্থিতির আসল কারণ স্মৃতির নিন্দা (ইংরেজি: Damnatio memoriae ) হতে পারে।[][] অন্য অনেকেই বিশ্বাস করেন ভাগনগর (যেটি প্রকৃতপক্ষে ভাগমতীর নামে নামকরণ করা হয়েছিল) ছিল একটি পৃথক গ্রাম যার সাথে আজকের হায়দ্রাবাদের কোনো সম্পর্ক নেই।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Hyderabad or Bhagyanagar? The tiff continues"Deccan Chronicle (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৪-০৪-২৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-১৬ 
  2. Ifthekhar, J. S. (২০১৩-১১-১১)। "Did Bhagmati really exist?"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-১৬ 
  3. Ayoob Ali Khan, Mir (২২ মার্চ ২০১০)। "For Hyderabadis, Bhagmati is vital part of history | Hyderabad News - Times of India"The Times of India (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-১৬ 
  4. Pillai, Manu S. (২০১৮-১১-১৫)। "Opinion | A Hyderabadi conundrum"LiveMint (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-১৬