বিষয়বস্তুতে চলুন

ভরাল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ভরাল
Bharal (blue sheep)
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: প্রাণী জগৎ
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: Mammalia
বর্গ: Artiodactyla
পরিবার: Bovidae
গণ: Pseudois
প্রজাতি: P. nayaur
দ্বিপদী নাম
Pseudois nayaur
Hodgson, 1833

ভরাল অর্থাৎ হিমালয়ান ব্লু শিপ অথবা নাউর(Pseudois nayaur) হল এক শ্রেণীর ছাগল-হরিণ প্রজাতির প্রাণী । এর প্রাপ্তিস্থল মূলত উচ্চ হিমালয়, নেপাল, ভুটান, তিব্বত এবং পাকিস্তান ।হিন্দিতে এর স্থানীয় নাম হল ভরাল, বারহাল, ভরার এবং ভারুত। লাদাখি ভাষায় এরা না বা স্না, স্পিতি ভাষায় নাব, নেপালিতে নাউর এবং ভুটানিতে না বা নাও হিসাবে পরিচিত।[] তুষার চিতার মূল খাদ্য হল এই ভরাল।

বিবরণ

[সম্পাদনা]

মধ্যম আকৃতিযুক্ত ভরালের মাথা থেকে শরীরের দৈর্ঘ্য হয় ১১৫ সেমি থেকে ১৬৫ সেমির মধ্যে এবং লাজের দৈর্ঘ্য হয় ১০ সেমি থেকে ২০ সেমির মধ্যে। দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় এদের কাঁধ অবধি উচ্চতা হয় ৬৯সেমি থেকে ৯১সেমি। এদের ওজন সাধারণত ৩৫কেজি থেকে ৭৫কেজির মধ্যে হয়ে থাকে। পুরুষদের আকৃতি স্ত্রীদের থেকে কিছুটা বড় হয়। এদের গায়ের রং সাধারণত স্লেট-ধূসর বা নীলচে রঙের হয়ে থাকে। শরীরের নিচের দিকের অংশ এবং পায়ের পিছনের দিক সাদা, বুক এবং পায়ের সামনের দিকের রং কালো হয়। পিঠের দিকটা ধূসর এবং পেটের রং সাদা হয়। চারকোল রঙের দাগের মাধ্যমে এদের পেট এবং পিঠ বিভক্ত থাকে। এদের নাকের সামনের দিকটা কালো হয় এবং এদের কানগুলি সাধারণত ছোট হয়ে থাকে।পুরুষ ও নারী উভয়ের ক্ষেত্রেই শিং দেখা যায় এবং দুই ক্ষেত্রেই শিং এর আকার শিরাবিশিষ্ট হয়। পুরুষদের শিং উপরের দিকে বেড়ে পাশের দিকে ঘুরে পিছনের দিকে বাঁক নেয়। এদের দৈর্ঘ্য সাধারণত ৮০সেমি পর্যন্ত্য হয়ে থাকে। স্ত্রীদের ক্ষেত্রে শিং এর আকৃতি ছোট এবং সোজা হয় যার দৈর্ঘ্য সাধারণত ২০সেমি হয়ে থাকে। [][]

শ্রেণিবিন্যাস

[সম্পাদনা]
  • Chinese blue sheep, Pseudois nayaur szechuanensis
  • Himalayan blue sheep, P. n. nayaur
  • Helen Shan blue sheep, P. n. ssp.
  • Dwarf blue sheep, P. schaeferi, এদের কখনও কখনও ভরাল উপপ্রজাতির অন্তর্গত বলে মনে করা হয়ে থাকে।

বাস্তুসংস্থান

[সম্পাদনা]

ভরাল সাধারণত ঘাসযুক্ত ঢালে এবং পাথুরে জমিতে বসবাস করে। জঙ্গলের ঊর্ধ্ব সীমা এবং হিমরেখা বরাবর ১০০০০ ফুট থেকে ১৬০০০ ফুটের মধ্যে এদের দেখা যায় ।

প্রজননকাল

[সম্পাদনা]

সাধারণত নভেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়কে এদের প্রজননকাল হিসাবে ধরা হয়ে থাকে। পর্যায়ক্রমিক যৌন উত্তেজনার আচরণ করাকালীন পুরুষ ভরালরা বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে। এদের জন্মের পর্যায়কাল মূলত জুন মাসের শেষ থেকে জুলাই মাস অবধি।[][]

ভোজন ও বিশ্রামের সময় ছাড়া এরা সারাদিনই কর্মক্ষম থাকে। বিশ্রামের সময় এরা ঘাসযুক্ত পাহাড়ের ঢাল পছন্দ করে। ছদ্মআবরণের দ্বারা নিজেদের আড়াল করতে এরা বিশেষ ভাবে দক্ষ হয়। এদের গায়ের রং এবং নিস্পন্দতা শিকারির কাছ থেকে নিজেদের লুকিয়ে রাখতে বিশেষভাবে সহায়তা করে। কখন ধরা পড়ে গেলে অত্যন্ত খাড়া পাহাড়ের গা বেয়ে এরা খুব দ্রুত উঠে যেতে পারে এবং সেখানেও হঠাৎ করে নিস্পন্দ হয়ে গিয়ে পারিপার্শ্বিক পরিবেশে নিজেদের লুকিয়ে ফেলতে পারে।

খাদ্যাভ্যাস

[সম্পাদনা]

এরা মূলত তৃণভোজী তবে ঘাস কম থাকলে গাছগাছড়া এবং গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ খেয়ে বেঁচে থাকে। []

ভরাল চিতা এবং তুষার চিতার প্রিয় শিকার হলেও কখনও কখনও শিয়াল ও ঈগলের খাদ্যও হয়। গাধা জাতীয় সম খাদ্যাভ্যাসের গবাদি পশুর সাথে প্রতিযোগিতায় কুলিয়ে উঠতে না পেরে এদের সংখ্যার ঘনত্ব অনেক সময় কমে যায়। [][]

বর্তমান অবস্থা

[সম্পাদনা]

ওয়ার্ল্ড কনজারভেশন ইউনিয়ন (আইইউসিএন) এর তালিকায় ভরালকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত প্রাণীদের শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সাধারণত এদের জীবন ধারণের অন্তরায় হিসাবে দু ধরনের বিপদের সম্ভাবনা দেখা যায়, যার মধ্যে একটি হল চোরাশিকার এবং আরেকটি অন্যান্য গবাদিপশুর সঙ্গে খাদ্যানেশনের প্রতিযোগিতা। যদিও চোরাশিকার এদের আবাসস্থলের অনুপযুক্ত পরিবেশের কারণে খুব একটা প্রচলিত হয় নি। ঠিক একই ভাবে, গবাদি পশুর বিচরণ ক্ষেত্র ভরালের বিচরণ স্থলের থেকে আলাদা হওয়ার সুবাদে কোন উল্লেখযোগ্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারেনি বলেই মনে করা হয়। []

মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক

[সম্পাদনা]

অনেক বৌদ্ধ মঠে ভরালকে রক্ষা করা হয়ে থাকলেও বর্তমানে স্পিতি উপত্যকায় এদের দ্বারা শস্য নষ্ট করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

চিত্রশালা

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. IUCN SSC Antelope Specialist Group (2008). Pseudois nayaur. 2008 IUCN Red List of Threatened Species. IUCN 2008. Retrieved on 15 March 2016.
  2. Lydekker, Richard। The great and small game of India, Burma and Tibet (1900 সংস্করণ)। পৃষ্ঠা 93। 
  3. "Bharal, Himalayan blue sheep."। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুন ২০১৬ 
  4. Smith,, A. T.; Xie,, Y. (eds.)। Guide to the Mammals of China (2008 সংস্করণ)। Princeton University Press, Princeton Oxforshire। আইএসবিএন ISBN 0691099847 |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য) 
  5. Lovari, Sandro; Som, Ale। Are there multiple mating strategies in the blue sheep?Behavioural Processes 53 (1–2) (2001 সংস্করণ)। পৃষ্ঠা 131–135। 
  6. Edwin T, Atkinson (মার্চ ১৮৮৪)। The Himalayan Gazetteer -Part 1। Cosmo Publications, New Delhi। পৃষ্ঠা 34। 
  7. Suryawanshi; Kulbhushansingh; Bhatnagar, YV; Mishra C। "Why Should a Grazer Browse? Livestock impact on winter resource use by bharal Pseudois nayaur". Oecologia 162 (2) (2010 সংস্করণ)। পৃষ্ঠা 453–462।