ব্লাঞ্চ মনিয়ার
ব্লাঞ্চ মনিয়ার | |
|---|---|
মনিয়ারকে গোপনে যে ঘরে বন্দী করা হয়েছিল, সেখানে তার সন্ধান পাওয়ার কিছুক্ষণ পরের ছবি, ২৩ মে ১৯০১ | |
| জন্ম | ১ মার্চ ১৮৪৯ পোইটিয়ার্স, দ্বিতীয় ফরাসি প্রজাতন্ত্র |
| অন্তর্ধান | ১৮৭৬/১৮৭৭ – বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ১৯০১ (২৫ বছর) |
| মৃত্যু | ১৩ অক্টোবর ১৯১৩ (বয়স ৬৪) ব্লোয়েস, তৃতীয় ফরাসি প্রজাতন্ত্র |
| অন্যান্য নাম | লা সেক্যুয়েস্ট্রি দে পোইটিয়ার্স |
| পরিচিতির কারণ | পরিবার দ্বারা গোপনে এক চতুর্থাংশ শতাব্দী ধরে বন্দিত্বের জন্য |
ব্লাঞ্চ মনিয়ার (ফরাসি উচ্চারণ: [blɑ̃ʃ mɔnje]; ১ মার্চ ১৮৪৯ - ১৩ অক্টোবর ১৯১৩), যিনি ফ্রান্সে প্রায়ই লা সেক্যুয়েস্ট্রি দে পোইটিয়ার্স [ক] (পোইটিয়ার্সের সীমাবদ্ধ নারী),[১] নামে পরিচিত, ফ্রান্সের পোইটিয়ার্সের একজন নারী, যাকে তার অভিজাত শ্রেণীর মা এবং ভাই ২৫ বছর ধরে গোপনে একটি ছোট ঘরে আটকে রেখেছিল। অবশেষে পুলিশ তাকে খুঁজে পায়, তখন তার বয়স ছিল মধ্যবয়সী এবং অত্যন্ত জীর্ণশীর্ণ ও অপরিচ্ছন্ন; কর্মকর্তাদের মতে, মনিয়ার তার পুরো বন্দিদশা জুড়ে কোনও সূর্যের আলো দেখেননি।[২]
পটভূমি
[সম্পাদনা]ব্লাঞ্চ মনিয়ার ছিলেন একজন ফরাসি অভিজাত সমাজের নারী, যিনি ১৮৪৯ সালের ১ মার্চ পোইটিয়ার্সে চার্লস মনিয়ার ও লুইস মনিয়ারের একটি রক্ষণশীল বুর্জোয়া পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। 'মার্সেল' নামে তার একজন বড় ভাই ছিলেন।[৩] তিনি তার সৌন্দর্যের জন্য সুপরিচিত ছিলেন এবং তাকে বিয়ে করার জন্য বহু পুরুষ আকাঙ্ক্ষিত ছিলো। ১৮৭৬ সালে ২৭ বছর বয়সে তিনি ভিক্টর ক্যালমিলকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। ভিক্টর একজন বয়স্ক আইনজীবী যিনি মনিয়ারের মায়ের পছন্দের ছিলেন না। লুইস যুক্তি দিয়েছিলেন যে তার মেয়ে একজন "দরিদ্র আইনজীবী" কে বিয়ে করতে পারে না।[৪][৫] তার অসন্তুষ্ট মা, মেয়ের অবাধ্যতায় ক্ষুব্ধ হয়ে, তাকে তাদের বাড়ির ছাদের একটি ছোট, অন্ধকার ঘরে ২৫ বছর গোপনে আটকে রেখেছিলেন। লুইস এবং মার্সেল ব্লাঞ্চের অন্তর্ধানের জন্য শোকের ভান করে তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন চালিয়ে যান। ১৬ মে ১৮৭৭ সালের ফরাসি সংকটকালীন সময়ে তার বাবা চার্লস-এমিলকে পয়েটিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষদের ডিন পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। ব্লাঞ্চের কোনও বন্ধুই জানতেন না যে তিনি কোথায় আছেন এবং তিনি যে আইনজীবীকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন তিনি ১৮৮৫ সালে অপ্রত্যাশিতভাবে মারা যান।
উদ্ধার
[সম্পাদনা]১৯০১ সালের ২৩শে মে, "প্যারিস অ্যাটর্নি জেনারেল"[খ] একটি বেনামী চিঠি পান, যার লেখক এখনও অজানা, যেখানে মিথ্যা কারাদণ্ডের বিষয়টি প্রকাশ করা হয়েছিল:
মহাশয় অ্যাটর্নি জেনারেল, আমি আপনাকে অত্যন্ত সম্মানের সাথে একটি ব্যতিক্রমী গুরুতর ঘটনার কথা জানানোর প্রয়োজন বোধ করছি। আমি একজন নারীর কথা বলছি যে ম্যাডাম মনিয়ারের বাড়িতে গত পঁচিশ বছর ধরে অর্ধ-ক্ষুধার্ত অবস্থায় আটকে আছে এবং নোংরা আবর্জনার উপর বাস করছে - এক কথায়, তার নিজের নোংরা আবর্জনায়।।
১৯০১ সালের ২৩শে মে, বৃহস্পতিবার বিকেলে, পয়েটিয়ার্স পুলিশের কমিশনার বুচেটন মনিয়ার পরিবারের বাসভবনে পৌঁছান। অফিসারদের সাথে এবং প্যারিসের প্রসিকিউটর মন্সিউর মোরেলেটের আদেশ নিয়ে, তিনি বাড়িতে তল্লাশির জন্য প্রবেশের অনুরোধ করেন। মনিয়ার পরিবারের কর্মচারী বিষয়টিকে প্রত্যাখ্যান করতে না পেরে, মালিক ম্যাডাম লুইস মনিয়ারের সাথে পরামর্শ করেন, যিনি ৭৫ বছর বয়সী এবং শয্যাশায়ী ছিলেন বলে জানা গেছে। অফিসারদের তার ছেলে মার্সেল মনিয়ারের কাছে পাঠানো হয়েছিল, যিনি ৫৩ বছর বয়সী আইনের ডাক্তার এবং প্রাক্তন সরকারি কর্মচারী, যিনি পাশের একটি বাড়িতে থাকতেন।
বাগান এবং গোলাপের ঝোপ পেরিয়ে, অফিসাররা মার্সেলের দরজায় পৌঁছালেন। গৃহকর্মী তাদের নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা সত্ত্বেও, পুলিশ একটি বেনামী অভিযোগের তদন্ত শুরু করে যেখানে অভিযোগ করা হয়েছিল যে মনিয়ারের বাড়িতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। ভিতরে ঢুকে তারা নিচতলার প্রতিটি কক্ষ তল্লাশি করে, অস্বাভাবিক কিছু খুঁজে পায়নি। তারা দ্বিতীয় তলায় যেতে থাকে, কোনও উদ্বেগের লক্ষণ ছাড়াই প্রতিটি কক্ষ পরীক্ষা করে - যতক্ষণ না তারা একটি তালাবদ্ধ চিলেকোঠার দরজায় পৌঁছায়, যা একটি মোটা শিকল এবং তালা দিয়ে আটকানো ছিল। যখন এটি খুলতে বলা হয়, তখন পরিবারটি প্রথমে অস্বীকৃতি জানায়ে, কিন্তু অফিসাররা জোর দিয়ে বলে যে প্রয়োজনে তারা একজন বিচারককে এ বিষয়ে জড়িত করবে। অবশেষে, দরজাটি খুলে দেওয়া হয়।
পুলিশ যখন ভেতরে ঢুকলো, তখন তাদের নাকেে তীব্র দুর্গন্ধ এলো। পুরো জায়গাটা অন্ধকারে ঢাকা ছিল, আর ছাদের শেষ প্রান্তে তারা দেখতে পেলো একটা দুর্বল, শীর্ণ দেহ একটা নষ্ট গদিতে শুয়ে আছে। ঘরটা ভীষণ জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল, পুরনো খাবার, পোকামাকড় আর আবর্জনা দিয়ে ভরা। দৃশ্যমানতা এবং বায়ুচলাচল উন্নত করার জন্য, অফিসাররা জানালার পর্দা খুলে ফেলে এবং জানালার ক্যানভাস ভেঙে ফেলে। সূর্যের আলো যখন পুরো জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, তখন ইঁদুর আর পোকামাকড় ছড়িয়ে পড়ে।
হঠাৎ উজ্জ্বলতায় চিলেকোঠার উপর বসা মূর্তিটি বিচলিত হয়ে পিছু হটলো এবং নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করলো। তার লম্বা, এলোমেলো চুল তার গোড়ালি পর্যন্ত পৌঁছেছিল, এবং তার নখগুলি ঘন এবং অনেক বড় ছিল। মার্সেল মনিয়ার তাকে তার বোন, ব্লাঞ্চ মনিয়ার হিসাবে শনাক্ত করেছিলেন। একসময় সমাজের একজন তরুণী এবং সম্মানিত সদস্য, ব্লাঞ্চ তখন ৫২ বছর বয়সী এবং অবশেষে উদ্ধার হওয়ার আগে ২৫ বছর বন্দী অবস্থায় ছিলেন।[৬]
পুলিশ মনিয়ারকে মাত্র ২৫ কিলোগ্রাম (৫৫ পাউন্ড) ওজনের ভয়াবহ অবস্থা থেকে উদ্ধার করে। তার কক্ষটি পুরনো পচা খাবার, মল মূত্রে ভরা এবং পোকামাকড়ের আবসস্থল হয়ে উঠেছিল।[৭][৮]

একজন পুলিশ সদস্য মনিয়ার এবং তার বিছানার অবস্থা বর্ণনা করেছেন এভাবে:[৪][৫]
হতভাগ্য মহিলাটি সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় একটি পচা খড়ের গদিতে শুয়ে ছিল। তার চারপাশে মলমূত্র, মাংসের টুকরো, শাকসবজি, মাছ এবং পচা রুটি দিয়ে তৈরি এক ধরণের খোলস তৈরি হয়েছিল... আমরা ম্যাডেমোইসেল মনিয়ারের বিছানা জুড়ে ঝিনুকের খোলস এবং পোকামাকড়ও দেখতে পেলাম । বাতাস এতটাই অসহনীয় ছিল যে, ঘর থেকে আসা দুর্গন্ধ এতটাই তীব্র ছিল যে আমাদের পক্ষে আর বেশিক্ষণ থাকা এবং আমাদের তদন্ত চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না।
গ্রেপ্তার ও পরবর্তী ঘটনাবলী
[সম্পাদনা]
লুইস মনিয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয়, তার কিছুক্ষণ পরেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ১৫ দিন পর তার বাড়ির সামনে এক বিক্ষুব্ধ জনতা জড়ো হতে দেখে তিনি মারা যান। মার্সেল মনিয়ার আদালতে হাজির হন এবং প্রথমে দোষী সাব্যস্ত হন, কিন্তু পরে আপিলের মাধ্যমে তাকে খালাস দেওয়া হয়; তাকে মানসিকভাবে অক্ষম বলে গণ্য করা হয়, এবং যদিও বিচারকরা তার কৃতকর্মের জন্য ভৎসনা করেছিলেন, তারা দেখতে পান যে সেই সময়ে দণ্ডবিধিতে "উদ্ধার করার দায়িত্ব " বিদ্যমান ছিল না এবং তাকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য পর্যাপ্ত নিয়ম ছিল না।[৭][৯] মার্সেল মনিয়ার ১৯১৩ সালের জুন মাসে ৬৫ বছর বয়সে মিগনেতে মারা যান ।
ঘর থেকে মুক্তি পাওয়ার পরও মনিয়ারের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা অব্যাহত ছিল। তার বিভিন্ন ব্যাধি ধরা পড়ে, যার মধ্যে রয়েছে অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা,[গ] সিজোফ্রেনিয়া, এক্সিবিশনিজম এবং কোপ্রোফিলিয়া। এর ফলে শীঘ্রই তাকে ব্লোইসের একটি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, যেখানে তিনি ১৯১৩ সালের ১৩ অক্টোবর আপাতদৃষ্টিতে অজ্ঞাত কারণে মারা যান।[১০][১১]
সৃষ্টিকর্ম
[সম্পাদনা]গ্রন্থাবলী
[সম্পাদনা]- অগাস্টিন, জিন-মেরি। পয়েটিয়ার অপহৃত মহিলার সত্য গল্প। ফেয়ার্ড। ২০০১। আইএসবিএন ৯৭৮-২২১৩৬০৯৫১৫
- এই নারীর পরিবার তাকে নির্মমভাবে ২৫ বছর ধরে একটি আঁধার ঘরে বন্দী করে রেখেছিল.
মন্তব্য
[সম্পাদনা]- ↑ Pronounced in French as a rhyme as [la sekɛstʁe d(ə) pwatje].
- ↑ See Procureur général for the closest translation of the office. The "Attorney General" of Paris was Léon Bulot from 1900.
- ↑ Then written in French as "anorexie hystérique".
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Ivry, Benjamin; Gide, André (২০০৩)। "The Confined Woman of Poitiers"। New England Review। ২৪ (3): ৯৯–১৩২। জেস্টোর 40244293।
- ↑ Vivi, Janouin-Benanti. La Séquestrée De Poitiers: Une Affaire Judiciaire Sans Précédent (in French) আইএসবিএন ৯৭৮-২৯১৪৪৭৪০০৯
- ↑ "Marie Louis Charles Marcel Monnier"। ancestors.familysearch.org। সংগ্রহের তারিখ ২২ জানুয়ারি ২০২৩।
- 1 2 Radeska, Tijana (৫ জানুয়ারি ২০১৮)। "Blanche Monnier was imprisoned in a tiny room for 25 years because her mother hated her choice of husband"। The Vintage News।
- 1 2 "The Story of a Nightmare: Blanche Monnier"। History Key। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
- ↑ "The beautiful young woman who lived for 25 years locked up by her mother's decision and the anonymous clue that rescued her when she weighed 24 kilos"। ১৫ মার্চ ২০২২।
- 1 2 3 Pujolas, Marie (২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। "En tournage, un documentaire sur l'incroyable affaire de "La séquestrée de Poitiers"" (French ভাষায়)। France Télévisions।
{{ওয়েব উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: অচেনা ভাষা (লিঙ্ক) - ↑ "Jacques Pradel et RTL reviennent sur l'incroyable histoire de la Séquestrée de Poitiers" (French ভাষায়)। Charente Libre। ১৯ মে ২০১৫।
{{ওয়েব উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: অচেনা ভাষা (লিঙ্ক) - ↑ Moreillon, Laurent. L'infraction par omission, Librairie Droz, 1993, p. 65, (in French)
- ↑ "Pascal Audoux dévoile les mystères du Loir-et-Cher" (French ভাষায়)। La Nouvelle Republique। ২৫ এপ্রিল ২০১৫।
{{ওয়েব উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: অচেনা ভাষা (লিঙ্ক) - ↑ "Retronews – Le site de presse de la BnF" (ফরাসি ভাষায়)। ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯। সংগ্রহের তারিখ ৩০ অক্টোবর ২০১৯।
- ↑ Levy, Audrey (২১ এপ্রিল ২০১৫)। "Destins de femmes: Ces Poitevines plus ou moins célèbres auront marqué l'Histoire"। Le Point (French ভাষায়)।
{{ম্যাগাজিন উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: অচেনা ভাষা (লিঙ্ক)
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- "She imprisoned daughter, Girl Kept in a Dungeon Twenty-five Years Because She Was True to Her Sweetheart"। The New York Times। ৯ জুন ১৯০১। সংগ্রহের তারিখ ১২ অক্টোবর ২০১৭।