ব্রডার নুটজন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
a painting of a young man with curly hair, pale visage and merry eyes; he wears a double-breasted brown coat and a white waiscoat with cravat
ব্রডার নুটজন

ব্রডার লিশলম নুটজন (ইংরেজি: Broder Lysholm Knudtzon; ৫ অক্টোবর ১৭৮৮- ২০ মার্চ ১৮৬৪) নরওয়ের একজন ব্যবসায়ী, রাজনীতিক এবং সমাজসেবী ছিলেন। তার জন্ম ট্রন্ডহেইমের এক অন্যতম ধনী ব্যবসায়ী পরিবারে। পরে তিনি ইংল্যান্ড গমন করেন এবং ইংরেজি ভাষা এবং সাহিত্যের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন। ব্যবসায়িক পরিমন্ডলে বেড়ে ওঠা সত্ত্বেও রাজনীতি এবং শিল্প-সংস্কৃতির দিকে ছিলো তার বিপুল আগ্রহ। সে জন্যেই তার বাবার পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বৈদেশিক যোগাযোগ বিভাগের দায়িত্বে থাকলেও সেদিকে তার খুব বেশি আগ্রহ ছিলো না। ইংল্যান্ডে থাকাকালীন তার লর্ড বায়রনের সাথে বন্ধুত্ত্ব হয় এবং তৎকালীন ইংলিশ জাতীয় সংস্কার আন্দোলন দ্বারা প্রভাবিত হন। মৃত্যুর আগে তিনি তার সমগ্র লাইব্রেরি এবং বেশ কিছু শিল্পকর্ম ‘রয়্যাল নরওয়েজিয়ান সোসাইটি অফ সায়েন্স এন্ড লেটারস’কে উইল করে দিয়ে যান।

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

নুটজন সর-ট্রন্ডেলাগ-এর ট্রন্ডহেইমে জন্মগ্রহণ করেন। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হান্স কার্ল নুটজন (১৭৫১-১৮২৩) ও ক্যারেন নুটজনের (১৭৫২-১৮১৮) ছয় সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ।[১][২] নুটজনের বাবার জন্ম জার্মানিতে। ব্যবসায়ী হিসেবে উন্নতির লক্ষ্যে তিনি নরওয়ে চলে আসেন।[৩] তার ব্যবসা অচিরেই ফুলেফেপে ওঠে এবং নুটজন পরিবার ট্রন্ডহেইমের শিল্পী ও লেখকদের জন্যে এক নির্ভরতায় পরিনত হয়। শৈশব ট্রেন্ডহেইমে কাটালেও, ১৭৯৬ সালে ব্রডার নুটজন জার্মানির ফ্লেন্সবার্গে চলে যান। সেখানে তিনি তার বাবার চাচার সাথে থাকতেন।[৪] তারপর তিনি আবার ট্রন্ডহেইমে ফিরে আসেন এবং বাবার অধীনে ব্যবসা শেখা শুরু করেন।[১] এরপরে তিনি ব্যবসা শেখার জন্যে ফ্রান্সের বিভিন্ন জায়গা সফর করেন। সেখানে তার সাথে পরিচয় হয় ড্যানিশ কবি ও নাট্যকার অ্যাডাম ওয়েহলেন্সশ্লাগারের সাথে। নাঁতেতে তার বোনের বাড়িতে কিছুদিন থেকে তিনি চলে যান ইংল্যান্ড। সেখানে দেখা হয় কবি লর্ড বায়রন এবং জাতীয় সংস্কার আন্দোলনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সাথে।[৫] ইংল্যান্ড থাকতেই ইংরেজি ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি তার খুব মনে ধরে যায়। এরপর ইতালি ভ্রমণের সময় তার সাথে দেখা হয় ড্যানিশ-আইসল্যান্ডিক ভাস্কর বার্টেল থরভালসেনের সাথে। তিনি নুটজন এবং তার পরিবারের বাকি সবার আবক্ষ ছবি এঁকে দেন।[১]

ব্যবসায়িক এবং রাজনৈতিক সংযোগ[সম্পাদনা]

১৮১৪ সালের বসন্তে, ব্রডার আর তার ভাই জরগেন নরওেয়র স্বাধীনতার পক্ষে ইংরেজ জনগনের সমর্থন আদায়ের প্রচেষ্টায় কার্স্টেন অ্যাঙ্কারকে সাহায্য করেন। নরওয়ের আইনসভা স্টোরটিং-এর প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে ঐ বছরই শরৎকালে নুটজন তার বাবার সাথে স্টকহোম গমন করেন। সেখান থেকে ফেরার পর তার বাবার প্রতিষ্ঠান হান্স নুটজন এন্ড কোং-এ তাকে বৈদেশিক বিভাগের দায়িত্ব দেয়া হয়। এই কোম্পানীর মালিক ছিলেন আরও দুজন। হান্সের ভাই ক্রিশ্চিয়ান এবং ভগ্নীপতি লরেঞ্জ জোহানসেন[১][৬] কিন্তু এসব ব্যবসায়িক কারবার তার মোটেও ভালো লাগতো না। তার নিজের ভাষায়, ‘ব্যবসা আমার চরম অপছন্দ। তবে সাহিত্যচর্চা করতে আমার কোনো ক্লান্তি লাগে না।’ [১]

স্টোরটিংয়ের প্রতিনিধি দলের একজন অতিরিক্ত সদস্য হওয়ায় তাকে একবার সংসদেও কাজ দেয়া হয়। সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৮৩৯-৫৭ পর্যন্ত তিনি ছিলেন নরজেস ব্যাঙ্কের তত্ত্বাবধায়ক কমিটির সদস্য। ১৮২১ সালে তিনি রয়্যাল নরওয়েজিয়ান সোসাইটি অফ সায়েন্স এন্ড লেটারসের সদস্য হন এবং ১৮২৫ থেকে ১৮৩১ পর্যন্ত এর সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। নরওয়ে জুড়ে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার সুপ্ত বাসনা থেকেই তিনি ইংল্যান্ডে নিজের পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে প্রচুর বই এবং জার্নাল আনানোর ব্যবস্থা করেন। এছাড়াও তিনি তার সমস্ত বইয়ের সংগ্রহ এবং থরভালসেন এর খোদাই করা পাঁচটি ভাস্কর্য সেখানে দান করে দেন।[১] তবে তার শর্ত ছিলো ছিলো একটাই। সেটা হলো এগুলো আর কখনোই রাজধানীতে পাঠানো যাবে না।[৭][৮]

মৃত্যু এবং উত্তরাধিকার[সম্পাদনা]

নুটজন অবিবাহিত অবস্থাতেই ২০ মার্চ ১৮৬৪ সালে ট্রন্ডহেইমেই মারা যান। ভার ফ্রু চার্চে তাকে সমাহিত কয়া হয়। এই গীর্জাতেই তাকে খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষা দেয়া হয়েছিল। মৃত্যুর আগে তিনি তার সমস্ত লেখা এবং চিঠিপত্র পুড়িয়ে ফেলেন। এমনকি লর্ড বায়রনের সাথে যেসব লেখালেখি করেছিলেন সেসবও। তাই কিছু অনুবাদ আর মাসিক পত্রিকায় প্রকাশিত কিছু নিবন্ধ ছাড়া তার আর কোনো লেখাই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।[৫] একজন জীবনীকার তা সম্পর্কে বলেনঃ

‘মি. নুটজন ছিলেন ট্রন্ডহেইমের বিশিষ্ট ব্যাংকার। তিনি কিছুদিন ইংল্যান্ড থাকেন; তার মধ্যে উত্তরের স্থানীয়দের মত অতিথিপরায়ন কোমলতা আগে থেকেই ছিল এবং একজন সুশিক্ষিত ব্যক্তির মতোই নিজের মধ্যে একজন ইংলিশ ভদ্রলোকের মার্জিত আচরণও সন্নিবেশিত করতে পেরেছিলেন।’[৫]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Bull, "Broder Knudtzon."
  2. Bratberg, "Knudtzon."
  3. Bull, "Hans Carl Knudtzon."
  4. Aase 133.
  5. Aase 134.
  6. Bratberg, "Lorentz Johannsen."
  7. Aase 132.
  8. Nielsen 159.

উল্লেখযোগ্য কাজ[সম্পাদনা]

Aase, Monica. "En europeer i Trondheim – Broder Lysholm Knudtzon og hans bibliotek." Til opplysning: Universitetsbiblioteket i Trondheim 1768–1993. Ed. Harald Nissen and Monica Aase. Trondheim: Tapir Forlag, 1993. 132–137. আইএসবিএন ৮২-৫১৯-১৪৬৭-১. Print.
Bratberg, Terje. "Knudtzon." Trondheim byleksikon. Ed. Jon Gunnar Arntzen. Trondheim: Kunnskapsforlaget, 1996. 296. আইএসবিএন ৮২-৫৭৩-০৬৪২-৮. Print.
–––. "Lorentz Johannsen." Norsk biografisk leksikon. Ed. Knut Helle. Vol. 5. Oslo: Kunnskapsforlaget, 2002. Web. 16 Dec. 2011.
Bull, Ida. "Broder Knudtzon." Norsk biografisk leksikon. Ed. Knut Helle. Vol. 5. Oslo: Kunnskapsforlaget, 2002. Web. 13 Dec. 2011.
–––. "Hans Carl Knudtzon." Norsk biografisk leksikon. Ed. Knut Helle. Vol. 5. Oslo: Kunnskapsforlaget, 2002. Web. 13 Dec. 2011.
Nielsen, Lauritz. "Ældre dansk litteratur i Norge." Nordisk tidskrift för bok- och biblioteksväsen 10 (1923): 155–66. Web. 19 Dec. 2011.