ব্যারি উড

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ব্যারি উড
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামব্যারি উড
জন্ম (1942-12-26) ২৬ ডিসেম্বর ১৯৪২ (বয়স ৮১)
অসেট, ইয়র্কশায়ার, ইংল্যান্ড
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি মিডিয়াম
ভূমিকাব্যাটসম্যান
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৪৫৩)
১০ আগস্ট ১৯৭২ বনাম অস্ট্রেলিয়া
শেষ টেস্ট১ জুন ১৯৭৮ বনাম পাকিস্তান
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৬৪ইয়র্কশায়ার
১৯৬৬–১৯৭৯ল্যাঙ্কাশায়ার
১৯৮০১৯৮৩ডার্বিশায়ার
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট ওডিআই এফসি এলএ
ম্যাচ সংখ্যা ১২ ১৩ ৩৫৭ ২৯১
রানের সংখ্যা ৪৫৪ ৩১৪ ১৭,৪৫৩ ৬০৪১
ব্যাটিং গড় ২১.৬১ ৩১.৩৯ ৩৩.৮২ ২৮.৩৬
১০০/৫০ –/২ –/২ ৩০/৮১ ৩/৩৯
সর্বোচ্চ রান ৯০ ৭৮* ১৯৮ ১১৬
বল করেছে ৯৮ ৪২০ ২১,৫৭১ ১২,৫৮৪
উইকেট ২৯৮ ৩৩২
বোলিং গড় ২৪.৮৮ ৩০.৭৩ ২১.৩০
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট -
সেরা বোলিং ২/১৪ ৭/৫২ ৫/১২
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৬/– ৬/– ২৮৪/– ১১৬/–
উৎস: ক্রিকইনফো, ৪ জুলাই ২০১৮

ব্যারি উড (ইংরেজি: Barry Wood; জন্ম: ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৪২) ইয়র্কশায়ারের অসেট এলাকায় জন্মগ্রহণকারী সাবেক ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার।[১] ১৯৭২ থেকে ১৯৮২ সময়কালে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ইয়র্কশায়ার, ল্যাঙ্কাশায়ার ও ডার্বিশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিং করতেন তিনি।

১৯৬৪ সালে ইয়র্কশায়ারের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলতে নামেন।[২] এরপর ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৯ সময়কালে ল্যাঙ্কাশায়ার ও ১৯৮০ থেকে ১৯৮৩ সময়কালে ডার্বিশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেন। তন্মধ্যে, ডার্বিশায়ারে খেলাকালীন তিনি অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশগ্রহণ[সম্পাদনা]

১৯৬৪ সালে ইয়র্কশায়ারের সদস্য থাকাকালীন প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে ব্যারি উডের। কিন্তু, খেলায় অংশগ্রহণের সীমিত সুযোগ থাকায় ১৯৬৬ সালে ল্যাঙ্কাশায়ারে স্থানান্তরিত হন। সেখানে থাকাকালে একই মৌসুমে প্রথম ইয়র্কশায়ারীয় খেলোয়াড় হিসেবে নিজ কাউন্টির বিপক্ষে অনুষ্ঠিত গোলাপের খেলায় দুইটি সেঞ্চুরি করেন। উভয়ক্ষেত্রেই ছক্কা হাঁকিয়ে এ সফলতা পেয়েছিলেন।

১৯৭০-এর দশকে ক্রিকেটের ইতিহাসে যে-কোন খেলোয়াড়ের তুলনায় সর্বাধিক ম্যান অব দ্য ম্যাচ স্বর্ণপদক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। এ সময়ে সন্দেহাতীতভাবে ইংরেজ ক্রিকেটের একদিনের খেলায় সর্বাধিক মূল্যবান খেলোয়াড়ের মর্যাদা পেয়েছিলেন। পরবর্তীকালে গ্রাহাম গুচ তার ঐ রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলতে সমর্থ হয়েছিলেন। জ্যাক বন্ডের নেতৃত্বাধীন ঐ দলে ক্লাইভ লয়েড, ডেভিড লয়েডপিটার লিভারের ন্যায় আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় ছিল।

তারকা সমৃদ্ধ দলটি ছয় বছরে ছয়টি ট্রফি জয়লাভে সমর্থ হয়। ১৯৬৯ সালে প্লেয়ার্স কাউন্টি লীগ, ১৯৭০ সালে জন প্লেয়ার লীগ এবং ১৯৭০, ১৯৭১, ১৯৭২ ও ১৯৭৫ সালে জিলেট কাপ জয় করে। ১৯৭১ সালে গ্ল্যামারগনের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৯৮ রান তুলেন। এছাড়াও, এজবাস্টনে ওয়ারউইকশায়ারের বিপক্ষে অ্যান্ডি কেনেডির সাথে পঞ্চম উইকেট জুটিতে ২৪৯ রানে জুটি গড়েন যা অদ্যাবধি অক্ষত অবস্থায় রয়েছে।[৩]

টেস্ট ক্রিকেট[সম্পাদনা]

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ইংরেজ দলের সদস্যরূপে বারো টেস্ট ও তেরোটি একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশগ্রহণের সুযোগ ঘটে। তন্মধ্যে, নিজ দেশে অনুষ্ঠিত ১৯৭৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপেও খেলেছেন তিনি।

ল্যাঙ্কাশায়ারের পক্ষে ব্যারি উডের অনবদ্য ক্রীড়াশৈলী উপস্থাপনার প্রেক্ষিতে ১৯৭২ সালে সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলার জন্য মনোনয়ন দেয়া হয়। ১০ আগস্ট, ১৯৭২ তারিখে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক ঘটে ব্যারি উডের। বিখ্যাত অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার ডেনিস লিলি’র ভয়ঙ্কর ফাস্ট বোলিংয়ের বিপক্ষে রুখে দাঁড়ানো ব্যারি উড মূল্যবান ৯০ রানের ইনিংস খেলেন। ফলশ্রুতিতে, ভারত ও পাকিস্তান সফরের জন্য ইংরেজ দলের সদস্য করা হয় তাকে। কিন্তু, উপমহাদেশের বেশ ব্যর্থ হন ও দলের বাইরে রাখা হয়। তবে, পরিবর্তিত খেলোয়াড় হিসেবে নিউজিল্যান্ড সফরে তাকে পুনরায় দলে নেয়া হলেও সেখানে তিনি আবারো ব্যর্থতার পরিচয় দেন। প্রথম টেস্টে অংশগ্রহণের পূর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে ৬৩ ঘণ্টা ভ্রমণ করেছিলেন।

১৯৭৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অংশ নেন। এবার লিলি ও জেফ থমসনের ন্যায় বিখ্যাত বোলারের মুখোমুখি হয়ে অর্ধ-শতক করেন। ১৯৭৮ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন ব্যারি উড। খেলোয়াড়ী জীবনের স্বর্ণালী শিখরে থাকাকালীন তিনি ইংল্যান্ডের সর্বাপেক্ষা ফাস্ট বোলিংয়ের বিপক্ষে রুখে দাঁড়ানো খেলোয়াড় হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন।

একদিনের আন্তর্জাতিক[সম্পাদনা]

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে তেরোটি একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশ নিয়েছেন ব্যারি উড। তন্মধ্যে, ইংল্যান্ড অনুষ্ঠিত ১৯৭৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের উদ্বোধনী আসরে খেলেছিলেন তিনি। টেস্টের তুলনায় একদিনের আন্তর্জাতিকে তুলনামূলকভাবে বেশ ভালো খেলেছেন তিনি। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি নয়টি ওডিআই উইকেট তুলে নিয়েছেন।

গালি অঞ্চলে দুর্দান্ত ফিল্ডিং করতেন তিনি। প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ওডিআইয়ে প্রথম বলেই বোল্ড হন তিনি। ২৬ আগস্ট, ১৯৭৬ তারিখে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে স্কারবোরায় অনুষ্ঠিত খেলায় অ্যান্ডি রবার্টসের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন।

বিতর্ক[সম্পাদনা]

১৯৭৫ সালে আর্থিক মতানৈক্যের কারণে ল্যাঙ্কাশায়ার কর্তৃপক্ষের সাথে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। ফলশ্রুতিতে, ঐ সময়ের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার লিভার ও ফ্রাঙ্ক হেইসকে তিন ও উডকে ছয় খেলার জন্য বহিষ্কার করা হয়েছিল।

১৯৭৯ সালে আর্থিক সুবিধার খেলায় £৬২,৪২৯ পাউন্ড-স্টার্লিং লাভ করেন। এর পরপরই পুনরায় অর্থসংক্রান্ত বিষয়ে মতানৈক্যের সূত্রপাত ঘটান। এভাবেই ওল্ড ট্রাফোর্ডে তার খেলোয়াড়ী জীবন শেষ হয়ে যায়।

১৯৮০ সালে ডার্বিশায়ারে যুক্ত হন। কিন্তু, টিসিসিবি তার নিবন্ধন আটকানোর চেষ্টা চালায়। তবে, পি.সি.এসহ তার সতীর্থ পেশাদার খেলোয়াড়দের সহায়তায় ১৫৪-৩১ ভোটে তার স্থানান্তর প্রক্রিয়া শেষ করে।

অর্জনসমূহ[সম্পাদনা]

১৯৮১ সালে ডার্বিশায়ার দলের অধিনায়কের মর্যাদা লাভ করেন। ন্যাট ওয়েস্ট ট্রফির চূড়ান্ত খেলায় নর্দাম্পটশায়ারের বিপক্ষে জয়ী হয়ে শিরোপা লাভে প্রভূতঃ ভূমিকা রাখেন। এ শিরোপাটি ক্লাবের ইতিহাসে রৌপ্যসমতুল্য প্রথম শিরোপা জয় ছিল। ১৯৮৩ সালে আবারো ক্লাবের অধিনায়ক মনোনীত হন। কিন্তু, মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে দল থেকে পদত্যাগ করেন। ফলে এটিই তার শেষ প্রথম-শ্রেণীর মৌসুম ছিল। ঐ মৌসুমে ডার্বিশায়ার দল চ্যাম্পিয়নশীপে নবম স্থানে চলে যায়।[৪]

১৯৮৬ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত চেশায়ারের পক্ষে খেলেন। কিন্তু, উপর্যুপরী পাঁচবার শূন্য রানের ন্যায় অগৌরবজনক রেকর্ড স্থাপন করেন তিনি। তবে, অনেকগুলো মূল্যবান ইনিংসও উপহার খেলেছিলেন ব্যারি উড। তন্মধ্যে, ১৯৮৮ সালে ন্যাট ওয়েস্ট ট্রফির প্রথম রাউন্ডে নর্দাম্পটনশায়ারের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় পায় চেশায়ার দল। খেলায় তিনি ২/৩৯ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ার পাশাপাশি ৪০ রান তুলে রান আউটের শিকার হন। এরফলে, ২১তম ও চূড়ান্তবারের মতো ম্যান অব দ্য ম্যাচ স্বর্ণপদক পুরস্কার লাভ করে রেকর্ড গড়েন। তখন তার বয়স ছিল ৪৬ বছর।

পরের মৌসুমে ওয়াসিম আকরামের আঘাতজনিত অনুপস্থিতিতে দ্বাদশ ব্যক্তি হিসেবে ল্যাঙ্কাশায়ারের পক্ষে খেলার সুযোগ এনে দেয়। ওল্ড ট্রাফোর্ডে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় দলের প্রতিপক্ষ ছিল ওয়ারউইকশায়ার। খেলায় তিনি গালি অঞ্চলে অবস্থান করে অ্যান্ডি মোলসকে দর্শনীয়ভাবে ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন।

ওডিআইয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচ[সম্পাদনা]

# প্রতিপক্ষ মাঠ তারিখ অবদান ফলাফল
অস্ট্রেলিয়া এজবাস্টন ক্রিকেট গ্রাউন্ড, বার্মিংহাম ২৮ আগস্ট, ১৯৭২ ৬-০-২০-২, ১ ক্যাচ; ১৯ (৩০ বল, ২x৪)  ইংল্যান্ড ২ উইকেটে বিজয়ী[৫]
ভারত হেডিংলি ক্রিকেট গ্রাউন্ড, লিডস ২ জুন, ১৯৮২ ৭-২-১৭-০ ; ৭৮* (১৩৭ বল, ৪x৪)  ইংল্যান্ড ৯ উইকেটে বিজয়ী[৬]

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

ব্যারি উডের সন্তান নাথান উড ল্যাঙ্কাশায়ার, চেশায়ার ও ইংল্যান্ড তরুণ দলের পক্ষে খেলেছেন। ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি ফুটবলার হিসেবেও সুনাম কুড়িয়েছেন। ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ইয়র্কশায়ার লীগে মধ্যমাঠের খেলোয়াড় হিসেবে অসেট টাউনের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Bateman, Colin (১৯৯৩)। If The Cap Fits। Tony Williams Publications। পৃষ্ঠা 188আইএসবিএন 1-869833-21-X 
  2. Warner, David (২০১১)। The Yorkshire County Cricket Club: 2011 Yearbook (113th সংস্করণ)। Ilkley, Yorkshire: Great Northern Books। পৃষ্ঠা 382। আইএসবিএন 978-1-905080-85-4 
  3. Manchester Online "Law goes close to record book" 2 August 2003 retrieved 15 December 2005
  4. Barry Wood at Cricket Archive
  5. "1972 England v Australia - 3rd Match - Birmingham"Howstat। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০১৫ 
  6. "1982 England v India - 1st Match - Leeds"Howstat। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০১৫ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

ক্রীড়া অবস্থান
পূর্বসূরী
জিওফ মিলার
ডার্বিশায়ার ক্রিকেট অধিনায়ক
১৯৮১১৯৮৩
উত্তরসূরী
কিম বার্নেট