ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (ইংরেজি: Non-bank financial institution) (NBFI) হল এক ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠান যারা সম্পূর্ণ ব্যাংকিং লাইসেন্স পায় না বা কোনও জাতীয় বা আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক সংস্থা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না। ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ মেয়াদী আমানত সংগ্রহ করে এবং বিভিন্ন মেয়াদে ঋণ বা বিনিয়োগ সেবা প্রদান করে। তবে, ব্যাংকের মত চাহিদা আমানত সংগ্রহ করতে পারে না এবং চাহিবামাত্র আমানতের অর্থ গ্রহককে ফেরত দিতে পারে না, কারণ এখানে ক্যাশ বা নগদ কাউন্টার সুবিধা থাকে না। তাই এরা মেয়াদ পূর্তিতে বা নির্দিষ্ট সময় পরে আমানত পরিশোধ করে।[১]

আর্থিক ব্যবস্থায় ভূমিকা[সম্পাদনা]

এই প্রতিষ্ঠানসমূহ সাধারণত ব্যাংকের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। এগুলো অর্থনীতির উদ্বৃত্ত একক, যেমন ব্যাক্তি এবং প্রতিষ্ঠানসমূহ থেকে আমানত সংগ্রহ করে ঘাটতি একক, যেমন ব্যবসায়ী বা ব্যাক্তি সাধারণের কাছে ঋণ বা বিনিয়োগ করে থাকে। এগুলো ব্যাংকের পরিপূরক ভূমিকা পালন করে ফলে আর্থিক ব্যবস্থায় প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তুলতে সহায়তা করে। [২]

ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ বেশিরভাগ ব্যাংকিং পরিষেবা, যেমন ঋণ এবং ক্রেডিট সুবিধা, ব্যক্তিগত শিক্ষা তহবিল, অবসর পরিকল্পনা, অর্থ বাজারে বিনিময়, স্টক ও শেয়ার অবলিখন, মেয়াদী আমানত ইত্যাদি আর্থিক পরিষেবা প্রদান করে।

ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান চেক বই বা সঞ্চয়ী হিসাব এবং চলতি হিসাব সেবা দিতে পরে না। এটি শুধুমাত্র স্থায়ী আমানত ও মেয়াদী আমানত সুবিধা দিয়ে থাকে।

প্রকারভেদ[সম্পাদনা]

  • ঝুঁকিগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান
  • চুক্তিভিত্তিক সঞ্চয় প্রতিষ্ঠান
  • বাজার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান
  • বিশেষায়িত সেক্টরিয়াল ফাইন্যান্সার
  • আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান।

এশিয়ায়[সম্পাদনা]

বিশ্বব্যাংকের মতে, ১৯৯৭ সালের হিসাবে দক্ষিণ কোরিয়ার আর্থিক ব্যবস্থার আনুমানিক মোট সম্পদের ৩০% ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হাতে ছিল। [৩] এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল এতো বেশি পরিমাণ সম্পদ এই খাতে থাকার কারণ এই খাতের দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বা নিয়ন্ত্রণহীনতা। এই খাতের নিয়ন্ত্রণহীনতাকে ১৯৯৭ সালের এশিয়ার অর্থনৈতিক সংকটের একটি কারণ ভাবা হয়।

ইউরোপে[সম্পাদনা]

ইউরোপীয় কমিশনের অর্থপ্রদান পরিষেবা নির্দেশিকা সমগ্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ইউরোপীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল জুড়ে অর্থপ্রদান পরিষেবা এবং অর্থপ্রদান পরিষেবা প্রদানকারীদের নিয়ন্ত্রণ করে। এখানে পিএসডি নির্ধারণ করে দেয় যে কোন কোন প্রতিষ্ঠান কোনো আর্থিক সেবা প্রদান করতে পারবে।

শ্রেণিবিভাগ[সম্পাদনা]

দায় কাঠামো অনুযায়ী[সম্পাদনা]

ইউরোপে দায়বদ্ধতা কাঠামোর উপর ভিত্তি করে, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

  1. ক্যাটাগরি 'এ' কোম্পানি পাবলিক ডিপোজিট বা জনসাধারণের আমানত গ্রহণ করে।
  2. ক্যাটাগরি 'বি' কোম্পানিগুলো পাবলিক ডিপোজিট গ্রহণ করে না। এই ভাগকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়:
    1. এক বিলিয়ন ইউরোর নিচের ক্যাটাগরি 'বি' কোম্পানি।
    2. এক বিলিয়ন ইউরোর বেশি ক্যাটাগরি 'বি' কোম্পানি।

কাজের প্রকৃতি অনুযায়ী[সম্পাদনা]

এখানে কার্যক্রমের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে নিম্নলিখিত শ্রেণীতে শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে:

  • উন্নয়ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান
  • লিজিং কোম্পানি
  • বিনিয়োগ কোম্পানি
  • মুদারাবা কোম্পানি
  • হাউস ফাইন্যান্স কোম্পানি
  • ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি
  • ডিসকাউন্ট এবং গ্যারান্টি হাউস
  • কর্পোরেট উন্নয়ন কোম্পানি

যুক্তরাষ্ট্রে[সম্পাদনা]

১৯৯৬ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রায় $২০০বিলিয়ন ডলারের লেনদেনে করে। [৪]

আরোও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Carmichael, Jeffrey, and Michael Pomerleano. Development and Regulation of Non-Bank Financial Institutions. World Bank Publications, 2002, 12.
  2. Carmichael, Jeffrey, and Michael Pomerleano. The Development and Regulation of Non-bank Financial Institutions. Washington, D.C.: World Bank, 2002. Print
  3. Carmichael, Jeffrey, and Michael Pomerleano. Development and Regulation of Non-Bank Financial Institutions. World Bank Publications, 2002, 19.
  4. Non-Bank Financial Institutions: A Study of Five Sectors, http://osdbu.treas.gov/cooply.html[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]