ব্যবহারকারী আলাপ:Shad01670

পাতাটির বিষয়বস্তু অন্যান্য ভাষায় নেই।
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
চিত্র:Sakib
sakib

নাম : সাকিব আল হাসান জন্ম : ২৪ মার্চ, ১৯৮৭ জেলা : মাগুরা উচ্চতা : ১.৭৫ মিটার বয়স : ২৭ বছর ধরন : অলরাউন্ডার ক্রিকেটার ব্যাটসম্যান : বামহাতি বোলার : স্পিন বাবার নাম : মাশরুর রেজা মা : গৃহিণী স্ত্রীর নাম : উম্মে আহমেদ শিশির বিয়ে : ১২ ডিসেম্বর ২০১২ বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সবচেয়ে প্রতিভাবান ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। অথচ খেলাধুলায় যার শুরুটা হয়েছিল ফুটবল দিয়ে। ফুটবল পাগল পরিবার ও পরিমণ্ডলে বেড়ে উঠলেও অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্যে সাকিব বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বে সেরাদের অন্যতম।


চিত্র:Indesk
sakib

সাকিব আল হাসান ২০০৫ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব ১৯ দলে খেলার সুযোগ পান। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পরের বছর ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ে সফরের মধ্যে দিয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে খেলার সুযোগ পান তিনি। ৬ আগস্ট এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার অভিষেক হয়। একই বছর সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে তিনি চুক্তিবদ্ধ হন। ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আয়োজিত বিশ্বকাপে হাবিবুল বাশারের নেতৃত্বাধীন ১৫ জনের বাংলাদেশ স্কোয়াডে ডাক পান এই তরুণ ক্রিকেটার।


এর আগে একই বছর ১৮ মে তার টেস্ট অভিষেক হয় বাংলাদেশের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে। ২০০৮ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম বাংলাদেশ সিরিজে তিনি ওয়ানডেতে ১ হাজার রানের মাইলফলক অতিক্রম করেন। অলরাউন্ডার হওয়া সত্ত্বেও অক্টোবর, ২০০৮-এ নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফরের আগ পর্যন্ত সাকিবকে বোলার নয় ব্যাটসম্যান হিসেবেই গণ্য করা হতো। সফরের আগ দিয়ে তৎকালীন কোচ জেমি সিডন্স জানান, সাকিবকে স্পেশালিস্ট বোলার হিসেবেই টেস্ট সিরিজ খেলানো হবে। কোচকে হতাশ করেননি সাকিব, উদ্বোধনী টেস্টের প্রথম ইনিংসেই ৩৭ রান দিয়ে তুলে নেন ৭ উইকেট। যা ছিল তখন পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশি বোলারের বেস্ট বোলিং ফিগার। পরের মাসে বাংলাদেশ দল দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যায়। সেই সফরে সাকিবের বোলিং দেখে মুগ্ধ অস্ট্রেলিয়ার সাবেক স্পিনার ক্যারি ও কীফে তাকে বিশ্বের সেরা ফিঙ্গার স্পিনার হিসেবে অভিহিত করেন। তারপর অপেক্ষা করতে হয়নি বেশি দিন। মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর ২২ জানুয়ারি সাকিব আইসিসি’র ওডিআই অলরাউন্ডার র্যাং কিংয়ে এক নম্বরে উঠে আসেন।


এর মধ্যে ২০০৭ সালে অধিনায়ক হাবিবুল বাশারের স্থলাভিশিক্ত হন আশরাফুল। ২০০৯ এর শুরুতে বাংলাদেশের টানা একাধিক হার এবং দীর্ঘ রান খরার কারণে স্বাভাবিকভাবেই আশরাফুলের অধিনায়কত্ব প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। মূলত তখন থেকেই বিসিবি সাকিবকে জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করে। জুন মাসে মাশরাফিকে অধিনায়ক এবং সাকিবকে সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়। জুলাই মাসে বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যায়। ইনজুরির কারণে প্রথম টেস্টের শেষ দিন মাশরাফির জায়গায় অধিনায়কত্ব করেন সহ-অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। দায়িত্ব পেয়ে তিনি যেন নতুন রূপে জ্বলে ওঠেন। সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ বাংলাদেশের বোলিং এ্যাটাকের নেতৃত্ব দেন এবং দুজনে মিলে মোট ১৩টি উইকেট তুলে নিয়ে দেশকে এক ঐতিহাসিক জয় এনে দেন। দেশের বাইরে এটাই ছিল বাংলাদেশের প্রথম এবং সর্বসাকুল্যে দ্বিতীয় টেস্ট বিজয়।


মাশরাফির ইনজুরিজনিত অনুপস্থিতির কারণে সিরিজের বাকি সময়টা সাকিবকেই নেতৃত্ব দিতে হয়। ২২ বছর ১১৫ দিন বয়সে দেশের সর্বকনিষ্ঠ ও ক্রিকেট ইতিহাসের পঞ্চম কনিষ্ঠতম অধিনায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু করেন তিনি। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্বিতীয় টেস্টও জিতে নেয়, সেই সঙ্গে দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ পায়। পুরো বছরজুড়ে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের কারণে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সাকিব আইসিসি ‘টেস্ট প্লেয়ার অব দি ইয়ার-২০০৯’ এবং ‘ক্রিকেটার অব দি ইয়ার- ২০০৯’ এর জন্য মনোনীত হন । একই বছর নভেম্বর মাসে ‘দি উইজডেন ক্রিকেটারস’ সাকিবকে বছরের সেরা ক্রিকেটার ঘোষণা করে।


অধিনায়ক হিসেবে সাকিব নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না। সেই সঙ্গে অলরাউন্ডার হিসেবেও নিজের সেরাটা দিতে ব্যর্থ হচ্ছিলেন। উভয় জটিলতার কারণে ২০১০ এর জুলাই মাসে তিনি অধিনায়কের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। একই মাসে পূর্ব নির্ধারিত চুক্তি অনুযায়ী ইংল্যান্ডের কাউন্টি দল ও চেস্টারশায়ারে যোগ দেন। সাকিবই প্রথম বাংলাদেশি যিনি কাউন্টিতে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। পরবর্তীতে ২০১১ সালে আইপিএল-এ তাকে ৪ লাখ ২৫ হাজার ডলারের বিনিময়ে কিনে নেয় কলকাতা নাইট রাইডার্স। যাই হোক, নতুন নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে নামে ২০১১ সালের অক্টোবরে। অধিনায়কত্ব থেকে মুক্তির পর বাংলাদেশি হিসাবে টেস্ট ও ওডিআই-এ সর্বাধিক উইকেট শিকারী হন সাকিব। এরপর দেশের মাটিতে ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত টেস্ট সিরিজে পাকিস্তানের বিপক্ষে দেশের শীর্ষ রান সংগ্রহকারী (সর্বোচ্চ ১৪৪) ও উইকেট শিকারী হন। এই সিরিজেই তিনি আইসিসি’র টেস্ট র্যাং কিং-এ ১ নম্বরে উঠে আসেন। ২০১২ সালের আইপিএল-এ সাকিব ‘ক্রিকেট ইনফো’ ওয়েবসাইটে সেরা অলরাউন্ডার নির্বাচিত হন। তার দল কলকাতা নাইট রাইডার্স প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়। সে বছরই ১২ ডিসেম্বর সাকিব আল হাসান যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী উম্মে আহম্মেদ শিশিরের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ।

মাঠে ও মাঠের বাইরে বিভিন্ন কার্যকলাপের কারণে সাকিব বিভিন্ন সময় সমালোচিত হয়েছেন। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ- শ্রীলংকা সিরিজের দ্বিতীয় ওডিআই ম্যাচে ড্রেসিংরুমে অশালীন অঙ্গভঙ্গি করার দায়ে তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ ও ৩ লাখ টাকা জরিমানা গুনতে হয়েছে তাকে। সম্প্রতি ২০১৪ সালের জুলাই-এ জাতীয় দল থেকে ৬ মাসের জন্য ও বাংলাদেশের বাইরে ক্লাব ক্রিকেটে ২০১৫ সালের জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড তাকে নিষিদ্ধ করে । উল্লেখ্য জাতীয় দলের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহার সঙ্গে দুর্ব্যবহার, মাঠে অশোভন আচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগে তাকে এই শাস্তি দেয়া হয়েছে বলে বোর্ড থেকে জানানো হয়।


পরবর্তীতে ২৬ আগস্ট বিসিবি-এর বোর্ড সভায় সাকিবের ইতিবাচক আচরণের কথা বিবেচনা করে তার নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ কমানো হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে তিনি একই বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা শুরু করেন । সাময়িক নিষেধাজ্ঞা কাটিয়েই বাংলাদেশ বনাম জিম্বাবুয়ে টেস্ট সিরিজে রাজকীয় প্রত্যাবর্তন করেন তিনি। প্রথম টেস্টে ৫৯ রানের বিনিময়ে প্রতিপক্ষের ১ম ইনিংস-এ ৬ উইকেট নেন এবং ২য় টেস্টে তার ৩য় শতরানসহ ৪ উইকেট নিয়ে এক টেস্টে শতরানসহ ১০ উইকেট শিকার করে রেকর্ড গড়েন।