ব্যবহারকারী আলাপ:Debashri Chakraborty

পাতাটির বিষয়বস্তু অন্যান্য ভাষায় নেই।
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
              ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু
       ২০২১ইং ১১মার্চ মঙ্গলবার ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুই দেশের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১’-এর উদ্বোধন করেছেন। ১ দশমিক ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতু খাগড়াছড়ির রামগড়ের সঙ্গে ত্রিপুরার সাবরুমকে যুক্ত করেছে।

এর ফলে এই প্রথম কোনো সেতুর মাধ্যমে দেশ দুটির সীমান্ত যুক্ত হলো। উল্লেখ্য, ভারতের ত্রিপুরা, মিজোরামসহ পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ৬ জুন দুই প্রধানমন্ত্রী এ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন।

১৩৩ কোটি রুপি ব্যয়ে নির্মিত এ সেতু থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব মাত্র ৮০ কিলোমিটার। এর ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রাম বন্দরের হাতের নাগালে চলে আসবে, যা এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা এমন একটি অঞ্চলে আছি, যেখানে কানেকটিভিটি চালুর বিষয়ে রক্ষণশীলতা ছিল এবং যেখানে সম্ভাবনার চেয়ে আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য অনেক কম।

আমরা ভারতকে কানেকটিভিটি দেওয়ার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি নতুন যুগের সৃষ্টি করেছি। অন্যদিকে সেতুটিকে দুই দেশের মধ্যে নতুন ‘বাণিজ্য করিডোর’ হিসাবে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন-এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের বাণিজ্য ও মানুষে মানুষে সংযোগের ক্ষেত্রে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হলো।

বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু উভয় দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এই সেতুর মাধ্যমে ভারতের ত্রিপুরা, মিজোরামসহ ৭ রাজ্যের (সেভেন সিস্টার) সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ায় পণ্য পরিবহণের খরচ ও সময় কমবে। এ ছাড়াও সংস্কৃতি, পর্যটন ইত্যাদির প্রসার ঘটবে এবং এতে উভয় দেশই উপকৃত হবে। আমরা মনে করি, এর ফলে দুদেশের কেবল অর্থনীতিরই ভিত মজবুত হবে না, একইসঙ্গে দুদেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্কেরও বিকাশ ঘটাবে।

বিশ্বব্যাংকের ‘কানেকটিং টু থ্রাইভ : চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড অপরচুনিটিস অব ট্রান্সপোর্ট ইন্টিগ্রেশন ইন ইস্টার্ন সাউথ এশিয়া’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ সেতুর উদ্বোধনকে ইতিবাচক অভিহিত করে বলা হয়েছে-বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যোগাযোগ যত বাড়বে, ততই লাভবান হবে দুই দেশ। বিরামহীন যান চলাচল অব্যাহত রাখা সম্ভব হলে বাংলাদেশের জাতীয় আয় বাড়বে ১৭ শতাংশ ও ভারতের বাড়বে ৮ শতাংশ।

কানেকটিভিটি, উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূল ছাড়াও বিভিন্ন ইস্যু বাংলাদেশ ও ভারতের কাছে সমান গুরুত্ব পাচ্ছে। উন্নয়ন, আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ-ভারত অভিন্ন মনোভাব পোষণ করে। ভারত বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী। নিকটতম প্রতিবেশী হিসাবে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ইতোমধ্যে দুই দেশের মধ্যকার স্থলসীমান্ত ও সমুদ্রসীমা বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি হয়েছে, যা গোটা বিশ্বের কাছে একটি দৃষ্টান্ত। ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট প্রশ্নে ভারতের প্রত্যাশা পূরণে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের বহুল প্রত্যাশিত পানিবণ্টন ইস্যুরও নিষ্পত্তি হওয়া উচিত।

আইসিপি ও সংযোজন সড়কের পর ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১’-এর উদ্বোধন এ অঞ্চলে যোগাযোগ, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্ভাবনার নতুন দুয়ার উন্মোচনের যে সুযোগ তৈরি করেছে, এর ধারাবাহিকতায় পানি বণ্টনসহ অন্যান্য অমীমাংসিত ইস্যুর সুরাহা হবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।