ব্যবহারকারী আলাপ:সাঈদ আহমাদ খান রাহমানি

পাতাটির বিষয়বস্তু অন্যান্য ভাষায় নেই।
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

তালেবে ইলম- নদওয়াতুল উলামা,হিন্দুস্তান৷

বাংলা উইকিপিডিয়ায় স্বাগতম[সম্পাদনা]

হিমাচলের মায়াকন্যা -------[সম্পাদনা]

হিমাচলের মায়াকন্যা শিমলা, মানালিতে কয়েকদিন:

  পরীক্ষার ছুটি হলো৷ ঢালকানগরের সাবেক সাথি এক কাসেমি ভাইয়ের সাথে সফরের সিদ্ধান্ত হলো৷ হিমাচল প্রদেশ- শিমলা, মানালি৷
 পরিকল্পনা মতে ট্রেন আর বাসযোগে প্রায় আট ঘণ্টা ধারাবাহিক চলে পৌঁছে দিলো আমাদেরকে শিমলা স্টেশনে৷ ভোর তখন চারটা বাজে৷ আট ঘণ্টার প্রায় পুরোটাই পাহাড়ের চড়াই - উৎরাই বেয়ে সফর করলাম আমরা৷ সরেজমিনের প্রায় সাত হাজার ফিট উঁচুতে তখন৷ শীতের তাপমাত্রা অনুভব হলো- 0.6-9 ডিগ্রী সেলসিয়ামের৷ মানে, শীতের স্বাভাবিক পরিবেশ থেকে সাত- আট গুণ৷ দ্বিতীয় আরেকটি মোজা পরতে হলো৷ পাজামার নীচে সুতার মোটা টাউজার, আর মোটা গেন্জি- জামার উপর কোর্ট, এর উপর আবার উলের আবাকাবা!- সবকিছুই যেনো শীতের সামনে থরথর করে কাঁপছে৷ 
  গন্তব্য কিন্তু আরো সামনে৷ বহু উঁচুতে৷ আকাশ ঘেষা বরফের পাহাড়ে৷ হাতে সময় নেই৷ কালবিলম্ব না করে তখন মানালির উদ্দেশ্যে গাড়ির খোঁজে বের হলাম৷ এখান থেকে পাহাড়ের ভয়ঙ্কর এসব রোডে ট্রেনের ব্যবস্থা নেই৷ গাড়িতে করেই যেতে হলো মানযিলে৷ নির্ঘুম- নিস্তর৷ গাড়ির জানালা দিয়ে চেয়ে থাকা ছাড়া নেই কোনো দিকদিগন্ত৷ ঝোপঝাড়, দানবের মতো গাছগাছালি আর কালো রাতের শিমলা শহরটা দেখতে দেখতে ছুটে চলছি৷ দূর আকাশ পানে হঠাৎ নযরে পড়লো বাষ্পে ঢাকা মৃদু আলোদের মিছিল৷ ভাবলাম- এ কেমন গ্রহ!? কিছুদূর যেতেই স্পষ্ট হলো৷ এ যেনো আকাশে মানবের তৈরি স্থীর তারাদের দল৷ 
   চলতে চলতে পৌঁছে গেলো একটি পাহাড়ি লেকের দোড়গোড়ায়৷ হৃদয়কারা স্বচ্ছ  নীল পানিতে ভরপুর তার বুকগুলো৷ জীবনে এই প্রথম নীল পানির দেখা মিললো৷ অপূর্ব সৌন্দর্যের মায়াবি মিলন ঘটেছে তার প্রবেশ দরোজায়৷ তিন দিকে ছুটে চলেছে তিনটি মুখ৷ তিন দিকেই পাহাড়ের সারি৷ ডান দিকে মোড় কেটে গভির সেই লেকের কুল ঘেষে গাড়ি নির্ভয়ে চলছে৷ সামান্য অসতর্কতায় শত শত ফিট নীচে অবস্থিত পানির বুকে হারিয়ে যাওয়ার মৃত্যুময় আশঙ্কা৷ মাইলকে মাইলব্যাপ্তি সেই কুদরতি সৌন্দর্য অবলোকন করে শীরটা আল্লাহর নৈপুণ্যে নুজ্ব হয়ে পড়লো৷
    মাঝপথে গাড়িটা হঠাৎ দু' পাশ আবদ্ধ এক অন্ধকার রোডে ঢুকে পড়লো৷ প্রথমে ভয় পেয়ে গেলাম৷ না৷ এটা অন্য কিছু নয়৷ পাহারি ট্যানেল৷ জীবনে এই প্রথম দেখা মিললো এর৷ পাহাড় কেটে নীচ দিয়ে সুরঙ্গ করে অপর প্রান্তে পৌঁছার মজবুত রাস্তা বানানো হয়েছে৷ ঘুটঘুটে অন্ধকার! ভাবছিলাম- হায়, সামান্য দূর্ঘটনায় হতে পারে পাহাড় ভেঙ্গে সবকিছু গুড়ো বানিয়ে দিবে!! প্রায় পাঁচ মাইল চললো এভাবে৷ বের হতেই যেনো মুক্তি পেলাম অচেনা জেলখানা থেকে৷
   সারাদিনের সফর শেষে আল্লাহর রহমতে অবশেষে গাড়ি পৌঁছলো মানালির হৃদপিণ্ডে৷ রক্তিম সূর্যটা তখন আরশের নীচে সাজদার জন্য দ্রুত ছুটে চলছে৷ গাড়ি থেকে নামতেই হোস্টেলের লোকেরা "স্যার, স্যার" বলে দামদর করা শুরু করলো৷ কিন্তু মূল্যের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিলো- "স্যার" শব্দটি যেনো লজ্জায় নত হচ্ছে বারবার৷ পরিশেষে খোঁজ হলো এক ভদ্রলোকের সুলভ মূল্যের "আমদানি"৷ পাঁচশো রুপিতে একটি চমৎকার কামরা বুকিং হলো আমাদের জন্য৷ একটু ধৈর্য না ধরলে হয়ত দেড় গুণ মরিচের আঘাত খেতে হতো৷ তবে পূর্ব অবগতির কারণে বেচে গেলাম আমরা৷
   টানা দেড় দিনের নির্ঘুম সফরে ক্লান্ত শরিরটা ঘুমের ঘোরে বিভোর হলো৷ সকালের আবোহাওয়া ঠিক নয়টার দিকে জাগালো আমাদের৷ পয়পরিস্কার হয়ে ফজরের কাযা আদায় করতে হলো৷ ক্ষুধায় চিরচির করছে অস্থীর পেটটি৷ তবুও হাড়কাঁপানো শীত আর বরফের মতো কুয়াশা ভেদ করে দোকানে যেতেও ভয় লাগছে৷ দারুল উলুম থেকে সাথে করে নিয়ে আসা শুকনো খাবারগুলো বের করলাম৷ সাথে হোটেল থেকে চল্লিশ রুপি দিয়ে সব্জি এনে পুরা করলাম পেটের জ্বালা৷ ততক্ষণে ঘড়ির কাটা দশটার কাছাকাছি৷ 
   যেতে হবে বরফের মূল স্থানগুলোতে৷ বাস সেখানে যায় না৷ টেক্সি নিতে হবে৷ ভাড়া চেয়ে বসলো পচিশশো রুপি৷ সারাদিন সাথে থাকবে আমাদের৷ ড্রাইভারদের মিষ্টি কথায় কান না দিয়ে সামনে পায়দল চলা শুরু করলাম৷ অবশেষে বারোশো রুপিতে রাযি হলো এক ভদ্রড্রাইভার৷ 
    পাহাড়ের বুকে পাহাড়ের পাদদেশ বেয়ে ছুটে চললো আকাশের দিকে৷ উপরে উঠতে রাস্তার দৃশ্যগুলো যেনো আলিফ লায়লার সেই গোল মিনারের কথা স্মরণ করিয়ে দিলো৷ কিছুদূর গিয়ে শুরু হলো মনমাতানো ঝকঝকে পাহাড়ের সারিবদ্ধ লাইন৷ রাস্তার দু' পাশেই আকাশচুম্বি পাহাড়ের সমাবেশ৷ রোদের আলোতে পাথরের সেই পাহাড়গুলো চিকচিক করছে৷ মনে হলো-  মানুষের হাতে সর্বাধুনিক যন্ত্রে যেনো এগুলোর গায়ে না জানা কত উন্নত রঙে রঙিন করা হয়েছে৷ স্মৃতিপটে ভেসে উঠলো তখন-

فتبارك الله احسن الخالقين.

   এই তো স্নো পয়েন্ট! বরফের এলাকা!!রাস্তার পাশ দিয়ে বরফগুলো জমে আছে৷ পরিস্কার না করলে রোডেও বুঝি গাড়ি চলতে পারছে না৷ তাই তো চোখের সামনে কয়েকটি গাড়ি আটকা পড়ে যাচ্ছিলো৷ ডান- বাম, সামনে- পেছনে বরফ আর বরফ৷ চামড়ার চোখে না দেখে  হৃদয়ের মণিকোঠায় গেঁথে থাকা সেই কুদরতি সৌন্দর্যের কথা ব্যক্ত করা অসম্ভব৷ কলমের খোঁচায় তার বর্ণনার ভাষা হয়ত পৃথিবীতে জন্ম নেয় নি৷ দুনিয়ার কোনো সাহিত্যিক মনে হয়- একে শব্দের রাণি দিয়েও ফুটিয়ে তুলতে পারবে না৷ 
    আশ্চর্য হলাম- দশ হাজার ফিট উঁচুতে বরফের এ এলাকাতে ঠাণ্ডা তেমন অনুভব হলো না৷ ভিজিটরগণ আড়াইশো রুপিতে এক ধরণের পোশাক ভাড়া নেন৷ আগ্রহভরে আমরাও-----৷ পোশাক পরে নিজেকে যেনো নভোচারির মতো মনে হলো৷ কিন্তু পরবর্তিতে বুঝলাম- বুট জুতাটি ছাড়া পোশাকের কোনো প্রয়োজন ছিলো না!
   এবার নিয়ে এলো সোলাং ভেলিতে৷ এখানে দেখছি, দালানগুলোর সামনেও বরফ পড়ে আছে৷ ইট- পাথরের পাকা ঘরের চালগুলোতে চমকাচ্ছে সাদা বরফের দল৷ তিন দিকে পাহাড়৷ সামনে খোলা ময়দান৷ স্কিয়িং করছে (আকাশে উড়ছে) বালক- কৈশরেরা৷ জন প্রতি তিন হাজার রুপি৷ আমাদের মতো মাওলানাদের এতে উড়াউড়ি করা কতটুকু শোভা পাবে, সে ভেবে হয় নি আর উড়া৷ এক পাশে কেবল কার দিয়ে পাহাড়ের শীর্ষ চূড়ায় আরোহণ করানো হচ্ছে৷ জন প্রতি সারে ছয়শো রুপি৷ তবে পায়ে চলেও নাকি আশঙ্কার সাথে চড়া যায় পাহাড়ের মাথায়৷ পাঁচশো রুপি দিয়ে ঘোড়াতে চড়ে উপরে উঠার অফারও আসলো৷ শুনেছি, পন্চাশ রুপিতে রাযি হয়৷ সেই যাই হোক- অজানা আর অদূরদর্শিতার কারণে আমাদের ভাগ্য হয় নি সেখানে যাওয়ার৷ অন্য দিকে যুবকেরা কৃত্রিম তীর আর রাইফেল চালানোর স্বাদ নিচ্ছে৷ জীবনে প্রথম দেখতে পেলাম তীর আর ধনুক৷ মনে চাইলো একবার হলেও ঐতিহাসিক এ জিনিসটার সান্নিধ্য নেই৷ কিন্তু সাথের সঙ্গিটার অমোনযোগিতা আর অনাগ্রহে আমারও সাহসে ভাটা পড়লো৷ এ আফসোস রয়ে যাবে সারাজীবন! আসলে মনের অমিল বলে কথা---------৷ 
    ফিরতি পথে ড্রাইভার কুদরতি গরম পানির চশমার কথা বললেন৷ ভেসিসত- নামে পরিচিত৷ যা নাকি পাহাড়ের বুক থেকে বয়ে আসে সবসময়৷ তবে ইদানিং সেখানে ইটের দেয়াল বানিয়ে টিপ কল আর কৃত্রিম ঝর্ণার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ 
    কিছুদূর সামনে এসে একটি ঝুলন্ত ব্রীজের মুখে রুখে দিলো গাড়ি৷ নীচ দিয়ে বয়ে চলছে ঝর্ণার কল্লোলধারায় স্বচ্ছ, সুমিষ্ট পানি৷ পিক তোলার ঝড় উঠলো এখানে৷ রাঙামাটি ঝুলন্তসেতুর স্বাদ যেনো এখান থেকে নিলাম! 
    ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যার কালো ছোঁয়া দিনের আলোকে মিটিয়ে দিলো৷ মাগরিবের নামায পড়ে রওনা করলাম ফিরে আসার মানসে৷ শিমলা হয়ে দেওবন্দ৷ এবার ফেরার পথে শিমলা থেকে পাহাড়ের আরোহি- ছোট ট্রেনে উঠলাম৷ কালকা পর্যন্ত যাবে এটি৷ বহু দূর থেকে মানুষ নাকি এর উপভোগ নিতেই ছুটে আসে শিমলাতে৷ জীবনের এই প্রথম পাহাড়ের গভিরে চলা হলো৷ জঙ্গল, বনবানানি পেরিয়ে মাঝে মাঝে পাহাড়ি সুরঙ্গ পার হয়ে ধীরে ধীরে নিকটবর্তী হতে লাগলো আরেকটি দর্শনীয় স্থান দারুল উলুম দেওবন্দ৷ সাঈদ আহমাদ খান রাহমানি (আলাপ) ১১:০৬, ১২ মার্চ ২০১৮ (ইউটিসি)[উত্তর দিন]

== ইলমের সবুজ - শ্যামল শস্যক্ষেত নদওয়াতুল উলামা-1

   (1ম পার্ট)
   ইলমের সবুজ- শ্যামল শস্যক্ষেত নদওয়াতুল উলামা৷    
  
   সাঈদ আহমাদ খান৷
   সিপাহী বিপ্লব শেষ হলো- 1857 সালে৷ সুদূরপ্রসারি মুসলমানদের এ আন্দোলন ততক্ষণাৎ কোনো ফলপ্রসূ হলো না৷ ইংরেজগণ আয়ত্ব করে নিলো পুরো হিন্দুস্তান৷ দিশেহারা মুসলিম কর্ণধারগণ তখন অস্ত্রের ময়দান ছেড়ে শিক্ষার যুদ্ধ শুরু করলেন৷ দুর্দশাগ্রস্থ মুসলিম জাতিকে  উদ্ধার করতে প্রতিষ্ঠিত হলো দু'ধরণের প্রতিষ্ঠান৷ দারুল উলুম দেওবন্দ৷ আর আলীগড় ইসলামিক ইউনিভার্সিটি৷
   কিন্তু দু:খের বিষয় হলো, আলিগড় ইউনিভার্সিটি তার উদ্দেশ্য অর্জনের পরিবর্তে পশ্চিমা কৃষ্টিকালচারকে অনেকটা যেনো বুকে চেপে ধরলো৷ অন্যদিকে পাশ্চাত্যের ধোঁয়ায় পৃথিবীর আকাশে ছেয়ে পড়া আধুনিকতাকে সম্পূর্ণ বর্জন করতে উদগ্রীব করলো অনেকে৷ ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করলো দু'টি চিন্তাধারা৷ হতাশাগ্রস্ত মুসলিম জাতিকে বিভক্তির আভাস ছুঁয়ে দিলো এ দ্বন্দ্ব৷ ঠিক এ মূহুর্তে- 1892 সালে (হিজরি- 1310) মাওলানা সাইয়্যিদ মুহাম্মাদ আলি মুঙ্গিরি রহ. এবং তাঁর মতো একদল মহান আলেমদের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় এক যুগান্তকরি ঐতিহাসিক ইসলামিক সংস্থা৷ মাদরাসা ফয়যে আম- কানপুরে যার প্রথম কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়৷ দু'টি চিন্তাধারার যুগোপযোগি ইসলামিক সমন্বয় সাধনই ছিলো যার মূল লক্ষ্য৷ প্রাচ্য কিংবা পাশ্চাত্যের সব কৃষ্টিকালচার থেকে হাত গুটানো নয়৷ বরং ইসলামের উন্নত রঙ দিয়ে এগুলোকে সাজানোই হলো একজন দক্ষ মুমিনের সরল কাজ৷ এটাই ছিলো সংগঠনের মূল দৃষ্টিভঙ্গি৷ 
(তারিখে নদওয়াতুল উলামা- 1খণ্ড , পৃষ্ঠা- 10,61,62,103)
    উন্নত এ চিন্তা- চেতনাকে বাস্তবের রুপ দিতেই মুহাম্মাদ আলি মুঙ্গিরি রহ. সংগঠনকে কেন্দ্র করে হিজরি- 1313 সনে প্রতিষ্ঠা করেন এক আন্তর্যাতিক ইসলামিক বিদ্যালয়৷ এটাই হলো আজকের দারুল উলুম লি নদওয়াতুল উলামা৷ যা বিশ্ব - মুসলিম জাতিকে দ্বিনের এক অনবদ্য  খেদমত আন্জাম দিয়ে যাচ্ছে৷ খৃস্টীয় 1898 সনে (হিজরি- 1316) যার প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়৷ 

(তারিখে নদওয়াতুল উলামা- 1ম খণ্ড , পৃষ্ঠা- 139, 212)

   লক্ষ ও উদ্দেশ্য: 
   দারুল উলুম লি নদওয়াতুল উলামা প্রতিষ্ঠিত হয়, আকাবির ও আসলাফের চিন্তাধারাকে সামনে রেখে৷ বিদেশি কৃষ্টিকালচারে আহত মুসলিম জাতিকে ইসলামের মধ্যপন্থার সঠিক দিশা দিতে৷ তাই বুনিয়াদি চার উসুল নিয়ে এগিয়ে চলে নদওয়াতুল উলামা৷
   1- শিক্ষা- সিলেবাসের পূর্ণতা দানে এমন এক নেসাব তৈরি করা, যা ভরপুর থাকবে মুসলিম উম্মাহর সকল প্রকার সঠিক দিক- নির্দেশনাতে৷ সহনীয়  সব মতোপার্থক্য ভুলে মুসলিম ভ্রাতৃত্ব- বন্ধনকে মজবুত করবে যে সিলেবাস৷ 
   2- দ্বিনের সকল শাস্ত্র; বিশেষকরে তর্কশাস্ত্র ও ফিকহশাস্ত্রের আধুনিক রুপায়ন৷ যা শিখে একজন তালেবে ইলম কুফুরি শক্তির দাঁতভাঙ্গা জওয়াব দিবে৷ এবং মুসলিমদের দৈনিক জীবনে সমস্যার সঠিক সমাধান বের করবে৷ 
   3- ইসলামি তাহযিব- তামাদ্দুনে আকাবের ও আসলাফের পথের পূর্ণ অনুসরণ৷ যাতে করে, প্রতিটি তালেবে ইলম উন্নত আখলাকের মজবুত ধারকবাহক হতে পারে৷ 
   4- ওসয়াতে কলব তথা কলবের প্রশস্ততা আর উম্মাহর প্রতি দরদে দিলে এমন বেচাইন বানানো; যাতে ইসলামের তরে নিজের জীবনকে ওয়াকফ করে দিবে৷ এটা হলো এমন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যা অর্জন করা  এ ধরণের প্রতিষ্ঠান ছাড়া দুষ্কর প্রায়৷
   (তারিখে নদওয়াতুল উলামা- 1ম খণ্ড , 218, নদওয়াতুল উলামা কী মুকতাছার তারিখ- পৃষ্ঠা:18 )
   উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে নদওয়ার পদক্ষেপসমূহ: 
  নদওয়াতুল উলামা আপন লক্ষ্য বাস্তবায়নে তার শুরু দিন থেকেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ মুহাম্মাদ আলি মুঙ্গিরি রহ.'র মতো অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন মহান বুযুর্গদের বরকতময় হাতে শুরু এর যাত্রা৷ তাই আপন লক্ষ্য অর্জনে আধুনিক ও ইসলামিক বিষয়গুলোর সমন্বয়ে এমন এক সিলেবাস তৈরি করেছেন তারা; যার সুনাম , সুখ্যাতি শুধু উপমহাদেশেই নয়, পুরো বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়েছে৷ তাই তো নদওয়া বাগানের মধু আহরণে ছুটে আসছে চিন, নেপাল, বাঙলাদেশ থেকে অসংখ্য শিক্ষার্থি৷ এমনকি আরব ও ইউরোপের রাজ্যগুলো থেকেও তালেবে ইলমগণ ভীড় করছেন এখানে৷ ইদানিং বিদেশিদের জন্য চার দেয়ালে বেষ্টিত আধুনিক সব সরন্জামাদিসহ বিশাল ভবনেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে৷
   (1ম) - ইংরেজি ভাষা নেসাবভুক্ত করা:
  মাওলানা শিবলি নো'মানি রহ.'র পরামর্শে নদওয়া প্রতিষ্ঠার দ্বিতীয় বছরেই ইংরেজি ভাষাকে নেসাবভুক্ত করা হয়েছে৷ নদওয়ার সম্পূর্ণ কোর্সেই আধুনিক ইউনিভার্সিটির সাথে কিছুটা সামন্জস্য রাখা হয়েছে৷ সানুবিয়্যা (অষ্টম বছর) পর্যন্ত ইসলামের সকল ফনের ব্যাপক নিসাব নিয়ে এক নয়া কারিকুলাম বানানো হয়েছে৷ এরপর কিছুটা নির্দিষ্ট পড়াশোনার জন্য আলিয়া নামের চার বছরের কোর্স৷ যাকে "আলিমিয়্যাত"ও বলা হয়৷ আধুনিক কলেজে যাকে আমরা "অনার্সকোর্স"  বলে জানি ৷ এরপর শুরু হয় নির্দিষ্ট ফনের উপর বিশেষ পড়াশোনা৷ উলয়া উলা আর উলয়া সানিয়া নামে দু' বছরের কোর্স এতে৷ যাকে "ফযীলাত"ও বলা হয় ৷

চলবে ইনশা আল্লাহ----৷ সাঈদ আহমাদ খান রাহমানি (আলাপ) ২১:০১, ২৬ মার্চ ২০১৮ (ইউটিসি)[উত্তর দিন]

নদওয়াতুল উলামা[সম্পাদনা]

   নদওয়াতুল উলামা:
  (1ম পার্ট)
   ইলমের সবুজ- শ্যামল শস্যক্ষেত নদওয়াতুল উলামা৷    
  
   সাঈদ আহমাদ খান৷
   সিপাহী বিপ্লব শেষ হলো- 1857 সালে৷ সুদূরপ্রসারি মুসলমানদের এ আন্দোলন ততক্ষণাৎ কোনো ফলপ্রসূ হলো না৷ ইংরেজগণ আয়ত্ব করে নিলো পুরো হিন্দুস্তান৷ দিশেহারা মুসলিম কর্ণধারগণ তখন অস্ত্রের ময়দান ছেড়ে শিক্ষার যুদ্ধ শুরু করলেন৷ দুর্দশাগ্রস্থ মুসলিম জাতিকে  উদ্ধার করতে প্রতিষ্ঠিত হলো দু'ধরণের প্রতিষ্ঠান৷ দারুল উলুম দেওবন্দ৷ আর আলীগড় ইসলামিক ইউনিভার্সিটি৷
   কিন্তু দু:খের বিষয় হলো, আলিগড় ইউনিভার্সিটি তার উদ্দেশ্য অর্জনের পরিবর্তে পশ্চিমা কৃষ্টিকালচারকে অনেকটা যেনো বুকে চেপে ধরলো৷ অন্যদিকে পাশ্চাত্যের ধোঁয়ায় পৃথিবীর আকাশে ছেয়ে পড়া আধুনিকতাকে সম্পূর্ণ বর্জন করতে উদগ্রীব করলো অনেকে৷ ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করলো দু'টি চিন্তাধারা৷ হতাশাগ্রস্ত মুসলিম জাতিকে বিভক্তির আভাস ছুঁয়ে দিলো এ দ্বন্দ্ব৷ ঠিক এ মূহুর্তে- 1892 সালে (হিজরি- 1310) মাওলানা সাইয়্যিদ মুহাম্মাদ আলি মুঙ্গিরি রহ. এবং তাঁর মতো একদল মহান আলেমদের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় এক যুগান্তকরি ঐতিহাসিক ইসলামিক সংস্থা৷ মাদরাসা ফয়যে আম- কানপুরে যার প্রথম কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়৷ দু'টি চিন্তাধারার যুগোপযোগি ইসলামিক সমন্বয় সাধনই ছিলো যার মূল লক্ষ্য৷ প্রাচ্য কিংবা পাশ্চাত্যের সব কৃষ্টিকালচার থেকে হাত গুটানো নয়৷ বরং ইসলামের উন্নত রঙ দিয়ে এগুলোকে সাজানোই হলো একজন দক্ষ মুমিনের সরল কাজ৷ এটাই ছিলো সংগঠনের মূল দৃষ্টিভঙ্গি৷ 
(তারিখে নদওয়াতুল উলামা- 1খণ্ড , পৃষ্ঠা- 10,61,62,103)
    উন্নত এ চিন্তা- চেতনাকে বাস্তবের রুপ দিতেই মুহাম্মাদ আলি মুঙ্গিরি রহ. সংগঠনকে কেন্দ্র করে হিজরি- 1313 সনে প্রতিষ্ঠা করেন এক আন্তর্যাতিক ইসলামিক বিদ্যালয়৷ এটাই হলো আজকের দারুল উলুম লি নদওয়াতুল উলামা৷ যা বিশ্ব - মুসলিম জাতিকে দ্বিনের এক অনবদ্য  খেদমত আন্জাম দিয়ে যাচ্ছে৷ খৃস্টীয় 1898 সনে (হিজরি- 1316) যার প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়৷ 

(তারিখে নদওয়াতুল উলামা- 1ম খণ্ড , পৃষ্ঠা- 139, 212)

   লক্ষ ও উদ্দেশ্য: 
   দারুল উলুম লি নদওয়াতুল উলামা প্রতিষ্ঠিত হয়, আকাবির ও আসলাফের চিন্তাধারাকে সামনে রেখে৷ বিদেশি কৃষ্টিকালচারে আহত মুসলিম জাতিকে ইসলামের মধ্যপন্থার সঠিক দিশা দিতে৷ তাই বুনিয়াদি চার উসুল নিয়ে এগিয়ে চলে নদওয়াতুল উলামা৷
   1- শিক্ষা- সিলেবাসের পূর্ণতা দানে এমন এক নেসাব তৈরি করা, যা ভরপুর থাকবে মুসলিম উম্মাহর সকল প্রকার সঠিক দিক- নির্দেশনাতে৷ সহনীয়  সব মতোপার্থক্য ভুলে মুসলিম ভ্রাতৃত্ব- বন্ধনকে মজবুত করবে যে সিলেবাস৷ 
   2- দ্বিনের সকল শাস্ত্র; বিশেষকরে তর্কশাস্ত্র ও ফিকহশাস্ত্রের আধুনিক রুপায়ন৷ যা শিখে একজন তালেবে ইলম কুফুরি শক্তির দাঁতভাঙ্গা জওয়াব দিবে৷ এবং মুসলিমদের দৈনিক জীবনে সমস্যার সঠিক সমাধান বের করবে৷ 
   3- ইসলামি তাহযিব- তামাদ্দুনে আকাবের ও আসলাফের পথের পূর্ণ অনুসরণ৷ যাতে করে, প্রতিটি তালেবে ইলম উন্নত আখলাকের মজবুত ধারকবাহক হতে পারে৷ 
   4- ওসয়াতে কলব তথা কলবের প্রশস্ততা আর উম্মাহর প্রতি দরদে দিলে এমন বেচাইন বানানো; যাতে ইসলামের তরে নিজের জীবনকে ওয়াকফ করে দিবে৷ এটা হলো এমন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যা অর্জন করা  এ ধরণের প্রতিষ্ঠান ছাড়া দুষ্কর প্রায়৷
   (তারিখে নদওয়াতুল উলামা- 1ম খণ্ড , 218, নদওয়াতুল উলামা কী মুকতাছার তারিখ- পৃষ্ঠা:18 )
   উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে নদওয়ার পদক্ষেপসমূহ: 
  নদওয়াতুল উলামা আপন লক্ষ্য বাস্তবায়নে তার শুরু দিন থেকেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ মুহাম্মাদ আলি মুঙ্গিরি রহ.'র মতো অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন মহান বুযুর্গদের বরকতময় হাতে শুরু এর যাত্রা৷ তাই আপন লক্ষ্য অর্জনে আধুনিক ও ইসলামিক বিষয়গুলোর সমন্বয়ে এমন এক সিলেবাস তৈরি করেছেন তারা; যার সুনাম , সুখ্যাতি শুধু উপমহাদেশেই নয়, পুরো বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়েছে৷ তাই তো নদওয়া বাগানের মধু আহরণে ছুটে আসছে চিন, নেপাল, বাঙলাদেশ থেকে অসংখ্য শিক্ষার্থি৷ এমনকি আরব ও ইউরোপের রাজ্যগুলো থেকেও তালেবে ইলমগণ ভীড় করছেন এখানে৷ ইদানিং বিদেশিদের জন্য চার দেয়ালে বেষ্টিত আধুনিক সব সরন্জামাদিসহ বিশাল ভবনেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে৷
   (1ম) - ইংরেজি ভাষা নেসাবভুক্ত করা:
  মাওলানা শিবলি নো'মানি রহ.'র পরামর্শে নদওয়া প্রতিষ্ঠার দ্বিতীয় বছরেই ইংরেজি ভাষাকে নেসাবভুক্ত করা হয়েছে৷ নদওয়ার সম্পূর্ণ কোর্সেই আধুনিক ইউনিভার্সিটির সাথে কিছুটা সামন্জস্য রাখা হয়েছে৷ সানুবিয়্যা (অষ্টম বছর) পর্যন্ত ইসলামের সকল ফনের ব্যাপক নিসাব নিয়ে এক নয়া কারিকুলাম বানানো হয়েছে৷ এরপর কিছুটা নির্দিষ্ট পড়াশোনার জন্য আলিয়া নামের চার বছরের কোর্স৷ যাকে "আলিমিয়্যাত"ও বলা হয়৷ আধুনিক কলেজে যাকে আমরা "অনার্সকোর্স"  বলে জানি ৷ এরপর শুরু হয় নির্দিষ্ট ফনের উপর বিশেষ পড়াশোনা৷ উলয়া উলা আর উলয়া সানিয়া নামে দু' বছরের কোর্স এতে৷ যাকে "ফযীলাত"ও বলা হয় ৷
  (2য় পার্ট)
  ------নদওয়াতুল উলামা------
  দারুল উলুম দেওবন্দের সিলেবাস থেকে ফারেগীন তলাবা সাধারণত ফযিলাতের আদব বিভাগেই ভর্তি হয়৷ তবে ফিকহ ও হাদিস বিভাগে দাখেলা নেওয়ার জন্য নদওয়াতে আলিমিয়্যাত কিংবা ফযিলাতের অন্য যে কোনো একটি বিভাগে পড়া শর্ত৷ এভাবে ফযিলাতে আধুনিক ধাঁচের মানসম্মত বহু বিভাগ রয়েছে৷ একজন মুসলিম শিক্ষার্থীর জীবনে যত কিছুর প্রয়োজন হতে পারে; তার প্রায় সব বিভাগেরই ব্যাবস্থা করে দিয়েছে নদওয়াতুল উলামা৷ 
 (2)- আরবি সাহিত্য বিকাশ:
  আরবি ভাষা শিক্ষা এবং আরবি সাহিত্যের প্রচলনে নদওয়ার অবদান অপরিসীম৷ নদওয়া শুধু নিজ পরিমণ্ডলেই নয় ; পুরো বিশ্বকেই জানিয়েছে- আজমিগণও পারে সাহিত্যের সাতকাহন উদ্ধার করতে৷ আরবি চর্চার এমন এক পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, নদওয়ার প্রতিজন সদস্যই আরবিতে কথা বলতে পারে৷ তাই চার দেয়ালে আবদ্ধেয় এ পরিবেশ যেনো আরবের সুগন্ধি ছড়ায়৷ হিসাব রক্ষক , বর্ডিং ম্যানাজার পর্যন্ত আমাদের সাথে অনর্গল আরবি বলে যান৷ এমনকি ক্যান্টিনের মালিকগণও ভাঙ্গা-ভাঙ্গা, অল্প-অল্প আরবি বলেন৷ জুমআর দিনে রঈসে জামিয়া ড. মা. সাঈদুর রহমান  আ'জমি নদবির দেড় ঘণ্টাব্যাপি আরবি খুতবা যেনো আরবের কোনো জামে' মসজিদের দৃশ্যকে ভাসিয়ে তোলে৷ 
   নদওয়া পৃথিবীকে যত মহান আরবি সাহিত্যিক উপহার দিয়েছে; তার নযির উপমহাদেশের ইতিহাসে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিরল৷ ইসলামিক বিভিন্ন বিষয়; বিশেষকরে  আরবি সাহিত্যের শত শত লেখক মুসলিম জাতিকে উপহার দিয়েছে এ নদওয়াতুল উলামা৷ গবেষণাধর্মি বইয়ের পাশাপাশি বড় বড় আরবি অভিধানও রচিত হয়েছে তাদের কলমে৷ যেগুলোর ফিরিস্তি ছোটো প্রবন্ধে আয়ত্ব করা সম্ভব নয়৷ তবুও দু'একটি উদাহরণ না দিলেই নয়৷ 
  1- আলি মিয়া নদভি রহ.'র  আরবিতে লেখা প্রতিটি গ্রন্থই উপমহাদেশসহ পুরো বিশ্বেই ভালোবাসার লাল গোলাপ পেয়ে যাচ্ছে ৷ "মা- যা খাসিরাল আলামু বিনহিতাতিল মুসলিমিন", "রিজালুল ফিকরি ওয়াদ দাওয়াহ", "ইলাল ইসলামি মিন জাদিদ", "আল ইমামুশ শহিদ হাসানুল বান্না", "রব্বানিয়্যাহ লা রহবানিয়্যাহ", "রিদ্দাতুন ওলা আবা বাকরিন লাহা", "আত তরিক ইলাল মাদিনা" এবং দু' খণ্ডের "মুখতারাত মিন আদাবিল আরাব" তার জ্বলন্ত প্রমাণ৷ "ইযা হাব্বাত রীহুল ঈমান" যেনো "কিতাবুল আগানি"'র কথা স্মরণ করিয়ে দেয়৷ মূর্খতার এ যুগেও আবুল ফারাজ আস্বাহানির (মৃত্যু- 356) সেই তরযের ইঙ্গিতই যেনো পাই আমরা "ইযা হাব্বাত রীহুল ঈমান" থেকে৷
   2- নদওয়ার বর্তমান রঈসে আম ও নাযেম (নাযেম শব্দটা নদওয়া ও তার শাখাগত মাদ্রাসাসহ হিন্দুস্তানের অনেক প্রতিষ্ঠানগুলোতেই সাধারণত সবচেয়ে বড় পরিচালকের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়৷ আবার সাথে সাথে স্বাভাবিক পরিচলিত অর্থেও তারা ব্যবহার করেন অনেক সময়৷ তবে এখানে সাধারণ পরিচলিত অর্থ উদ্দেশ্য নয়৷ বরং প্রধান পরিচালক- এমন অর্থ উদ্দেশ্য৷) আল্লামা ড. রাবে' হাসান নদভির লেখা প্রতিটি আরবি গ্রন্থও ব্যাপাক সাড়া জাগিয়েছে৷  "মানছুরাত মিন আদাবিল আরাব" "আল হেদায়েতুল কুরআনিয়্যা", এবং দু' খণ্ডের "তারিখুল আদাবিল আরাবি"'র মতো যবরদস্ত কিতাবগুলো আরবি ভাষায় তাঁর পূর্ণ ইলমি গভিরতার পরিচয় বহন করে৷ 
  5- এমনিভাবে আল্লামা ড. সাঈদুর রহমান আ'যমি নদভির লেখা বইগুলোও হৃদয়কে উদ্বেলিত করে তোলে৷ "আদ দা'ওয়াতুল ইসলামিয়া", "মুহাদ্দিসুল হিন্দিল কাবির হাবিবুর রহমান আ'যমি", "শুআরাউর রসুল", "নদওয়াতুল উলামা তুওয়াজিহুত তাহদ্দিল কাবির", "হাযারাতুনা ওয়া হাযারাতুহুম", "আল আদাবুল ইসলাম", "আস সাহাফাতুল আরাবিয়্যা" , দু' খণ্ডের "সাআ'তুন মাআ'ল আ'রিফীন" 'র মতো অন্যান্য কিতাবগুলো সত্যিই চমৎকার৷
  6- হযরত মাও. সাইয়্যিদ সালমান নদভি দা.বা.'র লেখা- 28 খণ্ডের "মুযাক্কারাতী" এ যেনো সাহিত্যের দীর্ঘ বসন্ত! উচ্চাঙ্গের তা'বিরে তার প্রতিটি বাক্য যেনো মিষ্টি- মধুর স্বাদ বিলায়৷
  7- নদওয়ার সাবেক উস্তাযুল লুগাতিল আরাবিয়া আল্লামা আবুল ফযল আব্দুল হাফিয বিলয়াবির লেখা "মিসবাহুল লুগাত" তো সবাই চিনে৷
  8- ড. মুহাম্মাদ যাকারিয়া নদভি'র লেখা- "আল কামুসুল আযহার"৷ পত্র- পত্রিকার ভাষা, ব্যাংকিং আর রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মতো অন্যান্য বিষয়ে আধুনিক আরবির সর্ব বৃহৎ অভিধান এটি৷ তাই ইদানিং কালের এক ঐতিহাসিক কর্ম হিসেবে এটি বিবেচিত হয়েছে৷ 
   9-মাওলানা আব্দুল মাজেদ নদবি এবং মাওলানা রাবে' হাসান নদবি'র সমন্বিত লেখা তিন খণ্ডের "মুয়াল্লিমুল ইনশা"৷ যা আরবি সাহিত্যের প্রাথমিক শিক্ষার্থিদের জন্য এক অনবদ্য সংকলন৷ 
   10-  হযরত মাওলানা সাইয়্যিদ ওয়াযেহ রশিদ নদবি দা.বা.'র লেখা "মাসাদিরুল আদাবিল আরাবি"৷ নাম থেকেই কিতাবের বিষয়বস্তু স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷ এতে হযরত শায়খ আরবি "আল বয়ান ওয়াত তাবয়িন", "আদাবুল কাতিব", "আল কামেল লিল মুবাররদ", "আল আগানি লিল আস্বাহানি" 'র মতো সাহিত্যের উৎস গ্রন্থগুলো নিয়ে সারগর্ভ আলোচনা করেছেন৷ 
   11- নদওয়ার উস্তাদ হযরত মাওলানা ওছিক নদবির লেখা "তায়ালাও নাতায়াল্লাম"৷ যা আধুনিক আরবি পরিভাষার এক চমৎকার সংকলন৷
   12- আল্লামা শিবলি নো'মানি রহ.'র লেখা পাঁচ খণ্ডের বিশাল কিতাব- "শে'রুল আজম"৷
  এভাবেই নদওয়া তার সুচনালগ্ন থেকেই আরবি ভাষার অবধারিত খেদমাত করে যাচ্ছে৷ পশ্চিমা দর্শনে প্রভাবিত আরবি সাহিত্যকে ইসলামের শীতল পানিতে স্নান করানোই হলো নদওয়ার উদ্দেশ্য৷ 


  (3য় পার্ট)
   ------নদওয়াতু উলামা------
  এভাবেই নদওয়া তার সুচনালগ্ন থেকেই আরবি ভাষার অবধারিত খেদমাত করে যাচ্ছে৷ পশ্চিমা দর্শনে প্রভাবিত আরবি সাহিত্যকে ইসলামের শীতল পানিতে স্নান করানোই হলো নদওয়ার উদ্দেশ্য৷
  নদওয়া আরবদেরকে তাক লাগিয়ে জানিয়েছে, পশ্চিমাদের সৃষ্ট নতুন- নতুন ইংজেরি আবিষ্কারের মুখাপেক্ষি হওয়া নয়; বরং কুরআন- হাদিস আর ইসলামি সংস্কৃতি দিয়েই আরবি ভাষাকে সাজানো যায়৷ তাই তো ইরাকের বিখ্যাত আলেম শায়খ ইহসান কাসেম আস সালেহি নিজ কিতাব "রিহলাতী মায়া রাসাইলিন নূর" এ হিন্দুস্তান সফরের কথা উল্লেখ করেছেন৷ নদওয়াতুল উলামা আর সাইয়্যিদ সালমান নদবি দা.বা.'র গড়া বিশাল ইউনিভার্সিটি "জামিয়া সাইয়্যিদ আহমাদ শহিদ" এ সফর করে নিজ অভিব্যক্তি উল্লেখ করেছেন এক আবেগময়ি বাক্য দিয়ে- "এ যুগে প্রকৃত আরবি সাহিত্য শিখতে হলে হিন্দুস্তান গিয়ে শিখো"৷
  
  (3)-ইলমে ফিকহ ও ইলমে হাদিসে তার অবদান: 
  মুসলিম উম্মাহর দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা সমাধানে নদওয়ার তালিবে ইলমগণ বহু কাজ আন্জাম দিয়েছেন৷ দারুল ইফতা ওয়াল কাযা এবং উসুলুল হাদিস নামে দু' দু' বছরের বিশেষ কোর্সের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ তবে পৃথিবীর বাস্তবতাকে অস্বীকার করা যায় না৷ তাই এ ক্ষেত্রে উস্তাদে মোহতারাম আল্লামা ড. সায়্যিদ সালমান নদভি দা.বা.'র বক্তব্য নকল করাই সমীচিন মনে করছি৷ তিনি আমাদেরকে বলেছেন- 
 "নদওয়ার শিক্ষার্থীগণ হাদিস ও ফিকহ নিয়ে বেশি কাজ করে নি৷ আন্তর্যাতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যতটুকু দরকার ছিলো ততটুকু হয় নি৷ তাই 1980 সাল থেকে আমরা এ কমতিটুকু কাটাতে পদক্ষেপ নিচ্ছি বিভিন্নভাবে"৷
  হযরতের পদক্ষেপে আলহামদু লিল্লাহ আজ ফিকহ ও ইলমে ফিকহ এবং হাদিস ও ইলমে হাদিসের বহু কাজ হয়েছে নদভি লেখকদের কলম থেকে৷ সংক্ষিপ্ত এ পরিসরে কয়েকটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি বুঝে আসবে৷ 
  1- "ফোতয়ায়ে নদওয়াতুল উলামা"৷ তিন খণ্ডের হৃদয় জুড়ানো এক কিতাব৷ সার্বিক বিবেচনায় বড় কাজ এটি৷ নদওয়ার প্রকাশনা বিভাগ থেকে এটা প্রস্তুত করা হয়েছে৷ তবে এখানেও নামায- রোজার ফোতয়ার ক্ষেত্রে আরবি ভাষাগত ভুল - শুদ্ধ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জওয়াব দেয়া হয়েছে৷ নদভি আরবি সাহিত্যের প্রভাব এখানেও কিছুটা পরিলক্ষিত হয়৷ 
   2- "ই'লামুল আখয়ার বি ফিকহি আসহাবিল আ'যার"৷ আল্লামা ড. মুছতফা নদভির লেখা এটি৷ বিভিন্ন মাসয়ালার সুবিন্নস্ত ও আধুনিক বিষয়সম্বলিত কিতাব এটি৷ 
   3- ছোটোদের ফিকহ শিক্ষার জন্য নতুনত্বের আভাসে লেখা- "আল ফিকহুল মুয়াসসার" তো সকলেই চিনি৷ 
  4- ফিকহি ইখতেলাফের উপর লেখা নদওয়ার উস্তাদ আল্লামা ফয়সাল নদবি ভাটকালি দা.বা.'র লেখা- "ফিকহি ইখতেলাফ কী হাকিকাত"৷ যা এ বিষয়ের গবেষণাধর্মি কারনামা৷ 
  5- তাঁরই লেখা- "বাচ্চোঁ কে আহকাম ও মাসায়েল"৷ যাতে একটি মানুষের জন্মের পর থেকে বালেগ হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন মাসআলা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে৷
  6- হযরতের লেখা- "ইমাম শাফেয়ি কা ইলমি মাকাম"৷ 
  বি.দ্র.- এটি ফিকহ নিয়ে লেখা না হলেও, হায়াতে ফুকাহা সংক্রান্ত হওয়ায় এখানে উল্লেখ করা হলো৷ 
  7- উস্তাদে মোহতারাম সাইয়্যিদ সালমান নদবি দা.বা.'র লেখা- "ফিকহি মাসায়েল কে দরমিয়ান জমা' ওয়া তাতবিক"৷
  8- হযরতের লেখা- "মুহাদ্দিসীন কে নযর মেঁ ফিকহ আওর ফুকাহা কি আহাম্মিয়াত"৷
  9- আলি মিয়া নদভি রহ.র লেখা- "আল আরকানুল আরবায়া"৷ যদিও এটাকে মুস্তাকেল ফিকহের কিতাব গণ্য করা যায় না; তবু নামায- রোযার মতো ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধানাবলির হিকমাতকে এতে এমন ধাঁচে বর্ণনা করা হয়েছে; যাতে ফুটে উঠেছে এসব বিধানের উপকারিতা ও হিকমাত৷
   10- মাওলানা শায়খ আলি আহমাদ নদবির লেখা আরবি গ্রন্থ "আল কাওয়ায়িদুল ফিকহিয়্যাহ"৷  যার প্রশংসা শায়খ মুস্তফা আহমাদ আয যারকাও করেছেন৷ নিজের তাকরিযে ভূয়সি প্রশংসা করেছেন শায়খ আলি আহমাদ নদবির৷


   (4র্থ পার্ট)
 ------নদওয়াতুল উলামা------
   
   ইলমে হাদিসে নদওয়ার অবদান:
  অন্যদিকে ইলমে হাদিসেরও অনেক কাজ শুরু করেছেন নদভি আলেমগণ৷ ছোট্ট প্রবন্ধে বিস্তারিত বলার সুযোগ নেই৷ কয়েকটি কারনামার কথা তুলে ধরছি- 
  1- উস্তাদে মোহতারাম হযরত মাওলানা সাইয়্যিদ সালমান নদবি দা.বা.'র লেখা, উলুমুল হাদিস সংক্রান্ত চার খণ্ডের বড় কলবরের কিতাব- "আলফাযুল জারহি ওয়াত তা'দিল"৷ শাইখ আওয়ামা দা. বা. যার প্রশংসাময় ভূমিকা লিখেছেন৷ আসলে চার খণ্ডের কিতাবটাকে দশ - বিশ খণ্ডের তুলনায় ছোট মনে হলেও একে কিন্তু ভিন্ন নযরে দেখতে হবে৷ কারণ আল্লামা ইবনে হাজার রহ. "তাহযিবুত তাহযিব" এ যে তাশদিদ ও তাছহিল,  তাবদিল ও তাছমিহ করেছেন সেগুলো রদ করে রিজালে হাদিসের উপর  ই'তিদালি হুকুমের সন্ধান দেওয়া কিন্তু চারটিখানি কথা নয়৷ এর জন্য তো প্রয়োজন রুসুখ ফিল ইলম আর উলুমুল হাদিসের উপর গভীর  মুতালাআ৷ যা শুধু মুহাককিক আলেমের পক্ষেই সম্ভব৷
  2- এছাড়া হযরতের লেখা উলুমুল হাদিস সংক্রান্ত সব রিসালাগুলোই চমৎকার৷ যেমন: "লামহাতুন আন ইলমিল জারহি ওয়াত তা'দিল", "মুকাদ্দামাতু সুনানি ইবনে মাজাহ", "হায়াতুল ইমাম বুখারি", "দুরুসুম মিনাল হাদিসিন নাবায়িশ শারিফ", "বায়না আহলির রায় ও আহলিল হাদিস", "আল ইজতিহাত ওয়াত তাকলিদ", "আল মুকাদ্দামা ফি উসুলিল হাদিস"সহ অন্যান্য কিতাব৷
   3-  "বাযলুল মাজহুদ"'র উপর হযরত ড. তাকি উদ্দীন নদভি দা.বা.'র তা'লিক ও তাহকিক৷ যা উপমহাদেশসহ আরববিশ্বেও প্রভাব ফেলেছে৷ 
   4- আল্লামা আব্দুল হাই রহ.'র "যফারুল মুহাছছালিন ফি মুখতাছারিল জুরজানি" এর উপর ড. তাকি উদ্দিন নদবির তাহকিক, তাখরিজ ও তা'লিক৷ যার প্রশংসা করেছেন আলি মিয়া নদবি রহ.'র মতো ব্যক্তিত্ত্ব৷ কিতাবের শুরুতে লিখে দিয়েছেন এক বরকতময় তাকরিয৷ 
   5- হযরত ড. তাকি উদ্দিন নদবির লেখা "মুহাদ্দিসিনে ইযাম আওর উনকে ইলমি কারনামে"৷
   6- মাওলানা ফারিব হাবিব নদবির লেখা "ফিকহি মাসালেক আওর হাদিসে নববি"৷ যা শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামা দা.বা.'র লেখা বিখ্যাত কিতাব "আসারুল হাদিসিশ শারিফ ফি ইখতিলাফিল আয়িম্মাতিল ফুকাহা"'র তরজুমানি এবং সংক্ষিপ্ত রুপ৷
    7- মাওলানা সাইয়্যিদ আহমাদুল্লাহ নদবির লেখা "তারিখে হাদিস ও মুহাদ্দিসিন"৷ যাতে উলুমুল হাদিস এবং মুহাদ্দিসিনের বিভিন্ন ইতিহাস নিয়ে সংক্ষিপ্ত এবং জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেছেন৷ এ বিষয়ে এক শ্বাসে পড়ার মতো এ এক অনন্য গ্রন্থ৷ 
    8- শাহ ওলি উল্লাহ রহ 'র তারতিব ও সংক্ষিপ্ত আরবি শরাহ, দু'খণ্ডের "আল মুসাওয়া মিন আহাদিসিল মুয়াত্ত্বা" 'র উপর হযরত মাওলানা সাইয়্যিদ সালমান নদবি দা. বা.'র তাহকিকি কাজ৷ যা হযরত দা.বা.'র মুকাদ্দামাসহ নতুন আঙ্গিকে তারঁই উচ্চতর বিভাগ "আল মা'হাদুল আলি" থেকে নতুন এডিশনে ছাপানো হয়েছে৷ 
   9- মুয়াত্ত্বা মালেকের উপর লিখিত হযরত শাহ ওলি উল্লাহ রহ 'র দু'খণ্ডের ফারসি শরাহ "আল মুছফফা"৷ যার উপর বর্ধিত হাশিয়া ও মুকাদ্দামাসহ আরবি রুপান্তর করেছেন হযরত দা.বা.৷ 
   10- আল্লামা শিবলি নো'মানি রহ.'র লেখা "হায়াতে ইমাম মালেক"৷ ******৷
    11- শাহ আব্দুল আজিজ দেহলবি রহ.'র লেখা ফারসি কিতাব"বুস্তানুল মুহাদ্দিসিন ফি বয়ানি কুতুবিল হাদিস ওয়া আসহাবিহাল গিররিল মায়ামিন"৷ যার আরবি রুপান্তর করেছেন অক্সফোর্ড লন্ডনের ইসলামিক স্টাডিজের কর্ণধার ড. আকরাম নদবি৷ দারুল গরব, বায়রুত থেকে যেটি প্রকাশিত হয়েছে৷ 
    12- ড. আকরাম নদবির লেখা পন্চাশ খণ্ডের বিশাল গ্রন্থ "আন নিসাউল মুহাদ্দিছাত ফিল ইসলাম"৷ যাতে তিনি আট হাজার মুহাদ্দিসা আলেমার জীবনি বর্ণনা করেছেন৷ নারী জাতির জীবনি নিয়ে অদ্যাবধি লেখা এটাই সবচেয়ে বৃহৎ গ্রন্থ৷ তবে কিতাবটি এখনো আধুনিক ছাপার জগতে প্রবেশ করে নি৷ 

     তাফসিরের ক্ষেত্রে নদওয়ার অবদান: 
     এ ক্ষেত্রে আমার জানা মতে নদওয়ার সন্তানগণ খুবই কম কাজ করেছেন৷ 
    1- সাইয়্যিদ সালমান নদবি দা.বা.'র দু'খণ্ডের "আখেরি ওহি"৷ যার শুরুতে ফকিহুল আছর হযরত মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ রাহমানি, মাওলানা রাশেদ কান্ধলবির মতো হিন্দুস্তানের মহান ব্যক্তিগণ প্রশংসাময় ভূমিকা লিখেছেন৷ কুরআনে কারিমের তরজুমানি, আয়াত ও সূরার পারস্পরিক মিল, শানে নুযুলসহ সংক্ষিপ্ত তাফসির বর্ণনা করা হয়েছে এতে৷ কুরআনে কারিমে জ্ঞান- বিজ্ঞানের এমন সব বিষয় হযরত সেখানে ফুটিয়ে তুলেছেন, সমালোচনার বিষয়গুলোকে এক পাশে রেখে, যাকে সত্যিই এক ইলহামি কারনামা বলা যায়৷ 
     2- আয়াতে কুরআনে কারিমের বিষয়ভিত্তিক তারতিব, আল্লামা ওহিদুয যামান খান রহ. 'র "তাবয়িবুল কুরআন"৷ যার তরজমা ও তাহকিক করে দু'খণ্ডে প্রকাশ করেছেন হযরত শায়খ সালমান নদবি দা.বা.৷
     3-  আলি মিয়া নদবি রহ.'র "মুতালায়ে কুরআন কে উসুল ও মাবাদি"৷ যা এ বিষয়ের এক ঐতিহাসিক পুস্তক হিসেবে বিবেচিত৷ ******৷
    4- দারুল উলুম অক্সফোর্ড, লন্ডনের প্রধান ড. আকরাম নদবি দা.বা.'র লেখা রিসালা "মাবাদি ফি উসুলিত তাফসির"৷
   5- হযরত শায়খ রাবে' হাসান নদবি দা.বা.'র লেখা "আল হেদায়াতুল কুরআনিয়া"৷ ******৷ 


  (5ম পার্ট)
   ------নদওয়াতুল উলামা-----
   
   ইসলামি তারিখ- ইতিহাসে নদওয়ার অবদান:
   যে জাতি নিজেদের ইতিহাস সম্পর্কে বে- খবর থাকে, সফলতা কখনো তাদের পদচুম্বন করতে পারে না৷ তাই নদওয়ার সন্তানগণ আরবি সাহিত্যের পর ইতিহাস বিষয়ে অবদান রেখেছেন সবচেয়ে বেশি৷ এদের পূর্ণ কারনামা তুলে ধরতে প্রয়োজন পৃথক এক গ্রন্থের৷ সংক্ষিপ্ত এ প্রবন্ধে কয়েকটি কিতাবের নাম উল্লেখ করছি-  
   1- আল্লামা শিবলি নো'মানি এবং আল্লামা সাইয়্যিদ সুলাইমান নদবি রহ.'র সমন্বিত লেখা সিরাত সংক্রান্ত সাত খণ্ডের বিখ্যাত কিতাব "সিরাতুন নবি"৷ যা উর্দু ভাষায় সিরাতের উপর লিখিত সবচেয়ে বড় ও জামে' কিতাব৷ 
    2- 9 জিলদে 15 খণ্ডের "সিয়ারুস সাহাবা"৷ যা শাহ মুয়িনুদ্দীন আহমাদ নদবি, মাওলানা আব্দুস সালাম নদবি, মাওলানা মুজিবুল্লাহ নদবি,  ড. নাঈম সিদ্দীকী নদবি 'র মতো একদল মহান উলামার প্রচেষ্টায় লিপিবদ্ধ হয়েছে৷ নাম দেখে যদিও বিষয়বস্তুর সীমাবদ্ধতা বুঝা যাচ্ছে৷ কিন্তু বাস্তবে এতে সাহাবা, তাবিয়ি, তাবয়ে তাবিয়িসহ আয়িম্মা- মুজতাহিদিনের জীবনচরিতও স্থান পেয়েছে৷ যা এ বিষয়ে উর্দু ভাষায় লিখিত এ যাবত কালের সর্ব বৃহৎ ও জামে' গ্রন্থের স্থান পেয়েছে৷
  3- হযরত মাওলানা সাইয়্যিদ সালমান নদবি দা.বা.'র "খুতুবাতে সিরাত"৷ 
   4- নদওয়ার উস্তাদে মোহতারাম মাওলানা ফয়সাল আহমাদ নদবি ভাটকালির লিখিত "তাহরিকে আযাদি মেঁ উলামা কা কিরদার"৷
   5- হযরতের লেখা "আওরঙ্গযেব আলামগীর"৷ 
   6- উস্তাদে মোহতারাম হযরত মাওলানা সাইয়্যিদ সালমান নদবির লেখা "আযাদিয়ে হিন্দ;  হাকিকত য়া সারাব"৷
   7- হযরতের লেখা "সফরনামা এক তালেবে ইলম কা"৷ 
   8- আলি মিয়া নদবি রহ.'র লেখা ছয় খণ্ডের "তারিখে দা'ওয়াত ওয়া আযিমাত"৷ 

যার আরবি ভার্সন হলো, চার খণ্ডের "রিজালুল ফিকরি ওয়াদ দা'ওয়াহ"৷

   9- হযরতের লেখা সাত খণ্ডের "কারওয়ানে যিন্দেগী"৷ যাতে তিনি শুধু নিজের ব্যক্তিগত বিষয়ই উল্লেখ করেন নি; বরং যামানার বিভিন্ন ঘটে যাওয়া বিষয়কেও তাহকিক ও পরিশ্রম করে কলমের খোঁচায় লিপিবদ্ধ করেছেন৷ আগ্রহি কোনো ঐতিহাসিকই এ থেকে বে- নিয়ায নন৷  
   10- হযরত মাওলানা আব্দুল হাই আল হাসানি রহ.'র লেখা "চৌদাওয়ে সোদি কে উলামায়ে বররে সগীর"৷ যার পূর্ণতা দিয়েছেন তাঁরই যোগ্য সন্তান মুফাক্কিরে ইসলাম আল্লামা আলি মিয়া নদবি রহ.৷ 
    11- আল্লামা সুলাইমান নদভির লেখা "সিরাতে আয়েশা"৷ 
    12- হযরতের লেখা "বাহাদুর খাওয়াতিনে ইসলাম"৷  
    13- তাঁরই লেখা রিসালা- "মুসলমান আওরতোঁ কি বাহাদুরি"৷
  * শিবলি নো'মানি মাকতাবা *
   শিক্ষার্থীদের ব্যাপক পড়াশোনার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে ছয় তলাবিশিষ্ট "শিবলি নো'মানি" নামে বিশাল মাকতাবা৷ এছাড়া সময় হেফাযতের তাগিদে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ তলায় পৃথক "দারুল কুতুব" 'র সুব্যবস্থা করা হয়েছে৷ তাখাসসুসের ছাত্রদের জন্য প্রতিদিন মাগরিব থেকে এশা পর্যন্ত এসব মাকতাবায় ইযাফি কিতাব মুতালাআ করা অত্যাবশ্যকীয়৷ শুধু মাকতাবায়ে শিবলি নো'মানিতেই আরবি, উর্দু, ফারসি, হিন্দি আর ইংরেজিতে লিখিত প্রায় পন্জাশ হাজার কিতাব বিদ্যমান রয়েছে৷ পুরোনো কিতাবসমূহের দুষ্প্রাপ্য মাখতুতাগুলো (হস্তলিপি) এখানে যেনো হাতের নাগালে৷ বহু দুর্লভ কিতাবের মহাসমারোহ যেনো হৃদয়কে জুড়িয়ে দেয়৷ তাই নদওয়ার প্রতিজন শিক্ষার্থিই ইলমি পরিবেশে বেড়ে উঠে৷ ইলম নামক এ মধুবন থেকে মধু আহরণ করে দিনরাত৷ জ্ঞানের শীতল- কোমল জলে প্রশান্তির ছোঁয়ায় অবগাহন করে সারাক্ষণ৷ 
    নদওয়াতুল উলামা বিশ্বকে ইসলামের চির ছায়াতলে আনার আপ্রাণ চেষ্টা করছে৷ যুগের কাছে সুষ্ঠভাবে দ্বিনি খেদমাতের অমিয় সূধা পৌঁছাতে শিক্ষার্থিদেরকে উন্নত আখলাক ও আমালে ছালেহার বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে৷ তাইতো নদওয়ার প্রতিটি তালেবে ইলমের নুরানি চেহারায় যেনো আলি মিয়া নদবির নুর চমকায়৷ দিলে যেনো সেই ইশক ও জযবা, তড়প ও উত্তাপ সদা ভাসমান৷ তাদের আখলাক আর দরদে যেনো শক্ত পাথরও বিগলিত হবে!
    অন্যদিকে কুফফার আর কাদিয়ানি, বেরেলভি, বিভ্রান্তকারি শিয়াদের মতো ভ্রষ্ট জাতির বিরুদ্ধে পত্র- পত্রিকা প্রকাশ, লেখালিখি আর বয়ান- বক্তৃতার মজবুত হাতলে আঘাত হানছে৷ মুসলিম উম্মাহর ফিকরি ময়দানে সাহসি বাহাদুরের মতো বীর - বিক্রমে কলম নামক অস্ত্র চালাচ্ছে৷ মাসিক "আর রায়েদ" এর স্পষ্ট দলিল৷ সাইয়্যিদ সালমান নদবির লেখা "হাজারায়ে সোওম কি কিয়ামাতে সোগরা",  "চান্দ ফিকরি যাওয়ে", আলি মিয়া নদবির বয়ান- বক্তৃতার সমষ্টি চার খণ্ডের "মুহাযরাত ইসলামিয়া ফিল ফিকরি ওয়াদ দা'ওয়াহ", "আসরে হাযির", "নয়া তুফান", "কাদিয়ানিয়্যাত" সহ অন্যান্য রচনা এর জ্বলন্ত প্রমাণ৷ 
     উম্মাহর এ সকল ফিৎনা নিরসনে আজকের হযরত সাইয়্যিদ সালমান নদবি দা.বা. ছুটে বেড়াচ্ছেন পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে৷ বয়ান- বক্তৃতার জ্বালাময়ি ভাষণ, আর লেখালিখির মাধ্যমে সকল অপশক্তির দাঁত টুটে দিচ্ছেন দীপ্তহস্তে৷ মুসলিম ভ্রাতৃত্ব- বন্ধনকে দৃঢ় করতে আর হুকুমাতে ইসলামিয়া কায়েমের সুদূর পরিকল্পনা নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মি এক অনন্য প্রতিষ্ঠান৷ "জামিয়া সাইয়্যিদ আহমাদ শহিদ" নামে বিশাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি৷ 
   এভাবেই নদওয়া এগিয়ে চলছে তার আপন গন্তব্যে৷ সময়ের আবর্তনে জন্ম দিচ্ছে অসংখ্য কালজয়ি মহাপুরুষ৷ লক্ষ- লক্ষ তালিবে ইলমকে আল্লাহর ভালোবাসায় সিক্ত করে জান্নাতের স্বপ্নীল ভূবনে নিয়ে যাওয়াই তার আখেরি মানযিল! সাঈদ আহমাদ খান রাহমানি (আলাপ) ০৯:৩৫, ২৭ মার্চ ২০১৮ (ইউটিসি)[উত্তর দিন]

== নদওয়াতুল উলামা == 2

  (2য় পার্ট)
  ------নদওয়াতুল উলামা------
  দারুল উলুম দেওবন্দের সিলেবাস থেকে ফারেগীন তলাবা সাধারণত ফযিলাতের আদব বিভাগেই ভর্তি হয়৷ তবে ফিকহ ও হাদিস বিভাগে দাখেলা নেওয়ার জন্য নদওয়াতে আলিমিয়্যাত কিংবা ফযিলাতের অন্য যে কোনো একটি বিভাগে পড়া শর্ত৷ এভাবে ফযিলাতে আধুনিক ধাঁচের মানসম্মত বহু বিভাগ রয়েছে৷ একজন মুসলিম শিক্ষার্থীর জীবনে যত কিছুর প্রয়োজন হতে পারে; তার প্রায় সব বিভাগেরই ব্যাবস্থা করে দিয়েছে নদওয়াতুল উলামা৷ 
 (2)- আরবি সাহিত্য বিকাশ:
  আরবি ভাষা শিক্ষা এবং আরবি সাহিত্যের প্রচলনে নদওয়ার অবদান অপরিসীম৷ নদওয়া শুধু নিজ পরিমণ্ডলেই নয় ; পুরো বিশ্বকেই জানিয়েছে- আজমিগণও পারে সাহিত্যের সাতকাহন উদ্ধার করতে৷ আরবি চর্চার এমন এক পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, নদওয়ার প্রতিজন সদস্যই আরবিতে কথা বলতে পারে৷ তাই চার দেয়ালে আবদ্ধেয় এ পরিবেশ যেনো আরবের সুগন্ধি ছড়ায়৷ হিসাব রক্ষক , বর্ডিং ম্যানাজার পর্যন্ত আমাদের সাথে অনর্গল আরবি বলে যান৷ এমনকি ক্যান্টিনের মালিকগণও ভাঙ্গা-ভাঙ্গা, অল্প-অল্প আরবি বলেন৷ জুমআর দিনে রঈসে জামিয়া ড. মা. সাঈদুর রহমান  আ'জমি নদবির দেড় ঘণ্টাব্যাপি আরবি খুতবা যেনো আরবের কোনো জামে' মসজিদের দৃশ্যকে ভাসিয়ে তোলে৷ 
   নদওয়া পৃথিবীকে যত মহান আরবি সাহিত্যিক উপহার দিয়েছে; তার নযির উপমহাদেশের ইতিহাসে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিরল৷ ইসলামিক বিভিন্ন বিষয়; বিশেষকরে  আরবি সাহিত্যের শত শত লেখক মুসলিম জাতিকে উপহার দিয়েছে এ নদওয়াতুল উলামা৷ গবেষণাধর্মি বইয়ের পাশাপাশি বড় বড় আরবি অভিধানও রচিত হয়েছে তাদের কলমে৷ যেগুলোর ফিরিস্তি ছোটো প্রবন্ধে আয়ত্ব করা সম্ভব নয়৷ তবুও দু'একটি উদাহরণ না দিলেই নয়৷ 
  1- আলি মিয়া নদভি রহ.'র  আরবিতে লেখা প্রতিটি গ্রন্থই উপমহাদেশসহ পুরো বিশ্বেই ভালোবাসার লাল গোলাপ পেয়ে যাচ্ছে ৷ "মা- যা খাসিরাল আলামু বিনহিতাতিল মুসলিমিন", "রিজালুল ফিকরি ওয়াদ দাওয়াহ", "ইলাল ইসলামি মিন জাদিদ", "আল ইমামুশ শহিদ হাসানুল বান্না", "রব্বানিয়্যাহ লা রহবানিয়্যাহ", "রিদ্দাতুন ওলা আবা বাকরিন লাহা", "আত তরিক ইলাল মাদিনা" এবং দু' খণ্ডের "মুখতারাত মিন আদাবিল আরাব" তার জ্বলন্ত প্রমাণ৷ "ইযা হাব্বাত রীহুল ঈমান" যেনো "কিতাবুল আগানি"'র কথা স্মরণ করিয়ে দেয়৷ মূর্খতার এ যুগেও আবুল ফারাজ আস্বাহানির (মৃত্যু- 356) সেই তরযের ইঙ্গিতই যেনো পাই আমরা "ইযা হাব্বাত রীহুল ঈমান" থেকে৷
   2- নদওয়ার বর্তমান রঈসে আম ও নাযেম (নাযেম শব্দটা নদওয়া ও তার শাখাগত মাদ্রাসাসহ হিন্দুস্তানের অনেক প্রতিষ্ঠানগুলোতেই সাধারণত সবচেয়ে বড় পরিচালকের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়৷ আবার সাথে সাথে স্বাভাবিক পরিচলিত অর্থেও তারা ব্যবহার করেন অনেক সময়৷ তবে এখানে সাধারণ পরিচলিত অর্থ উদ্দেশ্য নয়৷ বরং প্রধান পরিচালক- এমন অর্থ উদ্দেশ্য৷) আল্লামা ড. রাবে' হাসান নদভির লেখা প্রতিটি আরবি গ্রন্থও ব্যাপাক সাড়া জাগিয়েছে৷  "মানছুরাত মিন আদাবিল আরাব" "আল হেদায়েতুল কুরআনিয়্যা", এবং দু' খণ্ডের "তারিখুল আদাবিল আরাবি"'র মতো যবরদস্ত কিতাবগুলো আরবি ভাষায় তাঁর পূর্ণ ইলমি গভিরতার পরিচয় বহন করে৷ 
  5- এমনিভাবে আল্লামা ড. সাঈদুর রহমান আ'যমি নদভির লেখা বইগুলোও হৃদয়কে উদ্বেলিত করে তোলে৷ "আদ দা'ওয়াতুল ইসলামিয়া", "মুহাদ্দিসুল হিন্দিল কাবির হাবিবুর রহমান আ'যমি", "শুআরাউর রসুল", "নদওয়াতুল উলামা তুওয়াজিহুত তাহদ্দিল কাবির", "হাযারাতুনা ওয়া হাযারাতুহুম", "আল আদাবুল ইসলাম", "আস সাহাফাতুল আরাবিয়্যা" , দু' খণ্ডের "সাআ'তুন মাআ'ল আ'রিফীন" 'র মতো অন্যান্য কিতাবগুলো সত্যিই চমৎকার৷
  6- হযরত মাও. সাইয়্যিদ সালমান নদভি দা.বা.'র লেখা- 28 খণ্ডের "মুযাক্কারাতী" এ যেনো সাহিত্যের দীর্ঘ বসন্ত! উচ্চাঙ্গের তা'বিরে তার প্রতিটি বাক্য যেনো মিষ্টি- মধুর স্বাদ বিলায়৷
  7- নদওয়ার সাবেক উস্তাযুল লুগাতিল আরাবিয়া আল্লামা আবুল ফযল আব্দুল হাফিয বিলয়াবির লেখা "মিসবাহুল লুগাত" তো সবাই চিনে৷
  8- ড. মুহাম্মাদ যাকারিয়া নদভি'র লেখা- "আল কামুসুল আযহার"৷ পত্র- পত্রিকার ভাষা, ব্যাংকিং আর রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মতো অন্যান্য বিষয়ে আধুনিক আরবির সর্ব বৃহৎ অভিধান এটি৷ তাই ইদানিং কালের এক ঐতিহাসিক কর্ম হিসেবে এটি বিবেচিত হয়েছে৷ 
   9-মাওলানা আব্দুল মাজেদ নদবি এবং মাওলানা রাবে' হাসান নদবি'র সমন্বিত লেখা তিন খণ্ডের "মুয়াল্লিমুল ইনশা"৷ যা আরবি সাহিত্যের প্রাথমিক শিক্ষার্থিদের জন্য এক অনবদ্য সংকলন৷ 
   10-  হযরত মাওলানা সাইয়্যিদ ওয়াযেহ রশিদ নদবি দা.বা.'র লেখা "মাসাদিরুল আদাবিল আরাবি"৷ নাম থেকেই কিতাবের বিষয়বস্তু স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷ এতে হযরত শায়খ আরবি "আল বয়ান ওয়াত তাবয়িন", "আদাবুল কাতিব", "আল কামেল লিল মুবাররদ", "আল আগানি লিল আস্বাহানি" 'র মতো সাহিত্যের উৎস গ্রন্থগুলো নিয়ে সারগর্ভ আলোচনা করেছেন৷ 
   11- নদওয়ার উস্তাদ হযরত মাওলানা ওছিক নদবির লেখা "তায়ালাও নাতায়াল্লাম"৷ যা আধুনিক আরবি পরিভাষার এক চমৎকার সংকলন৷
   12- আল্লামা শিবলি নো'মানি রহ.'র লেখা পাঁচ খণ্ডের বিশাল কিতাব- "শে'রুল আজম"৷
  এভাবেই নদওয়া তার সুচনালগ্ন থেকেই আরবি ভাষার অবধারিত খেদমাত করে যাচ্ছে৷ পশ্চিমা দর্শনে প্রভাবিত আরবি সাহিত্যকে ইসলামের শীতল পানিতে স্নান করানোই হলো নদওয়ার উদ্দেশ্য৷ 
  চলবে ইনশা- আল্লাহ-----৷ সাঈদ আহমাদ খান রাহমানি (আলাপ) ০৯:৩৬, ২৭ মার্চ ২০১৮ (ইউটিসি)[উত্তর দিন]

নদওয়াতুল উলামা- (3য় পার্ট)[সম্পাদনা]

এ লেখাটি একবার পূর্ণ পোস্ট করা হয়েছে৷ কিন্তু প্রয়োজনের তাগিদে পুনরায় পার্ট- পার্ট করে পোস্ট করছি৷

  (3য় পার্ট)
   ------নদওয়াতু উলামা------
  এভাবেই নদওয়া তার সুচনালগ্ন থেকেই আরবি ভাষার অবধারিত খেদমাত করে যাচ্ছে৷ পশ্চিমা দর্শনে প্রভাবিত আরবি সাহিত্যকে ইসলামের শীতল পানিতে স্নান করানোই হলো নদওয়ার উদ্দেশ্য৷
  নদওয়া আরবদেরকে তাক লাগিয়ে জানিয়েছে, পশ্চিমাদের সৃষ্ট নতুন- নতুন ইংজেরি আবিষ্কারের মুখাপেক্ষি হওয়া নয়; বরং কুরআন- হাদিস আর ইসলামি সংস্কৃতি দিয়েই আরবি ভাষাকে সাজানো যায়৷ তাই তো ইরাকের বিখ্যাত আলেম শায়খ ইহসান কাসেম আস সালেহি নিজ কিতাব "রিহলাতী মায়া রাসাইলিন নূর" এ হিন্দুস্তান সফরের কথা উল্লেখ করেছেন৷ নদওয়াতুল উলামা আর সাইয়্যিদ সালমান নদবি দা.বা.'র গড়া বিশাল ইউনিভার্সিটি "জামিয়া সাইয়্যিদ আহমাদ শহিদ" এ সফর করে নিজ অভিব্যক্তি উল্লেখ করেছেন এক আবেগময়ি বাক্য দিয়ে- "এ যুগে প্রকৃত আরবি সাহিত্য শিখতে হলে হিন্দুস্তান গিয়ে শিখো"৷
  
  (3)-ইলমে ফিকহ ও ইলমে হাদিসে তার অবদান: 
  মুসলিম উম্মাহর দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা সমাধানে নদওয়ার তালিবে ইলমগণ বহু কাজ আন্জাম দিয়েছেন৷ দারুল ইফতা ওয়াল কাযা এবং উসুলুল হাদিস নামে দু' দু' বছরের বিশেষ কোর্সের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ তবে পৃথিবীর বাস্তবতাকে অস্বীকার করা যায় না৷ তাই এ ক্ষেত্রে উস্তাদে মোহতারাম আল্লামা ড. সায়্যিদ সালমান নদভি দা.বা.'র বক্তব্য নকল করাই সমীচিন মনে করছি৷ তিনি আমাদেরকে বলেছেন- 
 "নদওয়ার শিক্ষার্থীগণ হাদিস ও ফিকহ নিয়ে বেশি কাজ করে নি৷ আন্তর্যাতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যতটুকু দরকার ছিলো ততটুকু হয় নি৷ তাই 1980 সাল থেকে আমরা এ কমতিটুকু কাটাতে পদক্ষেপ নিচ্ছি বিভিন্নভাবে"৷
  হযরতের পদক্ষেপে আলহামদু লিল্লাহ আজ ফিকহ ও ইলমে ফিকহ এবং হাদিস ও ইলমে হাদিসের বহু কাজ হয়েছে নদভি লেখকদের কলম থেকে৷ সংক্ষিপ্ত এ পরিসরে কয়েকটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি বুঝে আসবে৷ 
  1- "ফোতয়ায়ে নদওয়াতুল উলামা"৷ তিন খণ্ডের হৃদয় জুড়ানো এক কিতাব৷ সার্বিক বিবেচনায় বড় কাজ এটি৷ নদওয়ার প্রকাশনা বিভাগ থেকে এটা প্রস্তুত করা হয়েছে৷ তবে এখানেও নামায- রোজার ফোতয়ার ক্ষেত্রে আরবি ভাষাগত ভুল - শুদ্ধ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জওয়াব দেয়া হয়েছে৷ নদভি আরবি সাহিত্যের প্রভাব এখানেও কিছুটা পরিলক্ষিত হয়৷ 
   2- "ই'লামুল আখয়ার বি ফিকহি আসহাবিল আ'যার"৷ আল্লামা ড. মুছতফা নদভির লেখা এটি৷ বিভিন্ন মাসয়ালার সুবিন্নস্ত ও আধুনিক বিষয়সম্বলিত কিতাব এটি৷ 
   3- ছোটোদের ফিকহ শিক্ষার জন্য নতুনত্বের আভাসে লেখা- "আল ফিকহুল মুয়াসসার" তো সকলেই চিনি৷ 
  4- ফিকহি ইখতেলাফের উপর লেখা নদওয়ার উস্তাদ আল্লামা ফয়সাল নদবি ভাটকালি দা.বা.'র লেখা- "ফিকহি ইখতেলাফ কী হাকিকাত"৷ যা এ বিষয়ের গবেষণাধর্মি কারনামা৷ 
  5- তাঁরই লেখা- "বাচ্চোঁ কে আহকাম ও মাসায়েল"৷ যাতে একটি মানুষের জন্মের পর থেকে বালেগ হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন মাসআলা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে৷
  6- হযরতের লেখা- "ইমাম শাফেয়ি কা ইলমি মাকাম"৷ 
  বি.দ্র.- এটি ফিকহ নিয়ে লেখা না হলেও, হায়াতে ফুকাহা সংক্রান্ত হওয়ায় এখানে উল্লেখ করা হলো৷ 
  7- উস্তাদে মোহতারাম সাইয়্যিদ সালমান নদবি দা.বা.'র লেখা- "ফিকহি মাসায়েল কে দরমিয়ান জমা' ওয়া তাতবিক"৷
  8- হযরতের লেখা- "মুহাদ্দিসীন কে নযর মেঁ ফিকহ আওর ফুকাহা কি আহাম্মিয়াত"৷
  9- আলি মিয়া নদভি রহ.র লেখা- "আল আরকানুল আরবায়া"৷ যদিও এটাকে মুস্তাকেল ফিকহের কিতাব গণ্য করা যায় না; তবু নামায- রোযার মতো ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধানাবলির হিকমাতকে এতে এমন ধাঁচে বর্ণনা করা হয়েছে; যাতে ফুটে উঠেছে এসব বিধানের উপকারিতা ও হিকমাত৷
   10- মাওলানা শায়খ আলি আহমাদ নদবির লেখা আরবি গ্রন্থ "আল কাওয়ায়িদুল ফিকহিয়্যাহ"৷  যার প্রশংসা শায়খ মুস্তফা আহমাদ আয যারকাও করেছেন৷ নিজের তাকরিযে ভূয়সি প্রশংসা করেছেন শায়খ আলি আহমাদ নদবির৷ 
  চলবে ইনশা- আল্লাহ--------৷ সাঈদ আহমাদ খান রাহমানি (আলাপ) ০৯:৫৯, ২৭ মার্চ ২০১৮ (ইউটিসি)[উত্তর দিন]

শিমলা- মানালি--[সম্পাদনা]

হিমাচলের মায়াকন্যা - শিমলা, মানালিতে কয়েকদিন:

  পরীক্ষার ছুটি হলো৷ ঢালকানগরের সাবেক সাথি এক কাসেমি ভাইয়ের সাথে সফরের সিদ্ধান্ত হলো৷ হিমাচল প্রদেশ- শিমলা, মানালি৷
 পরিকল্পনা মতে ট্রেন আর বাসযোগে প্রায় আট ঘণ্টা ধারাবাহিক চলে পৌঁছে দিলো আমাদেরকে শিমলা স্টেশনে৷ ভোর তখন চারটা বাজে৷ আট ঘণ্টার প্রায় পুরোটাই পাহাড়ের চড়াই - উৎরাই বেয়ে সফর করলাম আমরা৷ সরেজমিনের প্রায় সাত হাজার ফিট উঁচুতে তখন৷ শীতের তাপমাত্রা অনুভব হলো- 0.6-9 ডিগ্রী সেলসিয়ামের৷ মানে, শীতের স্বাভাবিক পরিবেশ থেকে সাত- আট গুণ৷ দ্বিতীয় আরেকটি মোজা পরতে হলো৷ পাজামার নীচে সুতার মোটা টাউজার, আর মোটা গেন্জি- জামার উপর কোর্ট, এর উপর আবার উলের আবাকাবা!- সবকিছুই যেনো শীতের সামনে থরথর করে কাঁপছে৷ 
  গন্তব্য কিন্তু আরো সামনে৷ বহু উঁচুতে৷ আকাশ ঘেষা বরফের পাহাড়ে৷ হাতে সময় নেই৷ কালবিলম্ব না করে তখন মানালির উদ্দেশ্যে গাড়ির খোঁজে বের হলাম৷ এখান থেকে পাহাড়ের ভয়ঙ্কর এসব রোডে ট্রেনের ব্যবস্থা নেই৷ গাড়িতে করেই যেতে হলো মানযিলে৷ নির্ঘুম- নিস্তর৷ গাড়ির জানালা দিয়ে চেয়ে থাকা ছাড়া নেই কোনো দিকদিগন্ত৷ ঝোপঝাড়, দানবের মতো গাছগাছালি আর কালো রাতের শিমলা শহরটা দেখতে দেখতে ছুটে চলছি৷ দূর আকাশ পানে হঠাৎ নযরে পড়লো বাষ্পে ঢাকা মৃদু আলোদের মিছিল৷ ভাবলাম- এ কেমন গ্রহ!? কিছুদূর যেতেই স্পষ্ট হলো৷ এ যেনো আকাশে মানবের তৈরি স্থীর তারাদের দল৷ 
   চলতে চলতে পৌঁছে গেলো একটি পাহাড়ি লেকের দোড়গোড়ায়৷ হৃদয়কারা স্বচ্ছ  নীল পানিতে ভরপুর তার বুকগুলো৷ জীবনে এই প্রথম নীল পানির দেখা মিললো৷ অপূর্ব সৌন্দর্যের মায়াবি মিলন ঘটেছে তার প্রবেশ দরোজায়৷ তিন দিকে ছুটে চলেছে তিনটি মুখ৷ তিন দিকেই পাহাড়ের সারি৷ ডান দিকে মোড় কেটে গভির সেই লেকের কুল ঘেষে গাড়ি নির্ভয়ে চলছে৷ সামান্য অসতর্কতায় শত শত ফিট নীচে অবস্থিত পানির বুকে হারিয়ে যাওয়ার মৃত্যুময় আশঙ্কা৷ মাইলকে মাইলব্যাপ্তি সেই কুদরতি সৌন্দর্য অবলোকন করে শীরটা আল্লাহর নৈপুণ্যে নুজ্ব হয়ে পড়লো৷
    মাঝপথে গাড়িটা হঠাৎ দু' পাশ আবদ্ধ এক অন্ধকার রোডে ঢুকে পড়লো৷ প্রথমে ভয় পেয়ে গেলাম৷ না৷ এটা অন্য কিছু নয়৷ পাহারি ট্যানেল৷ জীবনে এই প্রথম দেখা মিললো এর৷ পাহাড় কেটে নীচ দিয়ে সুরঙ্গ করে অপর প্রান্তে পৌঁছার মজবুত রাস্তা বানানো হয়েছে৷ ঘুটঘুটে অন্ধকার! ভাবছিলাম- হায়, সামান্য দূর্ঘটনায় হতে পারে পাহাড় ভেঙ্গে সবকিছু গুড়ো বানিয়ে দিবে!! প্রায় পাঁচ মাইল চললো এভাবে৷ বের হতেই যেনো মুক্তি পেলাম অচেনা জেলখানা থেকে৷
   সারাদিনের সফর শেষে আল্লাহর রহমতে অবশেষে গাড়ি পৌঁছলো মানালির হৃদপিণ্ডে৷ রক্তিম সূর্যটা তখন আরশের নীচে সাজদার জন্য দ্রুত ছুটে চলছে৷ গাড়ি থেকে নামতেই হোস্টেলের লোকেরা "স্যার, স্যার" বলে দামদর করা শুরু করলো৷ কিন্তু মূল্যের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিলো- "স্যার" শব্দটি যেনো লজ্জায় নত হচ্ছে বারবার৷ পরিশেষে খোঁজ হলো এক ভদ্রলোকের সুলভ মূল্যের "আমদানি"৷ পাঁচশো রুপিতে একটি চমৎকার কামরা বুকিং হলো আমাদের জন্য৷ একটু ধৈর্য না ধরলে হয়ত দেড় গুণ মরিচের আঘাত খেতে হতো৷ তবে পূর্ব অবগতির কারণে বেচে গেলাম আমরা৷
   টানা দেড় দিনের নির্ঘুম সফরে ক্লান্ত শরিরটা ঘুমের ঘোরে বিভোর হলো৷ সকালের আবোহাওয়া ঠিক নয়টার দিকে জাগালো আমাদের৷ পয়পরিস্কার হয়ে ফজরের কাযা আদায় করতে হলো৷ ক্ষুধায় চিরচির করছে অস্থীর পেটটি৷ তবুও হাড়কাঁপানো শীত আর বরফের মতো কুয়াশা ভেদ করে দোকানে যেতেও ভয় লাগছে৷ দারুল উলুম থেকে সাথে করে নিয়ে আসা শুকনো খাবারগুলো বের করলাম৷ সাথে হোটেল থেকে চল্লিশ রুপি দিয়ে সব্জি এনে পুরা করলাম পেটের জ্বালা৷ ততক্ষণে ঘড়ির কাটা দশটার কাছাকাছি৷ 
   যেতে হবে বরফের মূল স্থানগুলোতে৷ বাস সেখানে যায় না৷ টেক্সি নিতে হবে৷ ভাড়া চেয়ে বসলো পচিশশো রুপি৷ সারাদিন সাথে থাকবে আমাদের৷ ড্রাইভারদের মিষ্টি কথায় কান না দিয়ে সামনে পায়দল চলা শুরু করলাম৷ অবশেষে বারোশো রুপিতে রাযি হলো এক ভদ্রড্রাইভার৷ 
    পাহাড়ের বুকে পাহাড়ের পাদদেশ বেয়ে ছুটে চললো আকাশের দিকে৷ উপরে উঠতে রাস্তার দৃশ্যগুলো যেনো আলিফ লায়লার সেই গোল মিনারের কথা স্মরণ করিয়ে দিলো৷ কিছুদূর গিয়ে শুরু হলো মনমাতানো ঝকঝকে পাহাড়ের সারিবদ্ধ লাইন৷ রাস্তার দু' পাশেই আকাশচুম্বি পাহাড়ের সমাবেশ৷ রোদের আলোতে পাথরের সেই পাহাড়গুলো চিকচিক করছে৷ মনে হলো-  মানুষের হাতে সর্বাধুনিক যন্ত্রে যেনো এগুলোর গায়ে না জানা কত উন্নত রঙে রঙিন করা হয়েছে৷ স্মৃতিপটে ভেসে উঠলো তখন-

فتبارك الله احسن الخالقين.

   এই তো স্নো পয়েন্ট! বরফের এলাকা!!রাস্তার পাশ দিয়ে বরফগুলো জমে আছে৷ পরিস্কার না করলে রোডেও বুঝি গাড়ি চলতে পারছে না৷ তাই তো চোখের সামনে কয়েকটি গাড়ি আটকা পড়ে যাচ্ছিলো৷ ডান- বাম, সামনে- পেছনে বরফ আর বরফ৷ চামড়ার চোখে না দেখে  হৃদয়ের মণিকোঠায় গেঁথে থাকা সেই কুদরতি সৌন্দর্যের কথা ব্যক্ত করা অসম্ভব৷ কলমের খোঁচায় তার বর্ণনার ভাষা হয়ত পৃথিবীতে জন্ম নেয় নি৷ দুনিয়ার কোনো সাহিত্যিক মনে হয়- একে শব্দের রাণি দিয়েও ফুটিয়ে তুলতে পারবে না৷ 
    আশ্চর্য হলাম- দশ হাজার ফিট উঁচুতে বরফের এ এলাকাতে ঠাণ্ডা তেমন অনুভব হলো না৷ ভিজিটরগণ আড়াইশো রুপিতে এক ধরণের পোশাক ভাড়া নেন৷ আগ্রহভরে আমরাও-----৷ পোশাক পরে নিজেকে যেনো নভোচারির মতো মনে হলো৷ কিন্তু পরবর্তিতে বুঝলাম- বুট জুতাটি ছাড়া পোশাকের কোনো প্রয়োজন ছিলো না!
   এবার নিয়ে এলো সোলাং ভেলিতে৷ এখানে দেখছি, দালানগুলোর সামনেও বরফ পড়ে আছে৷ ইট- পাথরের পাকা ঘরের চালগুলোতে চমকাচ্ছে সাদা বরফের দল৷ তিন দিকে পাহাড়৷ সামনে খোলা ময়দান৷ স্কিয়িং করছে (আকাশে উড়ছে) বালক- কৈশরেরা৷ জন প্রতি তিন হাজার রুপি৷ আমাদের মতো মাওলানাদের এতে উড়াউড়ি করা কতটুকু শোভা পাবে, সে ভেবে হয় নি আর উড়া৷ এক পাশে কেবল কার দিয়ে পাহাড়ের শীর্ষ চূড়ায় আরোহণ করানো হচ্ছে৷ জন প্রতি সারে ছয়শো রুপি৷ তবে পায়ে চলেও নাকি আশঙ্কার সাথে চড়া যায় পাহাড়ের মাথায়৷ পাঁচশো রুপি দিয়ে ঘোড়াতে চড়ে উপরে উঠার অফারও আসলো৷ শুনেছি, পন্চাশ রুপিতে রাযি হয়৷ সেই যাই হোক- অজানা আর অদূরদর্শিতার কারণে আমাদের ভাগ্য হয় নি সেখানে যাওয়ার৷ অন্য দিকে যুবকেরা কৃত্রিম তীর আর রাইফেল চালানোর স্বাদ নিচ্ছে৷ জীবনে প্রথম দেখতে পেলাম তীর আর ধনুক৷ মনে চাইলো একবার হলেও ঐতিহাসিক এ জিনিসটার সান্নিধ্য নেই৷ কিন্তু সাথের সঙ্গিটার অমোনযোগিতা আর অনাগ্রহে আমারও সাহসে ভাটা পড়লো৷ এ আফসোস রয়ে যাবে সারাজীবন! আসলে মনের অমিল বলে কথা---------৷ 
    ফিরতি পথে ড্রাইভার কুদরতি গরম পানির চশমার কথা বললেন৷ ভেসিসত- নামে পরিচিত৷ যা নাকি পাহাড়ের বুক থেকে বয়ে আসে সবসময়৷ তবে ইদানিং সেখানে ইটের দেয়াল বানিয়ে টিপ কল আর কৃত্রিম ঝর্ণার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ 
    কিছুদূর সামনে এসে একটি ঝুলন্ত ব্রীজের মুখে রুখে দিলো গাড়ি৷ নীচ দিয়ে বয়ে চলছে ঝর্ণার কল্লোলধারায় স্বচ্ছ, সুমিষ্ট পানি৷ পিক তোলার ঝড় উঠলো এখানে৷ রাঙামাটি ঝুলন্তসেতুর স্বাদ যেনো এখান থেকে নিলাম! 
    ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যার কালো ছোঁয়া দিনের আলোকে মিটিয়ে দিলো৷ মাগরিবের নামায পড়ে রওনা করলাম ফিরে আসার মানসে৷ শিমলা হয়ে দেওবন্দ৷ এবার ফেরার পথে শিমলা থেকে পাহাড়ের আরোহি- ছোট ট্রেনে উঠলাম৷ কালকা পর্যন্ত যাবে এটি৷ বহু দূর থেকে মানুষ নাকি এর উপভোগ নিতেই ছুটে আসে শিমলাতে৷ জীবনের এই প্রথম পাহাড়ের গভিরে চলা হলো৷ জঙ্গল, বনবানানি পেরিয়ে মাঝে মাঝে পাহাড়ি সুরঙ্গ পার হয়ে ধীরে ধীরে নিকটবর্তী হতে লাগলো আরেকটি দর্শনীয় স্থান দারুল উলুম দেওবন্দ৷ সাঈদ আহমাদ খান রাহমানি (আলাপ) ১০:০৫, ২৭ মার্চ ২০১৮ (ইউটিসি)[উত্তর দিন]

নদওয়াতুল উলামা[সম্পাদনা]

(4র্থ পার্ট)

 ------নদওয়াতুল উলামা------
   
   ইলমে হাদিসে নদওয়ার অবদান:
  অন্যদিকে ইলমে হাদিসেরও অনেক কাজ শুরু করেছেন নদভি আলেমগণ৷ ছোট্ট প্রবন্ধে বিস্তারিত বলার সুযোগ নেই৷ কয়েকটি কারনামার কথা তুলে ধরছি- 
  1- উস্তাদে মোহতারাম হযরত মাওলানা সাইয়্যিদ সালমান নদবি দা.বা.'র লেখা, উলুমুল হাদিস সংক্রান্ত চার খণ্ডের বড় কলবরের কিতাব- "আলফাযুল জারহি ওয়াত তা'দিল"৷ শাইখ আওয়ামা দা. বা. যার প্রশংসাময় ভূমিকা লিখেছেন৷ আসলে চার খণ্ডের কিতাবটাকে দশ - বিশ খণ্ডের তুলনায় ছোট মনে হলেও একে কিন্তু ভিন্ন নযরে দেখতে হবে৷ কারণ আল্লামা ইবনে হাজার রহ. "তাহযিবুত তাহযিব" এ যে তাশদিদ ও তাছহিল,  তাবদিল ও তাছমিহ করেছেন সেগুলো রদ করে রিজালে হাদিসের উপর  ই'তিদালি হুকুমের সন্ধান দেওয়া কিন্তু চারটিখানি কথা নয়৷ এর জন্য তো প্রয়োজন রুসুখ ফিল ইলম আর উলুমুল হাদিসের উপর গভীর  মুতালাআ৷ যা শুধু মুহাককিক আলেমের পক্ষেই সম্ভব৷
  2- এছাড়া হযরতের লেখা উলুমুল হাদিস সংক্রান্ত সব রিসালাগুলোই চমৎকার৷ যেমন: "লামহাতুন আন ইলমিল জারহি ওয়াত তা'দিল", "মুকাদ্দামাতু সুনানি ইবনে মাজাহ", "হায়াতুল ইমাম বুখারি", "দুরুসুম মিনাল হাদিসিন নাবায়িশ শারিফ", "বায়না আহলির রায় ও আহলিল হাদিস", "আল ইজতিহাত ওয়াত তাকলিদ", "আল মুকাদ্দামা ফি উসুলিল হাদিস"সহ অন্যান্য কিতাব৷
   3-  "বাযলুল মাজহুদ"'র উপর হযরত ড. তাকি উদ্দীন নদভি দা.বা.'র তা'লিক ও তাহকিক৷ যা উপমহাদেশসহ আরববিশ্বেও প্রভাব ফেলেছে৷ 
   4- আল্লামা আব্দুল হাই রহ.'র "যফারুল মুহাছছালিন ফি মুখতাছারিল জুরজানি" এর উপর ড. তাকি উদ্দিন নদবির তাহকিক, তাখরিজ ও তা'লিক৷ যার প্রশংসা করেছেন আলি মিয়া নদবি রহ.'র মতো ব্যক্তিত্ত্ব৷ কিতাবের শুরুতে লিখে দিয়েছেন এক বরকতময় তাকরিয৷ 
   5- হযরত ড. তাকি উদ্দিন নদবির লেখা "মুহাদ্দিসিনে ইযাম আওর উনকে ইলমি কারনামে"৷
   6- মাওলানা ফারিব হাবিব নদবির লেখা "ফিকহি মাসালেক আওর হাদিসে নববি"৷ যা শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামা দা.বা.'র লেখা বিখ্যাত কিতাব "আসারুল হাদিসিশ শারিফ ফি ইখতিলাফিল আয়িম্মাতিল ফুকাহা"'র তরজুমানি এবং সংক্ষিপ্ত রুপ৷
    7- মাওলানা সাইয়্যিদ আহমাদুল্লাহ নদবির লেখা "তারিখে হাদিস ও মুহাদ্দিসিন"৷ যাতে উলুমুল হাদিস এবং মুহাদ্দিসিনের বিভিন্ন ইতিহাস নিয়ে সংক্ষিপ্ত এবং জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেছেন৷ এ বিষয়ে এক শ্বাসে পড়ার মতো এ এক অনন্য গ্রন্থ৷ 
    8- শাহ ওলি উল্লাহ রহ 'র তারতিব ও সংক্ষিপ্ত আরবি শরাহ, দু'খণ্ডের "আল মুসাওয়া মিন আহাদিসিল মুয়াত্ত্বা" 'র উপর হযরত মাওলানা সাইয়্যিদ সালমান নদবি দা. বা.'র তাহকিকি কাজ৷ যা হযরত দা.বা.'র মুকাদ্দামাসহ নতুন আঙ্গিকে তারঁই উচ্চতর বিভাগ "আল মা'হাদুল আলি" থেকে নতুন এডিশনে ছাপানো হয়েছে৷ 
   9- মুয়াত্ত্বা মালেকের উপর লিখিত হযরত শাহ ওলি উল্লাহ রহ 'র দু'খণ্ডের ফারসি শরাহ "আল মুছফফা"৷ যার উপর বর্ধিত হাশিয়া ও মুকাদ্দামাসহ আরবি রুপান্তর করেছেন হযরত দা.বা.৷ 
   10- আল্লামা শিবলি নো'মানি রহ.'র লেখা "হায়াতে ইমাম মালেক"৷ ******৷
    11- শাহ আব্দুল আজিজ দেহলবি রহ.'র লেখা ফারসি কিতাব"বুস্তানুল মুহাদ্দিসিন ফি বয়ানি কুতুবিল হাদিস ওয়া আসহাবিহাল গিররিল মায়ামিন"৷ যার আরবি রুপান্তর করেছেন অক্সফোর্ড লন্ডনের ইসলামিক স্টাডিজের কর্ণধার ড. আকরাম নদবি৷ দারুল গরব, বায়রুত থেকে যেটি প্রকাশিত হয়েছে৷ 
    12- ড. আকরাম নদবির লেখা পন্চাশ খণ্ডের বিশাল গ্রন্থ "আন নিসাউল মুহাদ্দিছাত ফিল ইসলাম"৷ যাতে তিনি আট হাজার মুহাদ্দিসা আলেমার জীবনি বর্ণনা করেছেন৷ নারী জাতির জীবনি নিয়ে অদ্যাবধি লেখা এটাই সবচেয়ে বৃহৎ গ্রন্থ৷ তবে কিতাবটি এখনো আধুনিক ছাপার জগতে প্রবেশ করে নি৷ 

     তাফসিরের ক্ষেত্রে নদওয়ার অবদান: 
     এ ক্ষেত্রে আমার জানা মতে নদওয়ার সন্তানগণ খুবই কম কাজ করেছেন৷ 
    1- সাইয়্যিদ সালমান নদবি দা.বা.'র দু'খণ্ডের "আখেরি ওহি"৷ যার শুরুতে ফকিহুল আছর হযরত মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ রাহমানি, মাওলানা রাশেদ কান্ধলবির মতো হিন্দুস্তানের মহান ব্যক্তিগণ প্রশংসাময় ভূমিকা লিখেছেন৷ কুরআনে কারিমের তরজুমানি, আয়াত ও সূরার পারস্পরিক মিল, শানে নুযুলসহ সংক্ষিপ্ত তাফসির বর্ণনা করা হয়েছে এতে৷ কুরআনে কারিমে জ্ঞান- বিজ্ঞানের এমন সব বিষয় হযরত সেখানে ফুটিয়ে তুলেছেন, সমালোচনার বিষয়গুলোকে এক পাশে রেখে, যাকে সত্যিই এক ইলহামি কারনামা বলা যায়৷ 
     2- আয়াতে কুরআনে কারিমের বিষয়ভিত্তিক তারতিব, আল্লামা ওহিদুয যামান খান রহ. 'র "তাবয়িবুল কুরআন"৷ যার তরজমা ও তাহকিক করে দু'খণ্ডে প্রকাশ করেছেন হযরত শায়খ সালমান নদবি দা.বা.৷
     3-  আলি মিয়া নদবি রহ.'র "মুতালায়ে কুরআন কে উসুল ও মাবাদি"৷ যা এ বিষয়ের এক ঐতিহাসিক পুস্তক হিসেবে বিবেচিত৷ ******৷
    4- দারুল উলুম অক্সফোর্ড, লন্ডনের প্রধান ড. আকরাম নদবি দা.বা.'র লেখা রিসালা "মাবাদি ফি উসুলিত তাফসির"৷
   5- হযরত শায়খ রাবে' হাসান নদবি দা.বা.'র লেখা "আল হেদায়াতুল কুরআনিয়া"৷ ******৷ 
     চলবে ইনশা আল্লাহ-----৷ সাঈদ আহমাদ খান রাহমানি (আলাপ) ১৮:৩০, ৯ জুলাই ২০১৮ (ইউটিসি)[উত্তর দিন]

নদওয়াতুল উলামা[সম্পাদনা]

(5ম পার্ট)

   ------নদওয়াতুল উলামা-----
   
   ইসলামি তারিখ- ইতিহাসে নদওয়ার অবদান:
   যে জাতি নিজেদের ইতিহাস সম্পর্কে বে- খবর থাকে, সফলতা কখনো তাদের পদচুম্বন করতে পারে না৷ তাই নদওয়ার সন্তানগণ আরবি সাহিত্যের পর ইতিহাস বিষয়ে অবদান রেখেছেন সবচেয়ে বেশি৷ এদের পূর্ণ কারনামা তুলে ধরতে প্রয়োজন পৃথক এক গ্রন্থের৷ সংক্ষিপ্ত এ প্রবন্ধে কয়েকটি কিতাবের নাম উল্লেখ করছি-  
   1- আল্লামা শিবলি নো'মানি এবং আল্লামা সাইয়্যিদ সুলাইমান নদবি রহ.'র সমন্বিত লেখা সিরাত সংক্রান্ত সাত খণ্ডের বিখ্যাত কিতাব "সিরাতুন নবি"৷ যা উর্দু ভাষায় সিরাতের উপর লিখিত সবচেয়ে বড় ও জামে' কিতাব৷ 
    2- 9 জিলদে 15 খণ্ডের "সিয়ারুস সাহাবা"৷ যা শাহ মুয়িনুদ্দীন আহমাদ নদবি, মাওলানা আব্দুস সালাম নদবি, মাওলানা মুজিবুল্লাহ নদবি,  ড. নাঈম সিদ্দীকী নদবি 'র মতো একদল মহান উলামার প্রচেষ্টায় লিপিবদ্ধ হয়েছে৷ নাম দেখে যদিও বিষয়বস্তুর সীমাবদ্ধতা বুঝা যাচ্ছে৷ কিন্তু বাস্তবে এতে সাহাবা, তাবিয়ি, তাবয়ে তাবিয়িসহ আয়িম্মা- মুজতাহিদিনের জীবনচরিতও স্থান পেয়েছে৷ যা এ বিষয়ে উর্দু ভাষায় লিখিত এ যাবত কালের সর্ব বৃহৎ ও জামে' গ্রন্থের স্থান পেয়েছে৷
  3- হযরত মাওলানা সাইয়্যিদ সালমান নদবি দা.বা.'র "খুতুবাতে সিরাত"৷ 
   4- নদওয়ার উস্তাদে মোহতারাম মাওলানা ফয়সাল আহমাদ নদবি ভাটকালির লিখিত "তাহরিকে আযাদি মেঁ উলামা কা কিরদার"৷
   5- হযরতের লেখা "আওরঙ্গযেব আলামগীর"৷ 
   6- উস্তাদে মোহতারাম হযরত মাওলানা সাইয়্যিদ সালমান নদবির লেখা "আযাদিয়ে হিন্দ;  হাকিকত য়া সারাব"৷
   7- হযরতের লেখা "সফরনামা এক তালেবে ইলম কা"৷ 
   8- আলি মিয়া নদবি রহ.'র লেখা ছয় খণ্ডের "তারিখে দা'ওয়াত ওয়া আযিমাত"৷ 

যার আরবি ভার্সন হলো, চার খণ্ডের "রিজালুল ফিকরি ওয়াদ দা'ওয়াহ"৷

   9- হযরতের লেখা সাত খণ্ডের "কারওয়ানে যিন্দেগী"৷ যাতে তিনি শুধু নিজের ব্যক্তিগত বিষয়ই উল্লেখ করেন নি; বরং যামানার বিভিন্ন ঘটে যাওয়া বিষয়কেও তাহকিক ও পরিশ্রম করে কলমের খোঁচায় লিপিবদ্ধ করেছেন৷ আগ্রহি কোনো ঐতিহাসিকই এ থেকে বে- নিয়ায নন৷  
   10- হযরত মাওলানা আব্দুল হাই আল হাসানি রহ.'র লেখা "চৌদাওয়ে সোদি কে উলামায়ে বররে সগীর"৷ যার পূর্ণতা দিয়েছেন তাঁরই যোগ্য সন্তান মুফাক্কিরে ইসলাম আল্লামা আলি মিয়া নদবি রহ.৷ 
    11- আল্লামা সুলাইমান নদভির লেখা "সিরাতে আয়েশা"৷ 
    12- হযরতের লেখা "বাহাদুর খাওয়াতিনে ইসলাম"৷  
    13- তাঁরই লেখা রিসালা- "মুসলমান আওরতোঁ কি বাহাদুরি"৷
  * শিবলি নো'মানি মাকতাবা *
   শিক্ষার্থীদের ব্যাপক পড়াশোনার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে ছয় তলাবিশিষ্ট "শিবলি নো'মানি" নামে বিশাল মাকতাবা৷ এছাড়া সময় হেফাযতের তাগিদে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ তলায় পৃথক "দারুল কুতুব" 'র সুব্যবস্থা করা হয়েছে৷ তাখাসসুসের ছাত্রদের জন্য প্রতিদিন মাগরিব থেকে এশা পর্যন্ত এসব মাকতাবায় ইযাফি কিতাব মুতালাআ করা অত্যাবশ্যকীয়৷ শুধু মাকতাবায়ে শিবলি নো'মানিতেই আরবি, উর্দু, ফারসি, হিন্দি আর ইংরেজিতে লিখিত প্রায় পন্জাশ হাজার কিতাব বিদ্যমান রয়েছে৷ পুরোনো কিতাবসমূহের দুষ্প্রাপ্য মাখতুতাগুলো (হস্তলিপি) এখানে যেনো হাতের নাগালে৷ বহু দুর্লভ কিতাবের মহাসমারোহ যেনো হৃদয়কে জুড়িয়ে দেয়৷ তাই নদওয়ার প্রতিজন শিক্ষার্থিই ইলমি পরিবেশে বেড়ে উঠে৷ ইলম নামক এ মধুবন থেকে মধু আহরণ করে দিনরাত৷ জ্ঞানের শীতল- কোমল জলে প্রশান্তির ছোঁয়ায় অবগাহন করে সারাক্ষণ৷ 
    নদওয়াতুল উলামা বিশ্বকে ইসলামের চির ছায়াতলে আনার আপ্রাণ চেষ্টা করছে৷ যুগের কাছে সুষ্ঠভাবে দ্বিনি খেদমাতের অমিয় সূধা পৌঁছাতে শিক্ষার্থিদেরকে উন্নত আখলাক ও আমালে ছালেহার বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে৷ তাইতো নদওয়ার প্রতিটি তালেবে ইলমের নুরানি চেহারায় যেনো আলি মিয়া নদবির নুর চমকায়৷ দিলে যেনো সেই ইশক ও জযবা, তড়প ও উত্তাপ সদা ভাসমান৷ তাদের আখলাক আর দরদে যেনো শক্ত পাথরও বিগলিত হবে!
    অন্যদিকে কুফফার আর কাদিয়ানি, বেরেলভি, বিভ্রান্তকারি শিয়াদের মতো ভ্রষ্ট জাতির বিরুদ্ধে পত্র- পত্রিকা প্রকাশ, লেখালিখি আর বয়ান- বক্তৃতার মজবুত হাতলে আঘাত হানছে৷ মুসলিম উম্মাহর ফিকরি ময়দানে সাহসি বাহাদুরের মতো বীর - বিক্রমে কলম নামক অস্ত্র চালাচ্ছে৷ মাসিক "আর রায়েদ" এর স্পষ্ট দলিল৷ সাইয়্যিদ সালমান নদবির লেখা "হাজারায়ে সোওম কি কিয়ামাতে সোগরা",  "চান্দ ফিকরি যাওয়ে", আলি মিয়া নদবির বয়ান- বক্তৃতার সমষ্টি চার খণ্ডের "মুহাযরাত ইসলামিয়া ফিল ফিকরি ওয়াদ দা'ওয়াহ", "আসরে হাযির", "নয়া তুফান", "কাদিয়ানিয়্যাত" সহ অন্যান্য রচনা এর জ্বলন্ত প্রমাণ৷ 
     উম্মাহর এ সকল ফিৎনা নিরসনে আজকের হযরত সাইয়্যিদ সালমান নদবি দা.বা. ছুটে বেড়াচ্ছেন পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে৷ বয়ান- বক্তৃতার জ্বালাময়ি ভাষণ, আর লেখালিখির মাধ্যমে সকল অপশক্তির দাঁত টুটে দিচ্ছেন দীপ্তহস্তে৷ মুসলিম ভ্রাতৃত্ব- বন্ধনকে দৃঢ় করতে আর হুকুমাতে ইসলামিয়া কায়েমের সুদূর পরিকল্পনা নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মি এক অনন্য প্রতিষ্ঠান৷ "জামিয়া সাইয়্যিদ আহমাদ শহিদ" নামে বিশাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি৷ 
   এভাবেই নদওয়া এগিয়ে চলছে তার আপন গন্তব্যে৷ সময়ের আবর্তনে জন্ম দিচ্ছে অসংখ্য কালজয়ি মহাপুরুষ৷ লক্ষ- লক্ষ তালিবে ইলমকে আল্লাহর ভালোবাসায় সিক্ত করে জান্নাতের স্বপ্নীল ভূবনে নিয়ে যাওয়াই তার আখেরি মানযিল! সাঈদ আহমাদ খান রাহমানি (আলাপ) ১৮:৩০, ৯ জুলাই ২০১৮ (ইউটিসি)[উত্তর দিন]

সোনালি সংসার[সম্পাদনা]

সোনালি সংসার: একটি গল্প:

সাঈদ আহমাদ খান


উত্তপ্ত রোদের মাঝে ঠিক দুপুরে মাহিমা বাপের বাড়়িতে পৌঁছলো৷ ক্লান্ত- শ্রান্ত শরির তার৷ চেহারায় কষ্টের ছাপ৷ ফুটন্ত গোলাপের মতো চেহারাটা আজ বড্ড মলিন৷ এ মলিনতা সামান্য সফরের আবহে নয়৷ আজ তার চক্ষুদ্বয় ভিন্ন কোনো যন্ত্রণার পরিচয় দিচ্ছে৷

মাহিমা! কী খবর তোমার মা!? না বাবা! কিছু হয় নি৷ তাহলে সপ্তাহের মাঝে একাকি কেনো আসলে? মাহিমার মুখ থেকে কোনো কথা ফুটছে না৷ গণ্ডদেশ বেয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরলো শুধু৷ বলো, কী হয়েছে? না, বলবো না৷ তাহলে কাঁদছো কেনো?

মাহিমা৷ বড়লোকের মেয়ে তিনি৷ বাবা একজন সরকারি ডাক্তার৷ দাওয়াত ও তাবলিগে সময় লাগানোর সুবাদে তিনি একজন দ্বিনদারই বটে৷ ছয় মাস হলো তার বিবাহ হয়েছে৷ বাবা শিক্ষিত বলে মাস্টার্স পড়ুয়া ছেলের কাছেই মেয়েটাকে বিবাহ দিয়েছেন৷ স্বামি খালেদ আহমাদ একটি সরকারি অফিসের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন৷ পরিবারের তিনিই বড় ছেলে৷ ছোট তিন বোনের বিবাহ হয়েছে আরো আগে৷ বাসায় তার মায়ের সাথে শুধু স্ত্রীই থাকে৷ টুকটাক কাজ ছাড়া অতিরিক্ত ঝামেলা নেই বলে কাজের বুয়া রাখার প্রয়োজন মনে করেন নি৷ তবে বেহুদা পয়সা খরচের বিরুধি তার মা- ই৷

খানাদানা- পাকানো, ঘরটা পরিপাটি করে রাখা আর সামান্য কিছু কাপড়- চোপড় ধোয়া- এই তাদের প্রতিদিনের কাজ৷ সারাদিনের এতটুকু কাজ করতেই বৃদ্ধা শ্বাশুরি হাঁপিয়ে উঠেন৷ তাই বউজির সহযোগিতা ছাড়া পেরে উঠেন না তিনি৷ ধনি বংশের মেয়ে হওয়ার কারণে কাজে অভ্যস্ত নয় মাহিমা৷ তাই খুঁটিনাটি বিষয় নিয়েই বেঁধে যায় বউ- শ্বাশুরির ঝগড়া৷ মাঝে মাঝেই তাদের উঁচু আওয়াজ চার দেয়াল ভেদ করে পৌঁছে যায় পড়শির কামরায়৷

নাহ, আর সহ্য হয় না মাহিমার৷ পার্শবর্তি বান্ধবির থেকে পরামর্শ নেয় সে৷ বান্ধবি তাকে শ্বাশুরিকে শাষাণোর পরামর্শ দেয়৷ এতেও কোনো ফলপ্রসূ হয় না৷ কী করবে- ভেবে পায় না সে!

ঠিক দুপুরে মনক্ষুণ্ন হয়ে শুয়ে আছে মাহিমা৷ আজ সারাদিনই বিছানায় গড়াগড়ি করেই কাটিয়েছে৷ মনটা তার বড়ই ব্যথাতুর৷ একটু পরই খালেদ অফিস থেকে ফিরবে৷ বাসার সব কিছুই এলোমেলো৷ শ্বাশুরি আবার শুরু করেছে চেচামেচি৷ এবার আর হচ্ছে না৷ হঠাৎ তার মাথায় বুদ্ধি আসলো.........

পরদিনই অসুস্থতার ভান করে চলে আসে বাবার বাড়ি৷ বাবা বিচক্ষণতার সাথেই আঁচ করলেন, কিছু একটা ঘটেছে৷ নতুবা এ সময়ে আসার কী- ই বা কারণ থাকতে পারে? তাই পেরেশানির কারণ জিজ্ঞেস করলো বাবা৷ বহু পীড়াপীড়িতে অবশেষে মুখ খুলতে বাধ্য হলো মাহিমা৷ বাবাকে বললো, "একটি অষুধ দাও৷ যা খেয়ে বুড়ি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরবে"৷ বাবা ব্যাপারটি বুঝতে পারলেন৷ একজন দক্ষ পিতার মতোই ভাবলেন, কী জওয়াব দেওয়া যায় মেয়েকে! তৎক্ষণাৎ তিনি মেয়ের পক্ষ নিলেন৷

কিন্তু কোনো বুদ্ধিমান বাবা নিজ মেয়ের শ্বাশুরির অপমৃত্যু কামনা করতে পারেন না৷ বহু চিন্তার পর তিনি মেয়েকে একটি ওষুধ দিলেন৷ সাথে বললেন- "এবার গিয়ে শ্বাশুরিকে দুধের সাথে মিশিয়ে এ ওষুধটি খাওয়াবে৷ সাথে সাথে প্রচুর খেদমাত করবে৷ যাতে বুজতে না পারে, তুমি তার জন্য জাল পেতে রাখছো৷ দু'মাসের মধ্যে ফল না পেলে আমাকে বলবে"৷

মাহিমা মহাখুশি৷ তার মতে, যেনো একটি নির্দয় বিষাক্ত সাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার সোপান মিলে গেলো!

কিন্তু মাহিমা সেই আগের মতো নেই৷ এখন প্রতিদিন ফজরের নামায পড়েই শুরু হয় তার কাজের প্লান৷ সকালের বাসি থালাগুলো ধোয়া থেকে নিয়ে রাণ্না- বান্না, ঘর ঝাড়ু সব কিছু এখন একাই করে৷ গোছলের পর শ্বাশুরির কাপড়গুলোও ধুয়ে দেয়৷ শ্বাশুরি মাহিমার মাঝে এক আমূল পরিবর্তন লক্ষ করছেন৷ বউয়ের প্রতি এখন তিনি অতি দুর্বল৷ বড় বড় বিষয়গুলোকেও তুচ্ছ করে দেখছেন তিনি৷ ভাবছেন, এ বয়সের মেয়েদের এতটুকু ভুল হতেই পারে৷ ধীরে ধীরে মাহিমাকে তিনি নিজের মেয়ের চেয়েও বেশি আপন ভাবতে শুরু করেছেন৷ মাহিমা চোখের আড়াল হলে তিনি অস্থীর হয়ে যান৷ অসুস্থ হলে যেনো নিজের কলিজাটা বের হয়ে যায়৷ অসুস্থতার সময় মাহিমাও এখন বাবার বাড়ি যাওয়ার প্রয়োজনবোধ করে না৷


একদিনের কাহিনি৷ মাহিমা আজ ভোরে উঠে নি৷ শরির কিছুটা অসুস্থ৷ বৃদ্ধা শ্বাশুরি মাহিমাকে ডাকলেন না৷ নিজেই সব কাজ সম্পূর্ণ করলেন৷ সকাল সাড়ে আটটার মাঝেই রাণ্না- বান্নাসহ সকল কামই শেষ করলেন নিজ হাতে৷ তখনও ডাকলেন না বউজিকে৷ ঠিক আদুরে মায়ের মতো ভাবলেন, আরেকটু বিশ্রাম নিক৷ কিছুক্ষণ পর মায়াবি কণ্ঠে মাহিমাকে ডাকলেন৷ চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে পানি- নাশ্তার পাত্রগুলো হাতে নিয়ে বৃদ্ধা শ্বাশুরি খাটের কোণে দাঁড়িয়ে৷ ধড়মড় করে মাহিমা উঠে বসলো৷ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ছোট কাঁটাটি নয়টা বরাবর৷

আম্মা! আপনার এতো কষ্ট করার কী দরকার ছিলো? আশ্চর্য, আমাকে ডাকও তো দিতে পারতেন!? না, সমস্যা নেই৷ কষ্ট তো করতেই হবে৷ জীবন মানেই হলো, কষ্ট- শান্তি৷ তদুপরি এতটুকু কাজের মাঝে কী-ই বা কষ্ট? তুমি অসুস্থ, তাই ডাকার প্রয়োজন মনে করি নি৷ যাক, এখন উঠো৷ হাত- মুখ ধুয়ে নাশ্তা করে নাও৷ নতুবা পেটে গ্যাস জমবে৷

কথাগুলো বলতে বলতে বৃদ্ধা মাহিমার মশারিটাও খুলতে শুরু করলো৷ মাহিমা বারণ করে নিজেই গোছালো৷

দু'জন এক সাথেই খানা খেতে বসলো৷ আজ নিশ্চুপ মাহিমা৷ বৃদ্ধার কাজে সে হতভম্ব৷ তদুপরি এতোদিনের পরস্পর মেলেমেশার প্রভাবে বৃদ্ধার প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা জমে গেছে৷ হৃদয়ের মণিকোঠায় বৃদ্ধাকে আপন মায়ের মতোই মনে করছে সে৷ শ্বাশুরির মায়া- স্নেহে মায়ের কথা যেনো বেমালুম ভুলেই গেছে৷

বিকেল বেলা৷ রিংটোন বেজে উঠলো মুঠোফোনটির৷ কেমন আছো মা? জি, মা! ভালো আছি৷ তুমি কেমন আছো? আমিও ভালো আছি৷ কিন্তু তুমি তো শ্বাশুরির আদর পেয়ে আমাদের কথা স্মরণই করো না৷ এক সপ্তাহ হয়ে গেলো৷ কোনো ফোন নেই! না, মা! তোমাদের কি ভুলতে পারি? আসলে তোমার জামাই বাবুর কিছু ব্যস্ততার কারণে তাতে আমিও ফেঁসে গেছিলাম৷ তাই সময় হয় নি মা! ছরি, মা!

             *********************

আজ মাহিমা অনেক চিন্তিত৷ এক মাস পচিশ দিন হয়ে গেলো৷ আর বাকি পাঁচ দিন৷ এতোদিনের জমে উঠা ভালোবাসা কি তাহলে শেষই হয়ে যাবে? অস্থীর সে৷ পুরো রাত বিনিদ্রায় কাটলো তার৷ কী করলো সে? কেনো বাবার কাছ থেকে জীবননাশক ঔষুধ আনলো? দু:খে তার রুহটা কেঁপে উঠছে বারবার৷ জীবনের প্রথম যেনো শ্বাশুরির কদর বুঝতে পারলো সে৷

সকালে বাবাকে দেখার ছুতো দিয়ে চলে আসলো বাড়ি৷ বাবার পায়ে পরে গেলো৷ আজকের কাণ্না তার আফসোসের কাণ্না৷ একজন ভালোবাসার মানুষকে হারানোর ভয়ে কাঁদছে সে৷ কী হয়েছে মা তোমার? বাবা! আমি ভুল করে ফেলেছি৷ কী ভুল করেছো? বলো মা! তোমার থেকে বিষধর ওষুধ নিয়ে তা শ্বাশুরিকে খাইয়ে দিয়েছি৷ তোমার কথা মতো আর পাঁচ দিন পর হারিয়ে যাবে আমার জীবন- মা৷ কোনো ব্যবস্থা করো বাবা!

বাবা একটু মুচকি হাসলেন৷ নিজের কৌশলের সফলতার জন্য দরবারে এলাহিতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন৷ মাহিমার মাথা দুলিয়ে বলতে শুরু করলেন- "দেখো মা! দীর্ঘ জীবন নায়ের অভিজ্ঞ মাঝি আমরা৷ ঢেউ- উত্তালের হালাত আমরা বুঝি৷ তোমাদের মতো বয়স আমাদেরও ছিলো৷ অনেক কিছুর জ্ঞানই আমাদের আছে৷ যৌবনের ভারে যা যুবকদের মস্তিষ্কে চাপা পরে থাকে৷ আমি এতো বোকা নই যে, তোমার শ্বাশুরি মারার বড়ি দিবো৷ তাকে আরো শক্তিশালিনী করতেই দুধ দিয়ে খাওয়ার সে প্রিসক্রিপশন দিয়েছি"৷

বাবার পায়ে এবার চুমু খেতে লাগলো মাহিমা৷ কাঁদতে কাঁদতে বললো, "তোমার মতো গর্বের বাবা যাদের আছে, তাদের জীবনে কোনো ক্ষতিই আসতে পারে না"৷

কিছুদিন পর৷ মাহিমা তখন বাপের বাড়িতে৷ তার বান্ধবি আফসানা কোনো কাজে তার শ্বাশুরির কাছে আসলো৷ শ্বাশুরি প্রাণভরে প্রসংশা করলো মাহিমার৷ কিন্তু কথার ফাঁকে শয়তানের প্ররোচনায় কুটবুদ্ধির উদয় হলো আফসানার মনে৷ মুখ ফসকে মাহিমার পূর্ব ষড়যন্ত্রের কথা বলে দিলো শ্বাশুরি আম্মাকে৷

আফসানা ভাবছিলো, রাগে অগ্নিশর্মা হবেন বৃদ্ধা৷ না, তার ভাবনা উল্টো দিকে গেলো৷ নীরব বসে আছে মাহিমার শ্বাশুরি৷ আপসানাকে বললেন, "তুমি এখন যেতে পারো"৷

মাহিমা ফিরে আসলে শ্বাশুরি তাকে আফসানার কথা জানালেন৷ হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো মাহিমা৷ মনে হলো, সোনালি সংসারে নতুন অগ্নি প্রজ্বলিত হলো৷ না, মাহিমার শ্বাশুরি তা হতে দিলেন না৷ তাকে বুকে জড়িয়ে বললেন, "না, মা! আমি জানি, তুমি আবেগের বশে এমন করেছো৷ নিজের শান্তি কামনায় করেছো৷ এখন তুমি আমার মেয়ে৷ আমি তোমার মা৷ হিংসুকদের হিংসার প্রভাবকে কোনো মা নিজের দিলে স্থান দিতে পারে না৷ কোনো বিদ্বেষি এখন আর আমাদের শান্তির মাঝে আড়াল হতে পারবে না".................

সোনালি সংসার[সম্পাদনা]

সোনালি সংসার: একটি গল্প:

সাঈদ আহমাদ খান


উত্তপ্ত রোদের মাঝে ঠিক দুপুরে মাহিমা বাপের বাড়়িতে পৌঁছলো৷ ক্লান্ত- শ্রান্ত শরির তার৷ চেহারায় কষ্টের ছাপ৷ ফুটন্ত গোলাপের মতো চেহারাটা আজ বড্ড মলিন৷ এ মলিনতা সামান্য সফরের আবহে নয়৷ আজ তার চক্ষুদ্বয় ভিন্ন কোনো যন্ত্রণার পরিচয় দিচ্ছে৷

মাহিমা! কী খবর তোমার মা!? না বাবা! কিছু হয় নি৷ তাহলে সপ্তাহের মাঝে একাকি কেনো আসলে? মাহিমার মুখ থেকে কোনো কথা ফুটছে না৷ গণ্ডদেশ বেয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরলো শুধু৷ বলো, কী হয়েছে? না, বলবো না৷ তাহলে কাঁদছো কেনো?

মাহিমা৷ বড়লোকের মেয়ে তিনি৷ বাবা একজন সরকারি ডাক্তার৷ দাওয়াত ও তাবলিগে সময় লাগানোর সুবাদে তিনি একজন দ্বিনদারই বটে৷ ছয় মাস হলো তার বিবাহ হয়েছে৷ বাবা শিক্ষিত বলে মাস্টার্স পড়ুয়া ছেলের কাছেই মেয়েটাকে বিবাহ দিয়েছেন৷ স্বামি খালেদ আহমাদ একটি সরকারি অফিসের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন৷ পরিবারের তিনিই বড় ছেলে৷ ছোট তিন বোনের বিবাহ হয়েছে আরো আগে৷ বাসায় তার মায়ের সাথে শুধু স্ত্রীই থাকে৷ টুকটাক কাজ ছাড়া অতিরিক্ত ঝামেলা নেই বলে কাজের বুয়া রাখার প্রয়োজন মনে করেন নি৷ তবে বেহুদা পয়সা খরচের বিরুধি তার মা- ই৷

খানাদানা- পাকানো, ঘরটা পরিপাটি করে রাখা আর সামান্য কিছু কাপড়- চোপড় ধোয়া- এই তাদের প্রতিদিনের কাজ৷ সারাদিনের এতটুকু কাজ করতেই বৃদ্ধা শ্বাশুরি হাঁপিয়ে উঠেন৷ তাই বউজির সহযোগিতা ছাড়া পেরে উঠেন না তিনি৷ ধনি বংশের মেয়ে হওয়ার কারণে কাজে অভ্যস্ত নয় মাহিমা৷ তাই খুঁটিনাটি বিষয় নিয়েই বেঁধে যায় বউ- শ্বাশুরির ঝগড়া৷ মাঝে মাঝেই তাদের উঁচু আওয়াজ চার দেয়াল ভেদ করে পৌঁছে যায় পড়শির কামরায়৷

নাহ, আর সহ্য হয় না মাহিমার৷ পার্শবর্তি বান্ধবির থেকে পরামর্শ নেয় সে৷ বান্ধবি তাকে শ্বাশুরিকে শাষাণোর পরামর্শ দেয়৷ এতেও কোনো ফলপ্রসূ হয় না৷ কী করবে- ভেবে পায় না সে!

ঠিক দুপুরে মনক্ষুণ্ন হয়ে শুয়ে আছে মাহিমা৷ আজ সারাদিনই বিছানায় গড়াগড়ি করেই কাটিয়েছে৷ মনটা তার বড়ই ব্যথাতুর৷ একটু পরই খালেদ অফিস থেকে ফিরবে৷ বাসার সব কিছুই এলোমেলো৷ শ্বাশুরি আবার শুরু করেছে চেচামেচি৷ এবার আর হচ্ছে না৷ হঠাৎ তার মাথায় বুদ্ধি আসলো.........

পরদিনই অসুস্থতার ভান করে চলে আসে বাবার বাড়ি৷ বাবা বিচক্ষণতার সাথেই আঁচ করলেন, কিছু একটা ঘটেছে৷ নতুবা এ সময়ে আসার কী- ই বা কারণ থাকতে পারে? তাই পেরেশানির কারণ জিজ্ঞেস করলো বাবা৷ বহু পীড়াপীড়িতে অবশেষে মুখ খুলতে বাধ্য হলো মাহিমা৷ বাবাকে বললো, "একটি অষুধ দাও৷ যা খেয়ে বুড়ি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরবে"৷ বাবা ব্যাপারটি বুঝতে পারলেন৷ একজন দক্ষ পিতার মতোই ভাবলেন, কী জওয়াব দেওয়া যায় মেয়েকে! তৎক্ষণাৎ তিনি মেয়ের পক্ষ নিলেন৷

কিন্তু কোনো বুদ্ধিমান বাবা নিজ মেয়ের শ্বাশুরির অপমৃত্যু কামনা করতে পারেন না৷ বহু চিন্তার পর তিনি মেয়েকে একটি ওষুধ দিলেন৷ সাথে বললেন- "এবার গিয়ে শ্বাশুরিকে দুধের সাথে মিশিয়ে এ ওষুধটি খাওয়াবে৷ সাথে সাথে প্রচুর খেদমাত করবে৷ যাতে বুজতে না পারে, তুমি তার জন্য জাল পেতে রাখছো৷ দু'মাসের মধ্যে ফল না পেলে আমাকে বলবে"৷

মাহিমা মহাখুশি৷ তার মতে, যেনো একটি নির্দয় বিষাক্ত সাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার সোপান মিলে গেলো!

কিন্তু মাহিমা সেই আগের মতো নেই৷ এখন প্রতিদিন ফজরের নামায পড়েই শুরু হয় তার কাজের প্লান৷ সকালের বাসি থালাগুলো ধোয়া থেকে নিয়ে রাণ্না- বান্না, ঘর ঝাড়ু সব কিছু এখন একাই করে৷ গোছলের পর শ্বাশুরির কাপড়গুলোও ধুয়ে দেয়৷ শ্বাশুরি মাহিমার মাঝে এক আমূল পরিবর্তন লক্ষ করছেন৷ বউয়ের প্রতি এখন তিনি অতি দুর্বল৷ বড় বড় বিষয়গুলোকেও তুচ্ছ করে দেখছেন তিনি৷ ভাবছেন, এ বয়সের মেয়েদের এতটুকু ভুল হতেই পারে৷ ধীরে ধীরে মাহিমাকে তিনি নিজের মেয়ের চেয়েও বেশি আপন ভাবতে শুরু করেছেন৷ মাহিমা চোখের আড়াল হলে তিনি অস্থীর হয়ে যান৷ অসুস্থ হলে যেনো নিজের কলিজাটা বের হয়ে যায়৷ অসুস্থতার সময় মাহিমাও এখন বাবার বাড়ি যাওয়ার প্রয়োজনবোধ করে না৷


একদিনের কাহিনি৷ মাহিমা আজ ভোরে উঠে নি৷ শরির কিছুটা অসুস্থ৷ বৃদ্ধা শ্বাশুরি মাহিমাকে ডাকলেন না৷ নিজেই সব কাজ সম্পূর্ণ করলেন৷ সকাল সাড়ে আটটার মাঝেই রাণ্না- বান্নাসহ সকল কামই শেষ করলেন নিজ হাতে৷ তখনও ডাকলেন না বউজিকে৷ ঠিক আদুরে মায়ের মতো ভাবলেন, আরেকটু বিশ্রাম নিক৷ কিছুক্ষণ পর মায়াবি কণ্ঠে মাহিমাকে ডাকলেন৷ চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে পানি- নাশ্তার পাত্রগুলো হাতে নিয়ে বৃদ্ধা শ্বাশুরি খাটের কোণে দাঁড়িয়ে৷ ধড়মড় করে মাহিমা উঠে বসলো৷ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ছোট কাঁটাটি নয়টা বরাবর৷

আম্মা! আপনার এতো কষ্ট করার কী দরকার ছিলো? আশ্চর্য, আমাকে ডাকও তো দিতে পারতেন!? না, সমস্যা নেই৷ কষ্ট তো করতেই হবে৷ জীবন মানেই হলো, কষ্ট- শান্তি৷ তদুপরি এতটুকু কাজের মাঝে কী-ই বা কষ্ট? তুমি অসুস্থ, তাই ডাকার প্রয়োজন মনে করি নি৷ যাক, এখন উঠো৷ হাত- মুখ ধুয়ে নাশ্তা করে নাও৷ নতুবা পেটে গ্যাস জমবে৷

কথাগুলো বলতে বলতে বৃদ্ধা মাহিমার মশারিটাও খুলতে শুরু করলো৷ মাহিমা বারণ করে নিজেই গোছালো৷

দু'জন এক সাথেই খানা খেতে বসলো৷ আজ নিশ্চুপ মাহিমা৷ বৃদ্ধার কাজে সে হতভম্ব৷ তদুপরি এতোদিনের পরস্পর মেলেমেশার প্রভাবে বৃদ্ধার প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা জমে গেছে৷ হৃদয়ের মণিকোঠায় বৃদ্ধাকে আপন মায়ের মতোই মনে করছে সে৷ শ্বাশুরির মায়া- স্নেহে মায়ের কথা যেনো বেমালুম ভুলেই গেছে৷

বিকেল বেলা৷ রিংটোন বেজে উঠলো মুঠোফোনটির৷ কেমন আছো মা? জি, মা! ভালো আছি৷ তুমি কেমন আছো? আমিও ভালো আছি৷ কিন্তু তুমি তো শ্বাশুরির আদর পেয়ে আমাদের কথা স্মরণই করো না৷ এক সপ্তাহ হয়ে গেলো৷ কোনো ফোন নেই! না, মা! তোমাদের কি ভুলতে পারি? আসলে তোমার জামাই বাবুর কিছু ব্যস্ততার কারণে তাতে আমিও ফেঁসে গেছিলাম৷ তাই সময় হয় নি মা! ছরি, মা!

             *********************

আজ মাহিমা অনেক চিন্তিত৷ এক মাস পচিশ দিন হয়ে গেলো৷ আর বাকি পাঁচ দিন৷ এতোদিনের জমে উঠা ভালোবাসা কি তাহলে শেষই হয়ে যাবে? অস্থীর সে৷ পুরো রাত বিনিদ্রায় কাটলো তার৷ কী করলো সে? কেনো বাবার কাছ থেকে জীবননাশক ঔষুধ আনলো? দু:খে তার রুহটা কেঁপে উঠছে বারবার৷ জীবনের প্রথম যেনো শ্বাশুরির কদর বুঝতে পারলো সে৷

সকালে বাবাকে দেখার ছুতো দিয়ে চলে আসলো বাড়ি৷ বাবার পায়ে পরে গেলো৷ আজকের কাণ্না তার আফসোসের কাণ্না৷ একজন ভালোবাসার মানুষকে হারানোর ভয়ে কাঁদছে সে৷ কী হয়েছে মা তোমার? বাবা! আমি ভুল করে ফেলেছি৷ কী ভুল করেছো? বলো মা! তোমার থেকে বিষধর ওষুধ নিয়ে তা শ্বাশুরিকে খাইয়ে দিয়েছি৷ তোমার কথা মতো আর পাঁচ দিন পর হারিয়ে যাবে আমার জীবন- মা৷ কোনো ব্যবস্থা করো বাবা!

বাবা একটু মুচকি হাসলেন৷ নিজের কৌশলের সফলতার জন্য দরবারে এলাহিতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন৷ মাহিমার মাথা দুলিয়ে বলতে শুরু করলেন- "দেখো মা! দীর্ঘ জীবন নায়ের অভিজ্ঞ মাঝি আমরা৷ ঢেউ- উত্তালের হালাত আমরা বুঝি৷ তোমাদের মতো বয়স আমাদেরও ছিলো৷ অনেক কিছুর জ্ঞানই আমাদের আছে৷ যৌবনের ভারে যা যুবকদের মস্তিষ্কে চাপা পরে থাকে৷ আমি এতো বোকা নই যে, তোমার শ্বাশুরি মারার বড়ি দিবো৷ তাকে আরো শক্তিশালিনী করতেই দুধ দিয়ে খাওয়ার সে প্রিসক্রিপশন দিয়েছি"৷

বাবার পায়ে এবার চুমু খেতে লাগলো মাহিমা৷ কাঁদতে কাঁদতে বললো, "তোমার মতো গর্বের বাবা যাদের আছে, তাদের জীবনে কোনো ক্ষতিই আসতে পারে না"৷

কিছুদিন পর৷ মাহিমা তখন বাপের বাড়িতে৷ তার বান্ধবি আফসানা কোনো কাজে তার শ্বাশুরির কাছে আসলো৷ শ্বাশুরি প্রাণভরে প্রসংশা করলো মাহিমার৷ কিন্তু কথার ফাঁকে শয়তানের প্ররোচনায় কুটবুদ্ধির উদয় হলো আফসানার মনে৷ মুখ ফসকে মাহিমার পূর্ব ষড়যন্ত্রের কথা বলে দিলো শ্বাশুরি আম্মাকে৷

আফসানা ভাবছিলো, রাগে অগ্নিশর্মা হবেন বৃদ্ধা৷ না, তার ভাবনা উল্টো দিকে গেলো৷ নীরব বসে আছে মাহিমার শ্বাশুরি৷ আপসানাকে বললেন, "তুমি এখন যেতে পারো"৷

মাহিমা ফিরে আসলে শ্বাশুরি তাকে আফসানার কথা জানালেন৷ হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো মাহিমা৷ মনে হলো, সোনালি সংসারে নতুন অগ্নি প্রজ্বলিত হলো৷ না, মাহিমার শ্বাশুরি তা হতে দিলেন না৷ তাকে বুকে জড়িয়ে বললেন, "না, মা! আমি জানি, তুমি আবেগের বশে এমন করেছো৷ নিজের শান্তি কামনায় করেছো৷ এখন তুমি আমার মেয়ে৷ আমি তোমার মা৷ হিংসুকদের হিংসার প্রভাবকে কোনো মা নিজের দিলে স্থান দিতে পারে না৷ কোনো বিদ্বেষি এখন আর আমাদের শান্তির মাঝে আড়াল হতে পারবে না".................

সাঈদ আহমাদ খান রাহমানি (আলাপ) ১৮:৩৪, ৯ জুলাই ২০১৮ (ইউটিসি)[উত্তর দিন]

বাইতুল মুকাদ্দাস; বনাম কুফুরি ষড়যন্ত্র[সম্পাদনা]

বাইতুল মুকাদ্দাস বনাম কুফুরি ষড়যন্ত্র: সাঈদ আহমাদ খান (1ম পার্ট)

বাইতুল মুকাদ্দাস মুসলিম জাতির তৃতীয় পবিত্র ধর্মীয় স্থান৷ প্রতিটি মুসলিমের হৃদয়ের গহীনে রয়েছে এর প্রতি গভীর ভালোবাসা৷ একে ঘীরে বর্ণিত হয়েছে কুরআনে কারিমের বহু আয়াত আর হাদিস শরিফের অসংখ্য রেওয়ায়েত৷ হিজরি ১৭ সনে দ্বিতীয় খলিফায়ে রাশেদ হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. 'র বাইতুল মুকাদ্দাস বিজয়ের সুবাদে তা পরিণত হয়েছে মুসলিম জাতির এক ধর্মীয় অনুভূতির কেন্দ্রস্থলে৷ কিন্তু দু:খের বিষয়, রাসুলে আরাবি সা.'র যুগ থেকেই কুফুরি শক্তি মুসলিমদের নির্মূলে ছিঁড়ে যাওয়া মালার মতো একের পর এক আঘাত হেনে এসেছে৷ বিশেষকরে, মানব ইতিহাসের এক কালো অধ্যায় রচনাকারি ইহুদি জাতি বাইতুল মুকাদ্দাসকে ছিনিয়ে নিতে ষড়যন্ত্রের নীল নকশা আঁকছে বহু পূর্ব থেকেই৷ অবশেষে ৭ই ডিসেম্বার ২০১৭ তে আমেরিকা একে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণার মাধ্যমে যেনো মুসলিম - হৃদয়ে ছুড়ে মারলো শেষ বিষাক্ত তীর৷ তাই নতুনকরে শুরু হলো মযলুমানের আর্তচিৎকার------৷

এক:

"আল কুদস" কী? কী- ই বা তার ফযিলাত?

"আল কুদুস" এতে বাইতুল মুকাদ্দাস এবং এর পূর্ণ এলাকাই অন্তর্ভূক্ত৷ তাই "কুদস" শব্দটির সাথে কুদস শহরসহ আরো তিনটি জায়গাও অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত৷ ১, মাসজিদে আকসা এবং এর সকল আঙ্গিনা ও দেয়াল৷ ২, কুব্বাতুস সাখরা৷ ৩, জামে মুছল্লা৷ তবে শুধু "মাসজিদে আকসা" বললে এ তিনো স্থানই গণ্য হয়ে যায়৷ "মাসজিদে আকসা কে বারে ম্যাঁ জালিস হাকায়েক" , পৃষ্ঠা: ৭

কুরআনে কারিমে মাসজিদে আকসার বর্ণনা:

১, 

سبحان اللذي أسري بعبده ليلا من المسجد الحرام إلي المسجد الأقصي الذي باركنا حوله لنريه من أياتنا، الأية ـ অর্থ- পবিত্রতা বর্ণনা করছি ঐ সত্ত্বার যিনি নিজ প্রিয় বান্দাকে (মে'রাজের) রাতে মাসজিদে হারাম থেকে মাসজিদে আকসা ভ্রমণ করিয়েছেন, যার আশপাশ বরকতময়; তাঁর কতিপয় নিদর্শনাবলি দর্শনের জন্য৷ সুরা ইসরা- ১ ড. ঈসা আল কদুমি এ আয়াতের প্রেক্ষাপটে লিখেছেন- মাসজিদে আকসা সম্পর্কীয় অন্য কোনো আয়াত না থাকলেও এ আয়াতটিই শুধু তার ফযিলাত বর্ণনার জন্য যথেষ্ট হতো৷

২, কুদস হলো, আম্বিয়ায়ে কেরামের শহর৷ যার পুরাতন নাম হলো, "কিনআন"৷ এটাই হলো, সুলাইমান, দাউদ, শুআইব আ. 'র মতো মহান নবীগণের প্রিয় শহর৷ সুলাইমান আর দাউদ আ.'র আলোচনায় এর বর্ণনা কুরআনে এভাবে এসেছে- و ورث سليمان داود সুরা নামল- ১৬ মুসলিমগণ এসকল আম্বিয়ায়ে কেরামের উত্তরসূরি হিসেবে মাসজিদে আকসা তাদেরই একচ্ছত্র হক৷

হাদিস শরিফে মাসজিদে আকসার আলোচনা: ১, আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত৷ আল্লাহর রাসুল সা. বলেছেন- لا تشد الرحال إلا إلي ثلاثة مساجد ـ المسجد الحرام، و مسجد الرسول صلي الله عليه و سلم، و المسجد الأقصي. অর্থ- তিনটি মাসজিদের উদ্দেশ্যেই কেবল সফর করলে সওয়াব পাওয়া যাবে৷ মাসজিদে হারামা, মাসজিদে নববি আর মাসজিদে আকসা৷ বুখারি- ১১৮৯, দারিমি- ১৪৬১, আবু দাউদ- ২০৩৩

২, ইবনে মাজায় বর্ণিত, হযরত মাইমুনা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর নবি সা. কে বললাম- আমাদেরকে মাসজিদে আকসার বর্ণনা দিন৷ আল্লাহর রাসুল সা. তখন বললেন- এটা তো হাশরের ময়দান৷ আলবানি রহ. এ রেওয়ায়েতটিকে সহিহ বলেছেন৷ কুরআন ও হাদিসের এমন অসংখ্য রেওয়ায়েত ভরপুর৷ কিন্তু ক্ষুদ্র এ প্রবন্ধে বিস্তারিত বলা অসম্ভব৷ দিবালোকে সূর্যের মতো আলো দিয়ে এসব আয়াত ও হাদিস যেনো চিৎকার করে বলছে, বাইতুল মুকাদ্দাস কেবল মুসলিমদের হক৷ একৈশ্বরে বিশ্বাসী ঐসব দিনকানাগণ তাদের "ইশ্বর"'র এ পবিত্র বাণিগুলো দেখতে না পেলে সূর্যের কী আসে যায়? সুলাইমান আর দাউদ আ.'র মতো মহান নবিগণকে নিজেদের নবি দাবি করেও তাদের ব্যাপারে অসত্য রটানো আর অপবাদ আরোপই কি ওরাছাতের পরিচয়? না, এটা হতে পারে না৷ ইতিহাস বলে, বাইতুল মুকাদ্দাস আদম আ. 'র যামানা থেকেই মাসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে৷ খৃস্ট পূর্ব ১৮৫০ সনেই মুসলিম জাতির পিতামহ ইবরাহীম আ. এখানে এসেছিলেন৷ তাই বলি, নবিগণের ব্যাপারে সৎ আকিদায় বিশ্বাসী মুসলিমগণই ওমর রা. 'র সংস্করণকৃত আজকের এই বাইতুল মুকাদ্দাসের যোগ্য উত্তরসূরি৷ "আকসা কে আঁসু" ২২০- ২২

বাইতুল মুকাদ্দাস বনাম কুফুরি ষড়যন্ত্র: (2য় পার্ট)

দুই:

কুফুরি ষড়যন্ত্র: পূর্বেই বলেছি, মুসলিমদের একনিষ্ঠ এ হক কব্জা করতে কাফেরগণ তাদের পূর্ণ শক্তি দিয়ে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে৷ অপকৌশল আর অপচেষ্টার ভয়ঙ্কর কাঁটা বিছিয়েছে মুসলিমদের মসৃণ সব পথগুলোতে৷ ইহুদিদের বন্ধুগোষ্ঠি - খৃস্টান জাতিও তাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এক সঙ্গে কাজ করে আসছে৷ তাই তো ইতিহাস সাক্ষি, ফ্রান্স, জার্মানি আর ব্রিটেনের মতো দেশেগুলো ১৯৯৬ সালেই কুদসকে ইসরাইলের রাজধানি বানাতে আওয়ায উঠিয়েছে৷ এমনিভাবে একই সালে জাতি সঙ্গের প্রধান সেক্রেটারিও ইসরাইলের পক্ষে মুখ খুলেছে৷ "আল কুদস ফি দা- ইরাতিল হাদাস" - ১/ ১৭৯-৮০ ১৯৮০ সালে এমেরিকা পশ্চিম কুদসকে ইসরাইলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ঘোষণা করেছে৷ এ ঘটনার নাম দিয়েছে তারা "The great Qudus project" ৷ "হাযারায়ে সোওম কি কিয়ামাতে সোগরা" পৃষ্ঠা- ৯৮

চির অভিশপ্ত, ধূর্ত এ জাতির অবাধ স্বার্থে অন্যান্য কাফেরগণও (তথা, নাস্তিক- মুরতাদ এবং ক্ষমতার লোভী আধুনিক নামধারি কিছু মুসলিম শাষকবৃন্দ) নিজেদেরকে সপে দিচ্ছে৷ স্বল্প পরিসরে আর সেদিকে যেতে চাচ্ছি না৷ এভাবেই সমগ্র কুফুরি শক্তি মিলে মুসলিমদেরকে তাদের অজান্তেই পাতানো জালে আটকে দিচ্ছে৷

  • ইহুদি চক্রান্ত্র:

১, ইহুদিগণ চিরকাল বাইতুল মুকাদ্দাসকে তাদেরই হক ভেবে আসছে৷ তাদের ধারণা হলো, যেদিন তারা বাইতুল মুকাদ্দাসকে পূর্ণরুপে দখল করতে পারবে, সেদিন থেকে তাদের বিজয়ের পূর্ণ ধারা শুরু হয়ে যাবে৷ তারা মনে করে, তাদের রব মাসিহে দাজ্জাল নাকি এ পবিত্র ভূমি থেকেই পুরো বিশ্বকে শাষণ করবেন৷ আর এ "মহাউদ্দেশ্য" বাস্তবায়নেই তারা যুগে যুগে খৃস্টানদেরকে প্ররোচিত করে আসছে৷ খৃস্টান- সহযোগিতায় বাইতুল মুকাদ্দাসে হামলা করে ক্রুসেড যুদ্ধ বাঁধিয়েছে৷ ইতিহাস বলে, হিজরি ৪৯৩ সনে ইহুদিগণ বাইতুল মুকাদ্দাসকে মুসলিমদের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয়৷ এর ঠিক নব্বই বছর পর হিজরি ৫৮৩ সনে খলিফায়ে রাশেদ হযরত সুলতান সালাহুদ্দিন আউয়ুবি রহ. পুনরায় একে উদ্ধার করেন ইহুদিদের নির্মম মুষ্ঠি থেকে৷ ৬৫৮ হিজরিতে "আইনে জালুত" যুদ্ধে তাতারিদের হাত থেকে রক্ষা করা হয়৷ এরপর ৯৩৪ হিজরিতে শকুনের কালো থাবা থেকে হেফাযত করতে বাইতুল মুকাদ্দাসকে উসমানি খলিফাগণ নিজেদের অধীন করে নেন৷ পরিশেষে ১৯১৭ সালে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ চলাকালীন আবারও কুটকৌশলের মহাপণ্ডিত এ ইহুদি জাতি মাসজিদে আকসাকে ফেলাফাতে উসনানিয়া থেকে নিজেদের করায়েত্ত্বে নেওয়ার প্রয়াস চালায়৷ অবশেষে ১৯২৪ সালে উসমানি খেলাফাত ধ্বংস করে বাইতুল মাকদিসের রাস্তা পরিস্কার নেয় তারা৷ "আকসা কে আঁসু"- পৃষ্ঠা: ২০

এভাবেই তারা ক্ষণে ক্ষণে বাইতুল মুকাদ্দাস আয়ত্বে নিতে প্রচেষ্টা চালিয়েছে৷ লক্ষ্য হলো, বাইতুল মুকাদ্দাস বিজয় করে প্রথমে মধ্যপ্রাচ্যে এরপর পুরো মুসলিম বিশ্বে নিজেদের দাপট প্রতিষ্ঠা করা৷ আর তাই ব্রিটেন, ফ্রান্স আর আমেরিকাকে বরাবর উসকানি দিয়ে চলেছে৷ অবশেষে বাইতুল মুকাদ্দাসকে ইসরাইলের রাজধানি হিসেবে ঘোষণা করেছে, সমালোচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্প৷

২,এখানে আল্লামা সাইয়িদ সালমান নদভি দা.বা.'র একটি লেখার তরজমা উল্লেখ করা সমুচিন মনে করছি- ইহুদিরা মনে করে,"হায়কালে সুলাইমানি" নির্মাণ করে তাদের প্রতিশ্রুত দাজ্জালের পথকে সুগম করতে পারবে৷ ("হায়কালে সুলাইমানি" বলতে তারা হযরত সুলাইমান আ.'র যুগে নির্মিত মাসজিদে আকসার সেই পুরাতন নকশাকে বুঝায়৷ "আকসা কে আঁসু"- পৃষ্ঠা:২১৯) তাদের মতে, "হায়কালে সুলায়মানি" নির্মিত হলে তাদের খোদা মাসিহে দাজ্জালের আগমন ঘণিয়ে আসবে৷ আর তাতে মুসলিমদের উপর বিজয়ের পথ স্পষ্ট হয়ে যাবে৷ তাই মাসজিদে আকসা ধ্বংস করে তদস্থলে "হায়কাল" নির্মাণ করতে চাচ্ছে৷ আর এ আকাঙ্খা পূর্ণ করতে তারা তিন ধরণের কর্ম- পদক্ষেপ নিয়েছেন৷ যেগুলোর প্রারম্ভ হয়েছে আজ থেকে এক যুগেরও পূর্বে-

ক, মাসজিদে আকসার নীচে খনন করা হয়েছে৷ ১৯৯৫ সালেই দু'টি বড় বড় কম্পানিকে এ কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে৷ খ, মাসজিদে আকসার ভিত্ত্বি দূর্বল করতে এর আশেপাশে অসংখ্য সুরঙ্গ তৈরি করা হয়েছে৷ ১৯৯৬ সালে শুরু হয় এ কাজের ধারা৷ গ, মুসলিম আর ইহুদি বসতির মধ্যখানে নির্মাণ করা হয়েছে এক বিশাল ইট- পাতরের প্রাচীর৷ যার প্রতিটি অংশে মুসলিম স্বাধীনতাকামি মুজাহিদদের কর্মতৎপরতা উপলব্ধি করতে ফিট করা হয়েছে সি সি ক্যামেরা৷ আর এভাবেই বাস্তব হতে চলেছে, কুরআনের ভবিষ্যৎ বাণি- لا يقاتلونكم جميعا إلا في قري محصنة أو من وراء جدر অর্থ: "তারা (শত্রুগণ) তোমাদের সাথে সংরক্ষিত এলাকা কিংবা মজবুত প্রাচিরের ওপার ছাড়া যুদ্ধ করবে না"৷ সুরা হাশর- ১৪

"হাযারায়ে সোওম কি কিয়ামাতে ছোগরা" পৃষ্ঠা- ৫৪- ৫৮ থেকে সংক্ষেপিত৷
বাইতুল মুকাদ্দাসের পূর্ব তীর (অংশ) থেকেও এখন মুসলিমদের হটাতে নির্যাতনের স্টীম রোলার চালাচ্ছে তারা৷ এভাবেই তারা ইসলাম মাড়িয়ে নিজেদের স্বপ্নের পাখা উড়াতে হিংস্র বাঘের মতো ছুটে চলছে৷

হায় আফসোস! আজ সমস্ত কুফুরি জাতি মুসলিম ধ্বংসের পায়তারা নিয়ে পূর্ণ শক্তিতে মাঠে নেমেছে৷ আর মুসলিম জাতি নাকি অলসতার চাদর মুড়ি দিয়ে যেনো অনন্তকালের নিদ্রায় ডুব দিয়েছে৷ একদিকে শত্রুপক্ষ যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে বারুদের অগ্নি নিক্ষেপ করছে৷ অন্যদিকে মুসলিমগণ তাদেরই পা চেটে আপন ভাইয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছে৷ নিজের সামান্য স্বার্থ রক্ষার্থে বিকিয়ে দিচ্ছে দ্বিন ও ধর্ম৷ ভয়ঙ্কর নদির ভাঙ্গা কুলে দণ্ডায়মান জাতিকে উদ্ধারে প্রয়োজন আজ এমন একদল সুলতান আউয়ুবির যারা হবে, ঈমানি জোশ ও জযবায় ভরপুর৷ সঠিক ও পরিকল্পিত রাজনৈতিক টেকনিকেলে দক্ষ৷ যারা মাঠে নামবে রক্ত আর কৌশল উপহারের দীপ্ত সাহস নিয়ে৷ হায়, কবে আসবে তুমি, সালাহুদ্দীন আউয়ুবি?!

সাঈদ আহমাদ খান রাহমানি (আলাপ) ১৮:৩৬, ৯ জুলাই ২০১৮ (ইউটিসি)[উত্তর দিন]

একটি ইলমি সফর; পান্জাব, হরিয়ানা প্রদেশ[সম্পাদনা]

বহু ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থানের সমারোহ পান্জাবে কয়েকদিন

            সাঈদ আহমাদ খান










সূচিপত্র: ১,গোল্টেন টেম্পল ২,ওয়াগা বর্ডার ৩,সারহিন্দ, মুজাদ্দিদে আলফে সানির মাযার মোবারক ৪,আম্বিয়ায়ে কেরামের মাযার









একটি সফর পান্জাব ও হরিয়ানা প্রদেশ দেখা হলো নবিদের কবরসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান:

১- গোল্ডেন টেম্পল:

রমযানের উনত্রিশতম দিন৷ কিছু সাথিদের যৌথ উদ্যোগে একটি সফরের সিদ্ধান্ত হলো৷ কথা মতো তিরিশ রমযানের পরই রওনা হলাম৷ সেদিন ছিলো শাওয়ালের প্রথম তারিখ৷ আমাদের এখানে ঈদের দিন৷ দেওবন্দ স্টেশন থেকে ট্রেনে প্রায় নয় ঘণ্টা থেকে অবশেষে পৌঁছলাম পান্জাব প্রদেশের অমৃতসর জেলায়৷ অমৃতসর জংশন থেকে বিশ রুপিতে পৌঁছলাম ঐতিহাসিক "গোল্ডেন টেম্পল"৷

পান্জাব- এটা ফার্সি শব্দ ৷ "পাঞ্জ" (হিন্দিতে 'পাঁঞ্চ) (পাঁচ) এবং "আব" (পানি) থেকে এই নামকরণ করা হয়েছে। যার অর্থ হলো, পাঁচটি পানিয় ধারা৷ পাঁচটি নদী দ্বারা বিধৌত হওয়ায় 'পাঞ্জাব' নামের উদ্ভব হয়েছে৷ নদি পাঁচটি হলো, ঝিলাম, চেনাব, রাভি, বিপাশা এবং শতদ্রু। এসব নদী, সিন্ধু নদের শাখা।

অমৃতসরের প্রধান আকর্ষণ হলো গোল্ডেন টেম্পল৷ যাকে "হরমন্দির সাহেব" এবং "স্বর্ণমন্দির"ও বলে। ১৫০২ খ্রিস্টাব্দে লাহোর থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে জি টি রোডের ধারে এক প্রকাণ্ড জলাশয়ের ধারে, শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরুনানক একটি মন্দির গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন। এই সময় তিনি এই জলাশয়ের নাম রাখেন অমৃত সায়র। তার থেকেই শহরের নাম হয় অমৃতসর। গুরু নানক জীবদ্দশায় তাঁর এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। ১৫৮৮ খ্রিস্টাব্দে শিখ গুরু অর্জুন সিং অমৃত সায়র-এর ধারে স্বর্ণ মন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ষষ্ঠ গুরু হরগোবিন্দ সিং-এর সময় ৪০০ কেজি সোনার পাতে মুড়ে ফেলা হয় মন্দিরের উপরিভাগ।

১৬০৪ খ্রিস্টাব্দে মন্দিরে শিখদের ধর্মগ্রন্থ গ্রন্থসাহেব স্থাপন করা হয়। হরমন্দির সাহিবে ঢোকার দরজা চারদিকে চারটি। জাতিধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকলের অবারিত দ্বার বোঝাবার জন্যেই নাকি এই চার দুয়ারের নির্মাণ। ইতিহাসে পাওয়া যায়, হিন্দু, শিখ, খৃস্টান আর মুসলমান- এ চার ধর্মের দিকে লক্ষ করেই চারদিকের চারটি গেট বানানো হয়৷ বর্তমান স্বর্ণমন্দিরটি মোট সাড়ে চার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে। শিখধর্মাবলম্বী ছাড়াও সারা পৃথিবী থেকে পর্যটক এই স্বর্ণমন্দিরটি দেখতে আসেন। প্রতিদিন এখানে প্রায় ৯০ হাজার মানুষের খাবারের আয়োজন করা হয়। ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে এটি।

কথিত আছে এই মন্দিরে প্রণামী সংগ্রহ হয় প্রতি মাসে প্রায় ৮০ কোটি রুপি। শিখধর্মাবলম্বীর প্রত্যেক যুবককে রণবিদ্যা, আত্মরক্ষা কৌশলবিদ্যা ও যুদ্ধবিদ্যা রপ্ত করতে হয় প্রথা হিসেবে। আদি যুদ্ধের এই কলাকৌশল শিক্ষা দেয়ার জন্য নাকি রয়েছে একটি বিশাল মাঠ৷ মূলত এখান থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রণকৌশলীরা এই মন্দিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত। এখনো নিরাপত্তা রক্ষীরা তীর, ধনু, কাতরা, বল্লম, খাজা, খঞ্জনীজাতীয় অস্ত্র ব্যবহার করে।

দক্ষিণ দিকের গেট দিয়েই লোকেরা ভেতরে প্রবেশ করে৷ প্রবেশের আগে নারী- পুরুষ নির্বিশেষে সকলের মাথা আবৃত করতে হয়। আমাদের মাতায় টুপি থাকায় বাড়তি ঝামেলা আর পোহাতে হয় নি৷ ঢুকেই একটু গিয়ে পরিস্কার- স্বচ্ছ পানির বিশাল জলাশয়, সরোবর৷ যার চারদিকে মার্বেলে মোড়া রাস্তা। এ জলাশয়ের ঠিক মাঝখানেই মন্দিরের মূল অংশের অবস্থান৷ অনেকেই এ জল পবিত্র মনে করে মাথায় স্পর্শ করান৷ গোছলও করেন অসংখ্য ভক্তগণ। জলাশয়ের পাশঘেষে প্রসস্ত চত্বর বিদ্যমান৷ এর ধার দিয়ে বহু গুরদ্বোয়ারা আছে, সেখানেও সব সময় গুরু গ্রন্থসাহিব পাঠ হয়।

অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে আফগান আক্রমণের পর মন্দিরের কিছু অংশ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়৷ ১৭৬৪ সালে যা পুনরায় মেরামাত করা হয়। ঊনবিংশ শতকের গোড়ার দিকে, মহারাজা রঞ্জিত সিং স্বর্ণের লেপনে মন্দিরটিকে সজ্জিত এবং আবৃত করেছিলেন৷ আর এ থেকেই মন্দিরটি "গোল্ডেন টেম্পল" বা “স্বর্ণ মন্দির” ডাক নামে পরিচিত হয়।

গোল্ডেন ট্যাম্পল স্থাপত্যশিল্পের এক অবাক করা নির্মাণ৷ সৌন্দর্য আর উন্নতরুচিবোধের এক আশ্চর্য মিলন ঘটেছে এতে৷ তাই হিন্দুস্তানের প্রসিদ্ধ পর্যটন কেন্দ্রসমূহের অবস্থান দখল করে আছে সে৷ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আগত পর্যটকদের ভীড় জমে এখানে৷

গোল্ডেন টেম্পলকে কেন্দ্র করে আশপাশের এলাকাও গড়ে উঠেছে উন্নত কারিগরে৷ মন্দির এলাকায় গেলেই আপনার মনে হবে, এ যেনো ইউরোপ, আমেরিকার কোনো উন্নত শহর!


২- ওয়াগা বর্ডার:

সামনের গন্তব্য "ওয়াগা বর্ডার"৷ ভারত- পাকিস্তান বর্ডারগুলোর একটি৷ গোল্ডেন টেম্পল থেকে বত্রিশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এটি৷ পাঁচ জনের রিজার্ভ গাড়ি পাওয়া যায়৷ জন প্রতি আসা- যাওয়ার একশো রুপিতে এ আয়োজন৷ ড্রাইভার সম্পূর্ণ সময় আপনার সাথেই থাকবে৷ প্রায় এক ঘণ্টা চলে পা রাখলাম সীমান্তের দুয়ারে৷ ঐ তো পাকিস্তান! যেনো একটি "পবিত্র ভূমি"৷ সীমানার এ কাঁটাতার যেনো দিলকে চিঁড়ে চিঁড়ে আঘাত হানছে! আহ, যদি হদের এ "দেয়াল" না থাকতো!

এ বর্ডারের বৈশিষ্ট্য হলো, এখানে প্রতিদিন বিকেলে উভয় রাষ্ট্রের সীমান্তরক্ষিগণ নিজেদের একটিং প্রদর্শন করান৷ তাই উভয় পার্শে নির্মিত হয়েছে বিশাল গ্যালারি৷ দু'টো গ্যালারি আধা গোল করে একটিকে অপরটির মুখ বরাবর এমনভাবে বানানো হয়েছে, যাতে উভয় রাষ্ট্রের দর্শকগণ উভয় পক্ষের একটিংগুলো দেখতে ও শুনতে পারে৷ গ্যালারিতে প্রবেশের সময় নিরাপত্বর জন্য কঠিন চ্যাক হয়৷ হিন্দুস্তানে ছুটির দিন বলে প্রচণ্ড ভীড় ছিলো সেদিন৷ অবশেষে নিরাপদেই ঢুকতে পারলাম৷ প্রথমে গ্যালারির তৃতীয় তলায় বসেছিলাম৷ কিন্তু তাতে শুধু হিন্দুস্তানিদের শর্টগুলোই স্পষ্ট নযরে আসছিলো৷ তাই সাথিদের তাড়াতে চলে গেলাম পন্চম তলায়৷ এখান থেকে পাকিস্তানের পান্জাব শহরটার সবুজ- শ্যামল মনোরম দৃশ্যে আবৃত বিল্ড্রিংগুলো হৃদয়কে পুলকিত করে তুললো৷ ঐ তো লাহোর! মাত্র ২২ কিলোমিটার দূরে!

দু'দিকে দু'দেশের পতাকা শুণ্যাকাশে পতপত করে উড়ছে৷ সীমান্তে হিন্দুস্তানের গেটে দু'দিকে দু'টি মূর্তি বসানো৷ অন্যদিকে পাকিস্তানের গেটটা কিছুটা উঁচু ও চওড়া৷ যার দু'দিকে বড় করে চমৎকার নকশায় "আল্লাহ" লেখা আছে৷ কিছুটা নীচে গেটের বুকে "আল্লাহ, মুহাম্মাদ, রসুল্লাহ" লেখা দেখতে পেলাম৷ হিন্দুস্তানের গ্যালারির কপালে শুধু ইংরেজিতে "ইন্ডিয়া"ই লেখা৷ অপরদিকে পাকিস্তানের গ্যালারির চূড়ায় এক পাশে লেখা "পাকিস্তান কা কিয়া মাতলাব? এর জওয়াবে অন্যপাশে লেখা "লা ইলাহা ইল্লাহ"৷ ঠিক মাঝখানে পাকিস্তানের কর্ণধার মুহাম্মাদ আলি জিন্নাহ রহ'র ছবি লটকানো৷ সর্ব নীচে লেখা "বাবে আযাদি"৷ হিন্দুস্তানের পান্জাব পার হয়ে পাকিস্তানের লাহোর পর্যন্ত পৌঁছার রাস্তা এটাই ছিলো৷ স্বাধিনতার সময় এ রাস্তাই মুসলিমদের কাজে এসেছে৷ এদিকেই হয়ত ইঙ্গিত করছে এ গেটটি৷

কিছুক্ষণ পর পান্জাবি- টুপি পরা আরেক মৌলভি সাহেব আমাদের পাশে এসে বসলো৷ মনে হলো, জাতি ভাইদের দেখে সে বহু আনন্দিত৷ অবশ্য তার এ আনন্দ পরবর্তিতে আমাদের উপকারেও এসেছে৷ এপাশের পুরো গ্যালারিতে শুধু তিনটি পান্জাবি- টুপিই দেখতে পাচ্ছি৷ কালো বরকায় আবৃতা দু'জন নারী ছাড়া পর্দানশীন আর কাউকেই দেখতে পেলাম না৷ অথচ অপাশে পান্জাবি- টুপি আর বোরকা- পর্দার সংখ্যাই অধিকাংশের কোটা মনে হলো৷ এপাশে হিন্দুস্তানের পতাকা উঁচু করে একদল নারী বেহায়ার মতো নাচানাচি করছে৷ ওপাশে কিছু নওজোয়ান, মর্দে মুজাহিদ সাদা- কালো পান্জাবি- পায়জামা পরে তারাখচিত ঝান্ডা হাতে নিজেদের শালিনতা প্রকাশ করছে৷ এপাশে হিন্দু ধর্মের গীত দিয়ে শুরু হচ্ছে প্রগ্রাম৷ তো অপাশে সুরা আর রহমানের সুমধুর সুর৷ এপাশে লাফালাফি ফালাফালি আর চিল্লাচেল্লি, তো ওপাশে বজ্রকণ্ঠের তাকবির ধ্বনি৷ এপাশে "বন্দেমাতুরাম"'র শ্লোগান, তো অপাশে "নারায়ে তাকবির,

আল্লাহু আকবার, 

পাকিস্তান কা কিয়া মতলাব? লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" 'র মতো আকাশ কাঁপানো বিজলির আওয়াজ৷ দেখতে দেখতে আসরের সময় ঘণিয়ে এলো৷ আযানের ওয়াক্ত হলে ওপাশের সাউন্ডবক্স থেকে সুমধুর কণ্ঠে আযান ভেসে আসলো৷ এপাশের লোকেরা হয়ত কিছুটা বিরক্ত হয়ে লাউডস্পীকার যেনো আরো বাড়িয়ে দিলো৷ মুসলিম আর মুশরিকদের এ ব্যাবধান হৃদয়ে তখন যে জোয়ার বয়ে দিলো, তা ব্যক্ত করার ভাষা আমি খুঁজে পাচ্ছি না৷ ভাবতে ছিলাম, অাহ, কেউ যদি আমার মৃত লাশটাও অপারে নিক্ষেপ করে দিতো!

সকলে "জয় মাতা, জয় মাতা, বন্দে মাতুরাম"'র শ্লোগান দিচ্ছিলো৷ আমাকে চুপ দেখে এক জনে বললো, তুমি মুখ বন্ধ করে বসে আসো কেনো? দিলের কথা গোপন রেখে কিছুটা ব্যাখ্যামূলকভাবেই জওয়াব দিলাম "য়ার, মুঝে সুস্তী আ গায়ী"!

৩- মুজাদ্দিদে আলফে সানি রহ'র মাযার মোবারক:

ওয়াগা বর্ডার থেকে ঠিক রাত সাড়ে অাটটার দিকে ড্রাইভার অামাদের গোল্ডেন টেম্পলে ফেরত নিয়ে আসলো৷ রাতের আঁধারে রঙিন সব বাতিগুলোর কারসাজিতে পুরো টেম্পল এলাকাটাই ভিন্ন রকম মনে হলো৷ কালো রাতের ঝাকঝমক দৃশ্যে মনে হচ্ছে, এ যোনো স্বর্গের কোনো উদ্যান! বাতির প্রভাবে রাতের গোল্ডেন টেম্পল নিজের পূর্ণ জৌবন প্রকাশ করলো৷ নিজের সোনালি রঙটা যেনো নব বধুর সাজে সজ্জিত হয়েছে৷ সে মায়াবি দৃশ্য না দেখে কেউ হয়ত ভাষার মারপ্যাঁচে কোনো দিন উপলব্ধি করতে পারবে না৷


ঘুরতে ঘুরতে নয়টার বেশি বেজে গোলো৷ দশটার দিকে ট্রেনে উঠতে হবে৷ সারহিন্দ যাওয়ার এটাই আখেরি গাড়ি৷ হাতে সময় নেই৷ কালকেই দেওবন্দ পৌঁছতে হবে৷ তড়িঘড়ি করে স্টেশনে আসলাম৷ প্রায় পাঁচ ঘণ্টা সফর শেষে মুজাদ্দিদে আলফে সানি রহ'র (৯৭১-১০৩৪ হি.) রওজা মোবারকে পৌঁছে গেলাম৷ পথে কিছু ভক্তদেরকেও সাথি হিসেবে পেলাম৷ কাজটা তাই আসানই হলো৷ দারুল উলুম দেওবন্দের কথা বলায় তারা আমাদের ভালোই সম্মান দেখালো৷ তাদের ব্যাবস্থায় রাতের বাকি অংশ মসজিদের ভেতরেই কাটালাম৷ মসজিদের মূল অংশের এক পাশে মুসাফিরদের জন্য সুন্দর ব্যাবস্থা আছে৷ সেখানেই থাকলাম আমরা৷ ফজরের নামায পড়ে হযরত মুজাদ্দিদ রহ'র মাযার যিয়ারাত করলাম৷ কিছু সূরা পড়ে ঈসালে সোওয়াব করলাম৷ দিলের মাঝে এক অন্য রকম অনুভূতি জাগ্রত হলো৷ ইতিহাসের বইয়ে পড়া বিদআত মূলতপাটনের সেই কাহিনি ভাসতে লাগলো আমার স্মৃতিপটে৷ এক পাশে কিছু লোককে কুরআন তেলাওয়াত করতে দেখলাম৷ কবরের গেটে লেখা "আওরতোঁ কে লিয়ে আন্দার জা না মানা হে"৷ মনে মনে বড্ড খুশি হলাম লেখাটি দেখে৷ সকালে চা, বিস্কুটের ব্যাবস্থা খানকাহ থেকেই হলো৷ তিনো বেলার খানা নাকি ফ্রীই খাওয়ানো হয়৷ মাযারের ইহাতায়ই একটি লাইব্রেরি আছে৷ মুজাদ্দিদে আলফে সানি রহ'র অনেক দুর্লভ কিতাব এখানে হাতের নাগালে৷

হাদিস থেকে বুঝে আসে, উম্মাহর বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে আল্লাহ তাআলা একজন সমাজ সংস্কারক প্রেরণ করেন৷ সুনানে আবু দাউদ, কিতাব আল মালাহিম, হাদীস নং- ৪২৭৮

সমাজ সংস্কারকের মাধ্যমে উম্মাতের মধ্যকার নবউদ্গত বিষয়ের মূলোৎপাটনই আল্লাহ তাআলার মানশা৷ তবে প্রতি শতাব্দিতে মুজাদ্দিদ একজন হবেন, নাকি একাধিক, শতাব্দির প্রারম্ভে তার আবির্ভাব হবে, নাকি যে কোন সময়- এসব বিষয় নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কোন শতাব্দির মুজাদ্দিদ কে- এ ব্যাপারেও মতভেদ রয়েছে। তবে হযরত শায়খ আহমাদ সারহিন্দি রহ'র মুজাদ্দিদ হওয়াটা একটি স্বীকৃত বিষয়৷ এখানে আরো একটি কথা রয়ে যায়, মুজাদ্দিদ হওয়া কি শতাব্দি বা সহস্রের সাথেই খাস? এ প্রশ্নের জওয়াবে উস্তাদে মোহতারাম মাওলানা মামুনুল হক সাহেব আমাদেরকে বুখারি শরিফের দরসে বলেছেন, আসলে এ বিষয়টাতে উলামায়ে কেরাম ও মুহাককিকিনদের মাঝে এতটাই মতভেদ দৃষ্টিগোচর হয় যে, এসব মতভেদ দেখে চূড়ান্ত ফায়সালা করাও মুশকিল৷ তবে এটা আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, ইলমের পরীপূর্ণ জ্ঞানের ধারকবাহক হয়ে যেই উম্মাহর মাঝে ভ্রান্তিগুলোকে সংশোধনের চেষ্টা করবে, আল্লাহ তাকে অবশ্যই মুজাদ্দিদের সওয়াব দিবেন৷

মাযারের বিভিন্ন বিল্ড্রীং নাকি হযরত মুজাদ্দিদ রহ'র যামানাতেই তৈরি করা হয়৷ আকবরের পক্ষ থেকে তৎকালিন থানেশ্বরের শাষণকর্তা শায়খ সুলতানের কন্যার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি৷ সে সুবাদেই এসব বিল্ড্রীং বানানো তাঁর জন্য আসান হয়ে যায়৷ পুরাতন সব ইমারাতগুলো এখন মেহমানখানা হিসেবেই ব্যাবহার হয়৷ নতুন কিছু ভবনও নযরে পরলো৷ যেখানে ভি আই পি এবং বহির্বিশ্বের মেহমানগণ অবস্থান করেন৷ তুর্কিদের জন্য আলাদা জায়গা নির্ধারিত আছে৷ তুরস্কের বিপ্লবী সৈনিক ইমাম সাঈদ নুরসি রহ মুজাদ্দিদে আলফে সানি রহ'র কর্মপন্থা ও নসিহাত অবলম্বন করেই এগিয়ে ছিলেন৷ আমাদের উস্তাদ শায়খ আব্দুর রহমান নদবি দা বা'র থেকে শুনেছি, কোনো হিন্দুস্তানির সাথে সাঈদ নুরসি রহ'র চেতনার কোনো লোকের সাক্ষাত হলে তাঁর প্রশ্নসমূহের মাঝে একটা এটাও থাকে "আপনি শায়খ আহমাদ সারহিন্দ রহ'র কবর যিয়ারাত করেছেন"?

হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানি রহ'র মাযার মোবারকে অন্যান্যগুলোর তুলনায় অনেক কম খুরাফাতই নযরে পরলো৷ মনে হলো, ফারুকি তাজদিদের প্রভাব এখনো বুজি কিছুটা অবশিষ্ট আছে৷


৪- আম্বিয়ায়ে কেরামের মাযার মোবারক:

সারহিন্দ থেকে যেতে হবে বারাস এলাকা৷ এখানেই রয়েছে আম্বিয়ায়ে কেরামের মাযার মোবারক৷ পাঁচজন তালিবে ইলমও আমাদের সাথে যোগ দিলো৷ ছয়শো রুপিতে রিজার্ভ গাড়ি নিয়ে সারহিন্দ থেকে রওনা দিলাম আমরা৷ চার লেনের মেইন রোড পার হয়ে গ্রামের ভেতরে ঢুকলো আমাদের গাড়ি৷ পিচ ঢালাইয়ের চিকন রাস্তা পেরিয়ে জনমানবহীন বিভিন্ন ফসলি যমিনের পাশ দিয়ে এগিয়ে চললো৷ বুজেই আসছে কতটা গ্রাম্য পরিবেশ সেখানে৷ অবশেষে প্রায় দু'ঘণ্টা ছুটে চলে নামিয়ে দিলো ছোট একটি টিলার মুখে৷ টিলার উপরে ঠিক পশ্চিম দিকে "মাসজিদে আম্বিয়া" নামে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠিত৷ এখানেই আমরা যোহরের নামায আদায় করলাম৷ দক্ষিণ পাশে বাম দিকে এক তলা বিশিষ্ট দু'টি ভবন দেখতে পেলাম৷ মক্তব, হেফজখানা শুরু হয়েছে এখানে৷ একটি বিল্ড্রিংয়ের কাজ এখনো পূর্ণ হয় নি৷ জম্মুর এক ব্যাবসায়ি হাজি মুহাম্মাদ নিজামুদ্দিন কোটলাভির প্রচেষ্টাতেই এর ভিত্ত্বি শুরু হয়৷ মাযারের দেখাশোনার ভার তাঁর উপরই ন্যস্ত৷ উত্তরে ডানদিকে কবরস্থানের গেট৷ গেটের মাথায় লেখা আছে- "و لكل قوم هاد، مزارات مبارك انبياء عليهم السلام"

কম্পিত হৃদয়ে ভেতরে প্রবেশ করলাম৷ পুরো কবরস্থানে বিশাল বিশাল নয়টি কবর বিদ্যমান৷ দেখতেই আশ্চর্য রকমের মনে হয়৷ এক সাথে তিনটি কবর৷ কিছুটা সামনে আরো দু'টি৷ বামপাশে আরো দু'টি৷ আর ঠিক দু'কোণায় দু'টি৷ প্রথম তিনটিই সবচেয়ে বড়৷ একেকটি কবর 13-15 হাতের মতো হবে৷ বাকিগুলো 12-14 হাত হতে পারে৷ সাথিদের কেউ হাত দিয়ে মাপতে শুরু করলো৷ আমার কেমন যেনো লাগলো! মনে মনেই অনুমান করে নিলাম একটা হিসাব৷ সামান্য এ কয়েকটি কবরই পুরো কবরস্থানটি দখল করে আছে৷ কবরস্থানের ঠিক মধ্যখানে বড় একটি বৃক্ষ৷ যার আরামদায়ক ছায়া পুরো কবরস্থানকেই ঢেকে রেখেছে৷ ভেতরে প্রবেশ করতেই মনে হলো, জান্নাতের আবহাওয়া গায়ে লাগছে৷ কসম করে বললেও হয়ত হানেছ হবো না ইনশা আল্লাহ- সেখানের শীতল হাওয়া এতটাই শান্তিজনক লাগলো, যেনো উত্ত্বপ্ত তনুমনকে কোনো ফেরেশ্তা হঠাৎ জান্নাতের বায়ু দিয়ে ঠাণ্ডা করে তুললো৷ হৃদয়ে এমন প্রশান্তি আমি কোনো মাযারেই পাই নি৷ প্রাণ ভরে ঈসালে সোয়াব করলাম৷ মনখুলে প্রার্থনা করলাম৷ হৃদয়ে যেনো এলহাম হলো, আজ আল্লাহ আমার দুআ কবুল করে নিয়েছেন! জানি না, এসব কীসের প্রভাব! চরম ভক্তি না আসলেই বাস্তবতার প্রভাব!? কোনো কিছুই ঠাহর করা বড্ড মুশকিল৷

মাযারের অস্তিত্ব! বাস্তবতার দিকে তাকালে ইতিহাস থেকে এতটুকুই বুঝে আসে, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানি রহ একদিন এলহাম ও কাশফের মাধ্যমে জানতে পারলেন, এখানে আম্বিয়ায়ে কেরামের কবর আছে৷ ইলহামে তাকে বলা হলো," সারহিন্দের বারাস নামক এলাকার ওখানে নবিদের কবর আছে৷ তুমি এগুলোকে সংরক্ষণ করো"৷ মৃত্যুর আগে তিনি নিজ ঘণিষ্ট খলিফাদের বলেছিলেন, "নবিদের সাথে আমার স্বপ্নযোগে সাক্ষাৎ হয়েছে৷ আমি তাদের কবর থেকে নূর বের হয়ে আসমানের দিকে যেতে দেখেছি"৷ লোক মুখে শোনা যায়, পরবর্তিতে নাকি আকাবিরদের মধ্যে হযরত যাকারিয়া রহ, হযরত ইউসুফ কান্ধলভি রহও এখানে যিয়ারাত করতে এসেছিলেন৷ কেউ কেউ তো এটাও বলেন, যে হযরত আশ্রাফ আলি থানুবি রহ মুরাকাবা করে বলেছিলেন, "আমার দিল সাক্ষ দেয় যে, এগুলো নবিদেরই কবর৷ আমার কলবে প্রশান্তি লাভ হয়েছে"৷ এখানে দেখার বিষয় হলো, অন্য বিভিন্ন বুযুর্গের মৃত্যুর পর তাদের কবরগুলোকে মানুষ রওজা বানিয়ে ফেলেছে৷ এমনকি হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানিকেও ছাড়ে নি৷ কিন্তু আল্লাহর কী রহমত যে, শত শত বছরেও এখানে কোনো খুরাফাতের বিন্দু মাত্রও নেই৷

সে যাই হোক, ইসলামে কিন্তু কাশফ, ইলহাম আর দিলের প্রশান্তি - এসব কোনো দলিল নয়৷ তবুও যেহেতু এগুলো দ্বিনের কোনো অংশ নয়, তাই কাশফকে দলিলের মর্যাদায় রেখে আমরা শাইখুল ইসলাম আল্লামা তাকি উসমানি দা বা'র মতোই এতটুকুই বলতে পারি, " এগুলো নবিদের কবর হওয়ার কাশফ হওয়া, এ কথাটাই তো কতো বরকতময়! যদি বাস্তবতা ও হাকিকাত এটাই হয়!? হযরত শাইখুল ইসলাম তাকি উসমানি সাহেব দা বা তুরস্কের সফরনামায় সেখানের জাদুগরে নবিজির বরকতময় জিনিস দর্শন করে সেগুলোর সনদের নির্ভরতার কথা লিখতে গিয়ে এটাই বলেছেন, যে এগুলো নবিজির বরকতময় জিনিসের দিকে মানসুব হয়েছে, এটাই তো কম বরকতের কথা নয়! কিন্তু এটাও এশকাল থেকে মুক্ত নয়৷ কারণ, রাসুলের সা ঐসব বরকতময় জিনিসের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক সংরক্ষণের একটা ব্যাপার আছে৷ কিন্তু হঠাৎ করে স্বপ্নে দেখা এসব নবিদের কবরের কথা কতটুকুই বা সত্য হতে পারে? পৃথিবীতে নাম না জানা কতো অসংখ্য আম্বিয়ায়ে কেরামের কবর আছে৷ কিন্তু পৃথিবীর কোথায়, কোথায় আছে- তা কেউ জানে না৷ আমাদের উচিৎ, সকল আম্বিয়ায়ে কেরামের উপর বিশ্বাস পোষণ করা৷ এতটুকুই ফরয৷ কোথায়, কী অবস্থায় আছে, সেটা জানা প্রয়োজন নয়৷ পৃথিবীর যে কোনো যায়গাতেই তাদের কবরের অস্তিত্ব থাকতে পারে৷ কিন্তু নিশ্চয়তার কথা কেউই বলতে পারে না! এ হলো ব্যাপার৷

অাশপাশে আজকের তুলনায় এক সময় প্রচুর মুসলিম বসতি ছিলো৷ ১৯৪৭এ দেশ ভাগের সময় শিখ, হিন্দু মিলে মুসলিমদের উপর অমানবিক নির্যাতন করে পাকিস্তান যেতে বাধ্য করে৷ তখনকার মুসলিম ইতিহাসই বারাসের গুরুত্ব প্রমাণ করে৷ বাকি, আল্লাহ মালুম৷

যিয়ারাত করে আমাদেরকে মাদ্রাসার পক্ষ থেকে দুপুরের খানা খাওয়ানো হলো৷ প্রতিদিন আগত মুসাফিরদের খানার ব্যাবস্থা নাকি এখানেই হয়৷ এলাকাটা এতোটাই গ্রাম যে, আশপাশে ছোট কোনো দোকান মিলাও কঠিন!

ঘুরতে ঘুরতে প্রায় আসর হয়ে আসলো৷ বিকেলের ট্রেনেই দেওবন্দের পথে রওনা করতে হবে৷ নতুন যুক্ত হওয়া সাথিরাও সাহারানপুরের৷ দেরী না করে দ্রুত স্টেশনে পৌঁছলাম৷ শিখরা আমাদের ফ্রী ফ্রী ঠাণ্ডা পানীয় পান করালো৷ পুরো পান্জাব জুড়েই শিখদের স্বেচ্ছাস্বেবিগণ এমন আয়োজন করে থাকে৷ দু'দিনের সফরে যা দেখেছি বারবার৷ শিখদের ব্যাপারে যে স্পষ্ট- কট্টর মনোভাব আমার হৃদয়ে ছিলো, পান্জাব দেখে আমার বহু দিনের সে ধারণাটা কিছুটা রঙিন হলো৷ মনে হলো, শিখদের আখলাক এক কথায় বললে, তাদেরকে "চতুর- ভদ্র"'র উপাধি দেওয়া যায়া৷ পয়পরিস্কার, আচার, ব্যাবহার - সব দিক দিয়েই তারা হিন্দুদের থেকে বহু এগিয়ে৷ রাজপুরা স্টেশনে ঘোষণা শুনলাম- ময়লা, থুতু যেখানে সেখানে ফালাতে দেখলে পাঁচশো রুপি জরিমানা ধরা হবে৷ ভালোই লাগলো তাদের এসব কীর্তি দেখে!

বহু অভিজ্ঞতা আর উপভোগ্যতার বোঝা নিয়ে ফিরতি পথে রওনা করলাম আমরা৷ অত:পর রক্তিম সূর্যটা হলদে হওয়ার আগেই আমরা বিদায় জানালাম একটি উন্নত শহর পান্জাবকে! 
সাঈদ আহমাদ খান রাহমানি (আলাপ) ১৮:৪০, ৯ জুলাই ২০১৮ (ইউটিসি)[উত্তর দিন]

আম্বিয়া কেরামের মাযার মোবারক[সম্পাদনা]

আম্বিয়ায়ে কেরামের মাযার মোবারক বারাসে একদিন:

রমযানের উনত্রিশতম দিন৷ কিছু সাথিদের যৌথ উদ্যোগে একটি সফরের সিদ্ধান্ত হলো৷ কথা মতো তিরিশ রমযানের পরই রওনা হলাম৷ সেদিন ছিলো শাওয়ালের প্রথম তারিখ৷ আমাদের এখানে ঈদের দিন৷ দেওবন্দ স্টেশন থেকে ট্রেনে প্রায় নয় ঘণ্টা থেকে অবশেষে পৌঁছলাম পান্জাব প্রদেশের অমৃতসর জেলায়৷ অমৃতসরে একদিন কাটিয়ে সারহিন্দ জেলার বারাসে যাওয়ার কথা৷ পরিকল্পনা মতো পরের দিন রাতেই রওনা হলাম৷ সারহিন্দ পার হয়ে বারাস যাবো৷ প্রায় পাঁচ ঘণ্টা সফর করে অবশেষে সারহিন্দ পৌঁছলাম৷ পথের মাঝে মুজাদ্দেদে আলফে সানি হযরত শায়খ আহমাদ সারহিন্দ রহ'র মাযার যিয়ারাত করলাম৷


সারহিন্দ থেকেই যেতে হবে বারাস এলাকা৷ এখানেই রয়েছে আম্বিয়ায়ে কেরামের মাযার মোবারক৷ পাঁচজন তালিবে ইলমও আমাদের সাথে যোগ দিলো৷ ছয়শো রুপিতে রিজার্ভ গাড়ি নিয়ে সারহিন্দ থেকে রওনা দিলাম আমরা৷ চার লেনের মেইন রোড পার হয়ে গ্রামের ভেতরে ঢুকলো আমাদের গাড়ি৷ পিচ ঢালাইয়ের চিকন রাস্তা পেরিয়ে জনমানবহীন বিভিন্ন ফসলি যমিনের পাশ দিয়ে এগিয়ে চললো৷ বুজেই আসছে কতটা গ্রাম্য পরিবেশ সেখানে৷ অবশেষে প্রায় দু'ঘণ্টা ছুটে চলে নামিয়ে দিলো ছোট একটি টিলার মুখে৷ টিলার উপরে ঠিক পশ্চিম দিকে "মাসজিদে আম্বিয়া" নামে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠিত৷ এখানেই আমরা যোহরের নামায আদায় করলাম৷ দক্ষিণ পাশে বাম দিকে এক তলা বিশিষ্ট দু'টি ভবন দেখতে পেলাম৷ মক্তব, হেফজখানা শুরু হয়েছে এখানে৷ একটি বিল্ড্রিংয়ের কাজ এখনো পূর্ণ হয় নি৷ জম্মুর এক ব্যাবসায়ি হাজি মুহাম্মাদ নিজামুদ্দিন কোটলাভির প্রচেষ্টাতেই এর ভিত্ত্বি শুরু হয়৷ মাযারের দেখাশোনার ভার তাঁর উপরই ন্যস্ত৷ উত্তরে ডানদিকে কবরস্থানের গেট৷ গেটের মাথায় লেখা আছে- "و لكل قوم هاد، مزارات مبارك انبياء عليهم السلام"

কম্পিত হৃদয়ে ভেতরে প্রবেশ করলাম৷ পুরো কবরস্থানে বিশাল বিশাল নয়টি কবর বিদ্যমান৷ দেখতেই আশ্চর্য রকমের মনে হয়৷ এক সাথে তিনটি কবর৷ কিছুটা সামনে আরো দু'টি৷ বামপাশে আরো দু'টি৷ আর ঠিক দু'কোণায় দু'টি৷ প্রথম তিনটিই সবচেয়ে বড়৷ একেকটি কবর 13-15 হাতের মতো হবে৷ বাকিগুলো 12-14 হাত হতে পারে৷ সাথিদের কেউ হাত দিয়ে মাপতে শুরু করলো৷ আমার কেমন যেনো লাগলো! মনে মনেই অনুমান করে নিলাম একটা হিসাব৷ সামান্য এ কয়েকটি কবরই পুরো কবরস্থানটি দখল করে আছে৷ কবরস্থানের ঠিক মধ্যখানে বড় একটি বৃক্ষ৷ যার আরামদায়ক ছায়া পুরো কবরস্থানকেই ঢেকে রেখেছে৷ ভেতরে প্রবেশ করতেই মনে হলো, জান্নাতের আবহাওয়া গায়ে লাগছে৷ কসম করে বললেও হয়ত হানেছ হবো না ইনশা আল্লাহ- সেখানের শীতল হাওয়া এতটাই শান্তিজনক লাগলো, যেনো উত্ত্বপ্ত তনুমনকে কোনো ফেরেশ্তা হঠাৎ জান্নাতের বায়ু দিয়ে ঠাণ্ডা করে তুললো৷ হৃদয়ে এমন প্রশান্তি আমি কোনো মাযারেই পাই নি৷ প্রাণ ভরে ঈসালে সোয়াব করলাম৷ মনখুলে প্রার্থনা করলাম৷ হৃদয়ে যেনো এলহাম হলো, আজ আল্লাহ আমার দুআ কবুল করে নিয়েছেন! জানি না, এসব কীসের প্রভাব! চরম ভক্তি না আসলেই বাস্তবতার প্রভাব!? কোনো কিছুই ঠাহর করা বড্ড মুশকিল৷

মাযারের অস্তিত্ব! বাস্তবতার দিকে তাকালে ইতিহাস থেকে এতটুকুই বুঝে আসে, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানি রহ একদিন এলহাম ও কাশফের মাধ্যমে জানতে পারলেন, এখানে আম্বিয়ায়ে কেরামের কবর আছে৷ ইলহামে তাকে বলা হলো," সারহিন্দের বারাস নামক এলাকার ওখানে নবিদের কবর আছে৷ তুমি এগুলোকে সংরক্ষণ করো"৷ মৃত্যুর আগে তিনি নিজ ঘণিষ্ট খলিফাদের বলেছিলেন, "নবিদের সাথে আমার স্বপ্নযোগে সাক্ষাৎ হয়েছে৷ আমি তাদের কবর থেকে নূর বের হয়ে আসমানের দিকে যেতে দেখেছি"৷ লোক মুখে শোনা যায়, পরবর্তিতে নাকি আকাবিরদের মধ্যে হযরত যাকারিয়া রহ, হযরত ইউসুফ কান্ধলভি রহও এখানে যিয়ারাত করতে এসেছিলেন৷ কেউ কেউ তো এটাও বলেন, যে হযরত আশ্রাফ আলি থানুবি রহ মুরাকাবা করে বলেছিলেন, "আমার দিল সাক্ষ দেয় যে, এগুলো নবিদেরই কবর৷ আমার কলবে প্রশান্তি লাভ হয়েছে"৷ এখানে দেখার বিষয় হলো, অন্য বিভিন্ন বুযুর্গের মৃত্যুর পর তাদের কবরগুলোকে মানুষ রওজা বানিয়ে ফেলেছে৷ এমনকি হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানিকেও ছাড়ে নি৷ কিন্তু আল্লাহর কী রহমত যে, শত শত বছরেও এখানে কোনো খুরাফাতের বিন্দু মাত্রও নেই৷

সে যাই হোক, ইসলামে কিন্তু কাশফ, ইলহাম আর দিলের প্রশান্তি - এসব কোনো দলিল নয়৷ তবুও যেহেতু এগুলো দ্বিনের কোনো অংশ নয়, তাই কাশফকে দলিলের মর্যাদায় রেখে আমরা শাইখুল ইসলাম আল্লামা তাকি উসমানি দা বা'র মতোই এতটুকুই বলতে পারি, " এগুলো নবিদের কবর হওয়ার কাশফ হওয়া, এ কথাটাই তো কতো বরকতময়! যদি বাস্তবতা ও হাকিকাত এটাই হয়!? হযরত শাইখুল ইসলাম তাকি উসমানি সাহেব দা বা তুরস্কের সফরনামায় সেখানের জাদুগরে নবিজির বরকতময় জিনিস দর্শন করে সেগুলোর সনদের নির্ভরতার কথা লিখতে গিয়ে এটাই বলেছেন, যে এগুলো নবিজির বরকতময় জিনিসের দিকে মানসুব হয়েছে, এটাই তো কম বরকতের কথা নয়! কিন্তু এটাও এশকাল থেকে মুক্ত নয়৷ কারণ, রাসুলের সা ঐসব বরকতময় জিনিসের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক সংরক্ষণের একটা ব্যাপার আছে৷ কিন্তু হঠাৎ করে স্বপ্নে দেখা এসব নবিদের কবরের কথা কতটুকুই বা সত্য হতে পারে? পৃথিবীতে নাম না জানা কতো অসংখ্য আম্বিয়ায়ে কেরামের কবর আছে৷ কিন্তু পৃথিবীর কোথায়, কোথায় আছে- তা কেউ জানে না৷ আমাদের উচিৎ, সকল আম্বিয়ায়ে কেরামের উপর বিশ্বাস পোষণ করা৷ এতটুকুই ফরয৷ কোথায়, কী অবস্থায় আছে, সেটা জানা প্রয়োজন নয়৷ পৃথিবীর যে কোনো যায়গাতেই তাদের কবরের অস্তিত্ব থাকতে পারে৷ কিন্তু নিশ্চয়তার কথা কেউই বলতে পারে না! এ হলো ব্যাপার৷

অাশপাশে আজকের তুলনায় এক সময় প্রচুর মুসলিম বসতি ছিলো৷ ১৯৪৭এ দেশ ভাগের সময় শিখ, হিন্দু মিলে মুসলিমদের উপর অমানবিক নির্যাতন করে পাকিস্তান যেতে বাধ্য করে৷ তখনকার মুসলিম ইতিহাসই বারাসের গুরুত্ব প্রমাণ করে৷ বাকি, আল্লাহ মালুম৷

যিয়ারাত করে আমাদেরকে মাদ্রাসার পক্ষ থেকে দুপুরের খানা খাওয়ানো হলো৷ প্রতিদিন আগত মুসাফিরদের খানার ব্যাবস্থা নাকি এখানেই হয়৷ এলাকাটা এতোটাই গ্রাম যে, আশপাশে ছোট কোনো দোকান মিলাও কঠিন!

ঘুরতে ঘুরতে প্রায় আসর হয়ে আসলো৷ বিকেলের ট্রেনেই দেওবন্দের পথে রওনা করতে হবে৷ নতুন যুক্ত হওয়া সাথিরাও সাহারানপুরের৷ দেরী না করে দ্রুত স্টেশনে পৌঁছলাম৷ শিখরা আমাদের ফ্রী ফ্রী ঠাণ্ডা পানীয় পান করালো৷ পুরো পান্জাব জুড়েই শিখদের স্বেচ্ছাস্বেবিগণ এমন আয়োজন করে থাকে৷ দু'দিনের সফরে যা দেখেছি বারবার৷ শিখদের ব্যাপারে যে স্পষ্ট- কট্টর মনোভাব আমার হৃদয়ে ছিলো, পান্জাব দেখে আমার বহু দিনের সে ধারণাটা কিছুটা রঙিন হলো৷ মনে হলো, শিখদের আখলাক এক কথায় বললে, তাদেরকে "চতুর- ভদ্র"'র উপাধি দেওয়া যায়া৷ পয়পরিস্কার, আচার, ব্যাবহার - সব দিক দিয়েই তারা হিন্দুদের থেকে বহু এগিয়ে৷ রাজপুরা স্টেশনে ঘোষণা শুনলাম- ময়লা, থুতু যেখানে সেখানে ফালাতে দেখলে পাঁচশো রুপি জরিমানা ধরা হবে৷ ভালোই লাগলো তাদের এসব কীর্তি দেখে!

বহু অভিজ্ঞতা আর উপভোগ্যতার বোঝা নিয়ে ফিরতি পথে রওনা করলাম আমরা৷ অত:পর রক্তিম সূর্যটা হলদে হওয়ার আগেই আমরা বিদায় জানালাম একটি উন্নত শহর পান্জাবকে! 
সাঈদ আহমাদ খান রাহমানি (আলাপ) ১৮:৪১, ৯ জুলাই ২০১৮ (ইউটিসি)[উত্তর দিন]

উইকিপিডিয়া থেকে দ্রুত অপসারণের জন্য ব্যবহারকারী:সাঈদ আহমাদ খান রাহমানি পাতায় একটি ট্যাগ লাগানো হয়েছে। এটি দ্রুত অপসারণ বিচারধারার ব্য৫ অনুযায়ী করা হয়েছে, কারণ পাতাটিতে থাকা লেখাগুলি, তথ্য, আলোচনা এবং/অথবা ক্রিয়াকলাপ উইকিপিডিয়া লক্ষ্যগুলির সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত নয়। অনুগ্রহ করে মনে রাখবেন যে উইকিপিডিয়া কোনও ওয়েব হোস্টিং পরিষেবা নয়দ্রুত অপসারণ মানদণ্ডের অধীনে এ জাতীয় পাতাগুলি যে কোনও সময় মুছে ফেলা হতে পারে।

আপনি যদি মনে করেন যে এই কারণে এই পাতাটি অপসারণ করা উচিত নয়, তবে এই অপসারণে আপত্তি জানাতে নিবন্ধটিতে গিয়ে "দ্রুত অপসারণে আপত্তি জানান" লেখার উপর ক্লিক করুন ও সেখানে কারণ ব্যাখ্যা করুন কেন নিবন্ধটি দ্রুত অপসারণ করা উচিত নয়। মনে রাখবেন, কোন নিবন্ধে দ্রুত অপসারণ ট্যাগ করা হলে এবং যদি নিবন্ধটি দ্রুত অপসারণের বিচারাধারার সাথে মিলে যায় তবে কোনও দেরি না করে নিবন্ধটি অপসারণ করা হয়। অনুগ্রহপূর্বক আপনার নিজের তৈরি করা নিবন্ধ থেকে এই বিজ্ঞপ্তিটি সরিয়ে ফেলবেন না, তবে আমরা আপনাকে নিবন্ধটি সম্প্রসারণ করতে উৎসাহিত করছি। আরও মনে রাখবেন যে, নিবন্ধের বিষয় অবশ্যই উল্লেখযোগ্য হতে হবে এবং নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে তথ্যসূত্রগুলো যাচাইযোগ্য হওয়া উচিত। Aishik Rehman (আলাপ) ১৩:১২, ২৩ মে ২০২৩ (ইউটিসি)[উত্তর দিন]