ব্যবহারকারী:Noni Gopal Singha

    উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
     -:পরমাত্মা ও ঈশ্বর তত্ব :-
      জন্ম মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি লাভ মনুষ্য জাতির অন্যতম একটি প্রাচীন ভাবনা । এই ভাবনায় প্রধান দুটি বিষয় হলো (1) পরমাত্মা এর আরাধনা, (2) ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তা এর আরাধনা। 
    এই বিষয়ে মানুষ যথেষ্ট অগ্রগতি লাভ করেছে । বলা যায় এটা অনেকটাই পরিপুর্ণতা লাভ করেছে । 
    প্রথমেই জানা আবশ্যক যে, ঈশ্বর ও পরমাত্মা এর মধ্যে পার্থক্য কোথায়। 
    আমরা অনেকেই "সৃষ্টিকর্তা" উনাকে সর্বোচ্চ ঈশ্বর বা সর্বশক্তিমান বলে চিন্তা করে থাকি। 
    কিন্তু আসলে তা নয়। যিনি সর্বশক্তিমান এবং "সকল কিছুর মূল আধার" তিনি হলেন "পরমাত্মা"। এই পরমাত্মাই হলেন নিরাকার, নির্গূণ। 
    আমরা অভ্যাস বশত এই পরমাত্মাকে ঈশ্বর নামে সম্বোধন করি। ফলে সৃষ্টিকর্তা ও পরমাত্মা দুই বিষয়কে অভিন্ন ভেবে ফেলি। 
    পরমাত্মা তিনি সর্বশক্তিমান শক্তি হিসেবে তিনি আকার অবস্থায় ও প্রকাশ হতে পারেন। 
    
     ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তা তিনি আকার যুক্ত অবস্থায় অথবা নিরাকার এই দুই ভাবেই থাকতে পারেন। 
    কর্মফলের নিয়ম অনুযায়ী কোন কাজ করলে সেই কাজের জন্য কর্মফল হিসেবে "ধর্ম" অথবা "পাপ" সঞ্চিত হয়। 
    এই কারণে পরমাত্মা নিজে কোন কর্ম করেন না। ফলে তিনি পাপ ধর্মের অধীনে থাকেন না। 
     তিনি এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি, প্রতি পালন, ও প্রয়োজনীয় সংহারের জন্য ব্রহ্মা, বিষ্ণু, ও মহেশ্বরকে গঠন করেন। এরাই "সৃষ্টিকর্তা" বা ঈশ্বর। 
    এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি জনিত কিছু দোষ গুণ তাদের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। 
    এই দোষ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার মূল সূত্র হলো নিস্কাম কর্ম।  উনারা প্রতি নিয়ত নিষ্কাম কর্ম মেনে চলেন। এবং পাপ মুক্ত ও পূণ্য মূক্ত হয়ে থাকেন। 
    
     ধর্ম থেকে মানুষ যা পেতে চায় তা হল:- 
    

    (1) মুক্তি (জন্ম মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি) (2) স্বর্গ (3) ঈশ্বর (সৃষ্টিকর্তা)।

       বলাবাহুল্য যে ঈশ্বর(সৃষ্টিকর্তা) এবং স্বর্গ দুটো একসাথে পাবার জন্য ইচ্ছাকাঙ্খি লোক প্রায় সকলেই ।
      এখানে একটা মস্ত বড় ভূল ভাবনা আছে তা হল,
    

    "ঈশ্বর(সৃষ্টিকর্তা) কেবলমাত্র স্বর্গতেই থাকেন আর কোথাও না" । এটা অশুদ্ধ চিন্তা ।


    কারণ ঈশ্বর(সৃষ্টিকর্তা) পরমাত্মার দেওয়া বলে বলীয়ান এবং নিজ চিন্তার অধীন । তিনি জলে, স্থলে, আগুনে, পৃথিবীতে, নরকে, পাতালে, স্বর্গে যথা তথা থাকতে পারেন । তাই ঈশ্বর (সৃষ্টিকর্তা) স্বর্গেই একমাত্র থাকেন বা আমরা তাকে ঐখানে থাকতে বাধ্য করছি এটা অলীক কল্পনা ।


     আবার যারা স্বর্গবাদী এরা আাসলে ভোগবাদী । পৃথিবীর থেকে ও বেশী সুখ তারা স্বর্গে পেতে চান |
    এতে তাদের কোন দোষ নেই । কারণ, স্বর্গের সুখের এডভারটাজ বা বিপণন এত বেশী যে লোক সহজে এর লোভে পড়ে যায় । স্বর্গের হুরী, পরী, নারী এবং সুস্বাদু খাবার কে না পেতে চায় ।
    
    কিন্তু ঐ খাবার অথবা সন্ভোগ এর পর শরীর থেকে বের হওয়া ময়লা আবর্জনা স্বর্গেই তো পতিত হবে । এটা কি সঠিক হবে ? যদিও বা হয় তাহলে স্বর্গের পবিত্রতা কোথায় ? 
     এখন পরমাত্মা সমন্ধে সামাণ্য বিবরণ দিচ্ছি । যদিও পরমাত্মা বিষয়ে জ্ঞান মনুষ্যের বুদ্ধির অতীত। তারপরও কিছু মহান সাধক মুনিঋষিদের পাওয়া জ্ঞানের মাধ্যমে কিছু জানতে পারা যায়। 
    
    পরমাত্মা আছেন এই অনুভব আমরা পেয়েথাকি আমাদের অন্তরআত্মায়|
    এজন্যই আমরা পরমাত্মার অস্তিত্বে বিশ্বাস করি । 
    এই পরমাত্মার কাছে কিভাবে পৌছা যায় ? 
      এটা বুঝতে হলে কর্মফলবাদকে বুঝতে হবে ।
    ভালো কাজের ভালো ফল, খারাপ কাজের খারাপ ফল, এটাই কর্মফলবাদ ।
     পাপ কর্ম থেকে নরকগামী ও পূণ্য কর্ম থেকে স্বর্গ ভোগ অবশ্যই পেতে  হবে । এই পূণ্য কর্ম থেকে মোক্ষ বা মুক্তি প্রাপ্তি হয় না । এবং জন্ম মৃত্যুর বন্ধন থেকে মুক্তি হয় না। 
    

    অর্থাৎ শরীরে ধর্ম থাকলে অথবা পাপ থাকলে তা পরমাত্মা প্রাপ্তির অন্তরায় ।

     কাজেই শরীর থেকে পাপ মোচন এবং ধর্ম মোচন করা আবশ্যক । 
    


    পরমাত্মার ভিতরে কোন ধর্ম নেই কোন পাপ নেই তাই তিনি পবিত্র|
    
    

    পরমাত্মায় বিলীন হতে হলে এইরুপ পবিত্র অবস্থায় নিজেকে উন্নীত করতে হবে ।

    নিজেকে পবিত্র রাখার একমাত্র উপায় হলো "নিষ্কাম কর্ম পদ্দতি" অনুসরণ করে চলা ।
     এই পদ্ধতি অনুসরণ করে চললে আমাদের শরীর ও মনে কোন পাপ অথবা ধর্ম এসে স্পর্শ করতে পারে না ।
      এভাবে পাপ রহিত ও ধর্ম রহিত ব্যক্তি হলেন পবিত্র। এই পবিত্র ব্যাক্তিই জন্ম মৃত্যুর হাত থেকে নিজেকে মুক্ত রাখেন। এবং মৃত্যুর পর তিনি স্বর্গে যেতে পারেন না। আবার নরকে ও যেতে পারেন না। আবার পূণজন্ম ও নিতে পারেন না। 
    এই অবস্থায় উনার গন্তব্য স্থল হলো পরমাত্মা। তিনি সরাসরি পরমাত্মা এর কাছে চলে যান এবং পরমাত্মা এর সাথে মিলিত হয়ে পরমাত্মার ভিতরে সম্পৃক্ত হন। 
    
    এই অবস্থাকে বলা হয় "মোক্ষলাভ" বা "মুক্তি"। 
    

    অর্থাৎ জন্ম মৃত্যুর বাধন থেকে মুক্তি।

    বৌদ্ধ ধর্ম মতে এর নাম "নির্বাণ" লাভ। 
     শরীরের পাপ এবং পূণ্য মুছে ফেলার মূল সূত্র হলো নিষ্কাম কর্ম। 
    তাছাড়া ও মানুষ অন্যান্য উপায় অবলম্বন করে শরীরের পাপ এবং পূণ্য বিনষ্ট করার প্রয়াস করেন। 
    যেমন "গঙ্গা স্নান"| গঙ্গা স্নান ও অন্যান্য জলকুণ্ডে স্নান করলে  শরীরের সব বিনষ্ট হয় আবার পাপ ও বিণষ্ট হয় । 
     কেউ কেউ আবার পূজা অর্চনা ও ব্রত পালন করেন, কাযিক শ্রম করেন, দান দক্ষিণা করেন।
     সার কথা হল:-
    পরমাত্মা নিজে পাপমুক্ত ও ধর্ম মুক্ত সেভাবে নিজে ও পাপমুক্ত ও ধর্ম মুক্ত হতে হবে| এবং এভাবেই নিজের আত্মাকে শুচি করে নিজের আত্মাকে পরমাত্মা এর কাছে  বিলীন করতে হবে ।
     স্বর্গে নয়, নরকে ও নয় আমাদেরকে যেতে হবে পরমাত্মার কাছে । 
     এই পরমাত্মা এর কাছে যাবার প্রধান সিড়ি হলো ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তা। 
    উনার প্রদর্শিত পথ ধরেই যেতে হবে।