ব্যবহারকারী:Mohammad Mujibul Hoque Khan/খেলাঘর ১

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
হাফেজ আহমদ
শাহ সাহেব কেবলা রহঃ.
জন্ম১৯০৪ খ্রি. (১৩১১ বঙ্গাব্দ)
চুনতী, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ
মৃত্যু১৯৮৩ (ভোর ৪ ঘটিকায়)
শিক্ষাফাজিল
মাতৃশিক্ষায়তনছনুয়া মাদ্রাসা বাঁশখালী, দারুল উলুম আলীয়া মাদ্রাসা চট্টগ্রাম, কলকাতা আলীয়া মাদ্রাসা
পেশাধর্মপ্রচার
পরিচিতির কারণবিখ্যাত অলিয়ে কামেল
উপাধিশাহ সাহেব
পূর্বসূরীমাওলানা সৈয়দ আহমদ (রহঃ) (পিতা) ও হাজেরা খাতুন (মাতা)

হযরত মাওলানা হাফেজ আহমদ শাহ সাহেব রহঃ (১৯০৪ - ১৯৮৩) একজন বিখ্যাত আধ্যাত্মিক ও কামেল ব্যক্তিত্ব।

চিত্র:হযরত শাহ সাহেব এর মাজার শরীফ চুনতী.jpeg
পূর্ব দিক হতে দৃশ্যমান চুনতী শাহ সাহেব (রহ.) মাজার

তিনি বাংলাদেশে শাহ সাহেব হিসেবে পরিচিত। পুরো নাম মাওলানা হাফেজ আহমদ হলেও তিনি শাহ সাহেব নামেই পরিচিত। চুনতীর ১৯ দিন ব্যাপী সীরাতুন্নবী (সাঃ) প্রচলন শাহ সাহেবের অনন্য অবদান।

চিত্র:হযরত শাহ সাহেব এর মাজার চুনতী.jpeg
উত্তর দিক হতে দৃশ্যমান চুনতী শাহ সাহেব (রহ.) মাজার

মাজার : চুনতী, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ

জন্ম ও বংশ পরিচয়[সম্পাদনা]

হযরত মাওলানা শাহ হাফেজ আহমদ (রহ:) ১৯০৪ সালে চুনতী গ্রামে হযরত মাওলানা শাহ হাফেজ আহমদ (রহ:) (শাহ সাহেব কেবলা চুনতী নামে পরিচিত) জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মাওলানা সৈয়দ আহমদ (রহ:) এবং মাতা হাজেরা খাতুন। তাঁর পূর্ব পূরুষ হযরত শাহ আলম খন্দকার আরব দেশ হতে স্থল পথে দিল্লীতে আসেন। দিল্লী থেকে নৌ পথ চট্টগ্রামের আনোয়ারা আসেন। সেখান থেকে বাঁশখালি উপজেলার কালীপুর গ্রামে এসে বসতি স্থাপন করেন। [১] পরবর্তীতে তার পুত্র ইব্রাহিম খন্দকার চুনতীতে এসে বসতি স্থাপন করেন। বিখ্যাত আলেম ও দরবেশ কাজী মুহাম্মদ ইউসুফ আলী (রহ:) হযরত মাওলানা শাহ হাফেজ আহমদ (রহ:) এর দাদাজান। কাজী ইউসুফ আলী আরকানের অন্যতম জমিদার ছিলেন।

শিক্ষা ও কর্মজীবন[সম্পাদনা]

হযরত মাওলানা শাহ হাফেজ আহমদ (রহ:) বাঁশখালীর ছনুয়া মাদ্রাসা, চন্দনপুরা দারুল উলুম আলীয়া মাদ্রাসা ও কলিকাতা আলীয়া মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেন। কলিকাতা আলীয়া মাদ্রাসা থেকে ফাজিল ডিগ্রী অর্জন করেন। কলিকাতা আলীয়া মাদ্রাসা থেকে অসুস্থ অবস্থায় দেশে ফিরেন। তারপর দাদার জমিদারী দেখার জন্য আকিয়াবে (বর্তমান মায়ানমার) চলে যান। সেখানে তিনি মসজিদের ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করেন। কিছুদিন পর তিনি ইমামতি ছেড়ে দিয়ে পাহাড়-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। এভাবে তিনি ২০/২২ বছর পাহাড়-জঙ্গল, শহর-বন্দর, ঝড়-বৃষ্টিতে আল্লাহর জিকির ও প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রশংসা করে বেড়াতেন। মাঝে মাঝে তিনি চুনতীতে আসতেন। তাঁর কেরামতের কথা এখনো লোক মুখে শুনা যায় ।

কেরামত[সম্পাদনা]

১: আরকান সড়কের গাড়ি চালকদের নিকট প্রথম তাঁর কেরামত প্রকাশ পায়। ওই সময়ে আরকান সড়ক কাঁচা থাকায় চালকদের গাড়ি চালানো কষ্ট হত। চালকদের সাহায্যার্থে শাহ সাহেব কেবলা উপস্থিত হতেন। ফলে দক্ষিন চট্টগ্রামে সাধারণ মানুষের কাছে তিনি চুনতীর হাফেজ মামু ও পরবর্তীতে শাহ সাহেব মামু নামে পরিচিতি লাভ করেন। জনশ্রুতি আছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্রবাহিনীর গাড়ি বহর আারকান সড়কের ঢালায় আটকা পড়ে যায়। এমন সময় পাশের গভীর জঙ্গলে মানুষের উপস্থিতি দেখে মিত্রবাহিনী গুলি চালালেন। কিছুক্ষন পর এক লোক কিছু গুলি হাতে নিয়ে গাড়ির নিকট আসল। তখন মেজর তাঁকে সম্মান করে গাড়িতে তুললেন এবং সিটে বসালেন। লোকটি চালককে গাড়ি চালাতে বললেন। গাড়ি সচল হয়ে গেল। সেই লোকটি হলেন শাহ সাহেব কেবলা। ফলে আরকান সড়কে গাড়ি চালকদের নিকট শাহ সাহেব কেবলা একজন অলি এবং দরবেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। এরকম অনেক কেরামতের ঘটনা শাহ সাহেব কেবলার জীবদ্দশায় ঘটেছে।



২: চট্টগ্রাম শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজী আবদুল হক সওদাগর আধুনগর হাজীর রাস্তার মাথার হাকিম আলী সওদাগরের (প্রকাশ হালিমার বাপ) জামাতা | হক সাহেব দীর্ঘদিন যাবত নিঃসন্তান ছিলেন, অনেক সাধনার পর ১৯৬৬ সালে হক সাহেব পুত্র সন্তানের জনক হন , পুত্রের নাম রাখা হয় মোহাম্মদ হামিদুল হক | পুত্রের জন্মের পর হতেই হক সাহেবের ব্যবসা- বানিজ্যে আরো উন্নতির ছোঁয়া লাগলো, হক সাহেব মনে মনে নিয়ত করলেন পুত্রের ছয়মাস পূর্ন হলে পুত্রকে নিয়ে চট্টগ্রামের বিখ্যাত বায়েজীদ বোস্তামী'র দরগাহ জিয়ারত করার পর শ্বশুরবাড়ী আধুনগর যাবেন এবং শাহ সাহেব কেবলার সাথে সাক্ষাত করবেন তার নিয়তের কথা নিজের মনেই রাখলেন কাউকে বললেন না এমনকি স্ত্রীকেও না | দেখতে দেখতে পুত্রের বয়স ছয়মাস পূর্ন হলো, সওদাগর সাহেব স্ত্রী-পুত্র ও নিকটাত্মীয় নুরুল কবিরকে নিয়ে বিকাল তিনটার সময় বায়েজীদ বোস্তামীর' মাজারে রওয়ানা হলেন | আজ মাজার জিয়ারত করে আগামীকাল সকাল বেলায় আধুনগর রওয়ানা হবেন এমন পরিকল্পনাই ছিল সওদাগর সাহেবের যা কাউকে বলেননি | মাজার জিয়ারত করা হলো, ঘরে ফেরার আগে বোস্তামী কাছিম কে খাবার দিতে গেলেন , এখানেই ঘটল বিপত্তি ! বাঁশের কঞ্চিতে বিঁধে বোস্তামী কাছিমকে মাংস খাওয়াতে গেলে বোস্তামী কাছিম মাংস না খেয়ে নুরুল কবিরের কোলে থাকা শিশু মোহাম্মদ হামিদুল হকের পায়ের কনিষ্ঠা আঙ্গুল কামড়ে ধরে টানাটানি করতে লাগলো , অনেক টানাটানি ও দোয়া-দরুদ পড়ার পর এক পর্যায়ে বোস্তামী কাছিম শিশু মোহাম্মদ হামিদুল হকের আঙ্গুল ছেড়ে দিল . সওদাগর সাহেব মনে মনে ভয় পেয়ে গেলেন , তিনি ঘরে ফিরে এসে স্ত্রী-পুত্র ও নুরুল কবিরকে নিয়ে আধুনগর রওয়ানা হলেনt উল্লেখ্য তখনও শঙ্খ নদীর উপর দোহাজারী সেতু নির্মিত হয়নি | রড় প্রায় ১২টার পর তারা গন্তব্যে অর্থাৎ হাকিম আলী সওদাগরের বাড়ী পৌঁছলেন | হাজীর রাস্তার মাথায় বাড়ীর সামনেই হাকিম আলী সওদাগরের একটি চায়ের দোকান ছিল. হযরত শাহ সাহেব ভোরে সেই দোকানে এলেন, চা পান করলেন, দোকান ভর্তি মানুষ, এক পর্যায়ে শাহ সাহেব হেসে হাকিম আলীকে বললেন তুই তো খুবই মজায় আছিস শহর থেকে তোর মেয়ে ও মেয়ে জামাই এসেছে, তোর নতুন নাতি এসেছে, মেহমান এসেছে, যা জলদি তোর নাতিকে নিয়ে আয়, তাকে একটু দেখি ! শাহ সাহেবের মুখে এই কথা শুনে হাকিম আলী অবাক হয়ে গেলেন কারন তার ঘরে মেহমান এসেছে গভীর রাতে পরিবারের সদস্য ছাড়া কেউ জানেনা পরে তিনি বুঝতে পারলেন, শাহ সাহেবের তো কোন কিছু অজানা থাকার কথা নয় ! তিনি ঘরের ভিতর হতে কোলে করে নাতি মোহাম্মদ হামিদুল হককে নিয়ে শাহ সাহেবের কোলে দিলেন জামাতা আবদুল হক ও নুরুল কবিরও আসলো | শাহ সাহেব শিশু মোহাম্মদ হামিদুল হককে কোলে নিয়ে আল্লাহু আকবর রব দিয়ে উঠলেন, এবং বললেন এই শিশু তো সুলতানুল আরেফিন বায়েজীদ বোস্তামীর আঙ্গুল নিয়ে জন্মেছে তাই বোস্তামী কাছিম এই আঙ্গুল নিয়ে টানাটানি করছিলো , হাকিম আলী এসব আধ্যাত্মিক কথার কিছুই বুঝলেন না কারন মেয়ে ও জামাতা এ ব্যপারে কিছুই বলেনি .. আবদুল হক সওদাগর হযরত শাহ সাহেবের কেরামত সম্পর্কে জানতেন আর সেদিন হতেই তিনি ও নুরুল কবির শাহ সাহেবের আশেক' হয়ে গেলেন | উল্লেখ্য হাজী আবদুল হক সওদাগর ও হাজী নুরুল কবির সওদাগর হযরত শাহ সাহেব কেবলার স্নেহধন্য ছিলেন |

অবদান[সম্পাদনা]

শাহ সাহেব কেবলা ১৯৭২ সালের ১১ রবিউল আউয়াল ঐতিহাসিক আন্তর্জাতিক চুনতী সীরাতুন্নবী (সাঃ) মাহফিল প্রবর্তন করেন। এই মাহফিল ১৯৭৩ সালে ২দিন, ১৯৭৪ সালে ৩ দিন, ১৯৭৫ সালে ৫ দিন, ১৯৭৬ সালে ১০ দিন, ১৯৭৭ সালে ১২ দিন, ১৯৭৮ সালে ১২ দিন, ১৯৭৯ সালে ১৫ দিন, ১৯৮০ সালে ১৯ দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এরপর থেকে প্রতিবছর ধারাবাহিকভাবে ১৯ দিন ব্যাপী সীরাতুন্নবী (সাঃ) মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে । ১৯৮৩ সালে মাহফিলের ১৯ দিন আগে শাহ সাহেব কেবলা ইন্তেকাল করেন। চুনতী সীরত ময়দানের পাশে তাঁর মাজার রয়েছে। অসংখ্য ভক্তরা প্রতিনিয়ত তাঁর মাজার জেয়ারতে আসেন। দেশ বরেণ্য আলেমরা-বক্তারা ১৯ দিন ব্যাপী মাহফিলে সীরাতুন্নবী (সাঃ) এ ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক ওয়ায়েজ করেন।

বিবিধ[সম্পাদনা]

বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতের পীর মাশায়েখগণ.

তথ্য সূত্রঃ[সম্পাদনা]

  1. "চুনতি ইউনিয়নের প্রখ্যাত ব্যাক্তিদের সংক্ষিপ্ত তালিকা - চুনতি ইউনিয়ন - চুনতি ইউনিয়ন"chunatiup.chittagong.gov.bd