বেলা শুরু

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বেলা শুরু
টিজার পোস্টার
পরিচালকনন্দিতা রায়
শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
প্রযোজকনন্দিতা রায়
শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
শ্রেষ্ঠাংশেসৌমিত্র চ্যাটার্জী
স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত
অপরাজিতা আঢ্য
মনামী ঘোষ
ইন্দ্রাণী দত্ত
খরাজ মুখোপাধ্যায়
অনিন্দ্য চ্যাটার্জী
শঙ্কর চক্রবর্তী
সুজয় প্রসাদ চ্যাটার্জী
সায়াক চক্রবর্তী
সুরকারঅনুপম রায়
চিত্রগ্রাহকসুবহঙ্কর ভর
প্রযোজনা
কোম্পানি
মুক্তি২০ মে ২০২২[১]
দেশভারত
ভাষাবাংলা
আয়₹৩৫ লাখ

বেলা শুরু ২০২২ সালের বাংলা পারিবারিক নাট্য চলচ্চিত্র যা নন্দিতা রায় এবং শিবপ্রসাদ মুখার্জি পরিচালনা ও প্রযোজনা করেছেন। পরিচালকদের মতে এটি তাদের পূর্ববর্তী চলচ্চিত্র বেলা শেষের প্রিকোয়েল বা সিক্যুয়েল নয়। মূল চিত্রগ্রহণ ৩০ নভেম্বর ২০১৮ থেকে বোলপুরে শুরু হয়েছিল।[২][৩][৪][৫][৬][৭]

ভারতে কোভিড-১৯ এর বৈশ্বিক মহামারীর কারণে চলচ্চিত্রের প্রধান নায়ক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও নায়িকা স্বাতীলেখা সেনগুপ্তর মৃত্যুর পর ২০শে মে ২০২২ তারিখে এই ছবি হলে মুক্তি পায় ।

পটভূমি[সম্পাদনা]

গল্পের প্রেক্ষাপট 'বেলাশেষে'র ঘটনার ৫ বছর পর । আরতি আলৎসহাইমারের রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে । সে তার স্বামী বিশ্বনাথকে চিনতে পারছে না, এবং নিজের ৩ মেয়ে - মালশ্রী, কাবেরী এবং পিউ এবং একমাত্র ছেলে বারীন ছাড়া পারিবারিক জীবনের সবকিছু ভুলে গেছে । সে এখনো বিজন (মালশ্রীর স্বামী) এবং শর্মিষ্ঠা (বারিনের স্ত্রী) কে চিনতে পারে এবং জ্যোতির্ময় (কাবেরীর স্বামী) এবং পলাশের (পিউ-এর স্বামী) অস্তিত্বের কথা মনে রাখে, কিন্তু তাদের চিনতে পারে না । আরতির শব্দ সহ্য করার ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে, বিশ্বনাথ তাকে কলকাতা থেকে শান্তিনিকেতন নিয়ে যায় । নিজের বার্ধক্য সত্ত্বেও, বিশ্বনাথ একা হাতে আরতির সেবাশুশ্রুষা করতে থাকে । আরতির দায়িত্বভার সে তাদের সন্তানদের বা কোনো নার্সের হাতে তুলে দিতে রাজি নয় । বিশ্বনাথ জানায় যে সে তাদের বিবাহিত জীবনে আরতিকে যথেষ্ট সময় না দিতে পারার প্রায়শ্চিত্ত হিসাবে কারও সাহায্য ছাড়া সে একাই আরতির যত্ন নিতে চায় । বিশ্বনাথের বহু প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, আরতি তাকে তার স্বামী হিসাবে চিনতে পারলো না (আরতির বিশ্বাস, তার স্বামী তাকে ৫ বছর আগেই ছেড়ে চলে গেছে), বরং তার গোপনতা লঙ্ঘনের জন্য বিশ্বনাথকে ঘৃণার চোখে দেখে । আরতি প্রায়ই কাউকে না বলে বাড়ি ছেড়ে চলে যেত ও তার ছোটবেলার বন্ধু অতীন্দ্রের খোঁজে গ্রামে ঘুরে বেড়াতো । আরতিকে তার স্মৃতি ফিরে পেতে সাহায্য করার প্রয়াসে, বিশ্বনাথ তাকে ফরিদপুরে ('বেলাশেষে'তে বলা হয় যে বিশ্বনাথের জন্ম ময়মনসিংহ জেলাতে ও আরতির জন্ম ফরিদপুর জেলাতে এবং ১৯৬০এর দশকে বিবাহের অল্পকালের মধ্যেই দুজনে হিন্দুদের উপর ধর্মীয় উৎপীড়ন থেকে বাঁচতে কলকাতায় পালিয়ে আসে) নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় । তাদের সঙ্গে যায় মালশ্রী, বিজন, পিউ, পলাশ ও জ্যোতির্ময়। ফরিদপুরে তারা অতীন্দ্রের সাথে দেখা করে এবং আরতিকে তার শৈশবের স্মৃতি মনে করানোর চেষ্টা করে। আরতি দৃশ্যমানভাবে খুশি হয়ে ওঠে এবং তার বিয়ের দিনটির কথা মনে করতে শুরু করে। সে তার স্বামীর নাম স্মরণ করলেও তাকে চিনতে ব্যর্থ হয় । আরতিকে বিশ্বনাথ সম্পর্কে তার স্মৃতি ফিরে পেতে সাহায্য করার শেষ প্রচেষ্টায়, তার পরিবার বিশ্বনাথ ও আরতির বিবাহবাসরের ঘটনাবলীর পুনর্নির্মাণ করে, যা আরতি সানন্দের সাথে উপভোগ করে । যদিও বিশ্বনাথের প্রতি আরতির ঘৃণা তার বিবাহের পুনর্নির্মাণের পরে চলে যায়, তবুও সে তাকে তার স্বামী হিসাবে চিনতে পারলো না । বিশ্বনাথ অবশেষে আরতির কাছ থেকে তার স্বামী হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়ার সমস্ত আশা ছেড়ে দেয় ।

বিশ্বনাথ এবং আরতির গল্পের সমান্তরাল, এই ছবিতে তাদের সন্তান এবং তাদের পতি/পত্নীদের গল্পও দেখানো হয়েছে । বারীন (যে 'বেলাশেষে'তে বিশ্বনাথের প্রকাশনা সংস্থায় তাঁর পিতার সহকারী ছিল) এখন একজন সফল ব্যবসায়ী যে কলকাতায় নিজের প্রকাশনা সংস্থা চালায় । তার আশঙ্কা ছিল যে তার স্ত্রী শর্মিষ্ঠা (যাকে একজন ছোট-খাট বস্ত্রব্যবসায়ী হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছিল) পেশাগতভাবে তাকে ছাপিয়ে যাবে । এই মন কষাকষির ফলে শর্মিষ্ঠা বারীনকে ডিভোর্স দেয় । শর্মিষ্ঠা তার ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে মুম্বাইতে চলে যায় । সেখানে সে একটি বড় বুটিক খোলে, যেখানে বহু নামী-দামী বলিউড তারকারা ঘন-ঘন যাতায়াত করতে থাকে । সে তার সহকর্মী কুণাল ভরদ্বাজকে বিয়ে করার কথা ভাবছিল । আরতির বারীনের ডিভোর্সের কথা মনে পড়ে না, তাই সে বারীনকে বারবার শর্মিষ্ঠার কথা জিজ্ঞেস করতে থাকে । আরতিকে তার স্মৃতি পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করার প্রয়াসে, বারীন ব্যক্তিগতভাবে শর্মিষ্ঠাকে আরতির সাথে দেখা করার জন্য অনুরোধ করে । শর্মিষ্ঠা প্রথমে প্রত্যাখ্যান করলেও পরে ফরিদপুর থেকে ফিরে আসার পর সে শান্তিনিকেতনে বারীন ও তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। এখানে, বারিন শর্মিষ্ঠাকে তাদের বিবাহিত জীবনে অবাধে কাজ করতে না দেওয়ার জন্য ক্ষমা চায় এবং তাকে তার চেয়ে বেশি প্রতিভাবান বলে স্বীকার করে । ফলস্বরূপ, তাদের মধ্যে প্রেম পুনরুজ্জীবিত হয় এবং শর্মিষ্ঠা মুম্বাইতে ফিরে যেতে অস্বীকার করে ।

বহু বছর ধরে স্পষ্টতই সুখী বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও বিজন ও মালশ্রী নিঃসন্তান । মালশ্রীকে তার পরিবার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করার জন্য চাপ দেয়, কিন্তু সে অস্বীকার করে। পরে সে বিশ্বনাথের কাছে প্রকাশ করে যে বিজন আসলে সমকামী, কিন্তু সমাজের কাছে তার এই যৌনতাকে গোপন রাখতে তার পরিবার তাকে এক মেয়ের সঙ্গে বিয়ে করতে বাধ্য করেছিল । বিশ্বনাথ মালশ্রীকে বিজনকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে, কিন্তু মালশ্রী জবাব দেয় যে বিশ্বনাথের মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী আরতির প্রতি তার দরদের দ্বারা প্রমাণ করেছে যে বিবাহিত জীবন শুধুমাত্র সন্তান-কেন্দ্রিক নয়। মালশ্রী বলে যে সে এবং বিজন উভয়েই পরকীয়া সম্পর্কের মাধ্যমে তাদের মধ্যের সম্পর্ক ভাঙ্গার চেষ্টা করেছিল কিন্তু উভয়েই তা করতে ব্যর্থ হয় কারণ তারা একে অপরের সাহচর্যে সান্ত্বনা পেয়েছিলেন। মালশ্রী বিশ্বাস করেন যে তাদের সম্পর্ক শারীরিক কামলালসার উর্ধ্বে উঠে গেছে এবং তার যদি কখনও আরতির মতো অবস্থা হয় তবে বিজন নিশ্চয়ই বিশ্বনাথের মতো বিশ্বস্ত এবং একনিষ্ঠ স্বামী হিসেবে নিজেকে প্রমাণিত করবে ।

পলাশ বলিউডের পরিচালক হবার শখ ছেড়ে দিয়ে মুম্বাইতে এক টিভি অভিনেতা হিসেবে কাজ করছে । পিউও একজন ডিজাইনার হিসেবে কাজ করার জন্য ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ছেড়েছিল, কিন্তু তারপর কাজ বন্ধ করে দেয় কারণ সে সন্তান জন্ম দিয়ে মাতৃত্ব উপভোগ করতে চায় । দুর্ভাগ্যবশতঃ তার এই স্বপ্ন এখনো পূর্ণ হলো না, এবং পলাশ তার কাজে এতটা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে যে পিউকে সময় দিতে পারছে না । পিউ তার বিবাহিত জীবনের ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশ হয়ে পড়ছিল, কিন্তু যখন সে দেখতে পায় বিশ্বনাথ আরতির সাথে পর্যাপ্ত সময় কাটাতে না পারার জন্য পশ্চাত্তাপ করছে, তখন সে পলাশের সাথে একই ভুলের পুনরাবৃত্তি না করার সিদ্ধান্ত নেয় । পিউ জানতে পারে যে টেলিভিশন শিল্পে প্রাসঙ্গিক থাকার জন্য ছোট অভিনেতাদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে পলাশ মানসিক চাপের মধ্যে আছে এবং অলিগোস্পার্মিয়াতে (বীর্যে শুক্রাণুর পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে কম থাকা) ভুগছে । পলাশ প্রথমে পিউয়ের সঙ্গে শান্তিনিকেতনে যেতে রাজি ছিল না, কিন্তু আরতি তার সঙ্গে দেখা করার জন্য জেদ করতে থাকায় সে রাজি হয় । শান্তিনিকেতনে সে পিউয়ের সাথে পুনরায় সংযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হন । ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে পরিবারের বিদায়ের প্রাক্কালে, পলাশ টেলিভিশন শিল্প থেকে সরে দাঁড়িয়ে তার স্ত্রীর সাথে আরও বেশি সময় কাটানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয় । যেদিন বিশ্বনাথের সাথে আরতির বিবাহ পুনর্নির্মাণ করা হয়, পিউ পলাশকে জানায় যে সে অবশেষে তার সন্তানের সাথে গর্ভবতী হয়েছে ।

কাস্ট[সম্পাদনা]

  1. বিশ্বনাথ সরকারের চরিত্রে সৌমিত্র চ্যাটার্জি
  2. আরতি সরকারের চরিত্রে স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত
  3. অতীন্দ্র চরিত্রে রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত
  4. কাবেরী/বুড়ি, বিশ্বনাথ এবং আরতির বড় মেয়ের চরিত্রে অপরাজিতা আঢ্য
  5. কাবেরীর স্বামী জ্যোতির্ময়ের চরিত্রে খরাজ মুখোপাধ্যায়
  6. মালশ্রী/মিলি, বিশ্বনাথ এবং আরতির মেজো মেয়ের চরিত্রে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত
  7. বারীন, বিশ্বনাথ ও আরতির একমাত্র ছেলের চরিত্রে শঙ্কর চক্রবর্তী
  8. শর্মিষ্ঠা, বিশ্বনাথ এবং আরতির পুত্রবধূর চরিত্রে ইন্দ্রাণী দত্ত
  9. মালশ্রীর স্বামী বিজনের চরিত্রে সুজয় প্রসাদ চ্যাটার্জি
  10. জ্যোতির্ময় ও কাবেরীর বড় মেয়ের চরিত্রে অরুণিমা হালদার
  11. বারীন ও শর্মিষ্ঠার মেয়ের চরিত্রে তনিকা বসু
  12. জ্যোতির্ময় ও কাবেরীর মেজো মেয়ের চরিত্রে সোহিনী ব্যানার্জি
  13. বুড়ি ও জ্যোতির্ময়ের মেয়ের চরিত্রে দেবস্মিতা বনিক
  14. পিউ, বিশ্বনাথ ও আরতির ছোট মেয়ের চরিত্রে মনামী ঘোষ
  15. বুড়ি এবং জ্যোতির্ময়ের বড় মেয়ের চরিত্রে রূপশা ভাদুড়ি
  16. পিউর স্বামী পলাশের চরিত্রে অনিন্দ্য চ্যাটার্জি
  17. গণশা, শান্তিনিকেতনে সরকার পরিবারের সেবকের চরিত্রে প্রদীপ ভট্টাচার্য
  18. বুড়ি ও জ্যোতির্ময়ের বড় মেয়ের প্রেমিক অর্কর চরিত্রে সায়ক চক্রবর্তী ,
  19. ডঃ ডক্টর বিপ্লব ব্যানার্জী, আরতির চিকিৎসারত জেরিয়াট্রিক সাইকিয়াট্রিস্ট (যে মনস্তত্ত্ববিদ ডাক্তার বয়স্ক লোকের মনস্তাত্ত্বিক রোগের চিকিৎসায় পারদর্শী)-এর চরিত্রে কৌশিক সেন

বক্স অফিস[সম্পাদনা]

২১ মে তারিখে জানা যায় ১ দিনে চলচ্চিত্রটি আয় করেছে ৩৫ লাখ ভারতীয় টাকা।[১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "মুক্তি পেলো সৌমিত্রের 'বেলাশুরু', প্রথম দিনে আয় কত?"দৈনিক ইত্তেফাক। ২২ মে ২০২২। 
  2. "Picture Perfect: 'Bela Shuru' team having a gala time in Bolpur - Times of India"The Times of India (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১৩ 
  3. "TEAM BELA SHURU GOES BACK TO THE BEGINNING IN SANTINIKETAN TEAM BELA SHURU GOES BACK TO THE BEGINNING IN SANTINIKETAN"epaper.telegraphindia.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১৩ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. Correspondent, Our। "Shiboprasad Mukherjee, Nandita Roy's Windows Production announce their line-up for 2019"Cinestaan। ২০২২-০৩-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১৩ 
  5. "'Bela Shuru' starts rolling in Bolpur - Times of India"The Times of India (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১৩ 
  6. Desk, Bangla (২০১৮-১২-০৭)। "কেমন চলছে 'বেলা শুরু' শ্যুটিং, দেখে নিন"Kolkata24x7 | Read Latest Bengali News, Breaking News in Bangla from West Bengal's Leading online Newspaper (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১৩ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  7. BookMyShow। "Belashuru Movie (2019) | Reviews, Cast & Release Date in Kolkata"BookMyShow (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১৩