বিরাজ বৌ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
বিরাজবৌ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত একটি জনপ্রিয় উপন্যাস। ভারতবর্ষ পত্রিকায় ১৩২৩ বঙ্গাব্দের পৌষ ও মাঘ সংখ্যায় উপন্যাসখানি প্রকাশিত হয়। বিরাজবৌ উক্ত পত্রিকায় প্রকাশিত শরৎচন্দ্রের প্রথম উপন্যাস। ১৩২৩ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসে (১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২ মে) গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় অ্যান্ড সন্স থেকে বইটি পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়। লেখকের দ্বিতীয় মুদ্রিত বই এটি।
'''''বিরাজবৌ''''' [[শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়]] রচিত একটি জনপ্রিয় উপন্যাস। ভারতবর্ষ পত্রিকায় ১৩২৩ বঙ্গাব্দের পৌষ ও মাঘ সংখ্যায় উপন্যাসখানি প্রকাশিত হয়। বিরাজবৌ উক্ত পত্রিকায় প্রকাশিত শরৎচন্দ্রের প্রথম উপন্যাস। ১৩২৩ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসে (১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২ মে) গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় অ্যান্ড সন্স থেকে বইটি পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়। লেখকের দ্বিতীয় মুদ্রিত বই এটি।


শরৎচন্দ্র প্রথমে গল্পের আকারে বিরাজবৌ রচনা করেছিলেন। পরে বন্ধু যোগেন্দ্রনাথ সরকারের পীড়াপীড়িতে এটি উপন্যাসের আকারে পরিবর্ধিত করেন। লেখকের রেঙ্গুন প্রবাসকালে উপন্যাসটি রচিত হয়েছিল। প্রকাশক গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় অ্যান্ড সন্সকে শরৎচন্দ্র এই বইটির স্বত্ত্ব দু'শো টাকায় বিক্রি করে দিয়েছিলেন।
শরৎচন্দ্র প্রথমে গল্পের আকারে বিরাজবৌ রচনা করেছিলেন। পরে বন্ধু যোগেন্দ্রনাথ সরকারের পীড়াপীড়িতে এটি উপন্যাসের আকারে পরিবর্ধিত করেন। লেখকের রেঙ্গুন প্রবাসকালে উপন্যাসটি রচিত হয়েছিল। প্রকাশক গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় অ্যান্ড সন্সকে শরৎচন্দ্র এই বইটির স্বত্ত্ব দু'শো টাকায় বিক্রি করে দিয়েছিলেন।
৫ নং লাইন: ৫ নং লাইন:
সেকালে বিবাহের উপহার হিসেবে বইটি খুব জনপ্রিয় হওয়ায় লাল কালিতে ছাপা উপন্যাসের একটি বিশেষ সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল।
সেকালে বিবাহের উপহার হিসেবে বইটি খুব জনপ্রিয় হওয়ায় লাল কালিতে ছাপা উপন্যাসের একটি বিশেষ সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল।


উপন্যাসের সংক্ষিপ্তসার
==উপন্যাসের সংক্ষিপ্তসার==


নীলাম্বর ও পীতাম্বর দুই ভাই। দাদা পীতাম্বর বুদ্ধিহীন, অথচ পরোপকারী। উপার্জন করেন না। শুধু প্রচুর গাঁজা খান। ভাই পীতাম্বর সংসারী মানুষ। তিনি নিজের উপার্জন নষ্ট না করে পৈত্রিক সম্পত্তি দু'ভাগ করে দিয়ে বাড়ির মাঝে পাঁচিল তুলে দিলেন। নীলাম্বরের স্ত্রী বিরাজমোহিনী এতে কষ্টে পড়লেন। দুই ভাইয়ের একমাত্র বোন হরিমতির দেখাশোনার ভার নীলাম্বরকেই নিতে হল। হরিমতির বিয়ে দিতে এবং তার স্বামীর পড়াশোনার খরচ জোগাতে নীলাম্বরকে বিষয়সম্পত্তি-জমিজমা সব বন্ধক রাখতে হল। কিন্তু বিরাজের পরামর্শ সত্ত্বেও মমতাবশত পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করতে পারলেন না। বিরাজ নিজে অভুক্ত থেকেও স্বামীর অন্ন জোগাতে লাগল।
নীলাম্বর ও পীতাম্বর দুই ভাই। দাদা পীতাম্বর বুদ্ধিহীন, অথচ পরোপকারী। উপার্জন করেন না। শুধু প্রচুর গাঁজা খান। ভাই পীতাম্বর সংসারী মানুষ। তিনি নিজের উপার্জন নষ্ট না করে পৈত্রিক সম্পত্তি দু'ভাগ করে দিয়ে বাড়ির মাঝে পাঁচিল তুলে দিলেন। নীলাম্বরের স্ত্রী বিরাজমোহিনী এতে কষ্টে পড়লেন। দুই ভাইয়ের একমাত্র বোন হরিমতির দেখাশোনার ভার নীলাম্বরকেই নিতে হল। হরিমতির বিয়ে দিতে এবং তার স্বামীর পড়াশোনার খরচ জোগাতে নীলাম্বরকে বিষয়সম্পত্তি-জমিজমা সব বন্ধক রাখতে হল। কিন্তু বিরাজের পরামর্শ সত্ত্বেও মমতাবশত পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করতে পারলেন না। বিরাজ নিজে অভুক্ত থেকেও স্বামীর অন্ন জোগাতে লাগল।
১১ নং লাইন: ১১ নং লাইন:
ইতিমধ্যে গ্রামের নতুন জমিদার রাজেন্দ্রকুমার সুন্দরী বিরাজের প্রতি আকৃষ্ট হলেন। তিনি বিরাজকে দেখার জন্য মাছ ধরার আছিলায় পুকুরে ছিপ ফেলে বসে থাকতেন। একদিন স্নান করতে গিয়ে ঘাটে রাজেন্দ্রকুমারকে দেখে বিরাজ তাঁকে খুব অপমান করলেন। সেরাতে চাল ধার করতে বেরিয়ে গাঁজাখোর স্বামীর সন্দেহভাজন হয়ে স্বামীর ছোঁড়া পানের ডিবেয় আহত হলেন বিরাজ। অপমানিতা হয়ে গৃহত্যাগ করে বিরাজ উঠলেন জমিদারের বজরায়। কিন্তু সেখানে বিপদ বুঝে গঙ্গায় ঝাঁপ দিলেন তিনি। কারা তাকে উদ্ধার করে ইমামবাড়া হাসপাতালে দিল। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে দাসীবৃত্তি-ভিক্ষাবৃত্তি করে শেষে তারকেশ্বরে উপস্থিত হলেন বিরাজ। সেখানে তীর্থযাত্রী নীলাম্বরের সঙ্গে তাঁর দেখা হল। কিন্তু তখন তাঁর শেষ অবস্থা। অবশেষে অনুতপ্ত স্বামীর কোলে মাথা রেখে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি।
ইতিমধ্যে গ্রামের নতুন জমিদার রাজেন্দ্রকুমার সুন্দরী বিরাজের প্রতি আকৃষ্ট হলেন। তিনি বিরাজকে দেখার জন্য মাছ ধরার আছিলায় পুকুরে ছিপ ফেলে বসে থাকতেন। একদিন স্নান করতে গিয়ে ঘাটে রাজেন্দ্রকুমারকে দেখে বিরাজ তাঁকে খুব অপমান করলেন। সেরাতে চাল ধার করতে বেরিয়ে গাঁজাখোর স্বামীর সন্দেহভাজন হয়ে স্বামীর ছোঁড়া পানের ডিবেয় আহত হলেন বিরাজ। অপমানিতা হয়ে গৃহত্যাগ করে বিরাজ উঠলেন জমিদারের বজরায়। কিন্তু সেখানে বিপদ বুঝে গঙ্গায় ঝাঁপ দিলেন তিনি। কারা তাকে উদ্ধার করে ইমামবাড়া হাসপাতালে দিল। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে দাসীবৃত্তি-ভিক্ষাবৃত্তি করে শেষে তারকেশ্বরে উপস্থিত হলেন বিরাজ। সেখানে তীর্থযাত্রী নীলাম্বরের সঙ্গে তাঁর দেখা হল। কিন্তু তখন তাঁর শেষ অবস্থা। অবশেষে অনুতপ্ত স্বামীর কোলে মাথা রেখে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি।


তথ্যসূত্র
==তথ্যসূত্র==


শরৎ রচনাবলী, প্রথম খণ্ড, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, তুলি-কলম।
শরৎ রচনাবলী, প্রথম খণ্ড, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, তুলি-কলম।

১৫:১১, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১১ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

বিরাজবৌ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত একটি জনপ্রিয় উপন্যাস। ভারতবর্ষ পত্রিকায় ১৩২৩ বঙ্গাব্দের পৌষ ও মাঘ সংখ্যায় উপন্যাসখানি প্রকাশিত হয়। বিরাজবৌ উক্ত পত্রিকায় প্রকাশিত শরৎচন্দ্রের প্রথম উপন্যাস। ১৩২৩ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসে (১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২ মে) গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় অ্যান্ড সন্স থেকে বইটি পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়। লেখকের দ্বিতীয় মুদ্রিত বই এটি।

শরৎচন্দ্র প্রথমে গল্পের আকারে বিরাজবৌ রচনা করেছিলেন। পরে বন্ধু যোগেন্দ্রনাথ সরকারের পীড়াপীড়িতে এটি উপন্যাসের আকারে পরিবর্ধিত করেন। লেখকের রেঙ্গুন প্রবাসকালে উপন্যাসটি রচিত হয়েছিল। প্রকাশক গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় অ্যান্ড সন্সকে শরৎচন্দ্র এই বইটির স্বত্ত্ব দু'শো টাকায় বিক্রি করে দিয়েছিলেন।

সেকালে বিবাহের উপহার হিসেবে বইটি খুব জনপ্রিয় হওয়ায় লাল কালিতে ছাপা উপন্যাসের একটি বিশেষ সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল।

উপন্যাসের সংক্ষিপ্তসার

নীলাম্বর ও পীতাম্বর দুই ভাই। দাদা পীতাম্বর বুদ্ধিহীন, অথচ পরোপকারী। উপার্জন করেন না। শুধু প্রচুর গাঁজা খান। ভাই পীতাম্বর সংসারী মানুষ। তিনি নিজের উপার্জন নষ্ট না করে পৈত্রিক সম্পত্তি দু'ভাগ করে দিয়ে বাড়ির মাঝে পাঁচিল তুলে দিলেন। নীলাম্বরের স্ত্রী বিরাজমোহিনী এতে কষ্টে পড়লেন। দুই ভাইয়ের একমাত্র বোন হরিমতির দেখাশোনার ভার নীলাম্বরকেই নিতে হল। হরিমতির বিয়ে দিতে এবং তার স্বামীর পড়াশোনার খরচ জোগাতে নীলাম্বরকে বিষয়সম্পত্তি-জমিজমা সব বন্ধক রাখতে হল। কিন্তু বিরাজের পরামর্শ সত্ত্বেও মমতাবশত পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করতে পারলেন না। বিরাজ নিজে অভুক্ত থেকেও স্বামীর অন্ন জোগাতে লাগল।

ইতিমধ্যে গ্রামের নতুন জমিদার রাজেন্দ্রকুমার সুন্দরী বিরাজের প্রতি আকৃষ্ট হলেন। তিনি বিরাজকে দেখার জন্য মাছ ধরার আছিলায় পুকুরে ছিপ ফেলে বসে থাকতেন। একদিন স্নান করতে গিয়ে ঘাটে রাজেন্দ্রকুমারকে দেখে বিরাজ তাঁকে খুব অপমান করলেন। সেরাতে চাল ধার করতে বেরিয়ে গাঁজাখোর স্বামীর সন্দেহভাজন হয়ে স্বামীর ছোঁড়া পানের ডিবেয় আহত হলেন বিরাজ। অপমানিতা হয়ে গৃহত্যাগ করে বিরাজ উঠলেন জমিদারের বজরায়। কিন্তু সেখানে বিপদ বুঝে গঙ্গায় ঝাঁপ দিলেন তিনি। কারা তাকে উদ্ধার করে ইমামবাড়া হাসপাতালে দিল। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে দাসীবৃত্তি-ভিক্ষাবৃত্তি করে শেষে তারকেশ্বরে উপস্থিত হলেন বিরাজ। সেখানে তীর্থযাত্রী নীলাম্বরের সঙ্গে তাঁর দেখা হল। কিন্তু তখন তাঁর শেষ অবস্থা। অবশেষে অনুতপ্ত স্বামীর কোলে মাথা রেখে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি।

তথ্যসূত্র

শরৎ রচনাবলী, প্রথম খণ্ড, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, তুলি-কলম। শরৎ সাহিত্যকোষ, বারিদবরণ ঘোষ, পুনশ্চ (পৃ. ৭৭-৭৮)