পাণিনি: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
VolkovBot (আলোচনা | অবদান)
রোবট মুছে ফেলছে: simple:Pāṇini
Xqbot (আলোচনা | অবদান)
রোবট পরিবর্তন সাধন করছে: nn:Panini
৮২ নং লাইন: ৮২ নং লাইন:
[[new:पाणिनि]]
[[new:पाणिनि]]
[[nl:Pāṇini]]
[[nl:Pāṇini]]
[[nn:Pāṇini]]
[[nn:Panini]]
[[no:Pāṇini]]
[[no:Pāṇini]]
[[pl:Pāṇini]]
[[pl:Pāṇini]]

০৩:২৪, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১০ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

আপনাকে অবশ্যই এই পরিষ্করণ টেমপ্লেটে একটি |reason= প্যারামিটার যোগ করতে হবে - এটি {{পরিষ্করণ|date=১০ নভেম্বর, ২০০৯|reason=<এখানে কারণ লিখুন>}}-এর সাথে প্রতিস্থাপন করুন, অথবা পরিষ্করণ টেমপ্লেটটি সরান।

পরিষ্করণের কোন কারণ ছাড়াই নিবন্ধসমূহ ট্যাগ করা হয়েছে পাণিনি একজন প্রাচীন ভারতীয় ব্যাকরণবিদ। পাণিনি নামের সাম্ভাব্য অর্থ পাণির বংশধর। যদিও ওড়িশার পাণি পদবীধারীরা মনে করে তারা পাণিনির বংশধর, ঐতিহাসিক প্রমাণ অনুযায়ী পাণিনি লৌহ যুগের প্রাচীন ভারতের গান্ধার অঞ্চলে গৌতম বুদ্ধের পরবর্তী কালে বাস করতেন (খষ্টপূর্ব সপ্তম থেকে চতুর্থ শতকের মধ্যের কোন সময়ে)। তিনি সংস্কৃত ব্যাকরনের ৩৯৫৯টি সূত্র (নিয়ম) সমেত একটি ব্যাকরণ বই লেখেন যার নাম ছিল অষ্টাধ্যায়ী (অর্থাৎ আটটি অধ্যায়ে বিভক্ত ছিল)। এটি বেদাঙ্গের ব্যাকরণ অংশের একটি প্রধান অঙ্গ। সংস্কৃত ভাষার লিখিত ব্যাকরণের এটিই প্রাচীনতম লব্ধ গ্রন্থ। (যদিও পণ্ডিতেরা মনে করেন এটি আরো পুরান কয়েটি পুস্তকের সাহায্যে লেখা হয়ে থাকতে পারে।) আসলে বৈদিক (প্রাচীন সংস্কৃত) ভাষাকে সংস্কার অর্থাৎ নতুন ভাবে ঢেলে সাজিয়ে পাণিনিই তথাকথিত "সংস্কৃত" ভাষার জন্ম দেন।

আধুনিক পরিভাষায় বর্ণনামূলক ব্যাকরণেরও প্রাচীনতম নিদর্শণ হল পাণিনির অষ্টাধ্যায়ী। পাণিনি ও অষ্টাধ্যায়ী ব্যাকরণ (একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা) (রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য) সংস্কৃত ভাষাটা খুবই খটোমটো, অন্তত আমার কাছে। তার ওপর ব্যাকরণ!!!! উরেঃ ব্যাস্‌! মা সরস্বতীর সঙ্গে আমার ছোটবেলা থেকে যে কেস চলছে, সেটা চলছে তো চলছেই। তবে ৬০ বছর পর, সম্প্রতি আমার উকিলবাবু আমায় একটা খবর দিয়েছেন। তাতে আমি সান্তনা পেয়েছি। মা সরস্বতী কেসটা হেরে গিয়েছেন। তাই টুকলী কোরে পাণিনি সম্বন্ধে লিখছি। কাদের কাছ থেকে টুকলী কোরেছি, সেটা শেষে লিখব। সংস্কৃত শিখে নাকি পাণিনি পড়তে হয়। তা, সংস্কৃত আমি শিখিনি। তাই সাহস করে এবারে আসল বিষয়ে আসি। আমরা কোলকাতার বিড়লা তারামণ্ডলে গেলে, পাণিনির একটি আবক্ষ মূর্ত্তি দেখতে পাব। তা এই পাণিনি ভদ্রলোকটি কে? কি বা তাঁর পরিচয়? আমাদের এই পোড়া দেশটার একটা দুর্ভাগ্য আছে। গ্রিকদের হেরোডেটাস ছিল, কিন্তু কলহন ছাড়া কেউ আর আমাদের প্রাচীন ইতিহাস লেখেন নি বা লিখলেও তা আর নানা কারণে পাওয়া যায় না। তাই কলহনের আগে জানতে হলে, আমাদের বিভিন্ন বিদেশী পর্য্যটকদের লেখা বিবরণ, জনশ্রুতি, উপকথার ওপর নির্ভর করতে হয়। এই সবের ওপর ভিত্তি করে, বলা যায় যে, পাণিনি খ্রীষ্টপূর্ব্ব ৯ম থেকে খ্রীষ্টপূর্ব্ব ৪র্থ শতাব্দীর মধ্যে কোন এক সময় জীবিত ছিলেন। তবে গবেষকরা একটা বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন যে, পাণিনির জীবনকাল খ্রীষ্টপূর্ব্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীর শেষে বা খ্রীষ্টপূর্ব্ব ৭ম শতাব্দীর প্রথম দিকে ছিল। পাণিনির জন্মস্থান নিয়েও একই রকম বিভ্রান্তি থাকলেও গবেষকরা মোটামুটি ভাবে একমত যে তিনি, গান্ধার প্রদেশের (বর্তমান- পাকিস্তান) শালাতুর (বর্তমান- লাহোর) গ্রামে জন্মেছিলেন। পাণিনির জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে মগধের রাজধানী পাটলীপুত্রে। তাই কিছু পণ্ডিতের মতে পাণিনির পূর্বপুরুষেরা শালাতুর গ্রামের হলেও পাণিনির জন্ম হয়েছিল, পাটলীপুত্রে। পাণিনি ছিলেন একজন শিষ্ট। শিষ্টেরা ছিলেন এক ধরণের ব্রাহ্মণ। শাস্ত্রের ওপর ছিল তাঁদের অসামান্য অধিকার। পার্থিব সুখ, স্বাচ্ছন্দ বিসর্জন দিয়ে তাঁরা একটি বিশেষ অঞ্চলে বসবাস করতেন(গবেষণা? ) । বাস স্থানের উত্তরে ছিল হিমালয়, দক্ষিণে বিন্ধ্য পর্বতমালা, পূর্বে বঙ্গভূমি এবং পশ্চিমে আরাবল্লী পাহাড়ের রেখা। পাণিনি ছিলেন, পণি নামে এক ঋষির সন্তান। এবার পণি বা পাণিন্‌ একটি গোত্র নাম। সংস্কৃত সাহিত্যে পণি নামে একটি গোষ্ঠীর নাম পাওয়া যায়। পণি, ফিনিকিয়, পিউনিক এবং ফিনিসীয় গোষ্ঠীর লোকেরা একসময় ভারত মহাসাগরের উপকূলে বসবাস করতেন। পাণিনির বাবা ছিলেন ফিনিকিয় পণি গোষ্ঠীর মানুষ। তাঁর নাম ছিল, শলঙ্ক। তাই পাণিনির আর এক নাম ছিল শালাঙ্কি। পাণিনির মা ছিলেন ডেসিয়ান। দক্ষ জাতির মহিলা। তাই তাঁর নাম দাক্ষি। তিনি রূপে গুণে অতুলনীয়া ছিলেন। পাণিনির আর এক নাম তাই দাক্ষিপুত্র। পাণিনির ভক্ত পতঞ্জলি পাণিনি কে এই নামে বিখ্যাত করেছেন। পাণিনি ছিলেন অহিগলমালা শিবের উপাসক। সেইজন্য তাঁকে আহিক বলা হয়েছে। অতএব, পাণিনির পুরো নাম হলো:- আহিক দাক্ষিপুত্র শালাঙ্কি শালাতুরীয় পাণিন্‌ পাণিনি। এই নামের মধ্যে পাণিনির ইষ্ট,মাতা,পিতা, জন্মস্থান, গোত্র সবকিছুর পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে। এবার আসা যাক, তাঁর ব্যাকরণ সম্বন্ধে।পাণিনির আগে কি ব্যাকরণ ছিল না? ছিল। বেদের যে ষড়ঙ্গ অর্থাৎ ৬ টি অঙ্গ (শিক্ষা, কল্প, ব্যাকরণ, ছন্দ, নিরুক্ত ও জ্যোতিষ) তার মধ্যে অন্যতম হলো ব্যাকরণ। বেদ মন্ত্রের প্রকৃত অর্থ হৃদয়ঙ্গম করতে হলে, ভাষাতত্ত্ব, (Linguistics), উচ্চারণ বিধি বা (Phonetics ) এবং ব্যাকরণ শাস্ত্র(Grammar) এই তিনটি বিষয় ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাণিনির আগে মোট ৮ টি ব্যাকরণের উল্লেখ পাওয়া যায়। সেগুলি হলো:- ঐন্দ্রং, চান্দ্রং, কাশকৃৎস্নং, কৌমারং,সারস্বতং , আপিশলং, শাকলং এবং শাকটায়নং। এর মধ্যে শাকটায়নং ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ। পাণিনি এইসব ব্যাকরণ ভালভাবেই পড়েছিলেন এবং এইসব ব্যাকরণ থেকে অনেক কিছু নিয়েছেন। তিনি এইসব ব্যাকরণের ভুল ধারণা গুলিকে বাদ দিয়েছেন এবং শেষ পর্য্যন্ত সবাইকে অতিক্রম করে গেছেন। পাণিনি তাঁর ব্যাকরণে বৈদিক ভাষা (ছান্দস) এবং আঞ্চলিক ভাষা ( লৌকিক) এই ২টি ভাষাকে গ্রহণ করেছেন। এই ব্যাপারটি পৃথিবীর কোন ব্যাকরণে আগেও ঘটেনি এবং পরেও না। এখানে বলে রাখা ভাল, রামায়ণে যখন সুগ্রীব ছদ্মবেশে হনুমানকে পাঠিয়েছিলেন রামচন্দ্রের পরিচয় জানতে, তখন হনুমানের কথা শুনে, রামচন্দ্র লক্ষণকে বলছেন যে হনুমান পরিশীলিত ও ব্যাকরণ সম্মত কথা বলছেন। রামচন্দ্র এও বলছেন যে হনুমান ব্যাকরণ বেশ ভালভাবে আয়ত্ত করেছেন। সুতরাং প্রাচীন যুগে যে ব্যাকরণের চর্চা ছিল, এব্যাপারে কোন বিতর্ক উঠতে পারে না। এখন স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন উঠতে পারে যে, পাণিনি কি এমন করেছিলেন? এবার আসা যাক সেই প্রসঙ্গে। পাশ্চাত্যের প্রাচীন ভাষা হল, প্রধানত গ্রিক ও ল্যাটিন। ভারতবর্ষের প্রাচীন ভাষা হল সংস্কৃত। আমাদের দেশে, প্রধান ভাষা হল ১৫ টি। এই ১৫ টি প্রধান ভাষার উৎপত্তি কিন্তু সংস্কৃত। সংস্কৃত সাহিত্যের যে ভাণ্ডার, তা অকল্পনীয়। এই সংস্কৃত সাহিত্যের সবচেয়ে প্রাচীন গ্রন্থ হলো ঋগ্বেদ। বেদোত্তোর যুগে পাণিনি তাঁর সমসাময়িক বৈদিক ও সংস্কৃত ভাষাকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করে অষ্টাধ্যায়ী ব্যাকরণ রচনা করেছিলেন। বলা হয় পাণিনি হিমালয়ে গিয়ে ১৮ দিন ধরে শিবের তপস্যা করে শিবকে সন্তুষ্ট করেন। নৃত্যের ভঙ্গীতে শিব ১৪ বার ঢক্কা বা ঢাক বাজান।প্রতিবার ঢাক বাজানোর সাথে এক একটি নতুন শব্দের সৃস্টি হলো। প্রসঙ্গত বলা যেতে পারে, নটরাজ মূর্ত্তি শিবের আর একটি প্রতিরূপ। নটরাজ মূর্ত্তি পৃথিবীর ছন্দ এবং তালের রূপক।ঢাকের শব্দ ছন্দ এবং তালের সমার্থক। এখানে মনে হতে পারে, তালবাদ্য থেকে কি বর্ণের সৃষ্টি হওয়া কি সম্ভব? বলে রাখা ভাল প্রতিটি তালবাদ্যের বোল অথবা বাণী বিভিন্ন বর্ণের সাহায্যেই তৈরি হয়েছে। তবলার বোল ‍‌ : ‘ধিন ধাগে তেরে কেটে’, পাখোয়াজের বোল: ‘তেটে কতা গদি ঘেনে’, ঢোলের বোল: ‘টাক ডুমা ডুম্ ডুম্’ , খোলের বোল: ‘ঝাগুড় ঝাগুড় ঝিনি ঝিনি ঝিনি’, ইত্যাদি সব কিছুই বিভিন্ন বর্ণের সমাহার। তালবাদ্যের বোল অথবা বাণীর মাধ্যমে সমস্ত বর্ণকে প্রকাশ করা যায়। এবার, নৃত্যের ভঙ্গীতে শিব ১৪ বার ঢক্কা বা ঢাক বাজানর পর এক একটি নতুন শব্দের সৃষ্টি হলো। প্রতিটি শব্দ বিভিন্ন বর্ণের সমষ্টি। শব্দগুলো হল:- ১) অ ই উ ণ্ ২) ঋ ৯ ক্ ৩) এ ও ঙ্ ৪) ঐ ঔ চ্ ৫) হ য ৱ র ট্ ৬) ল ণ্ ৭) ঞ্ ম ঙ্ ণ ন ম্ ৮) ঝ ভ ঞ ৯) ঘ ঢ ধ ষ্ ১০) জ ব গ ড দ শ্ ১১) খ র্ফ ছ ঠ থ চ ট ত ৱ্ ১২) ক প য্ ১৩) শ ষ স র্ ১৪) হ ল্ ।

বলা হয়, শিবের উপদেশে, পাণিনি এই শব্দগুলিকে ১৪ টি সূত্র হিসেবে গ্রহণ করলেন। এই ১৪ টি সূত্র শিবসূত্রজাল অথবা মাহেশ্বর সূত্র । এই সূত্রগুলি পাণিনির ব্যাকরণের চাবিকাঠি। এই শিবসূত্রজালের জন্য পাণিনি বিখ্যাত, এবং তাই তিনি অন্যান্য বৈয়াকরণদের থেকে একেবারে আলাদা। শিবসূত্রের প্রত্যেকটির নাম সংজ্ঞা।সেজন্য, এটির আর ১ টি নাম সংজ্ঞাসূত্র। মনে রাখার সুবিধার জন্য পাণিনি এগুলোকে আরো সংক্ষিপ্ত করলেন। নাম দিলেন:- প্রত্যাহার সূত্র। প্রত্যাহার মানে সংক্ষেপিত। এক বা একাধিক সূত্রের প্রথম ও শেষ বর্ণটি জোড়া দিয়ে যে শব্দটি তৈরি হয় তাকে প্রত্যাহার বলে। যেমন ‘অণ্’ একটি প্রত্যাহার,যার অর্থ অইউ । অক্ একটি প্রত্যাহার যার অর্থ অইউঋ৯। আবার ‘অচ্’ প্রত্যাহারটির মানে অইউঋ৯এওঐঔ। প্রকৃতপক্ষে অণ্, অচ্, অল্, ইক্, উক্, জশ্, হল্ প্রভৃতি প্রত্যাহারগুলি এক ধরণের ‘কোড’বা ‘ক্রিপ্টোগ্রাফি’(সাংকেতিক ভাষা) যার সাহায্যে পাণিনির ব্যাকরণের অনেক সূত্র তৈরি করা হয়েছে। পাণিনির ব্যাকরণে এরকম ৪৪ টি প্রত্যাহার আছে। প্রথম প্রত্যাহারটি ‘অণ্’ হওয়ায় শিবসূত্রকে অণাদি(অণ্-আদি) সূত্রও বলা হয়। এখানে লক্ষ্যণীয় যে, ‘অচ্’ প্রত্যাহার টির মধ্যে সমস্ত স্বরবর্ণ এবং ‘হল্’ প্রত্যাহার টির মধ্যে সমস্ত ব্যঞ্জনবর্ণ এবং ‘অল্’ প্রত্যাহার টির মধ্যে সমস্ত বর্ণগুলি রয়েছে। সুতরাং ‘অল্’ মানে ALL বোঝা যেতে পারে। তাহলে শিবসূত্রজালের বিভিন্ন নামগুলি হোলো:- শিবসূত্র মহেশ্বরসূত্র সংজ্ঞাসূত্র প্রত্যাহারসূত্র অণাদিসূত্র এখানে আরও একটি বিষয় লক্ষ্য করার আছে। চর্তুদশ সূত্রের প্রত্যেকটির শেষে হসন্তযুক্ত যে বর্ণগুলি আছে সেগুলি ‘ইৎ’ হয়। পাণিনির ব্যাকরণের ভাষায় ‘ইৎ’ মানে লোপ পাওয়া, কিন্তু বিনষ্ট হওয়া নয়। উদাহরণ:- ‘অণ্’ মানে অইউ। এখানে ‘ণ্’ বর্ণটি ‘ইৎ’হয়েছে। সমস্ত প্রত্যাহারের শেষের বর্ণটি ‘ইৎ’ হবে, যা পৃথিবীর অন্য কোন ব্যাকরণেই নেই। শিবসূত্র জালের বর্ণমালাকে ভিত্তি করে সমকালীন বৈদিক এবং সংস্কৃত ভাষার ওপর পাণিনি তাঁর সুবিখ্যাত অস্টাধ্যায়ী ব্যাকরণ রচনা করেন। পাণিনির ব্যাকরণে মোট ৩৯৭৮ টি সূত্র আছে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে লেখা এমন একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ব্যাকরণ সারা বিশ্বের কোনও পণ্ডিত রচনা করতে পারেন নি। পরবর্তী কালে পাণিনির ধারণা নিয়ে অন্যান্য দেশের ব্যাকরণ গুলি লেখা হয়েছে। অস্টাধ্যায়ী ব্যাকরণ শুধু ব্যাকরণ নয়, এটি হলো ভাষার বিজ্ঞান। পাণিনির সংস্কৃত বেদের ভাষা থেকে সরল হলেও তা একটি জটিল ভাষা। তাই প্রবন্ধের আরম্ভেই বলেছিলাম; সংস্কৃত শিখে পাণিনি পড়তে হয়। না হলে পাণিনির সন্ধির সূত্রগুলি বুঝতে অসুবিধা হয়। প্রচুর পড়াশোনা এবং কোন ভাষ্যকারের সহায়তা ছাড়া পাণিনির সূত্রগুলি বোঝা যায় না। পাণিনি তাঁর ব্যাকরণে শব্দের উৎপত্তি, ধ্বনিতত্ত্ব, বর্ণমালা, উচ্চারণবিধি, সন্ধির নিয়ম নিয়ে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে আলোচনা করেছেন। তাঁর সমকালীন প্রতিটি শব্দের ব্যূৎপত্তি নির্ণয় করেছেন এবং ৩৯৭৮ টি সূত্র সাহায্যে অস্টাধ্যায়ী ব্যাকরণটি রচনা করেছেন। ব্যাকরণের প্রধান বিষয়বস্তু হলো ভাষা। তাই ভাষাতত্ত্বের বিশ্লেষণ নিয়ে পণ্ডিতেরা পুরুষানুক্রমিক ভাবে পাণিনির ব্যাকরণে ওপর চিন্তাভাবনা করে চলেছেন। পাণিনির সূত্রগুলি বহুদিন ধরে ব্যাকরণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে রয়েছে।বিখ্যাত চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ্ বলেছেন পৃথিবীর সমস্ত ভাষার উৎস হলো পাণিনির অস্টাধ্যায়ী ব্যাকরণ। পাণিনির সময় থেকে ভাষা একটা নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে দিয়ে গড়ে উঠেছে। তাঁর সময় থেকেই এই ভাষার নাম হয়েছে সংস্কৃত (মার্জিত) যা প্রাকৃত (অমার্জিত) থেকে আলাদা।প্রাকৃত ভাষা প্রাকৃতিকভাবেই অর্থাৎ নিজের থেকেই গড়ে উঠেছিল। এবার পতঞ্জলির কথায় আসা যাক। পতঞ্জলির কথা না বললে পাণিনির অস্টাধ্যায়ী ব্যাকরণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।পতঞ্জলি ছিলেন খ্রীস্টপূর্ব ২য় শতাব্দীর লোক এবং ভোজপুর নিবাসী ব্রাহ্মণ। পতঞ্জলি ছিলেন পাণিনির একনিষ্ঠ ভক্ত। তিনি পাণিনিকে আচার্য্য, ভগবান, মহর্ষি এইসব নামে সম্বোধন করেছেন। পাণিনির ব্যাকরণের ৩৯৭৮ টি সূত্রর মধ্যে পতঞ্জলি মাত্র ১৭২০ টি সূত্র বেছে নিয়েছিলেন, যে গুলো সমালোচিত হয়েছিল। কে প্রধানতঃ সমালোচনা করেছিলেন? ইনি হলেন বার্ত্তিককার কাত্যায়ন। পাণিনির উত্তরসূরিদের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন হলেন এই কাত্যায়ন। তাঁর রচিত গ্রন্থের নাম হলো বার্ত্তিক। তাই তিনি বার্ত্তিককার কাত্যায়ন নামে পরিচিত। তাঁর জীবনকাল সম্বন্ধে সঠিকভাবে কিছু জানা যায় না। কিন্তু তিনি যে পাণিনির চেয়ে ন্যূনতম ১ শতাব্দী পরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। তার কারণ বার্ত্তিককার কাত্যায়ন তাঁর গ্রন্থে বেশ কিছু ভাষা ব্যবহার করেছেন যেগুলি পাণিনির সময়ে প্রচলিত ছিল না। বার্ত্তিককার কাত্যায়ন ব্যাকরণের অন্য এক শিক্ষাধারায় গড়ে উঠেছিলেন যার নাম কাতন্ত্র বা কলাপ ব্যাকরণ। বলা হয়, দেবসেনাপতি কুমার কার্ত্তিক এর স্রষ্টা। কাত্যায়ন, পাণিনির অস্টাধ্যায়ী ব্যাকরণের কিছু সূত্রের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি কিছু সূত্রের পরিবর্তন, কিছু সূত্রের পরিবর্ধন এবং কিছু সূত্রকে পরিত্যাগ করেন।তাছাড়া তিনি তাঁর সময়ে প্রচলিত কিছু নতুন শব্দগুলির জন্য অতিরিক্ত কিছু সূত্র গঠন করেন। এবার যাঁরা পাণিনিকে অনুসরণ করতেন তাঁদের মনে হলো কাত্যায়ন, পাণিনির ওপর সুবিচার করেন নি, উপরন্তু তাঁকে বিকৃত করেছেন।অনেকেই চেস্টা করেছিলেন এই বিকৃতি থেকে পাণিনিকে বাঁচাবার, কিন্তু সফল হন নি। প্রথম যিনি সফল হয়েছিলেন, তিনি পতঞ্জলি। তাই পতঞ্জলি এখানে প্রাসঙ্গিক। পতঞ্জলি যে ৪ টি বই লেখেন, সেগুলো হলো ১) যোগদর্শন(এটি ভারতীয় ষড়দর্শনের অন্যতম; সাংখ্য, বেদান্ত, যোগ, বৈশষিক, ন্যায় এবং মীমাংসা)।২) মহাভাষ্য, এগুলি তিনি লিখেছিলেন চিত্তশুদ্ধির জন্য।৩) আয়ুর্বেদ, দেহশুদ্ধির জন্য।৪) ব্যাকরণ, বাক্ শুদ্ধির জন্য।(এই ৪ পতঞ্জলি ১ ই ব্যক্তি কিনা; তাই নিয়ে মতভেদ আছে, তবে সেটা প্রসঙ্গান্তরে আলোচনা করা যাবে সময় এবং সুবিধা মত।) পতঞ্জলির মহাভাষ্য প্রন্থটি গ্রিক পণ্ডিত প্লেটোর মত সংলাপের ভঙ্গিতে লেখা। তাঁর গ্রন্থে পাণিনির কিছু সূত্রকে বিকল্পভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তাঁর বর্ণনা দেখলে মনে হয় পাণিনির বিরুদ্ধবাদীদের নিরস্ত করার জন্যই তিনি এই কাজ করেছিলেন। পাণিনির সমালোচনা করে বার্ত্তিককার কাত্যায়ন যা লিখেছিলেন এবং কাত্যায়নকে সমালোচনা করে পতঞ্জলি যা লিখেছিলেন সবগুলোই শেষ পর্য্যন্ত পাণিনির অস্টাধ্যায়ী ব্যাকরণেরই অঙ্গ হয়ে উঠল। সেই জন্য পাণিনির অস্টাধ্যায়ী ব্যাকরণকে ত্রিমুনি ব্যাকরণ বলা হয়। এই ৩ জনের সম্মিলিত অবদানের জন্য সাধারণভাবে এই ব্যাকরণকে পাণিনি ব্যাকরণ, পাণিনি তন্ত্র বা পাণিনিনয় নামে বলা হয়ে থাকে। পাণিনির এই বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার জন্য শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বলা হয়েছে:- “ AHIK DAKHSHIPUTRA SALANKI SALATURIYA PANIN PANINI was not only the best grammarian of Vedic and Sanskrit language, but also a Sacrificer, Priest, Logician, Philosopher, Mathematician, Astronomer, Poet and politician. He was the precursor of the most intelligent and powerful computing system and the probability for Physics of the Cosmos. In that way his ‘PANINI MACHINE’ is the most powerful model of recent Computers.” আহিক দাক্ষিপুত্র শালাঙ্কি শালাতুরীয় পাণিন্‌ পাণিনির প্রতি আমাদের অকুন্ঠ শ্রদ্ধা ও শতকোটি প্রণাম জানিয়ে এই ক্ষুদ্র প্রবন্ধটি শেষ করলাম।


ঋণ- বন্ধুবর ডঃ প্রদীপ চক্রবর্তী(পণ্ডিত রবিশঙ্করের সুযোগ্য শিষ্য) রচিত প্রসঙ্গ পাণিনি এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইট।