মাটি: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
মিসবাহুল হক (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
সংশোধন, সম্প্রসারণ, তথ্যসূত্র যোগ/সংশোধন, চিত্র, বিষয়বস্তু যোগ, হালনাগাদ করা হল
৫০ নং লাইন: ৫০ নং লাইন:
বালি, পলি ও কাদা- এই তিনটি স্বতন্ত্র মাটি কণার তুলনামূলক অনুপাতের ওপর ভিত্তি করে মাটির বুনটসমূহের নামকরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন মাটি বিভিন্ন অনুপাতে বালি, পলি ও কাদা কণা ধারণ করে থাকে। কোন মাটিতে বালি কণার পরিমাণ বেশি, আবার কোনটাতে কাদা কণার পরিমাণ বেশি। এই পরিবর্তনের নির্দিষ্ট সীমারেখায় রেখে মাটিকে ১২ টি গ্রুপ বা দলে বিভক্ত করা হয়। এই দলগুলোই বুনটভিত্তিক শ্রেণী বলে পরিচিত। এই শ্রেণীগুলোর একটির হতে অন্যটির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক ধর্মে যথেষ্ট পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। যে মাটিতে অধিক পরিমাণ কাদা কণা থাকে তাকে কাদা মাটি, যে মাটি অধিক পরিমাণ পলি কণা ধারণ করে তাকে পলি মাটি, আর যে মাটিতে বালি কণার পরিমাণ বেশি থাকে তাকে বালি মাটি বলে। যদি কোন মাটি এই তিনটি শ্রেণীর একটিরও প্রভাব বিস্তারকারী ভৌতিক বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন না করে (যেমন-৪০% বালি কণা, ২০% কাদা কণা ও ৪০% পলিকণা যুক্ত মাটি) তবে তাকে দোআঁশ মাটি বলে। দোয়াঁশ মাটিতে বালি, পলি ও কাদা কণার শতকরা পরিমাণ সমান থাকেনা। কিন্তু এ বালি, পলি ও কাদা কণাসমূহের কাছাকাছি প্রায় সামঞ্জস্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য বা ধর্ম প্রদর্শন করে।
বালি, পলি ও কাদা- এই তিনটি স্বতন্ত্র মাটি কণার তুলনামূলক অনুপাতের ওপর ভিত্তি করে মাটির বুনটসমূহের নামকরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন মাটি বিভিন্ন অনুপাতে বালি, পলি ও কাদা কণা ধারণ করে থাকে। কোন মাটিতে বালি কণার পরিমাণ বেশি, আবার কোনটাতে কাদা কণার পরিমাণ বেশি। এই পরিবর্তনের নির্দিষ্ট সীমারেখায় রেখে মাটিকে ১২ টি গ্রুপ বা দলে বিভক্ত করা হয়। এই দলগুলোই বুনটভিত্তিক শ্রেণী বলে পরিচিত। এই শ্রেণীগুলোর একটির হতে অন্যটির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক ধর্মে যথেষ্ট পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। যে মাটিতে অধিক পরিমাণ কাদা কণা থাকে তাকে কাদা মাটি, যে মাটি অধিক পরিমাণ পলি কণা ধারণ করে তাকে পলি মাটি, আর যে মাটিতে বালি কণার পরিমাণ বেশি থাকে তাকে বালি মাটি বলে। যদি কোন মাটি এই তিনটি শ্রেণীর একটিরও প্রভাব বিস্তারকারী ভৌতিক বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন না করে (যেমন-৪০% বালি কণা, ২০% কাদা কণা ও ৪০% পলিকণা যুক্ত মাটি) তবে তাকে দোআঁশ মাটি বলে। দোয়াঁশ মাটিতে বালি, পলি ও কাদা কণার শতকরা পরিমাণ সমান থাকেনা। কিন্তু এ বালি, পলি ও কাদা কণাসমূহের কাছাকাছি প্রায় সামঞ্জস্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য বা ধর্ম প্রদর্শন করে।


মাটির গুণাগুণ
===মাটির গুণাগুণ===


সুষ্ঠুভাবে মাছ চাষ ব্যবস্থাপনায় পুকুর তৈরির জন্য দোঁআশ ও বেলে-দোঁআশ মাটি সবচেয়ে ভাল। এ ধরনের মাটি সহজে পানি ধারণ করে রাখতে পারে। মাটির পিএইচ (PH)-এর মাত্রা ৫.০ এর উপরে থাকা সমীচীন। মাটিতে বিদ্যমান পুষ্টি পদার্থ ও পিএইচ-এর ওপর ভিত্তি করে মাটিকে সাধারণতঃ ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- উচ্চ উৎপাদনশীল, মধ্যম উৎপাদনশীল ও নিম্ন উৎপাদনশীল (সারণি-১)।
সুষ্ঠুভাবে মাছ চাষ ব্যবস্থাপনায় পুকুর তৈরির জন্য দোঁআশ ও বেলে-দোঁআশ মাটি সবচেয়ে ভাল। এ ধরনের মাটি সহজে পানি ধারণ করে রাখতে পারে। মাটির পিএইচ (PH)-এর মাত্রা ৫.০ এর উপরে থাকা সমীচীন। মাটিতে বিদ্যমান পুষ্টি পদার্থ ও পিএইচ-এর ওপর ভিত্তি করে মাটিকে সাধারণতঃ ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- উচ্চ উৎপাদনশীল, মধ্যম উৎপাদনশীল ও নিম্ন উৎপাদনশীল (সারণি-১)।


সারণি-১: মাটির পুষ্টিমান ও পিএইচ অনুযায়ী পুকুর-জলাশয়ের শ্রেণিবিন্যাস
'''সারণি-১:''' মাটির পুষ্টিমান ও পিএইচ অনুযায়ী পুকুর-জলাশয়ের শ্রেণিবিন্যাস
উৎপাদনশীলতার শ্রেণী পিএইচ মাত্রা পুষ্টি উপাদানের মাত্রা (মিগ্রা/কিলো)
উৎপাদনশীলতার শ্রেণী পিএইচ মাত্রা পুষ্টি উপাদানের মাত্রা (মিগ্রা/কিলো)
নাইট্রোজেন ফসফরাস কার্বন
নাইট্রোজেন ফসফরাস কার্বন
৬৫ নং লাইন: ৬৫ নং লাইন:
মাটির গঠন, বর্ণ, পিএইচ-র ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের মাটিকে সাধারণভাবে ৬ ভাগে ভাগ করা যায়। এ ভিত্তিতে বাংলাদেশের মাটির শ্রেণিবিন্যাস ও প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতা নিচের সারণিতে দেয়া হলো (সারণি-২)।
মাটির গঠন, বর্ণ, পিএইচ-র ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের মাটিকে সাধারণভাবে ৬ ভাগে ভাগ করা যায়। এ ভিত্তিতে বাংলাদেশের মাটির শ্রেণিবিন্যাস ও প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতা নিচের সারণিতে দেয়া হলো (সারণি-২)।


সারণি-২: অঞ্চলভেদে মাটির গুণাগুণ
'''সারণি-২:''' অঞ্চলভেদে মাটির গুণাগুণ


ক্র.নং অঞ্চল মাটির প্রকার PH-র ভিত্তিতে মাটির ধরন মাটির বর্ণ উৎপাদনশীলতা
ক্র.নং অঞ্চল মাটির প্রকার PH-র ভিত্তিতে মাটির ধরন মাটির বর্ণ উৎপাদনশীলতা
৭৫ নং লাইন: ৭৫ নং লাইন:
৬ উপকূলীয় অঞ্চলসমূহ পলি ও কাদার ভাগ বেশি অম্লীয় কালো বা ছাই রং প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতা কম
৬ উপকূলীয় অঞ্চলসমূহ পলি ও কাদার ভাগ বেশি অম্লীয় কালো বা ছাই রং প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতা কম


মাটির ভৌত-রাসায়নিক গুণাগুণ
====মাটির ভৌত-রাসায়নিক গুণাগুণ====


যে অঞ্চলের মাটি উর্বর সে স্থানে খনন করা পুকুরও সাধারণভাবে উর্বর হয়ে থাকে এবং সে অঞ্চলের পুকুরে মাছের উৎপাদনও ভাল হয়। উর্বর মাটি পানিতে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্যের যোগান দেয় এবং পানি দূষণ রোধে ভূমিকা রাখে। সাধারণভাবে মাটি ৪ প্রকারের হয়ে থাকে ক) এটেল মাটি, ২) বেলে মাটি, গ) লাল মাটি এবং ঘ) দোআঁশ মাটি। দোআঁশ মাটির পুকুর মাছ চাষের জন্য সর্বাধিক উপযোগি। বেলে মাটির পানি ধারণক্ষমতা খুবই কম এবং লাল মাটির পুকুরে পানি প্রায় সবসময় ঘোলা থাকে। এজন্য বেলে মাটি ও লাল মাটিতে খনন করা পুকুর মাছ চালের জন্য ততটা উপযোগি হয় না। বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি ধরে রাখা ও আদান প্রদানে দোআঁশ মাটি উত্তম।
যে অঞ্চলের মাটি উর্বর সে স্থানে খনন করা পুকুরও সাধারণভাবে উর্বর হয়ে থাকে এবং সে অঞ্চলের পুকুরে মাছের উৎপাদনও ভাল হয়। উর্বর মাটি পানিতে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্যের যোগান দেয় এবং পানি দূষণ রোধে ভূমিকা রাখে। সাধারণভাবে মাটি ৪ প্রকারের হয়ে থাকে ক) এটেল মাটি, ২) বেলে মাটি, গ) লাল মাটি এবং ঘ) দোআঁশ মাটি। দোআঁশ মাটির পুকুর মাছ চাষের জন্য সর্বাধিক উপযোগি। বেলে মাটির পানি ধারণক্ষমতা খুবই কম এবং লাল মাটির পুকুরে পানি প্রায় সবসময় ঘোলা থাকে। এজন্য বেলে মাটি ও লাল মাটিতে খনন করা পুকুর মাছ চালের জন্য ততটা উপযোগি হয় না। বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি ধরে রাখা ও আদান প্রদানে দোআঁশ মাটি উত্তম।
৮৬ নং লাইন: ৮৬ নং লাইন:
মাছ চাষের জন্য বদ্ধ জলাশয়ের পানির উপযোগিতা মাটির কয়েকটি উপাদানের মানের ওপর র্নিভর করে। যথা- পি,এইচ, ফসফরাস, নাইট্রোজন, কার্বন-ড্রাই অক্সাইড, জৈব পদার্থ ইত্যাদি। নিচে এসব সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলোঃ
মাছ চাষের জন্য বদ্ধ জলাশয়ের পানির উপযোগিতা মাটির কয়েকটি উপাদানের মানের ওপর র্নিভর করে। যথা- পি,এইচ, ফসফরাস, নাইট্রোজন, কার্বন-ড্রাই অক্সাইড, জৈব পদার্থ ইত্যাদি। নিচে এসব সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলোঃ


পিএইচ
'''পিএইচ'''

মাটির পিএইচ (PH) ৬.৫-৮.০ এর মধ্যে হলে তা মাছ চাষের জন্য উত্তম। অনুকূল পিএইচ মাত্রায় ফসফরাসের যোগান বৃদ্ধি পায় এবং অ্যামোনিয়া ও নাইট্রোজেনঘটিত অণুজীব অধিক কর্মক্ষম হয়। পি এইচ ৬.০-এর নিচে হলে মাটি অধিক অম্লীয় হয় এবং পানিতে ক্ষতিকর মৌলিক পদার্থের উপস্থিতি দেখা দেয়। আবার পিএইচ-এর মাত্রা ৯.০ এর বেশি হলে অণুজীবগোষ্ঠী নিস্ক্রিয় হয় ও ফসফরাসের সরবরাহ হ্রাস পায়। এতে উদ্ভিদ প্ল্যাংটনের উৎপাদন খুব কমে যায়।
মাটির পিএইচ (PH) ৬.৫-৮.০ এর মধ্যে হলে তা মাছ চাষের জন্য উত্তম। অনুকূল পিএইচ মাত্রায় ফসফরাসের যোগান বৃদ্ধি পায় এবং অ্যামোনিয়া ও নাইট্রোজেনঘটিত অণুজীব অধিক কর্মক্ষম হয়। পি এইচ ৬.০-এর নিচে হলে মাটি অধিক অম্লীয় হয় এবং পানিতে ক্ষতিকর মৌলিক পদার্থের উপস্থিতি দেখা দেয়। আবার পিএইচ-এর মাত্রা ৯.০ এর বেশি হলে অণুজীবগোষ্ঠী নিস্ক্রিয় হয় ও ফসফরাসের সরবরাহ হ্রাস পায়। এতে উদ্ভিদ প্ল্যাংটনের উৎপাদন খুব কমে যায়।


ফসফরাস
'''ফসফরাস'''
ফসফরাস মাটিতে ক্যালসিয়াম, আয়রণ ও এ্যালুমিনিয়ামের ফসফেট হিসেবে অবস্থান করে। মাটিতে পরিমিত জৈব পদার্থের উপস্থিতিই সহজপ্রাপ্য ফসফরাসের সরবরাহ অব্যাহত রাখে। ফসফরাসের প্রাচুর্যতা পুকুরের প্রাথমিক উৎপাদনশীলতা সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করে। ফসফরাস সবুজ শেওলার বংশ বৃদ্ধিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। ফলে অধিক পরিমাণে উদ্ভিদ-প্ল্যাংঙ্কটন উৎপন্ন হয়। মাছ চাষের জন্য প্রতি ১০০ গ্রাম মাটিতে ১০-১৫ মিলিগ্রাম হারে সহজপ্রাপ্য ফসফেট থাকা উচিত।
ফসফরাস মাটিতে ক্যালসিয়াম, আয়রণ ও এ্যালুমিনিয়ামের ফসফেট হিসেবে অবস্থান করে। মাটিতে পরিমিত জৈব পদার্থের উপস্থিতিই সহজপ্রাপ্য ফসফরাসের সরবরাহ অব্যাহত রাখে। ফসফরাসের প্রাচুর্যতা পুকুরের প্রাথমিক উৎপাদনশীলতা সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করে। ফসফরাস সবুজ শেওলার বংশ বৃদ্ধিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। ফলে অধিক পরিমাণে উদ্ভিদ-প্ল্যাংঙ্কটন উৎপন্ন হয়। মাছ চাষের জন্য প্রতি ১০০ গ্রাম মাটিতে ১০-১৫ মিলিগ্রাম হারে সহজপ্রাপ্য ফসফেট থাকা উচিত।


নাইট্রোজেন
'''নাইট্রোজেন'''
বায়ুমন্ডলের নাইট্রোজেনই মাটির নাইট্রোজেনের প্রধান উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম মাটিতে ৮-১০ মিলিগ্রাম হারে সহজপ্রাপ্য নাইট্রোজেন থাকা দরকার। নাইট্রোজেন উদ্ভিদকে ঘন সবুজ রাখে। পরিমিত নাইট্রোজেন উপস্থিতিতে উদ্ভিদ-প্ল্যাংটনের খাদ্য তৈরির প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হয় এবং বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। ফলে অধিক পরিমাণে উদ্ভিদ-প্ল্যাঙ্কটন উৎপন্ন হয় ও মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
বায়ুমন্ডলের নাইট্রোজেনই মাটির নাইট্রোজেনের প্রধান উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম মাটিতে ৮-১০ মিলিগ্রাম হারে সহজপ্রাপ্য নাইট্রোজেন থাকা দরকার। নাইট্রোজেন উদ্ভিদকে ঘন সবুজ রাখে। পরিমিত নাইট্রোজেন উপস্থিতিতে উদ্ভিদ-প্ল্যাংটনের খাদ্য তৈরির প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হয় এবং বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। ফলে অধিক পরিমাণে উদ্ভিদ-প্ল্যাঙ্কটন উৎপন্ন হয় ও মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।


জৈব পদার্থ
'''জৈব পদার্থ'''
মাটিতে বিদ্যমান জৈব পদার্থ যে কোন উৎপাদন প্রক্রিয়ায় একটি অপরিহার্য উপাদান। জৈব পদার্থ পুকুরের তলায় মাটিকে সজীব ও সক্রিয় রাখে এবং পানি চুয়ানো বন্ধ করে মাটির পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করে। জৈব পদার্থ ফরফরাস ও নাইট্রোজেনের প্রধান উৎস। জলজ পরিবেশে জৈব পদার্থ আবহাওয়া থেকে সরাসরি নাইট্রোজেন ধারণ করে।
মাটিতে বিদ্যমান জৈব পদার্থ যে কোন উৎপাদন প্রক্রিয়ায় একটি অপরিহার্য উপাদান। জৈব পদার্থ পুকুরের তলায় মাটিকে সজীব ও সক্রিয় রাখে এবং পানি চুয়ানো বন্ধ করে মাটির পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করে। জৈব পদার্থ ফরফরাস ও নাইট্রোজেনের প্রধান উৎস। জলজ পরিবেশে জৈব পদার্থ আবহাওয়া থেকে সরাসরি নাইট্রোজেন ধারণ করে।


== প্রকারভেদ ==
== প্রকারভেদ ==
বিভিন্নভাবে মৃত্তিকাবিজ্ঞানীরা মাটির প্রকারভেদ করেছেন। তন্মধ্যে - বেলে, এঁটেল, দো-আঁশ এবং পলিমাটি অন্যতম । বিভিন্ন ধরনের মাটির মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে এবং কোনো বিশেষ কাজে মাটির উপযোগিতা যাচাই করার জন্য মাটির বিভিন্ন রকমের শ্রেণীবিভাগ করা হয়েছে । পূর্বে এইরকম একটি ধারণা ছিল যে, মাটি তৈরির উপকরণ এবং কারণগুলি-ই মাটিকে কোনো একটি নির্দিষ্ট বহির্গঠন দান করে । এই ধারণা অনুযায়ী বানানো প্রথম দিককার শ্রেনীবিভাগ গুলির মধ্যে ১৮৮৮ খ্রীস্টাব্দে রাশিয়ান বৈজ্ঞানিক [[Dokuchaev]] (দকুচেভ)-এরটি উল্লেখযোগ্য । পরবর্তী কালে অনেক মার্কিন এবং ইউরোপীয় গবেষক এটিকে উন্নত করে ১৯৬০ খ্রীস্টাব্দ নাগাদ একটি গ্রহণযোগ্য শ্রেণীবিভাগ তৈরী করেন । এই ষাটের দশকে একটি অন্য ধরনের শ্রেণীবিভাগ তৈরী হয়, যেখানে মাটি তৈরির উপকরণ ও কারণের থেকে মাটির বহির্গঠনের উপর বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে । পরবর্তীকালে এটি-ও ধীরে ধীরে উন্নত হচ্ছে ।World Reference Base for Soil Resources (WRB)<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি | শেষাংশ =IUSS Working Group WRB | প্রথমাংশ = | লেখক-সংযোগ = | coauthors = | শিরোনাম = World Reference Base for soil resources - A framework for international classification, correlation and communication | কর্ম = | প্রকাশক = FAO | month = | বছর =2007 | ইউআরএল = http://www.fao.org/ag/agl/agll/wrb/doc/wrb2007_corr.pdf | বিন্যাস = | ডিওআই = | সংগ্রহের-তারিখ =}}</ref> নামের সংস্থাটি মাটির আন্তর্জাতিক শ্রেণীবিভাগের কাজে বাপৃত।
বিভিন্নভাবে মৃত্তিকাবিজ্ঞানীরা মাটির প্রকারভেদ করেছেন। তন্মধ্যে - বেলে, এঁটেল, দো-আঁশ এবং পলিমাটি অন্যতম । বিভিন্ন ধরনের মাটির মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে এবং কোনো বিশেষ কাজে মাটির উপযোগিতা যাচাই করার জন্য মাটির বিভিন্ন রকমের শ্রেণীবিভাগ করা হয়েছে । পূর্বে এইরকম একটি ধারণা ছিল যে, মাটি তৈরির উপকরণ এবং কারণগুলি-ই মাটিকে কোনো একটি নির্দিষ্ট বহির্গঠন দান করে । এই ধারণা অনুযায়ী বানানো প্রথম দিককার শ্রেনীবিভাগ গুলির মধ্যে ১৮৮৮ খ্রীস্টাব্দে রাশিয়ান বৈজ্ঞানিক [[Dokuchaev]] (দকুচেভ)-এরটি উল্লেখযোগ্য । পরবর্তী কালে অনেক মার্কিন এবং ইউরোপীয় গবেষক এটিকে উন্নত করে ১৯৬০ খ্রীস্টাব্দ নাগাদ একটি গ্রহণযোগ্য শ্রেণীবিভাগ তৈরী করেন । এই ষাটের দশকে একটি অন্য ধরনের শ্রেণীবিভাগ তৈরী হয়, যেখানে মাটি তৈরির উপকরণ ও কারণের থেকে মাটির বহির্গঠনের উপর বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে । পরবর্তীকালে এটি-ও ধীরে ধীরে উন্নত হচ্ছে ।World Reference Base for Soil Resources (WRB)<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি | শেষাংশ =IUSS Working Group WRB | প্রথমাংশ = | লেখক-সংযোগ = | coauthors = | শিরোনাম = World Reference Base for soil resources - A framework for international classification, correlation and communication | কর্ম = | প্রকাশক = FAO | month = | বছর =2007 | ইউআরএল = http://www.fao.org/ag/agl/agll/wrb/doc/wrb2007_corr.pdf | বিন্যাস = | ডিওআই = | সংগ্রহের-তারিখ =}}</ref> নামের সংস্থাটি মাটির আন্তর্জাতিক শ্রেণীবিভাগের কাজে বাপৃত।

[[File:ময়মনসিংহে খাওয়ার চেরা মাটি.jpg|thumb|right|250px|ময়মনসিংহে খাওয়ার চেরা মাটি]]
==মাটি খাওয়া প্রচলন==
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে দেশে বিস্তর পটভূমিতে মাটি খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। এই মাটি খাওয়া বিষয়টি শারীরিক অসুস্থতার মুক্তির সঙ্গে জড়িত। অর্থাৎ আরোগ্য ও উপকারের জন্যই প্রচলিত এই মাটি ভক্ষণ। চীন, জিম্বাবুইয়ে আর যুক্তরাষ্ট্রে সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে নমুনা নিয়ে মাটি খাওয়ার একই উপকারী ফলফল পাওয়া গেছে। জানা যায়, রোমানরা মাটি ও ছাগলের রক্ত মিশিয়ে ওষুধের ট্যাবলেট তৈরি করতো। গত শতাব্দীতেও দেখা যায়, জার্মানিরা খুব মিহি কাদার আস্তরণ রুটির উপর মাখনের পরিবর্তে ব্যবহার করে খেতো। <ref name="sa">{{ওয়েব উদ্ধৃতি| ইউআরএল=https://www.aparajeobangla.com/seven-colours/news/8004 | শিরোনাম=মাটি খাওয়া মানুষ | তারিখ=2021-04-19| ওয়েবসাইট=অপরাজেয় বাংলা | লেখক= শেখ আনোয়ার | সংগ্রহের-তারিখ=2022-04-19}}</ref>

===বাংলাদেশে মাটি খাওয়া===
মানুষ মাটি খায় সভ্য সমাজে এটি খুবই অজানা কথা। মানুষ সত্যি মাটি খায় এবং তা বাজারে পাওয়া যায়। এর নাম চেরা মাটি। ময়মনসিংহের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোন কোন এলাকার দরিদ্র মানুষের মধ্যে এ চেরা মাটি খাওয়া প্রচলন এখনও লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে পোয়াতি মহিলাদের এ মাটির প্রতি বিশেষ আকর্ষণ। বাজার থেকে প্রয়োজনীয় মাছ তরকারির পাশাপাশি ২/৪ টাকার চেরা মাটিও কিনে তারা। <ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি| ইউআরএল=https://blog.bdnews24.com/manoneshdas/158785| শিরোনাম=ময়মনসিংহের মানুষ মাটি খায়!| তারিখ=2014-08-31| ওয়েবসাইট= blog.bdnews24.com | লেখক= [[মনোনেশ দাস]]| সংগ্রহের-তারিখ=2022-04-19}}</ref>

===খাওয়ার মাটিতে যা থাকে===
পরীক্ষায় দেখা গেছে, চীনের নমুনাটিতে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে লোহা, ক্যালশিয়াম, ভ্যানডিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ আর পটাশিয়াম। দুর্ভিক্ষের সময় শরীরে এসব পদার্থের অভাব ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রের নমুনাটিতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় আয়োডিন আর লৌহ। যা শিশু ও মহিলাদের বেশি করে দরকার। অনেক খাবারে এগুলো যথেষ্ট থাকে না। জিম্বাবুইয়ের নমুনাটিতে বেশি দেখা যায় কেওলিনাইট। ডায়রিয়া সারানোর জন্য বাণিজ্যিকভাবে যে ক্যাওপেকটেট পাওয়া যায় তার প্রধান উপাদানই হচ্ছে এই কেওলিনাইট। <ref name="sa"/>


== তথ্যসূত্র ==
== তথ্যসূত্র ==
{{সূত্র তালিকা}}
{{সূত্র তালিকা}}

http://203.112.195.237/ebook/Koi_shing_Magur_culture/Mati.html{{অকার্যকর সংযোগ|তারিখ=এপ্রিল ২০১৯ |bot=InternetArchiveBot |ঠিক করার প্রচেষ্টা=yes }}
http://203.112.195.237/ebook/Koi_shing_Magur_culture/Mati.html{{অকার্যকর সংযোগ|তারিখ=এপ্রিল ২০১৯ |bot=InternetArchiveBot |ঠিক করার প্রচেষ্টা=yes }}



০৫:১৯, ১৯ এপ্রিল ২০২২ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

চৈত্রদিনে বাংলাদেশে ফেটে যাওয়া মাটি
Surface-water-gley developed in glacial till, Northern Ireland

মাটি বা মৃত্তিকা হলো পৃথিবীর উপরিভাগের নরম আবরণ। পাথর গুঁড়ো হয়ে সৃষ্ট খনিজ পদার্থ এবং জৈব যৌগ মিশ্রিত হয়ে মাটি গঠিত হয়। জৈব পদার্থের উপস্থিতিতে ভূমিক্ষয় আবহবিকার, বিচূর্ণিভবন ইত্যাদি প্রাকৃতিক ও রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে পাথর থেকে মাটির উদ্ভব হয়েছে। সে কারণে অতি প্রাচীন কালের মাটি পৃথিবীতে পাওয়া যায় না । ভূ-ত্বক, জলস্তর, বায়ুস্তর এবং জৈবস্তরের মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে পাথর থেকে মাটি তৈরি হয়।রাশিয়ান বিজ্ঞানী Dokuchaevকে মৃত্তিকা বিজ্ঞানের জনক বলা হয়।তিনি মৃত্তিকা সম্পর্কে ধারণা দেন।তার সংঙ্গা অনুযায়ী Soils are applied solely to those superficial or nearly superficial horizons of rocks, that have been more or less modified naturally by the interaction of water, air and various kinds of organisms, either living or dead; this being reflected in a certain manner in the composition, structure and color of such formations. Where these conditions are absent, there are no natural soils, but artificial mixtures of rock.

Dokuchaev(1879) বিজ্ঞানী ডকুশেভ ছাড়াও আরো অনেক বিজ্ঞানী মাটিকে বিভিন্ন ভাবে সংঙ্গায়ন করেন।তবে তাদের মধ্যে বিজ্ঞানী কীলোগ(Kellogg) এর সংঙ্গা থেকে মাটি সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো ধারণা পাওয়া যায়।বিজ্ঞানী কীলোগ এর মতে -Soil is a collection of natural bodies occupying a portion of the earth surface that supports plant growth and that has properties due to the integrated effect of climate and vegetation acting upon parent material, as conditioned by relief, over a period of time. Kellogg(1960)। শুকনো গুঁড়ো মাটিকে সাধারণভাবে ধুলা বলা হয়।মাটি সৃষ্টি হতে পাঁচটি প্রভাবক(factors) আছে। এগুলো হল ১.parent material(মাতৃকা পদার্থ) ২.Climate( জলবায়ু) ৩.Biota(জীব উপাদান) ৪.Topography( ভূসংস্থান) ৫.Time (সময়) এই পাঁচটির কোন একটি ছাড়াও মাটি গঠন সম্ভব নয়। মাটিতে খনিজ এবং জৈব পদার্থের মিশ্রণ রয়েছে। এর উপাদানগুলো কঠিন, তরল ও বায়বীয় অবস্থায় মাটিতে বিদ্যমান ।[১][২] মাটির কণাগুলো আলগাভাবে যুক্ত্ ফলে এর মধ্যে বাতাস ও জল চলাচলের যথেষ্ট জায়গা রয়েছে।[৩] এজন্য মাটিকে বিজ্ঞানীরা ত্রি-দশা পদার্থ (Three state system) বলে অভিহিত করেন।[৪] অধিকাংশ এলাকার মাটির ঘনত্ব ১ থেকে ২ গ্রাম/ঘন সে.মি.। [৫] পৃথিবীর উপরিভাগের অধিকাংশ মাটিই টারশিয়ারি যুগের পরে গঠিত হয়েছে। আর কোনো স্থানেই প্লেস্টোসিন যুগের পুরানো মাটি নেই।[৬]

Darkened topsoil and reddish subsoil layers are typical in some regions.

মাটির গুণাগুণ

মাটি হলো ভূপৃষ্ঠের উপরিতলের নরম খনিজ এবং জৈব উপাদানের মিশ্রণ যা উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য প্রাকৃতিক মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। মাটি প্রধানতঃ ৪ টি প্রধান উপাদান সমন্বয়ে গঠিত। এগুলো নিচে উল্লিখিত হলোঃ

   খনিজ পদার্থ - ৪৫%;
   জৈব পদার্থ - ৫%;
   বায়ু - ২৫ %;
   পানি - ২৫%;

খনিজ পদার্থ

ভূ-ত্বক প্রথমে শিলা দ্বারা গঠিত ছিল। পরে তা শিলা ক্ষয় প্রক্রিয়ায় ভেঙ্গে ছোট খণ্ডে বা এককে রূপান্তরিত হয়। মাটির এই অংশ বালি, পলি ও কর্দম কণা দ্বারা গঠিত। শিলা ক্ষয় প্রক্রিয়ার ফলে উপর্যুক্ত কণা ও অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যোপাদান যেমন- নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান মাটিতে মুক্ত হয়। মাটিতে খনিজের পরিমাণ হলো ৪৫%।

জৈব পদার্থ

মাটিতে ১-২% জৈব পদার্থ থাকে তবে হিম অঞ্চলের মাটি ২-৫% জৈব পদার্থ ধারণ করে। এই সব জৈব পদার্থ উদ্ভিদ ও প্রাণীর অবশিষ্টাংশ ও মলমূত্র হতে মাটিতে আসে। জৈব পদার্থ মাটির আবদ্ধকরণ পদার্থ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ খুব কম হলেও এটি ব্যাপকভাবে মাটির গুণাবলী নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

জৈব পদার্থ নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে-

সমস্ত পুষ্টি উপাদানের গুদাম ঘর হিসেবে কাজ করে; মাটির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈব গুণাবলী উন্নত করে; ভূমি ক্ষয় রোধ করে; অতিরিক্ত শ্বসন অঙ্গ থাকায় এসব মাছ বাতাস থেকে অক্সিজেন নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে; ফলে জীবন্ত অবস্থায় বাজারজাত করা যায়; পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে; অনুজীবের প্রধান শক্তি হলো এই জৈব পদার্থ এবং মাটিতে নাইট্রোজেনের প্রধান উৎস এ জৈব পদার্থ।

বায়ু ও পানি

প্রবল বর্ষার সময় বা সেচ দিলে মাটির অধিকাংশ রন্ধ্রই পানি দ্বারা পূর্ণ হয়। কিন্তু শুকনা বা খরার সময় ঐ রন্ধ্রগুলো বায়ু দ্বারা পূর্ণ হয়। বায়ুমন্ডলের বায়ু অপেক্ষা মাটির বায়ুতে বেশি পরিমাণ কার্বন ডাই-আক্সাইড ও জলীয়বাষ্প থাকে কিন্তু অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকে। বায়ুর প্রধান কাজ হলো শ্বসন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করা। বায়ু ও পানির গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো-

মাটির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক কার্য নিয়ন্ত্রণ করা; শিলা ক্ষয় প্রক্রিয়ায় সাহায্য করা; সালোকসংশ্লেষণ পদ্ধতিতে অংশগ্রহণ করা এবং দ্রাবক ও পুষ্টি উপাদানের বাহক হিসেবে কাজ করা।

মাটির প্রকারভেদ

বালি, পলি ও কাদা- এই তিনটি স্বতন্ত্র মাটি কণার তুলনামূলক অনুপাতের ওপর ভিত্তি করে মাটির বুনটসমূহের নামকরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন মাটি বিভিন্ন অনুপাতে বালি, পলি ও কাদা কণা ধারণ করে থাকে। কোন মাটিতে বালি কণার পরিমাণ বেশি, আবার কোনটাতে কাদা কণার পরিমাণ বেশি। এই পরিবর্তনের নির্দিষ্ট সীমারেখায় রেখে মাটিকে ১২ টি গ্রুপ বা দলে বিভক্ত করা হয়। এই দলগুলোই বুনটভিত্তিক শ্রেণী বলে পরিচিত। এই শ্রেণীগুলোর একটির হতে অন্যটির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক ধর্মে যথেষ্ট পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। যে মাটিতে অধিক পরিমাণ কাদা কণা থাকে তাকে কাদা মাটি, যে মাটি অধিক পরিমাণ পলি কণা ধারণ করে তাকে পলি মাটি, আর যে মাটিতে বালি কণার পরিমাণ বেশি থাকে তাকে বালি মাটি বলে। যদি কোন মাটি এই তিনটি শ্রেণীর একটিরও প্রভাব বিস্তারকারী ভৌতিক বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন না করে (যেমন-৪০% বালি কণা, ২০% কাদা কণা ও ৪০% পলিকণা যুক্ত মাটি) তবে তাকে দোআঁশ মাটি বলে। দোয়াঁশ মাটিতে বালি, পলি ও কাদা কণার শতকরা পরিমাণ সমান থাকেনা। কিন্তু এ বালি, পলি ও কাদা কণাসমূহের কাছাকাছি প্রায় সামঞ্জস্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য বা ধর্ম প্রদর্শন করে।

মাটির গুণাগুণ

সুষ্ঠুভাবে মাছ চাষ ব্যবস্থাপনায় পুকুর তৈরির জন্য দোঁআশ ও বেলে-দোঁআশ মাটি সবচেয়ে ভাল। এ ধরনের মাটি সহজে পানি ধারণ করে রাখতে পারে। মাটির পিএইচ (PH)-এর মাত্রা ৫.০ এর উপরে থাকা সমীচীন। মাটিতে বিদ্যমান পুষ্টি পদার্থ ও পিএইচ-এর ওপর ভিত্তি করে মাটিকে সাধারণতঃ ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- উচ্চ উৎপাদনশীল, মধ্যম উৎপাদনশীল ও নিম্ন উৎপাদনশীল (সারণি-১)।

সারণি-১: মাটির পুষ্টিমান ও পিএইচ অনুযায়ী পুকুর-জলাশয়ের শ্রেণিবিন্যাস উৎপাদনশীলতার শ্রেণী পিএইচ মাত্রা পুষ্টি উপাদানের মাত্রা (মিগ্রা/কিলো) নাইট্রোজেন ফসফরাস কার্বন উচ্চ ৭.৫-৬.৫ >৫০ ৬-১২ >১.৫ মধ্যম ৬.৫-৫.৫ ২৫-৪৯ ৩-৫ >০.৫-১.৪ নিম্ন <৫.৫ <২৫ <৩ <০.৫

প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতা কম হলেও সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে লাভজনক মাছ চাষের জন্য পুকুরকে উপযোগি করে তোলা যায়। এক্ষেত্রে খরচ কিছুটা বেশি পড়ে।

মাটির গঠন, বর্ণ, পিএইচ-র ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের মাটিকে সাধারণভাবে ৬ ভাগে ভাগ করা যায়। এ ভিত্তিতে বাংলাদেশের মাটির শ্রেণিবিন্যাস ও প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতা নিচের সারণিতে দেয়া হলো (সারণি-২)।

সারণি-২: অঞ্চলভেদে মাটির গুণাগুণ

ক্র.নং অঞ্চল মাটির প্রকার PH-র ভিত্তিতে মাটির ধরন মাটির বর্ণ উৎপাদনশীলতা ১ বরেন্দ্র, মধুপুর গড়, সাভার, গাজীপুর, সিলেট, কুমিল্লা ও নোয়াখালীর অংশ বিশেষ এটেল, কাদা ও বালিযুক্ত কাদা বেশি অম্লীয় লাল ও বাদামী প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতা কম ২ যশোর, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, রাজশাহী, ঢাকা ও বরিশালের কিয়দংশ পলিযুক্ত এটেল ক্ষারীয় হালকা ও বাদামী গাঢ় ধূসর প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতা বেশি ৩ ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, সিলেট, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ঢাকা, রংপুর, বগুড়া, পাবনা ও ফরিদপুরের কিয়দংশ পলিযুক্ত দো-আঁশ নিরপেক্ষ থেকে ক্ষারীয় ধূসর ও গাঢ় ধূসর প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতা তুলনামূলক বেশি ৪ রংপুর-দিনাজপুরের কিয়দংশ, মানিকগঞ্জ, গাইবান্ধা, ফরিদপুর ও টাঙ্গাইলের কিয়দংশ বালি ও বালিযুক্ত পলি কিছুটা অম্লীয় ধূসর প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতা তুলনামূলক কম ৫ নদী সন্নিকটস্থ অঞ্চল বালিযুক্ত পলি অম্লীয়/ক্ষারীয়/নিরপেক্ষ ধূসর থেকে কালচে ধূসর প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতা তুলনামূলক কম ৬ উপকূলীয় অঞ্চলসমূহ পলি ও কাদার ভাগ বেশি অম্লীয় কালো বা ছাই রং প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতা কম

মাটির ভৌত-রাসায়নিক গুণাগুণ

যে অঞ্চলের মাটি উর্বর সে স্থানে খনন করা পুকুরও সাধারণভাবে উর্বর হয়ে থাকে এবং সে অঞ্চলের পুকুরে মাছের উৎপাদনও ভাল হয়। উর্বর মাটি পানিতে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্যের যোগান দেয় এবং পানি দূষণ রোধে ভূমিকা রাখে। সাধারণভাবে মাটি ৪ প্রকারের হয়ে থাকে ক) এটেল মাটি, ২) বেলে মাটি, গ) লাল মাটি এবং ঘ) দোআঁশ মাটি। দোআঁশ মাটির পুকুর মাছ চাষের জন্য সর্বাধিক উপযোগি। বেলে মাটির পানি ধারণক্ষমতা খুবই কম এবং লাল মাটির পুকুরে পানি প্রায় সবসময় ঘোলা থাকে। এজন্য বেলে মাটি ও লাল মাটিতে খনন করা পুকুর মাছ চালের জন্য ততটা উপযোগি হয় না। বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি ধরে রাখা ও আদান প্রদানে দোআঁশ মাটি উত্তম।

   দোআঁশ মাটি মাছ চাষের জন্য উত্তম;
   এটেল মাটি মাছ চাষের জন্য কম উপযোগি;
   বেলে মাটি চাষ চাষের উপযোগি নয়;
   লাল মাটিতে মাছচাষ ব্যয়বহুল।

মাছ চাষের জন্য বদ্ধ জলাশয়ের পানির উপযোগিতা মাটির কয়েকটি উপাদানের মানের ওপর র্নিভর করে। যথা- পি,এইচ, ফসফরাস, নাইট্রোজন, কার্বন-ড্রাই অক্সাইড, জৈব পদার্থ ইত্যাদি। নিচে এসব সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলোঃ

পিএইচ মাটির পিএইচ (PH) ৬.৫-৮.০ এর মধ্যে হলে তা মাছ চাষের জন্য উত্তম। অনুকূল পিএইচ মাত্রায় ফসফরাসের যোগান বৃদ্ধি পায় এবং অ্যামোনিয়া ও নাইট্রোজেনঘটিত অণুজীব অধিক কর্মক্ষম হয়। পি এইচ ৬.০-এর নিচে হলে মাটি অধিক অম্লীয় হয় এবং পানিতে ক্ষতিকর মৌলিক পদার্থের উপস্থিতি দেখা দেয়। আবার পিএইচ-এর মাত্রা ৯.০ এর বেশি হলে অণুজীবগোষ্ঠী নিস্ক্রিয় হয় ও ফসফরাসের সরবরাহ হ্রাস পায়। এতে উদ্ভিদ প্ল্যাংটনের উৎপাদন খুব কমে যায়।

ফসফরাস ফসফরাস মাটিতে ক্যালসিয়াম, আয়রণ ও এ্যালুমিনিয়ামের ফসফেট হিসেবে অবস্থান করে। মাটিতে পরিমিত জৈব পদার্থের উপস্থিতিই সহজপ্রাপ্য ফসফরাসের সরবরাহ অব্যাহত রাখে। ফসফরাসের প্রাচুর্যতা পুকুরের প্রাথমিক উৎপাদনশীলতা সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করে। ফসফরাস সবুজ শেওলার বংশ বৃদ্ধিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। ফলে অধিক পরিমাণে উদ্ভিদ-প্ল্যাংঙ্কটন উৎপন্ন হয়। মাছ চাষের জন্য প্রতি ১০০ গ্রাম মাটিতে ১০-১৫ মিলিগ্রাম হারে সহজপ্রাপ্য ফসফেট থাকা উচিত।

নাইট্রোজেন বায়ুমন্ডলের নাইট্রোজেনই মাটির নাইট্রোজেনের প্রধান উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম মাটিতে ৮-১০ মিলিগ্রাম হারে সহজপ্রাপ্য নাইট্রোজেন থাকা দরকার। নাইট্রোজেন উদ্ভিদকে ঘন সবুজ রাখে। পরিমিত নাইট্রোজেন উপস্থিতিতে উদ্ভিদ-প্ল্যাংটনের খাদ্য তৈরির প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হয় এবং বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। ফলে অধিক পরিমাণে উদ্ভিদ-প্ল্যাঙ্কটন উৎপন্ন হয় ও মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

জৈব পদার্থ মাটিতে বিদ্যমান জৈব পদার্থ যে কোন উৎপাদন প্রক্রিয়ায় একটি অপরিহার্য উপাদান। জৈব পদার্থ পুকুরের তলায় মাটিকে সজীব ও সক্রিয় রাখে এবং পানি চুয়ানো বন্ধ করে মাটির পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করে। জৈব পদার্থ ফরফরাস ও নাইট্রোজেনের প্রধান উৎস। জলজ পরিবেশে জৈব পদার্থ আবহাওয়া থেকে সরাসরি নাইট্রোজেন ধারণ করে।

প্রকারভেদ

বিভিন্নভাবে মৃত্তিকাবিজ্ঞানীরা মাটির প্রকারভেদ করেছেন। তন্মধ্যে - বেলে, এঁটেল, দো-আঁশ এবং পলিমাটি অন্যতম । বিভিন্ন ধরনের মাটির মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে এবং কোনো বিশেষ কাজে মাটির উপযোগিতা যাচাই করার জন্য মাটির বিভিন্ন রকমের শ্রেণীবিভাগ করা হয়েছে । পূর্বে এইরকম একটি ধারণা ছিল যে, মাটি তৈরির উপকরণ এবং কারণগুলি-ই মাটিকে কোনো একটি নির্দিষ্ট বহির্গঠন দান করে । এই ধারণা অনুযায়ী বানানো প্রথম দিককার শ্রেনীবিভাগ গুলির মধ্যে ১৮৮৮ খ্রীস্টাব্দে রাশিয়ান বৈজ্ঞানিক Dokuchaev (দকুচেভ)-এরটি উল্লেখযোগ্য । পরবর্তী কালে অনেক মার্কিন এবং ইউরোপীয় গবেষক এটিকে উন্নত করে ১৯৬০ খ্রীস্টাব্দ নাগাদ একটি গ্রহণযোগ্য শ্রেণীবিভাগ তৈরী করেন । এই ষাটের দশকে একটি অন্য ধরনের শ্রেণীবিভাগ তৈরী হয়, যেখানে মাটি তৈরির উপকরণ ও কারণের থেকে মাটির বহির্গঠনের উপর বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে । পরবর্তীকালে এটি-ও ধীরে ধীরে উন্নত হচ্ছে ।World Reference Base for Soil Resources (WRB)[৭] নামের সংস্থাটি মাটির আন্তর্জাতিক শ্রেণীবিভাগের কাজে বাপৃত।

ময়মনসিংহে খাওয়ার চেরা মাটি

মাটি খাওয়া প্রচলন

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে দেশে বিস্তর পটভূমিতে মাটি খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। এই মাটি খাওয়া বিষয়টি শারীরিক অসুস্থতার মুক্তির সঙ্গে জড়িত। অর্থাৎ আরোগ্য ও উপকারের জন্যই প্রচলিত এই মাটি ভক্ষণ। চীন, জিম্বাবুইয়ে আর যুক্তরাষ্ট্রে সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে নমুনা নিয়ে মাটি খাওয়ার একই উপকারী ফলফল পাওয়া গেছে। জানা যায়, রোমানরা মাটি ও ছাগলের রক্ত মিশিয়ে ওষুধের ট্যাবলেট তৈরি করতো। গত শতাব্দীতেও দেখা যায়, জার্মানিরা খুব মিহি কাদার আস্তরণ রুটির উপর মাখনের পরিবর্তে ব্যবহার করে খেতো। [৮]

বাংলাদেশে মাটি খাওয়া

মানুষ মাটি খায় সভ্য সমাজে এটি খুবই অজানা কথা। মানুষ সত্যি মাটি খায় এবং তা বাজারে পাওয়া যায়। এর নাম চেরা মাটি। ময়মনসিংহের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোন কোন এলাকার দরিদ্র মানুষের মধ্যে এ চেরা মাটি খাওয়া প্রচলন এখনও লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে পোয়াতি মহিলাদের এ মাটির প্রতি বিশেষ আকর্ষণ। বাজার থেকে প্রয়োজনীয় মাছ তরকারির পাশাপাশি ২/৪ টাকার চেরা মাটিও কিনে তারা। [৯]

খাওয়ার মাটিতে যা থাকে

পরীক্ষায় দেখা গেছে, চীনের নমুনাটিতে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে লোহা, ক্যালশিয়াম, ভ্যানডিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ আর পটাশিয়াম। দুর্ভিক্ষের সময় শরীরে এসব পদার্থের অভাব ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রের নমুনাটিতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় আয়োডিন আর লৌহ। যা শিশু ও মহিলাদের বেশি করে দরকার। অনেক খাবারে এগুলো যথেষ্ট থাকে না। জিম্বাবুইয়ের নমুনাটিতে বেশি দেখা যায় কেওলিনাইট। ডায়রিয়া সারানোর জন্য বাণিজ্যিকভাবে যে ক্যাওপেকটেট পাওয়া যায় তার প্রধান উপাদানই হচ্ছে এই কেওলিনাইট। [৮]

তথ্যসূত্র

  1. Voroney, R. P., 2006. The Soil Habitat in Soil Microbiology, Ecology and Biochemistry, Eldor A. Paul ed. ISBN=0125468075
  2. "James A. Danoff-Burg, Columbia University The Terrestrial Influence: Geology and Soils"। ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০০৯ 
  3. Taylor, S. A., and G. L. Ashcroft. 1972. Physical Edaphology
  4. McCarty, David. 1982. Essentials of Soil Mechanics and Foundations
  5. http://www.pedosphere.com/resources/bulkdensity/triangle_us.cfm
  6. Buol, S. W. (১৯৭৩)। Soil Genesis and Classification (First সংস্করণ)। Ames, IA: Iowa State University Press। আইএসবিএন 0-8138-1460-X  অজানা প্যারামিটার |coauthors= উপেক্ষা করা হয়েছে (|author= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য).
  7. IUSS Working Group WRB (২০০৭)। "World Reference Base for soil resources - A framework for international classification, correlation and communication" (পিডিএফ)। FAO। 
  8. শেখ আনোয়ার (২০২১-০৪-১৯)। "মাটি খাওয়া মানুষ"অপরাজেয় বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-১৯ 
  9. মনোনেশ দাস (২০১৪-০৮-৩১)। "ময়মনসিংহের মানুষ মাটি খায়!"blog.bdnews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-১৯ 

http://203.112.195.237/ebook/Koi_shing_Magur_culture/Mati.html[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

আদর্শ মাটি কোনটি

মাটি কী? মাটির গঠণ প্রক্রিয়া, মাটির প্রকারভেদ. দূষণ, দূষণরোধে করণীয় দেখতে ক্লিক করুন