রঞ্জন রশ্মি: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
ফিক্স লিংক |
সংশোধন |
||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[চিত্র:First medical X-ray by Wilhelm Röntgen of his wife Anna Bertha Ludwig's hand - 18951222.gif|thumb|''Hand mit Ringen'': |
[[চিত্র:First medical X-ray by Wilhelm Röntgen of his wife Anna Bertha Ludwig's hand - 18951222.gif|thumb|''হান্ড মিট রিঙেন'' (''Hand mit Ringen''): ভিলহেল্ম র্যোন্টগেনের তোলা প্রথম মানবদেহের রঞ্জনরশ্মি চিত্র। র্যোন্টগেন ১৮৯৫ এর ২২শে ডিসেম্বর তার স্ত্রী আনা বের্টা র্যোন্টগেনের হাতের চিত্র ধারণ করেন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি | শেষাংশ= Kevles | প্রথমাংশ=Bettyann Holtzmann | শিরোনাম=Naked to the Bone Medical Imaging in the Twentieth Century | প্রকাশক=Rutgers University Press | তারিখ=1996 | অবস্থান=Camden, NJ | পাতাসমূহ=19–22 | আইএসবিএন=0813523583}}</ref><ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি | শেষাংশ=Sample | প্রথমাংশ=Sharron | লেখক-সংযোগ= | coauthors= | শিরোনাম=X-rays | কর্ম=The electromagnetic spectrum | প্রকাশক=NASA | তারিখ=[[2007-03-27]] | ইউআরএল=http://science.hq.nasa.gov/kids/imagers/ems/xrays.html | সংগ্রহের-তারিখ=2007-12-03}}</ref>]] |
||
[[চিত্র:X-ray by Wilhelm Röntgen of Albert von Kölliker's hand - 18960123-02.jpg|thumb|right|এক্স-রে ছবি(রেডিওগ্রাফ), taken by [[উইলিয়াম রন্টজেন]], of Albert von Kölliker's hand.]] |
[[চিত্র:X-ray by Wilhelm Röntgen of Albert von Kölliker's hand - 18960123-02.jpg|thumb|right|এক্স-রে ছবি(রেডিওগ্রাফ), taken by [[উইলিয়াম রন্টজেন]], of Albert von Kölliker's hand.]] |
||
'''রঞ্জনরশ্মি''' বা '''এক্স-রশ্মি''' (X-ray) বলতে ১০০ ন্যানোমিটার অপেক্ষার ক্ষুদ্রতর [[তরঙ্গদৈর্ঘ্য]] বিশিষ্ট ও ৩x১০<sup>১৫</sup> হার্জের চেয়ে বেশি কম্পাংকের [[তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণ]]। দ্রুতগতিসম্পন্ন [[ইলেকট্রন]] কোনও ধাতুকে আঘাত করলে তা থেকে অতি ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের এবং উচ্চ ভেদনক্ষমতাসম্পন্ন এক প্রকৃতির বিকিরণ উৎপন্ন হয়; এই বিকিরণটিই হল রঞ্জনরশ্মি। |
|||
'''রঞ্জন রশ্মি''' ক্ষুদ্র [[তরঙ্গদৈর্ঘ্য]] বিশিষ্ট এক ধরনের [[তাড়িত চৌম্বক বিকিরণ]]। এর অপর নাম এক্স-রে (X-ray)। রঞ্জনরশ্মির [[তরঙ্গ দৈর্ঘ্য]] (সাধারণত ১০-০.০১ [[ন্যানোমিটার]]) সাধারণ আলোর চেয়ে অনেক কম বলে দর্শন অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে না। ১৮৯৫ সালে নভেম্বর মাসের আট তারিখে [[ভিলহেল্ম কনরাড রন্টগেন|উইলিয়াম রন্টজেন]] এই রশ্মি আবিষ্কার করেন। তরঙ্গদৈর্ঘ্য যত ছোট হয় পদার্থ ভেদ করার ক্ষমতা তত বেশি হয়। চিকিৎসাক্ষেত্রে রোগনির্ণয়ে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে রঞ্জনরশ্মি। |
|||
রঞ্জনরশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য দৃশ্যমান আলোকরশ্মির চেয়ে অনেক কম বলে এগুলি অদৃশ্য। ১৮৯৫ সালের ৮ই নভেম্বর তারিখে জার্মান বিজ্ঞানী [[ভিলহেল্ম কনরাড রন্টগেন|ভিলহেল্ম র্যোন্টগেন]] এই রশ্মি আবিষ্কার করেন। রঞ্জনরশ্মির চেয়ে হ্রস্ব তরঙ্গদৈর্ঘ্যের (১০<sup>-১১</sup>) রশ্মিগুলিকে [[গামা রশ্মি]] বলা হয়। গামা রশ্মিগুলি পরমাণুকেন্দ্রের (নিউক্লিয়াসের) ভেতর থেকে উৎপাদিত হয়, অন্যদিকে রঞ্জনরশ্মিগুলি পরমাণুকেন্দ্রের বাইরে অবস্থতি প্রক্রিয়াসমূহের কারণে উৎপাদিত হয়। |
|||
তরঙ্গদৈর্ঘ্য যত ছোট হয় পদার্থ ভেদ করার ক্ষমতা তত বেশি হয়। মাত্রাতিরিক্ত রঞ্জনরশ্মি মানবদেহে আপতিত হলে তা স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তবে বর্তমানে চিকিৎসাক্ষেত্রে রোগনির্ণয়ে রঞ্জনরশ্মি ব্যাপক ব্যবহৃত হয়। ধাতব বস্তু শনাক্ত করতেও এগুলি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। |
|||
== বৈশিষ্ট্য == |
== বৈশিষ্ট্য == |
||
রঞ্জনরশ্মি ও সাধারণ আলোকরশ্মির মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল এদের তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে। সাধারণ আলোকরশ্মির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ৭x১০<sup>−৭</sup> মিটার থেকে ৪x১০<sup>−৭</sup> মিটারের কাছাকাছি। রঞ্জন রশ্মির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ১০<sup>−৮</sup> মিটার থেকে ১০<sup>−১১</sup> মিটারের কাছাকাছি। সাধারণ আলো দৃশ্যমান এবং বিভিন্ন রঙে বিভক্ত হয়। কিন্তু রঞ্জন রশ্মি দৃশ্যমান নয়। রঞ্জন রশ্মি উচ্চ ভেদন ক্ষমতাসম্পন্ন। রঞ্জন রশ্মির আয়ন সৃষ্টিকারী বিকিরণ গ্যাস বা বায়বীয় পদার্থের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করার সময় বায়বীয় পদার্থটিকে আয়নিত করে, কিন্তু সাধারণ আলোকরশ্মি এটি করতে পারে না। |
|||
== প্রকারভেদ == |
== প্রকারভেদ == |
||
# কোমল |
# কোমল রঞ্জন রশ্মি (Soft X-ray): রঞ্জন রশ্মি যন্ত্রে কম বিভব পার্থক্য প্রয়োগ করে যে রঞ্জন রশ্মি পাওয়া যায় অর্থ্যাৎ যে রঞ্জন রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য অপেক্ষাকৃত বেশি, ফলে ভেদন ক্ষমতা অপেক্ষাকৃত কম, তাকে কোমল রঞ্জন রশ্মি বলে। |
||
# কঠিন |
# কঠিন রঞ্জন রশ্মি (Hard X-ray): রঞ্জন রশ্মি যন্ত্রে বেশি বিভব পার্থক্য প্রয়োগ করে যে রঞ্জন রশ্মি পাওয়া যায় অর্থাৎ যে রঞ্জন রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য অপেক্ষাকৃত কম, ফলে ভেদন ক্ষমতা অপেক্ষাকৃত বেশি, তাকে কঠিন রঞ্জন রশ্মি বলে। |
||
== একক == |
== একক == |
||
রঞ্জনরশ্মির একক হল রন্টজেন। এক রন্টজেন বলতে সেই পরিমাণ বিকিরণ বুঝায় যা স্বাভাবিক চাপ ও তাপমাত্রায় এক মিলিমিটার বায়ুতে এক স্থির বৈদ্যুতিক আধানের সমান আধান উৎপন্ন করতে পারে। |
|||
== আবিষ্কার == |
== আবিষ্কার == |
||
বিজ্ঞানী রন্টজেন |
জার্মান বিজ্ঞানী র্যোন্টগেন (রন্টজেন) তড়িৎক্ষরণ নলে (discharge tube) ১০<sup>−৩</sup> মিলিমিটার পারদ চাপে বায়ুর মধ্যে তড়িৎক্ষরণের পরীক্ষা করতে গিয়ে লক্ষ করেন যে নল থেকে কিছু দূরে অবস্থিত বেরিয়াম প্লাটিনোসায়ানাইড আবৃত পর্দায় প্রতিপ্রভার সৃষ্টি হচ্ছে। পরে তিনি আবিষ্কার করেন যে, তড়িৎক্ষরণ নল থেকে ক্যাথোড রশ্মি যখন নলের দেয়ালে পড়ে তখন এই রশ্মির উৎপত্তি হয়। তিনি এই রশ্মির নাম রাখেন এক্স রশ্মি, যা বাংলায় রঞ্জনরশ্মি নামে পরিচিত। |
||
== সংজ্ঞা == |
|||
দ্রুতগতিসম্পন্ন [[ইলেকট্রন]] কোনো ধাতুকে আঘাত করলে তা থেকে অতি ক্ষুদ্র তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের এবং উচ্চ ভেদন ক্ষমতা সম্পন্ন এক প্রকৃতির [[বিকিরণ]] উৎপন্ন হয়। এই বিকিরণকে বলা হয় এক্সরে বা এক্সরশ্মি(X-Ray)। |
|||
== উৎপাদন == |
== উৎপাদন == |
||
[[চিত্র:WaterCooledXrayTube.svg|thumb| |
[[চিত্র:WaterCooledXrayTube.svg|thumb|রঞ্জনরশ্মি নলের প্রধান অংশের চিত্র]] |
||
ফিলামেন্ট F-এর ভিতর দিয়ে প্রবাহিত তড়িৎপ্রবাহ ক্যাথোড C-কে উত্তপ্ত |
পরিবাহী সূত্র বা ফিলামেন্ট F-এর ভিতর দিয়ে প্রবাহিত তড়িৎপ্রবাহ ঋণাত্মক তড়িৎদ্বার বা ক্যাথোড C-কে উত্তপ্ত করলে ইলেকট্রন তাপীয় নিঃসরণ প্রক্রিয়ায় একটি রঞ্জনরশ্মি নলের প্রয়োজনীয় অংশ ক্যাথোড থেকে মুক্ত হয়ে আসে। তারপর একটি অতি উচ্চ বিভব প্রভেদ V-এর দ্বারা ইলেকট্রনগুলি ত্বরিত হয় ও ধনাত্মক তড়িৎদ্বার তথা আ্যনোডরূপী লক্ষ্যবস্তু T-তে আঘাত করে। ফলে রঞ্জনরশ্মি উৎপন্ন হয়। |
||
== ধর্ম == |
== ধর্ম == |
||
* |
* রঞ্জনরশ্মি সরলরেখায় গমন করে। |
||
* |
* রঞ্জনরশ্মি অত্যধিক ভেদনক্ষমতাসম্পন্ন। |
||
* |
* রঞ্জনরশ্মি একটি তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ, তড়িৎক্ষেত্র বা চৌম্বকক্ষেত্র দ্বারা এটি বিচ্যুত হয় না। |
||
* |
* রঞ্জনরশ্মির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য খুব হ্রস্ব, [[কম্পাঙ্ক]] খুব উচ্চ। |
||
* সাধারণ আলোর ন্যায় |
* সাধারণ আলোর ন্যায় রঞ্জনরশ্মির প্রতিফলন, প্রতিসরণ, ব্যতিচার, অপবর্তন ও [[সমাবর্তন]] হয়ে থাকে। |
||
* ফটোগ্রাফিক |
* আলোকচিত্রগ্রাহী পাতের (ফটোগ্রাফিক প্লেট) উপর এর প্রতিক্রিয়া আছে। |
||
* |
* রঞ্জনরশ্মির আলোক-তড়িৎ ক্রিয়া আছে। |
||
* জিঙ্ক সালফাইড, বেরিয়াম প্লাটিনোসায়ানাইড প্রভৃতি পদার্থে এ রশ্মি প্রতিপ্রভা সৃষ্টি করে। |
* জিঙ্ক সালফাইড, বেরিয়াম প্লাটিনোসায়ানাইড, প্রভৃতি পদার্থে এ রশ্মি [[প্রতিপ্রভা]]র সৃষ্টি করে। |
||
* |
* রঞ্জনরশ্মি গ্যাসীয় পদার্থে আয়ন সৃষ্টিকারী বিকিরণ। |
||
* |
* রঞ্জনরশ্মি আধান নিরপেক্ষ। |
||
* |
* রঞ্জনরশ্মি অদৃশ্য। সাধারণ আলোকরশ্মি অক্ষিপটে পড়লে দৃষ্টির অনুভূতি জন্মায়, কিন্তু রঞ্জনরশ্মির ক্ষেত্রে এমন হয় না। |
||
* |
* রঞ্জনরশ্মির তীব্রতা ব্যস্তানুপাতিক সূত্র মেনে চলে। |
||
* |
* রঞ্জনরশ্মি জীবন্ত কোষকে ধ্বংস করতে পারে। |
||
* |
* রঞ্জনরশ্মি প্রতিপ্রভা সৃষ্টি করে। |
||
* |
* রঞ্জনরশ্মি আলোর বেগে অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৩×১০<sup>৮</sup> মিটার (৩ লক্ষ কিলোমিটার) বেগে গমন করে। |
||
== ব্যবহার == |
== ব্যবহার == |
||
===চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যবহার=== |
|||
* স্থানচ্যুত হাড়, হাড়ে দাগ বা ফাটল, ভেঙ্গে যাওয়া হাড়, শরীরের ভিতরের কোন বস্তুর বা ফুসফুসের ক্ষত, দাঁতের ক্যারিস ইত্যাদির অবস্থান নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়। |
* স্থানচ্যুত হাড়, হাড়ে দাগ বা ফাটল, ভেঙ্গে যাওয়া হাড়, শরীরের ভিতরের কোন বস্তুর বা ফুসফুসের ক্ষত, দাঁতের ক্যারিস ইত্যাদির অবস্থান নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়। |
||
* [[সিটি স্ক্যান]] হল কম্পিউটারের সাহায্যে রঞ্জন রশ্মি দ্বারা গৃহীত চিত্র সমন্বয় করে ত্রিমাত্রিক বা প্রস্থছেদ চিত্র বানানোর ব্যবস্থা। |
* [[সিটি স্ক্যান]] হল কম্পিউটারের সাহায্যে রঞ্জন রশ্মি দ্বারা গৃহীত চিত্র সমন্বয় করে ত্রিমাত্রিক বা প্রস্থছেদ চিত্র বানানোর ব্যবস্থা। |
||
* ক্যান্সারের চিকিৎসায় রঞ্জন রশ্মি বিকিরণ ব্যবহৃত হয়। |
* ক্যান্সারের চিকিৎসায় রঞ্জন রশ্মি বিকিরণ ব্যবহৃত হয়। |
||
* পরিপাক(Digestive) নালী দিয়ে খাদ্যবস্তুর গমন পথ অনুসরণ, আলসার নির্ণয় ইত্যাদির জন্য ব্যবহার করা হয়। |
* পরিপাক(Digestive) নালী দিয়ে খাদ্যবস্তুর গমন পথ অনুসরণ, আলসার নির্ণয় ইত্যাদির জন্য ব্যবহার করা হয়। |
||
===শিল্পখাতে ব্যবহার=== |
|||
* ধাতব |
* ধাতব [[ঢালাই]]য়ের দোষ ত্রুটিপূর্ণ ঢালাই, ধাতব পাতের গর্ত, ইত্যাদি নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়। |
||
* কেলাস গঠন পরীক্ষায় |
* কেলাস গঠন পরীক্ষায় রঞ্জনরশ্মি ব্যবহৃত হয় এবং মণিকারেরা এর সাহায্যে আসল ও নকল গহনা চিহ্নিত করতে পারেন। |
||
* টফি লজেন্স, সিগারেট ইত্যাদির মান বজায় আছে কিনা বা টফি ও লজেন্সে ক্ষতিকর কোন কিছু মিশ্রিত হয়েছে |
* টফি, লজেন্স, সিগারেট ইত্যাদির মান বজায় আছে কিনা বা টফি ও লজেন্সে ক্ষতিকর কোন কিছু মিশ্রিত হয়েছে কি না, তা জানার জন্য ব্যবহৃত হয়। |
||
===গোয়েন্দা বিভাগে ব্যবহার=== |
|||
* কাঠের বাক্স বা চামড়ার থলিতে বিস্ফোরক লুকিয়ে রাখলে তা খুঁজে বের করতে ব্যবহার করা হয়। |
* কাঠের বাক্স বা চামড়ার থলিতে বিস্ফোরক লুকিয়ে রাখলে তা খুঁজে বের করতে ব্যবহার করা হয়। |
||
* |
* শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তারা চোরাচালানের দ্রব্যাদি খুঁজে বের করতে ব্যবহার করেন। |
||
== তথ্যসূত্র == |
== তথ্যসূত্র == |
০৮:৫৯, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
রঞ্জনরশ্মি বা এক্স-রশ্মি (X-ray) বলতে ১০০ ন্যানোমিটার অপেক্ষার ক্ষুদ্রতর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বিশিষ্ট ও ৩x১০১৫ হার্জের চেয়ে বেশি কম্পাংকের তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণ। দ্রুতগতিসম্পন্ন ইলেকট্রন কোনও ধাতুকে আঘাত করলে তা থেকে অতি ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের এবং উচ্চ ভেদনক্ষমতাসম্পন্ন এক প্রকৃতির বিকিরণ উৎপন্ন হয়; এই বিকিরণটিই হল রঞ্জনরশ্মি।
রঞ্জনরশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য দৃশ্যমান আলোকরশ্মির চেয়ে অনেক কম বলে এগুলি অদৃশ্য। ১৮৯৫ সালের ৮ই নভেম্বর তারিখে জার্মান বিজ্ঞানী ভিলহেল্ম র্যোন্টগেন এই রশ্মি আবিষ্কার করেন। রঞ্জনরশ্মির চেয়ে হ্রস্ব তরঙ্গদৈর্ঘ্যের (১০-১১) রশ্মিগুলিকে গামা রশ্মি বলা হয়। গামা রশ্মিগুলি পরমাণুকেন্দ্রের (নিউক্লিয়াসের) ভেতর থেকে উৎপাদিত হয়, অন্যদিকে রঞ্জনরশ্মিগুলি পরমাণুকেন্দ্রের বাইরে অবস্থতি প্রক্রিয়াসমূহের কারণে উৎপাদিত হয়।
তরঙ্গদৈর্ঘ্য যত ছোট হয় পদার্থ ভেদ করার ক্ষমতা তত বেশি হয়। মাত্রাতিরিক্ত রঞ্জনরশ্মি মানবদেহে আপতিত হলে তা স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তবে বর্তমানে চিকিৎসাক্ষেত্রে রোগনির্ণয়ে রঞ্জনরশ্মি ব্যাপক ব্যবহৃত হয়। ধাতব বস্তু শনাক্ত করতেও এগুলি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
বৈশিষ্ট্য
রঞ্জনরশ্মি ও সাধারণ আলোকরশ্মির মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল এদের তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে। সাধারণ আলোকরশ্মির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ৭x১০−৭ মিটার থেকে ৪x১০−৭ মিটারের কাছাকাছি। রঞ্জন রশ্মির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ১০−৮ মিটার থেকে ১০−১১ মিটারের কাছাকাছি। সাধারণ আলো দৃশ্যমান এবং বিভিন্ন রঙে বিভক্ত হয়। কিন্তু রঞ্জন রশ্মি দৃশ্যমান নয়। রঞ্জন রশ্মি উচ্চ ভেদন ক্ষমতাসম্পন্ন। রঞ্জন রশ্মির আয়ন সৃষ্টিকারী বিকিরণ গ্যাস বা বায়বীয় পদার্থের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করার সময় বায়বীয় পদার্থটিকে আয়নিত করে, কিন্তু সাধারণ আলোকরশ্মি এটি করতে পারে না।
প্রকারভেদ
- কোমল রঞ্জন রশ্মি (Soft X-ray): রঞ্জন রশ্মি যন্ত্রে কম বিভব পার্থক্য প্রয়োগ করে যে রঞ্জন রশ্মি পাওয়া যায় অর্থ্যাৎ যে রঞ্জন রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য অপেক্ষাকৃত বেশি, ফলে ভেদন ক্ষমতা অপেক্ষাকৃত কম, তাকে কোমল রঞ্জন রশ্মি বলে।
- কঠিন রঞ্জন রশ্মি (Hard X-ray): রঞ্জন রশ্মি যন্ত্রে বেশি বিভব পার্থক্য প্রয়োগ করে যে রঞ্জন রশ্মি পাওয়া যায় অর্থাৎ যে রঞ্জন রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য অপেক্ষাকৃত কম, ফলে ভেদন ক্ষমতা অপেক্ষাকৃত বেশি, তাকে কঠিন রঞ্জন রশ্মি বলে।
একক
রঞ্জনরশ্মির একক হল রন্টজেন। এক রন্টজেন বলতে সেই পরিমাণ বিকিরণ বুঝায় যা স্বাভাবিক চাপ ও তাপমাত্রায় এক মিলিমিটার বায়ুতে এক স্থির বৈদ্যুতিক আধানের সমান আধান উৎপন্ন করতে পারে।
আবিষ্কার
জার্মান বিজ্ঞানী র্যোন্টগেন (রন্টজেন) তড়িৎক্ষরণ নলে (discharge tube) ১০−৩ মিলিমিটার পারদ চাপে বায়ুর মধ্যে তড়িৎক্ষরণের পরীক্ষা করতে গিয়ে লক্ষ করেন যে নল থেকে কিছু দূরে অবস্থিত বেরিয়াম প্লাটিনোসায়ানাইড আবৃত পর্দায় প্রতিপ্রভার সৃষ্টি হচ্ছে। পরে তিনি আবিষ্কার করেন যে, তড়িৎক্ষরণ নল থেকে ক্যাথোড রশ্মি যখন নলের দেয়ালে পড়ে তখন এই রশ্মির উৎপত্তি হয়। তিনি এই রশ্মির নাম রাখেন এক্স রশ্মি, যা বাংলায় রঞ্জনরশ্মি নামে পরিচিত।
উৎপাদন
পরিবাহী সূত্র বা ফিলামেন্ট F-এর ভিতর দিয়ে প্রবাহিত তড়িৎপ্রবাহ ঋণাত্মক তড়িৎদ্বার বা ক্যাথোড C-কে উত্তপ্ত করলে ইলেকট্রন তাপীয় নিঃসরণ প্রক্রিয়ায় একটি রঞ্জনরশ্মি নলের প্রয়োজনীয় অংশ ক্যাথোড থেকে মুক্ত হয়ে আসে। তারপর একটি অতি উচ্চ বিভব প্রভেদ V-এর দ্বারা ইলেকট্রনগুলি ত্বরিত হয় ও ধনাত্মক তড়িৎদ্বার তথা আ্যনোডরূপী লক্ষ্যবস্তু T-তে আঘাত করে। ফলে রঞ্জনরশ্মি উৎপন্ন হয়।
ধর্ম
- রঞ্জনরশ্মি সরলরেখায় গমন করে।
- রঞ্জনরশ্মি অত্যধিক ভেদনক্ষমতাসম্পন্ন।
- রঞ্জনরশ্মি একটি তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ, তড়িৎক্ষেত্র বা চৌম্বকক্ষেত্র দ্বারা এটি বিচ্যুত হয় না।
- রঞ্জনরশ্মির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য খুব হ্রস্ব, কম্পাঙ্ক খুব উচ্চ।
- সাধারণ আলোর ন্যায় রঞ্জনরশ্মির প্রতিফলন, প্রতিসরণ, ব্যতিচার, অপবর্তন ও সমাবর্তন হয়ে থাকে।
- আলোকচিত্রগ্রাহী পাতের (ফটোগ্রাফিক প্লেট) উপর এর প্রতিক্রিয়া আছে।
- রঞ্জনরশ্মির আলোক-তড়িৎ ক্রিয়া আছে।
- জিঙ্ক সালফাইড, বেরিয়াম প্লাটিনোসায়ানাইড, প্রভৃতি পদার্থে এ রশ্মি প্রতিপ্রভার সৃষ্টি করে।
- রঞ্জনরশ্মি গ্যাসীয় পদার্থে আয়ন সৃষ্টিকারী বিকিরণ।
- রঞ্জনরশ্মি আধান নিরপেক্ষ।
- রঞ্জনরশ্মি অদৃশ্য। সাধারণ আলোকরশ্মি অক্ষিপটে পড়লে দৃষ্টির অনুভূতি জন্মায়, কিন্তু রঞ্জনরশ্মির ক্ষেত্রে এমন হয় না।
- রঞ্জনরশ্মির তীব্রতা ব্যস্তানুপাতিক সূত্র মেনে চলে।
- রঞ্জনরশ্মি জীবন্ত কোষকে ধ্বংস করতে পারে।
- রঞ্জনরশ্মি প্রতিপ্রভা সৃষ্টি করে।
- রঞ্জনরশ্মি আলোর বেগে অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৩×১০৮ মিটার (৩ লক্ষ কিলোমিটার) বেগে গমন করে।
ব্যবহার
চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যবহার
- স্থানচ্যুত হাড়, হাড়ে দাগ বা ফাটল, ভেঙ্গে যাওয়া হাড়, শরীরের ভিতরের কোন বস্তুর বা ফুসফুসের ক্ষত, দাঁতের ক্যারিস ইত্যাদির অবস্থান নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়।
- সিটি স্ক্যান হল কম্পিউটারের সাহায্যে রঞ্জন রশ্মি দ্বারা গৃহীত চিত্র সমন্বয় করে ত্রিমাত্রিক বা প্রস্থছেদ চিত্র বানানোর ব্যবস্থা।
- ক্যান্সারের চিকিৎসায় রঞ্জন রশ্মি বিকিরণ ব্যবহৃত হয়।
- পরিপাক(Digestive) নালী দিয়ে খাদ্যবস্তুর গমন পথ অনুসরণ, আলসার নির্ণয় ইত্যাদির জন্য ব্যবহার করা হয়।
শিল্পখাতে ব্যবহার
- ধাতব ঢালাইয়ের দোষ ত্রুটিপূর্ণ ঢালাই, ধাতব পাতের গর্ত, ইত্যাদি নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়।
- কেলাস গঠন পরীক্ষায় রঞ্জনরশ্মি ব্যবহৃত হয় এবং মণিকারেরা এর সাহায্যে আসল ও নকল গহনা চিহ্নিত করতে পারেন।
- টফি, লজেন্স, সিগারেট ইত্যাদির মান বজায় আছে কিনা বা টফি ও লজেন্সে ক্ষতিকর কোন কিছু মিশ্রিত হয়েছে কি না, তা জানার জন্য ব্যবহৃত হয়।
গোয়েন্দা বিভাগে ব্যবহার
- কাঠের বাক্স বা চামড়ার থলিতে বিস্ফোরক লুকিয়ে রাখলে তা খুঁজে বের করতে ব্যবহার করা হয়।
- শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তারা চোরাচালানের দ্রব্যাদি খুঁজে বের করতে ব্যবহার করেন।
তথ্যসূত্র
- ↑ Kevles, Bettyann Holtzmann (১৯৯৬)। Naked to the Bone Medical Imaging in the Twentieth Century। Camden, NJ: Rutgers University Press। পৃষ্ঠা 19–22। আইএসবিএন 0813523583।
- ↑ Sample, Sharron (2007-03-27)। "X-rays"। The electromagnetic spectrum। NASA। সংগ্রহের তারিখ 2007-12-03। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য)
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |