মতিউর রহমান (বীরশ্রেষ্ঠ): সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
ট্যাগ: পুনর্বহালকৃত
আফতাব বট (আলোচনা | অবদান)
বিষয়শ্রেণীর নাম সংশোধন
ট্যাগ: হাতদ্বারা প্রত্যাবর্তন
৭২ নং লাইন: ৭২ নং লাইন:
[[বিষয়শ্রেণী:১৯৭১-এ মৃত্যু]]
[[বিষয়শ্রেণী:১৯৭১-এ মৃত্যু]]
[[বিষয়শ্রেণী:ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী]]
[[বিষয়শ্রেণী:ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী]]
[[বিষয়শ্রেণী:মিরপুর শহিদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাধিস্থ]]
[[বিষয়শ্রেণী:মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাধিস্থ]]

০০:৪৩, ৩ জুন ২০২১ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

মতিউর রহমান
মতিউর রহমান
জন্ম(১৯৪১-১০-২৯)২৯ অক্টোবর ১৯৪১
ঢাকা, বঙ্গ, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান বাংলাদেশ)
মৃত্যু২০ আগস্ট ১৯৭১(1971-08-20) (বয়স ২৯)
থাট্টা, পশ্চিম পাকিস্তান
সেবা/শাখাপাকিস্তান বিমান বাহিনী
কার্যকাল১৯৬৩–৭১ (আমৃত্যু)
পদমর্যাদাফ্লাইট লেফটেন্যান্ট
ইউনিটনম্বর. ২ স্কোয়াড্রন
পরিচিতির কারণবীর শ্রেষ্ঠ
যুদ্ধ/সংগ্রামভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ১৯৬৫
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ
দাম্পত্য সঙ্গীমিলি রহমান[১]

বীর শ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান (২৯ অক্টোবর ১৯৪১ - ২০ আগস্ট ১৯৭১) বাংলাদেশের একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে চরম সাহসিকতা আর অসামান্য বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ যে সাতজন বীরকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান “বীর শ্রেষ্ঠ” উপাধিতে ভূষিত করা হয় তিনি তাদের অন্যতম।[২]

জন্ম এবং শিক্ষা জীবন

মতিউর রহমান ১৯৪১ সালের ২৯ অক্টোবর পুরান ঢাকার ১০৯, আগা সাদেক রোডের "মোবারক লজ"-এ জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার রামনগর গ্রামে। যা এখন মতিনগর নামে পরিচিত। ৯ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ৬ষ্ঠ। তার বাবা মৌলভী আবদুস সামাদ, মা সৈয়দা মোবারকুন্নেসা খাতুন। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ষষ্ঠ শ্রেণী পাস করার পর সারগোদায় পাকিস্তান বিমান বাহিনী পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন। ডিস্টিংকশনসহ মেট্রিক পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন।

কর্মজীবন

১৯৬৩ সালে নতুন পাইলট অফিসার হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্তগণ (মতিউর রহমান, সামনের সারিতে ডান থেকে দ্বিতীয়)

মতিউর রহমান ১৯৬১ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৬৩ সালে রিসালপুর পি,এ,এফ কলেজ থেকে পাইলট অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করেন। কমিশন প্রাপ্ত হবার পর তিনি করাচির মৌরিপুর (বর্তমান মাসরুর) এয়ার বেজ এর ২ নম্বর স্কোয়ার্ডন এ জেনারেল ডিউটি পাইলট হিসাবে নিযুক্ত হন। এখানে তিনি টি-৩৩ জেট বিমানের উপর কনভার্সন কোর্স সম্পন্ন করেন এবং ৭৫.৬৬% নম্বর পেয়ে উর্ত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি এফ-৮৬ স্যাবর জেট এর উপরেও কনভার্সন কোর্স করেন এবং ৮১% নম্বর পেয়ে উর্ত্তীর্ণ হন। বৈমানিক কনভার্সন কোর্স এ ভালো ফলাফলের ভিত্তিতে তাকে পেশোয়ারে (১৯ নং স্কোয়ার্ডন) এ পোস্টিং দেয়া হয়।

১৯৬৫ তে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় ফ্লাইং অফিসার অবস্থায় কর্মরত ছিলেন। এরপর মিগ কনভার্সন কোর্সের জন্য পুনরায় সারগোদায় যান। সেখানে ১৯৬৭ সালের ২১ জুলাই তারিখে একটি মিগ-১৯ বিমান চালানোর সময় আকাশে সেটা হঠাৎ বিকল হয়ে গেলে দক্ষতার সাথে প্যারাসুট যোগে মাটিতে অবতরণ করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ইরানের রানী ফারাহ দিবার সম্মানে পেশোয়ারে অনুষ্ঠিত বিমান মহড়ায় তিনি ছিলেন একমাত্র বাঙালি পাইলট। রিসালপুরে দু'বছর ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর হিসাবে কাজ করার পর ১৯৭০ এ বদলি হয়ে আসেন জেট ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর হয়ে।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের শুরুতে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে মতিউর রহমান সপরিবারে ঢাকায় দুই মাসের ছুটিতে আসেন। ২৫ মার্চের কালরাতে তিনি ছিলেন নরসিংদীর রায়পুরার রামনগর গ্রামে৷ যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে, পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একজন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হয়েও অসীম ঝুঁকি ও সাহসিকতার সাথে ভৈরবে একটি ট্রেনিং ক্যাম্প খুললেন৷ যুদ্ধ করতে আসা বাঙালি যুবকদের প্রশিক্ষণ দিতে থাকলেন ৷ তিনি দৌলতকান্দিতে জনসভা করেন এবং বিরাট মিছিল নিয়ে ভৈরব বাজারে যান। মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা অস্ত্র দিয়ে গড়ে তোলেন প্রতিরোধ বাহিনী। পাক-সৈন্যরা ভৈরব আক্রমণ করলে বেঙ্গল রেজিমেন্টে ই,পি,আর-এর সঙ্গে থেকে প্রতিরোধ বুহ্য তৈরি করেন। ১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল পাকিস্তানি বিমান বাহিনী এফ-৮৬ স্যাবর জেট থেকে তাদের ঘাঁটির উপর বোমাবর্ষণ করে ৷ মতিউর রহমান পূর্বেই এটি আশঙ্কা করেছিলেন৷ তাই ঘাঁটি পরিবর্তন করেন এবং ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পান তিনি ও তার বাহিনী৷

এরপর ১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল ঢাকা আসেনও ৯ মে সপরিবারে করাচি ফিরে যান ৷ কর্মস্থলে ফিরে গিয়ে জঙ্গি বিমান দখল এবং সেটা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তাকে তখন বিমানের সেফটি অফিসারের দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো। তিনি বিমান দখলের জন্য ২১ বছর বয়সী রাশেদ মিনহা্জ নামে একজন শিক্ষানবীশ পাইলটের উড্ডয়নের দিন (২০ই আগস্ট,১৯৭১) টার্গেট করেন। তার পরিকল্পনা ছিলো মিনহাজ কন্ট্রোল টাওয়ারের অনুমতি পেয়ে গেলে তিনি তার কাছ থেকে বিমানটির নিয়ন্ত্রণ নেবেন। পরিকল্পনা অনুসারে অফিসে এসে শিডিউল টাইমে গাড়ি নিয়ে চলে যান রানওয়ের পূর্ব পাশে৷ সামনে দুই সিটের প্রশিক্ষণ বিমান টি-৩৩ । পাইলট রাশেদ মিনহাজ বিমানটি নিয়ে দ্বিতীয় বারের মত একক উড্ডয়নের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কন্ট্রোল টাওয়ার ক্লিয়ারেন্সের পর মিনহাজ বিমানটি নিয়ে রানওয়েতে উড্ডয়নের প্রস্তুতি নিলে মতিউর রহমান সেফটি অফিসারের ক্ষমতাবলে বিমানটি থামাতে বলেন। মিনহাজ বিমানটি থামান এবং ক্যানোপি ( জঙ্গি বিমানের বৈমানিকদের বসার স্থানের উপরের স্বচ্ছ আবরন) খুলে বিমান থামানোর কারণ জানতে চান। এসময় মতিউর রহমান বিমানের ককপিটে চড়ে বসেন এবং রাশেদ মিনহাজকে ক্লোরোফর্ম দিয়ে অচেতন করে ফেলেন। জ্ঞান হারানোর আগে রাশেদ মিনহাজ কন্ট্রোল রুমে জানাতে সক্ষম হন তিনিসহ বিমানটি হাইজ্যাক হয়েছে। বিমানটি ছোট পাহাড়ের আড়ালে থাকায় কেউ দেখতে না পেলেও কন্ট্রোল টাওয়ার মিনহাজের বার্তা শুনতে পায় এবং রাডারে বিমানের অবস্থান বুঝে অপর চারটি জঙ্গি বিমান মতিউরের বিমানকে ধাওয়া করে। মৃত্যু আসন্ন জেনেও মতিউর রহমান বিমানটি নির্ধারিত সীমার নিচে চালিয়ে রাডার কে ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশের অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের আসার চেষ্টা করেন।

মৃত্যু

প্রায় ভারতের সীমান্তে পৌঁছে যাওয়া অবস্থায় রাশেদ মিনহাজ জ্ঞান ফিরে পান এবং বিমানটির নিয়ন্ত্রণ নিতে চেষ্টা করেন। রাশেদ চাইছিলেন, মতিউর রহমানের বিমান ছিনিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা সফল হওয়ার চেয়ে বিমানটি বিধ্বস্ত করা ভালো ।[৩] এ সময় রাশেদের সাথে মতিউরের ধ্বস্তাধস্তি চলতে থাকে এবং এক পর্যায়ে রাশেদ ইজেক্ট সুইচ চাপলে মতিউর বিমান থেকে ছিটকে পড়েন। বিমানটি কম উচ্চতায় উড্ডয়ন করার ফলে একসময় রাশেদ সহ বিমানটি ভারতীয় সীমান্ত থেকে মাত্র ৩৫ মাইল দূরে থাট্টা এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। মতিউর রহমানের সাথে প্যারাসুট না থাকায় তিনি নিহত হন। তার মৃতদেহ ঘটনাস্থল হতে প্রায় আধ মাইল দূরে পাওয়া যায়।

২০ই আগস্ট,১৯৭১ এ মতিউর রহমান এবং রাশেদ মিনহাজ স্ব স্ব দেশের জন্য মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশ সরকার মতিউর রহমানকে তার সাহসী ভূমিকার জন্য বীর শ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করে এবং রাশেদ মিনহাজকে পাকিস্তান সরকার সম্মানসূচক খেতাব দান করে। প্রসঙ্গতঃ একই ঘটনায় দুই বিপরীত ভূমিকার জন্য দুইজনকে তাদের দেশের সর্বোচ্চ সম্মানসূচক খেতাব প্রদানের এমন ঘটনা বিরল।

সমাধি স্থানান্তর

শাহাদতের ৩৫ বছর পর ২৪শে জুন ২০০৬ মতিউরের দেহাবশেষ পাকিস্তান থেকে দেশে এনে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধজীবী কবর স্থানে পুনঃসমাহিত করা হয়।

পাকিস্তান সরকার মতিউর রহমানের মৃতদেহ করাচির মাসরুর ঘাটির চতুর্থ শ্রেণীর কবরস্থানে সমাহিত করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ার পর, ২০০৬ সালের ২৪ জুন মতিউর রহমানের দেহাবশেষ পাকিস্তান হতে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয়।[৪] তাকে পূর্ণ মর্যাদায় ২৫শে জুন শহীদ বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে পুনরায় দাফন করা হয়।

টিভির পর্দায় মতিউর

মতিউর রহমানকে নিয়ে অগ্নিবলাকা নামের একটি ডকুড্রামা নির্মাণ করা হয় ২০০২ সালে যেখানে রিয়াজ মতিউর রহমানের চরিত্রে এবং তারিন ওনার স্ত্রী মিলির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এছাড়া তার জীবনী নিয়ে ২০০৭ সালে অস্তিত্বে আমার দেশ চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়।

সম্মাননা

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর যশোর বিমান ঘাটি তারঁ নামে নামকরণ করা হয়েছে।[১] বিমান বাহিনী তার নামে একটি ট্রফি চালু করেছে। বিমান প্রশিক্ষনে সেরা কৃতিত্ব প্রদর্শনকারীকে এটি প্রদান করা হয়।[৫]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. Manik, Julfikar Ali। "Year ends with a milestone for women"Dhaka Tribune। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০১৫ 
  2. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ১৮-১২-২০১২
  3. "Bangladesh 'war hero' goes home"BBC News। ২৫ জুন ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০১৫ 
  4. "মতিউর-হামিদুরের লাশ দেশে এসেছিল যেভাবে"দৈনিক সংগ্রাম। ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০ আগস্ট ২০১৯ 
  5. "President parade held at BAF Academy"The Independent। Dhaka। ১৮ জুন ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০১৫ 

বহিঃসংযোগ