রাজ্য পুনর্গঠন আইন, ১৯৫৬: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
ট্যাগ: ২০১৭ উৎস সম্পাদনা
সম্পাদনা সারাংশ নেই
৪ নং লাইন: ৪ নং লাইন:
|date_enacted= ১৯৫৬
|date_enacted= ১৯৫৬
|status=in force
|status=in force
}} '''রাজ্য পুনর্গঠন আইন, ১৯৫৬''' ছিল ভারতের [[ভারতের রাজ্যসমূহ ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহ|রাজ্য এবং অঞ্চলগুলির]] সীমানার একটি বৃহৎ সংস্কার। ভাষাগত পার্থক্য বিবেচনা করে রাজ্যগুলোকে সংগঠিত করা হয়। <ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.thenewsminute.com/article/explainer-reorganization-states-india-and-why-it-happened-52273|শিরোনাম=Explainer: The reorganization of states in India and why it happened}}</ref>
}} '''রাজ্য পুনর্গঠন আইন, ১৯৫৬''' ছিল ভারতের [[ভারতের রাজ্যসমূহ ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহ|রাজ্য এবং অঞ্চলগুলোর]] সীমানার একটি বৃহৎ সংস্কার। ভাষাগত পার্থক্য বিবেচনা করে রাজ্যগুলোকে সংগঠিত করা হয়। <ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.thenewsminute.com/article/explainer-reorganization-states-india-and-why-it-happened-52273|শিরোনাম=Explainer: The reorganization of states in India and why it happened}}</ref>


যদিও ১৯৫৬ সালের পর থেকে ভারতের রাজ্য সীমানায় আরও অনেক পরিবর্তন করা হয়েছে, তবুও ১৯৫৬ সালের '''রাজ্য পুনর্গঠন আইন''' ১৯৪৭ সালে [[ভারত বিভাজন|ভারতের স্বাধীনতার]] পর থেকে ভারতের রাজ্য সীমানায় একই সাথে সর্বাধিক বিস্তৃত পরিবর্তন।
যদিও ১৯৫৬ সালের পর থেকে ভারতের রাজ্য সীমানায় আরও অনেক পরিবর্তন করা হয়েছে, তবুও ১৯৫৬ সালের '''রাজ্য পুনর্গঠন আইন''' ১৯৪৭ সালে [[ভারত বিভাজন|ভারতের স্বাধীনতার]] পর থেকে ভারতের রাজ্য সীমানায় একই সাথে সর্বাধিক বিস্তৃত পরিবর্তন।


আইনটি '''সংবিধান (সপ্তম সংশোধন) আইন, ১৯৫৬''' এর সাথে একই সময়ে কার্যকর হয়। <ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://indiacode.nic.in/coiweb/amend/amend7.htm|শিরোনাম=Seventh Amendment|প্রকাশক=Indiacode.nic.in|আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20170501011646/http://indiacode.nic.in/coiweb/amend/amend7.htm|আর্কাইভের-তারিখ=1 May 2017|ইউআরএল-অবস্থা=dead|সংগ্রহের-তারিখ=2011-11-19}}</ref> এটি ভারতের বিদ্যমান রাজ্যগুলির সাংবিধানিক কাঠামোর পুনর্গঠন করে এবং [[ভারতের সংবিধান|ভারতের সংবিধানের]] প্রথম অংশের ৩ ও ৪ অনুচ্ছেদের বিধানের অধীনে রাজ্য পুনর্গঠন আইন, ১৯৫৬ পাস করার প্রয়োজনীয় শর্তগুলি পুনর্গঠন করে।
আইনটি '''সংবিধান (সপ্তম সংশোধন) আইন, ১৯৫৬''' এর সাথে একই সময়ে কার্যকর হয়। <ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://indiacode.nic.in/coiweb/amend/amend7.htm|শিরোনাম=Seventh Amendment|প্রকাশক=Indiacode.nic.in|আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20170501011646/http://indiacode.nic.in/coiweb/amend/amend7.htm|আর্কাইভের-তারিখ=1 May 2017|ইউআরএল-অবস্থা=dead|সংগ্রহের-তারিখ=2011-11-19}}</ref> এটি ভারতের বিদ্যমান রাজ্যগুলোর সাংবিধানিক কাঠামোর পুনর্গঠন করে এবং [[ভারতের সংবিধান|ভারতের সংবিধানের]] প্রথম অংশের ৩ ও ৪ অনুচ্ছেদের বিধানের অধীনে রাজ্য পুনর্গঠন আইন, ১৯৫৬ পাস করার প্রয়োজনীয় শর্তগুলো পুনর্গঠন করে।


== স্বাধীনতার পরে রাজনৈতিক সংহতকরণ এবং ১৯৫০ সালের সংবিধান ==
== স্বাধীনতার পরে রাজনৈতিক সংহতকরণ এবং ১৯৫০ সালের সংবিধান ==
১৫ নং লাইন: ১৫ নং লাইন:
[[চিত্র:India_Administrative_Divisions_1951.svg|ডান|থাম্ব|419x419পিক্সেল| ১৯৫১ সালে ভারতের প্রশাসনিক বিভাগসমূহ। দ্রষ্টব্য যে [[সিকিম]] ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত স্বাধীন ছিল।]]
[[চিত্র:India_Administrative_Divisions_1951.svg|ডান|থাম্ব|419x419পিক্সেল| ১৯৫১ সালে ভারতের প্রশাসনিক বিভাগসমূহ। দ্রষ্টব্য যে [[সিকিম]] ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত স্বাধীন ছিল।]]


বর্তমান [[ভারত]], [[পাকিস্তান]] এবং [[বাংলাদেশ]] নিয়ে গঠিত [[ব্রিটিশ ভারত]] দুই ধরণের অঞ্চলে বিভক্ত ছিল। প্রথম বিভাগের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত [[ব্রিটিশ ভারতের প্রেসিডেন্সি ও প্রদেশসমূহ]]। এগুলো [[ব্রিটিশ ভারত|ভারতের]] [[ভারতের গভর্নর-জেনারেল|গভর্নর-জেনারেলের]] দায়িত্বে থাকা ব্রিটিশ আধিকারিকদের মাধ্যমে সরাসরি শাসিত ছিল। অন্য বিভাগটি হচ্ছে ভারতীয় [[দেশীয় রাজ্য| দেশীয় রাজ্যসমূগ]]। এগুলো স্থানীয় বংশগত শাসকদের অধীনে শাসিত হতো। তারা চুক্তি মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হিসাবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের নিজস্ব রাজত্বের বিনিময়ে ব্রিটিশ অভিজাতদের স্বীকৃতি দেয়। বিশ শতকের গোড়ার দিকে সংস্কারের ফলস্বরূপ, ব্রিটিশ প্রদেশগুলোর বেশিরভাগই সরাসরি আইনসভার সদস্য এবং গভর্নরগণকে নির্বাচিত করতো। যদিও কয়েকটি ছোট প্রদেশগুলি গভর্নর-জেনারেল দ্বারা নিযুক্ত একজন প্রধান কমিশনার দ্বারা পরিচালিত ছিল। ১৯৩০-এর দশকে ব্রিটিশরা যে বড় ধরনের সংস্কার করেছিল তা ফেডারেলিজমের নীতিকে স্বীকৃতি দেয়। স্বাধীন ভারতের শাসন ব্যবস্থাও এটি প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।
বর্তমান [[ভারত]], [[পাকিস্তান]] এবং [[বাংলাদেশ]] নিয়ে গঠিত [[ব্রিটিশ ভারত]] দুই ধরণের অঞ্চলে বিভক্ত ছিল। প্রথম বিভাগের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত [[ব্রিটিশ ভারতের প্রেসিডেন্সি ও প্রদেশসমূহ]]। এগুলো [[ব্রিটিশ ভারত|ভারতের]] [[ভারতের গভর্নর-জেনারেল|গভর্নর-জেনারেলের]] দায়িত্বে থাকা ব্রিটিশ আধিকারিকদের মাধ্যমে সরাসরি শাসিত ছিল। অন্য বিভাগটি হচ্ছে ভারতীয় [[দেশীয় রাজ্য| দেশীয় রাজ্যসমূগ]]। এগুলো স্থানীয় বংশগত শাসকদের অধীনে শাসিত হতো। তারা চুক্তি মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হিসাবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের নিজস্ব রাজত্বের বিনিময়ে ব্রিটিশ অভিজাতদের স্বীকৃতি দেয়। বিশ শতকের গোড়ার দিকে সংস্কারের ফলস্বরূপ, ব্রিটিশ প্রদেশগুলোর বেশিরভাগই সরাসরি আইনসভার সদস্য এবং গভর্নরগণকে নির্বাচিত করতো। যদিও কয়েকটি ছোট প্রদেশগুলো গভর্নর-জেনারেল দ্বারা নিযুক্ত একজন প্রধান কমিশনার দ্বারা পরিচালিত ছিল। ১৯৩০-এর দশকে ব্রিটিশরা যে বড় ধরনের সংস্কার করেছিল তা ফেডারেলিজমের নীতিকে স্বীকৃতি দেয়। স্বাধীন ভারতের শাসন ব্যবস্থাও এটি প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।


১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ব্রিটিশ ভারতকে [[ভারত]] ও [[পাকিস্তান|পাকিস্তানের]] পৃথক অধিরাজ্য হিসাবে স্বাধীনতা দেওয়া হয়। ব্রিটিশরা পাঁচ শতাধিক [[দেশীয় রাজ্য|দেশীয় রাজ্যের]] সাথে তাদের সন্ধি সম্পর্ক ভেঙে দেয়, যারা ভারত বা পাকিস্তানের যে কোনও দেশে প্রবেশ করতে উৎসাহিত হয়েছিল। যদিও তা করার বাধ্যতামূলক কোনও বাধ্যবাধকতা ছিল না। বেশিরভাগ [[দেশীয় রাজ্য|রাজ্য]] ভারতে এবং কয়েকটি পাকিস্তানে যোগ দেয়। [[জুনাগড় রাজ্য|জুনাগড়]], [[হায়দ্রাবাদ রাজ্য|হায়দরাবাদ]] ও [[জম্মু ও কাশ্মীর (দেশীয় রাজ্য)|জম্মু-কাশ্মীর]] স্বাধীনতা বেছে নিয়েছিল। যদিও ভারত সশস্ত্র হস্তক্ষেপের মাধ্যমে [[হায়দ্রাবাদ রাজ্য|হায়দরাবাদ]] জয় করে একে ভারতীয় ইউনিয়নে নিয়ে আসে। অন্যদিকে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে ভারত [[জুনাগড় রাজ্য|জুনাগড়]] দখল করে। আর [[জম্মু ও কাশ্মীর (দেশীয় রাজ্য)|জম্মু-কাশ্মীর]] নিয়ে আজও [[ভারত]]-[[পাকিস্তান|পাকিস্তানের]] মধ্যে (পরবর্তীতে [[চীন|চীনের]] সাথেও) দ্বন্দ্ব বিদ্যমান।
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ব্রিটিশ ভারতকে [[ভারত]] ও [[পাকিস্তান|পাকিস্তানের]] পৃথক অধিরাজ্য হিসাবে স্বাধীনতা দেওয়া হয়। ব্রিটিশরা পাঁচ শতাধিক [[দেশীয় রাজ্য|দেশীয় রাজ্যের]] সাথে তাদের সন্ধি সম্পর্ক ভেঙে দেয়, যারা ভারত বা পাকিস্তানের যে কোনও দেশে প্রবেশ করতে উৎসাহিত হয়েছিল। যদিও তা করার বাধ্যতামূলক কোনও বাধ্যবাধকতা ছিল না। বেশিরভাগ [[দেশীয় রাজ্য|রাজ্য]] ভারতে এবং কয়েকটি পাকিস্তানে যোগ দেয়। [[জুনাগড় রাজ্য|জুনাগড়]], [[হায়দ্রাবাদ রাজ্য|হায়দরাবাদ]] ও [[জম্মু ও কাশ্মীর (দেশীয় রাজ্য)|জম্মু-কাশ্মীর]] স্বাধীনতা বেছে নিয়েছিল। যদিও ভারত সশস্ত্র হস্তক্ষেপের মাধ্যমে [[হায়দ্রাবাদ রাজ্য|হায়দরাবাদ]] জয় করে একে ভারতীয় ইউনিয়নে নিয়ে আসে। অন্যদিকে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে ভারত [[জুনাগড় রাজ্য|জুনাগড়]] দখল করে। আর [[জম্মু ও কাশ্মীর (দেশীয় রাজ্য)|জম্মু-কাশ্মীর]] নিয়ে আজও [[ভারত]]-[[পাকিস্তান|পাকিস্তানের]] মধ্যে (পরবর্তীতে [[চীন|চীনের]] সাথেও) দ্বন্দ্ব বিদ্যমান।
৩১ নং লাইন: ৩১ নং লাইন:


== ভাষাগত রাজ্যের জন্য আন্দোলন ==
== ভাষাগত রাজ্যের জন্য আন্দোলন ==
ভারতের রাজ্যগুলোকে ভাষাগত ভিত্তিতে সংগঠিত করার দাবি ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের আগেই বিকশিত হয়েছিল। ১৮৯৫ সালে [[ওড়িশা|ওড়িশায়]] প্রথম ভাষাগত আন্দোলন শুরু হয়। পরবর্তী বিহার ও উড়িষ্যা প্রদেশকে দ্বিখণ্ডিত করে একটি পৃথক উড়িষ্যা প্রদেশ গঠনের দাবিতে এই আন্দোলন পরবর্তী বছরগুলিতে গতি অর্জন করে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.telegraphindia.com/1110401/jsp/orissa/story_13795031.jsp|শিরোনাম=Demand of separate province for Oriya|প্রকাশক=The Telegraph}}</ref><ref>{{বই উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://books.google.com/books?id=i0HdDbdKa8UC&pg=PA249&redir_esc=y#v=onepage&q&f=false|শিরোনাম=States Politics in India|প্রকাশক=}}</ref> ওড়িয়া জাতীয়তাবাদের জনক মধুসূদন দাসের প্রচেষ্টার ফলে এই আন্দোলনটি শেষ পর্যন্ত ১৯৩৬ সালে তার লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়। ফলস্রুতিতে উড়িষ্যা প্রদেশ সাধারণ ভাষার ভিত্তিতে সংগঠিত প্রথম ভারতীয় রাজ্য (স্বাধীনতা পূর্ব) হয়ে ওঠে।
ভারতের রাজ্যগুলোকে ভাষাগত ভিত্তিতে সংগঠিত করার দাবি ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের আগেই বিকশিত হয়েছিল। ১৮৯৫ সালে [[ওড়িশা|ওড়িশায়]] প্রথম ভাষাগত আন্দোলন শুরু হয়। পরবর্তী বিহার ও উড়িষ্যা প্রদেশকে দ্বিখণ্ডিত করে একটি পৃথক উড়িষ্যা প্রদেশ গঠনের দাবিতে এই আন্দোলন পরবর্তী বছরগুলোতে গতি অর্জন করে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.telegraphindia.com/1110401/jsp/orissa/story_13795031.jsp|শিরোনাম=Demand of separate province for Oriya|প্রকাশক=The Telegraph}}</ref><ref>{{বই উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://books.google.com/books?id=i0HdDbdKa8UC&pg=PA249&redir_esc=y#v=onepage&q&f=false|শিরোনাম=States Politics in India|প্রকাশক=}}</ref> ওড়িয়া জাতীয়তাবাদের জনক মধুসূদন দাসের প্রচেষ্টার ফলে এই আন্দোলনটি শেষ পর্যন্ত ১৯৩৬ সালে তার লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়। ফলস্রুতিতে উড়িষ্যা প্রদেশ সাধারণ ভাষার ভিত্তিতে সংগঠিত প্রথম ভারতীয় রাজ্য (স্বাধীনতা পূর্ব) হয়ে ওঠে।


স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ভাষাতত্ত্বের ভিত্তিতে বিকশিত নতুন রাজ্য গঠনের রাজনৈতিক আন্দোলনের বিকাশ ঘটে। স্বাধীনতা লাভের পরের বছরগুলিতে মাদ্রাজ রাজ্যের উত্তরের অংশের বাইরে [[তেলুগু ভাষা|তেলেগু]]-ভাষী রাজ্য গঠনের আন্দোলন শক্তি জোগাড় করে এবং ১৯৫৩ সালে মাদ্রাজ রাজ্যের উত্তরের ষোলটি তেলুগু-ভাষী জেলা নতুন অন্ধ্র রাজ্যে পরিণত হয় । স্বাধীনতার পরে, ভাষাগত ভিত্তিতে প্রথম রাজ্য এটি।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ভাষাতত্ত্বের ভিত্তিতে বিকশিত নতুন রাজ্য গঠনের রাজনৈতিক আন্দোলনের বিকাশ ঘটে। স্বাধীনতা লাভের পরের বছরগুলোতে মাদ্রাজ রাজ্যের উত্তরের অংশের বাইরে [[তেলুগু ভাষা|তেলেগু]]-ভাষী রাজ্য গঠনের আন্দোলন শক্তি জোগাড় করে এবং ১৯৫৩ সালে মাদ্রাজ রাজ্যের উত্তরের ষোলটি তেলুগু-ভাষী জেলা নতুন অন্ধ্র রাজ্যে পরিণত হয় । স্বাধীনতার পরে, ভাষাগত ভিত্তিতে প্রথম রাজ্য এটি।


১৯৫০-১৯৫৬ সময়কালে, রাজ্যের সীমানায় অন্যান্য ছোট ছোট পরিবর্তনগুলি করা হয়। ১৯৫৪ সালের ১ জুলাই ছোট্ট বিলাসপুর রাজ্য হিমাচল প্রদেশের সাথে একীভূত হয়। আর [[ফরাসী ভারত|ফরাসী ভারতের]] প্রাক্তন ছিটমহল [[চন্দননগর]]কে স্থানীয় জনগণের দাবির ভিত্তিতে ১৯৫৫ সালে [[পশ্চিমবঙ্গ|পশ্চিমবঙ্গে]] অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
১৯৫০-১৯৫৬ সময়কালে, রাজ্যের সীমানায় অন্যান্য ছোট ছোট পরিবর্তনগুলো করা হয়। ১৯৫৪ সালের ১ জুলাই ছোট্ট বিলাসপুর রাজ্য হিমাচল প্রদেশের সাথে একীভূত হয়। আর [[ফরাসী ভারত|ফরাসী ভারতের]] প্রাক্তন ছিটমহল [[চন্দননগর]]কে স্থানীয় জনগণের দাবির ভিত্তিতে ১৯৫৫ সালে [[পশ্চিমবঙ্গ|পশ্চিমবঙ্গে]] অন্তর্ভুক্ত করা হয়।


== রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন ==
== রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন ==
রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন ১৯৪৮ সালের জুনে গঠিত হয়ে ভাষাশৈলিক প্রদেশ কমিশন (কিংবা ধর কমিশন) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই কমিশন ভাষাকে রাজ্য বিভক্তির একক হিসেবে গ্রহণ করেনি। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী [[জওহরলাল নেহ্‌রু|জওহরলাল নেহেরু]] ১৯৫৩ সালের ডিসেম্বর মাসে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন নিযুক্ত করেছিলেন। নতুন কমিশনের নেতৃত্বে ছিলেন [[ভারতের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়|সুপ্রিম কোর্টের]] অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ফজল আলি। এর অপর দুই সদস্য হলেন এইচএন কুনজরু এবং কে এম পানিকর। ১৯৫৪ সালের ডিসেম্বর থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালনকারী গোবিন্দ বল্লভ পান্ত এই কমিশনের তত্ত্বাবধান করেন।
রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন ১৯৪৮ সালের জুনে গঠিত হয়ে ভাষাশৈলিক প্রদেশ কমিশন (কিংবা ধর কমিশন) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই কমিশন ভাষাকে রাজ্য বিভক্তির একক হিসেবে গ্রহণ করেনি। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী [[জওহরলাল নেহ্‌রু|জওহরলাল নেহেরু]] ১৯৫৩ সালের ডিসেম্বর মাসে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন নিযুক্ত করেছিলেন। নতুন কমিশনের নেতৃত্বে ছিলেন [[ভারতের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়|সুপ্রিম কোর্টের]] অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ফজল আলি। এর অপর দুই সদস্য হলেন এইচএন কুনজরু এবং কে এম পানিকর। ১৯৫৪ সালের ডিসেম্বর থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালনকারী গোবিন্দ বল্লভ পান্ত এই কমিশনের তত্ত্বাবধান করেন।


রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন ১৯৫৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ভারতের রাজ্যগুলির পুনর্গঠনের জন্য সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন জমা দেয়, যার পরে ভারতীয় সংসদ তর্ক-বিতর্ক করে। পরবর্তীকালে সংবিধানে পরিবর্তন আনার জন্য এবং রাজ্যগুলির পুনর্গঠনের জন্য বিলগুলি পাস করা হয়েছিল। <ref name="economicweekly">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.epw.in/system/files/pdf/1955_7/42/reorganisation_of_statesthe_approach_and_arrangements.pdf|শিরোনাম=Reorganisation of states|প্রকাশক=Economic Weekly}}</ref>
রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন ১৯৫৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ভারতের রাজ্যগুলোর পুনর্গঠনের জন্য সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন জমা দেয়, যার পরে ভারতীয় সংসদ তর্ক-বিতর্ক করে। পরবর্তীকালে সংবিধানে পরিবর্তন আনার জন্য এবং রাজ্যগুলোর পুনর্গঠনের জন্য বিলগুলো পাস করা হয়েছিল। <ref name="economicweekly">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.epw.in/system/files/pdf/1955_7/42/reorganisation_of_statesthe_approach_and_arrangements.pdf|শিরোনাম=Reorganisation of states|প্রকাশক=Economic Weekly}}</ref>
[[চিত্র:India_administrative_map_1956_PL.png|থাম্ব| রাজ্য পুনর্গঠন আইনের পরে ভারতীয় রাজ্যসমূহ]]
[[চিত্র:India_administrative_map_1956_PL.png|থাম্ব| রাজ্য পুনর্গঠন আইনের পরে ভারতীয় রাজ্যসমূহ]]


== অন্যান্য আইন দ্বারা সম্পর্কিত পরিবর্তন ==
== অন্যান্য আইন দ্বারা সম্পর্কিত পরিবর্তন ==
রাজ্য পুনর্গঠন আইন ১৯৫৬ সালের ৩১ আগস্টে পাশ হয়। ১ নভেম্বর কার্যকর হওয়ার আগে, ভারতের সংবিধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আনা হয়েছিল। সপ্তম সংশোধনীর অধীনে, পার্ট এ, পার্ট বি, পার্ট সি এবং পার্ট ডি রাজ্যের মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্য বাতিল করা হয়। পার্ট এ এবং পার্ট বি রাষ্ট্রগুলির মধ্যে পার্থক্য সড়িয়ে এদের কেবল "রাজ্য" হিসাবে বিবেচনা করা করেছে। [[কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল]] নামের একটি নতুন ধরণের সত্তা পার্ট সি বা পার্ট ডি রাজ্যকে প্রতিস্থাপন করে। ১ নভেম্বর কিছু অঞ্চল [[বিহার]] থেকে [[পশ্চিমবঙ্গ|পশ্চিমবঙ্গে]] স্থানান্তর করে আরও একটি আইন কার্যকর হয়। <ref>''Bihar and West Bengal (Transfer of Territories) Act, 1956''</ref>
রাজ্য পুনর্গঠন আইন ১৯৫৬ সালের ৩১ আগস্টে পাশ হয়। ১ নভেম্বর কার্যকর হওয়ার আগে, ভারতের সংবিধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আনা হয়েছিল। সপ্তম সংশোধনীর অধীনে, পার্ট এ, পার্ট বি, পার্ট সি এবং পার্ট ডি রাজ্যের মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্য বাতিল করা হয়। পার্ট এ এবং পার্ট বি রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে পার্থক্য সড়িয়ে এদের কেবল "রাজ্য" হিসাবে বিবেচনা করা করেছে। [[কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল]] নামের একটি নতুন ধরণের সত্তা পার্ট সি বা পার্ট ডি রাজ্যকে প্রতিস্থাপন করে। ১ নভেম্বর কিছু অঞ্চল [[বিহার]] থেকে [[পশ্চিমবঙ্গ|পশ্চিমবঙ্গে]] স্থানান্তর করে আরও একটি আইন কার্যকর হয়। <ref>''Bihar and West Bengal (Transfer of Territories) Act, 1956''</ref>


== পরিবর্তনের প্রভাব ==
== পরিবর্তনের প্রভাব ==
১৯৫৬ সালের রাজ্য পুনর্গঠন আইন ভারতকে রাজ্য ও [[কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল|কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে]] বিভক্ত করার দিকে একটি বড় পদক্ষেপ ছিল। নিম্নলিখিত তালিকাটি ভারতের রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলো ১৯৫৬ সালের ১ নভেম্বর পুনর্গঠিত করা হয়:
১৯৫৬ সালের রাজ্য পুনর্গঠন আইন ভারতকে রাজ্য ও [[কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল|কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোতে]] বিভক্ত করার দিকে একটি বড় পদক্ষেপ ছিল। নিম্নলিখিত তালিকাটি ভারতের রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলো ১৯৫৬ সালের ১ নভেম্বর পুনর্গঠিত করা হয়:


=== রাজ্যসমূহ ===
=== রাজ্যসমূহ ===
৫৪ নং লাইন: ৫৪ নং লাইন:
# [[আসাম]] : সংলগ্ন মানচিত্রে ১৯৫৬ সালের রাজ্য পুনর্গঠন আইন অনুসারে দৃশ্যের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তবে আসাম রাজ্য পরবর্তীতে [[অরুণাচল প্রদেশ]], [[মিজোরাম]], [[নাগাল্যান্ড]], [[মেঘালয়]] (কালানুক্রমিক ক্রমে নয়) এ আরও বিভক্ত হয়।
# [[আসাম]] : সংলগ্ন মানচিত্রে ১৯৫৬ সালের রাজ্য পুনর্গঠন আইন অনুসারে দৃশ্যের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তবে আসাম রাজ্য পরবর্তীতে [[অরুণাচল প্রদেশ]], [[মিজোরাম]], [[নাগাল্যান্ড]], [[মেঘালয়]] (কালানুক্রমিক ক্রমে নয়) এ আরও বিভক্ত হয়।
# [[বিহার]] : পশ্চিমবঙ্গে ছোটখাটো অঞ্চল স্থানান্তরিত হওয়ায় কিছুটা হ্রাস পায়।
# [[বিহার]] : পশ্চিমবঙ্গে ছোটখাটো অঞ্চল স্থানান্তরিত হওয়ায় কিছুটা হ্রাস পায়।
# [[বোম্বে রাজ্য]] : রাজ্যটি [[সৌরাষ্ট্র রাজ্য]] এবং কচ্ছ রাজ্য, মারাঠী-ভাষী জেলা বেরার বিভাগ এবং নাগরপুর বিভাগের মধ্য প্রদেশের এবং বিহার এবং মারাঠওয়াদা অঞ্চল হায়দ্রাবাদ রাজ্যের সংযোজনের মাধ্যমে প্রসারিত হয়েছিল। [[বোম্বে প্রেসিডেন্সি]] দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলি মহীশূর রাজ্যে স্থানান্তরিত হয়েছিল।
# [[বোম্বে রাজ্য]] : রাজ্যটি [[সৌরাষ্ট্র রাজ্য]] এবং কচ্ছ রাজ্য, মারাঠী-ভাষী জেলা বেরার বিভাগ এবং নাগরপুর বিভাগের মধ্য প্রদেশের এবং বিহার এবং মারাঠওয়াদা অঞ্চল হায়দ্রাবাদ রাজ্যের সংযোজনের মাধ্যমে প্রসারিত হয়েছিল। [[বোম্বে প্রেসিডেন্সি]] দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলো মহীশূর রাজ্যে স্থানান্তরিত হয়েছিল।
# [[জম্মু ও কাশ্মীর]] : ১৯৫৬ সালে সীমানা পরিবর্তন হয়নি।
# [[জম্মু ও কাশ্মীর]] : ১৯৫৬ সালে সীমানা পরিবর্তন হয়নি।
# [[কেরল|কেরালা]] : [[মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সী|মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির]] দক্ষিণ কানাড়া জেলার মালাবার জেলা এবং [[কাসারগড়]] তালুকের সাথে [[ত্রিবাঙ্কুর-কোচিন রাজ্য|ট্রাভানকোর-কোচিন]] রাজ্যের একীভূত হয়ে গঠিত। [[ত্রিবাঙ্কুর-কোচিন রাজ্য]] দক্ষিণাঞ্চল, কন্যাকুমারী জেলা মাদ্রাজ রাজ্যে স্থানান্তরিত হয়েছিল।
# [[কেরল|কেরালা]] : [[মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সী|মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির]] দক্ষিণ কানাড়া জেলার মালাবার জেলা এবং [[কাসারগড়]] তালুকের সাথে [[ত্রিবাঙ্কুর-কোচিন রাজ্য|ট্রাভানকোর-কোচিন]] রাজ্যের একীভূত হয়ে গঠিত। [[ত্রিবাঙ্কুর-কোচিন রাজ্য]] দক্ষিণাঞ্চল, কন্যাকুমারী জেলা মাদ্রাজ রাজ্যে স্থানান্তরিত হয়েছিল।
# [[মধ্যপ্রদেশ|মধ্য প্রদেশ]] : মধ্য ভারত, বিন্ধ্য প্রদেশ এবং [[ভোপাল রাজ্য|ভোপাল রাজ্যকে]] মধ্য প্রদেশে একীভূত করা হয়েছিল; নাগপুর বিভাগের মারাঠি ভাষী জেলাগুলি বোম্বাই রাজ্যে স্থানান্তরিত হয়েছিল।
# [[মধ্যপ্রদেশ|মধ্য প্রদেশ]] : মধ্য ভারত, বিন্ধ্য প্রদেশ এবং [[ভোপাল রাজ্য|ভোপাল রাজ্যকে]] মধ্য প্রদেশে একীভূত করা হয়েছিল; নাগপুর বিভাগের মারাঠি ভাষী জেলাগুলো বোম্বাই রাজ্যে স্থানান্তরিত হয়েছিল।
# মাদ্রাজ রাজ্য : মালাবার জেলা নতুন [[কেরল|কেরালা]] রাজ্যে স্থানান্তরিত হয়েছিল এবং একটি নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, [[লক্ষদ্বীপ|লক্ষদ্বীপ, মিনিকয় এবং আমিন্দিবি দ্বীপপুঞ্জ]] তৈরি করা হয়েছিল। [[ত্রিবাঙ্কুর-কোচিন রাজ্য]] দক্ষিণাঞ্চল, কন্যাকুমারী জেলা রাজ্যে যুক্ত হয়েছিল।
# মাদ্রাজ রাজ্য : মালাবার জেলা নতুন [[কেরল|কেরালা]] রাজ্যে স্থানান্তরিত হয়েছিল এবং একটি নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, [[লক্ষদ্বীপ|লক্ষদ্বীপ, মিনিকয় এবং আমিন্দিবি দ্বীপপুঞ্জ]] তৈরি করা হয়েছিল। [[ত্রিবাঙ্কুর-কোচিন রাজ্য]] দক্ষিণাঞ্চল, কন্যাকুমারী জেলা রাজ্যে যুক্ত হয়েছিল।
# মহীশূর রাজ্য : কূর্গ রাজ্য এবং [[কন্নড় ভাষা|কন্নড]] ভাষী [[মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সী|মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির]] পশ্চিমাংশ [[বোম্বে প্রেসিডেন্সি]]র দক্ষিণাংশ ও [[হায়দ্রাবাদ রাজ্য|হায়দ্রাবাদ রাজ্যের]] পশ্চিমাংশ যোগ করা হয়।
# মহীশূর রাজ্য : কূর্গ রাজ্য এবং [[কন্নড় ভাষা|কন্নড]] ভাষী [[মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সী|মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির]] পশ্চিমাংশ [[বোম্বে প্রেসিডেন্সি]]র দক্ষিণাংশ ও [[হায়দ্রাবাদ রাজ্য|হায়দ্রাবাদ রাজ্যের]] পশ্চিমাংশ যোগ করা হয়।

০৫:৫২, ২০ মার্চ ২০২১ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

রাজ্য পুনর্গঠন আইন, ১৯৫৬
ভারতীয় সংসদ
প্রণয়নকারীভারতীয় সংসদ
প্রণয়নকাল১৯৫৬
অবস্থা: বলবৎ

রাজ্য পুনর্গঠন আইন, ১৯৫৬ ছিল ভারতের রাজ্য এবং অঞ্চলগুলোর সীমানার একটি বৃহৎ সংস্কার। ভাষাগত পার্থক্য বিবেচনা করে রাজ্যগুলোকে সংগঠিত করা হয়। [১]

যদিও ১৯৫৬ সালের পর থেকে ভারতের রাজ্য সীমানায় আরও অনেক পরিবর্তন করা হয়েছে, তবুও ১৯৫৬ সালের রাজ্য পুনর্গঠন আইন ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে ভারতের রাজ্য সীমানায় একই সাথে সর্বাধিক বিস্তৃত পরিবর্তন।

আইনটি সংবিধান (সপ্তম সংশোধন) আইন, ১৯৫৬ এর সাথে একই সময়ে কার্যকর হয়। [২] এটি ভারতের বিদ্যমান রাজ্যগুলোর সাংবিধানিক কাঠামোর পুনর্গঠন করে এবং ভারতের সংবিধানের প্রথম অংশের ৩ ও ৪ অনুচ্ছেদের বিধানের অধীনে রাজ্য পুনর্গঠন আইন, ১৯৫৬ পাস করার প্রয়োজনীয় শর্তগুলো পুনর্গঠন করে।

স্বাধীনতার পরে রাজনৈতিক সংহতকরণ এবং ১৯৫০ সালের সংবিধান

১৯৫১ সালে ভারতের প্রশাসনিক বিভাগসমূহ। দ্রষ্টব্য যে সিকিম ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত স্বাধীন ছিল।

বর্তমান ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ নিয়ে গঠিত ব্রিটিশ ভারত দুই ধরণের অঞ্চলে বিভক্ত ছিল। প্রথম বিভাগের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত ব্রিটিশ ভারতের প্রেসিডেন্সি ও প্রদেশসমূহ। এগুলো ভারতের গভর্নর-জেনারেলের দায়িত্বে থাকা ব্রিটিশ আধিকারিকদের মাধ্যমে সরাসরি শাসিত ছিল। অন্য বিভাগটি হচ্ছে ভারতীয় দেশীয় রাজ্যসমূগ। এগুলো স্থানীয় বংশগত শাসকদের অধীনে শাসিত হতো। তারা চুক্তি মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হিসাবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের নিজস্ব রাজত্বের বিনিময়ে ব্রিটিশ অভিজাতদের স্বীকৃতি দেয়। বিশ শতকের গোড়ার দিকে সংস্কারের ফলস্বরূপ, ব্রিটিশ প্রদেশগুলোর বেশিরভাগই সরাসরি আইনসভার সদস্য এবং গভর্নরগণকে নির্বাচিত করতো। যদিও কয়েকটি ছোট প্রদেশগুলো গভর্নর-জেনারেল দ্বারা নিযুক্ত একজন প্রধান কমিশনার দ্বারা পরিচালিত ছিল। ১৯৩০-এর দশকে ব্রিটিশরা যে বড় ধরনের সংস্কার করেছিল তা ফেডারেলিজমের নীতিকে স্বীকৃতি দেয়। স্বাধীন ভারতের শাসন ব্যবস্থাও এটি প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।

১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ব্রিটিশ ভারতকে ভারতপাকিস্তানের পৃথক অধিরাজ্য হিসাবে স্বাধীনতা দেওয়া হয়। ব্রিটিশরা পাঁচ শতাধিক দেশীয় রাজ্যের সাথে তাদের সন্ধি সম্পর্ক ভেঙে দেয়, যারা ভারত বা পাকিস্তানের যে কোনও দেশে প্রবেশ করতে উৎসাহিত হয়েছিল। যদিও তা করার বাধ্যতামূলক কোনও বাধ্যবাধকতা ছিল না। বেশিরভাগ রাজ্য ভারতে এবং কয়েকটি পাকিস্তানে যোগ দেয়। জুনাগড়, হায়দরাবাদজম্মু-কাশ্মীর স্বাধীনতা বেছে নিয়েছিল। যদিও ভারত সশস্ত্র হস্তক্ষেপের মাধ্যমে হায়দরাবাদ জয় করে একে ভারতীয় ইউনিয়নে নিয়ে আসে। অন্যদিকে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে ভারত জুনাগড় দখল করে। আর জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে আজও ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে (পরবর্তীতে চীনের সাথেও) দ্বন্দ্ব বিদ্যমান।

রাজ্য পুনর্গঠন আইনের আগে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যসমূহ

১৯৪৭ থেকে প্রায় ১৯৫০ সালের মধ্যে দেশীয় রাজ্যগুলো রাজনৈতিকভাবে ভারতীয় ইউনিয়নে সংহত হয়। বেশিরভাগই বিদ্যমান প্রদেশগুলোতে একীভূত হয়। বাকিগুলো রাজপুতানা, হিমাচল প্রদেশ, মধ্য ভারত এবং বিন্ধ্য প্রদেশের মতো নতুন প্রদেশগুলোতে সংগঠিত হয়। এগুলো একাধিক দেশীয় রাজ্যের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল। মহীশূর, হায়দরাবাদ, ভোপাল, এবং বিলাসপুর সহ কয়েকটি দেশীয় রাজ্য পৃথক প্রদেশে পরিণত হয়েছিল। ১৯৫০ সালে একটি নতুন সংবিধান গ্রহণের আগ পর্যন্ত ভারত শাসন আইন ১৯৩৫ ভারতের সাংবিধানিক আইন হিসাবে বহাল ছিল। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারীতে কার্যকর হওয়া ভারতের নতুন সংবিধান ভারতকে একটি সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র করে তোলে। নতুন প্রজাতন্ত্রকে "ইউনিয়ন অফ স্টেটস" হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল।[৩]

১৯৫০ সালের সংবিধানে তৎকালীন ভারতের বিদ্যমান প্রশাসনিক এককগুলোকে তিনটি প্রধান ধরণের রাজ্য এবং এক শ্রেণির অঞ্চল হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করে।

ভাষাগত রাজ্যের জন্য আন্দোলন

ভারতের রাজ্যগুলোকে ভাষাগত ভিত্তিতে সংগঠিত করার দাবি ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের আগেই বিকশিত হয়েছিল। ১৮৯৫ সালে ওড়িশায় প্রথম ভাষাগত আন্দোলন শুরু হয়। পরবর্তী বিহার ও উড়িষ্যা প্রদেশকে দ্বিখণ্ডিত করে একটি পৃথক উড়িষ্যা প্রদেশ গঠনের দাবিতে এই আন্দোলন পরবর্তী বছরগুলোতে গতি অর্জন করে।[৫][৬] ওড়িয়া জাতীয়তাবাদের জনক মধুসূদন দাসের প্রচেষ্টার ফলে এই আন্দোলনটি শেষ পর্যন্ত ১৯৩৬ সালে তার লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়। ফলস্রুতিতে উড়িষ্যা প্রদেশ সাধারণ ভাষার ভিত্তিতে সংগঠিত প্রথম ভারতীয় রাজ্য (স্বাধীনতা পূর্ব) হয়ে ওঠে।

স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ভাষাতত্ত্বের ভিত্তিতে বিকশিত নতুন রাজ্য গঠনের রাজনৈতিক আন্দোলনের বিকাশ ঘটে। স্বাধীনতা লাভের পরের বছরগুলোতে মাদ্রাজ রাজ্যের উত্তরের অংশের বাইরে তেলেগু-ভাষী রাজ্য গঠনের আন্দোলন শক্তি জোগাড় করে এবং ১৯৫৩ সালে মাদ্রাজ রাজ্যের উত্তরের ষোলটি তেলুগু-ভাষী জেলা নতুন অন্ধ্র রাজ্যে পরিণত হয় । স্বাধীনতার পরে, ভাষাগত ভিত্তিতে প্রথম রাজ্য এটি।

১৯৫০-১৯৫৬ সময়কালে, রাজ্যের সীমানায় অন্যান্য ছোট ছোট পরিবর্তনগুলো করা হয়। ১৯৫৪ সালের ১ জুলাই ছোট্ট বিলাসপুর রাজ্য হিমাচল প্রদেশের সাথে একীভূত হয়। আর ফরাসী ভারতের প্রাক্তন ছিটমহল চন্দননগরকে স্থানীয় জনগণের দাবির ভিত্তিতে ১৯৫৫ সালে পশ্চিমবঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন ১৯৪৮ সালের জুনে গঠিত হয়ে ভাষাশৈলিক প্রদেশ কমিশন (কিংবা ধর কমিশন) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই কমিশন ভাষাকে রাজ্য বিভক্তির একক হিসেবে গ্রহণ করেনি। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ১৯৫৩ সালের ডিসেম্বর মাসে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন নিযুক্ত করেছিলেন। নতুন কমিশনের নেতৃত্বে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ফজল আলি। এর অপর দুই সদস্য হলেন এইচএন কুনজরু এবং কে এম পানিকর। ১৯৫৪ সালের ডিসেম্বর থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালনকারী গোবিন্দ বল্লভ পান্ত এই কমিশনের তত্ত্বাবধান করেন।

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন ১৯৫৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ভারতের রাজ্যগুলোর পুনর্গঠনের জন্য সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন জমা দেয়, যার পরে ভারতীয় সংসদ তর্ক-বিতর্ক করে। পরবর্তীকালে সংবিধানে পরিবর্তন আনার জন্য এবং রাজ্যগুলোর পুনর্গঠনের জন্য বিলগুলো পাস করা হয়েছিল। [৭]

রাজ্য পুনর্গঠন আইনের পরে ভারতীয় রাজ্যসমূহ

অন্যান্য আইন দ্বারা সম্পর্কিত পরিবর্তন

রাজ্য পুনর্গঠন আইন ১৯৫৬ সালের ৩১ আগস্টে পাশ হয়। ১ নভেম্বর কার্যকর হওয়ার আগে, ভারতের সংবিধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আনা হয়েছিল। সপ্তম সংশোধনীর অধীনে, পার্ট এ, পার্ট বি, পার্ট সি এবং পার্ট ডি রাজ্যের মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্য বাতিল করা হয়। পার্ট এ এবং পার্ট বি রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে পার্থক্য সড়িয়ে এদের কেবল "রাজ্য" হিসাবে বিবেচনা করা করেছে। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল নামের একটি নতুন ধরণের সত্তা পার্ট সি বা পার্ট ডি রাজ্যকে প্রতিস্থাপন করে। ১ নভেম্বর কিছু অঞ্চল বিহার থেকে পশ্চিমবঙ্গে স্থানান্তর করে আরও একটি আইন কার্যকর হয়। [৮]

পরিবর্তনের প্রভাব

১৯৫৬ সালের রাজ্য পুনর্গঠন আইন ভারতকে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোতে বিভক্ত করার দিকে একটি বড় পদক্ষেপ ছিল। নিম্নলিখিত তালিকাটি ভারতের রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলো ১৯৫৬ সালের ১ নভেম্বর পুনর্গঠিত করা হয়:

রাজ্যসমূহ

  1. অন্ধ্র প্রদেশ : হায়দরাবাদ রাজ্যের তেলুগু-ভাষী অঞ্চল এবং (১৯৪৮-৫৬) অন্ধ্র রাজ্যের (১৯৫৩-৫৬) সমন্বয়ে গঠিত।
  2. আসাম : সংলগ্ন মানচিত্রে ১৯৫৬ সালের রাজ্য পুনর্গঠন আইন অনুসারে দৃশ্যের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তবে আসাম রাজ্য পরবর্তীতে অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, মেঘালয় (কালানুক্রমিক ক্রমে নয়) এ আরও বিভক্ত হয়।
  3. বিহার : পশ্চিমবঙ্গে ছোটখাটো অঞ্চল স্থানান্তরিত হওয়ায় কিছুটা হ্রাস পায়।
  4. বোম্বে রাজ্য : রাজ্যটি সৌরাষ্ট্র রাজ্য এবং কচ্ছ রাজ্য, মারাঠী-ভাষী জেলা বেরার বিভাগ এবং নাগরপুর বিভাগের মধ্য প্রদেশের এবং বিহার এবং মারাঠওয়াদা অঞ্চল হায়দ্রাবাদ রাজ্যের সংযোজনের মাধ্যমে প্রসারিত হয়েছিল। বোম্বে প্রেসিডেন্সি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলো মহীশূর রাজ্যে স্থানান্তরিত হয়েছিল।
  5. জম্মু ও কাশ্মীর : ১৯৫৬ সালে সীমানা পরিবর্তন হয়নি।
  6. কেরালা : মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির দক্ষিণ কানাড়া জেলার মালাবার জেলা এবং কাসারগড় তালুকের সাথে ট্রাভানকোর-কোচিন রাজ্যের একীভূত হয়ে গঠিত। ত্রিবাঙ্কুর-কোচিন রাজ্য দক্ষিণাঞ্চল, কন্যাকুমারী জেলা মাদ্রাজ রাজ্যে স্থানান্তরিত হয়েছিল।
  7. মধ্য প্রদেশ : মধ্য ভারত, বিন্ধ্য প্রদেশ এবং ভোপাল রাজ্যকে মধ্য প্রদেশে একীভূত করা হয়েছিল; নাগপুর বিভাগের মারাঠি ভাষী জেলাগুলো বোম্বাই রাজ্যে স্থানান্তরিত হয়েছিল।
  8. মাদ্রাজ রাজ্য : মালাবার জেলা নতুন কেরালা রাজ্যে স্থানান্তরিত হয়েছিল এবং একটি নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, লক্ষদ্বীপ, মিনিকয় এবং আমিন্দিবি দ্বীপপুঞ্জ তৈরি করা হয়েছিল। ত্রিবাঙ্কুর-কোচিন রাজ্য দক্ষিণাঞ্চল, কন্যাকুমারী জেলা রাজ্যে যুক্ত হয়েছিল।
  9. মহীশূর রাজ্য : কূর্গ রাজ্য এবং কন্নড ভাষী মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির পশ্চিমাংশ বোম্বে প্রেসিডেন্সির দক্ষিণাংশ ও হায়দ্রাবাদ রাজ্যের পশ্চিমাংশ যোগ করা হয়।
  10. উড়িষ্যা : ১৯৫৬ সালে সীমানা পরিবর্তন হয়নি।
  11. পাঞ্জাব : পাতিয়ালা এবং পূর্ব পাঞ্জাব রাজ্য ইউনিয়ন যুক্ত করে প্রসারিত।
  12. রাজস্থান : আজমির রাজ্য এবং বোম্বাই ও মধ্য ভারত রাজ্যের কিছু অংশ যুক্ত করে বর্ধিত।
  13. উত্তর প্রদেশ : ১৯৫৬ সালে সীমানা পরিবর্তন হয়নি।
  14. পশ্চিমবঙ্গ : প্রাক্তন বিহারের কিছু ছোটখাটো অঞ্চল যুক্ত করে বর্ধিত করা হয়।

কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল

  1. আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ
  2. দিল্লি
  3. মণিপুর
  4. ত্রিপুরা
  5. হিমাচল প্রদেশ
  6. লক্ষদ্বীপ, মিনিকয় এবং আমিন্দিবি দ্বীপপুঞ্জ

আরো দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "Explainer: The reorganization of states in India and why it happened" 
  2. "Seventh Amendment"। Indiacode.nic.in। ১ মে ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১১-১৯ 
  3. "Article 1"। Constitution of India। ২ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  4. "Archived copy"। ১ মে ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১১-১৯ 
  5. "Demand of separate province for Oriya"। The Telegraph। 
  6. States Politics in India 
  7. "Reorganisation of states" (পিডিএফ)। Economic Weekly। 
  8. Bihar and West Bengal (Transfer of Territories) Act, 1956

বহিঃসংযোগ