মোহাম্মদ রুহুল আমিন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
220.240.34.7-এর সম্পাদিত সংস্করণ হতে Mr Kazi Tuhin-এর সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণে ফেরত
ট্যাগ: পুনর্বহাল
আফতাব বট (আলোচনা | অবদান)
বানান ও অন্যান্য সংশোধন
৩৩ নং লাইন: ৩৩ নং লাইন:
== যেভাবে শহীদ হলেন ==
== যেভাবে শহীদ হলেন ==


[[ডিসেম্বর ৬|৬ ডিসেম্বর]] মুক্তিবাহিনী যশোর সেনানিবাস দখলের পর 'পদ্মা', 'পলাশ' এবং ভারতীয় মিত্রবাহিনীর একটি গানবোট 'পাভেল' খুলনার মংলা বন্দরে পাকিস্তানি নৌঘাঁটি পি.এন.এস. তিতুমীর দখলের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। [[ডিসেম্বর ১০|১০ ডিসেম্বর]] দুপুর ১২টার দিকে গানবোটগুলো [[খুলনা]] শিপইয়ার্ডের কাছে এলে ভারতীয় বিমান বাহিনীর ৩টি জঙ্গিবিমান জাহাজগুলোর দিকে ছুটে আসে। পাকিস্তানী বিমান ভেবে পদ্মা ও পলাশ থেকে গুলি করার অনুমতি চাওয়া হয়। কিন্তু অভিযানের সর্বাধিনায়ক ক্যাপ্টেন মনেন্দ্রনাথ ভারতীয় বিমান মনে করে গুলিবর্ষণ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন। এর কিছুক্ষণ পরে বিমানগুলো অপ্রত্যাশিতভাবে নিচে নেমে আসে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জাহাজগুলোর উপর আচমকা গুলিবর্ষণ শুরু করে। কিন্তু ভারতীয় জাহাজটি সম্পূর্ন অক্ষত থেকে যায়, কারণ বিমানগুলো সেটিকে লক্ষ করে হামলাই করেনি। প্রথম গোলা এসে পড়ে 'পদ্মা'য় এবং পরবর্তীতে 'পলাশে'। গোলা সরাসরি 'পদ্মা'র ইঞ্জিন রুমে আঘাত করে ইঞ্জিন বিধ্বস্ত করে। হতাহত হয় অনেক নাবিক। 'পদ্মা'-র পরিণতিতে পলাশের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রায় চৌধুরী নাবিকদের জাহাজ ত্যাগের নির্দেশ দেন। রুহুল আমিন এই আদেশে ক্ষিপ্ত হন। তিনি উপস্থিত সবাইকে যুদ্ধ বন্ধ না করার আহ্বান করেন। কামানের ক্রুদের বিমানের দিকে গুলি ছুঁড়তে বলে ইঞ্জিন রুমে ফিরে আসেন। কিন্তু অধিনায়কের আদেশ অমান্য করে বিমানগুলোকে চ্যালেঞ্জ করা হয়নি। বিমানগুলো উপর্যুপরি বোমাবর্ষণ করে পলাশের ইঞ্জিনরুম ধ্বংস করে দেয়। আহত হন তিনি। কিন্তু অসীম সাহসী রুহুল আমিন তারপরও চেষ্টা চালিয়ে যান 'পলাশ'কে বাঁচানোর। তবে ইঞ্জিন বিকল হয়ে আগুন ধরে যায় এবং গোলার আঘাতে রুহুল আমিনের ডান হাতটি সম্পূর্ণ উড়ে যায়। অবশেষে পলাশের ধ্বংশাবশেষ পিছে ফেলেই আহত রুহুল আমিন ঝাঁপিয়ে পড়েন রূপসা নদীতে। প্রাণশক্তিতে ভরপুর এ যোদ্ধা একসময় পাড়েও এসে পৌঁছান। কিন্তু ততক্ষণে সেখানে রাজাকারের দল অপেক্ষা করছে তার জন্য। আহত এই বীর সন্তান রাজাকারদের হাতে শহীদ হন। তার মৃতদেহ বেশকিছুদিন সেখানে পড়ে ছিলো অযত্নে, অবহেলায়। পরবর্তীতে স্থানীয় জনসাধারণ বাগমারা গ্রামে রূপসা নদীর পাড়ে তাকে দাফন করে এবং সেখান একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়।<ref>{{বই উদ্ধৃতি |শিরোনাম= বাংলাদেশে ও সাত বীর শ্রেষ্ঠ'র কথা |শেষাংশ= |প্রথমাংশ= |লেখক-সংযোগ= |coauthors= |বছর=২০০৭ |প্রকাশক= জনপ্রিয় প্রকাশনী, ৩৮ বাংলাবাজার (২য় তলা) |অবস্থান= ঢাকা|আইএসবিএন= ৯৮৪-৭০০১৫-০০৭৩-০|পাতা= ৪০|পাতাসমূহ= |সংগ্রহের-তারিখ= |ইউআরএল=}}</ref>
[[ডিসেম্বর ৬|৬ ডিসেম্বর]] মুক্তিবাহিনী যশোর সেনানিবাস দখলের পর 'পদ্মা', 'পলাশ' এবং ভারতীয় মিত্রবাহিনীর একটি গানবোট 'পাভেল' খুলনার মংলা বন্দরে পাকিস্তানি নৌঘাঁটি পি.এন.এস. তিতুমীর দখলের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। [[ডিসেম্বর ১০|১০ ডিসেম্বর]] দুপুর ১২টার দিকে গানবোটগুলো [[খুলনা]] শিপইয়ার্ডের কাছে এলে ভারতীয় বিমান বাহিনীর ৩টি জঙ্গিবিমান জাহাজগুলোর দিকে ছুটে আসে। পাকিস্তানি বিমান ভেবে পদ্মা ও পলাশ থেকে গুলি করার অনুমতি চাওয়া হয়। কিন্তু অভিযানের সর্বাধিনায়ক ক্যাপ্টেন মনেন্দ্রনাথ ভারতীয় বিমান মনে করে গুলিবর্ষণ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন। এর কিছুক্ষণ পরে বিমানগুলো অপ্রত্যাশিতভাবে নিচে নেমে আসে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জাহাজগুলোর উপর আচমকা গুলিবর্ষণ শুরু করে। কিন্তু ভারতীয় জাহাজটি সম্পূর্ন অক্ষত থেকে যায়, কারণ বিমানগুলো সেটিকে লক্ষ করে হামলাই করেনি। প্রথম গোলা এসে পড়ে 'পদ্মা'য় এবং পরবর্তীতে 'পলাশে'। গোলা সরাসরি 'পদ্মা'র ইঞ্জিন রুমে আঘাত করে ইঞ্জিন বিধ্বস্ত করে। হতাহত হয় অনেক নাবিক। 'পদ্মা'-র পরিণতিতে পলাশের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রায় চৌধুরী নাবিকদের জাহাজ ত্যাগের নির্দেশ দেন। রুহুল আমিন এই আদেশে ক্ষিপ্ত হন। তিনি উপস্থিত সবাইকে যুদ্ধ বন্ধ না করার আহ্বান করেন। কামানের ক্রুদের বিমানের দিকে গুলি ছুঁড়তে বলে ইঞ্জিন রুমে ফিরে আসেন। কিন্তু অধিনায়কের আদেশ অমান্য করে বিমানগুলোকে চ্যালেঞ্জ করা হয়নি। বিমানগুলো উপর্যুপরি বোমাবর্ষণ করে পলাশের ইঞ্জিনরুম ধ্বংস করে দেয়। আহত হন তিনি। কিন্তু অসীম সাহসী রুহুল আমিন তারপরও চেষ্টা চালিয়ে যান 'পলাশ'কে বাঁচানোর। তবে ইঞ্জিন বিকল হয়ে আগুন ধরে যায় এবং গোলার আঘাতে রুহুল আমিনের ডান হাতটি সম্পূর্ণ উড়ে যায়। অবশেষে পলাশের ধ্বংশাবশেষ পিছে ফেলেই আহত রুহুল আমিন ঝাঁপিয়ে পড়েন রূপসা নদীতে। প্রাণশক্তিতে ভরপুর এ যোদ্ধা একসময় পাড়েও এসে পৌঁছান। কিন্তু ততক্ষণে সেখানে রাজাকারের দল অপেক্ষা করছে তার জন্য। আহত এই বীর সন্তান রাজাকারদের হাতে শহীদ হন। তার মৃতদেহ বেশকিছুদিন সেখানে পড়ে ছিলো অযত্নে, অবহেলায়। পরবর্তীতে স্থানীয় জনসাধারণ বাগমারা গ্রামে রূপসা নদীর পাড়ে তাকে দাফন করে এবং সেখান একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়।<ref>{{বই উদ্ধৃতি |শিরোনাম= বাংলাদেশে ও সাত বীর শ্রেষ্ঠ'র কথা |শেষাংশ= |প্রথমাংশ= |লেখক-সংযোগ= |coauthors= |বছর=২০০৭ |প্রকাশক= জনপ্রিয় প্রকাশনী, ৩৮ বাংলাবাজার (২য় তলা) |অবস্থান= ঢাকা|আইএসবিএন= ৯৮৪-৭০০১৫-০০৭৩-০|পাতা= ৪০|পাতাসমূহ= |সংগ্রহের-তারিখ= |ইউআরএল=}}</ref>


== বীর শ্রেষ্ঠ সম্মান ==
== বীর শ্রেষ্ঠ সম্মান ==

১৯:৫০, ১১ মার্চ ২০২১ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

মোহাম্মদ রুহুল আমিন
জন্ম১৯৩৫
বাঘপাঁচড়া গ্রাম, নোয়াখালী
মৃত্যু১০ ডিসেম্বর ১৯৭১(1971-12-10) (বয়স ৩৫–৩৬)
জাতীয়তাবাংলাদেশি
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পেশাইআরএ-১ (ইঞ্জিন রুম আর্টিফিসার-১)
পরিচিতির কারণবীর শ্রেষ্ঠ
মোহাম্মদ রুহুল আমিনের সমাধি

মোহাম্মদ রুহুল আমিন (১৯৩৫ - ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন শহিদ মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে চরম সাহসিকতা আর অসামান্য বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ যে সাতজন বীরকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান “বীর শ্রেষ্ঠ” উপাধিতে ভূষিত করা হয় তিনি তাদের অন্যতম।[১]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

মোহাম্মদ রুহুল আমিন ১৯৩৫ সালে নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলার বাঘপাঁচড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আজহার পাটোয়ারী এবং মায়ের নাম জোলেখা খাতুন।[২] তিনি ছিলেন বাবা মায়ের প্রথম সন্তান। তারা ছিলেন ছয় ভাইবোন। তিনি বাঘচাপড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে আমিষাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এখান থেকে এসএসসি পাশ করে ১৯৫৩ সালে জুনিয়র মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে পাকিস্তান নৌবাহিনীতে যোগদান করেন।[৩]

কর্মজীবন

মোহাম্মদ রুহুল আমিন পাকিস্তান নৌবাহিনীতে যোগ দেয়ার পর প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য তিনি যান করাচির নিকটবর্তী আরব সাগরে মধ্যে অবস্থিত মানোরা দ্বীপে পাকিস্তানি নৌঘাঁটি (পি.এন.এস) বাহাদুরে। প্রাথমিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর সেখান থেকে পি.এন.এস. কারসাজে যোগদান করেন। পরবর্তীতে পি.এন.এস বাবর, পি.এন.এস খাইবার এবং পি.এন.এস তুঘরিলে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৮ সালে পেশাগত প্রশিক্ষণ শেষ করেন। ১৯৬৫ সালে মেকানিসিয়ান কোর্সের জন্য নির্বাচিত হন। পি.এন.এস. কারসাজে কোর্স সমাপ্ত করার পর আর্টিফিসার পদে নিযুক্ত হন। ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রাম পি.এন.এস. বখতিয়ার নৌঘাঁটিতে বদলি হয়ে যান। ১৯৭১ সালের এপ্রিলে ঘাঁটি থেকে পালিয়ে যান। বাড়িতে গিয়ে ছাত্র, যুবক ও সামরিক আধাসামরিক বাহিনীর লোকদের মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেন। এর কিছুদিন পর ভারতের ত্রিপুরা সীমান্ত অতিক্রম করে আগরতলা সেক্টর প্রধান কোয়ার্টারে যান এবং সেখানে মেজর শফিউল্লাহর অধীনে ২ নম্বর সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে থেকে বিভিন্ন স্থলযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের মার্চে রুহুল আমিন চট্টগ্রামে কর্মরত ছিলেন৷ একদিন সবার অলক্ষ্যে সকলের চোখকে ফাঁকি দিয়ে বের হয়ে পড়েন নৌঘাঁটি থেকে৷ পালিয়ে সীমান্ত পার হয়ে তিনি চলে যান ত্রিপুরা৷ যোগ দেন ২ নং সেক্টরে৷ মেজর শফিউল্লাহের নেতৃত্বে ২ নং সেক্টরে তিনি সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং স্থলযুদ্ধের বিভিন্ন অভিযানে যোগ দেন৷ ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ নৌবাহিনী গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়৷ এ উদ্দেশ্যে নৌবাহিনীর সদস্যদের যাঁরা বিভিন্ন সেক্টর ও সাব-সেক্টরে থেকে মুক্তিযুদ্ধ করছিলেন তাদেরকে সেপ্টেম্বর মাসে একত্রিত করা হয় আগরতলায় এবং গঠন করা হয় ১০ নং সেক্টর৷ ইঞ্জিনরুম আর্টিফিসার মোহাম্মদ রুহুল আমিন নৌবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে আগরতলায় একত্রিত হয়ে কলকাতায় আসেন এবং যোগ দেন ১০ নং নৌ সেক্টরে৷ পরবর্তীকালে অবস্থার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের নিজস্ব একটি নৌবাহিনী তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ভারতীয় নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন মণীন্দ্রনাথ সামন্তের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন সেক্টর ও সাব-সেক্টর থেকে নৌবাহিনীর সদস্যদের একত্রিত করার ব্যবস্থা করা হয়। আর এ উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশ নৌবাহিনী গঠিত হলে কলকাতায় চলে আসেন। ভারত সরকার বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনী কে কলকাতা বন্দরে গার্ডেনরিচ ডক ইয়ার্ডে দুইটি গানবোট উপহার দেয়।[৪] সেখানে প্রতিটি বোটে কানাডীয় ধরনের ২টি বাফার গান লাগিয়ে এবং ব্রিটিশ ধরনের ৫০০ পাউন্ড ওজনের ৪টি মার্কমাইন বহনের উপযোগী করে গানবোটে রূপান্তর করা হয়। গানবোটগুলোর নামকরণ করা হয় 'পদ্মা' ও 'পলাশ'। রুহুল আমিন পলাশের প্রধান ইঞ্জিনরুমে আর্টিফিসার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে যশোর সেনানিবাসের পতন ঘটে। পাকিস্তানি বাহিনী পিছু হটতে থাকে। সে সময় পাকিস্তানি বাহিনীর নিয়ন্ত্রিত খুলনাস্থ নৌঘাট দখল করার পরিকল্পনা নিয়ে ভারতীয় গানবোট পাভেলের সাথে যুক্ত হয়ে ১০ ডিসেম্বর মংলা বন্দরে পৌঁছায়। সেখানে পাকিস্তানি সেনা ও নৌবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। 'পলাশ' ও 'পদ্মা' মংলা বন্দর হয়ে খুলনার দিকে রওয়ানা দেয়। গানবোট 'পাভেল' সামনে আর পেছনে 'পলাশ' ও 'পদ্মা'।

যেভাবে শহীদ হলেন

৬ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী যশোর সেনানিবাস দখলের পর 'পদ্মা', 'পলাশ' এবং ভারতীয় মিত্রবাহিনীর একটি গানবোট 'পাভেল' খুলনার মংলা বন্দরে পাকিস্তানি নৌঘাঁটি পি.এন.এস. তিতুমীর দখলের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ১০ ডিসেম্বর দুপুর ১২টার দিকে গানবোটগুলো খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছে এলে ভারতীয় বিমান বাহিনীর ৩টি জঙ্গিবিমান জাহাজগুলোর দিকে ছুটে আসে। পাকিস্তানি বিমান ভেবে পদ্মা ও পলাশ থেকে গুলি করার অনুমতি চাওয়া হয়। কিন্তু অভিযানের সর্বাধিনায়ক ক্যাপ্টেন মনেন্দ্রনাথ ভারতীয় বিমান মনে করে গুলিবর্ষণ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন। এর কিছুক্ষণ পরে বিমানগুলো অপ্রত্যাশিতভাবে নিচে নেমে আসে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জাহাজগুলোর উপর আচমকা গুলিবর্ষণ শুরু করে। কিন্তু ভারতীয় জাহাজটি সম্পূর্ন অক্ষত থেকে যায়, কারণ বিমানগুলো সেটিকে লক্ষ করে হামলাই করেনি। প্রথম গোলা এসে পড়ে 'পদ্মা'য় এবং পরবর্তীতে 'পলাশে'। গোলা সরাসরি 'পদ্মা'র ইঞ্জিন রুমে আঘাত করে ইঞ্জিন বিধ্বস্ত করে। হতাহত হয় অনেক নাবিক। 'পদ্মা'-র পরিণতিতে পলাশের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রায় চৌধুরী নাবিকদের জাহাজ ত্যাগের নির্দেশ দেন। রুহুল আমিন এই আদেশে ক্ষিপ্ত হন। তিনি উপস্থিত সবাইকে যুদ্ধ বন্ধ না করার আহ্বান করেন। কামানের ক্রুদের বিমানের দিকে গুলি ছুঁড়তে বলে ইঞ্জিন রুমে ফিরে আসেন। কিন্তু অধিনায়কের আদেশ অমান্য করে বিমানগুলোকে চ্যালেঞ্জ করা হয়নি। বিমানগুলো উপর্যুপরি বোমাবর্ষণ করে পলাশের ইঞ্জিনরুম ধ্বংস করে দেয়। আহত হন তিনি। কিন্তু অসীম সাহসী রুহুল আমিন তারপরও চেষ্টা চালিয়ে যান 'পলাশ'কে বাঁচানোর। তবে ইঞ্জিন বিকল হয়ে আগুন ধরে যায় এবং গোলার আঘাতে রুহুল আমিনের ডান হাতটি সম্পূর্ণ উড়ে যায়। অবশেষে পলাশের ধ্বংশাবশেষ পিছে ফেলেই আহত রুহুল আমিন ঝাঁপিয়ে পড়েন রূপসা নদীতে। প্রাণশক্তিতে ভরপুর এ যোদ্ধা একসময় পাড়েও এসে পৌঁছান। কিন্তু ততক্ষণে সেখানে রাজাকারের দল অপেক্ষা করছে তার জন্য। আহত এই বীর সন্তান রাজাকারদের হাতে শহীদ হন। তার মৃতদেহ বেশকিছুদিন সেখানে পড়ে ছিলো অযত্নে, অবহেলায়। পরবর্তীতে স্থানীয় জনসাধারণ বাগমারা গ্রামে রূপসা নদীর পাড়ে তাকে দাফন করে এবং সেখান একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়।[৫]

বীর শ্রেষ্ঠ সম্মান

১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর সরকারি গেজেট নোটিফিকেশন অনুযায়ী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সাতজন বীর সন্তানকে মরণোত্তর বীর শ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। রুহুল আমিন সেই সাতজনের অন্যতম।[৬]

পুরস্কার ও সম্মাননা

বীর শ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের নামে রো রো ফেরির নামকরণ করা হয়েছে।[৭] বীর শ্রেষ্ঠ আর্টিফিসার মোহাম্মদ রুহুল আমিনের জন্মস্থান নোয়াখালীর বাগপাদুরা গ্রামের নাম পরিবর্তন করে এখন রাখা হয়েছে তার নামে আমিননগর[৮]৷ বাড়ির সম্মুখে বীর শ্রেষ্ঠের পরিবারের দেয়া ২০ শতাংশ জমিতেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নোয়াখালী জেলা পরিষদ ৬২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করছে রুহুল আমিন স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার৷ রুহুল আমিনের নামে চট্টগ্রামে বীর শ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়েছে।তার নামে অনেক পুরস্কারও প্রচলিত রয়েছে। [৯]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. কাজী সাজ্জাদ আলী জহির (২০১২)। "আমিন, বীর শ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  2. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ২৩-১২-২০১২
  3. বাংলাদেশে ও সাত বীর শ্রেষ্ঠ'র কথা। ঢাকা: জনপ্রিয় প্রকাশনী, ৩৮ বাংলাবাজার (২য় তলা)। ২০০৭। পৃষ্ঠা ৩৮। আইএসবিএন ৯৮৪-৭০০১৫-০০৭৩-০ |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য) 
  4. http://www.dw.de/dw/article/0,,14968821,00.html.
  5. বাংলাদেশে ও সাত বীর শ্রেষ্ঠ'র কথা। ঢাকা: জনপ্রিয় প্রকাশনী, ৩৮ বাংলাবাজার (২য় তলা)। ২০০৭। পৃষ্ঠা ৪০। আইএসবিএন ৯৮৪-৭০০১৫-০০৭৩-০ |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য) 
  6. শ্রেষ্ঠ_মোহাম্মদ_রুহুল "আমিন, বীর শ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল" |ইউআরএল= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)বাংলাপিডিয়াবাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। ১৮ মে ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  7. "Traffic chaos before Eid"bdnews24.com। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০১৫ 
  8. "Trust Bank Limited"atm.web.com.bd। ১৯ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০১৫ 
  9. "Stadium / Bir Shrestha Shahid Ruhul Amin Stadium"thecricketsport.com। the Cricket Sport। ১৯ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০১৫ 

বহিঃসংযোগ