যোগিনী: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[File:Yogini Goddess from Tamil Nadu.jpg|thumb|right|যোগিনী, দশম শতাব্দী [[চোল]] সাম্রাজ্য, [[তামিলনাড়ু]], [[ভারত]]। [[স্মিথসোনিয়ান ইন্সটিটিউশন]] থেকে।]]
[[File:Yogini Goddess from Tamil Nadu.jpg|thumb|right|যোগিনী, দশম শতাব্দী [[চোল]] সাম্রাজ্য, [[তামিলনাড়ু]], [[ভারত]]। [[স্মিথসোনিয়ান ইন্সটিটিউশন]] থেকে।]]
{{Hinduism small}}
{{Hinduism small}}
{{Saktism}}
{{IndicText}}
{{IndicText}}
'''যোগিনী''' ([[Sanskrit]]: योगिनी, ''yoginī'', {{IPA-sa|ˈjoɡiniː|IPA}}) হল পুরুষবাচক [[সংস্কৃত]] শব্দ ''[[যোগী]]''র নারীবাচক শব্দ, যেখানে "[[যোগিন]]" শব্দটি পুরুষ, নারী বা লিঙ্গ-নিরপেক্ষ ভাবে ব্যবহ্যত হয়।.<ref>Monier Monier-Williams, Sanskrit English Dictionary with Etymology, Oxford University Press, योगिन्, Archive: [http://www.sanskrit-lexicon.uni-koeln.de/cgi-bin/tamil/recherche yogini]</ref>
'''যোগিনী''' ([[Sanskrit]]: योगिनी, ''yoginī'', {{IPA-sa|ˈjoɡiniː|IPA}}) হল পুরুষবাচক [[সংস্কৃত]] শব্দ ''[[যোগী]]''র নারীবাচক শব্দ, যেখানে "[[যোগিন]]" শব্দটি পুরুষ, নারী বা লিঙ্গ-নিরপেক্ষ ভাবে ব্যবহ্যত হয়।.<ref>Monier Monier-Williams, Sanskrit English Dictionary with Etymology, Oxford University Press, योगिन्, Archive: [http://www.sanskrit-lexicon.uni-koeln.de/cgi-bin/tamil/recherche yogini]</ref>
৮ নং লাইন: ৮ নং লাইন:
হিন্দু ঐতিহ্যে, ''যোগিনী'' বলতে সেইসব নারীদের বোঝানো হয় যারা হিন্দু ঐতিহ্যের যোগশাস্ত্রের অংশ এবং যারা [[গোরক্ষনাথ]]-প্রবর্তিত নাথ যোগী ঐতিহ্যের অংশ ছিলেন। {{sfn|White|2012|pp=8-9, 234-256, 454-467}} যোগিনী, দেবী মহামায়া [[পার্বতী]]-অংশে অবতীর্ণ পবিত্র নারীশক্তির অংশ হিসাবে উল্লিখিত হন , এবং ভারতে যোগিনী মন্দিরগুলিতে আটজন [[মাতৃকা]] বা চৌষট্টিজন যোগিনী হিসাবে সম্মানিত হন।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি |শিরোনাম=Chaudhury, Janmejay. ''Origin of Tantricism and Sixty-four Yogini Cult in Orissa'' in ''Orissa Review'', October, 2004 |ইউআরএল=http://www.orissa.gov.in/e-magazine/orissareview/oct2004/englishPdf/originoftantricism.pdf |সংগ্রহের-তারিখ=জুলাই ২৯, ২০১৮ |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20100525063106/http://www.orissa.gov.in/e-magazine/orissareview/oct2004/englishPdf/originoftantricism.pdf |আর্কাইভের-তারিখ=মে ২৫, ২০১০ |অকার্যকর-ইউআরএল=হ্যাঁ }}</ref><ref name="Bhattacharyya, N. N. 1974, p. 128">Bhattacharyya, N. N., ''History of the Sakta Religion'', Munshiram Manoharlal Publishers Pvt. Ltd. (New Delhi, 1974, 2d ed. 1996), p. 128.</ref>
হিন্দু ঐতিহ্যে, ''যোগিনী'' বলতে সেইসব নারীদের বোঝানো হয় যারা হিন্দু ঐতিহ্যের যোগশাস্ত্রের অংশ এবং যারা [[গোরক্ষনাথ]]-প্রবর্তিত নাথ যোগী ঐতিহ্যের অংশ ছিলেন। {{sfn|White|2012|pp=8-9, 234-256, 454-467}} যোগিনী, দেবী মহামায়া [[পার্বতী]]-অংশে অবতীর্ণ পবিত্র নারীশক্তির অংশ হিসাবে উল্লিখিত হন , এবং ভারতে যোগিনী মন্দিরগুলিতে আটজন [[মাতৃকা]] বা চৌষট্টিজন যোগিনী হিসাবে সম্মানিত হন।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি |শিরোনাম=Chaudhury, Janmejay. ''Origin of Tantricism and Sixty-four Yogini Cult in Orissa'' in ''Orissa Review'', October, 2004 |ইউআরএল=http://www.orissa.gov.in/e-magazine/orissareview/oct2004/englishPdf/originoftantricism.pdf |সংগ্রহের-তারিখ=জুলাই ২৯, ২০১৮ |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20100525063106/http://www.orissa.gov.in/e-magazine/orissareview/oct2004/englishPdf/originoftantricism.pdf |আর্কাইভের-তারিখ=মে ২৫, ২০১০ |অকার্যকর-ইউআরএল=হ্যাঁ }}</ref><ref name="Bhattacharyya, N. N. 1974, p. 128">Bhattacharyya, N. N., ''History of the Sakta Religion'', Munshiram Manoharlal Publishers Pvt. Ltd. (New Delhi, 1974, 2d ed. 1996), p. 128.</ref>


যোগিনী হিসাবে এমন নারীদেরও উল্লেখ করা হয়, যারা হিন্দু ও বৌদ্ধতন্ত্রের ঐতিহ্যের অংশ। <ref name=ritagross87>Rita Gross (1993), Buddhism After Patriarchy, SUNY Press, ISBN 978-0791414033, page 87, 85-88</ref><ref>David Gordon White (2013), Tantra in Practice, Motilal Banarsidass, ISBN 978-8120817784, pages xiii-xv</ref> তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মে, মিরান্ডা সাউ বলেন যে ডোম্বিযোগিনী, সহজযোগিচিন্তা, লক্ষ্মীঙ্করা, মেখলা, কঙ্কাল গঙ্গাধরা, সিদ্ধরাজ্ঞী ও অন্যান্যদের মত প্রচুর নারীরা সম্মানিত যোগিনী এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞানচর্যার পথের প্রাগ্রসর অন্বেষক ছিলেন।<ref>Shaw, Miranda. ''Passionate Enlightenment: Women in Tantric Buddhism'', Princeton University Press, 1994</ref>
যোগিনী হিসাবে এমন নারীদেরও উল্লেখ করা হয়, যারা হিন্দু ও বৌদ্ধতন্ত্রের ঐতিহ্যের অংশ। <ref name="ritagross87">Rita Gross (1993), Buddhism After Patriarchy, SUNY Press, ISBN 978-0791414033, page 87, 85-88</ref><ref>David Gordon White (2013), Tantra in Practice, Motilal Banarsidass, ISBN 978-8120817784, pages xiii-xv</ref> তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মে, মিরান্ডা সাউ বলেন যে ডোম্বিযোগিনী, সহজযোগিচিন্তা, লক্ষ্মীঙ্করা, মেখলা, কঙ্কাল গঙ্গাধরা, সিদ্ধরাজ্ঞী ও অন্যান্যদের মত প্রচুর নারীরা সম্মানিত যোগিনী এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞানচর্যার পথের প্রাগ্রসর অন্বেষক ছিলেন।<ref>Shaw, Miranda. ''Passionate Enlightenment: Women in Tantric Buddhism'', Princeton University Press, 1994</ref>


[[তিব্বতি বৌদ্ধধর্ম]] এবং বোন ঐতিহ্যে, ব্যবহারিকভাবে, ভারতীয় বৌদ্ধধর্মের [[মহাসিদ্ধ]] যোগিনীদের সাথে কিছু [[নগম]] তুুলনীয়।
[[তিব্বতি বৌদ্ধধর্ম]] এবং বোন ঐতিহ্যে, ব্যবহারিকভাবে, ভারতীয় বৌদ্ধধর্মের [[মহাসিদ্ধ]] যোগিনীদের সাথে কিছু [[নগম]] তুুলনীয়।
২৩ নং লাইন: ২৩ নং লাইন:
-[[দেবী]] সূক্ত, ঋগ্বেদ ১০.১২৫.৮, জুন ম্যাকডনিয়েল কৃত অনুবাদ অবলম্বনে{{Sfn| McDaniel |2004|p=90}}{{Sfn| Brown |1998|p=26}}<ref>Sanskrit original see: [https://sa.wikisource.org/wiki/ऋग्वेद:_सूक्तं_१०.१२५ ऋग्वेद: सूक्तं १०.१२५];<br>for an alternate English translation, see: [https://en.wikisource.org/wiki/The_Rig_Veda/Mandala_10/Hymn_125 The Rig Veda/Mandala 10/Hymn 125] Ralph T.H. Griffith (Translator); for</ref>}}
-[[দেবী]] সূক্ত, ঋগ্বেদ ১০.১২৫.৮, জুন ম্যাকডনিয়েল কৃত অনুবাদ অবলম্বনে{{Sfn| McDaniel |2004|p=90}}{{Sfn| Brown |1998|p=26}}<ref>Sanskrit original see: [https://sa.wikisource.org/wiki/ऋग्वेद:_सूक्तं_१०.१२५ ऋग्वेद: सूक्तं १०.१२५];<br>for an alternate English translation, see: [https://en.wikisource.org/wiki/The_Rig_Veda/Mandala_10/Hymn_125 The Rig Veda/Mandala 10/Hymn 125] Ralph T.H. Griffith (Translator); for</ref>}}


[[File:Sandstone Yogini from Madhya Pradesh.JPG|thumb|left| [[মধ্যপ্রদেশ]] থেকে প্রাপ্ত বেলেপাথরের যোগিনী।]]
[[File:Sandstone Yogini from Madhya Pradesh.JPG|thumb| [[মধ্যপ্রদেশ]] থেকে প্রাপ্ত বেলেপাথরের যোগিনী।|327x327পিক্সেল]]


[[বেদ]]ে, [[উষা]] (ভোর), [[পৃথ্বী]] (পৃথিবী), [[অদিতি]] (মহাজাগতিক নৈতিক নিয়ম), [[সরস্বতী]] (নদী, জ্ঞান), [[বাক]] (শব্দ), [[নিঋতি]] (ধ্বংস), [[রাত্রি]] (রাত), [[অরণ্যানী]] (জঙ্গল) সহ অসংখ্য দেবীর অন্তর্ভুক্তি রয়েছে, এবং অন্যদের মধ্যে দিনশনা, রাকা, পুরমধী, পরেন্দী, ভারতী ও মহীর মতো দানশীল দেবীদের ঋগ্বেদে উল্লেখ করা হয়েছে। <ref name=kinsley717>David Kinsley (2005), Hindu Goddesses: Vision of the Divine Feminine in the Hindu Religious Traditions, University of California Press, ISBN 978-8120803947, pages 6-17, 55-64</ref> যাইহোক, নারীদেরকে পুরুষদের মত বারংবার আলোচনা করা হয়নি।<ref name=kinsley717/> সমস্ত দেবতা ও দেবীদের বৈদিক কালে ভাগ করা হয় ,<ref name=kinsley18>David Kinsley (2005), Hindu Goddesses: Vision of the Divine Feminine in the Hindu Religious Traditions, University of California Press, ISBN 978-8120803947, pages 18, 19</ref> কিন্তু উত্তর-বৈদিক গ্রন্থে, বিশেষত মধ্যযুগীয় সময়ের সাহিত্যে, তাদেরকে শেষপর্যন্ত এক সর্বজনীন শক্তি, পর[[ব্রহ্ম]]ের দিক বা প্রকাশ হিসাবে দেখা যায়।<ref>Christopher John Fuller (2004), The Camphor Flame: Popular Hinduism and Society in India, Princeton University Press, ISBN 978-0691120485, page 41</ref>
[[বেদ]]ে, [[উষা]] (ভোর), [[পৃথ্বী]] (পৃথিবী), [[অদিতি]] (মহাজাগতিক নৈতিক নিয়ম), [[সরস্বতী]] (নদী, জ্ঞান), [[বাক]] (শব্দ), [[নিঋতি]] (ধ্বংস), [[রাত্রি]] (রাত), [[অরণ্যানী]] (জঙ্গল) সহ অসংখ্য দেবীর অন্তর্ভুক্তি রয়েছে, এবং অন্যদের মধ্যে দিনশনা, রাকা, পুরমধী, পরেন্দী, ভারতী ও মহীর মতো দানশীল দেবীদের ঋগ্বেদে উল্লেখ করা হয়েছে। <ref name="kinsley717">David Kinsley (2005), Hindu Goddesses: Vision of the Divine Feminine in the Hindu Religious Traditions, University of California Press, ISBN 978-8120803947, pages 6-17, 55-64</ref> যাইহোক, নারীদেরকে পুরুষদের মত বারংবার আলোচনা করা হয়নি।<ref name=kinsley717/> সমস্ত দেবতা ও দেবীদের বৈদিক কালে ভাগ করা হয় ,<ref name="kinsley18">David Kinsley (2005), Hindu Goddesses: Vision of the Divine Feminine in the Hindu Religious Traditions, University of California Press, ISBN 978-8120803947, pages 18, 19</ref> কিন্তু উত্তর-বৈদিক গ্রন্থে, বিশেষত মধ্যযুগীয় সময়ের সাহিত্যে, তাদেরকে শেষপর্যন্ত এক সর্বজনীন শক্তি, পর[[ব্রহ্ম]]ের দিক বা প্রকাশ হিসাবে দেখা যায়।<ref>Christopher John Fuller (2004), The Camphor Flame: Popular Hinduism and Society in India, Princeton University Press, ISBN 978-0691120485, page 41</ref>




৩১ নং লাইন: ৩১ নং লাইন:
| image1 = 17th century Hindu female Nath yogi painting.jpg| height1=270
| image1 = 17th century Hindu female Nath yogi painting.jpg| height1=270
| image2 = Female Ascetics (Yoginis) LACMA M.2011.156.4 (1 of 2).jpg| height2=270
| image2 = Female Ascetics (Yoginis) LACMA M.2011.156.4 (1 of 2).jpg| height2=270
| image3 = devi yogini.jpg| height3=285
| image3 = devi yogini.jpg| height3=270
| image4 = Nairatmya150.jpg| height4=285
| image4 = Nairatmya150.jpg| height4=270
| footer = হিন্দু ও বৌদ্ধ শিল্পে যোগিনী। উপরের বাঁদিক থেকে দক্ষিণাবর্তে: নাথ যোগিনী, রাজস্থানের (১৭ শতকের); নাথ যোগিনী, রাজস্থান (১৮ শতকের); দেবী যোগিনী, তামিলনাড়ু (নবম শতক); যোগিনী, তিব্বত (ষোড়শ শতক)।
| footer = হিন্দু ও বৌদ্ধ শিল্পে যোগিনী। উপরের বাঁদিক থেকে দক্ষিণাবর্তে: নাথ যোগিনী, রাজস্থানের (১৭ শতকের); নাথ যোগিনী, রাজস্থান (১৮ শতকের); দেবী যোগিনী, তামিলনাড়ু (নবম শতক); যোগিনী, তিব্বত (ষোড়শ শতক)।
}}
}}
৩৮ নং লাইন: ৩৮ নং লাইন:
যোগী এবং তাদের আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের প্রাথমিক সাক্ষ্য, কারল ওয়ার্নারের মতে, [[বেদ]]ের কেশীন সূক্তে পাওয়া যায়, যেখানে এই যোগীগণ প্রশংসিত হন।<ref>Karel Werner (1977), Yoga and the Ṛg Veda: An Interpretation of the Keśin Hymn (RV 10, 136), Religious Studies, Vol. 13, No. 3, page 289; '''Quote:''' The Yogis of Vedic times left little evidence of their existence, practices and achievements. And such evidence as has survived in the Vedas is scanty and indirect. Nevertheless, the existence of accomplished Yogis in Vedic times cannot be doubted."</ref> যাইহোক, এখানে উল্লেখ নেই যে এই বৈদিক যুগের যোগীরা নারীদের অন্তর্ভুক্ত করতেন কিনা। পণ্ডিতরা মনে করেন যে, কিছু প্রাচীন বৈদিক ঋষি ছিলেন নারী।<ref>Swami [[Vivekananda]] public lecture, Vedanta Voice of Freedom, ISBN 0-916356-63-9, p.43</ref><ref>Daughters of the Goddess: Women Saints of India, by Linda Johnsen PhD., Yes Int'l Publishers, 1994, pg. 9.</ref> একজন মহিলা ঋষি ''ঋষিকা'' নামে পরিচিত হন।<ref>The Shambhala Encyclopedia of YOGA, p.244</ref>
যোগী এবং তাদের আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের প্রাথমিক সাক্ষ্য, কারল ওয়ার্নারের মতে, [[বেদ]]ের কেশীন সূক্তে পাওয়া যায়, যেখানে এই যোগীগণ প্রশংসিত হন।<ref>Karel Werner (1977), Yoga and the Ṛg Veda: An Interpretation of the Keśin Hymn (RV 10, 136), Religious Studies, Vol. 13, No. 3, page 289; '''Quote:''' The Yogis of Vedic times left little evidence of their existence, practices and achievements. And such evidence as has survived in the Vedas is scanty and indirect. Nevertheless, the existence of accomplished Yogis in Vedic times cannot be doubted."</ref> যাইহোক, এখানে উল্লেখ নেই যে এই বৈদিক যুগের যোগীরা নারীদের অন্তর্ভুক্ত করতেন কিনা। পণ্ডিতরা মনে করেন যে, কিছু প্রাচীন বৈদিক ঋষি ছিলেন নারী।<ref>Swami [[Vivekananda]] public lecture, Vedanta Voice of Freedom, ISBN 0-916356-63-9, p.43</ref><ref>Daughters of the Goddess: Women Saints of India, by Linda Johnsen PhD., Yes Int'l Publishers, 1994, pg. 9.</ref> একজন মহিলা ঋষি ''ঋষিকা'' নামে পরিচিত হন।<ref>The Shambhala Encyclopedia of YOGA, p.244</ref>


''যোগিনী'' শব্দটি গোরক্ষনাথ প্রতিষ্ঠিত নাথ যোগী ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত একজন নারীকে বোঝাতে উল্লেখ করা হয়েছে।{{sfn|White|2012|p=8-9}} তারা সাধারণত শৈব ঐতিহ্যের অন্তর্গত, কিন্তু কিছু [[নাথ বৈষ্ণব]] ঐতিহ্যের অন্তর্গত।<ref name=lorenzenmunozx>David N. Lorenzen and Adrián Muñoz (2012), Yogi Heroes and Poets: Histories and Legends of the Naths, SUNY Press, ISBN 978-1438438900, pages x-xi</ref> উভয় ক্ষেত্রে, ডেভিড লরেনজেন বলেন যে, তারা [[যোগ (হিন্দুধর্ম)|যোগ]] অনুশীলন করেন এবং তাদের প্রধান [[ঈশ্বর]] নির্গুণ হতে থাকেন, ইনি এমন এক ঈশ্বর যিনি আকারবিহীন এবং অর্ধ-অদ্বৈতবাদী,<ref name=lorenzenmunozx/> মধ্যযুগীয় সময়ে হিন্দুধর্মের [[অদ্বৈত বেদান্ত]] বিদ্যালয়, বৌদ্ধধর্মের [[মাধ্যমিক]] ঘরানা, সেইসাথে তন্ত্র এবং যোগাভ্যাসে প্রভাব ফেলেছিলেন।<ref>David Lorenzen (2004), Religious Movements in South Asia, 600-1800, Oxford University Press, ISBN 978-0195664485, pages 310-311</ref><ref>David N. Lorenzen and Adrián Muñoz (2012), Yogi Heroes and Poets: Histories and Legends of the Naths, SUNY Press, ISBN 978-1438438900, pages 24-25</ref> নারী যোগিনীরা এই ঐতিহ্যের একটি বৃহৎ অংশ ছিলেন, এবং অনেক ২য়-সহস্রাব্দের চিত্রকর্ম তাদের এবং তাদের যোগচর্চা সম্বন্ধে বর্ণনা করে। ডেভিড লরেনজেন বলেছেন যে, দক্ষিণ এশিয়ায় ([[ভারত]]ের উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম অঙ্গরাজ্যসমূহ এবং [[নেপাল]]ে) গ্রামাঞ্চলের জনতার মধ্যে নাথ যোগীরা খুব জনপ্রিয়, মধ্যযুগীয় সময়ের কাহিনী ও গল্পে সমসাময়িক আবহে তাদের স্মরণ রাখার মধ্য দিয়ে।<ref name=lorenzenmunozx/>
''যোগিনী'' শব্দটি গোরক্ষনাথ প্রতিষ্ঠিত নাথ যোগী ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত একজন নারীকে বোঝাতে উল্লেখ করা হয়েছে।{{sfn|White|2012|p=8-9}} তারা সাধারণত শৈব ঐতিহ্যের অন্তর্গত, কিন্তু কিছু [[নাথ বৈষ্ণব]] ঐতিহ্যের অন্তর্গত।<ref name="lorenzenmunozx">David N. Lorenzen and Adrián Muñoz (2012), Yogi Heroes and Poets: Histories and Legends of the Naths, SUNY Press, ISBN 978-1438438900, pages x-xi</ref> উভয় ক্ষেত্রে, ডেভিড লরেনজেন বলেন যে, তারা [[যোগ (হিন্দুধর্ম)|যোগ]] অনুশীলন করেন এবং তাদের প্রধান [[ঈশ্বর]] নির্গুণ হতে থাকেন, ইনি এমন এক ঈশ্বর যিনি আকারবিহীন এবং অর্ধ-অদ্বৈতবাদী,<ref name=lorenzenmunozx/> মধ্যযুগীয় সময়ে হিন্দুধর্মের [[অদ্বৈত বেদান্ত]] বিদ্যালয়, বৌদ্ধধর্মের [[মাধ্যমিক]] ঘরানা, সেইসাথে তন্ত্র এবং যোগাভ্যাসে প্রভাব ফেলেছিলেন।<ref>David Lorenzen (2004), Religious Movements in South Asia, 600-1800, Oxford University Press, ISBN 978-0195664485, pages 310-311</ref><ref>David N. Lorenzen and Adrián Muñoz (2012), Yogi Heroes and Poets: Histories and Legends of the Naths, SUNY Press, ISBN 978-1438438900, pages 24-25</ref> নারী যোগিনীরা এই ঐতিহ্যের একটি বৃহৎ অংশ ছিলেন, এবং অনেক ২য়-সহস্রাব্দের চিত্রকর্ম তাদের এবং তাদের যোগচর্চা সম্বন্ধে বর্ণনা করে। ডেভিড লরেনজেন বলেছেন যে, দক্ষিণ এশিয়ায় ([[ভারত]]ের উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম অঙ্গরাজ্যসমূহ এবং [[নেপাল]]ে) গ্রামাঞ্চলের জনতার মধ্যে নাথ যোগীরা খুব জনপ্রিয়, মধ্যযুগীয় সময়ের কাহিনী ও গল্পে সমসাময়িক আবহে তাদের স্মরণ রাখার মধ্য দিয়ে।<ref name=lorenzenmunozx/>


[[কথাসরিৎসাগর]]ের মতো মধ্যযুগীয় পুরাণে, ''যোগিনী'' যাদুশক্তিধর নারী ও [[পরী]]দের একটি শ্রেণীর নাম, যাদের বেশিরভাগ চরিত্রকে ক্বচিৎ ৮, ৬০, ৬৪ বা ৬৫ সংখ্যার হিসাবে গণনা করা হয়।<ref>[[Monier-Williams]], ''Sanskrit Dictionary'' (1899).</ref> ''হঠ-যোগ-প্রদীপিকা'' গ্রন্থে যোগিনীদের উল্লেখ করা হয়েছে।<ref>The Shambhala Encyclopedia of Yoga, Georg Feurstein Ph.D., Shambhala Publications, Boston 2000, p.350</ref>
[[কথাসরিৎসাগর]]ের মতো মধ্যযুগীয় পুরাণে, ''যোগিনী'' যাদুশক্তিধর নারী ও [[পরী]]দের একটি শ্রেণীর নাম, যাদের বেশিরভাগ চরিত্রকে ক্বচিৎ ৮, ৬০, ৬৪ বা ৬৫ সংখ্যার হিসাবে গণনা করা হয়।<ref>[[Monier-Williams]], ''Sanskrit Dictionary'' (1899).</ref> ''হঠ-যোগ-প্রদীপিকা'' গ্রন্থে যোগিনীদের উল্লেখ করা হয়েছে।<ref>The Shambhala Encyclopedia of Yoga, Georg Feurstein Ph.D., Shambhala Publications, Boston 2000, p.350</ref>
৪৬ নং লাইন: ৪৬ নং লাইন:
==শাক্তধর্ম ও তান্ত্রিক ঐতিহ্যে যোগিনী==
==শাক্তধর্ম ও তান্ত্রিক ঐতিহ্যে যোগিনী==
===চৌষট্টি যোগিনী মন্দিরসমূহ===
===চৌষট্টি যোগিনী মন্দিরসমূহ===
[[File:Yoginis in a circular format.JPG|thumb|হীরাপুর, [[ওড়িশা]]য় অবস্থিত [[চৌষট্টি যোগিনী মন্দির]]]]
[[File:Yoginis in a circular format.JPG|thumb|হীরাপুর, [[ওড়িশা]]য় অবস্থিত [[চৌষট্টি যোগিনী মন্দির]]|194x194পিক্সেল]]
[[File:Hirapur ei02-47.jpg|thumb|হীরাপুর, [[ওড়িশা]]য় অবস্থিত চৌষট্টি যোগিনী মন্দিরের এক যোগিনী]]
[[File:Hirapur ei02-47.jpg|thumb|হীরাপুর, [[ওড়িশা]]য় অবস্থিত চৌষট্টি যোগিনী মন্দিরের এক যোগিনী|258x258পিক্সেল]]
[[File:Chausath Yogini Temple (16313518811).jpg|thumb|[[মধ্যপ্রদেশ]]ে অবস্থিত অষ্টম শতকের চৌষট্টি যোগিনী মন্দির]]
[[File:Chausath Yogini Temple (16313518811).jpg|thumb|[[মধ্যপ্রদেশ]]ে অবস্থিত অষ্টম শতকের চৌষট্টি যোগিনী মন্দির|196x196পিক্সেল]]


ভারতে চৌষট্টি যোগিনীর (৬৪জন কিংবদন্তী যোগিনীর নামে নামকৃত) চারটি প্রধান মন্দির রয়েছে, [[উড়িষ্যা]]তে দুটি এবং [[মধ্যপ্রদেশ]]ে দুটি। উড়িষ্যাতে সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক যোগিনী মন্দিরগুলির মধ্যে একটি নবম শতাব্দীর ছাদবিহীন [[চৌষট্টি যোগিনী মন্দির]], এটি [[ভুবনেশ্বর]]ের ১৫ কিমি দক্ষিণে খুরদা জেলার হীরাপুরে অবস্থিত। উড়িষ্যার আরেকটি ছাদবিহীন চৌষট্টি যোগিনী মন্দির [[বালাঙ্গীর জেলা]]র তিতীলগড়ের কাছে রাণীপুর-ঝড়িয়ালের চৌষট্টি যোগিনী পিঠ। এই মন্দির থেকে ৬৪ যোগিনীর দুটি ছবি হারিয়ে গেছে। <ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি |শিরোনাম=Patel, C.B. ''Monumental Efflorescence of Ranipur-Jharial'' in ''Orissa Review'', August 2004, pp.41-44 |ইউআরএল=http://orissagov.nic.in/e-magazine/Orissareview/aug2004/engishPdf/Pages41-44.pdf |সংগ্রহের-তারিখ=আগস্ট ১, ২০১৮ |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20070930015200/http://orissagov.nic.in/e-magazine/Orissareview/aug2004/engishPdf/Pages41-44.pdf |আর্কাইভের-তারিখ=সেপ্টেম্বর ৩০, ২০০৭ |অকার্যকর-ইউআরএল=হ্যাঁ }}</ref>
ভারতে চৌষট্টি যোগিনীর (৬৪জন কিংবদন্তী যোগিনীর নামে নামকৃত) চারটি প্রধান মন্দির রয়েছে, [[উড়িষ্যা]]তে দুটি এবং [[মধ্যপ্রদেশ]]ে দুটি। উড়িষ্যাতে সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক যোগিনী মন্দিরগুলির মধ্যে একটি নবম শতাব্দীর ছাদবিহীন [[চৌষট্টি যোগিনী মন্দির]], এটি [[ভুবনেশ্বর]]ের ১৫ কিমি দক্ষিণে খুরদা জেলার হীরাপুরে অবস্থিত। উড়িষ্যার আরেকটি ছাদবিহীন চৌষট্টি যোগিনী মন্দির [[বালাঙ্গীর জেলা]]র তিতীলগড়ের কাছে রাণীপুর-ঝড়িয়ালের চৌষট্টি যোগিনী পিঠ। এই মন্দির থেকে ৬৪ যোগিনীর দুটি ছবি হারিয়ে গেছে। <ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি |শিরোনাম=Patel, C.B. ''Monumental Efflorescence of Ranipur-Jharial'' in ''Orissa Review'', August 2004, pp.41-44 |ইউআরএল=http://orissagov.nic.in/e-magazine/Orissareview/aug2004/engishPdf/Pages41-44.pdf |সংগ্রহের-তারিখ=আগস্ট ১, ২০১৮ |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20070930015200/http://orissagov.nic.in/e-magazine/Orissareview/aug2004/engishPdf/Pages41-44.pdf |আর্কাইভের-তারিখ=সেপ্টেম্বর ৩০, ২০০৭ |অকার্যকর-ইউআরএল=হ্যাঁ }}</ref>

০৬:২৯, ৯ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

যোগিনী, দশম শতাব্দী চোল সাম্রাজ্য, তামিলনাড়ু, ভারতস্মিথসোনিয়ান ইন্সটিটিউশন থেকে।


যোগিনী (Sanskrit: योगिनी, yoginī, আইপিএ: [ˈjoɡiniː]) হল পুরুষবাচক সংস্কৃত শব্দ যোগীর নারীবাচক শব্দ, যেখানে "যোগিন" শব্দটি পুরুষ, নারী বা লিঙ্গ-নিরপেক্ষ ভাবে ব্যবহ্যত হয়।.[১] যোগীর সমস্ত কিছুর একটি লিঙ্গ-তকমা ছাড়াও, যোগিনী যুগপৎভাবে যোগের একজন মহিলা অভিজ্ঞ অনুশীলনকারী এবং ভারত, নেপালতিব্বতে মহিলা হিন্দু বা বৌদ্ধ আধ্যাত্মিক শিক্ষকদের জন্য সম্মানের একটি প্রাতিষ্ঠানিক শব্দ উভয়েরই প্রতিনিধিত্ব করে।

হিন্দু ঐতিহ্যে, যোগিনী বলতে সেইসব নারীদের বোঝানো হয় যারা হিন্দু ঐতিহ্যের যোগশাস্ত্রের অংশ এবং যারা গোরক্ষনাথ-প্রবর্তিত নাথ যোগী ঐতিহ্যের অংশ ছিলেন। [২] যোগিনী, দেবী মহামায়া পার্বতী-অংশে অবতীর্ণ পবিত্র নারীশক্তির অংশ হিসাবে উল্লিখিত হন , এবং ভারতে যোগিনী মন্দিরগুলিতে আটজন মাতৃকা বা চৌষট্টিজন যোগিনী হিসাবে সম্মানিত হন।[৩][৪]

যোগিনী হিসাবে এমন নারীদেরও উল্লেখ করা হয়, যারা হিন্দু ও বৌদ্ধতন্ত্রের ঐতিহ্যের অংশ। [৫][৬] তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মে, মিরান্ডা সাউ বলেন যে ডোম্বিযোগিনী, সহজযোগিচিন্তা, লক্ষ্মীঙ্করা, মেখলা, কঙ্কাল গঙ্গাধরা, সিদ্ধরাজ্ঞী ও অন্যান্যদের মত প্রচুর নারীরা সম্মানিত যোগিনী এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞানচর্যার পথের প্রাগ্রসর অন্বেষক ছিলেন।[৭]

তিব্বতি বৌদ্ধধর্ম এবং বোন ঐতিহ্যে, ব্যবহারিকভাবে, ভারতীয় বৌদ্ধধর্মের মহাসিদ্ধ যোগিনীদের সাথে কিছু নগম তুুলনীয়।

ইতিহাসে যোগিনী

যোগিনী এমন একটি শব্দ যা হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈনধর্মের প্রাচীন এবং মধ্যযুগীয় গ্রন্থে তথ্যসূত্র খুঁজে পায়, বিশেষ করে দেবীর প্রসঙ্গে এবং উদ্দেশ্যে। ঋগ্বেদের ১০.১২৫.১ থেকে ১০.১২৫.৮ পর্যন্ত দেবী সূক্ত, সর্বাধিক অধ্যয়িত স্তোত্রের মধ্যে রয়েছে, যা ঘোষণা করে পরম আধ্যাত্মিক সত্য (ব্রহ্ম) হলেন এক দেবী, [৮][৯]

আমি কোনোরকম উচ্চতর সত্ত্বার উদ্দীপনা ছাড়াই আমার ইচ্ছানুসারে সমস্ত জগৎকে সৃষ্টি করেছি, এবং আমি তাদের মধ্যে বাস করছি।

আমি আমার মহিমা নিয়ে পৃথিবী ও স্বর্গে, সৃষ্ট সকল সত্ত্বায় ছড়িয়ে আছি, এবং শাশ্বত ও অসীম চেতনারূপে আমি তাদের মধ্যে বসবাস করছি।

-দেবী সূক্ত, ঋগ্বেদ ১০.১২৫.৮, জুন ম্যাকডনিয়েল কৃত অনুবাদ অবলম্বনে[৮][৯][১০]

মধ্যপ্রদেশ থেকে প্রাপ্ত বেলেপাথরের যোগিনী।

বেদে, উষা (ভোর), পৃথ্বী (পৃথিবী), অদিতি (মহাজাগতিক নৈতিক নিয়ম), সরস্বতী (নদী, জ্ঞান), বাক (শব্দ), নিঋতি (ধ্বংস), রাত্রি (রাত), অরণ্যানী (জঙ্গল) সহ অসংখ্য দেবীর অন্তর্ভুক্তি রয়েছে, এবং অন্যদের মধ্যে দিনশনা, রাকা, পুরমধী, পরেন্দী, ভারতী ও মহীর মতো দানশীল দেবীদের ঋগ্বেদে উল্লেখ করা হয়েছে। [১১] যাইহোক, নারীদেরকে পুরুষদের মত বারংবার আলোচনা করা হয়নি।[১১] সমস্ত দেবতা ও দেবীদের বৈদিক কালে ভাগ করা হয় ,[১২] কিন্তু উত্তর-বৈদিক গ্রন্থে, বিশেষত মধ্যযুগীয় সময়ের সাহিত্যে, তাদেরকে শেষপর্যন্ত এক সর্বজনীন শক্তি, পরব্রহ্মের দিক বা প্রকাশ হিসাবে দেখা যায়।[১৩]


হিন্দু ও বৌদ্ধ শিল্পে যোগিনী। উপরের বাঁদিক থেকে দক্ষিণাবর্তে: নাথ যোগিনী, রাজস্থানের (১৭ শতকের); নাথ যোগিনী, রাজস্থান (১৮ শতকের); দেবী যোগিনী, তামিলনাড়ু (নবম শতক); যোগিনী, তিব্বত (ষোড়শ শতক)।

যোগী এবং তাদের আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের প্রাথমিক সাক্ষ্য, কারল ওয়ার্নারের মতে, বেদের কেশীন সূক্তে পাওয়া যায়, যেখানে এই যোগীগণ প্রশংসিত হন।[১৪] যাইহোক, এখানে উল্লেখ নেই যে এই বৈদিক যুগের যোগীরা নারীদের অন্তর্ভুক্ত করতেন কিনা। পণ্ডিতরা মনে করেন যে, কিছু প্রাচীন বৈদিক ঋষি ছিলেন নারী।[১৫][১৬] একজন মহিলা ঋষি ঋষিকা নামে পরিচিত হন।[১৭]

যোগিনী শব্দটি গোরক্ষনাথ প্রতিষ্ঠিত নাথ যোগী ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত একজন নারীকে বোঝাতে উল্লেখ করা হয়েছে।[১৮] তারা সাধারণত শৈব ঐতিহ্যের অন্তর্গত, কিন্তু কিছু নাথ বৈষ্ণব ঐতিহ্যের অন্তর্গত।[১৯] উভয় ক্ষেত্রে, ডেভিড লরেনজেন বলেন যে, তারা যোগ অনুশীলন করেন এবং তাদের প্রধান ঈশ্বর নির্গুণ হতে থাকেন, ইনি এমন এক ঈশ্বর যিনি আকারবিহীন এবং অর্ধ-অদ্বৈতবাদী,[১৯] মধ্যযুগীয় সময়ে হিন্দুধর্মের অদ্বৈত বেদান্ত বিদ্যালয়, বৌদ্ধধর্মের মাধ্যমিক ঘরানা, সেইসাথে তন্ত্র এবং যোগাভ্যাসে প্রভাব ফেলেছিলেন।[২০][২১] নারী যোগিনীরা এই ঐতিহ্যের একটি বৃহৎ অংশ ছিলেন, এবং অনেক ২য়-সহস্রাব্দের চিত্রকর্ম তাদের এবং তাদের যোগচর্চা সম্বন্ধে বর্ণনা করে। ডেভিড লরেনজেন বলেছেন যে, দক্ষিণ এশিয়ায় (ভারতের উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম অঙ্গরাজ্যসমূহ এবং নেপালে) গ্রামাঞ্চলের জনতার মধ্যে নাথ যোগীরা খুব জনপ্রিয়, মধ্যযুগীয় সময়ের কাহিনী ও গল্পে সমসাময়িক আবহে তাদের স্মরণ রাখার মধ্য দিয়ে।[১৯]

কথাসরিৎসাগরের মতো মধ্যযুগীয় পুরাণে, যোগিনী যাদুশক্তিধর নারী ও পরীদের একটি শ্রেণীর নাম, যাদের বেশিরভাগ চরিত্রকে ক্বচিৎ ৮, ৬০, ৬৪ বা ৬৫ সংখ্যার হিসাবে গণনা করা হয়।[২২] হঠ-যোগ-প্রদীপিকা গ্রন্থে যোগিনীদের উল্লেখ করা হয়েছে।[২৩]

বাস্তব জীবনে, যোগিনী কৌল-এর ​​উপর ঐতিহাসিক প্রমাণ হিন্দুধর্মের যোগিনী ঐতিহ্য সম্বন্ধে ইঙ্গিত দেয়, যারা যোগশাস্ত্র ও তন্ত্রের অনুশীলন করতেন এবং, দশম শতকে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন।[২৪] এই উন্নয়ন হিন্দুধর্মের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং বৌদ্ধতন্ত্রের ঐতিহ্যের মধ্যে যোগিনীকে অন্তর্ভুক্ত করেছিল।[২৪]

শাক্তধর্ম ও তান্ত্রিক ঐতিহ্যে যোগিনী

চৌষট্টি যোগিনী মন্দিরসমূহ

হীরাপুর, ওড়িশায় অবস্থিত চৌষট্টি যোগিনী মন্দির
হীরাপুর, ওড়িশায় অবস্থিত চৌষট্টি যোগিনী মন্দিরের এক যোগিনী
মধ্যপ্রদেশে অবস্থিত অষ্টম শতকের চৌষট্টি যোগিনী মন্দির

ভারতে চৌষট্টি যোগিনীর (৬৪জন কিংবদন্তী যোগিনীর নামে নামকৃত) চারটি প্রধান মন্দির রয়েছে, উড়িষ্যাতে দুটি এবং মধ্যপ্রদেশে দুটি। উড়িষ্যাতে সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক যোগিনী মন্দিরগুলির মধ্যে একটি নবম শতাব্দীর ছাদবিহীন চৌষট্টি যোগিনী মন্দির, এটি ভুবনেশ্বরের ১৫ কিমি দক্ষিণে খুরদা জেলার হীরাপুরে অবস্থিত। উড়িষ্যার আরেকটি ছাদবিহীন চৌষট্টি যোগিনী মন্দির বালাঙ্গীর জেলার তিতীলগড়ের কাছে রাণীপুর-ঝড়িয়ালের চৌষট্টি যোগিনী পিঠ। এই মন্দির থেকে ৬৪ যোগিনীর দুটি ছবি হারিয়ে গেছে। [২৫]

মধ্যপ্রদেশে দুটি উল্লেখযোগ্য যোগিনী মন্দির ছত্রপুর জেলার ছত্রপুরের খাজুরাহো মন্দিরের পশ্চিমাঞ্চলের দক্ষিণ-পশ্চিমে নবম শতাব্দীর চৌষট্টি যোগিনী মন্দির এবং দশম শতাব্দীর চৌষট্টি যোগিনী মন্দির, জব্বলপুর জেলার জব্বলপুরের কাছে ভেদাঘাটে অবস্থিত।[২৬][২৭]

চারটি যোগিনী মন্দিরের মধ্যে যোগিনী ভাবের মূর্তিগুলি অভিন্ন নয়। হীরাপুরে মন্দিরে, সব যোগিনী মূর্তি তাদের বাহন (শকট) এবং স্থায়ী ভঙ্গিমায় রয়েছে। রাণীপুর-ঝড়িয়াল মন্দিরে যোগিনী মূর্তিগুলি নৃত্যরত ভঙ্গিমায় রয়েছে। ভেদাঘাট মন্দিরে, যোগিনী মূর্তিসমূহ ললিতাসন-এ বসে আছেন।[২৮]

ওড়িশার সমগ্র হীরাপুর মন্দিরে প্রদর্শিত চৌষট্টিজন যোগিনী হলেন:

  1. বহুরূপা
  2. তারা
  3. নর্মদা
  4. যমুনা
  5. শান্তি
  6. বারুণী
  7. ক্ষেমঙ্করী
  8. ঐন্দ্রী
  9. বারাহী
  10. রণবীরা
  11. বানর-মুখী
  12. বৈষ্ণবী
  13. কালরাত্রি
  14. বিদ্যারূপা
  15. চর্চিকা
  16. বেতালী
  17. ছিন্নমস্তিকা
  18. বৃষবাহনা
  19. জ্বালা কামিনী
  20. ঘটবরা
  21. করাকালী
  22. রক্ত দন্টি
  23. বিরূপা
  24. কৌবেরী
  25. ভালুকা
  26. নারসিংহী
  27. বিরজা
  28. বিকটাননা
  29. মুক্ত কেশি
  30. কৌমারী
  31. কৃষ্ণা
  32. রতি
  33. কর্করী
  34. সর্পশ্যা
  35. যক্ষিণী
  36. বিনায়কী
  37. বিন্ধ্যবালিনী
  38. বীরকুমারী
  39. মাহেশ্বরী
  40. উগ্রা
  41. কামীয়নী
  42. ঘটাবরী
  43. স্তুতি
  44. কালী
  45. চতুত্রুপা
  46. নারায়ণী
  47. সমুদ্রা
  48. ব্রহ্মাণী
  49. জ্বালামুখী
  50. আগ্নেয়ী
  51. অদিতি
  52. চন্দ্রকান্তি
  53. বায়ুবেগা
  54. চামুণ্ডা
  55. মূরতি
  56. গঙ্গা
  57. ধূমাবতী
  58. গান্ধারী
  59. সর্বমঙ্গলা
  60. অজিতা
  61. সূর্যপুত্রী
  62. বায়ুবীণা
  63. অঘোরা
  64. ভদ্রকালী

মাতৃকাদের সঙ্গে সম্বন্ধ

প্রায়ই মাতৃকাদের কিংবদন্তি যোগিনীদের সঙ্গে বিভ্রান্ত করা হয়, যারা সংখ্যায় ৬৪ বা ৮১ হতে পারেন।[২৯] সংস্কৃত সাহিত্যে, যোগিনীদেরকে দেবী দুর্গার শুম্ভ ও নিশুম্ভের সাথে যুদ্ধরত অবস্থায় বিভিন্ন রূপে বা আত্মীয় হিসাবে প্রকাশ করা হয় এবং প্রধান যোগিনীদের মাতৃকাদের সাথে চিহ্নিত করা হয়।[৪] অন্য যোগিনীগণকে এক বা একাধিক মাতৃকা থেকে উৎপন্ন হিসাবে বর্ণনা করা হয়। আটজন মাতৃকা থেকে ৬৪জন যোগিনীর উৎপত্তি একটি ঐতিহ্য হয়ে ওঠে। একাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে, যোগিনী ও মাতৃকাদের সম্পর্ক সাধারণ ব্যাপার হয়ে উঠেছিল। যোগিণীগুলির মণ্ডল (বৃত্ত) ও চক্র বিকল্পরূপে ব্যবহার করা হত। ৮১জন যোগিনী নয়জন মাতৃকার একটি দল থেকে বিবর্তিত হন, আটজনের পরিবর্তে। সপ্তমাতৃকা (ব্রাহ্মী, মাহেশ্বরী, কৌমারী, বৈষ্ণবী, বারাহী, ইন্দ্রাণী (ঐন্দ্রী) ও চামুণ্ডী) চণ্ডিকা এবং মহালক্ষ্মী রূপের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে নব-মাতৃকা জোট গঠন করেন। প্রতিটি মাতৃকা একজন যোগিনী বলে গণ্য হন এবং অন্য আটজন যোগিনীর সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত হন যাতে ৮১ (নয় গুণিতক নয়) জনের দল গঠিত হয়।[৩০] কিছু ঐতিহ্যে, মাত্র সাতজন মাতৃকা, এবং এইভাবে অল্পতর যোগিনী আছেন।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. Monier Monier-Williams, Sanskrit English Dictionary with Etymology, Oxford University Press, योगिन्, Archive: yogini
  2. White 2012, পৃ. 8-9, 234-256, 454-467।
  3. "Chaudhury, Janmejay. Origin of Tantricism and Sixty-four Yogini Cult in Orissa in Orissa Review, October, 2004" (পিডিএফ)। মে ২৫, ২০১০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ২৯, ২০১৮ 
  4. Bhattacharyya, N. N., History of the Sakta Religion, Munshiram Manoharlal Publishers Pvt. Ltd. (New Delhi, 1974, 2d ed. 1996), p. 128.
  5. Rita Gross (1993), Buddhism After Patriarchy, SUNY Press, ISBN 978-0791414033, page 87, 85-88
  6. David Gordon White (2013), Tantra in Practice, Motilal Banarsidass, ISBN 978-8120817784, pages xiii-xv
  7. Shaw, Miranda. Passionate Enlightenment: Women in Tantric Buddhism, Princeton University Press, 1994
  8. McDaniel 2004, পৃ. 90।
  9. Brown 1998, পৃ. 26।
  10. Sanskrit original see: ऋग्वेद: सूक्तं १०.१२५;
    for an alternate English translation, see: The Rig Veda/Mandala 10/Hymn 125 Ralph T.H. Griffith (Translator); for
  11. David Kinsley (2005), Hindu Goddesses: Vision of the Divine Feminine in the Hindu Religious Traditions, University of California Press, ISBN 978-8120803947, pages 6-17, 55-64
  12. David Kinsley (2005), Hindu Goddesses: Vision of the Divine Feminine in the Hindu Religious Traditions, University of California Press, ISBN 978-8120803947, pages 18, 19
  13. Christopher John Fuller (2004), The Camphor Flame: Popular Hinduism and Society in India, Princeton University Press, ISBN 978-0691120485, page 41
  14. Karel Werner (1977), Yoga and the Ṛg Veda: An Interpretation of the Keśin Hymn (RV 10, 136), Religious Studies, Vol. 13, No. 3, page 289; Quote: The Yogis of Vedic times left little evidence of their existence, practices and achievements. And such evidence as has survived in the Vedas is scanty and indirect. Nevertheless, the existence of accomplished Yogis in Vedic times cannot be doubted."
  15. Swami Vivekananda public lecture, Vedanta Voice of Freedom, ISBN 0-916356-63-9, p.43
  16. Daughters of the Goddess: Women Saints of India, by Linda Johnsen PhD., Yes Int'l Publishers, 1994, pg. 9.
  17. The Shambhala Encyclopedia of YOGA, p.244
  18. White 2012, পৃ. 8-9।
  19. David N. Lorenzen and Adrián Muñoz (2012), Yogi Heroes and Poets: Histories and Legends of the Naths, SUNY Press, ISBN 978-1438438900, pages x-xi
  20. David Lorenzen (2004), Religious Movements in South Asia, 600-1800, Oxford University Press, ISBN 978-0195664485, pages 310-311
  21. David N. Lorenzen and Adrián Muñoz (2012), Yogi Heroes and Poets: Histories and Legends of the Naths, SUNY Press, ISBN 978-1438438900, pages 24-25
  22. Monier-Williams, Sanskrit Dictionary (1899).
  23. The Shambhala Encyclopedia of Yoga, Georg Feurstein Ph.D., Shambhala Publications, Boston 2000, p.350
  24. White 2012, পৃ. 73-75, 132-141।
  25. "Patel, C.B. Monumental Efflorescence of Ranipur-Jharial in Orissa Review, August 2004, pp.41-44" (পিডিএফ)। সেপ্টেম্বর ৩০, ২০০৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ১, ২০১৮ 
  26. "Jabalpur district official website – about us"। আগস্ট ১৪, ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ১, ২০১৮ 
  27. "Chausath Yogini Temple - Site Plan, Photos and Inventory of Goddesses"। এপ্রিল ১৭, ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ১, ২০১৮ 
  28. "Chaudhury, Janmejay. Origin of Tantricism and Sixty-Four Yogini Cult in Orissa in Orissa Review, October, 2004" (পিডিএফ)। মে ২৫, ২০১০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ২৯, ২০১৮ 
  29. Dehejia, Vidya, Yogini Cult and Temples
  30. Wangu p.114

গ্রন্থপঞ্জী

  • Brown, Cheever Mackenzie (১৯৯৮)। The Devi Gita: The Song of the Goddess: A Translation, Annotation, and Commentary। SUNY Press। আইএসবিএন 978-0-7914-3939-5 
  • Chopra, Shambhavi. Yogini: The Enlightened Woman, Wisdom Tree Press, India, 2006
  • Dehejia, Vidya. Yogini Cult and Temples: A Tantric Tradition, National Museum, New Delhi, 1986.
  • Feuerstein, Georg. The Shambhala Encyclopedia of Yoga, Shambhala Publications, Boston, 2000
  • Gates, Janice. Yogini: The Power of Women in Yoga, Mandala Publishing, 2006
  • Gupta, Roxanne Kamayani. A Yoga of Indian Classical Dance: The Yogini's Mirror, Inner Traditions, U.S., 2000
  • Johnsen, Linda. "Daughters of the Goddess: The Women Saints of India", Yes Int'l Publishing, U.S., 1994
  • McDaniel, June (৯ জুলাই ২০০৪)। Offering Flowers, Feeding Skulls : Popular Goddess Worship in West Bengal: Popular Goddess Worship in West Bengal। Oxford University Press, USA। আইএসবিএন 978-0-19-534713-5 
  • Parvati Baker, Jeannine. Prenatal Yoga & Natural Childbirth, North Atlantic Books, 3rd edition, 2001
  • Muktananda, Swami. Nawa Yogini Tantra: Yoga for Women, Yoga Publications Trust, Bihar, 2004
  • Shaw, Miranda. Passionate Enlightenment: Women in Tantric Buddhism, Princeton University Press, 1994
  • Shaw, Miranda. Buddhist Goddesses of India, Princeton University Press, 2006.
  • Tiwari, Bri. Maya. The Path of Practice: A Woman's Book of Ayurvedic Healing, Motilal Banarsidass Press, 2002
  • Wangu, Madhu Bazaz. Images of Indian Goddesses, Abhinav Publications, New Delhi, 2003
  • White, David Gordon (২০১২), The Alchemical Body: Siddha Traditions in Medieval India, University of Chicago Press 

বহিঃসংযোগ