ভারতে রাজভাতা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
হটক্যাটের মাধ্যমে বিষয়শ্রেণী:ইন্দিরা গান্ধী প্রশাসন যোগ
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[ভারত|ভারতে]] '''রাজভাতা''' হ'ল একপ্রকারের অর্থ প্রদান করা। যা দেশীয় [[দেশীয় রাজ্য|রাজপরিবারের]] শাসক পরিবারগুলিকে ভারতের স্বাধীনতার পরে এবং পরবর্তীকালে ১৯৪৯ সালে [[ভারতের রাজনৈতিক একত্রীকরণ|তাদের রাজ্যগুলিতে]] একত্রীকরনের চুক্তির অংশ হিসাবে তাদের এই অর্থ প্রদান করা হয়েছিল। যার ফলে তারা সমস্ত ক্ষমতার অধিকার হারিয়েছিল।
[[ভারত|ভারতে]] '''রাজভাতা''' হ'ল একপ্রকারের অর্থ প্রদান করা। যা দেশীয় [[দেশীয় রাজ্য|রাজপরিবারের]] শাসক পরিবারগুলিকে ভারতের স্বাধীনতার পরে এবং পরবর্তীকালে ১৯৪৯ সালে [[ভারতের রাজনৈতিক একত্রীকরণ|তাদের রাজ্যগুলিতে]] একত্রীকরনের চুক্তির অংশ হিসাবে তাদের এই অর্থ প্রদান করা হয়েছিল। যার ফলে তারা সমস্ত ক্ষমতার অধিকার হারিয়েছিল।


১৯৭১ সালে ২৬ তম সংশোধনী না হওয়া পর্যন্ত রাজপরিবারকে প্রিভি পার্স প্রদান করা অব্যাহত ছিল। যার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক তাদের সমস্ত সুযোগ-সুবিধাগুলি বন্ধ ছিল, দু'বছরের আইনী লড়াইয়ের পরে প্রয়োগ করা হয়েছিল। <ref name="Twenty Sixth Amendment">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://indiacode.nic.in/coiweb/amend/amend26.htm|শিরোনাম=Twenty Sixth Amendment|তারিখ=28 December 1971|প্রকাশক=Indiacode.nic.in|সংগ্রহের-তারিখ=19 November 2011}}</ref> তবে কিছু পৃথক ক্ষেত্রে ১৯৪৪ সালের আগে ক্ষমতাসীনদের অধিকার থাকা ব্যক্তিদের আজীবন রাজভাতা অব্যাহত ছিল। {{Efn|এইচএইচ মহারাণী [[শেঠু লক্ষ্মী বাই]]র ভাতা ১৯৮৫ সালে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দীর্ঘকালীন আইনি লড়াইয়ের পর পুনর্বহাল করা হয়।<ref>{{cite book |title=At the turn of the Tide, the Life and Times of Maharani Sethu Lakshmi Bayi, the Last Queen of Travancore |author=Dr. Lakshmi Raghunandan}}</ref>}}
১৯৭১ সালে ২৬ তম সংশোধনী না হওয়া পর্যন্ত রাজপরিবারকে প্রিভি পার্স প্রদান করা অব্যাহত ছিল। যার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক তাদের সমস্ত সুযোগ-সুবিধাগুলি বন্ধ ছিল, দু'বছরের আইনি লড়াইয়ের পরে প্রয়োগ করা হয়েছিল। <ref name="Twenty Sixth Amendment">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://indiacode.nic.in/coiweb/amend/amend26.htm|শিরোনাম=Twenty Sixth Amendment|তারিখ=28 December 1971|প্রকাশক=Indiacode.nic.in|সংগ্রহের-তারিখ=19 November 2011}}</ref> তবে কিছু পৃথক ক্ষেত্রে ১৯৪৪ সালের আগে ক্ষমতাসীনদের অধিকার থাকা ব্যক্তিদের আজীবন রাজভাতা অব্যাহত ছিল। {{Efn|এইচএইচ মহারাণী [[শেঠু লক্ষ্মী বাই]]র ভাতা ১৯৮৫ সালে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দীর্ঘকালীন আইনি লড়াইয়ের পর পুনর্বহাল করা হয়।<ref>{{বই উদ্ধৃতি |শিরোনাম=At the turn of the Tide, the Life and Times of Maharani Sethu Lakshmi Bayi, the Last Queen of Travancore |লেখক=Dr. Lakshmi Raghunandan}}</ref>}}


== ইতিহাস ==
== ইতিহাস ==
ব্রিটিশ রাজ যখন [[ব্রিটিশ ভারতের প্রেসিডেন্সি ও প্রদেশসমূহ|ব্রিটিশ ভারতকে]] [[ভারত বিভাজন|বিভক্ত করেছিল]] এবং [[ভারত অধিরাজ্য|ভারত]] ও [[পাকিস্তান অধিরাজ্য|পাকিস্তানের]] স্বাধীনতা দেয়, তখন উপমহাদেশের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি [[দেশীয় রাজ্য]]ের আওতাভুক্ত ছিল। যাদের শাসনকর্তারা [[ব্রিটিশ ভারত|ভারতীয় সাম্রাজ্যের]] অভ্যন্তরে অবস্থান ও অবস্থাভেদে ভিন্ন ছিল। ১৯৪৭ সালে ৫৬০ টির অধিক ভারতে এ ধরনের দেশীয় রাজ্য ছিল ব্রিটিশের। যদিও সেখানে [[সার্বভৌমত্ব]] বজায় ছিল। ১৯৪৭ সালে ৫৫৫ টি [[দেশীয় রাজ্য|রাজ্যগুলি]] প্রাক-স্বাধীন ভারতের ৪৮% অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত ছিল এবং জনসংখ্যার ২৮% ছিল। <ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.thehindu.com/todays-paper/tp-opinion/who-betrayed-sardar-patel/article5366083.ece|শিরোনাম=Who betrayed Sardar Patel?}}</ref> তাদের সাথে সম্পর্কগুলি অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি এবং অন্যান্য অপ্রত্যক্ষ নিয়ম দ্বারা চুক্তিবদ্ধ ছিল । বন্দুকের স্যালুট দেওয়ার একটি প্রোটোকলারি সিস্টেমের মাধ্যমে প্রায় ১২০ টি বড় রাজ্যের (পাকিস্তান অন্তর্ভুক্ত) র‌্যাঙ্কিংও নির্ধারিত হতো। যদিও বেশিরভাগ রাজ্যগুলি ছোট / ক্ষুদ্র 'সালামবিহীন রাষ্ট্র' ছিল। [[ভারতীয় স্বাধীনতা অধিনিয়ম ১৯৪৭]] অনুযায়ী রাণী দেশীয় রাজ্য গুলির শাসকদের মুক্তমনে ভারত বা পাকিস্তানে যোগ দেওয়া বা নিজেদের স্বাধীন থাকা, যে কোন একটি বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। <ref>{{বই উদ্ধৃতি|শিরোনাম=State, Nation and Ethnicity in Contemporary South Asia|শেষাংশ=[[Ishtiaq Ahmed (political scientist)|Ishtiaq Ahmed]]|বছর=1998|পাতা=99}}</ref> বেশিরভাগই ভারত সরকারের উপর এতটাই নির্ভরশীল ছিলেন যে তাদের এই অংশগ্রহণের বিষয়ে সুযোগ ছিল না । স্বাধীনতার প্রাক্কালে বেশিরভাগ অমুসলিম রাষ্ট্র [[ভারত|ভারতে]] অধিগ্রহন [[ভারত|চুুুক্তিতে]] স্বাক্ষর করেছিল। কেবলমাত্র একটি রাজ্য পাকিস্তানে অংশগ্রহনের সিদ্ধান্ত নেয় [[পাকিস্তান|।]] ব্রিটিশরা ভারত ত্যাগ করার পরে মাত্র কয়েকটি রাজ্য সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। [[বল্লভভাই পটেল|বল্লভভাই প্যাটেল]] এবং ভিপি মেননের কূটনীতির কারনে ত্রিবাঙ্কুর, [[ভোপাল রাজ্য|ভোপাল]] এবং যোধপুর ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ সালের আগেই তারা ভারতে অধিগ্রহনের চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। স্বাধীনতার পরেও তিনটি রাজ্য যথা [[জম্মু ও কাশ্মীর (দেশীয় রাজ্য)|জম্মু-কাশ্মীর]], [[জুনাগড় রাজ্য|জুনাগড়]] এবং হায়দ্রাবাদ পরে সংযুক্ত হয়েছিল।
ব্রিটিশ রাজ যখন [[ব্রিটিশ ভারতের প্রেসিডেন্সি ও প্রদেশসমূহ|ব্রিটিশ ভারতকে]] [[ভারত বিভাজন|বিভক্ত করেছিল]] এবং [[ভারত অধিরাজ্য|ভারত]] ও [[পাকিস্তান অধিরাজ্য|পাকিস্তানের]] স্বাধীনতা দেয়, তখন উপমহাদেশের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি [[দেশীয় রাজ্য]]ের আওতাভুক্ত ছিল। যাদের শাসনকর্তারা [[ব্রিটিশ ভারত|ভারতীয় সাম্রাজ্যের]] অভ্যন্তরে অবস্থান ও অবস্থাভেদে ভিন্ন ছিল। ১৯৪৭ সালে ৫৬০ টির অধিক ভারতে এ ধরনের দেশীয় রাজ্য ছিল ব্রিটিশের। যদিও সেখানে [[সার্বভৌমত্ব]] বজায় ছিল। ১৯৪৭ সালে ৫৫৫ টি [[দেশীয় রাজ্য|রাজ্যগুলি]] প্রাক-স্বাধীন ভারতের ৪৮% অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত ছিল এবং জনসংখ্যার ২৮% ছিল। <ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.thehindu.com/todays-paper/tp-opinion/who-betrayed-sardar-patel/article5366083.ece|শিরোনাম=Who betrayed Sardar Patel?}}</ref> তাদের সাথে সম্পর্কগুলি অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি এবং অন্যান্য অপ্রত্যক্ষ নিয়ম দ্বারা চুক্তিবদ্ধ ছিল । বন্দুকের স্যালুট দেওয়ার একটি প্রোটোকলারি সিস্টেমের মাধ্যমে প্রায় ১২০ টি বড় রাজ্যের (পাকিস্তান অন্তর্ভুক্ত) র‌্যাঙ্কিংও নির্ধারিত হতো। যদিও বেশিরভাগ রাজ্যগুলি ছোট / ক্ষুদ্র 'সালামবিহীন রাষ্ট্র' ছিল। [[ভারতীয় স্বাধীনতা অধিনিয়ম ১৯৪৭]] অনুযায়ী রাণী দেশীয় রাজ্য গুলির শাসকদের মুক্তমনে ভারত বা পাকিস্তানে যোগ দেওয়া বা নিজেদের স্বাধীন থাকা, যে কোন একটি বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। <ref>{{বই উদ্ধৃতি|শিরোনাম=State, Nation and Ethnicity in Contemporary South Asia|শেষাংশ=[[Ishtiaq Ahmed (political scientist)|Ishtiaq Ahmed]]|বছর=1998|পাতা=99}}</ref> বেশিরভাগই ভারত সরকারের উপর এতটাই নির্ভরশীল ছিলেন যে তাদের এই অংশগ্রহণের বিষয়ে সুযোগ ছিল না । স্বাধীনতার প্রাক্কালে বেশিরভাগ অমুসলিম রাষ্ট্র [[ভারত|ভারতে]] অধিগ্রহণ [[ভারত|চুুুক্তিতে]] স্বাক্ষর করেছিল। কেবলমাত্র একটি রাজ্য পাকিস্তানে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় [[পাকিস্তান|।]] ব্রিটিশরা ভারত ত্যাগ করার পরে মাত্র কয়েকটি রাজ্য সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। [[বল্লভভাই পটেল|বল্লভভাই প্যাটেল]] এবং ভিপি মেননের কূটনীতির কারনে ত্রিবাঙ্কুর, [[ভোপাল রাজ্য|ভোপাল]] এবং যোধপুর ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ সালের আগেই তারা ভারতে অধিগ্রহণের চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। স্বাধীনতার পরেও তিনটি রাজ্য যথা [[জম্মু ও কাশ্মীর (দেশীয় রাজ্য)|জম্মু-কাশ্মীর]], [[জুনাগড় রাজ্য|জুনাগড়]] এবং হায়দ্রাবাদ পরে সংযুক্ত হয়েছিল।


রাজ্যগুলির প্রবেশের চুক্তিতে কেবলমাত্র [[ভারত|ভারতের]] প্রতিরক্ষা, যোগাযোগ এবং বৈদেশিক সম্পর্কের জন্য রাজ্যগুলির প্রয়োজন ছিল। এই রাজ্যগুলিতে গণতন্ত্র চালু ছিল এবং ১৯৪৯ সালে নতুন রাজ্য গঠনের জন্য এগুলি পুরোপুরি [[ভারত|ভারতে]] মিশে গিয়েছিল। এভাবে ত্রিবাঙ্কুর এবং কোচিন ভারতে একীভূত হয়ে [[ত্রিবাঙ্কুর-কোচিন রাজ্য|থিরু-কোচি]] নতুন রাজ্য গঠন করেন। যদিও ১৯৪৯ সালে রাজপরিবারগুলিকে তাদের রাজভাতা হিসাবে প্রচুর পরিমাণে অর্থ বহন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ১৯৪৯ সালে রাজ্যগুলির রাজস্ব পুরোপুরি [[ভারত সরকার]] গ্রহণ করেছিল। এটি ভারত সরকারই শাসক এবং তাদের পরিবারকে প্রদান করেছিল। রাজ্য গুলিকে রাজভাতা দেওয়া হবে কী না তা অনেকগুলি বৈশিষ্ট্য দ্বারা নির্ধারিত হত। তাদের মধ্যে অন্যতম হল রাজ্যের রাজস্ব, ব্রিটিশ রাজের সময় তা স্যালুট রাজ্য ছিল কি না, রাজ্যের প্রাচীনত্ব ইত্যাদি। <ref>{{বই উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.202181|শিরোনাম=Maharaja|শেষাংশ=Jarmani Dass}}</ref> দেওয়ান জারমানি দাস [[কাপুরথালা, পাঞ্জাব|কাপুরথালা]] বলেছেন:
রাজ্যগুলির প্রবেশের চুক্তিতে কেবলমাত্র [[ভারত|ভারতের]] প্রতিরক্ষা, যোগাযোগ এবং বৈদেশিক সম্পর্কের জন্য রাজ্যগুলির প্রয়োজন ছিল। এই রাজ্যগুলিতে গণতন্ত্র চালু ছিল এবং ১৯৪৯ সালে নতুন রাজ্য গঠনের জন্য এগুলি পুরোপুরি [[ভারত|ভারতে]] মিশে গিয়েছিল। এভাবে ত্রিবাঙ্কুর এবং কোচিন ভারতে একীভূত হয়ে [[ত্রিবাঙ্কুর-কোচিন রাজ্য|থিরু-কোচি]] নতুন রাজ্য গঠন করেন। যদিও ১৯৪৯ সালে রাজপরিবারগুলিকে তাদের রাজভাতা হিসাবে প্রচুর পরিমাণে অর্থ বহন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ১৯৪৯ সালে রাজ্যগুলির রাজস্ব পুরোপুরি [[ভারত সরকার]] গ্রহণ করেছিল। এটি ভারত সরকারই শাসক এবং তাদের পরিবারকে প্রদান করেছিল। রাজ্য গুলিকে রাজভাতা দেওয়া হবে কী না তা অনেকগুলি বৈশিষ্ট্য দ্বারা নির্ধারিত হত। তাদের মধ্যে অন্যতম হল রাজ্যের রাজস্ব, ব্রিটিশ রাজের সময় তা স্যালুট রাজ্য ছিল কি না, রাজ্যের প্রাচীনত্ব ইত্যাদি। <ref>{{বই উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.202181|শিরোনাম=Maharaja|শেষাংশ=Jarmani Dass}}</ref> দেওয়ান জারমানি দাস [[কাপুরথালা, পাঞ্জাব|কাপুরথালা]] বলেছেন:
{{cquote|"''এইভাবে শাসকরা তাদের সার্বভৌমত্বকে আত্মসমর্পণ করে এবং যথাযথভাবে তাদের রাজভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা ভোগ করত।''"}}
{{cquote|"''এইভাবে শাসকরা তাদের সার্বভৌমত্বকে আত্মসমর্পণ করে এবং যথাযথভাবে তাদের রাজভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা ভোগ করত।''"}}


১৯৪৯ সালে ভারতীয় সংবিধানের ২৯১ অনুচ্ছেদে সংজ্ঞায়িত আছে -প্রিভি পার্স প্রাক্তন রাজপুত্র শাসনকর্তা এবং তাদের উত্তরসূরিদের জন্য গ্যারান্টিযুক্ত নির্ধারিত, করমুক্ত হবে। এই রাশির উদ্দেশ্য ছিল পূর্ববর্তী শাসক পরিবারগুলির সমস্ত ব্যয়, যেমন ধর্মীয় ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের জন্য ব্যয় করা হয়েছিল, এবং এই সমস্ত খরচ করা হবে ভারতের কনসোলিডেটেড ফান্ড অফ ইন্ডিয়া থেকে। <ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://pib.nic.in/archive/docs/DVD_41/ACC%20NO%20823-BR/HOM-1961-10-31-4901.pdf|শিরোনাম=Privy Purses to Rulers - Reduction Effected in Certain Cases|ওয়েবসাইট=Press Information Bureau, Government of India - Archive}}</ref> স্বাধীনতার পরে ভারত স্টার্লিং এরিয়ার সদস্য হিসাবে এবং ভারতীয় রুপি ব্রিটিশ [[পাউন্ড স্টার্লিং|পাউন্ড স্টার্লিংয়ের হাতে পড়ে]] যাওয়ার সাথে সাথে প্রিভি-পার্স এর পে খরচ সরকারী তহবিলের এক উল্লেখযোগ্য ব্যয় বহন করে।
১৯৪৯ সালে ভারতীয় সংবিধানের ২৯১ অনুচ্ছেদে সংজ্ঞায়িত আছে -প্রিভি পার্স প্রাক্তন রাজপুত্র শাসনকর্তা এবং তাদের উত্তরসূরিদের জন্য গ্যারান্টিযুক্ত নির্ধারিত, করমুক্ত হবে। এই রাশির উদ্দেশ্য ছিল পূর্ববর্তী শাসক পরিবারগুলির সমস্ত ব্যয়, যেমন ধর্মীয় ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের জন্য ব্যয় করা হয়েছিল, এবং এই সমস্ত খরচ করা হবে ভারতের কনসোলিডেটেড ফান্ড অফ ইন্ডিয়া থেকে। <ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://pib.nic.in/archive/docs/DVD_41/ACC%20NO%20823-BR/HOM-1961-10-31-4901.pdf|শিরোনাম=Privy Purses to Rulers - Reduction Effected in Certain Cases|ওয়েবসাইট=Press Information Bureau, Government of India - Archive}}</ref> স্বাধীনতার পরে ভারত স্টার্লিং এরিয়ার সদস্য হিসাবে এবং ভারতীয় রুপি ব্রিটিশ [[পাউন্ড স্টার্লিং|পাউন্ড স্টার্লিংয়ের হাতে পড়ে]] যাওয়ার সাথে সাথে প্রিভি-পার্স এর পে খরচ সরকারী তহবিলের এক উল্লেখযোগ্য ব্যয় বহন করে।
১৬ নং লাইন: ১৫ নং লাইন:


== বিলোপ ==
== বিলোপ ==
১৯৭০ সালে এই রাজভাতা বিলুপ্তি এবং উপাধিগুলির সরকারী স্বীকৃতির জন্য সংসদে প্রস্তাব আনা হয়। এই প্রস্তাব [[লোকসভা|লোকসভায়]] পাস হয়, তবে [[রাজ্যসভা|রাজ্যসভায়]] প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে একটি ভোটের জন্য ব্যর্থ হয়। পক্ষে ভোটগ্রহণ ছিল ১৪৯ টি এবং বিপক্ষে ভোটগ্রহণ ছিল ৭৫ টি। <ref name="H. H. Maharajadhiraja Madhav Rao v Union Of India on 15 December 1970">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://indiankanoon.org/doc/660275/|শিরোনাম=''H. H. Maharajadhiraja Madhav Rao vs Union of India'' on 15 December 1970|প্রকাশক=Indian Kanoon|পাতা=See para 44|সংগ্রহের-তারিখ=16 October 2012|উক্তি=১৯৭০ সালের ২ সেপ্টেম্বর লোকসভায় এই বিলের উপর ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এর পক্ষে ৩৩২টি ভোট এবং এর বিপরীতে ১৫৪টি ভোট পড়েছিল। পরে এটি রাজ্যসভায় পাঠানো হয়, ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭০ সালে ভোটাভুটিতে পক্ষে ১৪৯টি ভোট ও বিপক্ষে ৭৫টি ভোট পড়ে। রাজ্যসভায় দুই-তৃতীয়াংশের চেয়ে কম সংখ্যক সদস্য উপস্থিত থাকায় ও ভোট না পাওয়ায় এটি প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়।}}</ref>
১৯৭০ সালে এই রাজভাতা বিলুপ্তি এবং উপাধিগুলির সরকারী স্বীকৃতির জন্য সংসদে প্রস্তাব আনা হয়। এই প্রস্তাব [[লোকসভা|লোকসভায়]] পাস হয়, তবে [[রাজ্যসভা|রাজ্যসভায়]] প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে একটি ভোটের জন্য ব্যর্থ হয়। পক্ষে ভোটগ্রহণ ছিল ১৪৯ টি এবং বিপক্ষে ভোটগ্রহণ ছিল ৭৫ টি। <ref name="H. H. Maharajadhiraja Madhav Rao v Union Of India on 15 December 1970">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://indiankanoon.org/doc/660275/|শিরোনাম=''H. H. Maharajadhiraja Madhav Rao vs Union of India'' on 15 December 1970|প্রকাশক=Indian Kanoon|পাতা=See para 44|সংগ্রহের-তারিখ=16 October 2012|উক্তি=১৯৭০ সালের ২ সেপ্টেম্বর লোকসভায় এই বিলের উপর ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এর পক্ষে ৩৩২টি ভোট এবং এর বিপরীতে ১৫৪টি ভোট পড়েছিল। পরে এটি রাজ্যসভায় পাঠানো হয়, ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭০ সালে ভোটাভুটিতে পক্ষে ১৪৯টি ভোট ও বিপক্ষে ৭৫টি ভোট পড়ে। রাজ্যসভায় দুই-তৃতীয়াংশের চেয়ে কম সংখ্যক সদস্য উপস্থিত থাকায় ও ভোট না পাওয়ায় এটি প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়।}}</ref>


৬ ই সেপ্টেম্বর ১৯৭০ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রতিটি দেশীয় রাজার শাসকদের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত নির্দেশনামা পাস করেন। রাষ্ট্রপতির নিজস্ব ক্ষমতাবলে সংবিধানের ৩৬৬(২২) নং ধারা প্রয়োগের মাধ্যমে সেইদিন থেকে সমস্ত দেশীয় রাজার শাসকদের স্বীকৃতি দেওয়া বন্ধ করে দেন। এর ফলে শাসকদের জন্য রাজভাতা ও প্রাপ্ত সমস্ত সুযোগ -সুবিধা গুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ৩২ নং ধারায় তাদের তারা রিট আবেদন করেন সুপ্রিমকোর্টে। সুপ্রিম কোর্ট শাসকদের পক্ষে রায় দেয়। <ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://indiankanoon.org/doc/660275/|শিরোনাম=''H. H. Maharajadhiraja Madhav Rao ... vs Union of India'' on 15 December 1970|ওয়েবসাইট=indiankanoon.org|সংগ্রহের-তারিখ=2019-03-04}}</ref>
৬ ই সেপ্টেম্বর ১৯৭০ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রতিটি দেশীয় রাজার শাসকদের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত নির্দেশনামা পাস করেন। রাষ্ট্রপতির নিজস্ব ক্ষমতাবলে সংবিধানের ৩৬৬(২২) নং ধারা প্রয়োগের মাধ্যমে সেইদিন থেকে সমস্ত দেশীয় রাজার শাসকদের স্বীকৃতি দেওয়া বন্ধ করে দেন। এর ফলে শাসকদের জন্য রাজভাতা ও প্রাপ্ত সমস্ত সুযোগ -সুবিধা গুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ৩২ নং ধারায় তাদের তারা রিট আবেদন করেন সুপ্রিমকোর্টে। সুপ্রিম কোর্ট শাসকদের পক্ষে রায় দেয়। <ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://indiankanoon.org/doc/660275/|শিরোনাম=''H. H. Maharajadhiraja Madhav Rao ... vs Union of India'' on 15 December 1970|ওয়েবসাইট=indiankanoon.org|সংগ্রহের-তারিখ=2019-03-04}}</ref>


১৯৭১ সালে এটি আবার [[ভারতীয় সংসদ|সংসদে]] প্রস্তাব করা হয়েছিল এবং ১৯৭১ সালে [[ভারতের সংবিধান সংশোধনের তালিকা|ভারতের সংবিধানের ২৬ তম সংশোধনী]] হিসাবে এটি সফলভাবে পাস হয়েছিল। <ref name="Twenty Sixth Amendment">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://indiacode.nic.in/coiweb/amend/amend26.htm|শিরোনাম=Twenty Sixth Amendment|তারিখ=28 December 1971|প্রকাশক=Indiacode.nic.in|সংগ্রহের-তারিখ=19 November 2011}}</ref> তারপরে [[ভারতের প্রধানমন্ত্রী|প্রধানমন্ত্রী]] [[ইন্দিরা গান্ধী]] সকল নাগরিকের সমান অধিকার এবং সরকারের রাজস্ব ঘাটতি হ্রাস করার প্রয়োজনীয়তা এই দুটিকে যুক্তি দেখিয়ে তিনি বিলুপ্তির পক্ষ নিয়েছিলেন।
১৯৭১ সালে এটি আবার [[ভারতীয় সংসদ|সংসদে]] প্রস্তাব করা হয়েছিল এবং ১৯৭১ সালে [[ভারতের সংবিধান সংশোধনের তালিকা|ভারতের সংবিধানের ২৬ তম সংশোধনী]] হিসাবে এটি সফলভাবে পাস হয়েছিল। <ref name="Twenty Sixth Amendment"/> তারপরে [[ভারতের প্রধানমন্ত্রী|প্রধানমন্ত্রী]] [[ইন্দিরা গান্ধী]] সকল নাগরিকের সমান অধিকার এবং সরকারের রাজস্ব ঘাটতি হ্রাস করার প্রয়োজনীয়তা এই দুটিকে যুক্তি দেখিয়ে তিনি বিলুপ্তির পক্ষ নিয়েছিলেন।


সংশোধনী কার্যকরভাবে বিদ্যমান শিরোনামগুলি স্বীকৃত করেছে ;-<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://archive.org/stream/E13841971009161722/E-1384-1971-0091-61722_djvu.txt|শিরোনাম=The Constitution of India (26th Amendment) Act 1971|তারিখ=December 29, 1971|ওয়েবসাইট=The Gazette of India}}</ref>
সংশোধনী কার্যকরভাবে বিদ্যমান শিরোনামগুলি স্বীকৃত করেছে ;-<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://archive.org/stream/E13841971009161722/E-1384-1971-0091-61722_djvu.txt|শিরোনাম=The Constitution of India (26th Amendment) Act 1971|তারিখ=December 29, 1971|ওয়েবসাইট=The Gazette of India}}</ref>


== পরিণতি ==
== পরিণতি ==
রাজভাতাের অবলুপ্তি অবশেষে প্রাক্তন শাসকদের সমস্ত অধিকার এবং বিশেষ মর্যাদাকে খর্ব করে দিয়েছিল। এইভাবে তাদেরকে অন্য ভারতীয়দের মতো সমান সাধারণ নাগরিক হিসাবে রূপান্তরিত করেছিল। তাদের প্রাক্তন শাসক পদবি এবং বিশেষ মর্যাদা ইত্যাদির কোনও সরকারী স্বীকৃতি নেই।
রাজভাতাের অবলুপ্তি অবশেষে প্রাক্তন শাসকদের সমস্ত অধিকার এবং বিশেষ মর্যাদাকে খর্ব করে দিয়েছিল। এইভাবে তাদেরকে অন্য ভারতীয়দের মতো সমান সাধারণ নাগরিক হিসাবে রূপান্তরিত করেছিল। তাদের প্রাক্তন শাসক পদবি এবং বিশেষ মর্যাদা ইত্যাদির কোনও সরকারী স্বীকৃতি নেই।


অনেক প্রাক্তন রয়্যালটি প্রাথমিকভাবে ১৯৭১ সালের [[লোকসভা|লোকসভা নির্বাচনে]] আসন প্রতিদ্বন্দ্বিতা,ও প্রচারের মাধ্যমে রাজভাতা বিলুপ্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছিল। তাদের মধ্যে অনেকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। এর মধ্যে হলেন [[গুরুগ্রাম|গুরগাঁও]] থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন [[পতৌদি রাজ্য|পতৌদির]] শেষ ও প্রাক্তন নবাব [[মনসুর আলি খান পতৌদি|মনসুর আলী খান পাতৌদি]]। মনসুর বিশাল হরিয়ানা পার্টির প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তবে দ্বিমুখী প্রতিযোগিতায় মাত্র ৫% ভোট পেয়েছিলেন। <ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.hinduonnet.com/2001/10/14/stories/1314128g.htm|শিরোনাম=Cricketers in Politics|প্রকাশক=|আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20090609084807/http://www.hinduonnet.com/2001/10/14/stories/1314128g.htm|আর্কাইভের-তারিখ=9 June 2009|ইউআরএল-অবস্থা=dead|সংগ্রহের-তারিখ=23 March 2009}}</ref> বিজয়া রাজে সিন্ধিয়া এবং তার পুত্র মাধব রাও সিন্ধিয়া অবশ্য ১৯৭১ সালের লোকসভা ভোটে জিতেছিলেন।
অনেক প্রাক্তন রয়্যালটি প্রাথমিকভাবে ১৯৭১ সালের [[লোকসভা|লোকসভা নির্বাচনে]] আসন প্রতিদ্বন্দ্বিতা,ও প্রচারের মাধ্যমে রাজভাতা বিলুপ্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছিল। তাদের মধ্যে অনেকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। এর মধ্যে হলেন [[গুরুগ্রাম|গুরগাঁও]] থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন [[পতৌদি রাজ্য|পতৌদির]] শেষ ও প্রাক্তন নবাব [[মনসুর আলি খান পতৌদি|মনসুর আলী খান পাতৌদি]]। মনসুর বিশাল হরিয়ানা পার্টির প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তবে দ্বিমুখী প্রতিযোগিতায় মাত্র ৫% ভোট পেয়েছিলেন। <ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.hinduonnet.com/2001/10/14/stories/1314128g.htm|শিরোনাম=Cricketers in Politics|প্রকাশক=|আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20090609084807/http://www.hinduonnet.com/2001/10/14/stories/1314128g.htm|আর্কাইভের-তারিখ=9 June 2009|ইউআরএল-অবস্থা=dead|সংগ্রহের-তারিখ=23 March 2009}}</ref> বিজয়া রাজে সিন্ধিয়া এবং তার পুত্র মাধব রাও সিন্ধিয়া অবশ্য ১৯৭১ সালের লোকসভা ভোটে জিতেছিলেন।


== আরো দেখুন ==
== আরো দেখুন ==
৩৫ নং লাইন: ৩৪ নং লাইন:
* শত্রু সম্পত্তি আইন, ১৯68৮, ভারতের শত্রু সম্পত্তির জন্য কাস্টোডিয়ানের ভিত্তি
* শত্রু সম্পত্তি আইন, ১৯68৮, ভারতের শত্রু সম্পত্তির জন্য কাস্টোডিয়ানের ভিত্তি
* মুসলিম সম্পত্তি হিসাবে ভারতে সেন্ট্রাল ওয়াকফ কাউন্সিল
* মুসলিম সম্পত্তি হিসাবে ভারতে সেন্ট্রাল ওয়াকফ কাউন্সিল
* পাকিস্তানে হিন্দু ও শিখের সম্পত্তি সম্পর্কিত এভ্যাকুই ট্রাস্ট সম্পত্তি বোর্ড
* পাকিস্তানে হিন্দু ও শিখের সম্পত্তি সম্পর্কিত এভ্যাকুই ট্রাস্ট সম্পত্তি বোর্ড


== মন্তব্য ==
== মন্তব্য ==

১৪:৩০, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

ভারতে রাজভাতা হ'ল একপ্রকারের অর্থ প্রদান করা। যা দেশীয় রাজপরিবারের শাসক পরিবারগুলিকে ভারতের স্বাধীনতার পরে এবং পরবর্তীকালে ১৯৪৯ সালে তাদের রাজ্যগুলিতে একত্রীকরনের চুক্তির অংশ হিসাবে তাদের এই অর্থ প্রদান করা হয়েছিল। যার ফলে তারা সমস্ত ক্ষমতার অধিকার হারিয়েছিল।

১৯৭১ সালে ২৬ তম সংশোধনী না হওয়া পর্যন্ত রাজপরিবারকে প্রিভি পার্স প্রদান করা অব্যাহত ছিল। যার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক তাদের সমস্ত সুযোগ-সুবিধাগুলি বন্ধ ছিল, দু'বছরের আইনি লড়াইয়ের পরে প্রয়োগ করা হয়েছিল। [১] তবে কিছু পৃথক ক্ষেত্রে ১৯৪৪ সালের আগে ক্ষমতাসীনদের অধিকার থাকা ব্যক্তিদের আজীবন রাজভাতা অব্যাহত ছিল। [ক]

ইতিহাস

ব্রিটিশ রাজ যখন ব্রিটিশ ভারতকে বিভক্ত করেছিল এবং ভারতপাকিস্তানের স্বাধীনতা দেয়, তখন উপমহাদেশের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি দেশীয় রাজ্যের আওতাভুক্ত ছিল। যাদের শাসনকর্তারা ভারতীয় সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরে অবস্থান ও অবস্থাভেদে ভিন্ন ছিল। ১৯৪৭ সালে ৫৬০ টির অধিক ভারতে এ ধরনের দেশীয় রাজ্য ছিল ব্রিটিশের। যদিও সেখানে সার্বভৌমত্ব বজায় ছিল। ১৯৪৭ সালে ৫৫৫ টি রাজ্যগুলি প্রাক-স্বাধীন ভারতের ৪৮% অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত ছিল এবং জনসংখ্যার ২৮% ছিল। [৩] তাদের সাথে সম্পর্কগুলি অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি এবং অন্যান্য অপ্রত্যক্ষ নিয়ম দ্বারা চুক্তিবদ্ধ ছিল । বন্দুকের স্যালুট দেওয়ার একটি প্রোটোকলারি সিস্টেমের মাধ্যমে প্রায় ১২০ টি বড় রাজ্যের (পাকিস্তান অন্তর্ভুক্ত) র‌্যাঙ্কিংও নির্ধারিত হতো। যদিও বেশিরভাগ রাজ্যগুলি ছোট / ক্ষুদ্র 'সালামবিহীন রাষ্ট্র' ছিল। ভারতীয় স্বাধীনতা অধিনিয়ম ১৯৪৭ অনুযায়ী রাণী দেশীয় রাজ্য গুলির শাসকদের মুক্তমনে ভারত বা পাকিস্তানে যোগ দেওয়া বা নিজেদের স্বাধীন থাকা, যে কোন একটি বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। [৪] বেশিরভাগই ভারত সরকারের উপর এতটাই নির্ভরশীল ছিলেন যে তাদের এই অংশগ্রহণের বিষয়ে সুযোগ ছিল না । স্বাধীনতার প্রাক্কালে বেশিরভাগ অমুসলিম রাষ্ট্র ভারতে অধিগ্রহণ চুুুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। কেবলমাত্র একটি রাজ্য পাকিস্তানে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় ব্রিটিশরা ভারত ত্যাগ করার পরে মাত্র কয়েকটি রাজ্য সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। বল্লভভাই প্যাটেল এবং ভিপি মেননের কূটনীতির কারনে ত্রিবাঙ্কুর, ভোপাল এবং যোধপুর ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ সালের আগেই তারা ভারতে অধিগ্রহণের চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। স্বাধীনতার পরেও তিনটি রাজ্য যথা জম্মু-কাশ্মীর, জুনাগড় এবং হায়দ্রাবাদ পরে সংযুক্ত হয়েছিল।

রাজ্যগুলির প্রবেশের চুক্তিতে কেবলমাত্র ভারতের প্রতিরক্ষা, যোগাযোগ এবং বৈদেশিক সম্পর্কের জন্য রাজ্যগুলির প্রয়োজন ছিল। এই রাজ্যগুলিতে গণতন্ত্র চালু ছিল এবং ১৯৪৯ সালে নতুন রাজ্য গঠনের জন্য এগুলি পুরোপুরি ভারতে মিশে গিয়েছিল। এভাবে ত্রিবাঙ্কুর এবং কোচিন ভারতে একীভূত হয়ে থিরু-কোচি নতুন রাজ্য গঠন করেন। যদিও ১৯৪৯ সালে রাজপরিবারগুলিকে তাদের রাজভাতা হিসাবে প্রচুর পরিমাণে অর্থ বহন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ১৯৪৯ সালে রাজ্যগুলির রাজস্ব পুরোপুরি ভারত সরকার গ্রহণ করেছিল। এটি ভারত সরকারই শাসক এবং তাদের পরিবারকে প্রদান করেছিল। রাজ্য গুলিকে রাজভাতা দেওয়া হবে কী না তা অনেকগুলি বৈশিষ্ট্য দ্বারা নির্ধারিত হত। তাদের মধ্যে অন্যতম হল রাজ্যের রাজস্ব, ব্রিটিশ রাজের সময় তা স্যালুট রাজ্য ছিল কি না, রাজ্যের প্রাচীনত্ব ইত্যাদি। [৫] দেওয়ান জারমানি দাস কাপুরথালা বলেছেন:

১৯৪৯ সালে ভারতীয় সংবিধানের ২৯১ অনুচ্ছেদে সংজ্ঞায়িত আছে -প্রিভি পার্স প্রাক্তন রাজপুত্র শাসনকর্তা এবং তাদের উত্তরসূরিদের জন্য গ্যারান্টিযুক্ত নির্ধারিত, করমুক্ত হবে। এই রাশির উদ্দেশ্য ছিল পূর্ববর্তী শাসক পরিবারগুলির সমস্ত ব্যয়, যেমন ধর্মীয় ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের জন্য ব্যয় করা হয়েছিল, এবং এই সমস্ত খরচ করা হবে ভারতের কনসোলিডেটেড ফান্ড অফ ইন্ডিয়া থেকে। [৬] স্বাধীনতার পরে ভারত স্টার্লিং এরিয়ার সদস্য হিসাবে এবং ভারতীয় রুপি ব্রিটিশ পাউন্ড স্টার্লিংয়ের হাতে পড়ে যাওয়ার সাথে সাথে প্রিভি-পার্স এর পে খরচ সরকারী তহবিলের এক উল্লেখযোগ্য ব্যয় বহন করে।

প্রাপক এবং পরিমাণ

বেসরকারী পার্সগুলি বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য দ্বারা নির্ধারিত হয়েছিল। পূর্ববর্তী রাজতান্ত্রিক রাজ্যগুলির দেশীয় রাজারা সরকারকে যে পরিমাণ সামান্য ভাতা প্রদান করত তা পেয়েছিল। ৫৬৫ টি দেশীয় রাজ্যগুলির জন্য, রাজভাতাের টাকার পরিমাণ বার্ষিক ৫,০০০থেকে মিলিয়ন পর্যন্ত ছিল। মাত্র ১১ টি রাজ্য ছাড়া প্রায় ১০২ টি রাজ্যের রাজভাতার পরিমাণ ছিল ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষের মধ্যে। কেবলমাত্র ৬ টি প্রধান দেশীয় রাজ্যের ভাতার পরিমাণ ছিল ১০ লক্ষের ( ৮৮৯৮ গ্রাম সোনা ) উপর। সেগুলি হল হায়দ্রাবাদ, মহীশূর,ত্রিবাঙ্কুর, বরোদা, জয়পুর এবং পাতিয়ালা। অন্যান্য রাজ্যের জন্য তা নির্দিষ্ট ছিল। কিন্তু ১৯৬০ সালের মুদ্রাহ্রাসের জন্য এই ভাতার পরিমাণ কমাতে বাধ্য হয়। যেমন হায়দ্রাবাদ প্রথমে ৪২,৮৫,৭১৪ টাকা ভাতা পেলেও পরে তা ২০,০০,০০০ তে দাঁড়ায়। ভারত সরকার পরিবারের প্রতিটি উত্তরসূরি দিয়ে ভাতা কমিয়ে দিতে থাকে। [৭]

বিলোপ

১৯৭০ সালে এই রাজভাতা বিলুপ্তি এবং উপাধিগুলির সরকারী স্বীকৃতির জন্য সংসদে প্রস্তাব আনা হয়। এই প্রস্তাব লোকসভায় পাস হয়, তবে রাজ্যসভায় প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে একটি ভোটের জন্য ব্যর্থ হয়। পক্ষে ভোটগ্রহণ ছিল ১৪৯ টি এবং বিপক্ষে ভোটগ্রহণ ছিল ৭৫ টি। [৮]

৬ ই সেপ্টেম্বর ১৯৭০ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রতিটি দেশীয় রাজার শাসকদের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত নির্দেশনামা পাস করেন। রাষ্ট্রপতির নিজস্ব ক্ষমতাবলে সংবিধানের ৩৬৬(২২) নং ধারা প্রয়োগের মাধ্যমে সেইদিন থেকে সমস্ত দেশীয় রাজার শাসকদের স্বীকৃতি দেওয়া বন্ধ করে দেন। এর ফলে শাসকদের জন্য রাজভাতা ও প্রাপ্ত সমস্ত সুযোগ -সুবিধা গুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ৩২ নং ধারায় তাদের তারা রিট আবেদন করেন সুপ্রিমকোর্টে। সুপ্রিম কোর্ট শাসকদের পক্ষে রায় দেয়। [৯]

১৯৭১ সালে এটি আবার সংসদে প্রস্তাব করা হয়েছিল এবং ১৯৭১ সালে ভারতের সংবিধানের ২৬ তম সংশোধনী হিসাবে এটি সফলভাবে পাস হয়েছিল। [১] তারপরে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সকল নাগরিকের সমান অধিকার এবং সরকারের রাজস্ব ঘাটতি হ্রাস করার প্রয়োজনীয়তা এই দুটিকে যুক্তি দেখিয়ে তিনি বিলুপ্তির পক্ষ নিয়েছিলেন।

সংশোধনী কার্যকরভাবে বিদ্যমান শিরোনামগুলি স্বীকৃত করেছে ;-[১০]

পরিণতি

রাজভাতাের অবলুপ্তি অবশেষে প্রাক্তন শাসকদের সমস্ত অধিকার এবং বিশেষ মর্যাদাকে খর্ব করে দিয়েছিল। এইভাবে তাদেরকে অন্য ভারতীয়দের মতো সমান সাধারণ নাগরিক হিসাবে রূপান্তরিত করেছিল। তাদের প্রাক্তন শাসক পদবি এবং বিশেষ মর্যাদা ইত্যাদির কোনও সরকারী স্বীকৃতি নেই।

অনেক প্রাক্তন রয়্যালটি প্রাথমিকভাবে ১৯৭১ সালের লোকসভা নির্বাচনে আসন প্রতিদ্বন্দ্বিতা,ও প্রচারের মাধ্যমে রাজভাতা বিলুপ্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছিল। তাদের মধ্যে অনেকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। এর মধ্যে হলেন গুরগাঁও থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন পতৌদির শেষ ও প্রাক্তন নবাব মনসুর আলী খান পাতৌদি। মনসুর বিশাল হরিয়ানা পার্টির প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তবে দ্বিমুখী প্রতিযোগিতায় মাত্র ৫% ভোট পেয়েছিলেন। [১১] বিজয়া রাজে সিন্ধিয়া এবং তার পুত্র মাধব রাও সিন্ধিয়া অবশ্য ১৯৭১ সালের লোকসভা ভোটে জিতেছিলেন।

আরো দেখুন

  • ভারতের রাজনৈতিক একত্রীকরণ
  • ভারতের জন্য শত্রু সম্পত্তি সম্পত্তি রক্ষাকারী, পাকিস্তানে অভিবাসী শাসকদের সম্পত্তি সরানোর জন্য
  • শত্রু সম্পত্তি আইন, ১৯68৮, ভারতের শত্রু সম্পত্তির জন্য কাস্টোডিয়ানের ভিত্তি
  • মুসলিম সম্পত্তি হিসাবে ভারতে সেন্ট্রাল ওয়াকফ কাউন্সিল
  • পাকিস্তানে হিন্দু ও শিখের সম্পত্তি সম্পর্কিত এভ্যাকুই ট্রাস্ট সম্পত্তি বোর্ড

মন্তব্য

  1. এইচএইচ মহারাণী শেঠু লক্ষ্মী বাইর ভাতা ১৯৮৫ সালে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দীর্ঘকালীন আইনি লড়াইয়ের পর পুনর্বহাল করা হয়।[২]

তথ্যসূত্র

  1. "Twenty Sixth Amendment"। Indiacode.nic.in। ২৮ ডিসেম্বর ১৯৭১। সংগ্রহের তারিখ ১৯ নভেম্বর ২০১১ 
  2. Dr. Lakshmi Raghunandan। At the turn of the Tide, the Life and Times of Maharani Sethu Lakshmi Bayi, the Last Queen of Travancore 
  3. "Who betrayed Sardar Patel?" 
  4. Ishtiaq Ahmed (১৯৯৮)। State, Nation and Ethnicity in Contemporary South Asia। পৃষ্ঠা 99। 
  5. Jarmani Dass। Maharaja 
  6. "Privy Purses to Rulers - Reduction Effected in Certain Cases" (পিডিএফ)Press Information Bureau, Government of India - Archive 
  7. "Maharaja" by Jarmani Dass, page 424-435
  8. "H. H. Maharajadhiraja Madhav Rao vs Union of India on 15 December 1970"। Indian Kanoon। পৃষ্ঠা See para 44। সংগ্রহের তারিখ ১৬ অক্টোবর ২০১২১৯৭০ সালের ২ সেপ্টেম্বর লোকসভায় এই বিলের উপর ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এর পক্ষে ৩৩২টি ভোট এবং এর বিপরীতে ১৫৪টি ভোট পড়েছিল। পরে এটি রাজ্যসভায় পাঠানো হয়, ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭০ সালে ভোটাভুটিতে পক্ষে ১৪৯টি ভোট ও বিপক্ষে ৭৫টি ভোট পড়ে। রাজ্যসভায় দুই-তৃতীয়াংশের চেয়ে কম সংখ্যক সদস্য উপস্থিত থাকায় ও ভোট না পাওয়ায় এটি প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়। 
  9. "H. H. Maharajadhiraja Madhav Rao ... vs Union of India on 15 December 1970"indiankanoon.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৩-০৪ 
  10. "The Constitution of India (26th Amendment) Act 1971"The Gazette of India। ডিসেম্বর ২৯, ১৯৭১। 
  11. "Cricketers in Politics"। ৯ জুন ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মার্চ ২০০৯ 

বহিঃসংযোগ