বাংলাদেশে ব্যাংকিং: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
৬৪ নং লাইন: ৬৪ নং লাইন:
ইতোমধ্যে অর্থ-অগ্রাধিকার খাতের পরিবর্তনের ফলে প্রশাসন নতুন সমস্যার সম্মুখীন হয়।কিন্তু এতদিনেও সঠিক ঋণগ্রহীতা এবং বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্প নির্বাচনের জন্য কোনো উপযুক্ত প্রকল্প-মূল্যায়ন পদ্ধতি গৃহিত হয় নি। ঋণগ্রহীতা ও প্রকল্প নির্বাচনের ক্ষেত্রে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের হাতে পর্যাপ্ত স্বায়ত্তশাসন ছিলনা, প্রায়শই বিভিন্ন কাজে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ লক্ষ করা যেত। কার্যত, ব্যাংকগুলো তখন নতুন করে ঋণ দেওয়া থেকেও প্রাপ্য বকেয়া আদায়ের উপর গুরুত্ব দিয়েছিল কেননা বকেয়া সমস্যা দূর করার জন্য হিসাব সংরক্ষণ ও ঋণ সংগ্রহ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত ছিল না। ঋণখেলাপের ব্যাপারটি যেন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছিল কেননা ঋণগ্রহীতারা ঋণ পরিশোধে ব্যার্থ হচ্ছিলো। ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছিল যে, কোনপ্রকার অর্থনৈতিক বিবেচনার ছাড়াই ব্যাংক ঋণ শুধুমাত্র সেইসব প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অনেকটা অনুদান হিসেবে দেওয়া হবে, যারা কিনা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। ১৯৮৬ অর্থবছরে কৃষি ঋণের বকেয়া আদায়ের হার ছিল মাত্র ২৭ শতাংশ, শিল্প ঋণের ক্ষেত্রে আরও খারাপ অবস্থা ছিল। এই দুরবস্থার ফলে অভ্যন্তরীণ ব্যাংক ব্যবস্থাপনা ও ঋণ শৃঙ্খলা জোরদার করতে সরকার ও ব্যাংকগুলোকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রধান ঋণদাতারা ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। যার ফলস্বরূপ, ১৯৮৭ সালের দিকে বকেয়া আদায়ের হার বাড়তে শুরু করে। ১৯৮৭ সালের শুরুর দিকে অর্থ, ঋণ ও ব্যাংকিং বিষয়ক জাতীয় কমিশন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মধ্যস্থতাকারী ব্যবস্থার পরিবর্তনের প্রস্তাব দেয়, যার অনেকগুলো নীতিই ১৯৮৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের সাথে [[আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল|আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের]] স্বাক্ষরিত তিন বছরের ক্ষতিপূরণমূলক অর্থায়ন সুবিধা নিয়ে তৈরি করা।
ইতোমধ্যে অর্থ-অগ্রাধিকার খাতের পরিবর্তনের ফলে প্রশাসন নতুন সমস্যার সম্মুখীন হয়।কিন্তু এতদিনেও সঠিক ঋণগ্রহীতা এবং বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্প নির্বাচনের জন্য কোনো উপযুক্ত প্রকল্প-মূল্যায়ন পদ্ধতি গৃহিত হয় নি। ঋণগ্রহীতা ও প্রকল্প নির্বাচনের ক্ষেত্রে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের হাতে পর্যাপ্ত স্বায়ত্তশাসন ছিলনা, প্রায়শই বিভিন্ন কাজে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ লক্ষ করা যেত। কার্যত, ব্যাংকগুলো তখন নতুন করে ঋণ দেওয়া থেকেও প্রাপ্য বকেয়া আদায়ের উপর গুরুত্ব দিয়েছিল কেননা বকেয়া সমস্যা দূর করার জন্য হিসাব সংরক্ষণ ও ঋণ সংগ্রহ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত ছিল না। ঋণখেলাপের ব্যাপারটি যেন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছিল কেননা ঋণগ্রহীতারা ঋণ পরিশোধে ব্যার্থ হচ্ছিলো। ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছিল যে, কোনপ্রকার অর্থনৈতিক বিবেচনার ছাড়াই ব্যাংক ঋণ শুধুমাত্র সেইসব প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অনেকটা অনুদান হিসেবে দেওয়া হবে, যারা কিনা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। ১৯৮৬ অর্থবছরে কৃষি ঋণের বকেয়া আদায়ের হার ছিল মাত্র ২৭ শতাংশ, শিল্প ঋণের ক্ষেত্রে আরও খারাপ অবস্থা ছিল। এই দুরবস্থার ফলে অভ্যন্তরীণ ব্যাংক ব্যবস্থাপনা ও ঋণ শৃঙ্খলা জোরদার করতে সরকার ও ব্যাংকগুলোকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রধান ঋণদাতারা ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। যার ফলস্বরূপ, ১৯৮৭ সালের দিকে বকেয়া আদায়ের হার বাড়তে শুরু করে। ১৯৮৭ সালের শুরুর দিকে অর্থ, ঋণ ও ব্যাংকিং বিষয়ক জাতীয় কমিশন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মধ্যস্থতাকারী ব্যবস্থার পরিবর্তনের প্রস্তাব দেয়, যার অনেকগুলো নীতিই ১৯৮৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের সাথে [[আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল|আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের]] স্বাক্ষরিত তিন বছরের ক্ষতিপূরণমূলক অর্থায়ন সুবিধা নিয়ে তৈরি করা।


বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের এত অ-ব্যবস্থাপনায় মধেও [[গ্রামীণ ব্যাংক]] ছিল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম, যেটি ১৯৭৬ সালে সরকারী প্রকল্প হিসেবে এবং ১৯৮৩ স্বাধীন/স্বতন্ত্র ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করে। আশির দশকের শেষের দিকে ব্যাংকটি কোনো বৈদেশিক সাহায্য ছাড়াই হত-দরিদ্র মানুষদের আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে যৌক্তিক শর্তে ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়া শুরু করে। এর গ্রাহক ছিল মূলত ভূমিহীন মানুষেরা যারা বাসস্থানসহ অন্যান্য সব আর্থিক কার্যক্রমের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ নিত।ব্যাংকটির ৭০ শতাংশ ঋণগ্রহীতাই ছিল মহিলা, যারা কিনা অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নজরে আসতো না। গ্রামীণ উদ্যোক্তারা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে নলকূপ, রাইস মিলস্, ওয়েল মিলস্, তাঁতের কলের জন্য বিনিয়োগ এবং যৌথভাবে চাষ করার জন্য জমি ইজারার জন্য ঋণ নিতে পারতো। ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে গ্রামীণ ব্যাংকের গড় ঋণদান ছিল ২০০০ টাকা (প্রায় ২৫ মার্কিন ডলার) এবং সর্বোচ্চ মাত্র ১৮ হাজার হাজার টাকা (টিনঘর তৈরীর জন্য)। গ্রামীণ আবাসনের জন্য ঋণ পরিশোধের শর্ত হিসেবে সুদহার ছিল মাত্র ৪ শতাংশ এবং অন্যান্য সাধারণ ঋণের জন্য ৮.৫ শতাংশ। গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রথম ১০ বছরে ২০০,০০০ ভূমিহীন মানুষকে সুদবিহীন ঋণ প্রদান করে। এর বেশিরভাগ গ্রাহকই পূর্বে কোনো ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ সুবিধা পায় নি। তবে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি ছিল আশ্চর্যজনকভাবে ঋণ পরিশোধের হার। বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার দূরাবস্থার মধ্যেও গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণের মাত্র ৪ শতাংশ বকেয়া ছিল। ব্যাংকটির নিবিড় ঋণ তদারকির মূলে ছিল তাদের কিছু বিশেষায়িত ব্যবস্থা। যার সঠিক প্রয়োগই তাদেরকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে। এর সাফল্য যদিও তখনো ছোট পরিসরে ছিল তবে আশা করা হয়েছিল যে এটি ক্রমান্বয়ে বাড়বে এবং অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকান্ডের সঙ্গে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে। গ্রামীণ ব্যাংক দ্রুতই সম্প্রসারিত হতে লাগলো এবং আশির দশকের শেষ দিকে সারা দেশে এর শাখা ৫০০ ছাড়িয়ে যায়।
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের এত অ-ব্যবস্থাপনায় মধ্যেও [[গ্রামীণ ব্যাংক]] ছিল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম, যেটি ১৯৭৬ সালে সরকারী প্রকল্প হিসেবে এবং ১৯৮৩ স্বাধীন/স্বতন্ত্র ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করে। আশির দশকের শেষের দিকে ব্যাংকটি কোনো বৈদেশিক সাহায্য ছাড়াই হত-দরিদ্র মানুষদের আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে যৌক্তিক শর্তে ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়া শুরু করে। এর গ্রাহক ছিল মূলত ভূমিহীন মানুষেরা যারা বাসস্থানসহ অন্যান্য সব আর্থিক কার্যক্রমের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ নিত। ব্যাংকটির ৭০ শতাংশ ঋণগ্রহীতাই ছিল মহিলা, যারা কিনা অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নজরে আসতো না। গ্রামীণ উদ্যোক্তারা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে নলকূপ, রাইস মিলস্, ওয়েল মিলস্, তাঁতের কলের জন্য বিনিয়োগ এবং যৌথভাবে চাষ করার জন্য জমি ইজারার জন্য ঋণ নিতে পারতো। ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে গ্রামীণ ব্যাংকের গড় ঋণদান ছিল ২০০০ টাকা (প্রায় ২৫ মার্কিন ডলার) এবং সর্বোচ্চ মাত্র ১৮ হাজার হাজার টাকা (টিনঘর তৈরীর জন্য)। গ্রামীণ আবাসনের জন্য ঋণ পরিশোধের শর্ত হিসেবে সুদহার ছিল মাত্র ৪ শতাংশ এবং অন্যান্য সাধারণ ঋণের জন্য ৮.৫ শতাংশ। গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রথম ১০ বছরে ২০০,০০০ ভূমিহীন মানুষকে সুদবিহীন ঋণ প্রদান করে। এর বেশিরভাগ গ্রাহকই পূর্বে কোনো ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ সুবিধা পায় নি। তবে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি ছিল আশ্চর্যজনকভাবে ঋণ পরিশোধের হার। বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার দূরাবস্থার মধ্যেও গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণের মাত্র ৪ শতাংশ বকেয়া ছিল। ব্যাংকটির নিবিড় ঋণ তদারকির মূলে ছিল তাদের কিছু বিশেষায়িত ব্যবস্থা। যার সঠিক প্রয়োগই তাদেরকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে। এর সাফল্য যদিও তখনো ছোট পরিসরে ছিল তবে আশা করা হয়েছিল যে এটি ক্রমান্বয়ে বাড়বে এবং অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকান্ডের সঙ্গে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে। গ্রামীণ ব্যাংক দ্রুতই সম্প্রসারিত হতে লাগলো এবং আশির দশকের শেষ দিকে সারা দেশে এর শাখা ৫০০ ছাড়িয়ে যায়।


১৯৮৫ সালের শুরুর দিকে বাংলাদেশ সরকার অভ্যন্তরীণ বেসরকারী ঋণ এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে সরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমানোর লক্ষ্যে একটি কঠোর [[মুদ্রানীতি]] জারি করে। অর্থ সরবরাহ ও মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি কমানোর ক্ষেত্রে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ অনেকটাই সফল হয়েছিল। ১৯৮৬ অর্থবছরে ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। তদুপুরি বকেয়া ঋণ আদায়ের সমস্যা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ছিল হুমকিসরূপ, যা ছিল সম্পদের অসম বণ্টন এবং কঠোর অর্থনৈতিক বৈষম্য জন্য দায়ী। এ অবস্থায় সরকার আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে, কিন্তু এতে ঋণপ্রাপ্তির প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল হয়ে পরে ফলে ব্যবসায়ী তথা উদ্যোক্তাদের মাঝে নতুন করে কোনো অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে জড়ানোতে একধরনের নিরুৎসাহ চলে আসে।
১৯৮৫ সালের শুরুর দিকে বাংলাদেশ সরকার অভ্যন্তরীণ বেসরকারী ঋণ এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে সরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমানোর লক্ষ্যে একটি কঠোর [[মুদ্রানীতি]] জারি করে। অর্থ সরবরাহ ও মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি কমানোর ক্ষেত্রে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ অনেকটাই সফল হয়েছিল। ১৯৮৬ অর্থবছরে ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। তদুপুরি বকেয়া ঋণ আদায়ের সমস্যা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ছিল হুমকিসরূপ, যা ছিল সম্পদের অসম বণ্টন এবং কঠোর অর্থনৈতিক বৈষম্য জন্য দায়ী। এ অবস্থায় সরকার আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে, কিন্তু এতে ঋণপ্রাপ্তির প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল হয়ে পরে ফলে ব্যবসায়ী তথা উদ্যোক্তাদের মাঝে নতুন করে কোনো অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে জড়ানোতে একধরনের নিরুৎসাহ চলে আসে।


১৯৮৬ অর্থবছর শেষে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ (রিজার্ভ) ছিল ৪৭৬ মিলিয়ন [[মার্কিন ডলার]], যা দুই মাসের আমদানি খরচ থেকেও বেশি। বিগত বছরের তুলনায় এই রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২০ শতাংশ বেশি, যা মূলত বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ফলে হয়েছে।এরিমধ্যে দেশের আমদানি খরচ ১০ শতাংশ কমিয়ে ২.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নিয়ে আসা হয়। ঐ সময়ে বাংলাদেশ অনুন্নত দেশ হিসেবে নমনীয় ঋণ পাওয়ার জন্য বেসরকারি ঋণখেলাপীদের মাত্র ৬ শতাংশ সরকারি ঋণের জন্য দায়ী।১৯৮৬ অর্থবছরের শেষে বৈদেশিক ঋণ ছিল ৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আর ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল বার্ষিক ৪৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
১৯৮৬ অর্থবছর শেষে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ (রিজার্ভ) ছিল ৪৭৬ মিলিয়ন [[মার্কিন ডলার]], যা দুই মাসের আমদানি খরচ থেকেও বেশি। বিগত বছরের তুলনায় এই রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২০ শতাংশ বেশি, যা মূলত বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ফলে হয়েছে।এরিমধ্যে দেশের আমদানি খরচ ১০ শতাংশ কমিয়ে ২.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নিয়ে আসা হয়। ঐ সময়ে বাংলাদেশ অনুন্নত দেশ হিসেবে নমনীয় ঋণ পাওয়ার জন্য বেসরকারি ঋণখেলাপীদের মাত্র ৬ শতাংশ সরকারি ঋণের জন্য দায়ী।১৯৮৬ অর্থবছরের শেষে বৈদেশিক ঋণ ছিল ৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আর ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল বার্ষিক ৪৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

== বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকিং ==
== বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকিং ==
বাংলাদেশে ৮ টি ইসলামি ব্যাংক রয়েছে, ২টি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকে ইসলামী ব্যাংকিং ইউনিট চালু রয়েছে, পাশাপাশি অন্যান্য কয়েকটি ব্যাংকও তাদের সেবার পাশাপাশি ইসলামি ব্যাংকের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। ২০১৭ এর হিসাব মতে বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকিং এর মূলে রয়েছে [[ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড]],যারা কিনা বাংলাদেশী আমানতের ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসমূহের মাঝে ২০১০ সালে ২৮শে ফেব্রুয়ারি [[অগ্রণী ব্যাংক]] এবং ২০১০ এর ২৯শে জুন [[সোনালী ব্যাংক]] ইসলামী ব্যাংকিং ইউনিটের শাখা চালু করে। একটি হিসেব অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ ইসলামি ক্ষুদ্রঋণ পরিচালনা করে। বাংলাদেশ সরকারের একটি জরিপ অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যার ৮৪ শতাংশের মধ্যে ইসলামি ব্যাংকিংয়ে গ্রহযোগ্যাতা/সমর্থন রয়েছে।
বাংলাদেশে ৮ টি ইসলামি ব্যাংক রয়েছে, ২টি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকে ইসলামী ব্যাংকিং ইউনিট চালু রয়েছে, পাশাপাশি অন্যান্য কয়েকটি ব্যাংকও তাদের সেবার পাশাপাশি ইসলামি ব্যাংকের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। ২০১৭ এর হিসাব মতে বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকিং এর মূলে রয়েছে [[ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড]],যারা কিনা বাংলাদেশী আমানতের ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসমূহের মাঝে ২০১০ সালে ২৮শে ফেব্রুয়ারি [[অগ্রণী ব্যাংক]] এবং ২০১০ এর ২৯শে জুন [[সোনালী ব্যাংক]] ইসলামী ব্যাংকিং ইউনিটের শাখা চালু করে। একটি হিসেব অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ ইসলামি ক্ষুদ্রঋণ পরিচালনা করে। বাংলাদেশ সরকারের একটি জরিপ অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যার ৮৪ শতাংশের মধ্যে ইসলামি ব্যাংকিংয়ে গ্রহযোগ্যাতা/সমর্থন রয়েছে।

১৭:৩৮, ২৭ আগস্ট ২০২০ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ হলেও এর ব্যাংকিং ব্যবস্থা কিছুটা দুর্বল। বিশেষ করে রাষ্ট্রয়াত্ত ব্যাংকগুলো বছরের পর বছর লোকসান গুনছে,[১] দিতে পারছে না কাঙ্ক্ষিত গ্রাহক সেবা এবং বেড়ে চলছে খেলাপি ঋণের পরিমান।[২] অন্যদিকে, বেসরকারি ব্যাংকগুলো অন্যান্য উন্নত দেশের ব্যাংকিং কাঠামো অনুসরণ করতে চাইলেও বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু অনভিজ্ঞ এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত নীতিনির্ধারকদের জন্য তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। যার ফলে ক্ষমতাবান রাজনৈতিক এবং অপরাধীরা দুর্নীতি ও অর্থ-পাচারের মত কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই পরিচালনা করছে আর অন্যদিকে সাধারণ জনগন ও বিদেশে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক লেনদেন এবং গ্রাহক সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে।

বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যেটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বর্তমানে ৬০টি তালিকাভুক্ত ও ৫ টি অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংক নিয়ে এদেশের ব্যাংক ব্যবস্থার পরিচালিত হচ্ছে। তালিকাভুক্ত ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে ৬টি রাষ্ট্রয়াত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক,৩ টি বিশেষায়িত ব্যাংক, ৪২টি ব্যক্তিমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং ৯ টি বিদেশি ব্যাংক।[৩]

ইতিহাস

স্বাধীনতার পূর্বে

বাাংলার প্রথম আধুনিক ব্যাংক ছিল 'হিন্দুস্থান ব্যাংক', যা ১৭৭০ সালে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দে বিলুপ্ত হওয়া পর্যন্ত এটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান 'মেসার্স আলেক্সান্ডার এন্ড কোম্পানি' এর একটি শাখা হিসেবে পরিচালিত হয়েছিলো। ব্যাংকটির কার্যক্রম কলকাতা এবং এর আশে পাশের কয়েকটি অঞ্চলে পরিচালিত হতো।

কলকাতা ভিত্তিক কিছু ব্যাংক ১৯' শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত এসেও নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারে নি।এদের মধ্যে জেনারেল ব্যাংক অব বেঙ্গল অ্যান্ড বিহার (১৭৩৩-৭৫); বেঙ্গল ব্যাংক (১৭৮৪-৯১); (পরবর্তী ব্যাংক অব বেঙলের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই);  জেনারেল ব্যাংক (পরবর্তীতে জেনারেল ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া) (১৭৮৬-৯১); বাণিজ্যিক ব্যাংক (১৮১৯-৩৩);  কলকাতা ব্যাংক (১৮২৪-২৯);  ইউনিয়ন ব্যাংক (১৮২৯-৪৮);  সরকারি সঞ্চয় ব্যাংক (১৮৩৩-অজানা); এবং মির্জাপুর ব্যাংক (১৮৩৫-৩৭) উল্লেখযোগ্য।

১৮০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত কলকাতা ব্যাংক অনেক প্রাচীন হলেও কিছু ক্ষেত্রে এখনো এর অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। ব্যাংকটির নাম পরিবর্তন করে ১৮০৯ সালে ব্যাংক অব বেঙ্গল রাখা হয় এবং 'ইম্পেরিয়াল ব্যাংক অব ইন্ডিয়া'র সাথে ১৯২১ সালে একত্রিত করা হয়, পরবর্তীতে ১৯৫৫ সালে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ায় রুপান্তর করা হয়।[৪]

ঢাকায় প্রথম আধুনিক ব্যাংক সদর দপ্তর ছিল ঢাকা ব্যাংকের; যা ১৮৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি খুব সীমিতভাবে ব্যবসায়িক কাজে ব্যাবহৃত হত এবং এতে কোনো কাগজের নোটের প্রচলন ছিল না। ১৮৬২ সালে 'ব্যাংক অব বেঙ্গল' ব্যাংকটির মালিকানা কিনে নেয়। পরবর্তীতে 'ব্যাংক অব বেঙ্গল' ১৮৭৩ সালে সিরাজগঞ্জচট্টগ্রামে এবং ১৯০০ সালে চাঁদপুরে নিজেদের শাখা চালু করে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় ঢাকা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, ময়মনসিংহ, রংপুরনারায়ণগঞ্জ মিলে পূর্ব বাংলায় এর ছয়টি শাখা চালু ছিল।

দেশ বিভাজনের ফলে নিবন্ধিত ব্যাংকগুলো তাদের শাখা ভারতে স্থানান্তর করে নতুবা কোনো ব্যাংক আবার পূর্ব বাংলায় তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৫১ সালে এসে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে অবশিষ্ট থাকে মাত্র ৬৯ টি শাখা।

১৯৫৯ সালে ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয় এবং স্বাধীনতার আগে ১০৬ টি শাখা চালু করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৫ সালে ইস্টার্ন ব্যাংকিং কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয়;শীঘ্রই মুক্তিযুদ্ধের আগে এর শাখা ৬০'টিতে পৌঁছায়। তৎকালীন সময়ে পশ্চিম পাকিস্তানের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা ছিল বিধায় স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ঋণ সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে কয়েকজন সফল ব্যাবসায়ী মিলে ব্যাংক দুটি প্রতিষ্ঠা করেন।

স্বাধীনতার পরে

স্বাধীনতার সময়ে (১৯৭১) ব্যাংকিং খাত গঠিত হয়েছিলো তৎকালীন স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের দুটি শাখা আর ১৭ টি বাণিজ্যিক ব্যাংক নিয়ে; যার মধ্যে দুইটি বাংলাদেশের স্বার্থে এবং তিনটি পশ্চিম পাকিস্তানিদের স্বার্থ ছাড়া বাদবাকি বিদেশীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতো। এছাড়াও তখন ছোটখাটো আরও চৌদ্দটি বাণিজ্যিক ব্যাংক ছিল।

প্রকৃতপক্ষে, সকল ব্যাংকিং সেবাসমূহ শহুরে এলাকাতে সেবার মানোন্নয়নে মনোযোগী হতে লাগলো। নতুন স্বাধীন সরকার তড়িঘড়ি করে তৎকালীন স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের ঢাকা শাখাকে বাংলাদেশ ব্যাংক নামকরণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে ঘোষণা করে।[৫] মুদ্রার মান নিয়ন্ত্রণ, ঋণহার নিয়ন্ত্রণ, মূদ্রানীতি প্রণয়ন, মুদ্রা বিনিময় নিয়ন্ত্রণ এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের দায়ভার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। শুরুতেই বাংলাদেশ সরকার সমস্ত দেশীয় ব্যাংকিং খাতকে জাতীয়করণ এবং বিভিন্ন ব্যাংকের পুনর্গঠন ও নাম পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু করে। বৈদেশিক মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোকে ব্যাবসা করার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। বীমা ব্যাবসাকেও জাতীয়করণ করা হয় এবং ততদিনে এটি একটি সম্ভাব্য বিনিয়োগের উৎস হয়ে ওঠে। সমবায় ঋণ আর সঞ্চয় সংস্থাগুলো ছোট ছোট ব্যক্তিগত ও গ্রামীণ একাউন্টগুলো দেখভাল করেছিল। ইতোমধ্যেই নতুন ব্যাংকিং খাত বৈদেশিক বিনিময় ও ঋণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সফলতা এবং দক্ষতা অর্জন করে। ১৯৭০-এর দশকে ঋণ ব্যবস্থার প্রাথমিক কাজ ছিল মূলত বাণিজ্য এবং সরকারী খাতে অর্থায়ন করা, যা ছিল মোট ঋণের প্রায় ৭৫%।[৬]

স্বাধীনতার পর যে ১২টি ব্যাংকিং কোম্পানি বাংলাদেশে ব্যাবসা করেছে, তাদেরকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার জাতীয়করণ করে।

জাতীয়করণকৃত ব্যাংকসমূহ স্বাধীনতার পূর্বে
সোনালী ব্যাংক লিমিটেড ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ব্যাংক অব ভাওয়ালপুর প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড
রূপালী ব্যাংক লিমিটেড মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংক অস্ট্রেলাশিয়া ব্যাংক লিমিটেড স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড
অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড কমার্স ব্যাংক লিমিটেড হাবিব ব্যাংক লিমিটেড
জনতা ব্যাংক লিমিটেড ইউনাইটেড ব্যাংক লিমিটেড ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড
পূবালী ব্যাংক লিমিটেড ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড
উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড ইস্টার্ন ব্যাংকিং কর্পোরেশন

১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে এবং আশির দশকের শুরুতে সরকারের উৎসাহে কৃষিক্ষেত্রের উন্নয়ন ও বেসরকারী শিল্পের মাধ্যমে ঋণদানের প্রক্রিয়াগুলোতে পরিবর্তন আসে।বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের তত্বাবধানে কৃষক ও জেলেদের ঋণ প্রদান উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ১৯৭৭-৮৫ এর মধ্যে ব্যাংকেগুলোর গ্রামীণ শাখার সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৩,৩৩০ এ পৌঁছায়। বেসরকারি শিল্পের প্রবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকবিশ্বব্যাংক ক্রমবর্ধমান উঠতি বেসরকারি উৎপাদন খাতে তাদের ঋণ সহায়তা বাড়িয়ে দেয়। জিডিপির মোট শতকরা হিসাবে, তফসিলভুক্ত ব্যাংকসমূহের বেসরকারি কৃষিখাতে ঋণের পরিমাণ ১৯৭৯ অর্থবছরে ২ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৯৮৭ অর্থবছরে ১১ শতাংশ পৌছায়। ঠিক একই সময়ে মোট বেসরকারি উৎপাদন খাতে ঋণের পরিমাণ ১৩ শতাংশ থেকে বেঁড়ে ৫৩ শতাংশ হয়।[৭]

ইতোমধ্যে অর্থ-অগ্রাধিকার খাতের পরিবর্তনের ফলে প্রশাসন নতুন সমস্যার সম্মুখীন হয়।কিন্তু এতদিনেও সঠিক ঋণগ্রহীতা এবং বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্প নির্বাচনের জন্য কোনো উপযুক্ত প্রকল্প-মূল্যায়ন পদ্ধতি গৃহিত হয় নি। ঋণগ্রহীতা ও প্রকল্প নির্বাচনের ক্ষেত্রে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের হাতে পর্যাপ্ত স্বায়ত্তশাসন ছিলনা, প্রায়শই বিভিন্ন কাজে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ লক্ষ করা যেত। কার্যত, ব্যাংকগুলো তখন নতুন করে ঋণ দেওয়া থেকেও প্রাপ্য বকেয়া আদায়ের উপর গুরুত্ব দিয়েছিল কেননা বকেয়া সমস্যা দূর করার জন্য হিসাব সংরক্ষণ ও ঋণ সংগ্রহ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত ছিল না। ঋণখেলাপের ব্যাপারটি যেন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছিল কেননা ঋণগ্রহীতারা ঋণ পরিশোধে ব্যার্থ হচ্ছিলো। ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছিল যে, কোনপ্রকার অর্থনৈতিক বিবেচনার ছাড়াই ব্যাংক ঋণ শুধুমাত্র সেইসব প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অনেকটা অনুদান হিসেবে দেওয়া হবে, যারা কিনা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। ১৯৮৬ অর্থবছরে কৃষি ঋণের বকেয়া আদায়ের হার ছিল মাত্র ২৭ শতাংশ, শিল্প ঋণের ক্ষেত্রে আরও খারাপ অবস্থা ছিল। এই দুরবস্থার ফলে অভ্যন্তরীণ ব্যাংক ব্যবস্থাপনা ও ঋণ শৃঙ্খলা জোরদার করতে সরকার ও ব্যাংকগুলোকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রধান ঋণদাতারা ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। যার ফলস্বরূপ, ১৯৮৭ সালের দিকে বকেয়া আদায়ের হার বাড়তে শুরু করে। ১৯৮৭ সালের শুরুর দিকে অর্থ, ঋণ ও ব্যাংকিং বিষয়ক জাতীয় কমিশন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মধ্যস্থতাকারী ব্যবস্থার পরিবর্তনের প্রস্তাব দেয়, যার অনেকগুলো নীতিই ১৯৮৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের সাথে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের স্বাক্ষরিত তিন বছরের ক্ষতিপূরণমূলক অর্থায়ন সুবিধা নিয়ে তৈরি করা।

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের এত অ-ব্যবস্থাপনায় মধ্যেও গ্রামীণ ব্যাংক ছিল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম, যেটি ১৯৭৬ সালে সরকারী প্রকল্প হিসেবে এবং ১৯৮৩ স্বাধীন/স্বতন্ত্র ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করে। আশির দশকের শেষের দিকে ব্যাংকটি কোনো বৈদেশিক সাহায্য ছাড়াই হত-দরিদ্র মানুষদের আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে যৌক্তিক শর্তে ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়া শুরু করে। এর গ্রাহক ছিল মূলত ভূমিহীন মানুষেরা যারা বাসস্থানসহ অন্যান্য সব আর্থিক কার্যক্রমের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ নিত। ব্যাংকটির ৭০ শতাংশ ঋণগ্রহীতাই ছিল মহিলা, যারা কিনা অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নজরে আসতো না। গ্রামীণ উদ্যোক্তারা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে নলকূপ, রাইস মিলস্, ওয়েল মিলস্, তাঁতের কলের জন্য বিনিয়োগ এবং যৌথভাবে চাষ করার জন্য জমি ইজারার জন্য ঋণ নিতে পারতো। ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে গ্রামীণ ব্যাংকের গড় ঋণদান ছিল ২০০০ টাকা (প্রায় ২৫ মার্কিন ডলার) এবং সর্বোচ্চ মাত্র ১৮ হাজার হাজার টাকা (টিনঘর তৈরীর জন্য)। গ্রামীণ আবাসনের জন্য ঋণ পরিশোধের শর্ত হিসেবে সুদহার ছিল মাত্র ৪ শতাংশ এবং অন্যান্য সাধারণ ঋণের জন্য ৮.৫ শতাংশ। গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রথম ১০ বছরে ২০০,০০০ ভূমিহীন মানুষকে সুদবিহীন ঋণ প্রদান করে। এর বেশিরভাগ গ্রাহকই পূর্বে কোনো ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ সুবিধা পায় নি। তবে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি ছিল আশ্চর্যজনকভাবে ঋণ পরিশোধের হার। বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার দূরাবস্থার মধ্যেও গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণের মাত্র ৪ শতাংশ বকেয়া ছিল। ব্যাংকটির নিবিড় ঋণ তদারকির মূলে ছিল তাদের কিছু বিশেষায়িত ব্যবস্থা। যার সঠিক প্রয়োগই তাদেরকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে। এর সাফল্য যদিও তখনো ছোট পরিসরে ছিল তবে আশা করা হয়েছিল যে এটি ক্রমান্বয়ে বাড়বে এবং অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকান্ডের সঙ্গে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে। গ্রামীণ ব্যাংক দ্রুতই সম্প্রসারিত হতে লাগলো এবং আশির দশকের শেষ দিকে সারা দেশে এর শাখা ৫০০ ছাড়িয়ে যায়।

১৯৮৫ সালের শুরুর দিকে বাংলাদেশ সরকার অভ্যন্তরীণ বেসরকারী ঋণ এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে সরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমানোর লক্ষ্যে একটি কঠোর মুদ্রানীতি জারি করে। অর্থ সরবরাহ ও মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি কমানোর ক্ষেত্রে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ অনেকটাই সফল হয়েছিল। ১৯৮৬ অর্থবছরে ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। তদুপুরি বকেয়া ঋণ আদায়ের সমস্যা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ছিল হুমকিসরূপ, যা ছিল সম্পদের অসম বণ্টন এবং কঠোর অর্থনৈতিক বৈষম্য জন্য দায়ী। এ অবস্থায় সরকার আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে, কিন্তু এতে ঋণপ্রাপ্তির প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল হয়ে পরে ফলে ব্যবসায়ী তথা উদ্যোক্তাদের মাঝে নতুন করে কোনো অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে জড়ানোতে একধরনের নিরুৎসাহ চলে আসে।

১৯৮৬ অর্থবছর শেষে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ (রিজার্ভ) ছিল ৪৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দুই মাসের আমদানি খরচ থেকেও বেশি। বিগত বছরের তুলনায় এই রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২০ শতাংশ বেশি, যা মূলত বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ফলে হয়েছে।এরিমধ্যে দেশের আমদানি খরচ ১০ শতাংশ কমিয়ে ২.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নিয়ে আসা হয়। ঐ সময়ে বাংলাদেশ অনুন্নত দেশ হিসেবে নমনীয় ঋণ পাওয়ার জন্য বেসরকারি ঋণখেলাপীদের মাত্র ৬ শতাংশ সরকারি ঋণের জন্য দায়ী।১৯৮৬ অর্থবছরের শেষে বৈদেশিক ঋণ ছিল ৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আর ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল বার্ষিক ৪৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকিং

বাংলাদেশে ৮ টি ইসলামি ব্যাংক রয়েছে, ২টি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকে ইসলামী ব্যাংকিং ইউনিট চালু রয়েছে, পাশাপাশি অন্যান্য কয়েকটি ব্যাংকও তাদের সেবার পাশাপাশি ইসলামি ব্যাংকের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। ২০১৭ এর হিসাব মতে বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকিং এর মূলে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড,যারা কিনা বাংলাদেশী আমানতের ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসমূহের মাঝে ২০১০ সালে ২৮শে ফেব্রুয়ারি অগ্রণী ব্যাংক এবং ২০১০ এর ২৯শে জুন সোনালী ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকিং ইউনিটের শাখা চালু করে। একটি হিসেব অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ ইসলামি ক্ষুদ্রঋণ পরিচালনা করে। বাংলাদেশ সরকারের একটি জরিপ অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যার ৮৪ শতাংশের মধ্যে ইসলামি ব্যাংকিংয়ে গ্রহযোগ্যাতা/সমর্থন রয়েছে।

বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং

সেবার নাম ব্যাংক/সেবা দাতা উদ্বোধন অনুষ্ঠান বাজারে প্রথম সেবা চালু সহযোগী মোবাইল অপারেটর সুবিধা (চার্জ)
ক্যাশ ইন ক্যাশ আউট পিটুপি মোবাইল রিচার্জ শপিং/বিল পরিশোধ
ডিবিবিএল মোবাইল ব্যাংকিং (রকেট) ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড ডিসেম্বর ২০১০ মে ২০১১ বাংলালিংক (৩১ মার্চ ২০১১),
সিটিসেল (৩১ মার্চ ২০১১),
গ্রামীণফোণ (২৭ নভেম্বর ২০১২),
এয়ারটেল (১২ সেপ্টেম্বর ২০১১)
হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ
বিকাশ ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড জুলাই ২০১১ গ্রামীণফোন (১৮ জানুয়ারি ২০১২ ),
বাংলালিংক (জুলাই ২০১১)
হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ
ইউক্যাশ ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড নভেম্বর ২০১৩ গ্রামীণফোন (২০ জুন ২০১৪),
বাংলালিংক (মার্চ ২০১৪)
হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ
মাই ক্যাশ মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড ফেব্রুয়ারি ২০১২ গ্রামীণফোন (১লা ডিসেম্বর ২০১৩)
বাংলালিংক (২৮ অক্টোবর ২০১৩ )
হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ
ওকে মোবাইল ব্যাংকিং ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড অক্টোবর ২০১৩ গ্রামীণফোন (৫ অক্টোবর ২০১৩ )
হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ
নগদ বাংলাদেশ ডাক বিভাগ অক্টোবর ২০১৮ মার্চ ২০১৯ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ
টি-ক্যাশ ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড ১ লা এপ্রিল ২০১৮ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ
এম-ক্যাশ ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ
শিউর ক্যাশ রূপালী ব্যাংক লিমিটেড হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ

অন্যান্যঃ বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের বিল পরিশোধ সেবা

সেবার নাম মোবাইল অপারেটর/সেবা দাতা উদ্বোধন অনুষ্ঠান বাজারে প্রথম সেবা চালু সেবার খরচ সেবাসমূহ
মোবাইল রিচার্জ বিদ্যুৎ গ্যাস পানি অন্যান্য
মোবাইল ক্যাশ বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশন্স লিমিটেড ১৮ জানুয়ারি ২০১১ ১৮ জানুয়ারি ২০১১ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ
মোবিক্যাশ (বিলপে) গ্রামীণফোন ১৯ ডিসেম্বর ২০০৬ ('বিলপে', পিডিবি,চট্টগ্রাম)
৪ মার্চ ২০১০('মোবিটাকা',টিকেট, বাংলাদেশ রেলওয়ে)
১৯ ডিসেম্বর ২০০৬('বিলপে', পিডিবি,চট্টগ্রাম)
৪ মার্চ ২০১০('মোবিটাকা',টিকেট, বাংলাদেশ রেলওয়ে)
হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ
এমপে রবি না হ্যাঁ
গ্রেটার কুমিল্লা
না না
অর্থ রবি না না না না
ঢাকা ওয়াসা
সিটিসেল মানিব্যাগ সিটিসেল না না না না ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে কোম্পানিটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বিটিআরসি[৮]

আরো দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক পরিস্থিতির আরও অবনতি, লোকসান গুনছে ৩৫৯ শাখা | banglatribune.com"Bangla Tribune। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-৩১ 
  2. "সরকারি চার ব্যাংকে খেলাপি ঋণে রেকর্ড"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-৩১ 
  3. "Financial System"bb.org.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-৩১ 
  4. "About Us - About Us"www.sbi.co.in। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-০৭ 
  5. "About Bangladesh Bank"bb.org.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-০৭ 
  6. "ব্যাংকিং ব্যবস্থা, আধুনিক - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-০৭ 
  7. "Bangladesh - The Banking System"countrystudies.us। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-০৭ 
  8. "সিটিসেল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে গ্রাহকরা | প্রথম পাতা | The Daily Ittefaq"archive1.ittefaq.com.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-০৭