তেভাগা আন্দোলন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
'''তেভাগা আন্দোলন''' [[১৯৪৬]] সালের ডিসেম্বর -এ শুরু হয়ে [[১৯৪৭]] সাল পর্যন্ত চলে। বর্গা বা ভাগ-চাষীরা এতে অংশ নেয়। মোট উৎপন্ন ফসলের তিন ভাগের দুইভাগ পাবে চাষী, এক ভাগ জমির মালিক- এই দাবি থেকেই তেভাগা আন্দোলনের সূত্রপাত।<ref>{{বই উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://www.worldcat.org/oclc/758245247|শিরোনাম=The Tebhaga movement : politics of peasant protest in Bengal, 1946-50|শেষাংশ=Majumdar, Asok.|প্রথমাংশ=|তারিখ=2011|বছর=|প্রকাশক=Aakar Books|অবস্থান=New Delhi|পাতাসমূহ=১৩|আইএসবিএন=9789350021590|oclc=758245247}}</ref> এর আগে বর্গাপ্রথায় জমির সমস্ত ফসল মালিকের গোলায় উঠত এবং ভূমিহীন কৃষক বা ভাগ-চাষীর জন্য উৎপন্ন ফসলের অর্ধেক বা আরও কম বরাদ্দ থাকত। যদিও ফসল ফলানোর জন্য বীজ ও শ্রম দু'টোই কৃষক দিত। তৎকালীন [[পূর্ব বাংলা]] এবং [[পশ্চিমবঙ্গ|পশ্চিমবঙ্গে]] এই আন্দোলন সংগঠিত হয়। তবে [[দিনাজপুর জেলা|দিনাজপুর]] ও [[রংপুর জেলা|রংপুর]] জেলায় এই আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করেছিল।
'''তেভাগা আন্দোলন''' ১৯৪৬ সালের ডিসেম্বর -এ শুরু হয়ে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত চলে। বর্গা বা ভাগ-চাষীরা এতে অংশ নেয়। মোট উৎপন্ন ফসলের তিন ভাগের দুইভাগ পাবে চাষী, এক ভাগ জমির মালিক- এই দাবি থেকেই তেভাগা আন্দোলনের সূত্রপাত।<ref>{{বই উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://www.worldcat.org/oclc/758245247|শিরোনাম=The Tebhaga movement : politics of peasant protest in Bengal, 1946-50|শেষাংশ=Majumdar, Asok.|প্রথমাংশ=|তারিখ=2011|বছর=|প্রকাশক=Aakar Books|অবস্থান=New Delhi|পাতাসমূহ=১৩|আইএসবিএন=9789350021590|oclc=758245247}}</ref> এর আগে বর্গাপ্রথায় জমির সমস্ত ফসল মালিকের গোলায় উঠত এবং ভূমিহীন কৃষক বা ভাগ-চাষীর জন্য উৎপন্ন ফসলের অর্ধেক বা আরও কম বরাদ্দ থাকত। যদিও ফসল ফলানোর জন্য বীজ ও শ্রম দু'টোই কৃষক দিত। তৎকালীন [[পূর্ব বাংলা]] এবং [[পশ্চিমবঙ্গ|পশ্চিমবঙ্গে]] এই আন্দোলন সংগঠিত হয়। তবে [[দিনাজপুর জেলা|দিনাজপুর]] ও [[রংপুর জেলা|রংপুর]] জেলায় এই আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করেছিল।


== পটভূমি ==
== পটভূমি ==

২০:৪৭, ৬ মার্চ ২০২০ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

তেভাগা আন্দোলন ১৯৪৬ সালের ডিসেম্বর -এ শুরু হয়ে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত চলে। বর্গা বা ভাগ-চাষীরা এতে অংশ নেয়। মোট উৎপন্ন ফসলের তিন ভাগের দুইভাগ পাবে চাষী, এক ভাগ জমির মালিক- এই দাবি থেকেই তেভাগা আন্দোলনের সূত্রপাত।[১] এর আগে বর্গাপ্রথায় জমির সমস্ত ফসল মালিকের গোলায় উঠত এবং ভূমিহীন কৃষক বা ভাগ-চাষীর জন্য উৎপন্ন ফসলের অর্ধেক বা আরও কম বরাদ্দ থাকত। যদিও ফসল ফলানোর জন্য বীজ ও শ্রম দু'টোই কৃষক দিত। তৎকালীন পূর্ব বাংলা এবং পশ্চিমবঙ্গে এই আন্দোলন সংগঠিত হয়। তবে দিনাজপুররংপুর জেলায় এই আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করেছিল।

পটভূমি

তেভাগা আন্দোলনের ইতিহাস জানতে হলে সে সময়ের ভূমি ব্যবস্থা বিষয়ে জানা প্রয়োজন। বাংলার গ্রামীণ সমাজে ব্রিটিশ শাসনের আগ পর্যন্ত ভূমির মালিক ছিলেন চাষিরা। মোগল আমল পর্যন্ত তারা এক তৃতীয়াংশ বা কখনো কখনো তার চেয়েও কম ফসল খাজনা হিসাবে জমিদার বা স্থানীয় শাসনকর্তার মাধ্যমে রাষ্ট্রকে প্রদান করতেন। ব্রিটিশ শাসনামলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা প্রচলনের ফলে চাষিদের জমির মালিকানা চলে যায় জমিদারদের হাতে। জমিদাররা জমির পরিমাণ ও উর্বরতা অনুযায়ী ব্রিটিশদের খাজনা দিত। জমিদারদের সাথে ফসল উৎপাদনের কোনো সম্পর্ক ছিল না। এ সময় জমিদার ও কৃষকদের মাঝখানে জোতদার নামে মধ্যস্বত্বভোগী এক শ্রেণির উদ্ভব ঘটে। এরা পত্তনি প্রথার মাধ্যমে জমিদারদের কাছ থেকে জমি পত্তন বা ইজারা নিত। এই জোতদার শ্রেণি কৃষকের জমি চাষ তদারকি ও খাজনা আদায়ের কাজ করতো। ফসল উত্‍পাদনের সম্পূর্ণ খরচ কৃষকেরা বহন করলেও যেহেতু তারা জমির মালিক নন সে অপরাধে উৎপাদিত ফসলের অর্ধেক তুলে দিতে হতো জোতদারদের হাতে। এ ব্যবস্থাকে বলা হতো 'আধিয়ারী'। জোতদারিজমিদারি প্রথা ক্ষুদ্র কৃষকদের শোষণের সুযোগ করে দেয়। খাজনা আদায়ের জন্য জোতদাররা এদেরকে দাসের মতো ব্যবহার করে। উৎপন্ন ফসলের পরিবর্তে একসময় কৃষককে বাধ্য করা হয় অর্থ দিয়ে খাজনা পরিশোধ করতে। ফলে কৃষকেরা গ্রামীণ মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হন। সর্বস্বান্ত হয়ে এক সময়ের সমৃদ্ধ বাংলার কৃষক পরিণত হন আধিয়ার আর ক্ষেত মজুরে। জমিদার-জোতদারদের এই শোষণ কৃষকের মনে বিক্ষোভের জন্ম দেয়। এই বিক্ষোভকে সংগঠিত করে ১৯৩৬ সালে গঠিত হয় 'সর্ব ভারতীয় কৃষক সমিতি'। ১৯৪০ সালে ফজলুল হক মন্ত্রিসভার উদ্যোগে বাংলার ভূমি ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব দেয় 'ফ্লাউড কমিশন'। এই কমিশনের সুপারিশ ছিল জমিদারি প্রথার উচ্ছেদ করে চাষিদের সরাসরি সরকারের প্রজা করা এবং তাদের উৎপাদিত ফসলের তিনভাগের দুইভাগের মালিকানা প্রদান করা। এই সুপারিশ বাস্তবায়নের আন্দোলনের জন্য কৃষক সমাজ ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে। এছাড়া জনসাধারণের কাছ থেকে হাটের 'তোলা' ও 'লেখাই' সহ নানা কর আদায় করা হতো। এসব বন্ধের জন্য আন্দোলন জোরদার হয়।

তেভাগা আন্দোলনের একজন অগ্রদূতি মহিলা ছিলেন নাচোল উপজেলার ইলা মিত্র

দুই বাংলায় তেভাগা

ছেচল্লিশ সালের দাঙ্গা ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষকে পরিহার করে হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে এই কৃষক আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। নিখিল ভারত কৃষক সভার নীতি ছিল কৃষক ঐক্য যার ভিত্তিতে তেভাগা আন্দোলন জেলায় জেলায় সমস্ত ভ্রাতৃঘাতী বিবাদকে ত্যাগ করে ছড়িয়ে পড়ে। সমিতি গঠন, মহিলা কর্মী গড়ে তোলা, সংগ্রামী তহবিল এবং রাজনৈতিক শিক্ষাদানের ক্লাস ইত্যাদির মাধ্যমে পূর্ব ও পশ্চিম বাংলাতে কৃষক সংগ্রামীরা একজোট হন। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উত্তরবঙ্গ বিভিন্ন জায়গায় কৃষকেরা তেভাগার দাবী তুলেছিলেন। এই আন্দোলনের প্রধান নেতাদের মধ্যে অজিত বসু, বিষ্ণু চট্টোপাধ্যায়, ইলা মিত্র, কংসারী হালদার, নুর জালাল, কৃষ্ণবিনোদ রায়, ভূপাল পান্ডার নাম উল্লেখ করা যায়। মহিলাদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল তেভাগার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।[২] তেভাগা আন্দোলনের প্রথম শহীদ ছিলেন যৌথভাবে হিন্দু ও মুসলমান। দিনাজপুর জেলার সমিরুদ্দিন ও শিবরাম।

ঠাকুরগাঁওয়ে আন্দোলন

১৯৪৬ সালে রানীশংকৈল উপজেলায় তেভাগা আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় কৃষক নারীরা লাঠি, ঝাঁটা, দা-বটি, কুড়াল যে যা হাতের কাছে পায় তাই দিয়ে পুলিশকে বাঁধা দেয়। একজন বন্দুকধারী পুলিস নারী ভলান্টিয়ারদের প্রতি অসম্মানজনক উক্তি করে গালি দেয়। কৃষক নেতা ও রাজবংশী নারী ভাণ্ডনীর নেতৃত্বে কৃষক নারীরা পুলিসটিকে গ্রেপ্তার করে সারারাত আটক রাখে। ভাণ্ডনী সারারাত বন্দুক কাঁধে করে তাকে পাহারা দেয়।[৩]

সাহিত্য ও গানে

তেভাগা আন্দোলনে প্রগতিশীল সাহিত্যিক ও শিল্পী রাও আলোড়িত হয়েছেন। সোমনাথ হোড়ের চিত্র এবং দিনপঞ্জি 'তেভাগার ডায়েরী' উল্লেখযোগ্য রচনা। গোলাম কুদ্দুস পূর্ণেন্দু পত্রী, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ প্রথিতযশা সাহিত্যিকেরা তেভাগা আন্দোলনের ওপর উপন্যাস কবিতা রচনা করেন। সলিল চৌধুরীর গান 'হেই সামালো ধান' ও কবিয়াল নিবারণ পন্ডিতের 'মোদের দুখের কথা কাহাকে জানাই' এর নাম করা যায়। প্রত্যুষ

তথ্যসূত্র

  1. Majumdar, Asok. (২০১১)। The Tebhaga movement : politics of peasant protest in Bengal, 1946-50। New Delhi: Aakar Books। পৃষ্ঠা ১৩। আইএসবিএন 9789350021590ওসিএলসি 758245247 
  2. জয়ন্ত ভট্টাচার্য (১৯৯৬)। বাংলার তেভাগা, তেভাগার সংগ্রাম। কলকাতা: ন্যাশনাল বুক এজেন্সি। পৃষ্ঠা ৩৯,৭২,৯৮। 
  3. রায়, সুপ্রকাশ (জানুয়ারি ২০১১)। "ঠাকুরগাঁওয়ে তেভাগা আন্দোলন"। তেভাগা সংগ্রাম (সংশোধিত দ্বিতীয় প্রকাশ সংস্করণ)। কলকাতা: র‍্যাডিক্যাল। পৃষ্ঠা ১১–১২।