আলাউদ্দিন খিলজি: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
→রাজ্যজয়: চিত্র |
→রাজ্যজয়: সংশোধন |
||
৩৫ নং লাইন: | ৩৫ নং লাইন: | ||
বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকাও আলাউদ্দদিন দখল করে নিজের দখলে নিয়েছিলেন এগুলো হলঃ [[রাথাম্বোর]] (১৩০১),[[চিত্তুর]] (১৩০৩),[[মালওয়া (পাঞ্জাব)]] (১৩০৫), [[সিবানা]](১৩০৮) এবং জালোর (১৩১১).কতগুলো হিন্দু এলাকা দখল করার মাধমে অভিযান গুলো শেষ করেন। অভিযান গুলোর মাঝে আছে পারামারাছ, ভগল্স, রনাস্থাম্বাপুরার ছামানাছ এবং জালরি, গুইলাসের রাওয়াল এলাকা, এবং জাবাপ্লাস। সেনাপতি মালিক কাফুর প্রাচীন ভিন্দাস , এলাকার দক্ষিণে বেশ কয়েকটি সফল সফল অভিযান পরিচালনা করেন। দেভগিরি(১৩০৮), ভেরঙ্গল(১৩১০) থেকে বিপুল পরিমাণের সম্পদ জব্দ করে নিয়ে আসেন। তাঁর সৈন্যদের ভয়ে জাভাদা রাজা রামচন্দ্র কাকাতিয়ার রাজা [[প্রতাপ রুদ্র]] এবং হয়সালার রাজা বাল্ললা চলে আসেন আলাউদ্দিন খিলজির করের অধীনে। মহাবীর সেনাপতি কাফুর আবার পাণ্ডু রাজ্য(১৩১১) অবরোধ করে বিপুল সম্পদ, হাতি এবং ঘোড়া জব্দ করেন। |
বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকাও আলাউদ্দদিন দখল করে নিজের দখলে নিয়েছিলেন এগুলো হলঃ [[রাথাম্বোর]] (১৩০১),[[চিত্তুর]] (১৩০৩),[[মালওয়া (পাঞ্জাব)]] (১৩০৫), [[সিবানা]](১৩০৮) এবং জালোর (১৩১১).কতগুলো হিন্দু এলাকা দখল করার মাধমে অভিযান গুলো শেষ করেন। অভিযান গুলোর মাঝে আছে পারামারাছ, ভগল্স, রনাস্থাম্বাপুরার ছামানাছ এবং জালরি, গুইলাসের রাওয়াল এলাকা, এবং জাবাপ্লাস। সেনাপতি মালিক কাফুর প্রাচীন ভিন্দাস , এলাকার দক্ষিণে বেশ কয়েকটি সফল সফল অভিযান পরিচালনা করেন। দেভগিরি(১৩০৮), ভেরঙ্গল(১৩১০) থেকে বিপুল পরিমাণের সম্পদ জব্দ করে নিয়ে আসেন। তাঁর সৈন্যদের ভয়ে জাভাদা রাজা রামচন্দ্র কাকাতিয়ার রাজা [[প্রতাপ রুদ্র]] এবং হয়সালার রাজা বাল্ললা চলে আসেন আলাউদ্দিন খিলজির করের অধীনে। মহাবীর সেনাপতি কাফুর আবার পাণ্ডু রাজ্য(১৩১১) অবরোধ করে বিপুল সম্পদ, হাতি এবং ঘোড়া জব্দ করেন। |
||
==রাজ্য জয়== |
|||
==রাজ্যজয়== |
|||
[[File:Delhi_Sultanate_under_Khalji_dynasty_-_based_on_A_Historical_Atlas_of_South_Asia.svg|সংযোগ=https://en.wikipedia.org/wiki/File:Delhi_Sultanate_under_Khalji_dynasty_-_based_on_A_Historical_Atlas_of_South_Asia.svg|alt=|থাম্ব|302x302পিক্সেল|খিলজি সাম্রাজ্য (গাড় সবুজ অংশ) এবং খিলজি শাখা অঞ্চল সমুহ (হালকা সবুজ অংশ)]] |
[[File:Delhi_Sultanate_under_Khalji_dynasty_-_based_on_A_Historical_Atlas_of_South_Asia.svg|সংযোগ=https://en.wikipedia.org/wiki/File:Delhi_Sultanate_under_Khalji_dynasty_-_based_on_A_Historical_Atlas_of_South_Asia.svg|alt=|থাম্ব|302x302পিক্সেল|খিলজি সাম্রাজ্য (গাড় সবুজ অংশ) এবং খিলজি শাখা অঞ্চল সমুহ (হালকা সবুজ অংশ)]] |
||
আলাউদ্দিন খলজি খুব উচ্চাকাঙক্ষী ছিলেন । গ্রিক বীর আলেকজান্ডারের মতো তিনিও বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখতেন । কিন্তু কাজি আলা-উল-মূলকের পরামর্শে তিনি এই অসম্ভব পরিকল্পনা ত্যাগ করে সারা ভারত জুড়ে এক বিশাল সাম্রাজ্য স্থাপনের নীতি গ্রহণ করেছিলেন । বিশ্বজয়ের পরিকল্পনা ত্যাগ করলেও |
আলাউদ্দিন খলজি খুব উচ্চাকাঙক্ষী শাসক ছিলেন । গ্রিক বীর আলেকজান্ডারের মতো তিনিও বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখতেন । কিন্তু কাজি আলা-উল-মূলকের পরামর্শে তিনি এই অসম্ভব পরিকল্পনা ত্যাগ করে সারা ভারত জুড়ে এক বিশাল সাম্রাজ্য স্থাপনের নীতি গ্রহণ করেছিলেন । বিশ্বজয়ের পরিকল্পনা ত্যাগ করলেও মুদ্রায় নিজেকে ‘'''দ্বিতীয় আলেকজান্ডার'''’ হিসাবে উল্লেখ করতেন । ভারতে সাম্রাজ্য স্থাপনের পাশাপাশি তিনি উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে মোঙ্গল আক্রমণের হাত থেকেও ভারতকে রক্ষা করেন । প্রথমে তিনি ভারতের গুজরাটের রাজা [[কর্ণদেব]], রণ-থম্ভোরের রাজপুত নেতা '''হামির দেব''' , মেবারের রাজা [[রতন সিং]] ও মালবের অধিপতি '''মহ্লক দেব'''কে পরাজিত করেন । এরপর তিনি [[মলিক কাফুর|মলিক কাফুরের]] নেতৃত্বে দক্ষিণ ভারতে অভিযান প্রেরণ করেন । কাফুর দেবগিরির রাজা '''রামচন্দ্র''', বরঙ্গলের কাকতীয়রাজ '''প্রতাপ রুদ্র''', দোরসমুদ্রের হোয়্সলরাজ '''তৃতীয় বল্লাল'''কে পরাজিত করবার পর ভাতৃবিরোধের সুযোগ নিয়ে '''[[পান্ড্য রাজবংশ|পান্ড্য]]''' রাজ্য অধিকার করেন । এরপর তিনি [[রামেশ্বরম]] পর্যন্ত অগ্রসর হন । আলাউদ্দিন খলজি অবশ্য দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি সরাসরি সাম্রাজ্যভুক্ত না করে সেখানকার রাজাদের মৌখিক আনুগত্য ও করদানের প্রতিশ্রুতি নিয়েই '''করদ রাজ্যে''' (কর ডাকে স্বীকৃত) পরিণত করেন । বিজেতা হিসাবে আলাউদ্দিন খলজি ছিলেন দিল্লির সুলতানদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ । স্যার উলসলে হেগের মতে, তার রাজত্বের সঙ্গে সঙ্গেই সুলতানি সাম্রাজ্যবাদের সুত্রপাত হয় । তার আমলেই প্রথম দক্ষিণ ভারতে সুলতানি সেনাবাহিনীর অনুপ্রবেশ ঘটে । বিজেতা হিসাবে অনেকে তাকে আকবরের সঙ্গে তুলনা করেন। আলাউদ্দিনের দৃঢ়তা ও তার অসীম সাহসিকতাপূর্ণ যুদ্ধকৌশলের কারনে তিনি ইতিহাস বিখ্যাত হয়ে আছেন। |
||
==শাসনব্যবস্থা== |
==শাসনব্যবস্থা== |
০৯:১৯, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
আলাউদ্দিন খিলজি | |||||
---|---|---|---|---|---|
সুলতান | |||||
রাজত্ব | ১৯ জুলাই ১২৯৬ - ৪ জানুয়ারি ১৩১৬ | ||||
রাজ্যাভিষেক | ২১ অক্টোবর ১২৯৬ | ||||
পূর্বসূরি | জালালুদ্দিন ফিরুজ খলজি | ||||
উত্তরসূরি | শাহাবুদ্দিন ওমর | ||||
জন্ম | বীরভূম, বাংলা | ৪ জানুয়ারি ১২৬৬||||
মৃত্যু | ৪ জানুয়ারি ১৩১৬ দিল্লি | (বয়স ৫০)||||
সমাধি | |||||
পত্নীগণ | মালিকা ই জাহান | ||||
বংশধর | কুতবুদ্দীন মুবারক শাহ শাহাবুদ্দিন ওমর | ||||
| |||||
রাজবংশ | খিলজি রাজবংশ | ||||
পিতা | শিহাবুদ্দীন মাসুদ | ||||
ধর্ম | সুন্নি (ইসলাম) |
আলাউদ্দিন-খিলজি(শাসন কালঃ১২৯৬-১৩১৬)তিনি ছিলেন খিলজি বংসের দ্বিতীয় এবং সবচেয়ে শক্তিশালী শাসক। যিনি দিল্লিতে বসে ভারতীয় উপমহাদেশে খিলজি শাসন পরিচালনা করেছেন।তিনি চেয়েছিলেন ভারতীয় ইতিহাসেও একজন আলেকজেন্ডারের মতো শক্তিশালী কারো কথা উল্লেখ করা থাকুক। তাই তিনি নিজেকে ২য় আলেকজেন্ডার (সিকান্দার-এ-সানি) হিসেবে পরিচিত করার চেষ্টা চালিয়ে যান। তিনি নিজের নামে মুদ্রা প্রচলন করেন এবং জুম্মাহের খুতবার আগের বয়ানে নিজের কৃতিত্ব বর্ণনার আদেশ দেন।
আলাউদ্দিন খিলজি ছিলেন খিলজি বংশের প্রতিষ্ঠাতা জালালুদ্দিন খিলজির ভাতিজা এবং জামাতা। বীরভূমদেরকে পরাজিত করে জালালুদ্দিন খিলজি যখন দিল্লি দখল করে নেন, তখন আলাউদ্দিন খিলজিকে আমির-ই-তুজুখ বা উদযাপন মন্ত্রী পদ দেওয়া হয়। ১২৯১ সালে জালালুদ্দিন খিলজি তার ভাতিজা আলাউদ্দিন খিলজির হাতে কারা্(কানপুরের নিকটবর্তী এক এলাকা)নামক অঞ্চলের শাসনভার তুলে দেন। ১২৯৬ সালে আলাউদ্দিন খিলজি বসিলা অবরোধ করে জালালুদ্দিন খিলজির কাছে থেকে আবাধ(উত্তর-প্রদেশ) দখল করেন। ১২৯৬ সালে দেভাগিরি অবরোধ করেন এবং জালালুদ্দিনের বিপুল পরিমানের সম্পদ দখল করে নেন। জালালুদ্দিন খিলজিকে হত্যা করে, তিনি দিল্লিতে নিজের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তীতে জালালুদ্দিনের ছেলের কাছ থেকে মুলতান দখল করে নেন।
অল্পকিছুদিনের মধ্যেই আলাউদ্দিন খিলজি দক্ষভাবে বেশ কিছু মঙ্গোলীয় অঞ্চলকে নিজের ভারতীয় সাম্রজ্যের মধ্যে অন্তর্গত করেন। তার কত গুলো সফল অভিযানের মাঝে বিখ্যেত অভিযান গুলো হলঃ (১২৯৭–১২৯৮)জারান-মাঞ্জুর(বর্তমান পাঞ্জাব এর কিছু এলাকা নিয়ে বিস্তৃত ছিল),শিবিস্থান(বিভক্ত পাকিস্থান)(শিবিস্থান-১২৯৮),কিলি (প্রাচীন দিল্লির একটি এলাকা)(১২৯৯), দেলি দিল্লি(১৩০৩),এবং উত্তর-প্রদেশ আম্রহা (১৩০৫) ,১৩০৬ সালে তার সৈন্যগণ মঙ্গোলীয়দের কাছ থেকে একটি সফল অভিযান শেষে রভি নদীর উপতক্যা দখল করে নেয় এবং সেই বছরই তারা মঙ্গলীয়দের বিশেষ আবাসস্থান বর্তমানের আফগানিস্থান দখল করে নেয়।যে সকল সেনাপতি মঙ্গোলীয়দের বিপক্ষে দক্ষ হাতে সফল অভিযান পরিচালনা করেছিলেন তারা হলেন সেনা-অধ্যক্ষ জাফর খান(জাফর খান),সেনাপতি উলুগ খান(উলুগ খান ) এবং একসময়ের গোলাম কিন্তু পরবর্তী সময়ের জেনারেল মালিক কাফুর।
বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকাও আলাউদ্দদিন দখল করে নিজের দখলে নিয়েছিলেন এগুলো হলঃ রাথাম্বোর (১৩০১),চিত্তুর (১৩০৩),মালওয়া (পাঞ্জাব) (১৩০৫), সিবানা(১৩০৮) এবং জালোর (১৩১১).কতগুলো হিন্দু এলাকা দখল করার মাধমে অভিযান গুলো শেষ করেন। অভিযান গুলোর মাঝে আছে পারামারাছ, ভগল্স, রনাস্থাম্বাপুরার ছামানাছ এবং জালরি, গুইলাসের রাওয়াল এলাকা, এবং জাবাপ্লাস। সেনাপতি মালিক কাফুর প্রাচীন ভিন্দাস , এলাকার দক্ষিণে বেশ কয়েকটি সফল সফল অভিযান পরিচালনা করেন। দেভগিরি(১৩০৮), ভেরঙ্গল(১৩১০) থেকে বিপুল পরিমাণের সম্পদ জব্দ করে নিয়ে আসেন। তাঁর সৈন্যদের ভয়ে জাভাদা রাজা রামচন্দ্র কাকাতিয়ার রাজা প্রতাপ রুদ্র এবং হয়সালার রাজা বাল্ললা চলে আসেন আলাউদ্দিন খিলজির করের অধীনে। মহাবীর সেনাপতি কাফুর আবার পাণ্ডু রাজ্য(১৩১১) অবরোধ করে বিপুল সম্পদ, হাতি এবং ঘোড়া জব্দ করেন।
রাজ্য জয়
আলাউদ্দিন খলজি খুব উচ্চাকাঙক্ষী শাসক ছিলেন । গ্রিক বীর আলেকজান্ডারের মতো তিনিও বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখতেন । কিন্তু কাজি আলা-উল-মূলকের পরামর্শে তিনি এই অসম্ভব পরিকল্পনা ত্যাগ করে সারা ভারত জুড়ে এক বিশাল সাম্রাজ্য স্থাপনের নীতি গ্রহণ করেছিলেন । বিশ্বজয়ের পরিকল্পনা ত্যাগ করলেও মুদ্রায় নিজেকে ‘দ্বিতীয় আলেকজান্ডার’ হিসাবে উল্লেখ করতেন । ভারতে সাম্রাজ্য স্থাপনের পাশাপাশি তিনি উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে মোঙ্গল আক্রমণের হাত থেকেও ভারতকে রক্ষা করেন । প্রথমে তিনি ভারতের গুজরাটের রাজা কর্ণদেব, রণ-থম্ভোরের রাজপুত নেতা হামির দেব , মেবারের রাজা রতন সিং ও মালবের অধিপতি মহ্লক দেবকে পরাজিত করেন । এরপর তিনি মলিক কাফুরের নেতৃত্বে দক্ষিণ ভারতে অভিযান প্রেরণ করেন । কাফুর দেবগিরির রাজা রামচন্দ্র, বরঙ্গলের কাকতীয়রাজ প্রতাপ রুদ্র, দোরসমুদ্রের হোয়্সলরাজ তৃতীয় বল্লালকে পরাজিত করবার পর ভাতৃবিরোধের সুযোগ নিয়ে পান্ড্য রাজ্য অধিকার করেন । এরপর তিনি রামেশ্বরম পর্যন্ত অগ্রসর হন । আলাউদ্দিন খলজি অবশ্য দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি সরাসরি সাম্রাজ্যভুক্ত না করে সেখানকার রাজাদের মৌখিক আনুগত্য ও করদানের প্রতিশ্রুতি নিয়েই করদ রাজ্যে (কর ডাকে স্বীকৃত) পরিণত করেন । বিজেতা হিসাবে আলাউদ্দিন খলজি ছিলেন দিল্লির সুলতানদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ । স্যার উলসলে হেগের মতে, তার রাজত্বের সঙ্গে সঙ্গেই সুলতানি সাম্রাজ্যবাদের সুত্রপাত হয় । তার আমলেই প্রথম দক্ষিণ ভারতে সুলতানি সেনাবাহিনীর অনুপ্রবেশ ঘটে । বিজেতা হিসাবে অনেকে তাকে আকবরের সঙ্গে তুলনা করেন। আলাউদ্দিনের দৃঢ়তা ও তার অসীম সাহসিকতাপূর্ণ যুদ্ধকৌশলের কারনে তিনি ইতিহাস বিখ্যাত হয়ে আছেন।
শাসনব্যবস্থা
(১) শক্তিশালী কেন্দ্রীয় শাসন : সাম্রাজ্য বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে আলাউদ্দিন খলজি প্রশাসনিক সংস্কারের দিকেও মন দেন । তিনি ছিলেন স্বৈরতন্ত্রের মূর্ত প্রতীক । কেন্দ্রীয় স্বৈরাচারী শাসনকে শক্তিশালী করার জন্য তিনি সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করে তোলেন । দিল্লির সুলতানদের মধ্যে তিনিই প্রথম একটি স্থায়ী সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন । নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য তিনি উলেমাদেরও অগ্রাহ্য করতেন । কথা প্রসঙ্গে একবার তিনি মুঘুসউদ্দিনকে বলেছিলেন—”আমিই সেই সব নির্দেশ জারি করি, যা রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করে এবং জনগণের মঙ্গল সাধন হয় । আমি জানি না কোনটা বৈধ আর কোনটা অবৈধ । রাষ্ট্রের পক্ষে যা মঙ্গলজনক আমি তাই করি ।” ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুইয়ের মতো তিনিও বলতে পারতেন, “রাষ্ট্র কী ? আমিই রাষ্ট্র ।” কেন্দ্রে নিজ কর্তৃত্বাধীনে একটি কঠোর অথচ সুশৃঙ্খল শাসনব্যবস্থা জারি করাই ছিল তার মূল লক্ষ্য । শুধু উলেমাদের নয়, আমির-ওমরাহদেরও তিনি মাথা তুলতে দেন নি এবং তাদের ক্ষমতা খর্ব করার জন্য এবং বিদ্রোহের মূল উৎপাটনের উদ্দেশ্যে তিনি তাদের মধ্যে ঘনিষ্ট মেলামেশা ও খানাপিনা বন্ধ করে দেন । ব্যক্তিগত সম্পত্তির উপর আক্রমণ করে তিনি সমস্ত রকম ভাতা বন্ধ করে দেন । যে সব জায়গির দেওয়া হয়েছিল. সেগুলি বাজেয়াপ্ত করে সরকারের খাস জমিতে পরিণত করা হয় । এইভাবে অভিজাতদের উপর আক্রমণ করে তিনি বিদ্রোহের মূল উৎপাটন করেন ।
(২) বাজারদর নিয়ন্ত্রণ : তিনি সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করেন এবং সৈনিকরা যাতে অল্প দামে জিনিস পত্র কিনতে পারেন তার জন্য বাজারদর নিয়ন্ত্রণ করেন এবং রেশনিং ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন, কারণ তিনি সৈনিকদের বেশি বেতন দিতেন না । ব্যবসায়ীরা যাতে মূল্যের বেশি টাকা দাবি না করে, তার জন্য তিনি কঠোর প্রসাশনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন । বিষয়টির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলে ‘শাহানা-ই-মান্ডি’ ও ‘দেওয়ান-ই-রিসালাত’ -এর উপর । আলাউদ্দিন খলজির লক্ষ্য ছিল সম্ভবত মুদ্রাস্ফীতি রোধ করা ও ব্যবসায়ীরা যাতে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করতে না পারে, তার দিকে লক্ষ রাখা ; কিন্তু তাই বলে ব্যবসায়ীরা একবারে বিনা লাভে বিক্রি করতো এ কথা ভাবার কোনো কারণ নেই । আলাউদ্দিন খলজির দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ সফল হয়েছিল এবং এর দ্বারা সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষও কিছুটা উপকৃত হয়েছিল । অবশ্য ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করতে না পারায় মনঃক্ষুন্ন এবং অসন্তুষ্ট হয়েছিল । কিন্তু তাদের কিছু করার ছিল না । যতদিন আলাউদ্দিন খলজি জীবিত ছিলেন, ততদিন এইসব নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কঠোর ভাবে মানা হয় । কিন্তু তার মৃত্যুর পর এই ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে ।
(৩) রাজস্ব ও অন্যান্য সংস্কার : অন্যদিকে দিল্লী সুলতানদের মধ্যে তিনিই প্রথম জমি জরিপ করে রাজস্বব্যবস্থার সংস্কার করেছিলেন । দেশে যাতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকে সেদিকেও তিনি নজর দেন । অপরাধীদের কঠোর শাস্তির বিধান দেওয়া হত । গুপ্তচরদের মাধ্যমে তিনি দেশের সমস্ত খবরাখবর রাখতেন । জনগণের সক্রিয় সমর্থন, শ্রদ্ধা বা ভালোবাসা তিনি হয়তো পান নি; কিন্তু এক সুদৃঢ় ও কঠোর শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করে দিল্লি সুলতানিকে এক শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়েছিলেন ।
মূল্যায়ন : যুদ্ধ বিজেতা এবং প্রসাশক হিসাবে আলাউদ্দিন খলজি সুলতানি আমলে অসাধারণ সাফল্যের পরিচয় দেন । অর্থনৈতিক সংস্কারের দিক থেকে বিচার করলে দেখা যায় যে আলাউদ্দিন ছিলেন মধ্যযুগের ভারতের প্রথম মুসলিম শাসক, যিনি
(১) জমি জরিপ করিয়েছিলেন ,
(২) জায়গির দান বা ভূমিদান প্রথার অবলুপ্তি ঘটিয়েছিলেন ।
(৩) উচ্চ হারে রাজস্ব ও কর ধার্য করেছিলেন
(৪) বাজারদর নিয়ন্ত্রণ নীতি প্রবর্তন করেছিলেন ।
কিন্তু প্রজাপালন এবং জনকল্যাণ যদি কোনো রাষ্ট্রনায়কের শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাটি হয়, তাহলে আলাউদ্দিন খলজিকে সুলতানি আমলের শ্রেষ্ঠ সম্রাট বলা যায় না ।