বালুচরী শাড়ি: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
শেষ দুটি সম্পাদনা বাতিল: স্প্যাম
২৭ নং লাইন: ২৭ নং লাইন:


== ইতিহাস ==
== ইতিহাস ==
বালুচরীর জন্ম মুর্শিদাবাদ জেলার জিয়াগঞ্জের নিকটবর্তী অধুনালুপ্ত বালুচর নামক স্থানে। বালুচরের সঠিক অবস্থান নিয়ে নানান মত আছে। ভারত পথিক যদুনাথ সর্বাধিকারী তার ১৮৫৭ সালে রচিত ভ্রমণ বৃত্তান্তে জিয়াগঞ্জ শহরে বালুচর বলে একটি অঞ্চলের কথা উল্লেখ করেছেন যা চেলি ও গরদের আড়ত।<ref name=abp29102015>{{সংবাদ উদ্ধৃতি|শেষাংশ১=আবেদিন|প্রথমাংশ১=অনল|শিরোনাম=বালুচরি কার, জমাট বিতর্ক পত্রিকার শারদ সংখ্যায়|ইউআরএল=http://www.anandabazar.com/district/nodia-murshidabbad/%E0%A6%AC-%E0%A6%B2-%E0%A6%9A%E0%A6%B0-%E0%A6%95-%E0%A6%B0-%E0%A6%9C%E0%A6%AE-%E0%A6%9F-%E0%A6%AC-%E0%A6%A4%E0%A6%B0-%E0%A6%95-%E0%A6%AA%E0%A6%A4-%E0%A6%B0-%E0%A6%95-%E0%A6%B0-%E0%A6%B6-%E0%A6%B0%E0%A6%A6-%E0%A6%B8-%E0%A6%96-%E0%A6%AF-%E0%A7%9F-1.230425|সংগ্রহের-তারিখ=30 জানুয়ারি 2016|কর্ম=আনন্দবজার পত্রিকা|প্রকাশক=এবিপি গ্রুপ|তারিখ=29 অক্টোবর 2015}}</ref> মুর্শিদাবাদ জেলার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও রেশমশিল্প গবেষক নিত্যগোপাল মুখোপাধ্যায়ের মতে বহরমপুরের কয়েক মাইল উত্তরে ভাগীরথীর তীরে অবস্থিত ছিল বালুচর।<ref name=tt24052015>{{সংবাদ উদ্ধৃতি|শেষাংশ১=কার্লেকর|প্রথমাংশ১=মালবিকা|শিরোনাম=History of a weave - Of tapestries, hookahs and howdas|ইউআরএল=http://www.telegraphindia.com/1150524/jsp/opinion/story_21749.jsp|সংগ্রহের-তারিখ=30 জানুয়ারি 2016|কর্ম=দ্য টেলিগ্রাফ|প্রকাশক=এবিপি গ্রুপ|তারিখ=24 মে 2015}}</ref> ঐতিহাসিক বিনয় ঘোষের মতে জিয়াগঞ্জের বালুচর ছিল রেশমশিল্পজাত নানা প্রকার বস্ত্রাদির বড় আড়ত ও ব্যবসা কেন্দ্র। তাঁতশিল্পীদের বসতি ছিল জিয়াগঞ্জের নিকটবর্তী বাহাদুরপুর, বেলিয়াপুকুর, রামডহর, রমনাপাড়া, রণসাগর, আমডহর, বাগডহর, আমাইপাড়া প্রভৃতি গ্রামসমূহ।<ref name=ghosh2009>{{বই উদ্ধৃতি|শেষাংশ১=ঘোষ|প্রথমাংশ১=বিনয়|শিরোনাম=পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি, তৃতীয় খন্ড|তারিখ=ডিসেম্বর 2009|প্রকাশক=প্রকাশ ভবন|পাতা=৫৫|সংস্করণ=পঞ্চম মুদ্রণ, প্রথম|সংগ্রহের-তারিখ=30 জানুয়ারি 2016}}</ref> তারা তাদের রেশমের শাড়ি জিয়াগঞ্জের বালুচরে বিক্রি করতেন। বিক্রয় কেন্দ্রের নামেই শাড়ীর নাম হয় বালুচরী।<ref name=ghosh2009/> লোকসংস্কৃতি গবেষক ডঃ সোমনাথ ভট্টাচার্যের মতে বালুচরীর উদ্ভব বালুচর অঞ্চলের নিকটবর্তী মীরপুর-বাহাদুরপুর গ্রামে।<ref name=blk>{{বই উদ্ধৃতি|শেষাংশ১=ভট্টাচার্য|প্রথমাংশ১=ডঃ সোমনাথ|শেষাংশ২=বসু|প্রথমাংশ২=অর্পিতা|editor-last1=চক্রবর্তী|editor-first1=বরুণকুমার|শিরোনাম=বঙ্গীয় লোকসংস্কৃতি কোষ|তারিখ=ডিসেম্বর, 2007|প্রকাশক=অপর্ণা বুক ডিস্ট্রিবিউটার্স|অবস্থান=কলকাতা|আইএসবিএন=81-86036-13-X|পাতাসমূহ=৩৪০-৩৪১|সংস্করণ=দ্বিতীয় পরিবর্ধিত, পরিমার্জিত|সংগ্রহের-তারিখ=30 জানুয়ারি 2016}}</ref>
বালুচরীর জন্ম মুর্শিদাবাদ জেলার জিয়াগঞ্জের নিকটবর্তী অধুনালুপ্ত বালুচর নামক স্থানে। বালুচরের সঠিক অবস্থান নিয়ে নানান মত আছে। ভারত পথিক যদুনাথ সর্বাধিকারী তার ১৮৫৭ সালে রচিত ভ্রমণ বৃত্তান্তে জিয়াগঞ্জ শহরে বালুচর বলে একটি অঞ্চলের কথা উল্লেখ করেছেন যা চেলি ও গরদের আড়ত।<ref name=abp29102015>{{সংবাদ উদ্ধৃতি|শেষাংশ১=আবেদিন|প্রথমাংশ১=অনল|শিরোনাম=বালুচরি কার, জমাট বিতর্ক পত্রিকার শারদ সংখ্যায়|ইউআরএল=http://www.anandabazar.com/district/nodia-murshidabbad/%E0%A6%AC-%E0%A6%B2-%E0%A6%9A%E0%A6%B0-%E0%A6%95-%E0%A6%B0-%E0%A6%9C%E0%A6%AE-%E0%A6%9F-%E0%A6%AC-%E0%A6%A4%E0%A6%B0-%E0%A6%95-%E0%A6%AA%E0%A6%A4-%E0%A6%B0-%E0%A6%95-%E0%A6%B0-%E0%A6%B6-%E0%A6%B0%E0%A6%A6-%E0%A6%B8-%E0%A6%96-%E0%A6%AF-%E0%A7%9F-1.230425|সংগ্রহের-তারিখ=30 জানুয়ারি 2016|কর্ম=আনন্দবজার পত্রিকা|প্রকাশক=এবিপি গ্রুপ|তারিখ=29 অক্টোবর 2015}}</ref> মুর্শিদাবাদ জেলার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও রেশমশিল্প গবেষক নিত্যগোপাল মুখোপাধ্যায়ের মতে বহরমপুরের কয়েক মাইল উত্তরে ভাগীরথীর তীরে অবস্থিত ছিল বালুচর।<ref name=tt24052015>{{সংবাদ উদ্ধৃতি|শেষাংশ১=কার্লেকর|প্রথমাংশ১=মালবিকা|শিরোনাম=History of a weave - Of tapestries, hookahs and howdas|ইউআরএল=http://www.telegraphindia.com/1150524/jsp/opinion/story_21749.jsp|সংগ্রহের-তারিখ=30 জানুয়ারি 2016|কর্ম=দ্য টেলিগ্রাফ|প্রকাশক=এবিপি গ্রুপ|তারিখ=24 মে 2015}}</ref> ঐতিহাসিক বিনয় ঘোষের মতে জিয়াগঞ্জের বালুচর ছিল রেশমশিল্পজাত নানা প্রকার বস্ত্রাদির বড় আড়ত ও ব্যবসা কেন্দ্র। তাঁতশিল্পীদের বসতি ছিল জিয়াগঞ্জের নিকটবর্তী বাহাদুরপুর, বেলিয়াপুকুর, রামডহর, রমনাপাড়া, রণসাগর, আমডহর, বাগডহর, আমাইপাড়া প্রভৃতি গ্রামসমূহ।<ref name=ghosh2009>{{বই উদ্ধৃতি|শেষাংশ১=ঘোষ|প্রথমাংশ১=বিনয়|শিরোনাম=পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি, তৃতীয় খন্ড|তারিখ=ডিসেম্বর 2009|প্রকাশক=প্রকাশ ভবন|পাতা=৫৫|সংস্করণ=পঞ্চম মুদ্রণ, প্রথম|সংগ্রহের-তারিখ=30 জানুয়ারি 2016}}</ref> তারা তাদের রেশমের শাড়ি জিয়াগঞ্জের বালুচরে বিক্রি করতেন। বিক্রয় কেন্দ্রের নামেই শাড়ীর নাম হয় বালুচরী।<ref name=ghosh2009/> লোকসংস্কৃতি গবেষক ডঃ সোমনাথ ভট্টাচার্যের মতে বালুচরীর উদ্ভব বালুচর অঞ্চলের নিকটবর্তী মীরপুর-বাহাদুরপুর গ্রামে।<ref name=blk>{{বই উদ্ধৃতি|শেষাংশ১=ভট্টাচার্য|প্রথমাংশ১=ডঃ সোমনাথ|শেষাংশ২=বসু|প্রথমাংশ২=অর্পিতা|editor-last1=চক্রবর্তী|editor-first1=বরুণকুমার|শিরোনাম=বঙ্গীয় লোকসংস্কৃতি কোষ|তারিখ=ডিসেম্বর 2007|প্রকাশক=অপর্ণা বুক ডিস্ট্রিবিউটার্স|অবস্থান=কলকাতা|আইএসবিএন=81-86036-13-X|পাতাসমূহ=৩৪০-৩৪১|সংস্করণ=দ্বিতীয় পরিবর্ধিত, পরিমার্জিত|সংগ্রহের-তারিখ=30 জানুয়ারি 2016}}</ref>
[[File:Baluchori saree DSC 0093.jpg|thumb|right|বালুচরী শাড়িতে বিবিধ পৌরাণিক নকশা কাজ]]
[[File:Baluchori saree DSC 0093.jpg|thumb|right|বালুচরী শাড়িতে বিবিধ পৌরাণিক নকশা কাজ]]
বালুচরীর জন্মকাল অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগ। বালুচরীর জন্ম বৃত্তান্ত নিয়ে নানান মত আছে। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে বর্তমান মুর্শিদাবাদ জেলার আজিমগঞ্জ-জিয়াগঞ্জ অঞ্চলে গড়ে ওঠে বাণিজ্যকেন্দ্র। দূরদূরান্ত থেকে মারোয়ারী, গুজরাতী, পঞ্জাবী, আর্মানী, ইহুদী, ইংরাজ, ফরাসী ও ওলন্দাজ বণিকরা বাণিজ্যের জন্য আসতে থাকেন এই অঞ্চলে। একটি মত অনুসারে সেই সময় গুজরাতী তাঁতীদেরও আগমন হয়, এবং তার ফলেই ভাগীরথীর পূর্ব পাড়ে বালুচরে গড়ে ওঠে বয়নশিল্প।<ref name=tt24052015/> অন্য মতে মুর্শিদ কুলি খাঁ ১৭০৪ সালে সুবে বাংলার রাজধানী ঢাকা থেকে মকসুদাবাদে স্থানান্তরিত করার পর তার বেগমদের জন্য নতুন শাড়ি তৈরীর হুকুম দেন বালুচরের তাঁতশিল্পীদের। তারা যে নতুন শাড়ি সৃষ্টি করেন তাই বালুচরী নামে খ্যাত হয়।<ref name=abp08082014>{{সংবাদ উদ্ধৃতি|শেষাংশ১=বন্দ্যোপাধ্যায়|প্রথমাংশ১=স্বপন|শিরোনাম=নকশা বদলে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই বালুচরীর|ইউআরএল=http://www.anandabazar.com/district/purolia-birvhum-bankura/%E0%A6%A8%E0%A6%95%E0%A6%B6-%E0%A6%AC%E0%A6%A6%E0%A6%B2-%E0%A6%98-%E0%A6%B0-%E0%A6%A6-%E0%A7%9C-%E0%A6%A8-%E0%A6%B0-%E0%A6%B2%E0%A7%9C-%E0%A6%87-%E0%A6%AC-%E0%A6%B2-%E0%A6%9A%E0%A6%B0-%E0%A6%B0-1.57516|সংগ্রহের-তারিখ=30 জানুয়ারি 2016|কর্ম=আনন্দবাজার পত্রিকা|প্রকাশক=এবিপি গ্রুপ|তারিখ=8 আগস্ট 2014}}</ref>
বালুচরীর জন্মকাল অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগ। বালুচরীর জন্ম বৃত্তান্ত নিয়ে নানান মত আছে। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে বর্তমান মুর্শিদাবাদ জেলার আজিমগঞ্জ-জিয়াগঞ্জ অঞ্চলে গড়ে ওঠে বাণিজ্যকেন্দ্র। দূরদূরান্ত থেকে মারোয়ারী, গুজরাতী, পঞ্জাবী, আর্মানী, ইহুদী, ইংরাজ, ফরাসী ও ওলন্দাজ বণিকরা বাণিজ্যের জন্য আসতে থাকেন এই অঞ্চলে। একটি মত অনুসারে সেই সময় গুজরাতী তাঁতীদেরও আগমন হয়, এবং তার ফলেই ভাগীরথীর পূর্ব পাড়ে বালুচরে গড়ে ওঠে বয়নশিল্প।<ref name=tt24052015/> অন্য মতে মুর্শিদ কুলি খাঁ ১৭০৪ সালে সুবে বাংলার রাজধানী ঢাকা থেকে মকসুদাবাদে স্থানান্তরিত করার পর তার বেগমদের জন্য নতুন শাড়ি তৈরীর হুকুম দেন বালুচরের তাঁতশিল্পীদের। তারা যে নতুন শাড়ি সৃষ্টি করেন তাই বালুচরী নামে খ্যাত হয়।<ref name=abp08082014>{{সংবাদ উদ্ধৃতি|শেষাংশ১=বন্দ্যোপাধ্যায়|প্রথমাংশ১=স্বপন|শিরোনাম=নকশা বদলে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই বালুচরীর|ইউআরএল=http://www.anandabazar.com/district/purolia-birvhum-bankura/%E0%A6%A8%E0%A6%95%E0%A6%B6-%E0%A6%AC%E0%A6%A6%E0%A6%B2-%E0%A6%98-%E0%A6%B0-%E0%A6%A6-%E0%A7%9C-%E0%A6%A8-%E0%A6%B0-%E0%A6%B2%E0%A7%9C-%E0%A6%87-%E0%A6%AC-%E0%A6%B2-%E0%A6%9A%E0%A6%B0-%E0%A6%B0-1.57516|সংগ্রহের-তারিখ=30 জানুয়ারি 2016|কর্ম=আনন্দবাজার পত্রিকা|প্রকাশক=এবিপি গ্রুপ|তারিখ=8 আগস্ট 2014}}</ref>
৪৫ নং লাইন: ৪৫ নং লাইন:
বাঁকুড়া জেলা ও রেশম, এর ওপর সরকারি ভৌগোলিক তকমা পড়ায় অন্যত্র ও অন্য জিনিসে তৈরি হলে বালুচরী নাম দেওয়া যাবে না৷ জাতীয় পুরস্কার, শিল্পমেলা ইত্যাদির কারণে বাংলা ও ভারতের বাইরেও এখন এ শাড়ির খ্যাতি ব্যাপ্ত৷ ২০১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর লন্ডন সফরের সময় রফতানি সংস্থা ওবিটি ও লরা অ্যাশলি কোম্পানির চুক্তি হয় ব্রিটেন ও জাপানের বাজারে লরা অ্যাশলির দোকানে বালুচরী, শীতলপাটি ও অন্যান্য বঙ্গজ সামগ্রী বিক্রির, বিশ্ব বাংলা সংস্থার জোগানদারিতে৷<ref name="timesofindia.indiatimes.com">[http://timesofindia.indiatimes.com/city/kolkata/Laura-Ashley-to-sell-Bengal-craft-in-UK-Japan/articleshow/48337143.cms Laura Ashley to sell Bengal craft in UK, Japan], The Times of India, August 4, 2015</ref> এসবের ফলে বালুচরীর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল৷
বাঁকুড়া জেলা ও রেশম, এর ওপর সরকারি ভৌগোলিক তকমা পড়ায় অন্যত্র ও অন্য জিনিসে তৈরি হলে বালুচরী নাম দেওয়া যাবে না৷ জাতীয় পুরস্কার, শিল্পমেলা ইত্যাদির কারণে বাংলা ও ভারতের বাইরেও এখন এ শাড়ির খ্যাতি ব্যাপ্ত৷ ২০১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর লন্ডন সফরের সময় রফতানি সংস্থা ওবিটি ও লরা অ্যাশলি কোম্পানির চুক্তি হয় ব্রিটেন ও জাপানের বাজারে লরা অ্যাশলির দোকানে বালুচরী, শীতলপাটি ও অন্যান্য বঙ্গজ সামগ্রী বিক্রির, বিশ্ব বাংলা সংস্থার জোগানদারিতে৷<ref name="timesofindia.indiatimes.com">[http://timesofindia.indiatimes.com/city/kolkata/Laura-Ashley-to-sell-Bengal-craft-in-UK-Japan/articleshow/48337143.cms Laura Ashley to sell Bengal craft in UK, Japan], The Times of India, August 4, 2015</ref> এসবের ফলে বালুচরীর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল৷


== বহিঃসংযোগ ==
== আরও দেখুন ==
* [http://www.utsavpedia.com/motifs-embroideries/baluchari-sari-bengali-delight/ Baluchari Sari Bengali Delight], Utsavpedia
*[https://gaathaonair.com gaathaonair]
*[https://gaathaonair.com Baluchari Sari Bengali Delight], Utsavpedia
* [http://www.silkmarkindia.com/blog/?p=95 Pride of Bengal – Baluchari Sarees], Silk Mark
* [http://www.silkmarkindia.com/blog/?p=95 Pride of Bengal – Baluchari Sarees], Silk Mark
* [https://youtube.com/watch?v=dRAm7nORL4U Making of baluchari Sari from Bishnupur Bankura West Bengal], YouTube
* [https://youtube.com/watch?v=dRAm7nORL4U Making of baluchari Sari from Bishnupur Bankura West Bengal], YouTube

১৫:০৪, ২৮ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

বালুচরী শাড়ি
বালুচরী শাড়িতে রেশম সুতো দিয়ে পৌরানিক গীতিকথা, দ্রোপদীর স্বয়ংবর সভা (অর্জুনের লক্ষ্যভেদ) তৈরী করা হয়েছে
উৎপত্তিকালঅষ্টাদশ শতাব্দী
উৎপত্তিস্থলবিষ্ণুপুর, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
উপাদানরেশম
দৈর্ঘ্য১৫ ফুট লম্বা ও ৪২ ইঞ্চি চওড়া, আঁচলের দৈর্ঘ্য ২৪ থেকে ৩২ ইঞ্চি
শৈলীবালুচরী শাড়ি এক প্রকারের রেশমজাত হাতে বোনা শাড়ি যার আঁচলের উপর বিবিধ পৌরাণিক ও অন্যান্য নকশা কাজ করা থাকে
প্রকারভেদচিত্র, কল্কা, পাড় ও বুটি
বিপণনকারীবিশ্ব বাংলা[১]
ভৌগোলিক নির্দেশক মর্যাদাঅনুমোদিত
ফাইল নং১৭৩
ওয়েবসাইটhttp://ipindia.nic.in/girindia/

বালুচরী পশ্চিমবঙ্গের প্রসিদ্ধ শাড়ি, ভারতের ভৌগোলিক স্বীকৃতি এবং বয়নশৈলীতে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পকর্ম৷ আঁচলে বিবিধ পৌরাণিক ও অন্যান্য নকশা-বোনা এই শাড়ি আভিজাত্যের প্রতীক হিসাবে গণ্য৷ বালুচরী শাড়ি তৈরিতে মোটামুটি ১ সপ্তাহ ও তার বেশি সময় লাগে ।[২] [৩] এই শাড়ি ভারতের ভৌগোলিক অস্তিত্বের ইঙ্গিত দেয়। [৪]

ইতিহাস

বালুচরীর জন্ম মুর্শিদাবাদ জেলার জিয়াগঞ্জের নিকটবর্তী অধুনালুপ্ত বালুচর নামক স্থানে। বালুচরের সঠিক অবস্থান নিয়ে নানান মত আছে। ভারত পথিক যদুনাথ সর্বাধিকারী তার ১৮৫৭ সালে রচিত ভ্রমণ বৃত্তান্তে জিয়াগঞ্জ শহরে বালুচর বলে একটি অঞ্চলের কথা উল্লেখ করেছেন যা চেলি ও গরদের আড়ত।[৫] মুর্শিদাবাদ জেলার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও রেশমশিল্প গবেষক নিত্যগোপাল মুখোপাধ্যায়ের মতে বহরমপুরের কয়েক মাইল উত্তরে ভাগীরথীর তীরে অবস্থিত ছিল বালুচর।[৬] ঐতিহাসিক বিনয় ঘোষের মতে জিয়াগঞ্জের বালুচর ছিল রেশমশিল্পজাত নানা প্রকার বস্ত্রাদির বড় আড়ত ও ব্যবসা কেন্দ্র। তাঁতশিল্পীদের বসতি ছিল জিয়াগঞ্জের নিকটবর্তী বাহাদুরপুর, বেলিয়াপুকুর, রামডহর, রমনাপাড়া, রণসাগর, আমডহর, বাগডহর, আমাইপাড়া প্রভৃতি গ্রামসমূহ।[৭] তারা তাদের রেশমের শাড়ি জিয়াগঞ্জের বালুচরে বিক্রি করতেন। বিক্রয় কেন্দ্রের নামেই শাড়ীর নাম হয় বালুচরী।[৭] লোকসংস্কৃতি গবেষক ডঃ সোমনাথ ভট্টাচার্যের মতে বালুচরীর উদ্ভব বালুচর অঞ্চলের নিকটবর্তী মীরপুর-বাহাদুরপুর গ্রামে।[৮]

বালুচরী শাড়িতে বিবিধ পৌরাণিক নকশা কাজ

বালুচরীর জন্মকাল অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগ। বালুচরীর জন্ম বৃত্তান্ত নিয়ে নানান মত আছে। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে বর্তমান মুর্শিদাবাদ জেলার আজিমগঞ্জ-জিয়াগঞ্জ অঞ্চলে গড়ে ওঠে বাণিজ্যকেন্দ্র। দূরদূরান্ত থেকে মারোয়ারী, গুজরাতী, পঞ্জাবী, আর্মানী, ইহুদী, ইংরাজ, ফরাসী ও ওলন্দাজ বণিকরা বাণিজ্যের জন্য আসতে থাকেন এই অঞ্চলে। একটি মত অনুসারে সেই সময় গুজরাতী তাঁতীদেরও আগমন হয়, এবং তার ফলেই ভাগীরথীর পূর্ব পাড়ে বালুচরে গড়ে ওঠে বয়নশিল্প।[৬] অন্য মতে মুর্শিদ কুলি খাঁ ১৭০৪ সালে সুবে বাংলার রাজধানী ঢাকা থেকে মকসুদাবাদে স্থানান্তরিত করার পর তার বেগমদের জন্য নতুন শাড়ি তৈরীর হুকুম দেন বালুচরের তাঁতশিল্পীদের। তারা যে নতুন শাড়ি সৃষ্টি করেন তাই বালুচরী নামে খ্যাত হয়।[৯]

নবাব মুর্শিদকুলি খানের উদ্যোগে সেখানে এই শিল্পের রমরমা দেখা দেয়৷[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] সেখানে এই শিল্পের শেষ বিখ্যাত কারিগর দুবরাজ দাস মারা যান ১৯০৩ সালে, তিনি চিত্রশিল্পীদের মত শাড়িতে নিজের নাম সই করতেন৷[১০] গঙ্গার বন্যায় এই গ্রাম বিধ্বস্ত হলে শিল্পীরা আশ্রয় নেন বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরে৷ সেখানে মল্ল রাজাদের পৃষ্ঠপোষণে এই শিল্পের সমৃদ্ধি ঘটে৷ মল্ল রাজাদের সময়ে নির্মিত টেরাকোটার মন্দির ও অন্যান্য শিল্পের প্রভাব পড়ে এই শাড়ির নকশায়৷ পরে ব্রিটিশ জমানায় অন্যান্য দেশীয় বয়নশিল্পের মত বালুচরীও দুর্দশাগ্রস্ত হয়৷ ১৯৫৬ সালে বিখ্যাত চিত্রশিল্পী সুভো ঠাকুর বা সুভগেন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগে এই শাড়ির বাণিজ্যিক বিস্তার ঘটে৷ তিনি তখনকার বিখ্যাত কারিগর অক্ষয়কুমার দাসকে রিজিওনাল ডিজাইন সেন্টারে (সুভো ঠাকুর এর ডিরেক্টর ছিলেন) সাবেক জালা তাঁতের পরিবর্তে জ্যাকার্ড তাঁতের ব্যবহার শেখান৷ পরের বছর অক্ষয় দাস অজন্তা-ইলোরার মোটিফ লাগিয়ে নতুন বালুচরী বাজারে আনলে এই শিল্পের উত্থান ঘটে৷

বর্ণনা

বালুচরী দৈর্ঘ্যে ১৫ ফুট লম্বা ও ৪২ ইঞ্চি চওড়া। আঁচলের দৈর্ঘ্য ২৪ থেকে ৩২ ইঞ্চি।[৮] গবেষিকা চিত্রা দেব বালুচরীর অলংকরণকে চার ভাগে ভাগ করেছেন, যথা চিত্র, কল্কা, পাড় ও বুটি। তার মতে চিত্র অংশের নকশা অন্যান্য শাড়ীতে দেখা যায় না।[৫]

রেশম বালুচরীতে নিত্য নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলে তৈরি হয়েছে অনেক ধরনের শাড়ি৷ এক বা দুই রঙের সাধারণ বালুচরী, রঙে ঝলমল মীনাকরী বালুচরী, গুরুদাস লক্ষ্মণ আবিষ্কৃত স্বর্ণচরী, অমিতাভ পালের সৃষ্টি রূপশালি ও মধুমালতী, অমিত লক্ষ্মণের সৃষ্টি দ্রৌপদী বালুচরী (মহাভারত টিভি সিরিয়ালের দ্রৌপদীর সাজসজ্জার অনুকরণে) ইত্যাদি এর নানা প্রকার৷[১১]

দ্রৌপদী বালুচরী

পদ্ধতি

এই শাড়ি মূলতঃ রেশম শাড়ি, যদিও পরে তুলো থেকে তাঁতের বালুচরী ও আজকাল বাঁশ, কলা ইত্যাদি গাছ থেকে পাওয়া সুতো থেকে জৈব বালুচরীও বানানো হয়েছে৷ একটা শাড়ি বানাতে দুজন কারিগরের এক সপ্তাহ বা বেশি সময় লাগে৷ প্রথমে গুটিপোকা থেকে রেশম সংগৃহীত হয়, পরে তা সোডা ও গরম জলে সেদ্ধ করা হয় ও অ্যাসিড রঙে চোবানো হয়৷ তারপর দুদিক দিয়ে টেনে টানটান করা হয়, যাতে সুতো দিয়ে কাপড় বোনা যায়৷ শাড়ির নকশাগুলি কাগজে এঁকে পাঞ্চিং কার্ডের সাহায্যে শাড়িতে বসিয়ে দেওয়া হয়৷ আজকাল পরিবেশ বাঁচাতে নানা জৈব রঙও ব্যবহৃত হচ্ছে৷

ভবিষ্যৎ

বাঁকুড়া জেলা ও রেশম, এর ওপর সরকারি ভৌগোলিক তকমা পড়ায় অন্যত্র ও অন্য জিনিসে তৈরি হলে বালুচরী নাম দেওয়া যাবে না৷ জাতীয় পুরস্কার, শিল্পমেলা ইত্যাদির কারণে বাংলা ও ভারতের বাইরেও এখন এ শাড়ির খ্যাতি ব্যাপ্ত৷ ২০১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর লন্ডন সফরের সময় রফতানি সংস্থা ওবিটি ও লরা অ্যাশলি কোম্পানির চুক্তি হয় ব্রিটেন ও জাপানের বাজারে লরা অ্যাশলির দোকানে বালুচরী, শীতলপাটি ও অন্যান্য বঙ্গজ সামগ্রী বিক্রির, বিশ্ব বাংলা সংস্থার জোগানদারিতে৷[১] এসবের ফলে বালুচরীর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল৷

বহিঃসংযোগ

তথ্যসূত্র

  1. Laura Ashley to sell Bengal craft in UK, Japan, The Times of India, August 4, 2015
  2. BALASUBRAMANIAM, CHITRA (১৪ জানুয়ারি ২০১২)। "Recreating the age-old Baluchari magic"The Hindu। Chennai, India। ১৬ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০১২ 
  3. Mookerji, Madhumita। "Baluchari silk loses its sheen to Benarasi"DNA। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০১২ 
  4. "Journal 41 GI Application 173" (পিডিএফ)। Controller General of Patents, Designs, and Trade Marks, Government of India। ৯ আগস্ট ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জানুয়ারি ২০১৩ 
  5. আবেদিন, অনল (২৯ অক্টোবর ২০১৫)। "বালুচরি কার, জমাট বিতর্ক পত্রিকার শারদ সংখ্যায়"আনন্দবজার পত্রিকা। এবিপি গ্রুপ। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জানুয়ারি ২০১৬ 
  6. কার্লেকর, মালবিকা (২৪ মে ২০১৫)। "History of a weave - Of tapestries, hookahs and howdas"দ্য টেলিগ্রাফ। এবিপি গ্রুপ। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জানুয়ারি ২০১৬ 
  7. ঘোষ, বিনয় (ডিসেম্বর ২০০৯)। পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি, তৃতীয় খন্ড (পঞ্চম মুদ্রণ, প্রথম সংস্করণ)। প্রকাশ ভবন। পৃষ্ঠা ৫৫। 
  8. ভট্টাচার্য, ডঃ সোমনাথ; বসু, অর্পিতা (ডিসেম্বর ২০০৭)। চক্রবর্তী, বরুণকুমার, সম্পাদক। বঙ্গীয় লোকসংস্কৃতি কোষ (দ্বিতীয় পরিবর্ধিত, পরিমার্জিত সংস্করণ)। কলকাতা: অপর্ণা বুক ডিস্ট্রিবিউটার্স। পৃষ্ঠা ৩৪০–৩৪১। আইএসবিএন 81-86036-13-X 
  9. বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বপন (৮ আগস্ট ২০১৪)। "নকশা বদলে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই বালুচরীর"আনন্দবাজার পত্রিকা। এবিপি গ্রুপ। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জানুয়ারি ২০১৬ 
  10. Photoloomic ~ Baluchari ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৭ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে, Gaatha
  11. পুজোর বাজারে নতুন বালুচরী, স্বর্ণচরী, আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৪ অক্টোবর, ২০১৫