তপন সিংহ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
৫২ নং লাইন: ৫২ নং লাইন:
১৯৬৪ সালে তপন সিংহ সুবোধ ঘোষের ছোটগল্প জতুগৃহ - এর চিত্র রূপ দেন। সুবোধ ঘোষের ছোট গল্পটি এক মধ্যবিত্ত মাঝ বয়সী দম্পতির বিবাহ বিচ্ছিন্নতার কাহিনী। সংযত আবেগের হীরক দ্যুতিতে উজ্জ্বল এই ছোটগল্পটিকে ছবির প্রয়োজনে পরিচালক অনেকখানি বাড়িয়ে নিলেন, পাশাপাশি আরও দুটি দম্পতির কাহিনীও জুড়ে দিলেন। সুবোধ ঘোষের কাহিনী তার তীক্ষ্ণতা কিছুটা হারালেও, ছবিটি একটি পরিচ্ছন্ন আবেগধর্মী শিল্পসৃষ্টি হতে পেরেছিল। মধ্যবিত্ত পরিশীলিত দর্শক এই ছবিটিকে মর্যাদার সঙ্গে গ্রহণ করেছিল। শতদল ও মাধুরীর মত দুটি সৎ এবং হৃদয়বান চরিত্রে উত্তম কুমার এবং অরুন্ধতী দেবীর অভিনয় অসাধারণ।
১৯৬৪ সালে তপন সিংহ সুবোধ ঘোষের ছোটগল্প জতুগৃহ - এর চিত্র রূপ দেন। সুবোধ ঘোষের ছোট গল্পটি এক মধ্যবিত্ত মাঝ বয়সী দম্পতির বিবাহ বিচ্ছিন্নতার কাহিনী। সংযত আবেগের হীরক দ্যুতিতে উজ্জ্বল এই ছোটগল্পটিকে ছবির প্রয়োজনে পরিচালক অনেকখানি বাড়িয়ে নিলেন, পাশাপাশি আরও দুটি দম্পতির কাহিনীও জুড়ে দিলেন। সুবোধ ঘোষের কাহিনী তার তীক্ষ্ণতা কিছুটা হারালেও, ছবিটি একটি পরিচ্ছন্ন আবেগধর্মী শিল্পসৃষ্টি হতে পেরেছিল। মধ্যবিত্ত পরিশীলিত দর্শক এই ছবিটিকে মর্যাদার সঙ্গে গ্রহণ করেছিল। শতদল ও মাধুরীর মত দুটি সৎ এবং হৃদয়বান চরিত্রে উত্তম কুমার এবং অরুন্ধতী দেবীর অভিনয় অসাধারণ।


১৯৬৬ সালে তপন সিংহ এর নিজের লেখা গল্প নিয়ে মজাদার ফ্যান্টাসি গল্প হলেও সত্যি এক সমাজমনস্ক শিল্পীর রূপক ধর্মী ইচ্ছাপূরণের কাহিনী, জনগণকে যা প্রচুর পরিমাণে নির্মল আনন্দ দিতে পেরেছিল।এই ছবিতে বিখ্যাত অভিনেতা রবি ঘোষ শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেন। গল্প হলেও সত্যি শেষ পর্যন্ত প্রতিপন্ন হয় ভাঙ্গনশীল সাবেকি একান্নবর্তী পরিবারব্যবস্থার ইউটোপিয়াকে টিকিয়ে রাখার মরিয়া প্রয়াস রূপে। ধনঞ্জয় (চরিত্রায়নে রবি ঘোষ) যে তপন সিংহের বয়ানে আদপে কোন চরিত্র নয়, নিছকই এক আইডিয়ামাত্র (যার আবির্ভাব এবং অন্তর্ধান উভয়ই কুয়াশার প্রেক্ষাপটে)।
== ছবির তালিকা ==

১৯৬৭ সালে তপন সিংহ নির্মাণ করেন বনফুলের উপন্যাস অবলম্বনে হাটে বাজারে। অশোককুমার এবং বৈজয়ন্তিমালার মত সর্বভারতীয় গ্ল্যামারস অভিনেতা নিলেও তাদের দিয়ে পরিচালক অভিনয় করিয়েছিলেন একেবারে চরিত্রপোযোগী । নাটকের জগতের মানুষ অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, খলনায়কের ভূমিকায় অসাধারণ অভিনয় করেছিলেন। হাটে বাজারে সর্বভারতীয় শ্রেষ্ঠ ছবি হিসেবে রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক পায় এবং ক্যাম্বোডিয়ার নমপেন-এ এশিয়ান চলচ্চিত্র উৎসবে গভীর মানবিক আবেদনের জন্য একটি রৌপ্যপদক পায়।

১৯৭০ সালে তপন সিংহ নির্মাণ করেন সাগিনা মাহাতো, কাহিনীকার গৌরকিশোর ঘোষ। চিত্র সমালোচক অমিতাভ চট্টোপাধ্যায়ের ক্রুদ্ধ আক্রমণ.... "এরপর তপন সিংহ আরেকটি কীর্তি করলেন গৌরকিশোর ঘোষের কুখ্যাত এবং অসদুদ্দেশ্য-প্রণোদিত গ্রন্থ সাগিনা মাহাতো অবলম্বনে ছবি তুলতে গিয়ে। ছবিতে শ্রমিক আন্দোলনকে যেভাবে চিত্রিত করা হয়, তার সঙ্গে বাস্তবের কোন মিল নেই। বোম্বে থেকে আমদানি করা হলো "স্টার"দের। মূল গল্প থেকে চিত্রনাট্য অনেক পালটাতে হলো রাজনৈতিক চাপে পড়ে। তবুও সত্যিকারের সংগ্রামী শ্রমিক চরিত্র সৃষ্টি হলো না। শ্রমিক আন্দোলনের বিকৃত চেহারা এবং সবাইকে ছেড়ে একজনকে "হিরো" বানাবার অযৌক্তিক প্রয়াস দেখা গেল।" ছবিটি প্রথমে বামপন্থী দর্শকের মনে একটা ধাক্কা দিলও তপন সিংহ কিন্তু নিজের জীবন দর্শন থেকে কোনদিনই একচুল বিচ্যুত হননি। আজীবন যা বিশ্বাস করেছেন তাঁর শিল্পকর্মেও তারই প্রতিফলন ঘটেছে। নিজের বিশ্বাসের জগতে তিনি সৎ এবং নীতিনিষ্ঠ ।মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এই ছবি অ্যাফ্রো-এশিয়ান অ্যাওয়ার্ড পায়।

১৯৮০ সালে মনোজ মিত্রের লেখা নাটক “সাজানো বাগান” -অবলম্বনে তপন সিনহা ‘বাঞ্ছারামের বাগান’ ছবি বানান৷ তাতে বাঞ্ছারামের ভূমিকায় তাঁর অসাধারণ অভিনয়ের জন্য দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন মনোজ মিত্র।

১৯৮১ সালে তপন সিংহ পরিচালনা করেন আদালত ও একটি মেয়ে। কাহিনীকার তপনবাবু নিজেই। আদালত ও একটি মেয়ে একটি সামাজিক অবক্ষয়ের ছবি। ছবির বিষয়বস্তু ধর্ষণ এবং তার বিচার। মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন তনুজা। এই ছবিটি শ্রেষ্ঠ বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে।

১৯৯১ সালে ডক্টর সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের জীবন ও কর্মের ওপর ভিত্তি করে লেখা রমাপদ চৌধুরীর উপন্যাস 'অভিমন্যু' নিয়ে ছবি করেন তপন সিনহা। তাঁর জীবনর ঘটনা নিয়ে তপন সিনহা এক ডক্টর কি মউত নামক হিন্দি চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন।

১৯৯৪ সালে তপন সিংহ পরিচালনা করেন হুইল চেয়ার। হুইল চেয়ারে রয়েছে প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে অপরাজেয় মানুষের দুঃসাহসিক সংগ্রামের কাহিনী। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও অক্ষমতার বিরুদ্ধে অসীম মনোবল নিয়ে লড়াই চালিয়ে বেঁচে থাকার আনন্দ খুঁজে নিয়েছেন এই ছবির দুই কেন্দ্রীয় চরিত্র। হুইল চেয়ার বুক থেকে পায়ের আঙ্গুল পর্যন্ত বিকলাঙ্গ একটি যুবতী মেয়েকে স্বাভাবিক করে তোলার এক অমানুষিক যুদ্ধের কাহিনী।

ছবির তালিকা

# ডটার্স অফ দিস সেঞ্চুরি (Daughters of This Century) (২০০১)
# ডটার্স অফ দিস সেঞ্চুরি (Daughters of This Century) (২০০১)
# আনোখা মোতি (২০০০)
# আনোখা মোতি (২০০০)

১৭:১৪, ২৭ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

তপন সিংহ
ভারত সরকার প্রকাশিত তপন সিংহের ডাকটিকিট
জন্ম২ অক্টোবর,১৯২৪
মৃত্যু১৫ জানুয়ারি, ২০০৯
নাগরিকত্বভারত কলকাতা, ভারত
পরিচিতির কারণচলচ্চিত্র পরিচালক
দাম্পত্য সঙ্গীঅরুন্ধতী দেবী
পুরস্কারদাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার

তপন সিংহ (জন্ম: ২ অক্টোবর, ১৯২৪ — মৃত্যু: ১৫ জানুয়ারি, ২০০৯) একজন বিখ্যাত ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক। অভিনেত্রী অরুন্ধতী দেবী তার পত্নী ছিলেন।

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

১৯২৪ সালের ২রা অক্টোবর বীরভূম জেলার মুরারই থানার জাজিগ্রামের প্রসিদ্ধ সিংহ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতোকত্তর করার পর তিনি ১৯৪৬ সালে নিউ থিয়েটার্স স্টুডিওতে সহকারী শব্দগ্রহণকারী হিসাবে যোগ দেন। পরবর্তীকালে তিনি দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার লাভ করেন।[১][২]

কর্মজীবন

চলচ্চিত্র জীবন

সিনহার প্রথম ছবি অঙ্কুশ নারায়ণ গাঙ্গুলির গল্প সৈনিক অবলম্বনে নির্মিত, কেন্দ্রীয় চরিত্রে একটি হাতি ছিল। তাঁর পরবর্তী ছবি উপহার এ উত্তম কুমার, মঞ্জু দে, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় এবং নির্মলকুমার অভিনয় করেছিলেন। তপন সিংহের চতুর্থ ছবি রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প নিয়ে কাবুলিওয়ালা (১৯৫৭)। তপন সিংহ রাতারাতি বাঙালি দর্শক সমাজের মন জয় করে ফেলেন। ছবিটি শ্রেষ্ঠ ভারতীয় ছবি হিসেবে রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক এবং শ্রেষ্ঠ বাংলা ছবি হিসেবে রৌপ্যপদক পেল। তপন সিংহের খ্যাতি দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ল। এছাড়া বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ আবহসংগীতের জন্য রবিশঙ্কর পেলেন রৌপ্য ভাল্লুক পুরস্কার ।

১৯৫৮ সালে তপন সিংহ পরিচালিত লৌহ-কপাট জরাসন্ধের লেখা জেল কয়েদিদের জীবনের করুণ আলেখ্য। মতামত আর আবেগের কাহিনী। ছবিটি  কলকাতার রূপবাণী-অরুনা-ভারতী হল তিনটিতে বেশ অনেকদিন ধরে চলেছিল।

ক্ষণিকের অতিথি (১৯৫৯) একটি বিয়োগান্তক প্রেমের কাহিনী, সেই সঙ্গে মানবিক আবেদনেও ভরপুর। এই ছবির কাহিনীকার তপন সিংহ নিজেই (নির্মল কুমার সেনগুপ্ত ছদ্মনামে)।

১৯৬১ সালে, ঝিন্দের বন্দি বাংলা সাহিত্যের সুপরিচিত সাহিত্যিক শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত। অভিনেতাদের মধ্যে ছিলেন উত্তম কুমার, অরুন্ধতী দেবী, সৌমিত্র চ্যাটার্জী, রাধামোহন ভট্টাচার্য, তরুণ কুমার, দিলীপ রায়, সন্ধ্যা রায়। উত্তম ও সৌমিত্র প্রথম এই সিনেমায় একসঙ্গে অভিনয় করেছিলেন। সৌমিত্র প্রথমবার ভিলেন "ময়ূরবাহন" চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।

ঝিন্দের বন্দী তে উত্তম-সৌমিত্র জুটির অভিনয়ের পর তপন সিংহ এবার হাত দিলেন হাঁসুলী বাঁকের উপকথা-এ (১৯৬২)। ছবিটিতে এত চরিত্র যে, চরিত্র চিত্রণই ছিল খুব কঠিন কাজ। আর সে কাজও অসাধারণভাবে করেছিলেন তপন সিংহ। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা হাঁসুলী বাঁকের উপকথা ছিল বীরভূমের লাভপুরকে কেন্দ্র করে লেখা। সেখানেই শ্যুটিং হয়েছিল এই ছবির। কোপাই নদী যেখানে হাঁসুলীর মত বাঁক নিয়েছে, সেখানেও কাজ হয়েছিল। প্রত্যেকটি চরিত্র ছিল জীবন্ত। ছবিতে কোন ডাবিং হয়নি, পুরোটাই আউটডোর সাউন্ড রাখা হয়েছিল। ছবির জন্য গানগুলো লিখেছিলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ছবিটি ১৯৬২ সালে সান ফ্রান্সিস্কো ফেস্টিভ্যালে পুরস্কার পেয়েছিল। এই উৎসবে তপন সিংহও একজন জুরি ছিলেন। ওখানকার মেয়র তপন সিংহর হাতে ওই শহরের চাবি তুলে দিয়ে সম্মান জানিয়েছিলেন ।

নির্জন সৈকেতে ছবিতে (১৯৬৩) অনিল চ্যাটার্জি, শর্মিলা ঠাকুর, ছায়া দেবী, রুমা গুহ ঠাকুরতা, ভারতীদেবী, রেণুকাদেবী, রবি ঘোষ, পাহাড়ি সান্যাল, নবদ্বীপ হালদার এবং জহর গাঙ্গুলির মতো শিল্পী অভিনয় করেছেন। এটি ভ্রমণ কাহিনী, কালকূটের (সমরেশ বসুর ছদ্মনাম ) একই নামের উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে নির্মিত।

১৯৬৪ সালে তপন সিংহ সুবোধ ঘোষের ছোটগল্প জতুগৃহ - এর চিত্র রূপ দেন। সুবোধ ঘোষের ছোট গল্পটি এক মধ্যবিত্ত মাঝ বয়সী দম্পতির বিবাহ বিচ্ছিন্নতার কাহিনী। সংযত আবেগের হীরক দ্যুতিতে উজ্জ্বল এই ছোটগল্পটিকে ছবির প্রয়োজনে পরিচালক অনেকখানি বাড়িয়ে নিলেন, পাশাপাশি আরও দুটি দম্পতির কাহিনীও জুড়ে দিলেন। সুবোধ ঘোষের কাহিনী তার তীক্ষ্ণতা কিছুটা হারালেও, ছবিটি একটি পরিচ্ছন্ন আবেগধর্মী শিল্পসৃষ্টি হতে পেরেছিল। মধ্যবিত্ত পরিশীলিত দর্শক এই ছবিটিকে মর্যাদার সঙ্গে গ্রহণ করেছিল। শতদল ও মাধুরীর মত দুটি সৎ এবং হৃদয়বান চরিত্রে উত্তম কুমার এবং অরুন্ধতী দেবীর অভিনয় অসাধারণ।

১৯৬৬ সালে তপন সিংহ এর নিজের লেখা গল্প নিয়ে মজাদার ফ্যান্টাসি গল্প হলেও সত্যি এক সমাজমনস্ক শিল্পীর রূপক ধর্মী ইচ্ছাপূরণের কাহিনী, জনগণকে যা প্রচুর পরিমাণে নির্মল আনন্দ দিতে পেরেছিল।এই ছবিতে বিখ্যাত অভিনেতা রবি ঘোষ শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেন। গল্প হলেও সত্যি শেষ পর্যন্ত প্রতিপন্ন হয় ভাঙ্গনশীল সাবেকি একান্নবর্তী পরিবারব্যবস্থার ইউটোপিয়াকে টিকিয়ে রাখার মরিয়া প্রয়াস রূপে। ধনঞ্জয় (চরিত্রায়নে রবি ঘোষ) যে তপন সিংহের বয়ানে আদপে কোন চরিত্র নয়, নিছকই এক আইডিয়ামাত্র (যার আবির্ভাব এবং অন্তর্ধান উভয়ই কুয়াশার প্রেক্ষাপটে)।

১৯৬৭ সালে তপন সিংহ নির্মাণ করেন বনফুলের উপন্যাস অবলম্বনে হাটে বাজারে। অশোককুমার এবং বৈজয়ন্তিমালার মত সর্বভারতীয় গ্ল্যামারস অভিনেতা নিলেও তাদের দিয়ে পরিচালক অভিনয় করিয়েছিলেন একেবারে চরিত্রপোযোগী । নাটকের জগতের মানুষ অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, খলনায়কের ভূমিকায় অসাধারণ অভিনয় করেছিলেন। হাটে বাজারে সর্বভারতীয় শ্রেষ্ঠ ছবি হিসেবে রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক পায় এবং ক্যাম্বোডিয়ার নমপেন-এ এশিয়ান চলচ্চিত্র উৎসবে গভীর মানবিক আবেদনের জন্য একটি রৌপ্যপদক পায়।

১৯৭০ সালে তপন সিংহ নির্মাণ করেন সাগিনা মাহাতো, কাহিনীকার গৌরকিশোর ঘোষ। চিত্র সমালোচক অমিতাভ চট্টোপাধ্যায়ের ক্রুদ্ধ আক্রমণ.... "এরপর তপন সিংহ আরেকটি কীর্তি করলেন গৌরকিশোর ঘোষের কুখ্যাত এবং অসদুদ্দেশ্য-প্রণোদিত গ্রন্থ সাগিনা মাহাতো অবলম্বনে ছবি তুলতে গিয়ে। ছবিতে শ্রমিক আন্দোলনকে যেভাবে চিত্রিত করা হয়, তার সঙ্গে বাস্তবের কোন মিল নেই। বোম্বে থেকে আমদানি করা হলো "স্টার"দের। মূল গল্প থেকে চিত্রনাট্য অনেক পালটাতে হলো রাজনৈতিক চাপে পড়ে। তবুও সত্যিকারের সংগ্রামী শ্রমিক চরিত্র সৃষ্টি হলো না। শ্রমিক আন্দোলনের বিকৃত চেহারা এবং সবাইকে ছেড়ে একজনকে "হিরো" বানাবার অযৌক্তিক প্রয়াস দেখা গেল।" ছবিটি প্রথমে বামপন্থী দর্শকের মনে একটা ধাক্কা দিলও তপন সিংহ কিন্তু নিজের জীবন দর্শন থেকে কোনদিনই একচুল বিচ্যুত হননি। আজীবন যা বিশ্বাস করেছেন তাঁর শিল্পকর্মেও তারই প্রতিফলন ঘটেছে। নিজের বিশ্বাসের জগতে তিনি সৎ এবং নীতিনিষ্ঠ ।মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এই ছবি অ্যাফ্রো-এশিয়ান অ্যাওয়ার্ড পায়।

১৯৮০ সালে মনোজ মিত্রের লেখা নাটক “সাজানো বাগান” -অবলম্বনে তপন সিনহা ‘বাঞ্ছারামের বাগান’ ছবি বানান৷ তাতে বাঞ্ছারামের ভূমিকায় তাঁর অসাধারণ অভিনয়ের জন্য দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন মনোজ মিত্র।

১৯৮১ সালে তপন সিংহ পরিচালনা করেন আদালত ও একটি মেয়ে। কাহিনীকার তপনবাবু নিজেই। আদালত ও একটি মেয়ে একটি সামাজিক অবক্ষয়ের ছবি। ছবির বিষয়বস্তু ধর্ষণ এবং তার বিচার। মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন তনুজা। এই ছবিটি শ্রেষ্ঠ বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে।

১৯৯১ সালে ডক্টর সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের জীবন ও কর্মের ওপর ভিত্তি করে লেখা রমাপদ চৌধুরীর উপন্যাস 'অভিমন্যু' নিয়ে ছবি করেন তপন সিনহা। তাঁর জীবনর ঘটনা নিয়ে তপন সিনহা এক ডক্টর কি মউত নামক হিন্দি চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন।

১৯৯৪ সালে তপন সিংহ পরিচালনা করেন হুইল চেয়ার। হুইল চেয়ারে রয়েছে প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে অপরাজেয় মানুষের দুঃসাহসিক সংগ্রামের কাহিনী। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও অক্ষমতার বিরুদ্ধে অসীম মনোবল নিয়ে লড়াই চালিয়ে বেঁচে থাকার আনন্দ খুঁজে নিয়েছেন এই ছবির দুই কেন্দ্রীয় চরিত্র। হুইল চেয়ার বুক থেকে পায়ের আঙ্গুল পর্যন্ত বিকলাঙ্গ একটি যুবতী মেয়েকে স্বাভাবিক করে তোলার এক অমানুষিক যুদ্ধের কাহিনী।

ছবির তালিকা

  1. ডটার্স অফ দিস সেঞ্চুরি (Daughters of This Century) (২০০১)
  2. আনোখা মোতি (২০০০)
  3. হুইল চেয়ার (১৯৯৪)
  4. এক ডক্টর কি মউত (১৯৯১)
  5. আজ কা রবিনহুড (১৯৮৭)
  6. আতঙ্ক (১৯৮৬)
  7. বৈদুর্য রহস্য (১৯৮৫)
  8. আদমি আউর অউরত (১৮৮৪) (দূরদর্শন)
  9. অভিমন্যু (১৯৮৩)
  10. আদালত ও একটি মেয়ে (১৯৮২)
  11. বাঞ্ছারামের বাগান (১৯৮০)
  12. সবুজ দ্বীপের রাজা (১৯৭৯)
  13. সফেদ হাতি (১৯৭৭)
  14. সাগিনা (১৯৭৪)
  15. জিন্দেগি জিন্দেগি (১৯৭২)
  16. সাগিনা মাহাতো (১৯৭০)
  17. আপঞ্জন (১৯৬৮)
  18. হাটে বাজারে (১৯৬৭)
  19. গল্প হলেও সত্যি (১৯৬৬)
  20. আরোহী (১৯৬৫)
  21. অতিথি (১৯৬৫)
  22. জতুগৃহ (১৯৬৪)
  23. নির্জন সৈকতে (১৯৬৩)
  24. হাঁসুলী বাঁকের উপকথা (১৯৬২)
  25. ঝিন্দের বন্দী (১৯৬১)
  26. ক্ষুধিত পাষাণ (১৯৬০)
  27. কাবুলীওয়ালা (১৯৫৭) - বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভাল-এ প্রদর্শিত
  28. উপহার (১৯৫৫)
  29. অঙ্কুশ (১৯৫৪)

তথ্যসূত্র

  1. রিডিফ.কম
  2. "Filmmaker Tapan Sinha dead -India-The Times of India"। indiatimes.com। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০১-১৬ 

বহি:সংযোগ