দীনেশ গুপ্ত: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল অ্যাপ সম্পাদনা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ সম্পাদনা
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[চিত্র:Binay Badal Dinesh - Wikimedia Photowalk Kolkata 20111218 IMG 4578.jpg|thumb|[[কলকাতা]]র [[বিবাদীবাগ|বিবাদীবাগে]] বিনয় বসু ও বাদল গুপ্তের সঙ্গে দীনেশ গুপ্তের প্রতিমূর্তি (ডানদিকে)]]
[[চিত্র:Binay Badal Dinesh - Wikimedia Photowalk Kolkata 20111218 IMG 4578.jpg|thumb|[[কলকাতা]]র [[বিবাদীবাগ|বিবাদীবাগে]] বিনয় বসু ও বাদল গুপ্তের সঙ্গে দীনেশ গুপ্তের প্রতিমূর্তি (ডানদিকে)]]
[[চিত্র:Dinesh Gupta.jpg|right|thumb|দীনেশ গুপ্ত''' ([[১৯১২]]-[[১৯৩০]]) একজন বাঙালি বিপ্লবী ও মুক্তিসংগ্রামী]]
[[চিত্র:Dinesh Gupta.jpg|right|thumb|দীনেশ গুপ্ত''' ([[১৯১২]]-[[১৯৩০]]) একজন বাঙালি বিপ্লবী ও মুক্তিসংগ্রামী]]
'''দীনেশচন্দ্র গুপ্ত''' (জন্ম - [[৬ ডিসেম্বর]], [[১৯১১]]: মৃত্যু - [[৭ জুলাই]], [[১৯৩১]]) ছিলেন [[ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন|ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে]] অংশগ্রহণকারী একজন স্বনামধন্য [[বাঙালি]] বিপ্লবী। তিনি '''দীনেশ গুপ্ত''' নামেই সমধিক পরিচিত। তিনি [[ঢাকা]] ও [[মেদিনীপুর|মেদিনীপুরে]] বিপ্লবী সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। মেদিনীপুরে তাঁর সংগঠন পরপর তিন জন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে হত্যা করেছিল।<ref name = charitabhidhan>''বাঙালি চরিতাভিধান'' প্রথম খণ্ড, সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, সংশোধিত চতুর্থ সংস্করণ, ১৯৯৮, পৃ. ২০৭</ref> ১৯৩০ সালের ৮ ডিসেম্বর বিপ্লবী [[বিনয় বসু|বিনয় বসুর]] নেতৃত্বে তিনি ও [[বাদল গুপ্ত]] [[কলকাতা|কলকাতার]] [[রাইটার্স বিল্ডিং]] (বর্তমান [[মহাকরণ]]) ভবনে অভিযান চালিয়ে,
'''দীনেশচন্দ্র গুপ্ত''' (জন্ম - [[৬ ডিসেম্বর]], [[১৯১১]]: মৃত্যু - [[৭ জুলাই]], [[১৯৩১]]) ছিলেন [[ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন|ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে]] অংশগ্রহণকারী একজন স্বনামধন্য [[বাঙালি]] বিপ্লবী। তিনি '''দীনেশ গুপ্ত''' নামেই সমধিক পরিচিত। তিনি [[ঢাকা]] ও [[মেদিনীপুর|মেদিনীপুরে]] বিপ্লবী সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। মেদিনীপুরে তার সংগঠন পরপর তিন জন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে হত্যা করেছিল।<ref name = charitabhidhan>''বাঙালি চরিতাভিধান'' প্রথম খণ্ড, সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, সংশোধিত চতুর্থ সংস্করণ, ১৯৯৮, পৃ. ২০৭</ref> ১৯৩০ সালের ৮ ডিসেম্বর বিপ্লবী [[বিনয় বসু|বিনয় বসুর]] নেতৃত্বে তিনি ও [[বাদল গুপ্ত]] [[কলকাতা|কলকাতার]] [[রাইটার্স বিল্ডিং]] (বর্তমান [[মহাকরণ]]) ভবনে অভিযান চালিয়ে,
বিভাগের অত্যাচারী ইন্সপেক্টর জেনারেল সিম্পসনকে হত্যা করেন। রাইটার্স বিল্ডিং-এর অলিন্দে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের খণ্ডযুদ্ধে বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ ইউরোপীয় কর্মচারী গুরুতরভাবে আহতও হন। এরপর তাঁরা আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। অপর দুই বিপ্লবী আত্মহত্যায় সমর্থ হলেও মৃতপ্রায় দীনেশকে পুলিশ বাঁচিয়ে তুলতে সক্ষম হয়। বিচারে তাঁর ফাঁসির আদেশ হয়। মৃত্যুর পূর্বে জেলে বসে তিনি কয়েকটি চিঠি লিখেছিলেন। এই চিঠিগুলি ভারতের বিপ্লবী ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দলিল এবং সাহিত্যিক বিচারেও অত্যন্ত মূল্যবান।<ref name = charitabhidhan/> স্বাধীনতার পর তাঁরতাঁর অপর দুই সহবিপ্লবীর সম্মানার্থে কলকাতার প্রসিদ্ধ ডালহৌসি স্কোয়ারের নাম [[বিনয়-বাদল-দীনেশ বাগ]] (সংক্ষেপে বিবাদীবাগ) রাখা হয়।
বিভাগের অত্যাচারী ইন্সপেক্টর জেনারেল সিম্পসনকে হত্যা করেন। রাইটার্স বিল্ডিং-এর অলিন্দে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের খণ্ডযুদ্ধে বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ ইউরোপীয় কর্মচারী গুরুতরভাবে আহতও হন। এরপর তারা আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। অপর দুই বিপ্লবী আত্মহত্যায় সমর্থ হলেও মৃতপ্রায় দীনেশকে পুলিশ বাঁচিয়ে তুলতে সক্ষম হয়। বিচারে তার ফাঁসির আদেশ হয়। মৃত্যুর পূর্বে জেলে বসে তিনি কয়েকটি চিঠি লিখেছিলেন। এই চিঠিগুলি ভারতের বিপ্লবী ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দলিল এবং সাহিত্যিক বিচারেও অত্যন্ত মূল্যবান।<ref name = charitabhidhan/> স্বাধীনতার পর তারতার অপর দুই সহবিপ্লবীর সম্মানার্থে কলকাতার প্রসিদ্ধ ডালহৌসি স্কোয়ারের নাম [[বিনয়-বাদল-দীনেশ বাগ]] (সংক্ষেপে বিবাদীবাগ) রাখা হয়।


== প্রাথমিক জীবন ==
== প্রাথমিক জীবন ==
বিপ্লবী দীনেশ গুপ্তের জন্ম হয় ১৯১১ সালের ৬ ডিসেম্বর (বাংলা ১৩১৮ সালের ২০ অগ্রহায়ণ) তদনীন্তন ঢাকা জেলার (অধুনা [[বাংলাদেশ]] রাষ্ট্রের [[মুন্সিগঞ্জ জেলা]]) যশোলঙে। তাঁর পিতার নাম সতীশচন্দ্র গুপ্ত ও মায়ের নাম বিনোদিনী দেবী। দীনেশ গুপ্তের ডাকনাম ছিল নসু।<ref name = charitabhidhan/> চার ভাই ও চার বোনের মধ্যে দীনেশ ছিলেন পিতামাতার তৃতীয় সন্তান। সতীশচন্দ্র ছিলেন ডাক বিভাগের কর্মচারী। চাকরির সূত্রে তিনি কিছুকাল গৌরীপুরে অবস্থান করেন। গৌরীপুরের পাঠশালাতেই দীনেশের শিক্ষারম্ভ। পরে নয় বছর বয়সে ভর্তি হন [[ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল|ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে]]। প্রথম দিকে দীনেশ ঢাকার গ্যান্ডারিয়া অঞ্চলে দাদুর বাড়িতে বাস করতেন, পরে উয়াড়িতে পৈত্রিক বাসভবনে চলে আসেন। বাল্যকাল থেকেই দীনেশ ছিলেন নির্ভীক, বেপরোয়া ও বাগ্মী। এই সময় থেকেই তাঁর মনে স্বদেশ চেতনা ও ব্রিটিশ বিরোধিতার আদর্শ সঞ্চারিত হয়েছিল।<ref name = jibonsahityopatrabali>''শহীদ দীনেশ গুপ্তের জীবন, সাহিত্য ও পত্রাবলী'', অসিতাভ দাস, রচয়িতা, কলকাতা, ২০০৮, পৃ. ২-৩</ref>
বিপ্লবী দীনেশ গুপ্তের জন্ম হয় ১৯১১ সালের ৬ ডিসেম্বর (বাংলা ১৩১৮ সালের ২০ অগ্রহায়ণ) তদনীন্তন ঢাকা জেলার (অধুনা [[বাংলাদেশ]] রাষ্ট্রের [[মুন্সিগঞ্জ জেলা]]) যশোলঙে। তার পিতার নাম সতীশচন্দ্র গুপ্ত ও মায়ের নাম বিনোদিনী দেবী। দীনেশ গুপ্তের ডাকনাম ছিল নসু।<ref name = charitabhidhan/> চার ভাই ও চার বোনের মধ্যে দীনেশ ছিলেন পিতামাতার তৃতীয় সন্তান। সতীশচন্দ্র ছিলেন ডাক বিভাগের কর্মচারী। চাকরির সূত্রে তিনি কিছুকাল গৌরীপুরে অবস্থান করেন। গৌরীপুরের পাঠশালাতেই দীনেশের শিক্ষারম্ভ। পরে নয় বছর বয়সে ভর্তি হন [[ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল|ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে]]। প্রথম দিকে দীনেশ ঢাকার গ্যান্ডারিয়া অঞ্চলে দাদুর বাড়িতে বাস করতেন, পরে উয়াড়িতে পৈত্রিক বাসভবনে চলে আসেন। বাল্যকাল থেকেই দীনেশ ছিলেন নির্ভীক, বেপরোয়া ও বাগ্মী। এই সময় থেকেই তার মনে স্বদেশ চেতনা ও ব্রিটিশ বিরোধিতার আদর্শ সঞ্চারিত হয়েছিল।<ref name = jibonsahityopatrabali>''শহীদ দীনেশ গুপ্তের জীবন, সাহিত্য ও পত্রাবলী'', অসিতাভ দাস, রচয়িতা, কলকাতা, ২০০৮, পৃ. ২-৩</ref>


== বিপ্লবী জীবনের সূচনা ==
== বিপ্লবী জীবনের সূচনা ==
কৈশোরে দীনেশ বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স (বিভি) নামে একটি গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠনের সদস্য হন।<ref>''শহীদ দীনেশ গুপ্তের জীবন, সাহিত্য ও পত্রাবলী'', পৃ. ৪</ref> ১৯২৬ সালে ঢাকা বোর্ড থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনি [[মেদিনীপুর|মেদিনীপুরে]] কর্মরত তাঁর বড়োদাদা যতীশচন্দ্র গুপ্তের কাছে বেড়াতে আসেন। এই সময় থেকেই মেদিনীপুর শহরে বিপ্লবী সংগঠন গড়ে তোলার সুপ্ত বাসনা তাঁর মনে জাগে। কিন্তু দলের নির্দেশে সেবার তাঁকে ঢাকায় ফিরে আসতে হয়েছিল বলে তিনি মেদিনীপুরে বিশেষ কিছুই পরে উঠতে পারেননি।<ref>''শহীদ দীনেশ গুপ্তের জীবন, সাহিত্য ও পত্রাবলী'', পৃ. ৬</ref>
কৈশোরে দীনেশ বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স (বিভি) নামে একটি গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠনের সদস্য হন।<ref>''শহীদ দীনেশ গুপ্তের জীবন, সাহিত্য ও পত্রাবলী'', পৃ. ৪</ref> ১৯২৬ সালে ঢাকা বোর্ড থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনি [[মেদিনীপুর|মেদিনীপুরে]] কর্মরত তার বড়োদাদা যতীশচন্দ্র গুপ্তের কাছে বেড়াতে আসেন। এই সময় থেকেই মেদিনীপুর শহরে বিপ্লবী সংগঠন গড়ে তোলার সুপ্ত বাসনা তার মনে জাগে। কিন্তু দলের নির্দেশে সেবার তাকে ঢাকায় ফিরে আসতে হয়েছিল বলে তিনি মেদিনীপুরে বিশেষ কিছুই পরে উঠতে পারেননি।<ref>''শহীদ দীনেশ গুপ্তের জীবন, সাহিত্য ও পত্রাবলী'', পৃ. ৬</ref>


১৯২৮ সালে তিনি [[ঢাকা কলেজ]] থেকে আইএসসি পরীক্ষা দেন। কিন্তু এই পরীক্ষায় তিনি কৃতকার্য হতে পারেননি। এরপর তিনি মেদিনীপুরে গিয়ে পড়াশোনা করার সিদ্ধান্ত নেন। দলের তরফ থেকে দীনেশকে মেদিনীপুরে বিভির শাখা স্থাপনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মেদিনীপুরে এসে দল সংগঠন ও সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে যান তিনি। <ref>''শহীদ দীনেশ গুপ্তের জীবন, সাহিত্য ও পত্রাবলী'', পৃ. ৮-১০</ref>
১৯২৮ সালে তিনি [[ঢাকা কলেজ]] থেকে আইএসসি পরীক্ষা দেন। কিন্তু এই পরীক্ষায় তিনি কৃতকার্য হতে পারেননি। এরপর তিনি মেদিনীপুরে গিয়ে পড়াশোনা করার সিদ্ধান্ত নেন। দলের তরফ থেকে দীনেশকে মেদিনীপুরে বিভির শাখা স্থাপনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মেদিনীপুরে এসে দল সংগঠন ও সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে যান তিনি। <ref>''শহীদ দীনেশ গুপ্তের জীবন, সাহিত্য ও পত্রাবলী'', পৃ. ৮-১০</ref>


ঢাকা কলেজে পড়ার সময় ১৯২৮ সালে দীনেশ 'ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস'-এর কলকাতা সেশনের প্রাক্কালে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস সংগঠিত 'বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সে যোগদান করেন। শীঘ্রই বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স একটি সক্রিয় বিপ্লবী সংগঠনে পরিবর্তিত হয় এবং কুখ্যাত ব্রিটিশ পুলিশ অফিসারদেরকে হত্যা/ নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা করে। স্থানীয় বিপ্লবীদের আগ্নেয়াস্ত্র চালনা শেখানোর জন্য দিনেশ গুপ্ত কিছু সময় মেদিনীপুরেও ছিলেন।তাঁর প্রশিক্ষিত বিপ্লবীরা ডগলাস(Douglas), বার্জ(Burge) এবং পেডি(Peddy)--এই তিনজন জেলা ম্যাজিস্ট্রটকে পরপর হত্যা করেছিল।
ঢাকা কলেজে পড়ার সময় ১৯২৮ সালে দীনেশ 'ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস'-এর কলকাতা সেশনের প্রাক্কালে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস সংগঠিত 'বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সে যোগদান করেন। শীঘ্রই বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স একটি সক্রিয় বিপ্লবী সংগঠনে পরিবর্তিত হয় এবং কুখ্যাত ব্রিটিশ পুলিশ অফিসারদেরকে হত্যা/ নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা করে। স্থানীয় বিপ্লবীদের আগ্নেয়াস্ত্র চালনা শেখানোর জন্য দিনেশ গুপ্ত কিছু সময় মেদিনীপুরেও ছিলেন।তার প্রশিক্ষিত বিপ্লবীরা ডগলাস(Douglas), বার্জ(Burge) এবং পেডি(Peddy)--এই তিনজন জেলা ম্যাজিস্ট্রটকে পরপর হত্যা করেছিল।


== রাইটার্স ভবনে হামলা ==
== রাইটার্স ভবনে হামলা ==
সংগঠনটি জেলের ইন্সপেক্টর জেনারেল কর্নেল এনএস সিম্পসনকে টার্গেট করেছিল যে কিনা জেলখানার বন্দীদের উপর পাশবিক নির্যাতনের জন্য কুখ্যাত ছিল।এই বিপ্লবীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে তারা শুধু সিম্পসনকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হবেন না, বরং কলকাতার ডালহৌসি স্কোয়ারে অবস্থিত ব্রিটিশ শাসকদের সচিবালয় [[রাইটার্স বিল্ডিং|রাইটার্স ভবনে]] আক্রমণ করে ব্রিটিশ অফিস পাড়ায় ত্রাস সৃষ্টি করবেন ।
সংগঠনটি জেলের ইন্সপেক্টর জেনারেল কর্নেল এনএস সিম্পসনকে টার্গেট করেছিল যে কিনা জেলখানার বন্দীদের উপর পাশবিক নির্যাতনের জন্য কুখ্যাত ছিল।এই বিপ্লবীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে তারা শুধু সিম্পসনকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হবেন না, বরং কলকাতার ডালহৌসি স্কোয়ারে অবস্থিত ব্রিটিশ শাসকদের সচিবালয় [[রাইটার্স বিল্ডিং|রাইটার্স ভবনে]] আক্রমণ করে ব্রিটিশ অফিস পাড়ায় ত্রাস সৃষ্টি করবেন ।
[[১৯৩০]] সালের [[ডিসেম্বর ৮|৮ই ডিসেম্বর]] দীনেশ তাঁর দুই সঙ্গী [[বিনয় বসু]] এবং [[বাদল গুপ্ত]]সহ ইউরোপীয় পোশাকে রাইটার্স বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করেন এবং সিম্পসনকে গুলি করে হত্যা করেন।
[[১৯৩০]] সালের [[ডিসেম্বর ৮|৮ই ডিসেম্বর]] দীনেশ তার দুই সঙ্গী [[বিনয় বসু]] এবং [[বাদল গুপ্ত]]সহ ইউরোপীয় পোশাকে রাইটার্স বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করেন এবং সিম্পসনকে গুলি করে হত্যা করেন।
ব্রিটিশ পুলিশ গুলি শুরু করে।যার ফলশ্রুতিতে এই তিন তরুণ বিপ্লবীর সাথে পুলিশের একটি সংক্ষিপ্ত বন্দুকযুদ্ধ হয়।টোয়াইনাম (Twynum), প্রেন্টিস(Prentice) এবং নেলসন(Nelson)-এর মত অন্য কিছু অফিসার গোলাগুলিতে আহত হয়।
ব্রিটিশ পুলিশ গুলি শুরু করে।যার ফলশ্রুতিতে এই তিন তরুণ বিপ্লবীর সাথে পুলিশের একটি সংক্ষিপ্ত বন্দুকযুদ্ধ হয়।টোয়াইনাম (Twynum), প্রেন্টিস(Prentice) এবং নেলসন(Nelson)-এর মত অন্য কিছু অফিসার গোলাগুলিতে আহত হয়।
পুলিশ দ্রুতই তাঁদেরকে পরাভূত করে ফেলে।কিন্তু এই তিনজনের গ্রেফতার হওয়ার কোনো ইচ্ছে ছিল না।
পুলিশ দ্রুতই তাঁদেরকে পরাভূত করে ফেলে।কিন্তু এই তিনজনের গ্রেফতার হওয়ার কোনো ইচ্ছে ছিল না।
২২ নং লাইন: ২২ নং লাইন:


== বিচার এবং ফাঁসি ==
== বিচার এবং ফাঁসি ==
দীনেশ কোনোরকমে এ চরম আঘাত থেকে বেঁচে ওঠেন।তাঁকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছিল এবং বিচারের রায় ছিল সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড এবং খুনের জন্য ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু। [[১৯৩১]] সালের [[জুলাই ৭|৭ই জুলাই]] [[আলীপুর জেল|আলীপুর জেলে]] ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করার সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৯ বছর।
দীনেশ কোনোরকমে এ চরম আঘাত থেকে বেঁচে ওঠেন।তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছিল এবং বিচারের রায় ছিল সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড এবং খুনের জন্য ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু। [[১৯৩১]] সালের [[জুলাই ৭|৭ই জুলাই]] [[আলীপুর জেল|আলীপুর জেলে]] ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করার সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৯ বছর।


== গুরুত্ব ==
== গুরুত্ব ==

১৪:১৪, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

কলকাতার বিবাদীবাগে বিনয় বসু ও বাদল গুপ্তের সঙ্গে দীনেশ গুপ্তের প্রতিমূর্তি (ডানদিকে)
দীনেশ গুপ্ত (১৯১২-১৯৩০) একজন বাঙালি বিপ্লবী ও মুক্তিসংগ্রামী

দীনেশচন্দ্র গুপ্ত (জন্ম - ৬ ডিসেম্বর, ১৯১১: মৃত্যু - ৭ জুলাই, ১৯৩১) ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী একজন স্বনামধন্য বাঙালি বিপ্লবী। তিনি দীনেশ গুপ্ত নামেই সমধিক পরিচিত। তিনি ঢাকামেদিনীপুরে বিপ্লবী সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। মেদিনীপুরে তার সংগঠন পরপর তিন জন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে হত্যা করেছিল।[১] ১৯৩০ সালের ৮ ডিসেম্বর বিপ্লবী বিনয় বসুর নেতৃত্বে তিনি ও বাদল গুপ্ত কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিং (বর্তমান মহাকরণ) ভবনে অভিযান চালিয়ে, বিভাগের অত্যাচারী ইন্সপেক্টর জেনারেল সিম্পসনকে হত্যা করেন। রাইটার্স বিল্ডিং-এর অলিন্দে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের খণ্ডযুদ্ধে বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ ইউরোপীয় কর্মচারী গুরুতরভাবে আহতও হন। এরপর তারা আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। অপর দুই বিপ্লবী আত্মহত্যায় সমর্থ হলেও মৃতপ্রায় দীনেশকে পুলিশ বাঁচিয়ে তুলতে সক্ষম হয়। বিচারে তার ফাঁসির আদেশ হয়। মৃত্যুর পূর্বে জেলে বসে তিনি কয়েকটি চিঠি লিখেছিলেন। এই চিঠিগুলি ভারতের বিপ্লবী ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দলিল এবং সাহিত্যিক বিচারেও অত্যন্ত মূল্যবান।[১] স্বাধীনতার পর তার ও তার অপর দুই সহবিপ্লবীর সম্মানার্থে কলকাতার প্রসিদ্ধ ডালহৌসি স্কোয়ারের নাম বিনয়-বাদল-দীনেশ বাগ (সংক্ষেপে বিবাদীবাগ) রাখা হয়।

প্রাথমিক জীবন

বিপ্লবী দীনেশ গুপ্তের জন্ম হয় ১৯১১ সালের ৬ ডিসেম্বর (বাংলা ১৩১৮ সালের ২০ অগ্রহায়ণ) তদনীন্তন ঢাকা জেলার (অধুনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মুন্সিগঞ্জ জেলা) যশোলঙে। তার পিতার নাম সতীশচন্দ্র গুপ্ত ও মায়ের নাম বিনোদিনী দেবী। দীনেশ গুপ্তের ডাকনাম ছিল নসু।[১] চার ভাই ও চার বোনের মধ্যে দীনেশ ছিলেন পিতামাতার তৃতীয় সন্তান। সতীশচন্দ্র ছিলেন ডাক বিভাগের কর্মচারী। চাকরির সূত্রে তিনি কিছুকাল গৌরীপুরে অবস্থান করেন। গৌরীপুরের পাঠশালাতেই দীনেশের শিক্ষারম্ভ। পরে নয় বছর বয়সে ভর্তি হন ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে। প্রথম দিকে দীনেশ ঢাকার গ্যান্ডারিয়া অঞ্চলে দাদুর বাড়িতে বাস করতেন, পরে উয়াড়িতে পৈত্রিক বাসভবনে চলে আসেন। বাল্যকাল থেকেই দীনেশ ছিলেন নির্ভীক, বেপরোয়া ও বাগ্মী। এই সময় থেকেই তার মনে স্বদেশ চেতনা ও ব্রিটিশ বিরোধিতার আদর্শ সঞ্চারিত হয়েছিল।[২]

বিপ্লবী জীবনের সূচনা

কৈশোরে দীনেশ বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স (বিভি) নামে একটি গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠনের সদস্য হন।[৩] ১৯২৬ সালে ঢাকা বোর্ড থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনি মেদিনীপুরে কর্মরত তার বড়োদাদা যতীশচন্দ্র গুপ্তের কাছে বেড়াতে আসেন। এই সময় থেকেই মেদিনীপুর শহরে বিপ্লবী সংগঠন গড়ে তোলার সুপ্ত বাসনা তার মনে জাগে। কিন্তু দলের নির্দেশে সেবার তাকে ঢাকায় ফিরে আসতে হয়েছিল বলে তিনি মেদিনীপুরে বিশেষ কিছুই পরে উঠতে পারেননি।[৪]

১৯২৮ সালে তিনি ঢাকা কলেজ থেকে আইএসসি পরীক্ষা দেন। কিন্তু এই পরীক্ষায় তিনি কৃতকার্য হতে পারেননি। এরপর তিনি মেদিনীপুরে গিয়ে পড়াশোনা করার সিদ্ধান্ত নেন। দলের তরফ থেকে দীনেশকে মেদিনীপুরে বিভির শাখা স্থাপনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মেদিনীপুরে এসে দল সংগঠন ও সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে যান তিনি। [৫]

ঢাকা কলেজে পড়ার সময় ১৯২৮ সালে দীনেশ 'ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস'-এর কলকাতা সেশনের প্রাক্কালে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস সংগঠিত 'বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সে যোগদান করেন। শীঘ্রই বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স একটি সক্রিয় বিপ্লবী সংগঠনে পরিবর্তিত হয় এবং কুখ্যাত ব্রিটিশ পুলিশ অফিসারদেরকে হত্যা/ নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা করে। স্থানীয় বিপ্লবীদের আগ্নেয়াস্ত্র চালনা শেখানোর জন্য দিনেশ গুপ্ত কিছু সময় মেদিনীপুরেও ছিলেন।তার প্রশিক্ষিত বিপ্লবীরা ডগলাস(Douglas), বার্জ(Burge) এবং পেডি(Peddy)--এই তিনজন জেলা ম্যাজিস্ট্রটকে পরপর হত্যা করেছিল।

রাইটার্স ভবনে হামলা

সংগঠনটি জেলের ইন্সপেক্টর জেনারেল কর্নেল এনএস সিম্পসনকে টার্গেট করেছিল যে কিনা জেলখানার বন্দীদের উপর পাশবিক নির্যাতনের জন্য কুখ্যাত ছিল।এই বিপ্লবীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে তারা শুধু সিম্পসনকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হবেন না, বরং কলকাতার ডালহৌসি স্কোয়ারে অবস্থিত ব্রিটিশ শাসকদের সচিবালয় রাইটার্স ভবনে আক্রমণ করে ব্রিটিশ অফিস পাড়ায় ত্রাস সৃষ্টি করবেন । ১৯৩০ সালের ৮ই ডিসেম্বর দীনেশ তার দুই সঙ্গী বিনয় বসু এবং বাদল গুপ্তসহ ইউরোপীয় পোশাকে রাইটার্স বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করেন এবং সিম্পসনকে গুলি করে হত্যা করেন। ব্রিটিশ পুলিশ গুলি শুরু করে।যার ফলশ্রুতিতে এই তিন তরুণ বিপ্লবীর সাথে পুলিশের একটি সংক্ষিপ্ত বন্দুকযুদ্ধ হয়।টোয়াইনাম (Twynum), প্রেন্টিস(Prentice) এবং নেলসন(Nelson)-এর মত অন্য কিছু অফিসার গোলাগুলিতে আহত হয়। পুলিশ দ্রুতই তাঁদেরকে পরাভূত করে ফেলে।কিন্তু এই তিনজনের গ্রেফতার হওয়ার কোনো ইচ্ছে ছিল না। বাদল গুপ্ত পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে নিয়েছিলেন, অন্যদিকে বিনয় এবং দিনেশ নিজেদের রিভলবার দিয়ে নিজেদেরকেই গুলি করেছিলেন।বিনয়কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে তিনি ১৯৩০সালের ডিসেম্বরের ১৩ তারিখ মৃত্যুবরণ করেন।

বিচার এবং ফাঁসি

দীনেশ কোনোরকমে এ চরম আঘাত থেকে বেঁচে ওঠেন।তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছিল এবং বিচারের রায় ছিল সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড এবং খুনের জন্য ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু। ১৯৩১ সালের ৭ই জুলাই আলীপুর জেলে ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করার সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৯ বছর।

গুরুত্ব

বাংলাসহ ভারতের অন্যান্য অংশে বিনয়, বাদল এবং দিনেশকে শহীদ হিসেবে সম্মান করা হয়। ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে বিনয়-বাদল-দীনেশের নামানুসারে কলকাতার ডালহৌসি স্কয়ারের নাম পালটে রাখা হয় বি-বা-দী বাগ

তথ্যসূত্র

  1. বাঙালি চরিতাভিধান প্রথম খণ্ড, সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, সংশোধিত চতুর্থ সংস্করণ, ১৯৯৮, পৃ. ২০৭
  2. শহীদ দীনেশ গুপ্তের জীবন, সাহিত্য ও পত্রাবলী, অসিতাভ দাস, রচয়িতা, কলকাতা, ২০০৮, পৃ. ২-৩
  3. শহীদ দীনেশ গুপ্তের জীবন, সাহিত্য ও পত্রাবলী, পৃ. ৪
  4. শহীদ দীনেশ গুপ্তের জীবন, সাহিত্য ও পত্রাবলী, পৃ. ৬
  5. শহীদ দীনেশ গুপ্তের জীবন, সাহিত্য ও পত্রাবলী, পৃ. ৮-১০

গ্রন্থপঞ্জি

  • হেমেন্দ্রনাথ দাসগুপ্ত, ভারতের বিপ্লব কাহিনী, ২য় ও ৩য় খন্ড, কলকাতা, ১৯৪৮।
  • রমেশচন্দ্র মজুমদার, History of the Freedom Movement in India, III, কলকাতা, ১৯৬৩।
  • গঙ্গানারায়ণ চন্দ্র, অবিস্মরণীয়, কলকাতা, ১৯৬৬।