কাইয়ুম চৌধুরী: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
১৫ নং লাইন: ১৫ নং লাইন:
}}
}}


'''কাইয়ুম চৌধুরী''' (জন্ম : [[মার্চ ৯]], [[১৯৩২]] - মৃত্যু : [[নভেম্বর ৩০]], [[২০১৪]])<ref>http://www.thedailystar.net/newDesign/news-details.php?nid=176914</ref> [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] একজন স্বনামধন্য চিত্রশিল্পী। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে [[একুশে পদক]] প্রদান করা হয়।<ref>http://www.bengalfoundation.org/index.php?view=artist/ArtistProfile.php&artistID=3&page=5</ref>
'''কাইয়ুম চৌধুরী''' (জন্ম : [[মার্চ ৯]], [[১৯৩২]] - মৃত্যু : [[নভেম্বর ৩০]], [[২০১৪]])<ref>http://www.thedailystar.net/newDesign/news-details.php?nid=176914</ref> [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] একজন স্বনামধন্য চিত্রশিল্পী। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে তাকে [[একুশে পদক]] প্রদান করা হয়।<ref>http://www.bengalfoundation.org/index.php?view=artist/ArtistProfile.php&artistID=3&page=5</ref>


== প্রাথমিক জীবন ==
== প্রাথমিক জীবন ==
জন্ম [[ফেনী]] জেলায় ক্ষয়িষ্ণু জমিদার পরিবারে। কাইয়ুম চৌধুরী যেখানে জন্মগ্রহণ করেন সেখানে অর্থের জৌলুস না থাকলেও শিক্ষা ও উদার মানসের অবস্থান ছিল । পরিবারের এক সদস্য আমীনুল ইসলাম চৌধুরী লিখেছিলেন [[নোয়াখালী|নোয়াখালীর]] ইতিহাস। পিতা আবদুল কুদ্দুস চৌধুরী ছিলেন সমবায় বিভাগের পরিদর্শক। পরবর্তীতে তিনি সমবায় ব্যাংকের কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। নোয়াখালীর [[গোপাল হালদার|গোপাল হালদারের]] সঙ্গে ছিল তাঁর সখ্য। [[কুমিল্লা|কুমিল্লায়]] [[গায়ক মোহাম্মদ হোসেন খসরু]] এবং লোকগানের সাধক [[শচীন দেববর্মন|শচীন দেববর্মনের]] সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছিল। [[চট্টগ্রাম|চট্টগ্রামের]] [[আব্দুল করিম|আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদের]] সঙ্গে তাঁদের পারিবারিক যোগাযোগ ছিল । বাবার বদলির চাকরির সুবাদে কাইয়ুম চৌধুরী বাংলার অনেক এলাকায় ঘুরে ফিরেছেন।
জন্ম [[ফেনী]] জেলায় ক্ষয়িষ্ণু জমিদার পরিবারে। কাইয়ুম চৌধুরী যেখানে জন্মগ্রহণ করেন সেখানে অর্থের জৌলুস না থাকলেও শিক্ষা ও উদার মানসের অবস্থান ছিল । পরিবারের এক সদস্য আমীনুল ইসলাম চৌধুরী লিখেছিলেন [[নোয়াখালী|নোয়াখালীর]] ইতিহাস। পিতা আবদুল কুদ্দুস চৌধুরী ছিলেন সমবায় বিভাগের পরিদর্শক। পরবর্তীতে তিনি সমবায় ব্যাংকের কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। নোয়াখালীর [[গোপাল হালদার|গোপাল হালদারের]] সঙ্গে ছিল তার সখ্য। [[কুমিল্লা|কুমিল্লায়]] [[গায়ক মোহাম্মদ হোসেন খসরু]] এবং লোকগানের সাধক [[শচীন দেববর্মন|শচীন দেববর্মনের]] সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছিল। [[চট্টগ্রাম|চট্টগ্রামের]] [[আব্দুল করিম|আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদের]] সঙ্গে তাঁদের পারিবারিক যোগাযোগ ছিল । বাবার বদলির চাকরির সুবাদে কাইয়ুম চৌধুরী বাংলার অনেক এলাকায় ঘুরে ফিরেছেন।


== শিক্ষাজীবন ==
== শিক্ষাজীবন ==
মক্তবে কাইয়ুম চৌধুরীর শিক্ষার হাতেখড়ি, তারপর ভর্তি হন [[চট্টগ্রাম|চট্টগ্রামের]] নর্মাল স্কুলে। এরপর কিছুকাল [[কুমিল্লা|কুমিল্লায়]] কাটিয়ে চলে যান [[নড়াইল|নড়াইলে]]। [[চিত্রা]] পাড়ের এই শহরে কাটে তাঁর তিনটি বছর। সেখান থেকে [[সন্দ্বীপ]] এসে ভর্তি হন প্রথমে সন্দ্বীপ হাই স্কুল ও পরে কারগিল হাই স্কুলে। <ref name="Kaium Chowdury"/>
মক্তবে কাইয়ুম চৌধুরীর শিক্ষার হাতেখড়ি, তারপর ভর্তি হন [[চট্টগ্রাম|চট্টগ্রামের]] নর্মাল স্কুলে। এরপর কিছুকাল [[কুমিল্লা|কুমিল্লায়]] কাটিয়ে চলে যান [[নড়াইল|নড়াইলে]]। [[চিত্রা]] পাড়ের এই শহরে কাটে তার তিনটি বছর। সেখান থেকে [[সন্দ্বীপ]] এসে ভর্তি হন প্রথমে সন্দ্বীপ হাই স্কুল ও পরে কারগিল হাই স্কুলে। <ref name="Kaium Chowdury"/>
এরপর নোয়াখালী জেলা সদরে কিছুকাল কাটিয়ে পিতার সঙ্গে তাঁর ঠাঁই বদল হয় [[ফেনী|ফেনীতে]]। ভর্তি হলেন ফেনী হাই স্কুলে, সেখান থেকে যান [[ফরিদপুর|ফরিদপুরে]]। [[ফরিদপুর]] থেকে [[ময়মনসিংহ]] এসে [[১৯৪৯]] সালে সিটি কলেজিয়েট স্কুল থেকে যখন ম্যাট্রিক পাশ করেন। স্কুল জীবন থেকে আঁকাআঁকির প্রতি ঝোঁক দেখা গিয়েছিল কাইয়ুম চৌধুরীর। ১৯৪৯ সালে আর্ট ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়ে কাইয়ুম চৌধুরী কৃতিত্বের সঙ্গে শিক্ষা সমাপন করেন [[১৯৫৪]] সালে। তিনি শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন শিল্পাচার্য [[জয়নুল আবেদিন|জয়নুল আবেদিনকে]]। সদ্য-প্রতিষ্ঠিত আর্টস ইনস্টিটিউটের নবীন শিক্ষার্থীরা [[১৯৫২]] সালের [[ভাষা আন্দোলন|ভাষা আন্দোলনে]] বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। ইমদাদ হোসেন, [[মুর্তজা বশীর]], [[আমিনুল ইসলাম]], দেবদাস চক্রবর্তী প্রমুখ ছিলেন প্রতিবাদী আয়োজনের নিরলস কর্মী এবং সকল মিছিলের পুরোভাগে। অন্তর্মুখী স্বভাবের কাইয়ুম চৌধুরীরও সম্পৃক্ত ছিলেন।<ref name="Kaium Chowdury"/> শিক্ষাজীবন প্রসঙ্গে পরবর্তীকালে এক সাক্ষাৎকারে কাইয়ুম চৌধুরী বলেন: "আমি আমার শিল্পীজীবন যখন শুরু করি আমার সঙ্গে যাঁরা ছিলেন কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, গায়ক এদের সবার মধ্যে একটা যোগযোগ ছিল। যেমন, আমার বন্ধুস্থানীয়দের মধ্যে আমার খুব ঘনিষ্টতম বন্ধু--যার সঙ্গে আমি একই সঙ্গে রাতও কাটিয়েছি, তিনি [[সৈয়দ শামসুল হক]]। তারপর [[শামসুর রাহমান]], [[আলাউদ্দিন আল আজাদ]], [[হাসান হাফিজুর রহমান]], [[বোরহানউদ্দীন খান জাহাঙ্গীর]]। আমরা এক সময় একই সঙ্গে কাজ করতাম। সেই সময় গায়কদের মধ্যে যেমন [[আবদুল আলীম]] সাহেবকে দেখেছি যে, কবি [[জসীম উদ্ দীন|জসীম উদ্‌ দীন]] তাঁকে গান শেখাচ্ছেন। জসীম উদ্‌ দীন সাহেব তাঁর ভাঙা গলায় সুর তুলে দিচ্ছেন আবদুল আলীমের গলায়, [[নীনা হামিদ|নীনা হামিদের]] গলায়, এগুলো তো আমাদের চোখের সামনে দেখা। মিউজিশিয়ানদের মধ্যে, আজকে যেমন [[সমর দাস]], আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু।"<ref>সাপ্তাহিক ২০০০, ২২ অক্টোবর ১৯৯৯, পৃ. ৪৭</ref>
এরপর নোয়াখালী জেলা সদরে কিছুকাল কাটিয়ে পিতার সঙ্গে তার ঠাঁই বদল হয় [[ফেনী|ফেনীতে]]। ভর্তি হলেন ফেনী হাই স্কুলে, সেখান থেকে যান [[ফরিদপুর|ফরিদপুরে]]। [[ফরিদপুর]] থেকে [[ময়মনসিংহ]] এসে [[১৯৪৯]] সালে সিটি কলেজিয়েট স্কুল থেকে যখন ম্যাট্রিক পাশ করেন। স্কুল জীবন থেকে আঁকাআঁকির প্রতি ঝোঁক দেখা গিয়েছিল কাইয়ুম চৌধুরীর। ১৯৪৯ সালে আর্ট ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়ে কাইয়ুম চৌধুরী কৃতিত্বের সঙ্গে শিক্ষা সমাপন করেন [[১৯৫৪]] সালে। তিনি শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন শিল্পাচার্য [[জয়নুল আবেদিন|জয়নুল আবেদিনকে]]। সদ্য-প্রতিষ্ঠিত আর্টস ইনস্টিটিউটের নবীন শিক্ষার্থীরা [[১৯৫২]] সালের [[ভাষা আন্দোলন|ভাষা আন্দোলনে]] বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। ইমদাদ হোসেন, [[মুর্তজা বশীর]], [[আমিনুল ইসলাম]], দেবদাস চক্রবর্তী প্রমুখ ছিলেন প্রতিবাদী আয়োজনের নিরলস কর্মী এবং সকল মিছিলের পুরোভাগে। অন্তর্মুখী স্বভাবের কাইয়ুম চৌধুরীরও সম্পৃক্ত ছিলেন।<ref name="Kaium Chowdury"/> শিক্ষাজীবন প্রসঙ্গে পরবর্তীকালে এক সাক্ষাৎকারে কাইয়ুম চৌধুরী বলেন: "আমি আমার শিল্পীজীবন যখন শুরু করি আমার সঙ্গে যাঁরা ছিলেন কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, গায়ক এদের সবার মধ্যে একটা যোগযোগ ছিল। যেমন, আমার বন্ধুস্থানীয়দের মধ্যে আমার খুব ঘনিষ্টতম বন্ধু--যার সঙ্গে আমি একই সঙ্গে রাতও কাটিয়েছি, তিনি [[সৈয়দ শামসুল হক]]। তারপর [[শামসুর রাহমান]], [[আলাউদ্দিন আল আজাদ]], [[হাসান হাফিজুর রহমান]], [[বোরহানউদ্দীন খান জাহাঙ্গীর]]। আমরা এক সময় একই সঙ্গে কাজ করতাম। সেই সময় গায়কদের মধ্যে যেমন [[আবদুল আলীম]] সাহেবকে দেখেছি যে, কবি [[জসীম উদ্ দীন|জসীম উদ্‌ দীন]] তাঁকে গান শেখাচ্ছেন। জসীম উদ্‌ দীন সাহেব তাঁর ভাঙা গলায় সুর তুলে দিচ্ছেন আবদুল আলীমের গলায়, [[নীনা হামিদ|নীনা হামিদের]] গলায়, এগুলো তো আমাদের চোখের সামনে দেখা। মিউজিশিয়ানদের মধ্যে, আজকে যেমন [[সমর দাস]], আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু।"<ref>সাপ্তাহিক ২০০০, ২২ অক্টোবর ১৯৯৯, পৃ. ৪৭</ref>


== কর্মজীবন ==
== কর্মজীবন ==


[[১৯৫৫]] থেকে [[১৯৫৬]] সাল পর্যন্ত কাইয়ুম চৌধুরী নানা ধরনের ব্যবহারিক কাজ করেছেন, বিজ্ঞাপনী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন, আর বইয়ের প্রচ্ছদ ও সচিত্রকরণের কাজ করেছেন । সিগনেটের বই কাইয়ুম চৌধুরীর জন্য ছিল এক অনুপম নির্দশন। সাময়িক পত্রিকা বিষয়ে আগ্রহী কাইয়ুম চৌধুরী, ছায়াছবি নামে একটি চলচ্চিত্র সাময়িকী যুগ্মভাবে সম্পাদনা করেছিলেন কিছুকাল। সুযোগমতো টুকটাক প্রচ্ছদ আঁকছিলেন এবং এই কাজের সূত্রেই পরিচয় [[সৈয়দ শামসুল হক|সৈয়দ শামসুল হকের]] সঙ্গে। ১৯৫৫ সালে তাঁর দুই বইয়ের প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন, কিন্তু প্রকাশক অপারগ হওয়ায় সে-বই আর আলোর মুখ দেখে নি। প্রচ্ছদে একটি পালাবদল তিনি ঘটালেন ১৯৫৭ সালে প্রকাশিত জহুরুল হকের সাত-সাঁতার গ্রন্থে। গ্রন্থের বক্তব্যের বা সারসত্যের প্রতিফলন ঘটালেন প্রচ্ছদে, একই সঙ্গে গ্রাফিক ডিজাইনে কুশলতা ও নতুন ভাবনার ছাপ মেলে ধরলেন। এমনি দক্ষতার যুগল মিলনে আঁকলেন [[ফজলে লোহানী]] রচিত 'কথাসরিৎসাগর-এর প্রচ্ছদ যা প্রকাশিত হয় নি। গাজী শাহাবুদ্দিন আহমদের [[সচিত্র সন্ধানী]] পত্রিকার আত্মপ্রকাশ তাঁর অঙ্কন, টাইপোগ্রাফিবোধ ও রসসিঞ্চিত তির্যক রচনা প্রকাশের মাধ্যমে হয়ে উঠেছিল অনবদ্য। ১৯৫৭ সালে কাইয়ুম চৌধুরী আর্ট কলেজে শিক্ষকতায় যোগ দেন।
[[১৯৫৫]] থেকে [[১৯৫৬]] সাল পর্যন্ত কাইয়ুম চৌধুরী নানা ধরনের ব্যবহারিক কাজ করেছেন, বিজ্ঞাপনী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন, আর বইয়ের প্রচ্ছদ ও সচিত্রকরণের কাজ করেছেন । সিগনেটের বই কাইয়ুম চৌধুরীর জন্য ছিল এক অনুপম নির্দশন। সাময়িক পত্রিকা বিষয়ে আগ্রহী কাইয়ুম চৌধুরী, ছায়াছবি নামে একটি চলচ্চিত্র সাময়িকী যুগ্মভাবে সম্পাদনা করেছিলেন কিছুকাল। সুযোগমতো টুকটাক প্রচ্ছদ আঁকছিলেন এবং এই কাজের সূত্রেই পরিচয় [[সৈয়দ শামসুল হক|সৈয়দ শামসুল হকের]] সঙ্গে। ১৯৫৫ সালে তার দুই বইয়ের প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন, কিন্তু প্রকাশক অপারগ হওয়ায় সে-বই আর আলোর মুখ দেখে নি। প্রচ্ছদে একটি পালাবদল তিনি ঘটালেন ১৯৫৭ সালে প্রকাশিত জহুরুল হকের সাত-সাঁতার গ্রন্থে। গ্রন্থের বক্তব্যের বা সারসত্যের প্রতিফলন ঘটালেন প্রচ্ছদে, একই সঙ্গে গ্রাফিক ডিজাইনে কুশলতা ও নতুন ভাবনার ছাপ মেলে ধরলেন। এমনি দক্ষতার যুগল মিলনে আঁকলেন [[ফজলে লোহানী]] রচিত 'কথাসরিৎসাগর-এর প্রচ্ছদ যা প্রকাশিত হয় নি। গাজী শাহাবুদ্দিন আহমদের [[সচিত্র সন্ধানী]] পত্রিকার আত্মপ্রকাশ তার অঙ্কন, টাইপোগ্রাফিবোধ ও রসসিঞ্চিত তির্যক রচনা প্রকাশের মাধ্যমে হয়ে উঠেছিল অনবদ্য। ১৯৫৭ সালে কাইয়ুম চৌধুরী আর্ট কলেজে শিক্ষকতায় যোগ দেন।


== শিল্প ভাবনা ==
== শিল্প ভাবনা ==
[[১৯৫৭]] সালে সতীর্থ [[আমিনুল ইসলাম]] ও [[সৈয়দ জাহাঙ্গীর]]কে নিয়ে কাইয়ুম চৌধুরী গিয়েছিলেন [[কলকাতা|কলকাতায়]]। বৃটিশ কাউন্সিলের তরুণ কর্মকর্তা জিওফ্রে হেডলির আহ্বানে এই সফর। কলকাতায় দেখা করেছিলেন [[সত্যজিৎ রায়]] ও [[খালেদ চৌধুরী]]র সঙ্গে। [[১৯৫৯]] সালে বন্ধুবর গাজী শাহাবুদ্দিন আহমদের [[সন্ধানী প্রকাশনী]] যাত্রা শুরু করে [[জহির রায়হান|জহির রায়হানের]] 'শেষ বিকেলের মেয়ে' গ্রন্থ প্রকাশের মাধ্যমে। [[১৯৬১]] সালে [[মাওলা ব্রাদার্স]] সৃজনশীল প্রকাশনার অধ্যায় উন্মোচন শুরু করে [[আবদুশ শাকুর|আবদুশ শাকুরের]] 'ক্ষীয়মাণ' এবং [[সৈয়দ শামসুল হক|সৈয়দ শামসুল হকের]] কাব্যগ্রন্থ 'একদা এক রাজ্যে' প্রকাশ দ্বারা। এই দুই প্রকাশনা সংস্থার কাজের পেছনে বরাবরই কাইয়ুম চৌধুরী সক্রিয় থেকেছেন। তিনি আরও প্রচ্ছদ আঁকেন ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত [[শামসুর রাহমান|শামসুর রাহমানের]] প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে।
[[১৯৫৭]] সালে সতীর্থ [[আমিনুল ইসলাম]] ও [[সৈয়দ জাহাঙ্গীর]]কে নিয়ে কাইয়ুম চৌধুরী গিয়েছিলেন [[কলকাতা|কলকাতায়]]। বৃটিশ কাউন্সিলের তরুণ কর্মকর্তা জিওফ্রে হেডলির আহ্বানে এই সফর। কলকাতায় দেখা করেছিলেন [[সত্যজিৎ রায়]] ও [[খালেদ চৌধুরী]]র সঙ্গে। [[১৯৫৯]] সালে বন্ধুবর গাজী শাহাবুদ্দিন আহমদের [[সন্ধানী প্রকাশনী]] যাত্রা শুরু করে [[জহির রায়হান|জহির রায়হানের]] 'শেষ বিকেলের মেয়ে' গ্রন্থ প্রকাশের মাধ্যমে। [[১৯৬১]] সালে [[মাওলা ব্রাদার্স]] সৃজনশীল প্রকাশনার অধ্যায় উন্মোচন শুরু করে [[আবদুশ শাকুর|আবদুশ শাকুরের]] 'ক্ষীয়মাণ' এবং [[সৈয়দ শামসুল হক|সৈয়দ শামসুল হকের]] কাব্যগ্রন্থ 'একদা এক রাজ্যে' প্রকাশ দ্বারা। এই দুই প্রকাশনা সংস্থার কাজের পেছনে বরাবরই কাইয়ুম চৌধুরী সক্রিয় থেকেছেন। তিনি আরও প্রচ্ছদ আঁকেন ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত [[শামসুর রাহমান|শামসুর রাহমানের]] প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে।


১৯৫৯ এবং ১৯৬১ সালে [[বাংলাদেশ রেলওয়ে|রেলওয়ে]]র টাইমটেবিলের প্রচ্ছদ এঁকে সেরা পুরস্কারটি লাভ করেন কাইয়ুম চৌধুরী। তিনি [[১৯৬০]] সালে তাহেরা খানমের সঙ্গে পরিণয়-বন্ধনে আবদ্ধ হন, যিনি ছিলেন আর্ট কলেজে ভর্তি হওয়া প্রথম চারজন ছাত্রীর একজন। মনের সাযুজ্য তাঁর শৈল্পিক প্রয়াসের জন্য অনুকূল ছিল এবং স্ত্রীর ভূমিকা প্রেরণাদায়ক ছিল। ১৯৬১ সালে ডিজাইন সেন্টার ছেড়ে অবজাভার হাউজে চিফ আর্টিস্ট হিসেবে যোগদান করেন।অবজারভার পত্রিকার রবিবারের সাময়িকীতে ডিজাইন নিয়ে যেসব নিরীক্ষা করতেন তার শিক্ষক [[জয়নুল আবেদীন|জয়নুলের]] দৃষ্টি আকর্ষণ করে। <ref name="Kaium Chowdury">[http://gunijan.org.bd/GjProfDetails_action.php?GjProfId=57]</ref>
১৯৫৯ এবং ১৯৬১ সালে [[বাংলাদেশ রেলওয়ে|রেলওয়ে]]র টাইমটেবিলের প্রচ্ছদ এঁকে সেরা পুরস্কারটি লাভ করেন কাইয়ুম চৌধুরী। তিনি [[১৯৬০]] সালে তাহেরা খানমের সঙ্গে পরিণয়-বন্ধনে আবদ্ধ হন, যিনি ছিলেন আর্ট কলেজে ভর্তি হওয়া প্রথম চারজন ছাত্রীর একজন। মনের সাযুজ্য তার শৈল্পিক প্রয়াসের জন্য অনুকূল ছিল এবং স্ত্রীর ভূমিকা প্রেরণাদায়ক ছিল। ১৯৬১ সালে ডিজাইন সেন্টার ছেড়ে অবজাভার হাউজে চিফ আর্টিস্ট হিসেবে যোগদান করেন।অবজারভার পত্রিকার রবিবারের সাময়িকীতে ডিজাইন নিয়ে যেসব নিরীক্ষা করতেন তার শিক্ষক [[জয়নুল আবেদীন|জয়নুলের]] দৃষ্টি আকর্ষণ করে। <ref name="Kaium Chowdury">[http://gunijan.org.bd/GjProfDetails_action.php?GjProfId=57]</ref>


== শিল্পরীতি ==
== শিল্পরীতি ==
তেল রঙ, জল রঙ, কালি-কলম, মোমরং, রেশমছাপ ইত্যাদি নানা মাধ্যমে কাইয়ুম চৌধুরী কাজ করেছেন। তাঁর প্রকটি প্রবণতা জ্যামিতিক আকৃতির অনুষঙ্গ। বস্তুতঃ তাঁর ছবি নকশা প্রধান। বর্ণিল পটভূমিতে মোটাদাগের নকশা তাঁর প্রধানতম অঙ্কনশৈলী। অন্যদিকে কাইয়ুম চৌধুরীর চিত্রাবলী বর্ণোজ্জ্বল;- এই দিক থেকে আঁরি মাতিসের সঙ্গে তাঁর সমিলতা লক্ষ্যণীয়। লাল, নীল, সবুজ এই তিনটি রং তিনি প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করে থাকেন। এই বর্ণভঙ্গী তাঁর চিত্ররীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাঁর ক্যানভাসের আয়তন প্রায়শঃ বর্গাকার। এছাড়া তাঁর চিত্রাবলিতে এদেশের লোকশিল্পসুলভ পুতুল, পাখা, হাঁড়ি, শীতলপাটি, কাঁথা ইত্যাদির পুনঃপৌণিক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
তেল রঙ, জল রঙ, কালি-কলম, মোমরং, রেশমছাপ ইত্যাদি নানা মাধ্যমে কাইয়ুম চৌধুরী কাজ করেছেন। তার প্রকটি প্রবণতা জ্যামিতিক আকৃতির অনুষঙ্গ। বস্তুতঃ তার ছবি নকশা প্রধান। বর্ণিল পটভূমিতে মোটাদাগের নকশা তার প্রধানতম অঙ্কনশৈলী। অন্যদিকে কাইয়ুম চৌধুরীর চিত্রাবলী বর্ণোজ্জ্বল;- এই দিক থেকে আঁরি মাতিসের সঙ্গে তার সমিলতা লক্ষ্যণীয়। লাল, নীল, সবুজ এই তিনটি রং তিনি প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করে থাকেন। এই বর্ণভঙ্গী তার চিত্ররীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তার ক্যানভাসের আয়তন প্রায়শঃ বর্গাকার। এছাড়া তার চিত্রাবলিতে এদেশের লোকশিল্পসুলভ পুতুল, পাখা, হাঁড়ি, শীতলপাটি, কাঁথা ইত্যাদির পুনঃপৌণিক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।


== সন্মাননা ==
== সন্মাননা ==
শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী ২০১০ সালে [[সুফিয়া কামাল]] পদক লাভ করেন । প্রতিক্রিয়ায় শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, 'এমন একজন মহীয়সী নারীর নামাঙ্কিত পদক আমাকে প্রদান করা হয়েছে, জানি না আমি এর যোগ্য কি না। আমি এর জন্য আনন্দিত এবং গর্বিত। [[বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ|বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের]] কাছে আমি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।'<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://dailykalerkantho.com/?view=details&archiev=yes&arch_date=21-06-2010&type=gold&data=Loan&pub_no=201&cat_id=1&menu_id=43&news_type_id=1&index=20|শিরোনাম=কাইয়ুম চৌধুরী|শেষাংশ= |প্রথমাংশ=|তারিখ=২১ জুন ২০১০|কর্ম=দৈনিক কালের কন্ঠ|সংগ্রহের-তারিখ=জানুয়ারি ১৬, ২০১০}}</ref> কাইয়ুম চৌধুরীর ৭৮তম জন্মবার্ষিকীতে [[সৈয়দ শামসুল হক]] বলেন, সত্যিকার অর্থে বিশ্বমানের শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। মুস্তাফা মনোয়ার বলেন, [[সত্যজিত রায়|সত্যজিত রায়ের]] পর গ্রাফিক্স কিংবা প্রচ্ছদ শিল্পকে তিনি অন্যরকম অবস্থানে নিয়ে গেছেন। [[কামাল লোহানী]] বলেন, কাইয়ুম চৌধুরী আমাদের চলার পথে সংগ্রামী সাথী।
শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী ২০১০ সালে [[সুফিয়া কামাল]] পদক লাভ করেন । প্রতিক্রিয়ায় শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, 'এমন একজন মহীয়সী নারীর নামাঙ্কিত পদক আমাকে প্রদান করা হয়েছে, জানি না আমি এর যোগ্য কি না। আমি এর জন্য আনন্দিত এবং গর্বিত। [[বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ|বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের]] কাছে আমি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।'<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://dailykalerkantho.com/?view=details&archiev=yes&arch_date=21-06-2010&type=gold&data=Loan&pub_no=201&cat_id=1&menu_id=43&news_type_id=1&index=20|শিরোনাম=কাইয়ুম চৌধুরী|শেষাংশ= |প্রথমাংশ=|তারিখ=২১ জুন ২০১০|কর্ম=দৈনিক কালের কন্ঠ|সংগ্রহের-তারিখ=জানুয়ারি ১৬, ২০১০}}</ref> কাইয়ুম চৌধুরীর ৭৮তম জন্মবার্ষিকীতে [[সৈয়দ শামসুল হক]] বলেন, সত্যিকার অর্থে বিশ্বমানের শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। মুস্তাফা মনোয়ার বলেন, [[সত্যজিত রায়|সত্যজিত রায়ের]] পর গ্রাফিক্স কিংবা প্রচ্ছদ শিল্পকে তিনি অন্যরকম অবস্থানে নিয়ে গেছেন। [[কামাল লোহানী]] বলেন, কাইয়ুম চৌধুরী আমাদের চলার পথে সংগ্রামী সাথী।
অধ্যাপক [[বোরহানউদ্দীন খান জাহাঙ্গীর]] বলেন, তাঁর মতো বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।<ref name="Riddick">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://archive.prothom-alo.com/detail/date/2010-03-10/news/47797|শিরোনাম= কাইয়ুম চৌধুরী |শেষাংশ=|প্রথমাংশ=|তারিখ=মার্চ ১০, ২০১০|কর্ম= দৈনিক প্রথম আলো|সংগ্রহের-তারিখ= জানুয়ারি ১৬, ২০১০ }}</ref> তিনি ২০১৪ সালে শহীদ আলতাফ মাহমুদ পদকে ভূষিত হয়েছেন।
অধ্যাপক [[বোরহানউদ্দীন খান জাহাঙ্গীর]] বলেন, তার মতো বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।<ref name="Riddick">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://archive.prothom-alo.com/detail/date/2010-03-10/news/47797|শিরোনাম= কাইয়ুম চৌধুরী |শেষাংশ=|প্রথমাংশ=|তারিখ=মার্চ ১০, ২০১০|কর্ম= দৈনিক প্রথম আলো|সংগ্রহের-তারিখ= জানুয়ারি ১৬, ২০১০ }}</ref> তিনি ২০১৪ সালে শহীদ আলতাফ মাহমুদ পদকে ভূষিত হয়েছেন।


==মৃত্যু==
==মৃত্যু==

০৯:৩৫, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

কাইয়ুম চৌধুরী
জন্ম(১৯৩২-০৩-০৯)৯ মার্চ ১৯৩২[১]
মৃত্যুনভেম্বর ৩০, ২০১৪(2014-11-30) (বয়স ৮২)
শিক্ষাতেলচিত্র, রেখাচিত্র, জলরং, ছাপচিত্র
পরিচিতির কারণচিত্রশিল্প, প্রচ্ছদশিল্প
উল্লেখযোগ্য কর্ম
ঘুড়ি হাতে বালক, আত্মপ্রকৃতি, বিড়াল

কাইয়ুম চৌধুরী (জন্ম : মার্চ ৯, ১৯৩২ - মৃত্যু : নভেম্বর ৩০, ২০১৪)[২] বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য চিত্রশিল্পী। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে তাকে একুশে পদক প্রদান করা হয়।[৩]

প্রাথমিক জীবন

জন্ম ফেনী জেলায় ক্ষয়িষ্ণু জমিদার পরিবারে। কাইয়ুম চৌধুরী যেখানে জন্মগ্রহণ করেন সেখানে অর্থের জৌলুস না থাকলেও শিক্ষা ও উদার মানসের অবস্থান ছিল । পরিবারের এক সদস্য আমীনুল ইসলাম চৌধুরী লিখেছিলেন নোয়াখালীর ইতিহাস। পিতা আবদুল কুদ্দুস চৌধুরী ছিলেন সমবায় বিভাগের পরিদর্শক। পরবর্তীতে তিনি সমবায় ব্যাংকের কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। নোয়াখালীর গোপাল হালদারের সঙ্গে ছিল তার সখ্য। কুমিল্লায় গায়ক মোহাম্মদ হোসেন খসরু এবং লোকগানের সাধক শচীন দেববর্মনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছিল। চট্টগ্রামের আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদের সঙ্গে তাঁদের পারিবারিক যোগাযোগ ছিল । বাবার বদলির চাকরির সুবাদে কাইয়ুম চৌধুরী বাংলার অনেক এলাকায় ঘুরে ফিরেছেন।

শিক্ষাজীবন

মক্তবে কাইয়ুম চৌধুরীর শিক্ষার হাতেখড়ি, তারপর ভর্তি হন চট্টগ্রামের নর্মাল স্কুলে। এরপর কিছুকাল কুমিল্লায় কাটিয়ে চলে যান নড়াইলেচিত্রা পাড়ের এই শহরে কাটে তার তিনটি বছর। সেখান থেকে সন্দ্বীপ এসে ভর্তি হন প্রথমে সন্দ্বীপ হাই স্কুল ও পরে কারগিল হাই স্কুলে। [৪] এরপর নোয়াখালী জেলা সদরে কিছুকাল কাটিয়ে পিতার সঙ্গে তার ঠাঁই বদল হয় ফেনীতে। ভর্তি হলেন ফেনী হাই স্কুলে, সেখান থেকে যান ফরিদপুরেফরিদপুর থেকে ময়মনসিংহ এসে ১৯৪৯ সালে সিটি কলেজিয়েট স্কুল থেকে যখন ম্যাট্রিক পাশ করেন। স্কুল জীবন থেকে আঁকাআঁকির প্রতি ঝোঁক দেখা গিয়েছিল কাইয়ুম চৌধুরীর। ১৯৪৯ সালে আর্ট ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়ে কাইয়ুম চৌধুরী কৃতিত্বের সঙ্গে শিক্ষা সমাপন করেন ১৯৫৪ সালে। তিনি শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনকে। সদ্য-প্রতিষ্ঠিত আর্টস ইনস্টিটিউটের নবীন শিক্ষার্থীরা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। ইমদাদ হোসেন, মুর্তজা বশীর, আমিনুল ইসলাম, দেবদাস চক্রবর্তী প্রমুখ ছিলেন প্রতিবাদী আয়োজনের নিরলস কর্মী এবং সকল মিছিলের পুরোভাগে। অন্তর্মুখী স্বভাবের কাইয়ুম চৌধুরীরও সম্পৃক্ত ছিলেন।[৪] শিক্ষাজীবন প্রসঙ্গে পরবর্তীকালে এক সাক্ষাৎকারে কাইয়ুম চৌধুরী বলেন: "আমি আমার শিল্পীজীবন যখন শুরু করি আমার সঙ্গে যাঁরা ছিলেন কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, গায়ক এদের সবার মধ্যে একটা যোগযোগ ছিল। যেমন, আমার বন্ধুস্থানীয়দের মধ্যে আমার খুব ঘনিষ্টতম বন্ধু--যার সঙ্গে আমি একই সঙ্গে রাতও কাটিয়েছি, তিনি সৈয়দ শামসুল হক। তারপর শামসুর রাহমান, আলাউদ্দিন আল আজাদ, হাসান হাফিজুর রহমান, বোরহানউদ্দীন খান জাহাঙ্গীর। আমরা এক সময় একই সঙ্গে কাজ করতাম। সেই সময় গায়কদের মধ্যে যেমন আবদুল আলীম সাহেবকে দেখেছি যে, কবি জসীম উদ্‌ দীন তাঁকে গান শেখাচ্ছেন। জসীম উদ্‌ দীন সাহেব তাঁর ভাঙা গলায় সুর তুলে দিচ্ছেন আবদুল আলীমের গলায়, নীনা হামিদের গলায়, এগুলো তো আমাদের চোখের সামনে দেখা। মিউজিশিয়ানদের মধ্যে, আজকে যেমন সমর দাস, আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু।"[৫]

কর্মজীবন

১৯৫৫ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত কাইয়ুম চৌধুরী নানা ধরনের ব্যবহারিক কাজ করেছেন, বিজ্ঞাপনী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন, আর বইয়ের প্রচ্ছদ ও সচিত্রকরণের কাজ করেছেন । সিগনেটের বই কাইয়ুম চৌধুরীর জন্য ছিল এক অনুপম নির্দশন। সাময়িক পত্রিকা বিষয়ে আগ্রহী কাইয়ুম চৌধুরী, ছায়াছবি নামে একটি চলচ্চিত্র সাময়িকী যুগ্মভাবে সম্পাদনা করেছিলেন কিছুকাল। সুযোগমতো টুকটাক প্রচ্ছদ আঁকছিলেন এবং এই কাজের সূত্রেই পরিচয় সৈয়দ শামসুল হকের সঙ্গে। ১৯৫৫ সালে তার দুই বইয়ের প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন, কিন্তু প্রকাশক অপারগ হওয়ায় সে-বই আর আলোর মুখ দেখে নি। প্রচ্ছদে একটি পালাবদল তিনি ঘটালেন ১৯৫৭ সালে প্রকাশিত জহুরুল হকের সাত-সাঁতার গ্রন্থে। গ্রন্থের বক্তব্যের বা সারসত্যের প্রতিফলন ঘটালেন প্রচ্ছদে, একই সঙ্গে গ্রাফিক ডিজাইনে কুশলতা ও নতুন ভাবনার ছাপ মেলে ধরলেন। এমনি দক্ষতার যুগল মিলনে আঁকলেন ফজলে লোহানী রচিত 'কথাসরিৎসাগর-এর প্রচ্ছদ যা প্রকাশিত হয় নি। গাজী শাহাবুদ্দিন আহমদের সচিত্র সন্ধানী পত্রিকার আত্মপ্রকাশ তার অঙ্কন, টাইপোগ্রাফিবোধ ও রসসিঞ্চিত তির্যক রচনা প্রকাশের মাধ্যমে হয়ে উঠেছিল অনবদ্য। ১৯৫৭ সালে কাইয়ুম চৌধুরী আর্ট কলেজে শিক্ষকতায় যোগ দেন।

শিল্প ভাবনা

১৯৫৭ সালে সতীর্থ আমিনুল ইসলামসৈয়দ জাহাঙ্গীরকে নিয়ে কাইয়ুম চৌধুরী গিয়েছিলেন কলকাতায়। বৃটিশ কাউন্সিলের তরুণ কর্মকর্তা জিওফ্রে হেডলির আহ্বানে এই সফর। কলকাতায় দেখা করেছিলেন সত্যজিৎ রায়খালেদ চৌধুরীর সঙ্গে। ১৯৫৯ সালে বন্ধুবর গাজী শাহাবুদ্দিন আহমদের সন্ধানী প্রকাশনী যাত্রা শুরু করে জহির রায়হানের 'শেষ বিকেলের মেয়ে' গ্রন্থ প্রকাশের মাধ্যমে। ১৯৬১ সালে মাওলা ব্রাদার্স সৃজনশীল প্রকাশনার অধ্যায় উন্মোচন শুরু করে আবদুশ শাকুরের 'ক্ষীয়মাণ' এবং সৈয়দ শামসুল হকের কাব্যগ্রন্থ 'একদা এক রাজ্যে' প্রকাশ দ্বারা। এই দুই প্রকাশনা সংস্থার কাজের পেছনে বরাবরই কাইয়ুম চৌধুরী সক্রিয় থেকেছেন। তিনি আরও প্রচ্ছদ আঁকেন ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত শামসুর রাহমানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে।

১৯৫৯ এবং ১৯৬১ সালে রেলওয়ের টাইমটেবিলের প্রচ্ছদ এঁকে সেরা পুরস্কারটি লাভ করেন কাইয়ুম চৌধুরী। তিনি ১৯৬০ সালে তাহেরা খানমের সঙ্গে পরিণয়-বন্ধনে আবদ্ধ হন, যিনি ছিলেন আর্ট কলেজে ভর্তি হওয়া প্রথম চারজন ছাত্রীর একজন। মনের সাযুজ্য তার শৈল্পিক প্রয়াসের জন্য অনুকূল ছিল এবং স্ত্রীর ভূমিকা প্রেরণাদায়ক ছিল। ১৯৬১ সালে ডিজাইন সেন্টার ছেড়ে অবজাভার হাউজে চিফ আর্টিস্ট হিসেবে যোগদান করেন।অবজারভার পত্রিকার রবিবারের সাময়িকীতে ডিজাইন নিয়ে যেসব নিরীক্ষা করতেন তার শিক্ষক জয়নুলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। [৪]

শিল্পরীতি

তেল রঙ, জল রঙ, কালি-কলম, মোমরং, রেশমছাপ ইত্যাদি নানা মাধ্যমে কাইয়ুম চৌধুরী কাজ করেছেন। তার প্রকটি প্রবণতা জ্যামিতিক আকৃতির অনুষঙ্গ। বস্তুতঃ তার ছবি নকশা প্রধান। বর্ণিল পটভূমিতে মোটাদাগের নকশা তার প্রধানতম অঙ্কনশৈলী। অন্যদিকে কাইয়ুম চৌধুরীর চিত্রাবলী বর্ণোজ্জ্বল;- এই দিক থেকে আঁরি মাতিসের সঙ্গে তার সমিলতা লক্ষ্যণীয়। লাল, নীল, সবুজ এই তিনটি রং তিনি প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করে থাকেন। এই বর্ণভঙ্গী তার চিত্ররীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তার ক্যানভাসের আয়তন প্রায়শঃ বর্গাকার। এছাড়া তার চিত্রাবলিতে এদেশের লোকশিল্পসুলভ পুতুল, পাখা, হাঁড়ি, শীতলপাটি, কাঁথা ইত্যাদির পুনঃপৌণিক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।

সন্মাননা

শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী ২০১০ সালে সুফিয়া কামাল পদক লাভ করেন । প্রতিক্রিয়ায় শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, 'এমন একজন মহীয়সী নারীর নামাঙ্কিত পদক আমাকে প্রদান করা হয়েছে, জানি না আমি এর যোগ্য কি না। আমি এর জন্য আনন্দিত এবং গর্বিত। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কাছে আমি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।'[৬] কাইয়ুম চৌধুরীর ৭৮তম জন্মবার্ষিকীতে সৈয়দ শামসুল হক বলেন, সত্যিকার অর্থে বিশ্বমানের শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। মুস্তাফা মনোয়ার বলেন, সত্যজিত রায়ের পর গ্রাফিক্স কিংবা প্রচ্ছদ শিল্পকে তিনি অন্যরকম অবস্থানে নিয়ে গেছেন। কামাল লোহানী বলেন, কাইয়ুম চৌধুরী আমাদের চলার পথে সংগ্রামী সাথী। অধ্যাপক বোরহানউদ্দীন খান জাহাঙ্গীর বলেন, তার মতো বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।[৭] তিনি ২০১৪ সালে শহীদ আলতাফ মাহমুদ পদকে ভূষিত হয়েছেন।

মৃত্যু

২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর কাইউম চৌধুরী বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের ক্ল্যাসিকাল মিউজিক ফেস্টিভালের চতুর্থ দিনে তার বক্তব্য দেয়ার সময় হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেখান থেকে তাকে সি এম এইচ- এ নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।[৮]

চিত্রমালা

তথ্যসূত্র

  1. কাইয়ুম চৌধুরীর জন্ম
  2. http://www.thedailystar.net/newDesign/news-details.php?nid=176914
  3. http://www.bengalfoundation.org/index.php?view=artist/ArtistProfile.php&artistID=3&page=5
  4. [১]
  5. সাপ্তাহিক ২০০০, ২২ অক্টোবর ১৯৯৯, পৃ. ৪৭
  6. "কাইয়ুম চৌধুরী"দৈনিক কালের কন্ঠ। ২১ জুন ২০১০। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ১৬, ২০১০ 
  7. "কাইয়ুম চৌধুরী"দৈনিক প্রথম আলো। মার্চ ১০, ২০১০। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ১৬, ২০১০ 
  8. Artist Qayyum Chy passes away