পুয়ের্তো রিকো: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
অ স্থানাঙ্ক |
সম্প্রসারণ |
||
৫৩ নং লাইন: | ৫৩ নং লাইন: | ||
|footnotes = | |
|footnotes = | |
||
}} |
}} |
||
'''পুয়ের্তো রিকো''' ({{lang-en|Puerto Rico}}), যার সরকারী নাম '''পুয়ের্তো রিকো জনরাষ্ট্র''' ({{lang-en|Commonwealth of Puerto Rico}}) ও পূর্ণ স্পেনীয় নাম ''''এস্তাদো লিব্রে আসোসিয়াদো দে পুয়ের্তো রিকো''' (অর্থাৎ "মুক্ত পুয়ের্তো রিকো সংযুক্ত রাষ্ট্র") [[পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ|পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে]] অবস্থিত একটি স্বশাসিত দ্বীপ ও জনরাষ্ট্র। দ্বীপটি প্রশাসনিকভাবে [[উত্তর আমেরিকা]] মহাদেশের [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র|মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের]] সাথে সংযুক্ত। ভৌগোলিকভাবে দ্বীপটি উত্তর-পূর্ব [[ক্যারিবীয় সাগর|ক্যারিবীয় সাগরের]] [[বৃহত্তর অ্যান্টিলিজ]] দ্বীপশৃঙ্খলের সর্বপূর্বস্থিত দ্বীপ। এটি [[ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র]] থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার পূর্বে, [[ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ]] থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের [[ফ্লোরিডা]] অঙ্গরাজ্য থেকে ১৬০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। ঘন জনবসতিবিশিষ্ট এই দ্বীপটির উত্তর উপকূলটি [[আটলান্টিক মহাসাগর|আটলান্টিক মহাসাগরের]] দিকে মুখ করে আছে। পূর্ব উপকূলের কাছেই দুইটি ক্ষুদ্র দ্বীপ আছে যাদের নাম [[বিয়েকেস]] ও [[কুলেব্রা]]; এগুলি প্রশাসনিকভাবে পুয়ের্তো রিকোর অংশ। পশ্চিমে অবস্থিত [[মোনা]] দ্বীপটিও তাই। বৃহত্তর অ্যান্টিলিজ দ্বীপশৃঙ্খলের অন্যান্য দ্বীপের সাথে তুলনা করলে পুয়ের্তো রিকো আয়তনে ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের এক-পঞ্চমাংশ, [[হাইতি]]র এক-তৃতীয়াংশ এবং [[জামাইকা]]র প্রায় সমান। দ্বীপটি মোটামুটি আয়তাকার। পূর্ব-পশ্চিমে এর সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ১৭৯ কিলোমিটার, উত্তর-দক্ষিণে ৬৩ কিলোমিটার। পুয়ের্তো রিকোর উত্তর-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত [[সান হুয়ান]] একাধারে রাজধানী শহর, বৃহত্তম শহর ও প্রধান বন্দর। |
|||
পুয়ের্তো রিকোর অধিবাসীদেরকে স্থানীয় স্পেনীয় ভাষায় পুয়ের্তোরিকেনিয়ো নামে ডাকা হয়। পুয়ের্তোরিকানদের একটি মিশ্র স্পেনীয়, মার্কিন, আফ্রিকান ও ক্যারিবীয় সংস্কৃতি আছে। দ্বীপটি সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে [[লাতিন আমেরিকা]]র অন্যান্য দেশগুলির তুলনায় এগিয়ে আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দ্বীপটির সম্পর্ক এর অন্যতম কারণ। এটিতে মার্কিন মালিকানাধীন একাধিক শিল্পকারখানা ও সামরিক ঘাঁটি আছে। যদিও সম্প্রতি পুয়ের্তো রিকো ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক সম্প্রতি রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত, তার পরেও দ্বীপটির বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণই মার্কিনীদের সাথে স্থায়ী সম্পর্ক বজায় রাখার ব্যাপারে সায় দিয়ে থাকে। মার্কিনপন্থীদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক পুয়ের্তো রিকোকে একটি মার্কিন অঙ্গরাজ্য হিসেবে দেখতে আগ্রহী, বাকিরা বর্তমান সংযুক্ত জনরাষ্ট্র মর্যাদা নিয়ে সন্তুষ্ট। অন্যদিকে একটি ক্ষুদ্র সংখ্যালঘু অংশ অনেক দিন ধরেই দ্বীপটির স্বাধীনতা কামনা করে আসছে। |
|||
]] |
|||
পুয়ের্তো রিকো প্রায় চার শতাব্দী ধরে একটি [[স্পেনীয় উপনিবেশ]] ছিল। ১৮৯৮ সালে [[স্পেনীয়-মার্কিন যুদ্ধ|স্পেনীয়-মার্কিন যুদ্ধের]] পরে এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে নিবিড় সম্পর্ক থাকলেও ভৌগোলিকভাবে ও সাংস্কৃতিকভাবে দ্বীপটি এখনও লাতিন আমেরিকার অংশ। দ্বীপের প্রায় সমস্ত অধিবাসী মাতৃভাষা হিসেবে [[স্পেনীয় ভাষা]]তে কথা বলে। |
|||
পুয়ের্তো রিকো পদগুচ্ছটির অর্থ "সমৃদ্ধ বন্দর"। নামটি আদিতে পুয়ের্তো রিকোর বর্তমান রাজধানীর নামে প্রয়োগ করা হয়েছিল। ১৬শ শতকে শহরটির নাম ছিল সান হুয়ান বাউতিস্তা দে পুয়ের্তো রিকো। সময়ের সাথে সাথে ধীরে ধীরে রাজধানীটির নাম সান হুয়ান আর সমগ্র দ্বীপের নাম পুয়ের্তো রিকো হয়ে যায়। এর আগে ১৫শ শতকের শেষভাগে পুয়ের্তো রিকোতে ইউরোপীয় উপনিবেশকারীদের পদার্পণ ঘটে। তারপর থেকেই বিদেশী বিভিন্ন শক্তি দ্বীপটির ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। স্পেনীয় ঔপনিবেশিক শাসকেরা স্থানীয় জনগণের সাথে আলোচনা না করেই শাসনকাজ পরিচালনা করতেন। ১৮৯৮ সালে পুয়ের্তো রিকো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধিকৃত ভূখণ্ডে পরিণত হবার পর মার্কিনীরাই দ্বীপটির সমস্ত প্রশানিক কর্মকর্তাদের কাজে নিয়োগ দান করে। ১৯১৭ সাল থেকে পুয়ের্তো রিকানদেরকে [[মার্কিন নাগরিক]] হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হলেও দ্বীপটি একটি অধিকৃত ভূখণ্ড হিসেবেই এর মর্যাদা বজায় রাখে। |
|||
২০শ শতকের প্রথমার্ধে বহু পুয়ের্তোরিকান অধিবাসী মার্কিন শাসনের ব্যাপারে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করা শুরু করে এবং এর পর সেখানে স্বাধীনতা বা ন্যূনপক্ষে স্বশাসনের ব্যাপারে আন্দোলনের সূচনা হয়। ১৯৫২ সালে পুয়ের্তো রিকো স্থানীয় স্ব-শাসনের মর্যাদা লাভ করে এবং একটি জনরাষ্ট্রে রূপ নেয়। পুয়ের্তো রিকোর সংবিধান অনুযায়ী স্থানীয় অধিবাসীরা একজন গভর্নর বা প্রশাসক এবং একাধিক আইনপ্রণেতাকে নির্বাচন করে, যারা দ্বীপটির স্থানীয় ব্যাপারগুলি দেখাশোনা করেন। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বীপটির প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক সম্পর্ক ও বাণিজ্য চুক্তিগুলির ব্যাপারে আইনি ক্ষমতা রাখে। |
|||
১৯৫২ সাল থেকে পুয়ের্তোরিকানরা তাদের দ্বীপটির মর্যাদা নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয়। কেউ কেউ যায় দ্বীপটি জনরাষ্ট্র হিসেবে বজায় থাকুক, আবার কেউ কেউ চায় দ্বীপটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্যে পরিণত হোক, আবার কেউ কেউ দ্বীপটির পূর্ণ স্বাধীনতা চায়। এই বিষয়গুলির উপর পুয়ের্তো রিকোতে অনেকগুলি গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণই জনরাষ্ট্র মর্যাদা কিংবা অঙ্গরাজ্য মর্যাদার পক্ষে সমান সমান পক্ষপাতিত্ব প্রদর্শন করেছে। |
|||
পুয়ের্তো রিকোর জলবায়ু মৃদু ক্রান্তীয় ধরনের। মূল দ্বীপটির অভ্যন্তরে রয়েছে একটি পর্বতময় অঞ্চল, যাকে একটি উর্বর উপকূলীয় সমভূমি চারপাশে ঘিরে রেখেছে। পুয়ের্তো রিকোর ভূসংস্থান ও জলবায়ু [[চিনি]] ও [[কফি]]র মত অর্থকরী ও রপ্তানিমুখী শস্য উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত অনুকূল। ১৮শ শতকের শেষভাগেই এই রপ্তানিকৃত শস্যগুলি দ্বীপটির অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা শুরু করে। কিন্তু এভাবে অর্জিত অর্থের বেশির ভাগই স্পেনের কাছে চলে যায় এবং দ্বীপটিতে নিজস্ব কোনও ভারসাম্যবিশিষ্ট, বৈচিত্র্যময় অর্থনীতির বিকাশ ঘটেনি। পুয়ের্তো রিকোর ইতিহাসের সিংহভাগ সময় ধরেই এর অর্থনীতি বৈদেশিক বাজারের চাহিদা ও দামের অস্বাভাবিক হ্রাস-বৃদ্ধির উপর নির্ভরশীল। |
|||
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে দ্বীপটির অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটতে শুরু করে। সেসময় দ্বীপটিতে হালকা শিল্পকারখানা ও সেবাখাত যেমন ব্যাংকিং খাত বিকাশের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। পর্যটন শিল্প একটি প্রধান শিল্পে পরিণত হয়, প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটক এখানে বেড়াতে আসতে শুরু করে। এত কিছুর পরেও দ্বীপটির অর্থনীতি বিশ্ববাজার, পর্যটক ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ভর্তুকির উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল হয়েই থাকে। ১৯৮০-র দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে পুয়ের্তো রিকোতে বেকারত্বের হার ব্যাপক বেড়ে যায় এবং অনেক পুয়ের্তোরিকান অধিবাসী সুযোগের সন্ধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে অভিবাসন করেন। তবে ২০০০-এর দশকের শুরুর দিকে অনেক পুয়ের্তোরিকান দ্বীপটিতে ফেরত আসেন ও সেখানে ব্যবসা শুরু করেন, শিল্পকারখানায় বা অন্যান্য অর্থনৈতিক খাতে যোগ দেন কিংবা অবসরজীবন কাটাতে শুরু করে। |
|||
'''পুয়ের্তো রিকো''' [[রাজধানী]] [[সান হুয়ান]]। সরকারী নাম ''কমনওয়েলথ অব পুয়ের্তো রিকো। |
|||
== আরও দেখুন == |
== আরও দেখুন == |
১৭:১৫, ১৬ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
Estado Libre Asociado de Puerto Rico পুয়ের্তো রিকোর কমনওয়েল্থ | |
---|---|
পতাকা | |
জাতীয় সঙ্গীত: La Borinqueña | |
রাজধানী ও বৃহত্তম নগরী বা বসতি | সান হুয়ান |
সরকারি ভাষা | স্পেনীয় এবং ইংরেজি |
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ | পুয়ের্তো রিকান |
সরকার | কমনওয়েল্থ |
• গভর্নর | Aníbal Acevedo Vilá |
স্বাধীনতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র[১] | |
• সমর্পণ | ১০ ডিসেম্বর, ১৮৯৮ স্পেনের রাজ্য থেকে |
• পানি (%) | ১.৬ |
জনসংখ্যা | |
• জুলাই ২০০৭ আনুমানিক | ৩,৯৯৪,২৫৯ (১২৭তম) |
• ২০০০ আদমশুমারি | ৩,৯১৩,০৫৫ |
জিডিপি (পিপিপি) | ২০০৭ আনুমানিক |
• মোট | $৭৭.৪ বিলিয়ন (N/A) |
• মাথাপিছু | $১৯,৬০০ (N/A) |
মানব উন্নয়ন সূচক | N/A ত্রুটি: মানব উন্নয়ন সূচক-এর মান অকার্যকর |
মুদ্রা | মার্কিন ডলার (ইউএসডি) |
সময় অঞ্চল | ইউটিসি-৪ (AST) |
• গ্রীষ্মকালীন (ডিএসটি) | ইউটিসি-৪ (No DST) |
কলিং কোড | ১ |
ইন্টারনেট টিএলডি | .pr |
পুয়ের্তো রিকো (ইংরেজি: Puerto Rico), যার সরকারী নাম পুয়ের্তো রিকো জনরাষ্ট্র (ইংরেজি: Commonwealth of Puerto Rico) ও পূর্ণ স্পেনীয় নাম 'এস্তাদো লিব্রে আসোসিয়াদো দে পুয়ের্তো রিকো (অর্থাৎ "মুক্ত পুয়ের্তো রিকো সংযুক্ত রাষ্ট্র") পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত একটি স্বশাসিত দ্বীপ ও জনরাষ্ট্র। দ্বীপটি প্রশাসনিকভাবে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সংযুক্ত। ভৌগোলিকভাবে দ্বীপটি উত্তর-পূর্ব ক্যারিবীয় সাগরের বৃহত্তর অ্যান্টিলিজ দ্বীপশৃঙ্খলের সর্বপূর্বস্থিত দ্বীপ। এটি ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার পূর্বে, ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্য থেকে ১৬০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। ঘন জনবসতিবিশিষ্ট এই দ্বীপটির উত্তর উপকূলটি আটলান্টিক মহাসাগরের দিকে মুখ করে আছে। পূর্ব উপকূলের কাছেই দুইটি ক্ষুদ্র দ্বীপ আছে যাদের নাম বিয়েকেস ও কুলেব্রা; এগুলি প্রশাসনিকভাবে পুয়ের্তো রিকোর অংশ। পশ্চিমে অবস্থিত মোনা দ্বীপটিও তাই। বৃহত্তর অ্যান্টিলিজ দ্বীপশৃঙ্খলের অন্যান্য দ্বীপের সাথে তুলনা করলে পুয়ের্তো রিকো আয়তনে ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের এক-পঞ্চমাংশ, হাইতির এক-তৃতীয়াংশ এবং জামাইকার প্রায় সমান। দ্বীপটি মোটামুটি আয়তাকার। পূর্ব-পশ্চিমে এর সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ১৭৯ কিলোমিটার, উত্তর-দক্ষিণে ৬৩ কিলোমিটার। পুয়ের্তো রিকোর উত্তর-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত সান হুয়ান একাধারে রাজধানী শহর, বৃহত্তম শহর ও প্রধান বন্দর।
পুয়ের্তো রিকোর অধিবাসীদেরকে স্থানীয় স্পেনীয় ভাষায় পুয়ের্তোরিকেনিয়ো নামে ডাকা হয়। পুয়ের্তোরিকানদের একটি মিশ্র স্পেনীয়, মার্কিন, আফ্রিকান ও ক্যারিবীয় সংস্কৃতি আছে। দ্বীপটি সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশগুলির তুলনায় এগিয়ে আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দ্বীপটির সম্পর্ক এর অন্যতম কারণ। এটিতে মার্কিন মালিকানাধীন একাধিক শিল্পকারখানা ও সামরিক ঘাঁটি আছে। যদিও সম্প্রতি পুয়ের্তো রিকো ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক সম্প্রতি রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত, তার পরেও দ্বীপটির বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণই মার্কিনীদের সাথে স্থায়ী সম্পর্ক বজায় রাখার ব্যাপারে সায় দিয়ে থাকে। মার্কিনপন্থীদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক পুয়ের্তো রিকোকে একটি মার্কিন অঙ্গরাজ্য হিসেবে দেখতে আগ্রহী, বাকিরা বর্তমান সংযুক্ত জনরাষ্ট্র মর্যাদা নিয়ে সন্তুষ্ট। অন্যদিকে একটি ক্ষুদ্র সংখ্যালঘু অংশ অনেক দিন ধরেই দ্বীপটির স্বাধীনতা কামনা করে আসছে। ]] পুয়ের্তো রিকো প্রায় চার শতাব্দী ধরে একটি স্পেনীয় উপনিবেশ ছিল। ১৮৯৮ সালে স্পেনীয়-মার্কিন যুদ্ধের পরে এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে নিবিড় সম্পর্ক থাকলেও ভৌগোলিকভাবে ও সাংস্কৃতিকভাবে দ্বীপটি এখনও লাতিন আমেরিকার অংশ। দ্বীপের প্রায় সমস্ত অধিবাসী মাতৃভাষা হিসেবে স্পেনীয় ভাষাতে কথা বলে।
পুয়ের্তো রিকো পদগুচ্ছটির অর্থ "সমৃদ্ধ বন্দর"। নামটি আদিতে পুয়ের্তো রিকোর বর্তমান রাজধানীর নামে প্রয়োগ করা হয়েছিল। ১৬শ শতকে শহরটির নাম ছিল সান হুয়ান বাউতিস্তা দে পুয়ের্তো রিকো। সময়ের সাথে সাথে ধীরে ধীরে রাজধানীটির নাম সান হুয়ান আর সমগ্র দ্বীপের নাম পুয়ের্তো রিকো হয়ে যায়। এর আগে ১৫শ শতকের শেষভাগে পুয়ের্তো রিকোতে ইউরোপীয় উপনিবেশকারীদের পদার্পণ ঘটে। তারপর থেকেই বিদেশী বিভিন্ন শক্তি দ্বীপটির ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। স্পেনীয় ঔপনিবেশিক শাসকেরা স্থানীয় জনগণের সাথে আলোচনা না করেই শাসনকাজ পরিচালনা করতেন। ১৮৯৮ সালে পুয়ের্তো রিকো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধিকৃত ভূখণ্ডে পরিণত হবার পর মার্কিনীরাই দ্বীপটির সমস্ত প্রশানিক কর্মকর্তাদের কাজে নিয়োগ দান করে। ১৯১৭ সাল থেকে পুয়ের্তো রিকানদেরকে মার্কিন নাগরিক হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হলেও দ্বীপটি একটি অধিকৃত ভূখণ্ড হিসেবেই এর মর্যাদা বজায় রাখে।
২০শ শতকের প্রথমার্ধে বহু পুয়ের্তোরিকান অধিবাসী মার্কিন শাসনের ব্যাপারে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করা শুরু করে এবং এর পর সেখানে স্বাধীনতা বা ন্যূনপক্ষে স্বশাসনের ব্যাপারে আন্দোলনের সূচনা হয়। ১৯৫২ সালে পুয়ের্তো রিকো স্থানীয় স্ব-শাসনের মর্যাদা লাভ করে এবং একটি জনরাষ্ট্রে রূপ নেয়। পুয়ের্তো রিকোর সংবিধান অনুযায়ী স্থানীয় অধিবাসীরা একজন গভর্নর বা প্রশাসক এবং একাধিক আইনপ্রণেতাকে নির্বাচন করে, যারা দ্বীপটির স্থানীয় ব্যাপারগুলি দেখাশোনা করেন। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বীপটির প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক সম্পর্ক ও বাণিজ্য চুক্তিগুলির ব্যাপারে আইনি ক্ষমতা রাখে।
১৯৫২ সাল থেকে পুয়ের্তোরিকানরা তাদের দ্বীপটির মর্যাদা নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয়। কেউ কেউ যায় দ্বীপটি জনরাষ্ট্র হিসেবে বজায় থাকুক, আবার কেউ কেউ চায় দ্বীপটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্যে পরিণত হোক, আবার কেউ কেউ দ্বীপটির পূর্ণ স্বাধীনতা চায়। এই বিষয়গুলির উপর পুয়ের্তো রিকোতে অনেকগুলি গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণই জনরাষ্ট্র মর্যাদা কিংবা অঙ্গরাজ্য মর্যাদার পক্ষে সমান সমান পক্ষপাতিত্ব প্রদর্শন করেছে।
পুয়ের্তো রিকোর জলবায়ু মৃদু ক্রান্তীয় ধরনের। মূল দ্বীপটির অভ্যন্তরে রয়েছে একটি পর্বতময় অঞ্চল, যাকে একটি উর্বর উপকূলীয় সমভূমি চারপাশে ঘিরে রেখেছে। পুয়ের্তো রিকোর ভূসংস্থান ও জলবায়ু চিনি ও কফির মত অর্থকরী ও রপ্তানিমুখী শস্য উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত অনুকূল। ১৮শ শতকের শেষভাগেই এই রপ্তানিকৃত শস্যগুলি দ্বীপটির অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা শুরু করে। কিন্তু এভাবে অর্জিত অর্থের বেশির ভাগই স্পেনের কাছে চলে যায় এবং দ্বীপটিতে নিজস্ব কোনও ভারসাম্যবিশিষ্ট, বৈচিত্র্যময় অর্থনীতির বিকাশ ঘটেনি। পুয়ের্তো রিকোর ইতিহাসের সিংহভাগ সময় ধরেই এর অর্থনীতি বৈদেশিক বাজারের চাহিদা ও দামের অস্বাভাবিক হ্রাস-বৃদ্ধির উপর নির্ভরশীল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে দ্বীপটির অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটতে শুরু করে। সেসময় দ্বীপটিতে হালকা শিল্পকারখানা ও সেবাখাত যেমন ব্যাংকিং খাত বিকাশের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। পর্যটন শিল্প একটি প্রধান শিল্পে পরিণত হয়, প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটক এখানে বেড়াতে আসতে শুরু করে। এত কিছুর পরেও দ্বীপটির অর্থনীতি বিশ্ববাজার, পর্যটক ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ভর্তুকির উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল হয়েই থাকে। ১৯৮০-র দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে পুয়ের্তো রিকোতে বেকারত্বের হার ব্যাপক বেড়ে যায় এবং অনেক পুয়ের্তোরিকান অধিবাসী সুযোগের সন্ধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে অভিবাসন করেন। তবে ২০০০-এর দশকের শুরুর দিকে অনেক পুয়ের্তোরিকান দ্বীপটিতে ফেরত আসেন ও সেখানে ব্যবসা শুরু করেন, শিল্পকারখানায় বা অন্যান্য অর্থনৈতিক খাতে যোগ দেন কিংবা অবসরজীবন কাটাতে শুরু করে।
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
- পুয়ের্তো রিকোর সরকার
- সরকারী ওয়েবসাইট (স্পেনীয়)
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার
- পুয়ের্তো রিকোতে জাতিসংঘের ঘোষণা
- সাধারণ তথ্য