মেসোপটেমিয়া: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
WikitanvirBot (আলোচনা | অবদান)
বট বানান ঠিক করছে, কোনো সমস্যায় তানভিরের আলাপ পাতায় বার্তা রাখুন
WikitanvirBot (আলোচনা | অবদান)
বট বানান ঠিক করছে, কোনো সমস্যায় তানভিরের আলাপ পাতায় বার্তা রাখুন
১০ নং লাইন: ১০ নং লাইন:
== ধর্ম ও দর্শন ==
== ধর্ম ও দর্শন ==


[[চিত্র:Lilith Periodo de Isin Larsa y Babilonia.JPG|thumb|left|150px|আঠারশ শতকের দিকে উদ্ধারকৃত ব্যাবিলোনিয়ানদের আরাধ্য দেবীর একটি মূর্তি]]মেসোপটেমিয়ানদের বিশ্বাস ছিল যে পৃথিবী একটি বিশাল ফাঁকবিশিষ্ট স্থানে অবস্থিত একটি গোলাকার চাকতি। তারা আরও বিশ্বাস করত যে আকাশে স্বর্গ এবং মাটির নিচে রয়েছে নরক। জল সম্পর্কে তাদের ধারনা ছিল যে পৃথিবী জল দিয়েই তৈরী এবং এর চারপাশজুড়ে জলই আছে। প্রাচীন মেসোপটেমিয়ানরা বহুইশ্বরবাদে বিশ্বাসি ছিলো তবে সময়ের ধারার সাথে কিছু কিছু গোষ্ঠির ধর্মমত পরিবর্তীত হতে শুরু করে। প্রাচীন মেসোপটেমিয়ানদের মধ্যে বিভিন্ন দেবদেবির মূর্তিপূজার প্রমান পাওয়া যায়।<br />
[[চিত্র:Lilith Periodo de Isin Larsa y Babilonia.JPG|thumb|left|150px|আঠারশ শতকের দিকে উদ্ধারকৃত ব্যাবিলোনিয়ানদের আরাধ্য দেবীর একটি মূর্তি]]মেসোপটেমিয়ানদের বিশ্বাস ছিল যে পৃথিবী একটি বিশাল ফাঁকবিশিষ্ট স্থানে অবস্থিত একটি গোলাকার চাকতি। তারা আরও বিশ্বাস করত যে আকাশে স্বর্গ এবং মাটির নিচে রয়েছে নরক। জল সম্পর্কে তাদের ধারণা ছিল যে পৃথিবী জল দিয়েই তৈরী এবং এর চারপাশজুড়ে জলই আছে। প্রাচীন মেসোপটেমিয়ানরা বহুইশ্বরবাদে বিশ্বাসি ছিলো তবে সময়ের ধারার সাথে কিছু কিছু গোষ্ঠির ধর্মমত পরিবর্তীত হতে শুরু করে। প্রাচীন মেসোপটেমিয়ানদের মধ্যে বিভিন্ন দেবদেবির মূর্তিপূজার প্রমান পাওয়া যায়।<br />
ধর্ম পালনের দিক দিয়ে মেসোপটেমিয়া সভ্যতার মানুষেরা অনেক অগ্রগামী ছিলো। প্রতিটি জিগুরাট ও মন্দিরেই বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ যেমন ধনি, দরিদ্র, ব্যাবসায়ী, কামার, মজুর, কৃষক ইত্যাদি শ্রেণীর লোকেদের বসার ব্যাবস্থা ছিল। এসব লোকজন যার যার নিজস্ব জায়গায় গিয়ে নগরদেবতাদের প্রনামভক্তি ও বিভিন্ন জিনিষ উৎসর্গ করত। এতে এই সভ্যতার সার্বজনীন ধর্মব্যাবস্থার পরিচয় পাওয়া যায়।
ধর্ম পালনের দিক দিয়ে মেসোপটেমিয়া সভ্যতার মানুষেরা অনেক অগ্রগামী ছিলো। প্রতিটি জিগুরাট ও মন্দিরেই বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ যেমন ধনি, দরিদ্র, ব্যাবসায়ী, কামার, মজুর, কৃষক ইত্যাদি শ্রেণীর লোকেদের বসার ব্যাবস্থা ছিল। এসব লোকজন যার যার নিজস্ব জায়গায় গিয়ে নগরদেবতাদের প্রনামভক্তি ও বিভিন্ন জিনিস উৎসর্গ করত। এতে এই সভ্যতার সার্বজনীন ধর্মব্যাবস্থার পরিচয় পাওয়া যায়।


== বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ==
== বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ==
সময়কাল বিচারে মেসোপটেমিয়ার অধিবাসীরা অতি উন্নত চিন্তার কৃষিবিদ ছিলো। উদ্বৃত্ত ফসল মন্দিরে জমা দেওয়ার রেওয়াজ ছিলো। কৃষকদের মধ্যে কে কতটা ফসল মন্দিরে জমা দিল এই হিসাব রাখতে পুরোহিতরা পাহারের গায়ে দাগ কেটে মনে রাখার চেষ্টা করত। ক্রমেই হিসাব রাখার গুরুত্বটাই প্রাধান্য পেতে শুরু করে। এক পর্যায়ে মেসোপটেমিয়ানরা [[গনিত]] শাস্ত্রের উদ্ভাবন ও উন্নতিসাধন করতে সক্ষম হয়। মেসোপটেমীয়দের সংখ্যাগুলি ষষ্ঠিক বা ষাট কেন্দ্রিক ছিলো। সেখান থেকেই এক ঘন্টায় ষাট মিনিট ও এক মিনিটে ষাট সেকেন্ডের হিসাব আসে। এছাড়া তারাই প্রথম বছরকে ১২ মাসে এবং এক মাসকে ৩০ দিনে ভাগ করে হিসাব করা শুরু করে।<ref>Eves, Howard [http://books.google.co.uk/books?id=lbmXsaTGNKUC&pg=PA47&dq=mesopotamia&source=gbs_toc_r&cad=4#v=onepage&q=mesopotamia&f=false''Daily Life in Mesopotamia''] Karen Rhea Nemet Nejat, p. 50-53</ref>
সময়কাল বিচারে মেসোপটেমিয়ার অধিবাসীরা অতি উন্নত চিন্তার কৃষিবিদ ছিলো। উদ্বৃত্ত ফসল মন্দিরে জমা দেওয়ার রেওয়াজ ছিলো। কৃষকদের মধ্যে কে কতটা ফসল মন্দিরে জমা দিল এই হিসাব রাখতে পুরোহিতরা পাহারের গায়ে দাগ কেটে মনে রাখার চেষ্টা করত। ক্রমেই হিসাব রাখার গুরুত্বটাই প্রাধান্য পেতে শুরু করে। এক পর্যায়ে মেসোপটেমিয়ানরা [[গনিত]] শাস্ত্রের উদ্ভাবন ও উন্নতিসাধন করতে সক্ষম হয়। মেসোপটেমীয়দের সংখ্যাগুলি ষষ্ঠিক বা ষাট কেন্দ্রিক ছিলো। সেখান থেকেই এক ঘন্টায় ষাট মিনিট ও এক মিনিটে ষাট সেকেন্ডের হিসাব আসে। এছাড়া তারাই প্রথম বছরকে ১২ মাসে এবং এক মাসকে ৩০ দিনে ভাগ করে হিসাব করা শুরু করে।<ref>Eves, Howard [http://books.google.co.uk/books?id=lbmXsaTGNKUC&pg=PA47&dq=mesopotamia&source=gbs_toc_r&cad=4#v=onepage&q=mesopotamia&f=false''Daily Life in Mesopotamia''] Karen Rhea Nemet Nejat, p. 50-53</ref>


যদিও প্রথমদিকে তাদের ধারনা ছিল পৃথিবীটা চ্যাপ্টা চাকতির মত কিন্তু পরবর্তীতে তাদের মধ্যে গোল পৃথিবীর ধারনা জন্মায় এবং তারাই প্রথম পৃথিবীকে ৩৬০ ডিগ্রিতে ভাগ করার পরিকল্পনা করে। ধারনা করা হয় যে তারাই প্রথম ১২ টি রাশিচক্র এবং জলঘড়ি আবিষ্কার করে।
যদিও প্রথমদিকে তাদের ধারণা ছিল পৃথিবীটা চ্যাপ্টা চাকতির মত কিন্তু পরবর্তীতে তাদের মধ্যে গোল পৃথিবীর ধারণা জন্মায় এবং তারাই প্রথম পৃথিবীকে ৩৬০ ডিগ্রিতে ভাগ করার পরিকল্পনা করে। ধারনা করা হয় যে তারাই প্রথম ১২ টি রাশিচক্র এবং জলঘড়ি আবিষ্কার করে।


ধাতুর ব্যাবহারেরে ক্ষেত্রে মেসোপটেমীয়রা বেশ উন্নতী সাধন করেছিল। তারা খৃষ্টপূর্ব ২৫০০ অব্দে [[তামা]] ও [[ব্রোঞ্জ|ব্রোঞ্জের]] ব্যাবহার শুরু করে। মেসোপটেমিয়ার বিভিন্ন মন্দির এবং জিগুরাট থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন বাসন কোসন পর্যবেক্ষন করলে ধারনা করা যায় যে তারাই [[তামা]] ও [[টিন|টিনের]] সংমিশ্রনে তৈরী একটি চমৎকার ধাতু [[ব্রোঞ্জ|ব্রোঞ্জের]] আবিষ্কারক। এছাড়া মেসোপটেমিয়ায় কাচের ব্যাবহার খৃষ্টপূর্বাব্দ ১৬০০ থেকে শুরু হয় বলে ধারনা করা হয়।<ref>Eves, Howard [http://books.google.co.uk/books?id=lbmXsaTGNKUC&pg=PA47&dq=mesopotamia&source=gbs_toc_r&cad=4#v=onepage&q=mesopotamia&f=false''Daily Life in Mesopotamia''] Karen Rhea Nemet Nejat, p. 16-17</ref>
ধাতুর ব্যাবহারেরে ক্ষেত্রে মেসোপটেমীয়রা বেশ উন্নতী সাধন করেছিল। তারা খৃষ্টপূর্ব ২৫০০ অব্দে [[তামা]] ও [[ব্রোঞ্জ|ব্রোঞ্জের]] ব্যাবহার শুরু করে। মেসোপটেমিয়ার বিভিন্ন মন্দির এবং জিগুরাট থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন বাসন কোসন পর্যবেক্ষন করলে ধারনা করা যায় যে তারাই [[তামা]] ও [[টিন|টিনের]] সংমিশ্রনে তৈরী একটি চমৎকার ধাতু [[ব্রোঞ্জ|ব্রোঞ্জের]] আবিষ্কারক। এছাড়া মেসোপটেমিয়ায় কাচের ব্যবহার খৃষ্টপূর্বাব্দ ১৬০০ থেকে শুরু হয় বলে ধারনা করা হয়।<ref>Eves, Howard [http://books.google.co.uk/books?id=lbmXsaTGNKUC&pg=PA47&dq=mesopotamia&source=gbs_toc_r&cad=4#v=onepage&q=mesopotamia&f=false''Daily Life in Mesopotamia''] Karen Rhea Nemet Nejat, p. 16-17</ref>


== ভাষা ও সাহিত্য ==
== ভাষা ও সাহিত্য ==

১৫:১৭, ৩ মে ২০১৬ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার মানচিত্র।

মেসোপটেমিয়া (প্রাচীন গ্রীকঃ Μεσοποταμία অর্থ-দুটি নদীর মধ্যবর্তী ভূমি, আরবিঃ بلاد الرافدين‎ ) বর্তমান ইরাকের টাইগ্রিস বা দজলা ও ইউফ্রেটিস বা ফোরাত নদী দুটির মধ্যবর্তী অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল। অধুনা ইরাক, সিরিয়ার উত্তরাংশ, তুরষ্কের উত্তরাংশ এবং ইরানের খুযেস্তান প্রদেশের অঞ্চল গুলোই প্রাচীন কালে মেসোপটেমিয়ার অন্তর্গত ছিল বলে মনে করা হয় । মেসোপটেমিয় সভ্যতা পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতার অন্যতম। খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ হতে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দের মধ্যে মেসোপটেমিয়ায় অতি উন্নত এক সভ্যতার উম্মেষ ঘটেছিল। সভ্যতার আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত এই অঞ্চল মিশরীয় সভ্যতার থেকে অনেকটাই ভিন্ন ছিল এবং বহিঃশত্রুদের থেকে খুব একটা সুরক্ষিত ছিলনা বলে বারবার এর উপর আক্রমণ চলতে থাকে এবং পরবর্তীতে এখান থেকেই ব্রোঞ্জ যুগে আক্কাদীয়, ব্যবিলনীয়, আসিরীয় ও লৌহ যুগে নব্য-আসিরীয় এবং নব্য-ব্যাবিলনীয় সভ্যতা গড়ে উঠে।[১]
খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০ সালের দিকে মেসোপটেমিয়া পার্সিয়ানদের নিয়ন্ত্রণেই ছিল কিন্তু পরে এই ভূখন্ডের আধিপত্ত নিয়ে রোমানদের সাথে যুদ্ধ হয় এবং রোমানরা এই অঞ্চল ২৫০ বছরের বেশি শাসন করতে পারে নি। । দ্বিতীয় শতকের শুরুর দিকে পার্সিয়ানরা এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় এবং সপ্তম শতাব্দী পর্যন্ত এই অঞ্চল তাদের শাসনেই থাকে, এরপর মুসলিম শাসনামল শুরু হয় । মুসলিম খিলাফত শাসনে এই অঞ্চল পরবর্তীতে ইরাক নামে পরিচিতি লাভ করে ।

ভৌগোলিক পটভূমি

আধুনিক ইরাকের টাইগ্রিসইউফ্রেটিস নদীদ্বয়ের মধ্যবর্তী অঞ্চলে যে সভ্যতার আবির্ভাব ঘটেছিল সেটাই মূলত মেসোমটেমিয়া সভ্যতা নামে পরিচিত। তুরষ্কের আনাতোলিয়া (আর্মেনিয়া)) পর্বতমালা হতে টাইগ্রিসইউফ্রেটিস দক্ষিণ পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে পারস্য উপসাগরে পরেছে। প্রকৃতপক্ষে পলিসমৃদ্ধ নদীদুটির এই অঞ্চলে এরূপ সভ্যতার বিকাশ ঘটাতে সহযোগিতা করেছিল। মূলত এই উর্বরা অঞ্চলটি (টাইগ্রিসইউফ্রেটিস) উত্তরে প্রলম্বিত হয়ে পশ্চিমে বাঁক নিয়ে আবার দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে নেমে গিয়ে প্রায় ভূমধ্যসাগরে গিয়ে শেষ হয়। বাঁক বিশিষ্ট এই অঞ্চলটিকে "উর্বরা অর্ধচন্দ্রাকৃতিক" হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। ইতিহাস বিক্ষাত এই অঞ্চলটি উত্তর আর্মেনিয়ার পার্বত্য অঞ্চল, দক্ষিণ ও পশ্চিমে আরব মরুভূম ও পূর্বে জাগরাস পার্বত্য অঞ্চল দ্বারা পরিবেষ্টিত। অবস্থানগত এই বৈশিষ্ট ও আরবদের আদিম যাযাবর সংস্কৃতির মিথস্ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মেসোপটেমিয়া একটি মিশ্র সভ্যতার ধারা নিয়ে গড়ে উঠেছিল। মেসোপটেমিয়া সভ্যতা ৫০০০ খৃষ্টপূর্বে সূচনা হয়ে পরিপূর্নতা লাভ করে প্রায় খৃষ্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে। ৩৩৩ খৃষ্টাব্দে এসে বিভিন্ন জনগোষ্ঠির আন্তঃকলহের মধ্য দিয়ে পরষ্পরের ধ্বংস ডেকে আনে এবং ক্ষয়িষ্ণু চরিত্র স্থায়িত্ব লাভ করে।

শব্দগত উৎপত্তি

টাইগ্রিসইউফ্রেটিস নদীর অববাহিকা যার থেকে মেসোপটেমিয়া নামের উৎপত্তি

মেসোপটেমিয়া নামটি গ্রীকদের দেওয়া, এর প্রকৃত অর্থ হল দুটি নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চল। এই অঞ্চলটি প্রধানত জলাভূমি ছিল। নলখাগড়ার জঙ্গল আর খেজুর গাছই ছিল এ প্রধান বনস্পতি। কালক্রমে টাইগ্রিসইউফ্রেটিস নদীর পলিমাটি জমে নিম্নভূমি ভরাট হয়ে এক উর্বর অঞ্চলের সৃষ্টি হয়। এই উর্বর এলাকায় প্রায় ৬০০০ খৃষ্টপুর্ব থেকেই বিভিন্ন এলাকার মানুষ এসে সমাবেত হতে থাকে। কালক্রমে এরাই মেসোপটেমিয়া সভ্যতার বীজ বপন করে। নদীবিধৌত এবং প্রাকৃতিক কোন সুরক্ষা ব্যাবস্থা না থাকায় এটি কালক্রমে বহিঃশত্রুদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিনত হয় এবং বিভিন্ন আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়। এর ফলে এই সভ্যতায় কয়েকটি সম্রাজ্যের উন্মেষ ঘটে। উত্তরাংশের নাম ছিল এশেরীয়া এবং দক্ষিণাংশের নাম ছিল ব্যাবিলনিয়া। ব্যাবিলোনিয়ার উত্তরে আক্কাদ ও দক্ষিণে সুমের নামে দুটি অংশে বিভক্ত ছিল। প্রকৃতপক্ষে এই দুটিজনগোষ্ঠির সৃজনশীলতার ফসলই হল মেসোপটেমিয়া সভ্যতা।

ধর্ম ও দর্শন

আঠারশ শতকের দিকে উদ্ধারকৃত ব্যাবিলোনিয়ানদের আরাধ্য দেবীর একটি মূর্তি

মেসোপটেমিয়ানদের বিশ্বাস ছিল যে পৃথিবী একটি বিশাল ফাঁকবিশিষ্ট স্থানে অবস্থিত একটি গোলাকার চাকতি। তারা আরও বিশ্বাস করত যে আকাশে স্বর্গ এবং মাটির নিচে রয়েছে নরক। জল সম্পর্কে তাদের ধারণা ছিল যে পৃথিবী জল দিয়েই তৈরী এবং এর চারপাশজুড়ে জলই আছে। প্রাচীন মেসোপটেমিয়ানরা বহুইশ্বরবাদে বিশ্বাসি ছিলো তবে সময়ের ধারার সাথে কিছু কিছু গোষ্ঠির ধর্মমত পরিবর্তীত হতে শুরু করে। প্রাচীন মেসোপটেমিয়ানদের মধ্যে বিভিন্ন দেবদেবির মূর্তিপূজার প্রমান পাওয়া যায়।

ধর্ম পালনের দিক দিয়ে মেসোপটেমিয়া সভ্যতার মানুষেরা অনেক অগ্রগামী ছিলো। প্রতিটি জিগুরাট ও মন্দিরেই বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ যেমন ধনি, দরিদ্র, ব্যাবসায়ী, কামার, মজুর, কৃষক ইত্যাদি শ্রেণীর লোকেদের বসার ব্যাবস্থা ছিল। এসব লোকজন যার যার নিজস্ব জায়গায় গিয়ে নগরদেবতাদের প্রনামভক্তি ও বিভিন্ন জিনিস উৎসর্গ করত। এতে এই সভ্যতার সার্বজনীন ধর্মব্যাবস্থার পরিচয় পাওয়া যায়।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

সময়কাল বিচারে মেসোপটেমিয়ার অধিবাসীরা অতি উন্নত চিন্তার কৃষিবিদ ছিলো। উদ্বৃত্ত ফসল মন্দিরে জমা দেওয়ার রেওয়াজ ছিলো। কৃষকদের মধ্যে কে কতটা ফসল মন্দিরে জমা দিল এই হিসাব রাখতে পুরোহিতরা পাহারের গায়ে দাগ কেটে মনে রাখার চেষ্টা করত। ক্রমেই হিসাব রাখার গুরুত্বটাই প্রাধান্য পেতে শুরু করে। এক পর্যায়ে মেসোপটেমিয়ানরা গনিত শাস্ত্রের উদ্ভাবন ও উন্নতিসাধন করতে সক্ষম হয়। মেসোপটেমীয়দের সংখ্যাগুলি ষষ্ঠিক বা ষাট কেন্দ্রিক ছিলো। সেখান থেকেই এক ঘন্টায় ষাট মিনিট ও এক মিনিটে ষাট সেকেন্ডের হিসাব আসে। এছাড়া তারাই প্রথম বছরকে ১২ মাসে এবং এক মাসকে ৩০ দিনে ভাগ করে হিসাব করা শুরু করে।[২]

যদিও প্রথমদিকে তাদের ধারণা ছিল পৃথিবীটা চ্যাপ্টা চাকতির মত কিন্তু পরবর্তীতে তাদের মধ্যে গোল পৃথিবীর ধারণা জন্মায় এবং তারাই প্রথম পৃথিবীকে ৩৬০ ডিগ্রিতে ভাগ করার পরিকল্পনা করে। ধারনা করা হয় যে তারাই প্রথম ১২ টি রাশিচক্র এবং জলঘড়ি আবিষ্কার করে।

ধাতুর ব্যাবহারেরে ক্ষেত্রে মেসোপটেমীয়রা বেশ উন্নতী সাধন করেছিল। তারা খৃষ্টপূর্ব ২৫০০ অব্দে তামাব্রোঞ্জের ব্যাবহার শুরু করে। মেসোপটেমিয়ার বিভিন্ন মন্দির এবং জিগুরাট থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন বাসন কোসন পর্যবেক্ষন করলে ধারনা করা যায় যে তারাই তামাটিনের সংমিশ্রনে তৈরী একটি চমৎকার ধাতু ব্রোঞ্জের আবিষ্কারক। এছাড়া মেসোপটেমিয়ায় কাচের ব্যবহার খৃষ্টপূর্বাব্দ ১৬০০ থেকে শুরু হয় বলে ধারনা করা হয়।[৩]

ভাষা ও সাহিত্য

খ্রিষ্টপূর্ব নবম থেকে সপ্তম শ তাব্দীর নব্য আসিরীয় সভ্যতার একটি মূর্তী যেখানে একটি সিংহ একটি মানুষের ঘাড়ে কামড় দিচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে এই পীকটোগ্রাফী তাদের লিখিত মত প্রকাশের প্রধান মাধ্যম ছিল।

মেসোপটেমীয়রা যে বা ভাষায় কথা বলত তাকে সেমিটিক ভাষা হিসেবে ইতিহাসবিদরা চিহ্নিত করেছেন। তাদের এই ভাষায় দৈনন্দিন ভাবের আদান প্রদান সহ বিজ্ঞানচর্চা, প্রশাষনিক কাজে এবং ধর্মকর্ম পরিচালনা করত। মেসোপোটেমীয়দের প্রধান কৃতিত্ব হল প্রয়োজনীয় ভাব বা বার্তা বোঝানোর জন্য আদিম লেখন পদ্ধতির উদ্ভাবন। প্রথম দিকে এই ভাষা কিছু অর্থোবোধক ছবির মাধ্যমে প্রকাশ করা হত। চিত্রধর্মী এই পদ্ধতিকে বিজ্ঞানীরা পীকটোগ্রাফি বলে থাকেন। মেসোপটেমীয়রা প্রধানত কাদামাটির উপর নলখাগড়ার সূচালো মাথা দিয়ে লিখে শুকিয়ে নিত কিন্তু পরবর্তীতে তা আরো পরিশীল হয়ে বর্নমালায় রূপ নেয়। আনুমানিক ৩৪০০ খৃষ্টপূর্ব অব্দের এই বর্নমালার মাধ্যমে লিখিত দলিল পাওয়া যায়। সেই সময়ের লেখালেখি শুধুমাত্র হিসাব নিকাশ সংরক্ষনের কাজে ব্যাবহার হত। আধুনিক যে দফতরীয় দলিল দেখতে পাওয়া যায় তা সুমেরীয়দের মধ্যেই প্রথম দেখা যায়।

সাহিত্যের জন্য মেসোপটেমীয়রা যে ভাষা ব্যাবহার করত আকে বিজ্ঞানীরা হেমেটিক ভাষা বলে চিহ্নিত করেছেন। প্রখ্যাত লেখক হোমার তার ইলিয়াড এবং ওডেসি লিখারও প্রায় এক হাজার বছর পূর্বে সুমেরীয়রা তাদের নিজস্ব ভাষায় সাহিত্য রচনা করেছিল। এর নাম ছিল গিলগামেশ। এই সাহিত্য থেকে যানা যায় যে এখানকার লোকজন অত্যন্ত কল্পনাপ্রবণ ছিলো। ব্যাবিলোনীয় শাষন আমলে তাদের লেখালেখিতে পলৌকিক চিন্তার প্রভাব লক্ষ্যণীয়। বসুত এইগুলো ছিল ধর্মাশ্রয়ী সাহিত্যচিন্তা।

তথ্যসূত্র

  1. বইঃ সাংস্কৃতিক ভূগোল, লেখক-আব্দুল বাকী। প্রকাশকঃ গ্লোব লাইব্রেরী (প্রাঃ) লিমিটেড
  2. Eves, Howard Daily Life in Mesopotamia Karen Rhea Nemet Nejat, p. 50-53
  3. Eves, Howard Daily Life in Mesopotamia Karen Rhea Nemet Nejat, p. 16-17