সরস্বতী (দেবী): সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
৮৮ নং লাইন: ৮৮ নং লাইন:
[[শুম্ভ ও নিশুম্ভ]] অসুরদ্বয়কে বধ করার সময় দেবী [[দুর্গা|দুর্গার]] শরীর থেকে যে কৌশিকী দেবীর উৎপত্তি হয়েছিল, তাঁর অপর নাম সরস্বতী।<ref>''দেবীভাগবত পুরাণ'', দশম স্কন্ধ, অধ্যায় ১২</ref>
[[শুম্ভ ও নিশুম্ভ]] অসুরদ্বয়কে বধ করার সময় দেবী [[দুর্গা|দুর্গার]] শরীর থেকে যে কৌশিকী দেবীর উৎপত্তি হয়েছিল, তাঁর অপর নাম সরস্বতী।<ref>''দেবীভাগবত পুরাণ'', দশম স্কন্ধ, অধ্যায় ১২</ref>


====শুক্ল যজুর্বেদ====
একসময় ইন্দ্রের শরীরের শক্তি চলে যাওয়ার ফলে তিনি মেষ আকৃতি গ্রহণ করেন। সেসময় ইন্দ্রের চিকিৎসার দায়িত্ব ছিল স্বর্গের অশ্বিনীদ্বয়ের উপর এবং সেবা-শুশ্রুষার ভার ছিল সরস্বতীর হাতে। সংগীত ও নৃত্যপ্রেমী ইন্দ্র সরস্বতীর গানবাজনা ও সেবায় সুস্থ হওয়ার পর তাকে মেষটি দান করেন।<ref>প্রত্নতাত্ত্বিক এন এস ভট্টসারি</ref>
"শুক্ল যজুর্বেদ" অনুসারে, একসময় ইন্দ্রের শরীরের শক্তি চলে যাওয়ার ফলে তিনি মেষ আকৃতি গ্রহণ করেন। সেসময় ইন্দ্রের চিকিৎসার দায়িত্ব ছিল স্বর্গের অশ্বিনীদ্বয়ের উপর এবং সেবা-শুশ্রুষার ভার ছিল সরস্বতীর হাতে। সংগীত ও নৃত্যপ্রেমী ইন্দ্র সরস্বতীর গানবাজনা ও সেবায় সুস্থ হওয়ার পর তাকে মেষটি দান করেন।<ref>প্রত্নতাত্ত্বিক এন এস ভট্টসারি</ref>


== পাদটীকা ==
== পাদটীকা ==

০৩:০০, ২০ মার্চ ২০১৬ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

সরস্বতী
দেবনাগরীसरस्वती

সরস্বতী (সংস্কৃত: सरस्वती) হলেন জ্ঞান, সংগীত, শিল্পকলা, বুদ্ধি ও বিদ্যার হিন্দু দেবী।[১] তিনি সরস্বতী-লক্ষ্মী-পার্বতীএই ত্রিদেবীর অন্যতম। এই ত্রিদেবীর কাজ হল ব্রহ্মা, বিষ্ণুশিবকে যথাক্রমে জগৎ সৃষ্টি, পালন ও ধ্বংস করতে সাহায্য করা।[২]

সরস্বতীর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ঋগ্বেদে। বৈদিক যুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত তিনি হিন্দুধর্মের একজন গুরুত্বপূর্ণ দেবী।[৩] হিন্দুরা বসন্তপঞ্চমী (মাঘ মাসের শুক্লাপঞ্চমী তিথি) তিথিতে সরস্বতী পূজা করে।[৪] এই দিন ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের হাতেখড়ি হয়।[৫] বৌদ্ধ[৬] ও পশ্চিম ও মধ্য ভারতে জৈনরাও সরস্বতীর পূজা করেন।[৭] জ্ঞান, সংগীত ও শিল্পকলার দেবী হিসেবে ভারতের বাইরে জাপান, ভিয়েতনাম, বালি (ইন্দোনেশিয়া) ও মায়ানমারেও সরস্বতী পূজার চল আছে।[৮]


মূর্তিকল্প

ধ্যানমন্ত্রে বর্ণিত মূর্তিকল্পটিতে দেবী সরস্বতীকে শ্বেতবর্ণা, শ্বেত পদ্মে আসীনা, মুক্তার হারে ভুষিতা, পদ্মলোচনা ও বীণাপুস্তকধারিণী এক দিব্য নারীমূর্তিরূপে কল্পনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে,

ওঁ তরুণশকলমিন্দোর্বিভ্রতী শুভ্রকান্তিঃ কুচভরনমিতাঙ্গী সন্নিষণ্ণা সিতাব্জে।
নিজকরকমলোদ্যল্লেখনীপুস্তকশ্রীঃ সকলবিভবসিদ্ধৈ পাতু বাগ্দেবতা নঃ।।

অর্থাৎ, “চন্দ্রের নূতন কলাধারিণী, শুভ্রকান্তি, কুচভরনমিতাঙ্গী, শ্বেত পদ্মাসনে (উত্তমরূপে) আসীনা, হস্তে ধৃত লেখনী ও পুস্তকের দ্বারা শোভমানা বাগ্‌দেবী সকল বিভবপ্রাপ্তির জন্য আমাদিগকে রক্ষা করুন।” [৯]

আবার পদ্মপুরাণ-এ উল্লিখিত সরস্বতীস্তোত্রম্-এ বর্ণিত হয়েছে,

শ্বেতপদ্মাসনা দেবী শ্বেতপুষ্পোপশোভিতা।
শ্বেতাম্বরধরা নিত্যা শ্বেতগন্ধানুলেপনা।।১
শ্বেতাক্ষসূত্রহস্তা চ শ্বেতচন্দনচর্চিতা।
শ্বেতবীণাধরা শুভ্রা শ্বেতালঙ্কারভূষিতা।।২
ইত্যাদি

অর্থাৎ, “দেবী সরস্বতী আদ্যন্তবিহীনা, শ্বেতপদ্মে আসীনা, শ্বেতপুষ্পে শোভিতা, শ্বেতবস্ত্র-পরিহিতা এবং শ্বেতগন্ধে অনুলিপ্তা।১ অধিকন্তু তাঁহার হস্তে শ্বেত রুদ্রাক্ষের মালা; তিনি শ্বেতচন্দনে চর্চিতা, শ্বেতবীণাধারিণী, শুভ্রবর্ণা এবং শ্বেত অলঙ্কারে ভূষিতা।২”[১০]

ধ্যান বা স্তোত্রবন্দনায় উল্লেখ না থাকলেও সরস্বতী ক্ষেত্রভেদে দ্বিভূজা অথবা চতুর্ভূজা এবং মরালবাহনা অথবা ময়ূরবাহনা। উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে সাধারণত ময়ূরবাহনা চতুর্ভূজা সরস্বতী পূজিত হন। ইনি অক্ষমালা, কমণ্ডলু, বীণা ও বেদপুস্তকধারিণী। বাংলা তথা পূর্বভারতে সরস্বতী দ্বিভূজা ও রাজহংসের পৃষ্ঠে আসীনা।

বঙ্গভূমে শ্রী শ্রী সরস্বতী পুষ্পাঞ্জলী মন্ত্রঃ

ওঁ জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে। বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে।। নমঃভদ্রকাল্যৈ নমো নিত্যং সরস্বত্যৈ নমো নমঃ। বেদ-বেদাঙ্গ-বেদান্ত-বিদ্যা-স্থানেভ্য এব চ।। এস স-চন্দন পুষ্পবিল্ব পত্রাঞ্জলি সরস্বতৈ নমঃ।।

প্রনাম মন্ত্রঃ নমো সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে। বিশ্বরূপে বিশালাক্ষ্মী বিদ্যাংদেহি নমোহস্তুতে।। জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে। বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে।।

সরস্বতীর স্তবঃ শ্বেতপদ্মাসনা দেবী শ্বেত পুষ্পোপশোভিতা। শ্বেতাম্ভরধরা নিত্যা শ্বেতাগন্ধানুলেপনা।। শ্বেতাক্ষসূত্রহস্তা চ শ্বেতচন্দনচর্চ্চিতা। শ্বেতবীণাধরা শুভ্রা শ্বেতালঙ্কারব‌ভূষিতা বন্দিতা সিদ্ধগন্ধর্ব্বৈর্চ্চিতা দেবদানবৈঃ। পূঝিতা মুনিভি: সর্ব্বৈঋষিভিঃ স্তূয়তে সদা।। স্তোত্রেণানেন তাং দেবীং জগদ্ধাত্রীং সরস্বতীম্। যে স্মরতি ত্রিসন্ধ্যায়ং সর্ব্বাং বিদ্যাং লভন্তি তে।।

পৌরাণিক কাহিনি

মহাপুরাণে

স্কন্দপুরাণে

ব্রহ্মা তাঁর কন্যা সরস্বতীর প্রতি দুর্ব্যবহার করলে শিব তাঁকে শরবিদ্ধ করে হত্যা করেন। তখন ব্রহ্মার পত্নী গায়ত্রী কন্যা সরস্বতীকে নিয়ে স্বামীর প্রাণ ফিরিয়ে আনার জন্য গন্ধমাদন পর্বতে তপস্যা শুরু করেন। তাঁদের দীর্ঘ তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে শিব ব্রহ্মার প্রাণ ফিরিয়ে দেন। সেই থেকে শিবের নির্দেশে গায়ত্রী ও সরস্বতীর তপস্যাস্থলে দুটি প্রসিদ্ধ তীর্থ সৃষ্টি হয়।[১১]

জগতে সকল দেবতা তীর্থ আছে, শুধু ব্রহ্মার তীর্থ নেই – একথা ভেবে ব্রহ্মা পৃথিবীতে নিজের তীর্থ স্থাপনে উদ্যোগী হলেন। তিনি একটি সর্বরত্নময়ী শিলা পৃথিবীতে নিক্ষেপ করলেন। সেটি চমৎকারপুরে এসে পড়ল। ব্রহ্মা সেখানেই নিজের তীর্থ স্থাপন করবেন বলে ভাবলেন। ব্রহ্মার নির্দেশে সরস্বতী পাতাল থেকে উঠে এলেন। ব্রহ্মা তাঁকে বললেন, “তুমি এখানে আমার কাছে সব সময় থাকো। আমি তোমার জলে ত্রিসন্ধ্যা তর্পণ করব।” সরস্বতী ভয় পেয়ে বললেন, “আমি লোকের স্পর্শ ভয় পাই বলে সব সময় পাতালে থাকি। কিন্তু আপনার আদেশ আমি অমান্যও করতে পারি না। আপনি সব দিক বিচার করে একটি ব্যবস্থা করুন।” তখন ব্রহ্মা সরস্বতীর অবস্থানের জন্য একটি হ্রদ খনন করলেন। সরস্বতী সেই হ্রদে অবস্থান করতে লাগলেন। ব্রহ্মা ভয়ংকর সাপেদের সেই হ্রদ ও সরস্বতীর রক্ষক নিযুক্ত করলেন।[১২]

উপপুরাণে

দেবীভাগবত পুরাণ

লক্ষ্মী ও সরস্বতী, রাজা রবি বর্মা অঙ্কিত

দেবীভাগবত পুরাণ অনুসারে, দেবী আদ্যাপ্রকৃতির তৃতীয় অংশে দেবী সরস্বতীর জন্ম। তিনি কৃষ্ণের জিহ্বাগ্র থেকে উৎপন্ন হয়েছেন। সরস্বতী বাক্য, বুদ্ধি, বিদ্যা ও জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী; সকল সংশয় ছেদকারিণী ও সর্বসিদ্ধিপ্রদায়িনী এবং বিশ্বের উপজীবিকা স্বরূপিনী। ব্রহ্মা প্রথম তাঁকে পূজা করেন। পরে জগতে তাঁর পূজা প্রতিষ্ঠিত হয়। সরস্বতী শুক্লবর্ণা, পীতবস্ত্রধারিণী এবং বীণা ও পুস্তকহস্তা। তিনি নারায়ণের অন্যতম পত্নী হয়েছিলেন। তারপর কৃষ্ণ জগতে তাঁর পূজা প্রবর্তন করেন মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে তাঁর পূজা হয়।[১৩]

গঙ্গা, লক্ষ্মী ও সরস্বতী ছিলেন নারায়ণের তিন পত্নী। একবার গঙ্গা ও নারায়ণ পরস্পরের দিকে তাকিয়ে হাসলে, তিন দেবীর মধ্যে তুমুল বিবাদ উপস্থিত হয়। এই বিবাদের পরিণামে একে অপরকে অভিশাপ দেন। গঙ্গার অভিশাপে সরস্বতী নদীতে পরিণত হন। পরে নারায়ণ বিধান দেন যে, সরস্বতী এক অংশে নদী, এক অংশে ব্রহ্মার পত্নী ও এক অংশে তাঁর সঙ্গিনী হবেন এবং কলিযুগের পাঁচ হাজার বছর অতিক্রান্ত হলে সরস্বতী সহ তিন দেবীরই শাপমোচন হবে।[১৪]

গঙ্গার অভিশাপে সরস্বতী মর্ত্যে নদী হলেনে এবং ব্রহ্মার প্রিয়তমা পত্নী ব্রাহ্মী হলেন।[১৫]

শুম্ভ ও নিশুম্ভ অসুরদ্বয়কে বধ করার সময় দেবী দুর্গার শরীর থেকে যে কৌশিকী দেবীর উৎপত্তি হয়েছিল, তাঁর অপর নাম সরস্বতী।[১৬]

শুক্ল যজুর্বেদ

"শুক্ল যজুর্বেদ" অনুসারে, একসময় ইন্দ্রের শরীরের শক্তি চলে যাওয়ার ফলে তিনি মেষ আকৃতি গ্রহণ করেন। সেসময় ইন্দ্রের চিকিৎসার দায়িত্ব ছিল স্বর্গের অশ্বিনীদ্বয়ের উপর এবং সেবা-শুশ্রুষার ভার ছিল সরস্বতীর হাতে। সংগীত ও নৃত্যপ্রেমী ইন্দ্র সরস্বতীর গানবাজনা ও সেবায় সুস্থ হওয়ার পর তাকে মেষটি দান করেন।[১৭]

পাদটীকা

  1. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; dkingsley নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  2. Encyclopaedia of Hinduism, p. 1214; Sarup & Sons, ISBN 978-81-7625-064-1
  3. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; davidk নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  4. Vasant Panchami Saraswati Puja, Know India - Odisha Fairs and Festivals
  5. The festival of Vasant Panchami: A new beginning, Alan Barker, United Kingdom
  6. Thomas Donaldson (2001), Iconography of the Buddhist Sculpture of Orissa, ISBN 978-8170174066, pages 274-275
  7. Birmingham Museum of Art (২০১০)। Birmingham Museum of Art : guide to the collection। [Birmingham, Ala]: Birmingham Museum of Art। পৃষ্ঠা 55। আইএসবিএন 978-1-904832-77-5 
  8. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; dk95 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  9. সরস্বতীধ্যানম্: স্তবকুসুমাঞ্জলি, স্বামী গম্ভীরানন্দ সম্পাদিত, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ১৯৬১, পৃষ্ঠা ৩৫৪
  10. সরস্বতীস্তোত্রম্ (২): স্তবকুসুমাঞ্জলি, স্বামী গম্ভীরানন্দ সম্পাদিত, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ১৯৬১, পৃষ্ঠা ৩৫৬-৫৭
  11. স্কন্দপুরাণ, ব্রহ্মখণ্ড, সেতু, ৪০
  12. স্কন্দপুরাণ, নাগখণ্ড, ৪০
  13. দেবীভাগবত পুরাণ, নবম স্কন্ধ, অধ্যায় ১, ২ ও ৪
  14. দেবীভাগবত পুরাণ, নবম স্কন্ধ, অধ্যায় ৭
  15. দেবীভাগবত পুরাণ, নবম স্কন্ধ, অধ্যায় ৮
  16. দেবীভাগবত পুরাণ, দশম স্কন্ধ, অধ্যায় ১২
  17. প্রত্নতাত্ত্বিক এন এস ভট্টসারি