নীলদর্পণ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
৮ নং লাইন: ৮ নং লাইন:
নীলদর্পণ নাটকের ইংরেজি অনুবাদ ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টে প্রেরিত হয়। স্বদেশে ও বিদেশে নীলকরদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। ফলে সরকার ইন্ডিগো কমিশন বা নীল কমিশন বসাতে বাধ্য হন। আইন করে নীলকরদের বর্বরতা বন্ধের ব্যবস্থা করা হয়। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পরবর্তীকালে এই নাটকের সঙ্গে স্টো-এর আঙ্কল টমস কেবিন গ্রন্থের তুলনা করেছিলেন। তা থেকেই বোঝা যায়, সেই সময়কার বাংলা সাহিত্য ও বাঙালির সমাজজীবনে এই নাটক কি গভীর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিল। সমাজের তৃণমূল স্তরের মানুষজনের জীবনকথা এমনই স্বার্থক ও গভীরভাবে নীলদর্পণ নাটকে প্রতিফলিত হয়েছে যে অনেকেই এই নাটককে বাংলার প্রথম গণনাটক হিসাবে স্বীকার করে নিয়েছিলেন। আবার বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কথা বলে এই নাটকই প্রথম জাতির জীবনে জাতীয়তাবোধের সঞ্চার ঘটিয়েছিল।
নীলদর্পণ নাটকের ইংরেজি অনুবাদ ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টে প্রেরিত হয়। স্বদেশে ও বিদেশে নীলকরদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। ফলে সরকার ইন্ডিগো কমিশন বা নীল কমিশন বসাতে বাধ্য হন। আইন করে নীলকরদের বর্বরতা বন্ধের ব্যবস্থা করা হয়। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পরবর্তীকালে এই নাটকের সঙ্গে স্টো-এর আঙ্কল টমস কেবিন গ্রন্থের তুলনা করেছিলেন। তা থেকেই বোঝা যায়, সেই সময়কার বাংলা সাহিত্য ও বাঙালির সমাজজীবনে এই নাটক কি গভীর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিল। সমাজের তৃণমূল স্তরের মানুষজনের জীবনকথা এমনই স্বার্থক ও গভীরভাবে নীলদর্পণ নাটকে প্রতিফলিত হয়েছে যে অনেকেই এই নাটককে বাংলার প্রথম গণনাটক হিসাবে স্বীকার করে নিয়েছিলেন। আবার বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কথা বলে এই নাটকই প্রথম জাতির জীবনে জাতীয়তাবোধের সঞ্চার ঘটিয়েছিল।
যদিও সামগ্রিকভাবে এই নাটকের কিছু আঙ্গিকগত ত্রুটিও সমালোচকদের দৃষ্টি এড়ায়নি। যেমন এই নাটকে চরিত্রে অন্তর্দ্বন্দ বড় একটা দৃষ্টিগোচর হয় না। বহির্সংঘাতের আধিপত্যে কোনও চরিত্রই বিকাশশীল হয়ে উঠতে পারেনি। নাট্যকাহিনিতেও যথোপযুক্ত জটিলতা না থাকার কারণে নাটকটি দর্শকমহলে তদনুরূপ আগ্রহ ধরে রাখতে পারেনি। সমাজের নিচু তলার বাসিন্দাদের ছবি এই নাটকে অত্যন্ত জীবন্ত হলেও ভদ্রলোক শ্রেণীর চরিত্রগুলির আচরণ ও সংলাপ এখানে বড় কৃত্রিম। এছাড়াও ট্রাজেডি রচনায় যে সংযম ও বিচক্ষণতা প্রত্যাশিত, দীনবন্ধু তার মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়ে আতিশায্যের আশ্রয় নিয়ে ফেলেন। ফলে নাটকের অনেক অংশই মেলোড্রামাটিক বা অতিনাটকীয়তার দোষে দুষ্ট হয়ে পড়ে। যার কারণে যথার্থ ট্র্যাজেডি হিসাবে গণ্য হওয়ার যোগ্যতা হারায় নীলদর্পণ।
যদিও সামগ্রিকভাবে এই নাটকের কিছু আঙ্গিকগত ত্রুটিও সমালোচকদের দৃষ্টি এড়ায়নি। যেমন এই নাটকে চরিত্রে অন্তর্দ্বন্দ বড় একটা দৃষ্টিগোচর হয় না। বহির্সংঘাতের আধিপত্যে কোনও চরিত্রই বিকাশশীল হয়ে উঠতে পারেনি। নাট্যকাহিনিতেও যথোপযুক্ত জটিলতা না থাকার কারণে নাটকটি দর্শকমহলে তদনুরূপ আগ্রহ ধরে রাখতে পারেনি। সমাজের নিচু তলার বাসিন্দাদের ছবি এই নাটকে অত্যন্ত জীবন্ত হলেও ভদ্রলোক শ্রেণীর চরিত্রগুলির আচরণ ও সংলাপ এখানে বড় কৃত্রিম। এছাড়াও ট্রাজেডি রচনায় যে সংযম ও বিচক্ষণতা প্রত্যাশিত, দীনবন্ধু তার মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়ে আতিশায্যের আশ্রয় নিয়ে ফেলেন। ফলে নাটকের অনেক অংশই মেলোড্রামাটিক বা অতিনাটকীয়তার দোষে দুষ্ট হয়ে পড়ে। যার কারণে যথার্থ ট্র্যাজেডি হিসাবে গণ্য হওয়ার যোগ্যতা হারায় নীলদর্পণ।

== চরিত্রসমূহ ==
* গোলক চন্দ্র বসু, একজন সম্ভ্রান্ত লোক
* নবীন মধব, গোলক বসুর বড় ছেলে
* বিন্দু মাধব, গোলক বসুর ছোট ছেলে
* সাধু চরণ, গোলকের প্রতিবেশি রাইয়ত
* রায় চরণ, সাধু চরণের ছোট ভাই
* গোপীনাথ, নীলকরের দেওয়ান)
* তোরাপ, একজন প্রতিবাদী চরিত্র)
* জ়ে জ়ে ঊড, প্রধান নীলকর
* পি পি রোজ, উডের ছেলে
* জমির পরিমাপকারী
* আমিন খালাসী, নীল সংগ্রাহক
* সাবিত্রী, গোলক বসুর স্ত্রী
* সৌরিন্দ্রী, নবীন মাধবের স্ত্রী
* সরলতা, বিন্দু মাধবের স্ত্রী
* রেবতী, সাধু চরণের স্ত্রী
* ক্ষেত্রমনি, সাধুচরণ ও রেবতীর মেয়ে
* আদুরি, গোলকের বাড়ির কাজের মেয়ে
* পদী ময়রানী, বিনোদনকারিনী


== তথ্যসূত্র ==
== তথ্যসূত্র ==

১২:০৫, ১২ জুলাই ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

নীল দর্পণ দ্বীনবন্ধু মিত্র রচিত একটি বাংলা নাটক। এই নাটকের পটভূমি নীল চাষের জন্য সাধারণ কৃষকদের উপর ইংরেজ শাসকদের অত্যাচার ও নিপীড়ন।

ইতিহাস

স্বাদেশিকতা, নীল বিদ্রোহ ও সমসাময়িক বাংলার সমাজব্যবস্থার সঙ্গে এই নাটকের যোগাযোগ অত্যন্ত গভীর। এই নাটকটি তিনি রচনা করেছিলেন নীলকর-বিষধর-দংশন-কাতর-প্রজানিকর-ক্ষেমঙ্করেণ-কেনচিৎ-পথিক ছদ্মনামে। যদিও এই নাটকই তাঁকে খ্যাতি ও সম্মানের চূড়ান্ত শীর্ষে উন্নীত করে। অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষায়, নীলদর্পণ নাটক প্রকাশিত হলে এবং এর ইংরেজি অনুবাদ প্রচারিত হলে একদিনেই এ নাটক বাঙালিমহলে যতটা প্রশংসিত হয়েছিল, শ্বেতাঙ্গমহলে ঠিক ততটাই ঘৃণিত হয়েছিল। এই নাটক অবলম্বন করে বাঙালির স্বদেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদের সূচনা, এই নাটক সম্বন্ধে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় ও রায়তদের মধ্যে মৈত্রীবন্ধন স্থাপিত হয়, এর মধ্যে দিয়েই শ্বেতাঙ্গ নীলকরদের বর্বর চরিত্র উদ্ঘাটিত হয়।” মনে করা হয়ে থাকে, নীলদর্পণ নাটকের ইংরেজি অনুবাদ করেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তবে আধুনিক গবেষকগণ এই বিষয়ে একমত নন। এই অনুবাদ Nil Durpan, or The Indigo Planting Mirror নামে প্রকাশ করেছিলেন রেভারেন্ড জেমস লঙ। এই অনুবাদ প্রকাশিত হবার সঙ্গে সঙ্গে দেশে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং জেমস লঙের জরিমানা ও কারাদণ্ড হয়। জরিমানার টাকা আদালতেই দিয়ে দেন কালীপ্রসন্ন সিংহ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এটিই প্রথম বাংলা নাটক যা ইংরেজিতে অনূদিত হয়। নীলদর্পণ নাটকের মূল উপজীব্য বিষয় হল বাঙালি কৃষক ও ভদ্রলোক শ্রেণীর প্রতি নীলকর সাহেবদের অকথ্য অত্যাচারের কাহিনী। কিভাবে সম্পন্ন কৃষক গোলকমাধবের পরিবার নীলকর অত্যাচারে ধ্বংস হয়ে গেল এবং সাধুচরণের কন্যা ক্ষেত্রমণির মৃত্যু হল, তার এক মর্মস্পর্শী চিত্র অঙ্কিত হয়েছে এই নাটকে। তোরাপ চরিত্রটি এই নাটকের অত্যন্ত শক্তিশালী এক চরিত্র; বাংলা সাহিত্যে এর তুলনা খুব কমই আছে। এই নাটকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য আঞ্চলিক ভাষার সাবলীল প্রয়োগ। কর্মসূত্রে পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষায় যে দক্ষতা দীনবন্ধু আয়ত্ত করেছিলেন, তারই এক ঝলক দেখা মেলে এই নাটকের জীবন্ত চরিত্রচিত্রণে।

পরবর্তী ইতিহাস

নীলদর্পণ নাটকের ইংরেজি অনুবাদ ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টে প্রেরিত হয়। স্বদেশে ও বিদেশে নীলকরদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। ফলে সরকার ইন্ডিগো কমিশন বা নীল কমিশন বসাতে বাধ্য হন। আইন করে নীলকরদের বর্বরতা বন্ধের ব্যবস্থা করা হয়। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পরবর্তীকালে এই নাটকের সঙ্গে স্টো-এর আঙ্কল টমস কেবিন গ্রন্থের তুলনা করেছিলেন। তা থেকেই বোঝা যায়, সেই সময়কার বাংলা সাহিত্য ও বাঙালির সমাজজীবনে এই নাটক কি গভীর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিল। সমাজের তৃণমূল স্তরের মানুষজনের জীবনকথা এমনই স্বার্থক ও গভীরভাবে নীলদর্পণ নাটকে প্রতিফলিত হয়েছে যে অনেকেই এই নাটককে বাংলার প্রথম গণনাটক হিসাবে স্বীকার করে নিয়েছিলেন। আবার বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কথা বলে এই নাটকই প্রথম জাতির জীবনে জাতীয়তাবোধের সঞ্চার ঘটিয়েছিল। যদিও সামগ্রিকভাবে এই নাটকের কিছু আঙ্গিকগত ত্রুটিও সমালোচকদের দৃষ্টি এড়ায়নি। যেমন এই নাটকে চরিত্রে অন্তর্দ্বন্দ বড় একটা দৃষ্টিগোচর হয় না। বহির্সংঘাতের আধিপত্যে কোনও চরিত্রই বিকাশশীল হয়ে উঠতে পারেনি। নাট্যকাহিনিতেও যথোপযুক্ত জটিলতা না থাকার কারণে নাটকটি দর্শকমহলে তদনুরূপ আগ্রহ ধরে রাখতে পারেনি। সমাজের নিচু তলার বাসিন্দাদের ছবি এই নাটকে অত্যন্ত জীবন্ত হলেও ভদ্রলোক শ্রেণীর চরিত্রগুলির আচরণ ও সংলাপ এখানে বড় কৃত্রিম। এছাড়াও ট্রাজেডি রচনায় যে সংযম ও বিচক্ষণতা প্রত্যাশিত, দীনবন্ধু তার মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়ে আতিশায্যের আশ্রয় নিয়ে ফেলেন। ফলে নাটকের অনেক অংশই মেলোড্রামাটিক বা অতিনাটকীয়তার দোষে দুষ্ট হয়ে পড়ে। যার কারণে যথার্থ ট্র্যাজেডি হিসাবে গণ্য হওয়ার যোগ্যতা হারায় নীলদর্পণ।

চরিত্রসমূহ

  • গোলক চন্দ্র বসু, একজন সম্ভ্রান্ত লোক
  • নবীন মধব, গোলক বসুর বড় ছেলে
  • বিন্দু মাধব, গোলক বসুর ছোট ছেলে
  • সাধু চরণ, গোলকের প্রতিবেশি রাইয়ত
  • রায় চরণ, সাধু চরণের ছোট ভাই
  • গোপীনাথ, নীলকরের দেওয়ান)
  • তোরাপ, একজন প্রতিবাদী চরিত্র)
  • জ়ে জ়ে ঊড, প্রধান নীলকর
  • পি পি রোজ, উডের ছেলে
  • জমির পরিমাপকারী
  • আমিন খালাসী, নীল সংগ্রাহক
  • সাবিত্রী, গোলক বসুর স্ত্রী
  • সৌরিন্দ্রী, নবীন মাধবের স্ত্রী
  • সরলতা, বিন্দু মাধবের স্ত্রী
  • রেবতী, সাধু চরণের স্ত্রী
  • ক্ষেত্রমনি, সাধুচরণ ও রেবতীর মেয়ে
  • আদুরি, গোলকের বাড়ির কাজের মেয়ে
  • পদী ময়রানী, বিনোদনকারিনী

তথ্যসূত্র

আরো পড়ুন

  • Dinabandhu Mitra: Nil Durpan or the Indigo Planting Mirror, translated by Michael Madhusudan Dutt, edited by Sudhi Pradhan and Sailesh Sen Gupta (Calcutta: Paschimbanga Natya Academy, 1997)
  • Geoffrey A. Oddie, chapter Eight, The Aftermath: Nil Durpan, Trial and Imprisonment, Missionaries, Rebellion and Proto-Nationalism: James Long of Bengal 1814–87 (London: Routledge, 1999)
  • Nurul Hossain Choudhury, "James Rev. Long", Banglapedia.