রুডলফ কারনাপ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Moheen (আলোচনা | অবদান)
± 5টি বিষয়শ্রেণী হটক্যাটের মাধ্যমে
Gomukhi (আলোচনা | অবদান)
১৬ নং লাইন: ১৬ নং লাইন:
'''রুডলফ কারনাপ''' ([[জার্মান ভাষা|জার্মান]]: Rudolf Carnap) (মে ১৮, ১৮৯১ – সেপ্টেম্বর ১৪, ১৯৭০) একজন [[জার্মানি|জার্মান]] দার্শনিক যিনি ১৯৩৫ সালের আগে [[ইউরোপ|ইউরোপে]] এবং এরপর থেকে [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র|মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে]] সক্রিয় ছিলেন। তিনি [[ভিয়েনা চক্র|ভিয়েনা চক্রের]] প্রধান সারির সদস্য এবং [[যৌক্তিক ইতিবাদ|যৌক্তিক ইতিবাদের]] প্রখ্যাত সমর্থক।
'''রুডলফ কারনাপ''' ([[জার্মান ভাষা|জার্মান]]: Rudolf Carnap) (মে ১৮, ১৮৯১ – সেপ্টেম্বর ১৪, ১৯৭০) একজন [[জার্মানি|জার্মান]] দার্শনিক যিনি ১৯৩৫ সালের আগে [[ইউরোপ|ইউরোপে]] এবং এরপর থেকে [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র|মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে]] সক্রিয় ছিলেন। তিনি [[ভিয়েনা চক্র|ভিয়েনা চক্রের]] প্রধান সারির সদস্য এবং [[যৌক্তিক ইতিবাদ|যৌক্তিক ইতিবাদের]] প্রখ্যাত সমর্থক।
==দার্শনিক কর্ম==
==দার্শনিক কর্ম==
কারনাপ জেনা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থান-কালের এক্সিওম্যাটিক তত্ত্ব (axiomatic theory) নামের একটি থিসিস লেখার কাজ সম্পন্ন করেন। [[পদার্থবিদ্যা]] বিভাগের কাছে তার এ-থিসিস ‘খুব দার্শনিকতাপূর্ণ’ (Too much philosophical) এবং দর্শন বিভাগের ব্রুনো বাউখের (Bruno Bauch) কাছে ‘বিশুদ্ধ পদার্থবিদ্যা’ (pure physics) মনে হলো। ব্রুনো বাউখের দীক্ষায় এই থিসিস সম্পন্ন করার সময় তিনি সতর্কতার সাথে কান্তের ক্রিটিক অব পিওর রিজন (critique of pure reason)পড়েছিলেন। ব্রুনো বাউখের পরিদর্শনে তিনি আরো একটি থিসিস লেখার কাজ সম্পন্ন করেন, যেটা অনেকটা গোঁড়া কান্তীয় (Kantian)। এ-থিসিস ‘দার রউম’ (Der Raum, ১৯২২, বাংলায়, ‘স্থান’) নামে প্রকাশিত হয়েছিলো। এই থিসিসে তিনি ফরমাল, ফিজিক্যাল ও পারসেপচ্যুয়াল স্থানের (formal, physical and perceptual (e.g., visual) spaces) মধ্যকার পার্থক্য পরিষ্কার করেন।
কারনাপ [[জেনা বিশ্ববিদ্যালয়|জেনা বিশ্ববিদ্যালয়ে]] স্থান-কালের [[স্বতঃসিদ্ধ ব্যবস্থা]] নামের একটি থিসিস লেখার কাজ সম্পন্ন করেন। [[পদার্থবিদ্যা]] বিভাগের কাছে তার এ-থিসিস ‘খুব দার্শনিকতাপূর্ণ’ (Too much philosophical) এবং দর্শন বিভাগের [[:en:Bruno Bauch|ব্রুনো বাউখের]] কাছে ‘বিশুদ্ধ পদার্থবিদ্যা’ (pure physics) মনে হলো। ব্রুনো বাউখের দীক্ষায় এই থিসিস সম্পন্ন করার সময় তিনি সতর্কতার সাথে কান্তের ক্রিটিক অব পিওর রিজন (critique of pure reason) পড়েছিলেন। ব্রুনো বাউখের পরিদর্শনে তিনি আরো একটি থিসিস লেখার কাজ সম্পন্ন করেন, যেটা অনেকটা গোঁড়া কান্তীয় (Kantian)। এ-থিসিস ‘দার রউম’ (Der Raum, ১৯২২, বাংলায়, ‘স্থান’) নামে প্রকাশিত হয়েছিলো। এই থিসিসে তিনি ফরমাল, ফিজিক্যাল ও পারসেপচ্যুয়াল স্থানের (formal, physical and perceptual (e.g., visual) spaces) মধ্যকার পার্থক্য পরিষ্কার করেন।
গাণিতিক যুক্তিবিদ্যার (Mathematical Logic) গটলব প্রেগের (Gottlob Frege) কোর্সের নিয়মিত ছাত্র ছিলেন। ফ্রেগের কোর্সটা ছিল [[বার্ট্রান্ড রাসেল|বার্ট্রান্ড রাসেলের]] (Bertrand Russell) যুক্তিবিদ্যক ও দার্শনিক কাজের উপর। কোর্সটা থেকে তিনি একটা দার্শনিক বোধ লাভ করেন, যেটা পরবর্তীতে তার কাজের সহায়ক হয়েছিলো। তিনি যৌক্তিক অগ্রসরণের সাথে গতানুগতিক দর্শনকে অতিক্রম করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছেন। তিনি রাসেলকে চিঠি লিখেছেন। রাসেল কারনাপের উপকারের স্বার্থে তার Principia Mathematica থেকে একটা দীর্ঘ গদ্য দেওয়ার মাধ্যমে সাড়া দিয়েছেন। ১৯২৪ ও ১৯২৫ সালের দিকে তিনি ফেনোমেনোলজির প্রবর্তক এডমুন্ড হুসার্ল আয়োজিত এক সেমিনারে উপস্থিত হন।
[[গাণিতিক যুক্তিবিজ্ঞান|গাণিতিক যুক্তিবিজ্ঞানের]] [[গট্‌লব ফ্রেগে|গটলব প্রেগের]] কোর্সের নিয়মিত ছাত্র ছিলেন। ফ্রেগের কোর্সটা ছিল [[বার্ট্রান্ড রাসেল|বার্ট্রান্ড রাসেলের]] যুক্তিবিদ্যক ও দার্শনিক কাজের উপর। কোর্সটা থেকে তিনি একটা দার্শনিক বোধ লাভ করেন, যেটা পরবর্তীতে তার কাজের সহায়ক হয়েছিলো। তিনি যৌক্তিক অগ্রসরণের সাথে গতানুগতিক দর্শনকে অতিক্রম করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছেন। তিনি রাসেলকে চিঠি লিখেছেন। রাসেল কারনাপের উপকারের স্বার্থে তার Principia Mathematica থেকে একটা দীর্ঘ গদ্য দেওয়ার মাধ্যমে সাড়া দিয়েছেন। ১৯২৪ ও ১৯২৫ সালের দিকে তিনি ফেনোমেনোলজির প্রবর্তক এডমুন্ড হুসার্ল আয়োজিত এক সেমিনারে উপস্থিত হন।
কারনাপ ১৯২৩ সালের কনফারেন্সে হ্যান্স রিচেনবাখের (Hans Reichenbach) সাথে যখন পরিচিত হন, তখন এক আত্মীযতামূলক প্রেরণা আবিষ্কার করেন। রিচেনবাখ তাকে ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক [[মরিস শ্লিক|মরিস শ্লিকের]] সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। শ্লিক কারনাপকে পরবর্তীতে ১৯২৬ সালে তার বিভাগে শিক্ষকতা করার সুযোগ করে দেন। তিনি [[ভিয়েনা চক্র|ভিয়েনা চক্রের]] সদস্য হন। এ-চক্রের সাথে বিখ্যাত আর যারা ছিলেন: হ্যান্স হ্যান, ফেডরিখ ভাইজম্যান, ওটো নিউরাথ ও হার্বাট ফেইগল। যখন [[লুডভিগ ভিতগেনস্তাইন|ভিতগেনস্তাইন]] ভিয়েনা পরিদর্শনে এসেছেন, তার সাথে সাক্ষাৎ করার সুযোগ পান তিনি। তিনি হান ও নিউরাথের সাথে যুক্ত হয়ে ১৯২৯ সালে ভিয়েনা চক্রের মেনিফেস্টো রচনা করেন এবং হ্যান্স রিচেনবাখের সাথে দর্শন-জার্নাল Erkenntnis সম্পাদনা করেন।
কারনাপ ১৯২৩ সালের কনফারেন্সে [[হ্যান্স রিচেনবাখ|হ্যান্স রিচেনবাখের]] সাথে যখন পরিচিত হন, তখন এক আত্মীযতামূলক প্রেরণা আবিষ্কার করেন। রিচেনবাখ তাকে [[ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়|ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের]] অধ্যাপক [[মরিস শ্লিক|মরিস শ্লিকের]] সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। শ্লিক কারনাপকে পরবর্তীতে ১৯২৬ সালে তার বিভাগে শিক্ষকতা করার সুযোগ করে দেন। তিনি [[ভিয়েনা চক্র|ভিয়েনা চক্রের]] সদস্য হন। এ-চক্রের সাথে বিখ্যাত আর যারা ছিলেন: হ্যান্স হ্যান, ফেডরিখ ভাইজম্যান, ওটো নিউরাথ ও হার্বাট ফেইগল। যখন [[লুডভিগ ভিতগেনস্তাইন|ভিতগেনস্তাইন]] ভিয়েনা পরিদর্শনে এসেছেন, তার সাথে সাক্ষাৎ করার সুযোগ পান তিনি। তিনি হান ও নিউরাথের সাথে যুক্ত হয়ে ১৯২৯ সালে ভিয়েনা চক্রের মেনিফেস্টো রচনা করেন এবং হ্যান্স রিচেনবাখের সাথে দর্শন-জার্নাল ''[[:en:Erkenntnis|Erkenntnis]]'' সম্পাদনা করেন।


===যৌক্তিক ইতিবাদ===
===যৌক্তিক ইতিবাদ===
রুডলফ কারনাপ যৌক্তিক ইতিবাদের প্রখ্যাত প্রখ্যাত সমর্থক।
রুডলফ কারনাপ [[যৌক্তিক ইতিবাদ|যৌক্তিক ইতিবাদের]] প্রখ্যাত প্রখ্যাত সমর্থক।
==== ছদ্ম-বাক্য====
==== ছদ্ম-বাক্য====
ভাষার যৌক্তিক বিশ্লেষণের উপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি [[অধিবিদ্যা]] বর্জন করেন। অধিবিদ্যার বাক্যগুলোকে প্রকৃত বাক্য হিসেবে গণ্য না করে ছদ্ম-বাক্য হিসেবে গণ্য করেন। ফলে এগুলো সত্য মিথ্যা কোনোটাই নয়, বরং অর্থহীন। যেসব বাক্য আপাতদৃষ্টিতে বাক্য বলে প্রতীয়মান হয়, কিন্তু ভাষার যৌক্তিক বিশ্লেষণে টিকে না, সেগুলোকে তিনি ছদ্ম-বাক্য বা ছদ্ম-বচন (pseudo-statement) বলে উল্লেখ করেন। দু’ধরণের ছদ্ম-বাক্য আছে বলে তিনি মনে করেন: প্রথমত, এমন কতগুলো [[অধিবিদ্যা|অধিবিদ্যক]] বচন রয়েছে, যেগুলোর প্রায়োগিক মূল্য আছে বলে সাধারণভাবে মনে করা হয়, কিন্তু ভাষার যৌক্তিক বিশ্লেষণে পড়ে এগুলো ব্যবহারিক গুরুত্ব হারায়; দ্বিতীয়ত, আরেক ধরণের ছদ্ম-বাক্য রয়েছে যার অন্তর্ভুক্ত শব্দগুলো অর্থপূর্ণ হলেও ভাষার যৌক্তিক অন্বয়ের (Logical Syntax of Language) নিয়ম লঙ্ঘনের ফলে অর্থহীন হয়ে পড়ে। অধিবিদ্যক বাক্যগুলো অভিজ্ঞতাভিত্তিক ভাষায় প্রকাশ করা যায় না বলে অর্থহীন। অভিজ্ঞতাভিত্তিক [[ভাষা]] এমন সব শব্দ নিয়ে গঠিত যেগুলোর অর্থ ইন্দ্রিয়-প্রত্যক্ষণ থেকে প্রাপ্ত। অধিবিদ্যা অতীন্দ্রিয় সত্তা সম্পর্কে আমাদের কোনো নতুন তথ্য দেয় না। ফলে, সত্তা সম্পর্কীয় এসব বাক্য অর্থহীন।
ভাষার যৌক্তিক বিশ্লেষণের উপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি [[অধিবিদ্যা]] বর্জন করেন। অধিবিদ্যার বাক্যগুলোকে প্রকৃত বাক্য হিসেবে গণ্য না করে ছদ্ম-বাক্য হিসেবে গণ্য করেন। ফলে এগুলো সত্য মিথ্যা কোনোটাই নয়, বরং অর্থহীন। যেসব বাক্য আপাতদৃষ্টিতে বাক্য বলে প্রতীয়মান হয়, কিন্তু ভাষার যৌক্তিক বিশ্লেষণে টিকে না, সেগুলোকে তিনি ছদ্ম-বাক্য বা ছদ্ম-বচন (pseudo-statement) বলে উল্লেখ করেন। দু’ধরণের ছদ্ম-বাক্য আছে বলে তিনি মনে করেন: প্রথমত, এমন কতগুলো [[অধিবিদ্যা|অধিবিদ্যক]] বচন রয়েছে, যেগুলোর প্রায়োগিক মূল্য আছে বলে সাধারণভাবে মনে করা হয়, কিন্তু ভাষার যৌক্তিক বিশ্লেষণে পড়ে এগুলো ব্যবহারিক গুরুত্ব হারায়; দ্বিতীয়ত, আরেক ধরণের ছদ্ম-বাক্য রয়েছে যার অন্তর্ভুক্ত শব্দগুলো অর্থপূর্ণ হলেও ভাষার যৌক্তিক অন্বয়ের (Logical Syntax of Language) নিয়ম লঙ্ঘনের ফলে অর্থহীন হয়ে পড়ে। অধিবিদ্যক বাক্যগুলো অভিজ্ঞতাভিত্তিক ভাষায় প্রকাশ করা যায় না বলে অর্থহীন। অভিজ্ঞতাভিত্তিক [[ভাষা]] এমন সব শব্দ নিয়ে গঠিত যেগুলোর অর্থ ইন্দ্রিয়-প্রত্যক্ষণ থেকে প্রাপ্ত। অধিবিদ্যা অতীন্দ্রিয় সত্তা সম্পর্কে আমাদের কোনো নতুন তথ্য দেয় না। ফলে, সত্তা সম্পর্কীয় এসব বাক্য অর্থহীন।

১৫:৪০, ২৯ জুন ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

রুডলফ কারনাপ
জন্ম(১৮৯১-০৫-১৮)১৮ মে ১৮৯১
মৃত্যু১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭০(1970-09-14) (বয়স ৭৯)
যুগবিংশ শতাব্দীর দর্শন
অঞ্চলপাশ্চাত্য দর্শন
ধারাবিশ্লেষণী
প্রধান আগ্রহ
যুক্তি · জ্ঞানতত্ত্ব
বিজ্ঞানের দর্শন
অর্থবিজ্ঞান
উল্লেখযোগ্য অবদান
Physicalism
Phenomenalism in linguistic terms
বিশ্লেষণমূলক-কৃত্রিম পার্থক্য (সংশোধিত)
মোডাল যুক্তির জন্যে অর্থবিজ্ঞান
কৃত্রিম পদ্ধতি
Carnap's categoricity problem
ধারণামূলক প্রকল্প
Beobachtungssatz
যৌক্তিক ইতিবাদ

রুডলফ কারনাপ (জার্মান: Rudolf Carnap) (মে ১৮, ১৮৯১ – সেপ্টেম্বর ১৪, ১৯৭০) একজন জার্মান দার্শনিক যিনি ১৯৩৫ সালের আগে ইউরোপে এবং এরপর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সক্রিয় ছিলেন। তিনি ভিয়েনা চক্রের প্রধান সারির সদস্য এবং যৌক্তিক ইতিবাদের প্রখ্যাত সমর্থক।

দার্শনিক কর্ম

কারনাপ জেনা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থান-কালের স্বতঃসিদ্ধ ব্যবস্থা নামের একটি থিসিস লেখার কাজ সম্পন্ন করেন। পদার্থবিদ্যা বিভাগের কাছে তার এ-থিসিস ‘খুব দার্শনিকতাপূর্ণ’ (Too much philosophical) এবং দর্শন বিভাগের ব্রুনো বাউখের কাছে ‘বিশুদ্ধ পদার্থবিদ্যা’ (pure physics) মনে হলো। ব্রুনো বাউখের দীক্ষায় এই থিসিস সম্পন্ন করার সময় তিনি সতর্কতার সাথে কান্তের ক্রিটিক অব পিওর রিজন (critique of pure reason) পড়েছিলেন। ব্রুনো বাউখের পরিদর্শনে তিনি আরো একটি থিসিস লেখার কাজ সম্পন্ন করেন, যেটা অনেকটা গোঁড়া কান্তীয় (Kantian)। এ-থিসিস ‘দার রউম’ (Der Raum, ১৯২২, বাংলায়, ‘স্থান’) নামে প্রকাশিত হয়েছিলো। এই থিসিসে তিনি ফরমাল, ফিজিক্যাল ও পারসেপচ্যুয়াল স্থানের (formal, physical and perceptual (e.g., visual) spaces) মধ্যকার পার্থক্য পরিষ্কার করেন। গাণিতিক যুক্তিবিজ্ঞানের গটলব প্রেগের কোর্সের নিয়মিত ছাত্র ছিলেন। ফ্রেগের কোর্সটা ছিল বার্ট্রান্ড রাসেলের যুক্তিবিদ্যক ও দার্শনিক কাজের উপর। কোর্সটা থেকে তিনি একটা দার্শনিক বোধ লাভ করেন, যেটা পরবর্তীতে তার কাজের সহায়ক হয়েছিলো। তিনি যৌক্তিক অগ্রসরণের সাথে গতানুগতিক দর্শনকে অতিক্রম করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছেন। তিনি রাসেলকে চিঠি লিখেছেন। রাসেল কারনাপের উপকারের স্বার্থে তার Principia Mathematica থেকে একটা দীর্ঘ গদ্য দেওয়ার মাধ্যমে সাড়া দিয়েছেন। ১৯২৪ ও ১৯২৫ সালের দিকে তিনি ফেনোমেনোলজির প্রবর্তক এডমুন্ড হুসার্ল আয়োজিত এক সেমিনারে উপস্থিত হন। কারনাপ ১৯২৩ সালের কনফারেন্সে হ্যান্স রিচেনবাখের সাথে যখন পরিচিত হন, তখন এক আত্মীযতামূলক প্রেরণা আবিষ্কার করেন। রিচেনবাখ তাকে ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মরিস শ্লিকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। শ্লিক কারনাপকে পরবর্তীতে ১৯২৬ সালে তার বিভাগে শিক্ষকতা করার সুযোগ করে দেন। তিনি ভিয়েনা চক্রের সদস্য হন। এ-চক্রের সাথে বিখ্যাত আর যারা ছিলেন: হ্যান্স হ্যান, ফেডরিখ ভাইজম্যান, ওটো নিউরাথ ও হার্বাট ফেইগল। যখন ভিতগেনস্তাইন ভিয়েনা পরিদর্শনে এসেছেন, তার সাথে সাক্ষাৎ করার সুযোগ পান তিনি। তিনি হান ও নিউরাথের সাথে যুক্ত হয়ে ১৯২৯ সালে ভিয়েনা চক্রের মেনিফেস্টো রচনা করেন এবং হ্যান্স রিচেনবাখের সাথে দর্শন-জার্নাল Erkenntnis সম্পাদনা করেন।

যৌক্তিক ইতিবাদ

রুডলফ কারনাপ যৌক্তিক ইতিবাদের প্রখ্যাত প্রখ্যাত সমর্থক।

ছদ্ম-বাক্য

ভাষার যৌক্তিক বিশ্লেষণের উপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি অধিবিদ্যা বর্জন করেন। অধিবিদ্যার বাক্যগুলোকে প্রকৃত বাক্য হিসেবে গণ্য না করে ছদ্ম-বাক্য হিসেবে গণ্য করেন। ফলে এগুলো সত্য মিথ্যা কোনোটাই নয়, বরং অর্থহীন। যেসব বাক্য আপাতদৃষ্টিতে বাক্য বলে প্রতীয়মান হয়, কিন্তু ভাষার যৌক্তিক বিশ্লেষণে টিকে না, সেগুলোকে তিনি ছদ্ম-বাক্য বা ছদ্ম-বচন (pseudo-statement) বলে উল্লেখ করেন। দু’ধরণের ছদ্ম-বাক্য আছে বলে তিনি মনে করেন: প্রথমত, এমন কতগুলো অধিবিদ্যক বচন রয়েছে, যেগুলোর প্রায়োগিক মূল্য আছে বলে সাধারণভাবে মনে করা হয়, কিন্তু ভাষার যৌক্তিক বিশ্লেষণে পড়ে এগুলো ব্যবহারিক গুরুত্ব হারায়; দ্বিতীয়ত, আরেক ধরণের ছদ্ম-বাক্য রয়েছে যার অন্তর্ভুক্ত শব্দগুলো অর্থপূর্ণ হলেও ভাষার যৌক্তিক অন্বয়ের (Logical Syntax of Language) নিয়ম লঙ্ঘনের ফলে অর্থহীন হয়ে পড়ে। অধিবিদ্যক বাক্যগুলো অভিজ্ঞতাভিত্তিক ভাষায় প্রকাশ করা যায় না বলে অর্থহীন। অভিজ্ঞতাভিত্তিক ভাষা এমন সব শব্দ নিয়ে গঠিত যেগুলোর অর্থ ইন্দ্রিয়-প্রত্যক্ষণ থেকে প্রাপ্ত। অধিবিদ্যা অতীন্দ্রিয় সত্তা সম্পর্কে আমাদের কোনো নতুন তথ্য দেয় না। ফলে, সত্তা সম্পর্কীয় এসব বাক্য অর্থহীন।

যাচাইকরণ নীতি

কারনাপ অন্যান্য যৌক্তিক ইতিবাদীর মতোই উল্লেখ করেন, কোনো বাক্য অর্থপূর্ণ হতে হলে তার যাচাইযোগ্যতা (verifiability) থাকতে হবে। তিনি দু’ধরণের যাচাইয়ের কথা উল্লেখ করেন: প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ। প্রটোকল (protocol) উক্তি বা বাক্যকেই সরাসরি প্রত্যক্ষ করা যায়। কারণ এগলো অভিজ্ঞতার আওতায় রয়েছে। পক্ষান্তরে, অন্যান্য বাক্য, যেমন- একক বা বিশিষ্ট (singular proposition) ও সঠিক জাতীয় বাক্য কেবল পরোক্ষভাবে যাচাই করা যায়। পরোক্ষ যাচাই বলতে কারনাপ বুঝিয়েছেন যে, যাচাইযোগ্য কোনো বাক্যকে অন্যান্য পূর্ব-যাচাইকৃত বাক্যের সাথে এমনভাবে নেওয়া যায়, যার ফলে এগুলোকেও প্রত্যক্ষভাবে যাচাইযোগ্য করা যায়। ‘পরম সত্তা অস্তিত্বশীল’ জাতীয় তত্ত্ববিদ্যক বা অধিবিদ্যক বাক্যকে কোনোভাবেই যাচাই করা যায় না। সুতরাং এ-জাতীয় বাক্য সত্যও নয়, মিথ্যাও নয়, বরং অর্থহীন।

কারনাপ পরবর্তীতে ‘যাচাইযোগ্য’ (verifiable) শব্দটি বাদ দিয়ে ‘পরীক্ষাযোগ্য’ (testable) ও ‘নিশ্চয়যোগ্য’ (confirmable) শব্দের পেছনে ধাবিত হন।[১] যে বাক্যের অভিজ্ঞতাভিত্তিক বা প্রায়োগিক মূল্য নেই সেই বাক্য অর্থহীন বলে তিনি মত দেন। অধিবিদ্যা ও নীতিবিদ্যার বাক্যগুলো অভিজ্ঞতাভিত্তিক ভাষায় প্রকাশ করা যায় না বলে এগুলো অর্থহীন।

বাক্য

কারনাপ বলেন, দর্শনের একমাত্র কাজ হচ্ছে বিজ্ঞানের বাক্যসমূহকে যৌক্তিক বিশ্লেষণ করা এবং দর্শন ভাষার যৌক্তিক বিশ্লেষণ ছাড়া আর কিছু নয়। দর্শনের অধিকাংশ কার্যাবলিই যুক্তিবিদ্যক। তার মতে, অসমাধানযোগ্য জটিল সমস্যা সম্বলিত দর্শন নামে পরিচিত বিদ্যার স্থান লজিক অব সায়েন্স (logic of science) দখল করে নেয়। কারনাপ তিন ধরণের বাক্যের কথা উল্লেখ করেন, যেমন- পদান্বয়ী বাক্য (syntactical sentence), বস্তুসংক্রান্ত বাক্য (object sentence) ও ছদ্ম-বস্তুসংক্রান্ত বাক্য (pseudo object sentence)। পদান্বয়ী বাক্য ভাষার বর্ণনা দেয়। বস্তুসংক্রান্ত বাক্য প্রাকৃতিক বস্তুর বর্ণনা দেয় এবং ছদ্ম-বস্তুসংক্রান্ত বাক্য বস্তুসংক্রান্ত বাক্য বলে প্রতীয়মান হলেও বিশ্লেষণে পদান্বয়ী বাক্য বলে ব্যক্ত হয়। এভাবে কারনাপ বিজ্ঞানের বাক্যসমূহকে যৌক্তিক বিশ্লেষণ বলে প্রদর্শন করেন এবং ভাষার যৌক্তিক বিশ্লেষণই দর্শনের কাজ বলে অভিমত দেন।

তথ্যসূত্র

  1. হালিম, মো. আবদুল, দার্শনিক প্রবন্ধাবলি : তত্ত্ব ও বিশ্লেষণ, মে ২০০৩, বাংলা একাডেমি, ঢাকা

নির্বাচিত প্রকাশনা

For links to Carnap's publications and discussions of his work, see ""Carnap" in All Fields of Study"। Microsoft Academic Search। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৫-২৬ 

  • 1922. Der Raum: Ein Beitrag zur Wissenschaftslehre, Kant-Studien, Ergänzungshefte, no. 56. His Ph.D. thesis.
  • 1926. Physikalische Begriffsbildung. Karlsruhe: Braun.
  • 1928. Scheinprobleme in der Philosophie (Pseudoproblems of Philosophy). Berlin: Weltkreis-Verlag.
  • 1928. Der Logische Aufbau der Welt. Leipzig: Felix Meiner Verlag. English translation by Rolf A. George, 1967. The Logical Structure of the World. Pseudoproblems in Philosophy. University of California Press. ISBN 0-812-69523-2
  • 1929. Abriss der Logistik, mit besonderer Berücksichtigung der Relationstheorie und ihrer Anwendungen. Springer.[১]
  • 1934. Logische Syntax der Sprache. English translation 1937, The Logical Syntax of Language. Kegan Paul.[২]
  • 1996 (1935). Philosophy and Logical Syntax. Bristol UK: Thoemmes. Excerpt.
  • 1939, Foundations of Logic and Mathematics in International Encyclopedia of Unified Science, Vol. I, no. 3. University of Chicago Press.[৩]
  • 1942. Introduction to Semantics. Harvard Uni. Press.
  • 1943. Formalization of Logic. Harvard Uni. Press.
  • 1945. On Inductive Logic in Philosophy of Science, Vol.12, p. 72-97.
  • 1945. The Two Concepts of Probability in Philosophy and Phenomenological Research, Vol.5, No.4 (Jun), p. 513-532.
  • 1947. On the Application of Inductive Logic in Philosophy and Phenomenological Research, Vol. 8, p. 133-148.
  • 1956 (1947). Meaning and Necessity: a Study in Semantics and Modal Logic. University of Chicago Press.
  • 1950. Logical Foundations of Probability. University of Chicago Press. Pp. 3–15 online.
  • 1950. "Empiricism, Semantics, Ontology", Revue Internationale de Philosophie 4: 20–40.
  • 1952. The Continuum of Inductive Methods. University of Chicago Press.
  • 1958. Introduction to Symbolic Logic with Applications. Dover.
  • 1963, "Intellectual Autobiography" in Schilpp (1963: 1–84).
  • 1966. Philosophical Foundations of Physics. Martin Gardner, ed. Basic Books. Online excerpt.
  • 1971. Studies in inductive logic and probability, Vol. 1. University of California Press.
  • 1977. Two essays on entropy. Shimony, Abner, ed. University of California Press.
  • 1980. Studies in inductive logic and probability, Vol. 2. Jeffrey, R. C., ed. University of California Press.
  • 2000. Untersuchungen zur Allgemeinen Axiomatik. Edited from unpublished manuscript by T. Bonk and J. Mosterín. Darmstadt: Wissenschftliche Buchgesellschaft. 167 pp. ISBN 3-534-14298-5.

Online bibliography. Under construction, with no entries dated later than 1937.

উৎস

  • রিচার্ড ক্রিথ, মাইকেল ফ্রিডম্যান, সম্পাদক (২০০৭)। The Cambridge companion to Carnap। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। আইএসবিএন 0521840155 
  • রজার এফ গিবসন, সম্পাদক (২০০৪)। The Cambridge companion to Quine। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। আইএসবিএন 0521639492 
  • আইভর গ্রাটন-গীনিস (২০০০)। In Search of Mathematical Roots। প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস। আইএসবিএন 0521840155 
  • টমাস মরমান (২০০০)। রুডলফ কারনাপ (গ্রন্থ)। মানচেন, বেক। আইএসবিএন 0521840155 
  • উইলিয়ার্দ কুইন
    • টমাস মরমান (১৯৫১ (পুনর্মুদ্রন ১৯৫৩))। The Philosophical Review 60: 20–43। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
    • The Time of My Life: An Autobiography। এমআইটি প্রেস। ১৯৫৯। 
  • অ্যালেন রিচার্ডসন (১৯৯৮)। Carnap's construction of the world : the Aufbau and the emergence of logical empiricism। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। 
  • পি. এ. স্কিল্প, সম্পাদক (১৯৬৩)। The Philosophy of Rudolf Carnap। লাসলের আইএল: ওপেন কোর্ট। 
  • উলফগ্যাং স্পোন, সম্পাদক (১৯৯১)। Erkenntnis Orientated: A Centennial Volume for Rudolf Carnap and Hans Reichenbach। ক্লুঅয়ের অ্যাকাডেমিক পাবলিশার্স। 
  • Logic, Language, and the Structure of Scientific Theories: Proceedings of the Carnap-Reichenbach Centennial। পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। মে ২১–২৪, ১৯৯১। 
  • পিয়ের ভাগনার (২০০৯)। Carnap's Logical Syntax of Language। পালগ্রাভ ম্যাকমিলান। 
  • পিয়ের ভাগনার (২০১২)। Carnap's Ideal of Explication and Naturalism। পালগ্রাভ ম্যাকমিলান। 

বহিঃসংযোগ

টেমপ্লেট:Persondata

  1. Weiss, Paul (১৯২৯)। "Review: Abriss der Logistik by Rudolf Carnap" (পিডিএফ)Bull. Amer. Math. Soc.35 (6): 880। ডিওআই:10.1090/s0002-9904-1929-04818-3 
  2. Mac Lane, Saunders (১৯৩৮)। "Review: The Logical Syntax of Language by Rudolf Carnap, translated from the German by Amethe Smeaton" (পিডিএফ)Bull. Amer. Math. Soc.44 (3): 171–176। 
  3. Church, Alonzo (১৯৩৯)। "Review: Foundations of Logic and Mathematics by Rudolf Carnap" (পিডিএফ)Bull. Amer. Math. Soc.45 (11): 821–822। ডিওআই:10.1090/s0002-9904-1939-07085-7