যুক্তরাজ্য: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
WikitanvirBot I (আলোচনা | অবদান)
বট কসমেটিক পরিবর্তন করছে; কোনো সমস্যা?
আফতাব বট (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে, সমস্যা? এখানে জানান
৭৮ নং লাইন: ৭৮ নং লাইন:
|calling_code= ৪৪
|calling_code= ৪৪
}}
}}



'''যুক্তরাজ্য''' ({{lang-en|United Kingdom ''ইউনাইটেড্‌ কিংডম্‌''}}) ইউরোপীয় মূল ভূখণ্ডের উত্তর-পশ্চিম উপকূলের সন্নিকটে অবস্থিত একটি স্বাধীন দ্বীপরাষ্ট্র। রাষ্ট্রটির সরকারী নাম The United Kingdom of Great Britain and Northern Ireland। রাষ্ট্রটি চারটি সাংবিধানিক রাষ্ট্র: [[ইংল্যান্ড]], [[স্কটল্যান্ড]], [[ওয়েল্‌স্‌]] এবং [[উত্তর আয়ারল্যান্ড]]-এর সমন্বয়ে গঠিত।
'''যুক্তরাজ্য''' ({{lang-en|United Kingdom ''ইউনাইটেড্‌ কিংডম্‌''}}) ইউরোপীয় মূল ভূখণ্ডের উত্তর-পশ্চিম উপকূলের সন্নিকটে অবস্থিত একটি স্বাধীন দ্বীপরাষ্ট্র। রাষ্ট্রটির সরকারী নাম The United Kingdom of Great Britain and Northern Ireland। রাষ্ট্রটি চারটি সাংবিধানিক রাষ্ট্র: [[ইংল্যান্ড]], [[স্কটল্যান্ড]], [[ওয়েল্‌স্‌]] এবং [[উত্তর আয়ারল্যান্ড]]-এর সমন্বয়ে গঠিত।
৮৪ নং লাইন: ৮৩ নং লাইন:
যুক্তরাজ্য অনেকগুলো দ্বীপ নিয়ে গঠিত। দ্বীপগুলোকে একত্রে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ নামে অভিহিত করা হয়। এদের মধ্যে সর্ববৃহৎ দ্বীপটির নাম বৃহৎ ব্রিটেন বা [[গ্রেট ব্রিটেন]]। গ্রেট ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় ও জনবহুল ভাগটির নাম [[ইংল্যান্ড]], যা দ্বীপের দক্ষিণ ও পূর্ব অংশ গঠন করেছে। পশ্চিম অংশে আছে [[ওয়েলস]] এবং উত্তরে [[স্কটল্যান্ড]]। আয়ারল্যান্ড দ্বীপের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে উত্তর আয়ারল্যান্ড অবস্থিত। আয়ারল্যান্ড দ্বীপ ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের ২য় বৃহত্তম দ্বীপ। এই দ্বীপের সিংহভাগ জুড়ে অবস্থিত আয়ারল্যান্ড প্রজাতন্ত্রের সাথে যুক্তরাজ্যের একমাত্র স্থল সীমান্ত রয়েছে। যুক্তরাজ্যের বাকী অংশকে আটলান্টিক মহাসাগর, উত্তর সাগর, ইংলিশ চ্যানেল এবং আইরিশ সাগর ঘিরে রেখেছে। গ্রেট ব্রিটেন দ্বীপটি চ্যানেল টানেলের মাধ্যমে ফ্রান্সের সাথে যুক্ত। এছাড়াও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকালীন সময়ে হস্তগত ১৪টি বহিঃস্থ এলাকা এখনও যুক্তরাজ্যের অধীনে রয়েছে।
যুক্তরাজ্য অনেকগুলো দ্বীপ নিয়ে গঠিত। দ্বীপগুলোকে একত্রে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ নামে অভিহিত করা হয়। এদের মধ্যে সর্ববৃহৎ দ্বীপটির নাম বৃহৎ ব্রিটেন বা [[গ্রেট ব্রিটেন]]। গ্রেট ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় ও জনবহুল ভাগটির নাম [[ইংল্যান্ড]], যা দ্বীপের দক্ষিণ ও পূর্ব অংশ গঠন করেছে। পশ্চিম অংশে আছে [[ওয়েলস]] এবং উত্তরে [[স্কটল্যান্ড]]। আয়ারল্যান্ড দ্বীপের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে উত্তর আয়ারল্যান্ড অবস্থিত। আয়ারল্যান্ড দ্বীপ ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের ২য় বৃহত্তম দ্বীপ। এই দ্বীপের সিংহভাগ জুড়ে অবস্থিত আয়ারল্যান্ড প্রজাতন্ত্রের সাথে যুক্তরাজ্যের একমাত্র স্থল সীমান্ত রয়েছে। যুক্তরাজ্যের বাকী অংশকে আটলান্টিক মহাসাগর, উত্তর সাগর, ইংলিশ চ্যানেল এবং আইরিশ সাগর ঘিরে রেখেছে। গ্রেট ব্রিটেন দ্বীপটি চ্যানেল টানেলের মাধ্যমে ফ্রান্সের সাথে যুক্ত। এছাড়াও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকালীন সময়ে হস্তগত ১৪টি বহিঃস্থ এলাকা এখনও যুক্তরাজ্যের অধীনে রয়েছে।


ব্রিটেন একটি সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র। রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ রাষ্ট্রপ্রধান। এখানে একটি সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থা বিদ্যমান। [[লন্ডন]] শহর যুক্তরাজ্যের রাজধানী; এটি ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত।
ব্রিটেন একটি সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র। রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ রাষ্ট্রপ্রধান। এখানে একটি সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থা বিদ্যমান। [[লন্ডন]] শহর যুক্তরাজ্যের রাজধানী; এটি ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত।


সমগ্র যুক্তরাজ্যকে ব্রিটেন নামেও ডাকা হয়। তবে গ্রেট ব্রিটেন নামটি আর সমগ্র দেশটিকে বোঝাতে ব্যবহার করা হয় না; এটি কেবল গ্রেট ব্রিটেন দ্বীপকে বোঝাতে ব্যবহার করা হয়। ইংল্যান্ড দিয়েও সমগ্র যুক্তরাজ্যকে বোঝানো হয় না। ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ওয়েলসের অধিবাসীরা সবাই ব্রিটিশ। আবার ইংল্যান্ডের অধিবাসীরা ইংরেজ, ওয়েলসের অধিবাসীরা ওয়েলশ এনং স্কটল্যান্ডের অধিবাসীরা স্কটিশ হিসেবে পরিচিত।
সমগ্র যুক্তরাজ্যকে ব্রিটেন নামেও ডাকা হয়। তবে গ্রেট ব্রিটেন নামটি আর সমগ্র দেশটিকে বোঝাতে ব্যবহার করা হয় না; এটি কেবল গ্রেট ব্রিটেন দ্বীপকে বোঝাতে ব্যবহার করা হয়। ইংল্যান্ড দিয়েও সমগ্র যুক্তরাজ্যকে বোঝানো হয় না। ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ওয়েলসের অধিবাসীরা সবাই ব্রিটিশ। আবার ইংল্যান্ডের অধিবাসীরা ইংরেজ, ওয়েলসের অধিবাসীরা ওয়েলশ এনং স্কটল্যান্ডের অধিবাসীরা স্কটিশ হিসেবে পরিচিত।


দুইটি বিশ্বযুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি এবং বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতন বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাজ্যের নেতৃস্থানীয় ভূমিকা ক্ষুন্ন হয়। তা সত্ত্বেও বর্তমান বিশ্বে যুক্তরাজ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামরিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারকারী দেশ। যুক্তরাজ্য একটি শিল্পোন্নত দেশ; এর অর্থনীতি বিশ্বের ৫ম বৃহত্তম। দেশটির নিউক্লীয় অস্ত্রক্ষমতা রয়েছে; প্রতিরক্ষা খাতে এর ব্যয় বিশ্বে ৩য় সর্বোচ্চ। এটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এবং জি-৮, নেটো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কমনওয়েলথ অভ নেশন্‌সের সদস্য।
দুইটি বিশ্বযুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি এবং বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতন বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাজ্যের নেতৃস্থানীয় ভূমিকা ক্ষুন্ন হয়। তা সত্ত্বেও বর্তমান বিশ্বে যুক্তরাজ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামরিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারকারী দেশ। যুক্তরাজ্য একটি শিল্পোন্নত দেশ; এর অর্থনীতি বিশ্বের ৫ম বৃহত্তম। দেশটির নিউক্লীয় অস্ত্রক্ষমতা রয়েছে; প্রতিরক্ষা খাতে এর ব্যয় বিশ্বে ৩য় সর্বোচ্চ। এটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এবং জি-৮, নেটো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কমনওয়েলথ অভ নেশন্‌সের সদস্য।


== ইতিহাস ==
== ইতিহাস ==
ব্রিটিশ ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিশ্বের বহু জাতিকে প্রভাবিত করেছে। প্রতি বছর পার হবার সাথে সাথে [[ইংরেজি ভাষা]] শিক্ষিত মানুষদের একটি সত্যিকার বিশ্বভাষায় পরিণত হচ্ছে। মূলত বিগত তিন শতাব্দী ধরে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিস্তারের কারণেই ইংরেজি ভাষা বর্তমান বিস্তার লাভ করেছে। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে বিশ্বের এক চতুর্থাংশ এলাকা ও জনগণ কোনও না কোনও ভাবে ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণে ছিল; ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ছিল বিশ্বের ইতিহাসের বৃহত্তম সাম্রাজ্য। কিছু কিছু দেশে যথেষ্ট সংখ্যক ব্রিটিশ অধিবাসী অভিবাসিত হন এবং ব্রিটেনের অপত্য রাষ্ট্রের জন্ম দেন। এদের মধ্যে আছে [[কানাডা]], [[অস্ট্রেলিয়া]] ও [[নিউজিল্যান্ড]]। বহু বছর ধরে [[ব্রিটিশ ভারত|ভারত]] ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপনিবেশ ছিল। এক দীর্ঘ সাম্রাজ্যবিরোধী লড়াইয়ের পর ভারত স্বাধীন হয় এবং এটি বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। দক্ষিণ, পশ্চিম ও পূর্ব আফ্রিকার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ এলাকাও ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এছাড়া এশিয়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা যেমন [[হং কং]], আমেরিকাতে কিছু ক্ষুদ্র উপনিবেশ এবং প্রশান্ত মহাসাগরে বহু দ্বীপ ব্রিটেন নিয়ন্ত্রণ করত। বর্তমানে এদের বেশিরভাগই স্বাধীন রাষ্ট্র হলেও এদের অনেকগুলিই ব্রিটিশ আইন, প্রতিষ্ঠান, এবং রীতিনীতি ধরে রেখেছে। এমনকি বিশ্বের যেসব এলাকা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অংশ ছিল না, সেখানেও অনেক দেশে ব্রিটিশ সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা তথা ওয়েস্টমিন্সটার মডেল গ্রহণ করা হয়েছে। এই মডেলটি আদিতে রাজকীয় শাসকের ক্ষমতার বাহন হলেও ধীরে ধীরে বিবর্তিত হয়ে একটি প্রতিনিধিত্বমূলক সরকারে পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্র চর্চার উপযুক্ত হয়ে ওঠে। বর্তমানে ব্রিটেনে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সংসদের নিম্ন কক্ষের দায়িত্ব, যে কক্ষের নাম হাউজ অভ কমন্স। হাউজ অভ কমন্সের প্রতিনিধিরা উন্মুক্ত নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে আসেন এবং দেশের প্রধান নির্বাহী প্রধানমন্ত্রীকে তাঁরা নির্বাচিত করেন। প্রধানমন্ত্রী আবার হাউজ অভ কমন্সের মধ্য থেকে তাঁর মন্ত্রীসভার জন্য সদস্য বাছাই করেন।
ব্রিটিশ ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিশ্বের বহু জাতিকে প্রভাবিত করেছে। প্রতি বছর পার হবার সাথে সাথে [[ইংরেজি ভাষা]] শিক্ষিত মানুষদের একটি সত্যিকার বিশ্বভাষায় পরিণত হচ্ছে। মূলত বিগত তিন শতাব্দী ধরে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিস্তারের কারণেই ইংরেজি ভাষা বর্তমান বিস্তার লাভ করেছে। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে বিশ্বের এক চতুর্থাংশ এলাকা ও জনগণ কোনও না কোনও ভাবে ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণে ছিল; ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ছিল বিশ্বের ইতিহাসের বৃহত্তম সাম্রাজ্য। কিছু কিছু দেশে যথেষ্ট সংখ্যক ব্রিটিশ অধিবাসী অভিবাসিত হন এবং ব্রিটেনের অপত্য রাষ্ট্রের জন্ম দেন। এদের মধ্যে আছে [[কানাডা]], [[অস্ট্রেলিয়া]] ও [[নিউজিল্যান্ড]]। বহু বছর ধরে [[ব্রিটিশ ভারত|ভারত]] ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপনিবেশ ছিল। এক দীর্ঘ সাম্রাজ্যবিরোধী লড়াইয়ের পর ভারত স্বাধীন হয় এবং এটি বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। দক্ষিণ, পশ্চিম ও পূর্ব আফ্রিকার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ এলাকাও ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এছাড়া এশিয়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা যেমন [[হং কং]], আমেরিকাতে কিছু ক্ষুদ্র উপনিবেশ এবং প্রশান্ত মহাসাগরে বহু দ্বীপ ব্রিটেন নিয়ন্ত্রণ করত। বর্তমানে এদের বেশিরভাগই স্বাধীন রাষ্ট্র হলেও এদের অনেকগুলিই ব্রিটিশ আইন, প্রতিষ্ঠান, এবং রীতিনীতি ধরে রেখেছে। এমনকি বিশ্বের যেসব এলাকা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অংশ ছিল না, সেখানেও অনেক দেশে ব্রিটিশ সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা তথা ওয়েস্টমিন্সটার মডেল গ্রহণ করা হয়েছে। এই মডেলটি আদিতে রাজকীয় শাসকের ক্ষমতার বাহন হলেও ধীরে ধীরে বিবর্তিত হয়ে একটি প্রতিনিধিত্বমূলক সরকারে পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্র চর্চার উপযুক্ত হয়ে ওঠে। বর্তমানে ব্রিটেনে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সংসদের নিম্ন কক্ষের দায়িত্ব, যে কক্ষের নাম হাউজ অভ কমন্স। হাউজ অভ কমন্সের প্রতিনিধিরা উন্মুক্ত নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে আসেন এবং দেশের প্রধান নির্বাহী প্রধানমন্ত্রীকে তাঁরা নির্বাচিত করেন। প্রধানমন্ত্রী আবার হাউজ অভ কমন্সের মধ্য থেকে তাঁর মন্ত্রীসভার জন্য সদস্য বাছাই করেন।


== রাজনীতি ==
== রাজনীতি ==
১০৩ নং লাইন: ১০২ নং লাইন:


== অর্থনীতি ==
== অর্থনীতি ==
ব্রিটেন একসময় বিশ্বের প্রধান ও অগ্রগামী অর্থনৈতিক শক্তি ছিল। ১৮শ শতকের শেষে ও ১৯শ শতকের শুরুতে ব্রিটেনেই বিশ্বের প্রথম শিল্প বিপ্লব ঘটে। এর সূত্র ধরে এখানে এমন একটি সমাজ সৃষ্টি হয় যাতে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রাধান্য ছিল বেশি। ব্রিটেনই ছিল বিশ্বের প্রথম নগরায়িত রাষ্ট্র, যেখানে অর্ধেকেরও বেশি নাগরিক শহরে বাস করেন। দ্রুত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যের সুবাদে [[১৯শ শতক|১৯শ শতকে]] [[রাণী ভিক্টোরিয়া|রাণী ভিক্টোরিয়ার]] আমলে ব্রিটেন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশে পরিণত হয়। শিল্প বিপ্লবের আগে ও পরে বহুকাল যাবত লন্ডন ছিল বিশ্বে পুঁজিবাদের মূল কেন্দ্র। লন্ডন এখনও বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা ও অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলির একটি।
ব্রিটেন একসময় বিশ্বের প্রধান ও অগ্রগামী অর্থনৈতিক শক্তি ছিল। ১৮শ শতকের শেষে ও ১৯শ শতকের শুরুতে ব্রিটেনেই বিশ্বের প্রথম শিল্প বিপ্লব ঘটে। এর সূত্র ধরে এখানে এমন একটি সমাজ সৃষ্টি হয় যাতে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রাধান্য ছিল বেশি। ব্রিটেনই ছিল বিশ্বের প্রথম নগরায়িত রাষ্ট্র, যেখানে অর্ধেকেরও বেশি নাগরিক শহরে বাস করেন। দ্রুত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যের সুবাদে [[১৯শ শতক|১৯শ শতকে]] [[রাণী ভিক্টোরিয়া|রাণী ভিক্টোরিয়ার]] আমলে ব্রিটেন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশে পরিণত হয়। শিল্প বিপ্লবের আগে ও পরে বহুকাল যাবত লন্ডন ছিল বিশ্বে পুঁজিবাদের মূল কেন্দ্র। লন্ডন এখনও বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা ও অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলির একটি।


== জনসংখ্যা ==
== জনসংখ্যা ==
১১১ নং লাইন: ১১০ নং লাইন:
আধুনিক যুগের শিল্পকলাতেও ব্রিটেন সবসময়ই গুরুত্ব পেয়েছে। ব্রিটেনের লেখকদের রচিত নাটক, উপন্যাস, গল্প এবং সম্প্রতি চিত্রনাট্য বিশ্বব্যাপী আদৃত। চিত্রশিল্প ও সঙ্গীতের ক্ষেত্রে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলির তুলনায় পিছিয়ে থাকলেও সাহিত্য সৃষ্টিতে ব্রিটিশেরা সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। তবে বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটেনেও গুরুত্বপূর্ণ শিল্পী ও সুরকারের দেখা মেলে, যাদের মধ্যে চিত্রশিল্পী [[ডেভিড হকনি]] এবং সুরকার স্যার [[এডওয়ার্ড এলগার|এডওয়ার্ড এলগারের]] নাম করা যায়।
আধুনিক যুগের শিল্পকলাতেও ব্রিটেন সবসময়ই গুরুত্ব পেয়েছে। ব্রিটেনের লেখকদের রচিত নাটক, উপন্যাস, গল্প এবং সম্প্রতি চিত্রনাট্য বিশ্বব্যাপী আদৃত। চিত্রশিল্প ও সঙ্গীতের ক্ষেত্রে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলির তুলনায় পিছিয়ে থাকলেও সাহিত্য সৃষ্টিতে ব্রিটিশেরা সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। তবে বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটেনেও গুরুত্বপূর্ণ শিল্পী ও সুরকারের দেখা মেলে, যাদের মধ্যে চিত্রশিল্পী [[ডেভিড হকনি]] এবং সুরকার স্যার [[এডওয়ার্ড এলগার|এডওয়ার্ড এলগারের]] নাম করা যায়।
== পরিবহন ==
== পরিবহন ==
যুক্তরাজ্যের প্রধান বিমানসংস্থা [[ব্রিটিশ এয়ারওয়েস]]৷'''যুক্তরাজ্যের পরিবহন ব্যবস্থা''' উন্নতমানের সড়ক, বিমান, রেল ও নৌপথের নেটওয়ার্ক নিয়ে গঠিত।
যুক্তরাজ্যের প্রধান বিমানসংস্থা [[ব্রিটিশ এয়ারওয়েস]]৷'''যুক্তরাজ্যের পরিবহন ব্যবস্থা''' উন্নতমানের সড়ক, বিমান, রেল ও নৌপথের নেটওয়ার্ক নিয়ে গঠিত।


প্রধান সড়ক বা মেইন রোড ব্যবস্থাটি লন্ডন, এডিনবরা ও বেলফাস্ট শহরগুলিকে কেন্দ্রবিন্দু করে চারদিকে প্রসারিত হয়েছে। প্রধান সড়কগুলির মোট দৈর্ঘ্য ৪৬,৬৩২ কিলোমিটার। এর বাইরেও আছে একটি মোটরওয়ে বা মহাসড়ক নেটওয়ার্ক। ৩,৪৭৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ব্যবস্থাটি বার্মিংহাম, গ্লাসগো, লিড্‌স, লিভারপুল, ম্যানচেস্টার ও লন্ডন শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। এছাড়াও আরও প্রায় ৩,৪২,০০০ কিলোমিটার পাকা রাস্তা রয়েছে যুক্তরাজ্যে।
প্রধান সড়ক বা মেইন রোড ব্যবস্থাটি লন্ডন, এডিনবরা ও বেলফাস্ট শহরগুলিকে কেন্দ্রবিন্দু করে চারদিকে প্রসারিত হয়েছে। প্রধান সড়কগুলির মোট দৈর্ঘ্য ৪৬,৬৩২ কিলোমিটার। এর বাইরেও আছে একটি মোটরওয়ে বা মহাসড়ক নেটওয়ার্ক। ৩,৪৭৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ব্যবস্থাটি বার্মিংহাম, গ্লাসগো, লিড্‌স, লিভারপুল, ম্যানচেস্টার ও লন্ডন শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। এছাড়াও আরও প্রায় ৩,৪২,০০০ কিলোমিটার পাকা রাস্তা রয়েছে যুক্তরাজ্যে।


যুক্তরাজ্যের জাতীয় রেল নেটওয়ার্কের দৈর্ঘ্য গ্রেট ব্রিটেন দ্বীপে ১৬,১১৬ রাউট কিলোমিটার এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডে ৩০৩ রাউট কিলোমিটার। ব্যবস্থাটি প্রতিদিন ১৮ হাজার যাত্রী এবং ১০০টি মালবাহী ট্রেন পরিবহন করে। লন্ডন, গ্লাসগো, কার্ডিফ, এডিনবরা, বার্মিংহাম এবং আরও বেশ কিছু প্রধান শহরে পৌর রেল নেটওয়ার্ক অত্যন্ত উন্নত।
যুক্তরাজ্যের জাতীয় রেল নেটওয়ার্কের দৈর্ঘ্য গ্রেট ব্রিটেন দ্বীপে ১৬,১১৬ রাউট কিলোমিটার এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডে ৩০৩ রাউট কিলোমিটার। ব্যবস্থাটি প্রতিদিন ১৮ হাজার যাত্রী এবং ১০০টি মালবাহী ট্রেন পরিবহন করে। লন্ডন, গ্লাসগো, কার্ডিফ, এডিনবরা, বার্মিংহাম এবং আরও বেশ কিছু প্রধান শহরে পৌর রেল নেটওয়ার্ক অত্যন্ত উন্নত।


লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর বিশ্বের ব্যস্ততম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। যুক্তরাজ্যে মোট ৪৭১টি বিমানবন্দর আছে।
লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর বিশ্বের ব্যস্ততম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। যুক্তরাজ্যে মোট ৪৭১টি বিমানবন্দর আছে।


যুক্তরাজ্যের আমদানিকৃত পণ্যের ৯৫% জলপথে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। গ্রেট ব্রিটেন দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে উত্তর সাগরের উপকূলে অবস্থিত সাফোক কাউন্টির ফিলিক্সস্টো (Felixstowe) বন্দর ইউরোপের চতুর্থ বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর। টেমস নদীর তীরে এসেক্স কাউন্টিতে অবস্থিত টিলবারি বন্দর (Tilbury) এবং দক্ষিণ উপকূলের সাদ্যাম্পটন (Southampton) আরও দুইটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র বন্দর।
যুক্তরাজ্যের আমদানিকৃত পণ্যের ৯৫% জলপথে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। গ্রেট ব্রিটেন দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে উত্তর সাগরের উপকূলে অবস্থিত সাফোক কাউন্টির ফিলিক্সস্টো (Felixstowe) বন্দর ইউরোপের চতুর্থ বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর। টেমস নদীর তীরে এসেক্স কাউন্টিতে অবস্থিত টিলবারি বন্দর (Tilbury) এবং দক্ষিণ উপকূলের সাদ্যাম্পটন (Southampton) আরও দুইটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র বন্দর।
১২৭ নং লাইন: ১২৬ নং লাইন:


== তথ্যসূত্র ==
== তথ্যসূত্র ==
{{reflist|2}}
{{reflist|2}}


== বহিঃসংযোগ ==
== বহিঃসংযোগ ==
১৫১ নং লাইন: ১৫০ নং লাইন:
* [http://www.30nema31.blogfa.com/page/zanirani.aspx বিবিসি বাংলা]
* [http://www.30nema31.blogfa.com/page/zanirani.aspx বিবিসি বাংলা]
* {{wikivoyage|United Kingdom}}
* {{wikivoyage|United Kingdom}}




{{দেশের নিবন্ধ|যুক্তরাজ্যের}}
{{দেশের নিবন্ধ|যুক্তরাজ্যের}}

১৭:১৮, ১৭ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

গ্রেইট ব্রিটেন এবং উত্তর আয়ারল্যাণ্ডের যুক্তরাজ্য

যুক্তরাজ্যের জাতীয় পতাকা
পতাকা
যুক্তরাজ্যের Royal coat of arms
Royal coat of arms
নীতিবাক্য: "Dieu et mon droit" (ফরাসি)
"ঈশ্বর এবং আমার অধিকার"

 যুক্তরাজ্য-এর অবস্থান (ঘন সবুজ) – ইউরোপে (হালকা সবুজ & কালো ধূসর) – ইউরোপীয় ইউনিয়নে (হালকা সবুজ)  –  [ব্যাখ্যা]
 যুক্তরাজ্য-এর অবস্থান (ঘন সবুজ)

– ইউরোপে (হালকা সবুজ & কালো ধূসর)
– ইউরোপীয় ইউনিয়নে (হালকা সবুজ)  –  [ব্যাখ্যা]

রাজধানী
ও বৃহত্তম নগরী বা বসতি
লন্ডন
সরকারি ভাষাইংরেজি (de facto)[২]
স্বীকৃত আঞ্চলিক ভাষাআইরিশ, আলস্টার স্কট্‌স, স্কট্‌স গ্যালিক , স্কট্‌স, ওয়েল্‌শ্‌, কর্নিশ[৩]
নৃগোষ্ঠী
৯২.১% সাদা
৪.০% দক্ষিণ এশিয়ান
২.০% কালো
১.২% মিশ্র
০.৪% চীনা
০.৪% অন্যান্য
ধর্ম
প্রটেস্টান্ট
জাতীয়তাসূচক বিশেষণব্রিটিশ অথবা ব্রিটন
সরকারসংসদীয় গণতন্ত্র এবং সাংবিধানিক রাজতন্ত্র
দ্বিতীয় এলিজাবেথ
ডেভিড ক্যামেরন
আইন-সভাপার্লামেন্ট
House of Lords/লাটসভা
House of Commons/গণসাধারণসভা
গঠন
১লা মে ১৭০৭
১লা জানুয়ারি ১৮০১
১২ই এপ্রিল ১৯২২
• পানি (%)
১.৩৪
জনসংখ্যা
• ২০০৯ আনুমানিক
৬১,১১৩,২০৫[৪] (২২তম)
• ২০০১ আদমশুমারি
৫৮,৭৮৯,১৯৪[৫]
জিডিপি (পিপিপি)২০০৯ আনুমানিক
• মোট
$২,১৬৩.৫৩ বিলিয়ন[৬] (৭তম)
• মাথাপিছু
$৩৫,১৬৪.৯৮[৬] (১৮তম)
জিডিপি (মনোনীত)২০০৯ আনুমানিক
• মোট
$২,১৯৮.১৭ বিলিয়ন[৬] (৬তম)
• মাথাপিছু
$৩৫,৭২৭.৯৭[৬] (২০তম)
জিনি (২০০৫)৩৪[৭]
ত্রুটি: জিনি সহগের মান অকার্যকর · ৯২তম
মানব উন্নয়ন সূচক (২০০৭)০.৯৪৭[৮]
ত্রুটি: মানব উন্নয়ন সূচক-এর মান অকার্যকর · ২১তম
মুদ্রাপাউন্ড স্টার্লিং [৯] (GBP)
সময় অঞ্চলইউটিসি+০ (GMT)
• গ্রীষ্মকালীন (ডিএসটি)
ইউটিসি+১ (BST)
গাড়ী চালনার দিকleft[১০]
কলিং কোড৪৪
ইন্টারনেট টিএলডি.uk[১১]

যুক্তরাজ্য ([United Kingdom ইউনাইটেড্‌ কিংডম্‌] ত্রুটি: {{Lang-xx}}: text has italic markup (সাহায্য)) ইউরোপীয় মূল ভূখণ্ডের উত্তর-পশ্চিম উপকূলের সন্নিকটে অবস্থিত একটি স্বাধীন দ্বীপরাষ্ট্র। রাষ্ট্রটির সরকারী নাম The United Kingdom of Great Britain and Northern Ireland। রাষ্ট্রটি চারটি সাংবিধানিক রাষ্ট্র: ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েল্‌স্‌ এবং উত্তর আয়ারল্যান্ড-এর সমন্বয়ে গঠিত।

যুক্তরাজ্য অনেকগুলো দ্বীপ নিয়ে গঠিত। দ্বীপগুলোকে একত্রে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ নামে অভিহিত করা হয়। এদের মধ্যে সর্ববৃহৎ দ্বীপটির নাম বৃহৎ ব্রিটেন বা গ্রেট ব্রিটেন। গ্রেট ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় ও জনবহুল ভাগটির নাম ইংল্যান্ড, যা দ্বীপের দক্ষিণ ও পূর্ব অংশ গঠন করেছে। পশ্চিম অংশে আছে ওয়েলস এবং উত্তরে স্কটল্যান্ড। আয়ারল্যান্ড দ্বীপের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে উত্তর আয়ারল্যান্ড অবস্থিত। আয়ারল্যান্ড দ্বীপ ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের ২য় বৃহত্তম দ্বীপ। এই দ্বীপের সিংহভাগ জুড়ে অবস্থিত আয়ারল্যান্ড প্রজাতন্ত্রের সাথে যুক্তরাজ্যের একমাত্র স্থল সীমান্ত রয়েছে। যুক্তরাজ্যের বাকী অংশকে আটলান্টিক মহাসাগর, উত্তর সাগর, ইংলিশ চ্যানেল এবং আইরিশ সাগর ঘিরে রেখেছে। গ্রেট ব্রিটেন দ্বীপটি চ্যানেল টানেলের মাধ্যমে ফ্রান্সের সাথে যুক্ত। এছাড়াও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকালীন সময়ে হস্তগত ১৪টি বহিঃস্থ এলাকা এখনও যুক্তরাজ্যের অধীনে রয়েছে।

ব্রিটেন একটি সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র। রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ রাষ্ট্রপ্রধান। এখানে একটি সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থা বিদ্যমান। লন্ডন শহর যুক্তরাজ্যের রাজধানী; এটি ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত।

সমগ্র যুক্তরাজ্যকে ব্রিটেন নামেও ডাকা হয়। তবে গ্রেট ব্রিটেন নামটি আর সমগ্র দেশটিকে বোঝাতে ব্যবহার করা হয় না; এটি কেবল গ্রেট ব্রিটেন দ্বীপকে বোঝাতে ব্যবহার করা হয়। ইংল্যান্ড দিয়েও সমগ্র যুক্তরাজ্যকে বোঝানো হয় না। ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ওয়েলসের অধিবাসীরা সবাই ব্রিটিশ। আবার ইংল্যান্ডের অধিবাসীরা ইংরেজ, ওয়েলসের অধিবাসীরা ওয়েলশ এনং স্কটল্যান্ডের অধিবাসীরা স্কটিশ হিসেবে পরিচিত।

দুইটি বিশ্বযুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি এবং বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতন বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাজ্যের নেতৃস্থানীয় ভূমিকা ক্ষুন্ন হয়। তা সত্ত্বেও বর্তমান বিশ্বে যুক্তরাজ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামরিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারকারী দেশ। যুক্তরাজ্য একটি শিল্পোন্নত দেশ; এর অর্থনীতি বিশ্বের ৫ম বৃহত্তম। দেশটির নিউক্লীয় অস্ত্রক্ষমতা রয়েছে; প্রতিরক্ষা খাতে এর ব্যয় বিশ্বে ৩য় সর্বোচ্চ। এটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এবং জি-৮, নেটো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কমনওয়েলথ অভ নেশন্‌সের সদস্য।

ইতিহাস

ব্রিটিশ ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিশ্বের বহু জাতিকে প্রভাবিত করেছে। প্রতি বছর পার হবার সাথে সাথে ইংরেজি ভাষা শিক্ষিত মানুষদের একটি সত্যিকার বিশ্বভাষায় পরিণত হচ্ছে। মূলত বিগত তিন শতাব্দী ধরে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিস্তারের কারণেই ইংরেজি ভাষা বর্তমান বিস্তার লাভ করেছে। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে বিশ্বের এক চতুর্থাংশ এলাকা ও জনগণ কোনও না কোনও ভাবে ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণে ছিল; ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ছিল বিশ্বের ইতিহাসের বৃহত্তম সাম্রাজ্য। কিছু কিছু দেশে যথেষ্ট সংখ্যক ব্রিটিশ অধিবাসী অভিবাসিত হন এবং ব্রিটেনের অপত্য রাষ্ট্রের জন্ম দেন। এদের মধ্যে আছে কানাডা, অস্ট্রেলিয়ানিউজিল্যান্ড। বহু বছর ধরে ভারত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপনিবেশ ছিল। এক দীর্ঘ সাম্রাজ্যবিরোধী লড়াইয়ের পর ভারত স্বাধীন হয় এবং এটি বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। দক্ষিণ, পশ্চিম ও পূর্ব আফ্রিকার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ এলাকাও ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এছাড়া এশিয়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা যেমন হং কং, আমেরিকাতে কিছু ক্ষুদ্র উপনিবেশ এবং প্রশান্ত মহাসাগরে বহু দ্বীপ ব্রিটেন নিয়ন্ত্রণ করত। বর্তমানে এদের বেশিরভাগই স্বাধীন রাষ্ট্র হলেও এদের অনেকগুলিই ব্রিটিশ আইন, প্রতিষ্ঠান, এবং রীতিনীতি ধরে রেখেছে। এমনকি বিশ্বের যেসব এলাকা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অংশ ছিল না, সেখানেও অনেক দেশে ব্রিটিশ সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা তথা ওয়েস্টমিন্সটার মডেল গ্রহণ করা হয়েছে। এই মডেলটি আদিতে রাজকীয় শাসকের ক্ষমতার বাহন হলেও ধীরে ধীরে বিবর্তিত হয়ে একটি প্রতিনিধিত্বমূলক সরকারে পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্র চর্চার উপযুক্ত হয়ে ওঠে। বর্তমানে ব্রিটেনে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সংসদের নিম্ন কক্ষের দায়িত্ব, যে কক্ষের নাম হাউজ অভ কমন্স। হাউজ অভ কমন্সের প্রতিনিধিরা উন্মুক্ত নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে আসেন এবং দেশের প্রধান নির্বাহী প্রধানমন্ত্রীকে তাঁরা নির্বাচিত করেন। প্রধানমন্ত্রী আবার হাউজ অভ কমন্সের মধ্য থেকে তাঁর মন্ত্রীসভার জন্য সদস্য বাছাই করেন।

রাজনীতি

যুক্তরাজ্যের পতাকার নাম ইউনিয়ন জ্যাক। যুক্তরাজ্যে ওয়েস্টমিন্সটার ঘরাণার দিকক্ষীয় শাস্পন ব্যবস্থা চালু আছে।

প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ

ভূগোল

ভৌগোলিক আকারের দিক থেকে যুক্তরাজ্য একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র। উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের প্রভাবে এখানকার জলবায়ু মৃদু ও আর্দ্র। আর অনেক উত্তরে অবস্থিত হওয়ায় এখানে বেশ শীত পড়ে। বছরের অধিকাংশ সময় আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে বা বৃষ্টি পড়ে। এ কারণে ব্রিটেন তৃণময় সবুজ একটি দেশ। এর দক্ষিণ ও পূর্বে আছে বিস্তীর্ণ সমভূমি; পশ্চিম ও উত্তরে আছে রুক্ষ পাহাড় ও পর্বত।

আকারে ছোট হলেও ব্রিটেনে প্রচুর লোকের বাস। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ২৫০ লোক বাস করেন। ব্রিটেন অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত সমৃদ্ধ, শিল্প ও বিজ্ঞানে উন্নত, প্রযুক্তিতে আধুনিক, এবং শান্ত একটি রাষ্ট্র। ব্রিটেন ইউরোপের ধনী দেশগুলির একটি এবং এখানকার মানুষের জীবনযাত্রার মান বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় উঁচু।

অর্থনীতি

ব্রিটেন একসময় বিশ্বের প্রধান ও অগ্রগামী অর্থনৈতিক শক্তি ছিল। ১৮শ শতকের শেষে ও ১৯শ শতকের শুরুতে ব্রিটেনেই বিশ্বের প্রথম শিল্প বিপ্লব ঘটে। এর সূত্র ধরে এখানে এমন একটি সমাজ সৃষ্টি হয় যাতে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রাধান্য ছিল বেশি। ব্রিটেনই ছিল বিশ্বের প্রথম নগরায়িত রাষ্ট্র, যেখানে অর্ধেকেরও বেশি নাগরিক শহরে বাস করেন। দ্রুত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যের সুবাদে ১৯শ শতকে রাণী ভিক্টোরিয়ার আমলে ব্রিটেন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশে পরিণত হয়। শিল্প বিপ্লবের আগে ও পরে বহুকাল যাবত লন্ডন ছিল বিশ্বে পুঁজিবাদের মূল কেন্দ্র। লন্ডন এখনও বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা ও অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলির একটি।

জনসংখ্যা

ইংরেজি ভাষা যুক্তরাজ্যের সরকারী ভাষা। ওয়েল্‌স এবং স্কটল্যান্ডে যথাক্রমে ওয়েল্‌শ এবং স্কটিশ গেলিক ভাষাকে আঞ্চলিক সরকারী ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে আইল অভ ম্যান-এ মাংক্স ভাষা, এবং জার্সি ও গুয়ের্নজি-তে ফরাসি ভাষা প্রচলিত। উত্তর আয়ারল্যান্ডে সামান্য আইরিশ গেলিক ভাষা প্রচলিত। যুক্তরাজ্যের অভিবাসী সম্প্রদায়ে শতাধিক অভিবাসী ভাষা প্রচলিত। এদের মধ্যে আছে বাংলা, চীনা, গ্রিক, গুজরাটি, হিন্দি, ইতালীয়, পাঞ্জাবি, পোলীয়, পর্তুগিজ, স্পেনীয়, তুর্কি, ইউক্রেনীয়, উর্দু, ভিয়েতনামি, ইত্যাদি ভাষা। কিছু লোক জিপসি বা রোমানি ভাষাতে কথা বলে।

সংস্কৃতি

আধুনিক যুগের শিল্পকলাতেও ব্রিটেন সবসময়ই গুরুত্ব পেয়েছে। ব্রিটেনের লেখকদের রচিত নাটক, উপন্যাস, গল্প এবং সম্প্রতি চিত্রনাট্য বিশ্বব্যাপী আদৃত। চিত্রশিল্প ও সঙ্গীতের ক্ষেত্রে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলির তুলনায় পিছিয়ে থাকলেও সাহিত্য সৃষ্টিতে ব্রিটিশেরা সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। তবে বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটেনেও গুরুত্বপূর্ণ শিল্পী ও সুরকারের দেখা মেলে, যাদের মধ্যে চিত্রশিল্পী ডেভিড হকনি এবং সুরকার স্যার এডওয়ার্ড এলগারের নাম করা যায়।

পরিবহন

যুক্তরাজ্যের প্রধান বিমানসংস্থা ব্রিটিশ এয়ারওয়েস৷যুক্তরাজ্যের পরিবহন ব্যবস্থা উন্নতমানের সড়ক, বিমান, রেল ও নৌপথের নেটওয়ার্ক নিয়ে গঠিত।

প্রধান সড়ক বা মেইন রোড ব্যবস্থাটি লন্ডন, এডিনবরা ও বেলফাস্ট শহরগুলিকে কেন্দ্রবিন্দু করে চারদিকে প্রসারিত হয়েছে। প্রধান সড়কগুলির মোট দৈর্ঘ্য ৪৬,৬৩২ কিলোমিটার। এর বাইরেও আছে একটি মোটরওয়ে বা মহাসড়ক নেটওয়ার্ক। ৩,৪৭৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ব্যবস্থাটি বার্মিংহাম, গ্লাসগো, লিড্‌স, লিভারপুল, ম্যানচেস্টার ও লন্ডন শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। এছাড়াও আরও প্রায় ৩,৪২,০০০ কিলোমিটার পাকা রাস্তা রয়েছে যুক্তরাজ্যে।

যুক্তরাজ্যের জাতীয় রেল নেটওয়ার্কের দৈর্ঘ্য গ্রেট ব্রিটেন দ্বীপে ১৬,১১৬ রাউট কিলোমিটার এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডে ৩০৩ রাউট কিলোমিটার। ব্যবস্থাটি প্রতিদিন ১৮ হাজার যাত্রী এবং ১০০টি মালবাহী ট্রেন পরিবহন করে। লন্ডন, গ্লাসগো, কার্ডিফ, এডিনবরা, বার্মিংহাম এবং আরও বেশ কিছু প্রধান শহরে পৌর রেল নেটওয়ার্ক অত্যন্ত উন্নত।

লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর বিশ্বের ব্যস্ততম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। যুক্তরাজ্যে মোট ৪৭১টি বিমানবন্দর আছে।

যুক্তরাজ্যের আমদানিকৃত পণ্যের ৯৫% জলপথে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। গ্রেট ব্রিটেন দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে উত্তর সাগরের উপকূলে অবস্থিত সাফোক কাউন্টির ফিলিক্সস্টো (Felixstowe) বন্দর ইউরোপের চতুর্থ বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর। টেমস নদীর তীরে এসেক্স কাউন্টিতে অবস্থিত টিলবারি বন্দর (Tilbury) এবং দক্ষিণ উপকূলের সাদ্যাম্পটন (Southampton) আরও দুইটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র বন্দর।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. It is sometimes claimed by those from legislative traditions that God Save the Queen is only the de facto anthem because no law was passed making it so. In the British tradition such laws are not necessary. Proclamation and usage are sufficient to make it the official national anthem. God Save the Queen also serves as the Royal anthem for several other countries.
  2. English is established by de facto usage. In Wales, the Bwrdd yr Iaith Gymraeg is legally tasked with ensuring that, "in the conduct of public business and the administration of justice, the English and Welsh languages should be treated on a basis of equality". "Welsh Language Act 1993"। Office of Public Sector Information। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৯-০৩ . Bòrd na Gàidhlig is tasked with "securing the status of the Gaelic language as an official language of Scotland commanding equal respect to the English language" "Gaelic Language (Scotland) Act 2005"। Office of Public Sector Information। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৩-০৯ 
  3. Under the European Charter for Regional or Minority Languages the Welsh, Scottish Gaelic, Cornish, Irish, Ulster Scots and Scots languages are officially recognised as Regional or Minority languages by the UK Government ("European Charter for Regional or Minority Languages"। Scottish Executive। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৮-২৩ ) See also Languages of the United Kingdom.
  4. "United Kingdom"The World Factbook। CIA। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৮-৩০ 
  5. Population Estimates at www.statistics.gov.uk
  6. "United Kingdom"। International Monetary Fund। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১০-০১ 
  7. "The World Factbook - United Kingdom"। CIA। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৯-২৩ 
  8. Human Development Report 2009. The United Nations. Retrieved 5 October 2009
  9. The Euro is accepted in many payphones and some larger shops.
  10. British dependencies drive on the left except for BIOT and Gibraltar.
  11. ISO 3166-1 alpha-2 states that this should be GB, but .gb is practically unused. The .eu domain is shared with other European Union member states.

বহিঃসংযোগ

সরকারি
সাধারণ তথ্য
পর্যটন
  • Official tourist guide to Britain
  • Officialuide uk
  • Officialuide uk artical
  • বিবিসি বাংলা

টেমপ্লেট:Link FA টেমপ্লেট:Link FA