জর্জ ন্যাথানিয়েল কার্জন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
অ বট কসমেটিক পরিবর্তন করছে; কোনো সমস্যা? |
অ বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে, সমস্যা? এখানে জানান |
||
৫১ নং লাইন: | ৫১ নং লাইন: | ||
| successor7=[[Ramsay MacDonald]] |
| successor7=[[Ramsay MacDonald]] |
||
}} |
}} |
||
'''জর্জ ন্যাথানিয়েল কার্জন''' ([[১১ জানুয়ারি]],[[১৮৫৯]]-[[২০ মার্চ]], [[১৯২৫]]), লর্ড কার্জন নামেও বহুল পরিচিত, [[ভারতবর্ষ|ভারতবর্ষের]] [[বড়লাট]] ছিলেন [[ভারতের গভর্নর জেনারেল]] ও [[ভাইসরয়]]। |
'''জর্জ ন্যাথানিয়েল কার্জন''' ([[১১ জানুয়ারি]],[[১৮৫৯]]-[[২০ মার্চ]], [[১৯২৫]]), লর্ড কার্জন নামেও বহুল পরিচিত, [[ভারতবর্ষ|ভারতবর্ষের]] [[বড়লাট]] ছিলেন [[ভারতের গভর্নর জেনারেল]] ও [[ভাইসরয়]]। |
||
৬২ নং লাইন: | ৬১ নং লাইন: | ||
=== প্রথম বৈবাহিক জীবন(১৮৯৫-১৯০৬) === |
=== প্রথম বৈবাহিক জীবন(১৮৯৫-১৯০৬) === |
||
[[চিত্র:Mary Victoria Leiter 1887 Cabanel-C.jpg|thumb|250px|কার্জনের স্ত্রী, মেরি ভিক্টরিয়া লেইটার (১৮৮৭) আলেক্সজান্ডার ক্যাবানেল অঙ্কিত]] |
[[চিত্র:Mary Victoria Leiter 1887 Cabanel-C.jpg|thumb|250px|কার্জনের স্ত্রী, মেরি ভিক্টরিয়া লেইটার (১৮৮৭) আলেক্সজান্ডার ক্যাবানেল অঙ্কিত]] |
||
=== ভারতের ভাইসরয (১৮৯৯-১৯০৫) === |
=== ভারতের ভাইসরয (১৮৯৯-১৯০৫) === |
||
৭৯ নং লাইন: | ৭৭ নং লাইন: | ||
দুটি বিতর্কিত নীতি লর্ড কার্জনের গৌরবদীপ্ত প্রশাসনিক ইতিহাসকে অনেকাংশে মলিন করে দিয়েছে। এর একটি হচ্ছে তাঁর শিক্ষানীতি। ১৯০৪ সালের ‘ইউনিভার্সিটিজ অ্যাক্ট’-এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এর সম্পর্কের সংস্কার সাধন করা ছিল এ অ্যাক্টের লক্ষ্য। ইতোপূর্বে শুধু পরীক্ষা গ্রহণ এবং অধিভুক্তকরণ ছাড়া কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদান বিষয়ক কোন কর্মকাণ্ড ছিল না। লর্ড কার্জনের সংস্কারের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর বিভাগের সূচনা হয়। সাধারণ মানুষ এ সংস্কারকে স্বাগত জানায়। কিন্তু স্কুল ও কলেজের ব্যবস্থাপনা বিষয়ে তাঁর অন্যান্য সংস্কার তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হয়। ‘ইউনিভার্সিটিজ অ্যাক্ট’-এর অধীনে স্কুল ও কলেজের পরিচালন পর্ষদে সরকার মনোনীত ব্যক্তিদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। অধিভুক্তি ও অনুদান প্রাপ্তির শর্তাবলি অত্যন্ত কঠিন করা হয়। জাতীয়তাবাদীগণ এ বলে অভিযোগ উত্থাপন করে যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে কঠোর সাম্রাজ্যবাদী নিয়ন্ত্রণ রক্ষা করা লর্ড কার্জনের শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য। |
দুটি বিতর্কিত নীতি লর্ড কার্জনের গৌরবদীপ্ত প্রশাসনিক ইতিহাসকে অনেকাংশে মলিন করে দিয়েছে। এর একটি হচ্ছে তাঁর শিক্ষানীতি। ১৯০৪ সালের ‘ইউনিভার্সিটিজ অ্যাক্ট’-এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এর সম্পর্কের সংস্কার সাধন করা ছিল এ অ্যাক্টের লক্ষ্য। ইতোপূর্বে শুধু পরীক্ষা গ্রহণ এবং অধিভুক্তকরণ ছাড়া কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদান বিষয়ক কোন কর্মকাণ্ড ছিল না। লর্ড কার্জনের সংস্কারের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর বিভাগের সূচনা হয়। সাধারণ মানুষ এ সংস্কারকে স্বাগত জানায়। কিন্তু স্কুল ও কলেজের ব্যবস্থাপনা বিষয়ে তাঁর অন্যান্য সংস্কার তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হয়। ‘ইউনিভার্সিটিজ অ্যাক্ট’-এর অধীনে স্কুল ও কলেজের পরিচালন পর্ষদে সরকার মনোনীত ব্যক্তিদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। অধিভুক্তি ও অনুদান প্রাপ্তির শর্তাবলি অত্যন্ত কঠিন করা হয়। জাতীয়তাবাদীগণ এ বলে অভিযোগ উত্থাপন করে যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে কঠোর সাম্রাজ্যবাদী নিয়ন্ত্রণ রক্ষা করা লর্ড কার্জনের শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য। |
||
লর্ড কার্জনের সর্বাপেক্ষা বিতর্কিত পদক্ষেপ ছিল বঙ্গ-ভঙ্গ। চির-অবহেলিত বাংলার ভাগ্য উন্নয়নের নামে তিনি রাজ্যটিকে দুভাগে ভাগ করেন ক. পশ্চিমবঙ্গ এবং খ. পূর্ববঙ্গ ও আসাম। জাতীয়তাবাদীরা এ বিভাজনকে সাম্রাজ্যবাদী নিয়ন্ত্রণ পাকাপোক্ত করার অভিসন্ধি হিসেবে দেখেন। কংগ্রেস একে ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ (‘ভাগ করো এবং শাসন করো’) নীতি হিসেবে আখ্যা দেয়। বঙ্গ-ভঙ্গ রদ আন্দোলন স্বদেশী ও সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের রূপ নেয়। বলা বাহুল্য এ স্বদেশী ও সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত কঁাপিয়ে দিয়েছিল। ভারতীয়দের মোকাবিলায় তিনি সিদ্ধহস্ত, এ বলে লর্ড কার্জন গর্ববোধ করতেন। এমনকি তিনি একবার কংগ্রেসের জাতীয়তাবাদী নেতাদের সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন যে, তারা ‘গঙ্গায় তো আর আগুন লাগাতে পারবেনা’। সেই আত্মবিশ্বাসী লর্ড কার্জন বঙ্গ-ভঙ্গকে ঘিরে জ্বলে ওঠা স্বদেশী ও সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের মুখে হতাশ ও বিচলিত বোধ করতে থাকেন। এমনকি সসম্মানে পদত্যাগের কথাও ভাবছিলেন তিনি। ভারতীয় বাহিনীর প্রধান সেনাপতি লর্ড কিচেনার (করঃপযবহবৎ) তাঁকে সে সুযোগ এনে দেন। সেনাবাহিনীর সংস্কার প্রসঙ্গে লর্ড কিচেনার-এর সঙ্গে তাঁর গভীর মতপার্থক্য দেখা দেয়। কার্জন অনুভব করেন যে, ‘ইন্ডিয়া অফিস’ কিচেনারের পক্ষাবলম্বন করছে। এ পরিস্থিতিতে লর্ড কার্জন ১৯০৫ সালের আগস্ট মাসে পদত্যাগ করেন এবং ‘ইন্ডিয়া অফিস’ তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে। বস্তুতপক্ষে, কার্জনের এ পরিণতির জন্য দায়ী ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদী ভদ্রলোক শ্রেণী। এদের সম্পর্কে কার্জনের অবজ্ঞাসূচক মন্তব্য ছিল, ‘এরা প্রেরণাসঞ্চারী কিংবা পুরুষোচিত জাতি নয়।’ |
লর্ড কার্জনের সর্বাপেক্ষা বিতর্কিত পদক্ষেপ ছিল বঙ্গ-ভঙ্গ। চির-অবহেলিত বাংলার ভাগ্য উন্নয়নের নামে তিনি রাজ্যটিকে দুভাগে ভাগ করেন ক. পশ্চিমবঙ্গ এবং খ. পূর্ববঙ্গ ও আসাম। জাতীয়তাবাদীরা এ বিভাজনকে সাম্রাজ্যবাদী নিয়ন্ত্রণ পাকাপোক্ত করার অভিসন্ধি হিসেবে দেখেন। কংগ্রেস একে ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ (‘ভাগ করো এবং শাসন করো’) নীতি হিসেবে আখ্যা দেয়। বঙ্গ-ভঙ্গ রদ আন্দোলন স্বদেশী ও সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের রূপ নেয়। বলা বাহুল্য এ স্বদেশী ও সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত কঁাপিয়ে দিয়েছিল। ভারতীয়দের মোকাবিলায় তিনি সিদ্ধহস্ত, এ বলে লর্ড কার্জন গর্ববোধ করতেন। এমনকি তিনি একবার কংগ্রেসের জাতীয়তাবাদী নেতাদের সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন যে, তারা ‘গঙ্গায় তো আর আগুন লাগাতে পারবেনা’। সেই আত্মবিশ্বাসী লর্ড কার্জন বঙ্গ-ভঙ্গকে ঘিরে জ্বলে ওঠা স্বদেশী ও সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের মুখে হতাশ ও বিচলিত বোধ করতে থাকেন। এমনকি সসম্মানে পদত্যাগের কথাও ভাবছিলেন তিনি। ভারতীয় বাহিনীর প্রধান সেনাপতি লর্ড কিচেনার (করঃপযবহবৎ) তাঁকে সে সুযোগ এনে দেন। সেনাবাহিনীর সংস্কার প্রসঙ্গে লর্ড কিচেনার-এর সঙ্গে তাঁর গভীর মতপার্থক্য দেখা দেয়। কার্জন অনুভব করেন যে, ‘ইন্ডিয়া অফিস’ কিচেনারের পক্ষাবলম্বন করছে। এ পরিস্থিতিতে লর্ড কার্জন ১৯০৫ সালের আগস্ট মাসে পদত্যাগ করেন এবং ‘ইন্ডিয়া অফিস’ তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে। বস্তুতপক্ষে, কার্জনের এ পরিণতির জন্য দায়ী ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদী ভদ্রলোক শ্রেণী। এদের সম্পর্কে কার্জনের অবজ্ঞাসূচক মন্তব্য ছিল, ‘এরা প্রেরণাসঞ্চারী কিংবা পুরুষোচিত জাতি নয়।’ |
||
=== আয়ারল্যান্ডের জন্য অভিজাত শ্রেনীর প্রতিনিধি(১৯০৮) === |
=== আয়ারল্যান্ডের জন্য অভিজাত শ্রেনীর প্রতিনিধি(১৯০৮) === |
||
১০২ নং লাইন: | ১০০ নং লাইন: | ||
== বহিঃসংযোগ == |
== বহিঃসংযোগ == |
||
* [http://www.archive.org/details/problemsoffareas00curziala ''Problems of the Far East: Japan - Korea - China '' by George Curzon, 1st Marquess Curzon of Kedleston at archive.org] |
* [http://www.archive.org/details/problemsoffareas00curziala ''Problems of the Far East: Japan - Korea - China '' by George Curzon, 1st Marquess Curzon of Kedleston at archive.org] |
||
* [http://www.archive.org/details/modernparliament00curzuoft ''Modern parliamentary eloquence; the Rede lecture, delivered before the University of Cambridge, November 6, 1913 '' by George Curzon, 1st Marquess Curzon of Kedleston at archive.org] |
* [http://www.archive.org/details/modernparliament00curzuoft ''Modern parliamentary eloquence; the Rede lecture, delivered before the University of Cambridge, November 6, 1913 '' by George Curzon, 1st Marquess Curzon of Kedleston at archive.org] |
||
* [http://www.archive.org/details/russiaincentrala032476mbp ''Russia In Central Asia In 1889'' by George Curzon, 1st Marquess Curzon of Kedleston at archive.org] |
* [http://www.archive.org/details/russiaincentrala032476mbp ''Russia In Central Asia In 1889'' by George Curzon, 1st Marquess Curzon of Kedleston at archive.org] |
||
* [http://www.archive.org/details/warpoemsandother00curzuoft ''War poems and other translations '' by George Curzon, 1st Marquess Curzon of Kedleston at archive.org] |
* [http://www.archive.org/details/warpoemsandother00curzuoft ''War poems and other translations '' by George Curzon, 1st Marquess Curzon of Kedleston at archive.org] |
||
{{অসম্পূর্ণ}} |
{{অসম্পূর্ণ}} |
১৮:১৩, ১৬ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
জর্জ ন্যাথানিয়েল কার্জন (১১ জানুয়ারি,১৮৫৯-২০ মার্চ, ১৯২৫), লর্ড কার্জন নামেও বহুল পরিচিত, ভারতবর্ষের বড়লাট ছিলেন ভারতের গভর্নর জেনারেল ও ভাইসরয়।
প্রথম জীবন
ডার্বিশায়ারের কেডেলস্টোন নিবাসী লর্ড স্কার্সডেল-এর জে্যষ্ঠপুত্র ও উত্তরাধিকারী। হ্যাম্পশায়ারের উইক্সেনফোর্ড পাবলিক স্কুল, এবং পরে ইটন স্কুল ও অক্সফোর্ডের ব্যালিওল কলেজে শিক্ষালাভ করেন। অতীব রক্ষণশীল পরিবার থেকে আসা লর্ড কার্জন একজন রক্ষণশীল হিসেবেই পরিচিত ছিলেন।
জীবন ও পেশা
ভারতের ভাইসরয় হওয়ার আগে তিনি খুব বেশি উচ্চ পদে আসীন ছিলেন না। পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে তিনি সাউথপোর্ট-এর প্রতিনিধিত্ব করেছেন (১৮৮৫-৮৬)। ১৮৯১-৯২ সালে তিনি ভারতের জন্য ‘পার্লামেন্টারি আন্ডার সেক্রেটারি’ এবং পরে ১৮৯৫-৯৮ সালে ‘ফরেন আন্ডার সেক্রেটারি’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রী লর্ড স্যালিসবেরি তাঁকে ভারতের গভর্নর জেনারেল ও ভাইসরয়-এর পদ গ্রহণের আমন্ত্রণ জানালে তিনি অত্যন্ত বিস্মিত ও রোমাঞ্চিত হয়েছিলেন।
প্রথম বৈবাহিক জীবন(১৮৯৫-১৯০৬)
ভারতের ভাইসরয (১৮৯৯-১৯০৫)
লর্ড কার্জন পর পর দুবার ভারত সাম্রাজ্যের অধিকর্তা ছিলেন। তাঁর প্রথম বারের শাসনকালকে (১৮৯৯-১৯০৪) ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের স্বর্ণযুগ বলা যায়। গৌরবের মধ্য দিয়েই এ শাসনকালের সমাপ্তি ঘটে। দ্বিতীয় বারে ভারতের শাসনভার গ্রহণ করে মাত্র একবছরের মাথায় তিনি পদত্যাগ করেন। তাঁর গৃহীত ব্যবস্থাদি নিয়ে সৃষ্ট চরম বিতর্ক ছিল এ পদত্যাগের কারণ। রক্ষণশীল সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের একজন দক্ষ সদাশয় শাসকের ভূমিকা পালন করবেন এটিই ছিল তাঁর কাছে তাঁর সরকারের প্রত্যাশা। বা™Âী, কুশলী, প্রাণবন্ত কার্জন ইতোপূর্বে চারবার ভারত ভ্রমণ করেছিলেন এবং তিন বছর ছিলেন বিদেশ দপ্তরের আন্ডার সেক্রেটারি। কাজেই তিনি ভারত বিষয়ে অজ্ঞ ছিলেন এ কথা আদৌ বলা যায় না। তাঁর পূর্বসূরি ওয়েলেসলী এবং ডালহৌসী-র বেলায় যেমনটি করা হয়েছিল, তাঁর বেলাতে কিন্তু তেমন সাম্রাজ্য স্থাপনের প্রত্যাশা তাঁর কাছে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট করে নি; কারণ অস্থিতিশীল অবস্থায় হলেও সাম্রাজ্য তখন বিদ্যমান ছিল। সে সাম্রাজ্যকে তিনি শক্ত ভিতের উপর দঁাড় করাবেন, এটিই ছিল তাঁর কাছে ব্রিটিশ সরকারের প্রত্যাশা। সীমান্ত নীতি কার্জনের গৃহীত প্রথম পদক্ষেপ ছিল চিত্রল, খাইবার ও খুর্রম উপত্যকা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার। কারণ, এগুলি সরাসরি ব্রিটিশ শাসিত ছিল না। প্রয়োজনে ব্রিটিশ সাহায্য নিয়ে উক্ত অঞ্চলের উপজাতীয়রা নিজেদেরকে রক্ষা করবে-এটিই ছিল লর্ড কার্জনের নীতি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যন্ত এ নীতির গুণেই সীমান্ত অঞ্চল শান্ত ছিল। এ নীতির সম্পূরক হিসেবেই উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ সৃষ্টি করা হয়।
অভ্যন্তরীণ প্রশাসন গ্রাম পর্যায়ে কর-আদায় ব্যবস্থার মূল্যায়ন থেকে শুরু করে ভাইসরয়-এর গৃহস্থালির খরচ পর্যন্ত এমন কোন বিষয় ছিল না যা লর্ড কার্জন ব্যক্তিগতভাবে খেঁাজ-খবর করতেন না। সমগ্র আমলা যন্ত্রটিকে তিনি ঢেলে সাজাবার ব্যবস্থা করেছিলেন। সংস্কারের পটভূমি হিসেবে তিনি এক এক করে প্রতিটি বিভাগের দোষত্র‚টি চিহ্নিত করেন। অফিস-হাজিরায় নিয়মিত বিলম্ব, ফাইলের শ্লথগতি, ফাইলে অহেতুক দীর্ঘ মন্তব্য, বাগাড়ম্বরপূর্ণ কার্য বিবরণী, এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে ফাইলের অন্তহীন ও উদ্দেশ্যহীন চলাচল, গৎবাধা বস্তুকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ, তুচ্ছ বিষয়ে অধস্তনের উপর নির্ভরতা ইত্যাদি লর্ড কার্জনকে পীড়িত করত। তিনি ব্যক্তিগতভাবে দাপ্তরিক উন্নয়নের জন্য গৃহীত ব্যবস্থাদির তদারকি করতেন। এমনকি তিনি আই.সি.এস. অফিসারদের দাপ্তরিক কাজকর্মেরও হিসাব-নিকাশ করতেন এবং সুশাসনের জন্য উদ্যোগী হতে তাদেরকে নির্দেশ দিতেন। প্রথমদিকে এসব অফিসারগণ তাঁর অভিভাবকসুলভ দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি শীতল মনোভাব পোষণ করতেন বটে, তবে শেষদিকে তাঁরা নতি স্বীকার করেছিলেন এবং ব্রিটিশ আমলারা তাদের প্রধানমন্ত্রীকে যেভাবে অনুসরণ করে, ঠিক সেভাবেই লর্ড কার্জনকে অনুসরণ করেছিলেন। ১৯০৩ সালের পুলিশ রিপোর্ট-এর উপর ভিত্তি করে তিনি ভারতীয় পুলিশ বাহিনীকে পুনর্গঠিত করেছিলেন। শ্লথগতি সম্পন্ন অফিস পদ্ধতিতে তিনি ব্যাপক পরিবর্তন এনেছিলেন।
ভূমি ব্যবস্থায় লর্ড কার্জনের কাজ প্রশংসনীয়। তিনি লক্ষ করেছিলেন যে, জমিদারির অধীন কৃষকদের তুলনায় সরকারি মালিকানাধীন খাস জমি চাষকারী কৃষকদের দেয় খাজনার পরিমাণ অনেক বেশি। এ-কারণে তিনি খাস জমির খাজনার পরিমাণ হ্রাস করার জন্য নির্দেশ জারি করেন। ভূমি ব্যবস্থায় তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান ‘পাঞ্জাব ল্যান্ড এলিয়েনেশন অ্যাক্ট’। এ আইনের লক্ষ্য ছিল ঋণের দায়ে কৃষককে জমি থেকে উৎখাত হওয়া থেকে রক্ষা করা ও অকৃষিজীবী মানুষকে জমির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করা থেকে বিরত রাখা। বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থার উন্নতি সাধনের জন্য তিনি একটি কৃষি বিভাগ সৃষ্টি করেছিলেন। বিহারের পুসায় তিনি পরীক্ষামূলক খামার ও গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থাপন করেন। মহাজনের দাসত্ব থেকে কৃষক সম্প্রদায়কে মুক্ত করার জন্য সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন লর্ড কার্জন। সম্ভবত এটিই ভূমি ব্যবস্থায় গৃহীত তাঁর পদক্ষেপসমূহের মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ।
লর্ড কার্জন উন্নতি বলতে কৃষি, শিল্প ও যাতায়াত ব্যবস্থার সমম্বিত উন্নতি বুঝতেন। তাই এ তিনটি দিকের প্রতিই তিনি সমান মনোযোগ দিয়েছিলেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষনাগাদ ভারতে ২৭০০০ মাইল রেলপথ ছিল। এর সঙ্গে লর্ড কার্জন আরও ৬০০০ মাইল রেলপথ যোগ করেন। প্রবৃদ্ধির হারের দিক থেকে এটি ছিল বিস্ময়কর। উন্নততর ব্যবস্থাপনার জন্য রেলপথকে পাবলিক ওয়ার্কস্ বিভাগ থেকে পৃথক করে নতুন-সৃষ্ট ‘রেলওয়ে বোর্ড’-এর অধীনে ন্যস্ত করা হয়। এ বোর্ড রাজ্যের রেলপথের পরিচালন ও তার বিকাশের দায়িত্ব পালন করে। শিল্প ও বাণিজ্যের তদারকির জন্য একটি নতুন শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তর সৃষ্টি করা হয়। সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নেও লর্ড কার্জন সমপরিমাণে উদ্যোগী হয়েছিলেন। এ ব্যবস্থার সম্প্রসারণের জন্য তিনি ৪ কোটি টাকা ব্যয় করেন এবং এতদুদ্দেশ্যে একটি কমিশন (স্কট-মনক্রিফ কমিশন) স্থাপন করেন।
একজন বড় মাপের সাম্রাজ্যবাদী হওয়া সত্ত্বেও লর্ড কার্জন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড দিয়ে তাঁর জাগতিক কর্মকাণ্ডের সমাপ্তি টানেন। ব্রিটিশ শাসনের নিদর্শন হিসেবে তিনি কলকাতায় নির্মাণ করেন ‘ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল’। ব্রিটিশ মিউজিয়াম আর অক্সফোর্ডের বোদলেইয়ান লাইবে্ররির আদলে স্থাপন করেন ‘ইমপেরিয়াল লাইবে্ররি’। ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য লর্ড কার্জন পুরাতত্ত্ব বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর মাধ্যমে জেনারেল কানিংহাম সহ অন্যান্যদের দ্বারা পরিচালিত খননকার্যকে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি দান করেন। ঐতিহাসিক স্থাপনা থেকে অফিস ও অফিসারদেরকে তিনি কঠোরভাবে উচ্ছেদ করেন। এ সকল কাজ এবং প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার কাজে তিনি স্যার জন মার্শাল-এর মধ্যে নতুন কানিংহামকে খুঁজে পেয়েছিলেন।
দুটি বিতর্কিত নীতি লর্ড কার্জনের গৌরবদীপ্ত প্রশাসনিক ইতিহাসকে অনেকাংশে মলিন করে দিয়েছে। এর একটি হচ্ছে তাঁর শিক্ষানীতি। ১৯০৪ সালের ‘ইউনিভার্সিটিজ অ্যাক্ট’-এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এর সম্পর্কের সংস্কার সাধন করা ছিল এ অ্যাক্টের লক্ষ্য। ইতোপূর্বে শুধু পরীক্ষা গ্রহণ এবং অধিভুক্তকরণ ছাড়া কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদান বিষয়ক কোন কর্মকাণ্ড ছিল না। লর্ড কার্জনের সংস্কারের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর বিভাগের সূচনা হয়। সাধারণ মানুষ এ সংস্কারকে স্বাগত জানায়। কিন্তু স্কুল ও কলেজের ব্যবস্থাপনা বিষয়ে তাঁর অন্যান্য সংস্কার তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হয়। ‘ইউনিভার্সিটিজ অ্যাক্ট’-এর অধীনে স্কুল ও কলেজের পরিচালন পর্ষদে সরকার মনোনীত ব্যক্তিদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। অধিভুক্তি ও অনুদান প্রাপ্তির শর্তাবলি অত্যন্ত কঠিন করা হয়। জাতীয়তাবাদীগণ এ বলে অভিযোগ উত্থাপন করে যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে কঠোর সাম্রাজ্যবাদী নিয়ন্ত্রণ রক্ষা করা লর্ড কার্জনের শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য।
লর্ড কার্জনের সর্বাপেক্ষা বিতর্কিত পদক্ষেপ ছিল বঙ্গ-ভঙ্গ। চির-অবহেলিত বাংলার ভাগ্য উন্নয়নের নামে তিনি রাজ্যটিকে দুভাগে ভাগ করেন ক. পশ্চিমবঙ্গ এবং খ. পূর্ববঙ্গ ও আসাম। জাতীয়তাবাদীরা এ বিভাজনকে সাম্রাজ্যবাদী নিয়ন্ত্রণ পাকাপোক্ত করার অভিসন্ধি হিসেবে দেখেন। কংগ্রেস একে ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ (‘ভাগ করো এবং শাসন করো’) নীতি হিসেবে আখ্যা দেয়। বঙ্গ-ভঙ্গ রদ আন্দোলন স্বদেশী ও সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের রূপ নেয়। বলা বাহুল্য এ স্বদেশী ও সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত কঁাপিয়ে দিয়েছিল। ভারতীয়দের মোকাবিলায় তিনি সিদ্ধহস্ত, এ বলে লর্ড কার্জন গর্ববোধ করতেন। এমনকি তিনি একবার কংগ্রেসের জাতীয়তাবাদী নেতাদের সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন যে, তারা ‘গঙ্গায় তো আর আগুন লাগাতে পারবেনা’। সেই আত্মবিশ্বাসী লর্ড কার্জন বঙ্গ-ভঙ্গকে ঘিরে জ্বলে ওঠা স্বদেশী ও সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের মুখে হতাশ ও বিচলিত বোধ করতে থাকেন। এমনকি সসম্মানে পদত্যাগের কথাও ভাবছিলেন তিনি। ভারতীয় বাহিনীর প্রধান সেনাপতি লর্ড কিচেনার (করঃপযবহবৎ) তাঁকে সে সুযোগ এনে দেন। সেনাবাহিনীর সংস্কার প্রসঙ্গে লর্ড কিচেনার-এর সঙ্গে তাঁর গভীর মতপার্থক্য দেখা দেয়। কার্জন অনুভব করেন যে, ‘ইন্ডিয়া অফিস’ কিচেনারের পক্ষাবলম্বন করছে। এ পরিস্থিতিতে লর্ড কার্জন ১৯০৫ সালের আগস্ট মাসে পদত্যাগ করেন এবং ‘ইন্ডিয়া অফিস’ তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে। বস্তুতপক্ষে, কার্জনের এ পরিণতির জন্য দায়ী ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদী ভদ্রলোক শ্রেণী। এদের সম্পর্কে কার্জনের অবজ্ঞাসূচক মন্তব্য ছিল, ‘এরা প্রেরণাসঞ্চারী কিংবা পুরুষোচিত জাতি নয়।’
আয়ারল্যান্ডের জন্য অভিজাত শ্রেনীর প্রতিনিধি(১৯০৮)
দ্বিতীয় বৈবাহিক জীবন(১৯১৭)
বিদেশ সচিব(১৯১৯-১৯২৪)
আভিজাত্যের খেতাব
মূল্যায়ন
রচনার তালিকা
জর্জ ন্যাথানিয়েল কার্জন লিখিত
আনুসঙ্গিক নিবন্ধ
তথ্যসূত্র
উৎস
আরও দেখুন
বহিঃসংযোগ
- Problems of the Far East: Japan - Korea - China by George Curzon, 1st Marquess Curzon of Kedleston at archive.org
- Modern parliamentary eloquence; the Rede lecture, delivered before the University of Cambridge, November 6, 1913 by George Curzon, 1st Marquess Curzon of Kedleston at archive.org
- Russia In Central Asia In 1889 by George Curzon, 1st Marquess Curzon of Kedleston at archive.org
- War poems and other translations by George Curzon, 1st Marquess Curzon of Kedleston at archive.org
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |