শমসের গাজী: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
৬৭ নং লাইন: ৬৭ নং লাইন:


==তথ্যসূত্র==
==তথ্যসূত্র==
Feni
৩০০০ বছরের নোয়াখালী ।


বঙ্গবীর নবাব শমসের গাজী স্মুতি নিদশন
বঙ্গবীর নবাব শমসের গাজী স্মুতি নিদশন

১৩:২২, ১০ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

শমসের গাজী
জন্ম
জাতীয়তা বাংলাদেশী
পেশাবিপ্লবী,জমিদার
পিতা-মাতাপীর মুহাম্মদ মতান্তরে পেয়ার মুহাম্মদ খান(পিতা )
কৈয়্যারা বিবি (মাতা)

বঙ্গবীর শমসের গাজী, ছিলেন একজন ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী। ১৭৫৭ সালে ব্রিটিশ ঐপনিবেশিক শক্তির আগ্রাসন প্রতিহত করতে গিয়ে মৃত্যু বরণ করেন তিনি ভাটির বাঘ বলে পরিচিত। শমসের গাজী নবাব সিরাজুদ্দৌলার পর তিনিই ঔপনিবেশি শক্তির হাতে প্রথম নিহত হন।

জন্ম

বৃহত্তর নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও ত্রিপুরা। আঠার শতকের মাঝামাঝি দক্ষিণ-পূর্ববাংলায় এক বিপ্লবীর অভ্যুদয় ঘটে। তাঁর নাম শমসের গাজী। ‘বাংলার বীর’, ‘ভাটির বাঘ’ তাঁর উপাধি। মগ-পর্তুগীজ জলদস্যুদের বিরুদ্ধে তিনি গড়ে তোলেন এক লাঠিয়াল বাহিনী। উপকূলীয় জনপদ থেকে বিতাড়িত হয় হার্মাদরা। কবি সৈয়দ সুলতানের উত্তরপুরুষ সৈয়দ গদা হোসেন তাঁর অন্তরে জ্বালিয়ে দিলেন জ্ঞানপ্রদীপ। জমিদারকন্যা দরিয়াবিবির সঙ্গে অসফল প্রেম তাঁর জীবনকে উন্নীত করে ভিন্ন মাত্রায়। কৃষক-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অধিকার করে নেন জমিদারি। [১]


বঙ্গবীর শমসের গাজী বর্তমান ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলাতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ছিল পীর মুহাম্মদ মতান্তরে পেয়ার মুহাম্মদ খান এবং মাতার নাম ছিল কৈয়্যারা বিবি। [২]

শৈশব

ফেনীর ছাগলনাইয়া থেকে গ্র্যান্ড ট্র্যাংক রোড ধরে ৭ কিলোমিটার চট্টগ্রামের দিকে গেলেই সামনে পড়ে কৈয়ারা বাজার। এখানে গ্রামটির নামও কৈয়ারা। এই কৈয়ারা গ্রামটি কৈয়ারা বিবির নামানুসারে রাখা হয়েছে। আর কৈয়ারা বিবি হচ্ছেন শমসের গাজীর মা। শমসের গাজীকে বলা হয় ভাটির বাঘ। তার বাবার নাম পীর মোহাম্মদ। পীর মোহাম্মদ একজন খাজনা আদায়কারী ছিলেন। কোনো এক কারণে তিনি কাজ ছেড়ে দিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে বেদরাবাদ এলাকায় চলে আসেন। আর্থিক কষ্টে তিনি যখন দিশেহারা তখন নিজকুঞ্জরা মৌজার দানশীল ব্যক্তি নাসির মন চৌধুরী তাকে আশ্রয় দেন। সেই বাড়িতেই শমসের গাজী ভূমিষ্ট হন। শমসের গাজীর বাল্যকাল ছিল বৈচিত্র্যময়। অতি অল্প বয়সে তিনি পিতৃহারা হন। অভাবের সংসার সত্ত্বেও বালক শমসের ছিলেন খুবই দুরন্ত স্বভাবের। একদিন মায়ের বকুনি খেয়ে তিনি ফেনী নদীর তীরে বসে কাঁদছিলেন। তখন শুভপুরের তালুকদার জগন্নাথ সেন শমসেরকে দেখতে পান। দয়াপরবশ হয়ে তিনি শমসেরকে শুভপুর নিয়ে যান। শুভপুরের তালুকদারের কোনো সন্তান ছিল না। সেখানে স্নেহ-মমতার মধ্যে বেড়ে উঠতে থাকেন শমসের গাজী। লেখাপড়ার পাশাপাশি কুস্তি, লাঠিখেলা, তীর-ধনুক চালনায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন বিষয়ে হাতে-কলমে তালিম নিতে থাকেন।

জমিদারি লাভ

তালুকদার জগন্নাথ সেনের মৃত্যুর পর যুবক শমসের গাজী শুভপুরের খাজনা আদায় শুরু করেন। শুরু হয় তার উত্থান। সে সময় তিনি চোর ডাকাত ও জলদস্যুদের রুখতে এক শক্তিশালী বাহিনী গড়ে তোলেন। গাজীর এই বাহিনীর সেনাপতি ছিল তার জ্ঞাতি ভাই ছাদু পালোয়ান। ১৭৩৯ সালের দিকে ত্রিপুরার মহারাজের সেনাপতি শমসের গাজীর এলাকায় প্রবেশ করলে সেনাপতি ছাদু পালোয়ানের প্রতিরোধে তারা ধরাশায়ী এবং বন্দি হন। ত্রিপুরার মহারাজ তার সেনাপতির মুক্তির শর্তে গাজী কেদক্ষিণশিকের বৈধ জমিদার হিসেবে স্বীকৃতি দেন। শমসের গাজী ছিলেন প্রজাদরদি। পাহাড়িয়া ঢলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হলে তিনি কৃষকের এক বছরের খাজনা মওকুফ করে দেন এবং পরবর্তী তিন বছর মহারাজের রাজকোষে খাজনা দেয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেন। এতে ত্রিপুরা মহারাজ ক্ষিপ্ত হয়ে প্রায় ৭ হাজার সৈন্য পাঠায় গাজীকে উচ্ছেদ করার জন্য। ফল হয় বিপরীত। শোচনীয় পরাজয়ে প্রাসাদ ছেড়ে জঙ্গলে আত্মগোপন করেন। ত্রিপুরা রাজ্যের বিরাট অংশ শমসের গাজীর করতলে এসে যায়। শমসের গাজীর রাজত্বকালে ত্রিপুরার রাজধানী উদয়পুরেই ছিল। তবে তিনি বেশিরভাগ সময় রঘুনন্দন পাহাড়ের পাদদেশে ফেনী নদীবেষ্টিত জগন্নাথ-সোনাপুরস্থ চম্পকনগরে তার প্রধান কেল্লা ও রাজপ্রাসাদে থাকতেন।

স্মৃতি ও কীর্তির নিদর্শন

কৃষক-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অধিকার করে নেন জমিদারি। প্রজাবিদ্বেষী কর্মকান্ডের বিরোধিতা করে রোষানলের শিকার হন ত্রিপুররাজের। শুরু হয় তুমুল লড়াই। গর্জে ওঠেন ভাটির বাঘ। ভুখানাঙা চাষাভুষাদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধক্ষেত্রে। হীরকডানায় ভর করে যুদ্ধক্ষেত্র দাপিয়ে বেড়ান তেজোদীপ্ত যবন বীর শমসের। শত্রুসেনা বিনাশ করতে করতে হয়ে ওঠেন অবিনাশী যোদ্ধা, অপ্রতিরোধ্য হস্তারক। অধিকার করে নেন রাজ-সিংহাসন। ত্রিপুরা রাজ্য শাসন করেন টানা এক যুগ। তাঁর কাছে কোণঠাসা হয়ে পড়ে ইংরেজ বেনিয়ারা।


ছাগলনাইয়ার চম্পকনগরে ভারতের সীমান্ত এলাকাটি শমসের গাজীর স্মৃতি বিজড়িত স্থান। এখানে রয়েছে শমসের গাজীর সুড়ঙ্গ, শমসের গাজীর দীঘি এবং আরও অনেক কিছু। তবে তার প্রাসাদসহ অন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ ভারতের ত্রিপুরার মধ্যে ভাগ হয়ে রয়ে গেছে। [৩]

নির্মমভাবে হত্যা

১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধের পর মুর্শিদাবাদের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়। বাংলার এমন দুর্যোগ মুহূর্তে স্থানীয় কুচক্রী মহল, ঢাকার নবাবের প্রতিনিধি, ইংরেজ বেনিয়া ও পরাজিত, বিতাড়িত ত্রিপুরার মহারাজ একত্রিত হয় শমসের গাজীর বিরুদ্ধে। শমসের গাজীর দেশপ্রেম ও সাহসিকতা ইংরেজ এবং এ দেশীয় দালাল কুচক্রীদের ভীত করে তুলেছিল। নবাবের নামে মূলত ইংরেজরাই ষড়যন্ত্র করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত বাহিনী এবং যুবরাজ কৃষ্ণমাণিক্যের নেতৃত্বে পাহাড়ী উপজাতীয় যৌথবাহিনী শমসের গাজীর কেল্লা ও উদয়পুরে আক্রমণ চালিয়ে গাজীকে পরাজিত ও আটক করে। তাদের এতটাই আক্রোশ ছিল যে, ত্রিপুরার মহারাজ হাতিসহ হাজার হাজার সৈন্য পাঠিয়ে চম্পকনগরস্থ শমসের গাজীর প্রাসাদ ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে।

শুরু হয় আরেক লড়াই। চম্পকনগর যুদ্ধে পরাজিত হয়ে বন্দী হলেও আবার পালিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। একদিকে তিনি অকুতোভয় বীর, প্রজাদরদি রাজা, বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ, অন্যদিকে মনকাড়া বাঁশিওয়ালা। গভীর রাতে বাঁশির সুর শুনে বেরিয়ে আসেন আত্মগোপন থেকে। অমীমাংসিত থেকে যায় তাঁর মৃত্যু। [৪]

তথ্যসূত্র

Feni ৩০০০ বছরের নোয়াখালী ।

বঙ্গবীর নবাব শমসের গাজী স্মুতি নিদশন তারই অষ্টম বংশদর ও নবাব শমসের গাজী গবেষক এডভোকেট মোঃ আশ্রাফুল আলম চৌধুরী হায়দার এর লিখা


বঙ্গবীর নবাব শমসের গাজী (১৭০৪-১৭৬১ খৃঃ) আজ আমরা যে বীর বাঙ্গালি কথা বলবো তাকে বিভিন্ন ইতিহাস বেত্তা বিভিন্ন ভাবে ইতিহাসে উপস্থাপন করেছেন এই বীরের নাম কম বেশি আমাদের সবার জানা । ১৭৫৭ সালে ব্রিটিশ ঐপনিবেশিক শক্তির আগ্রাসন প্রতিহত করতে গিয়ে মৃত্যু বরণ করেন তিনি ভাটির বাঘ বলে পরিচিত। শমসের গাজী নবাব সিরাজুদ্দৌলার পর তিনিই ঔপনিবেশি শক্তির হাতে প্রথম নিহত হন। বঙ্গবীর শমসের গাজী , ছিলেন একজন ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী। তিনি পীর মুহাম্মদ মতান্তরে পেয়ার মুহাম্মদ খান এর স্ত্রী কৈয়োরা বেগম এর বীর পূত্র । যিনি উত্তর কালে ইতিহাস প্রসিদ্ধ প্রাচিন ত্রিপুরা রাজ্যেরপ্রতাপশালী রাজাকে বুদ্ধে পরাজিত করিয়া উক্ত রাজ্যের সিংহাসন দখন করিয়াছেন। যিনি পরে ভাটির বাঘ নওয়াব শমসের গাজী কারো চোখে তিনি ভাটির বাঘ, পূর্ব বাংলার বীর শার্দুল, কারো চোখে তিনি নিপীড়িত মানুষের বীর নায়ক, সুপ্রকাশ রায়ের চোখে কৃষক বিদ্রহের নেতা ত্রিপুরায় রাজন্য বর্গের ইতি কথা “রাজ মালা” গ্রন্থে তিনি বিদ্রোহী লুটেরা। ডঃ দিনেশসেন,ইতিহাস বিদ আব্দুল করিম এর “চট্টগ্রামে ইসলাম” পুস্তকে আছে শমসের গাজীর কাহিনি। আছে ফেনীর ইতিহাস বাংলার বীর শমসের গাজী, ভাটির বাগ শমসের, স্বাধীনতা (মুক্তি যুদ্ধের তথ্য, দলিল), তিন হাজার বৎসরের নোয়াখালি সহ আরো অনেক ইতিহাস গ্রন্থ আছে শমসের গাজীর কাহিনি। ইতিহাসের এক ক্রান্তি লগ্নের পূর্ব বাংলায় শমসের গাজীর আবির্ভাব তখন নবাবী আমলের সূর্য অস্তমিত প্রায়। দিগন্তে বেনিয়া ইংরেজের জয় নিশান দেখা যাইতেছে। ফেনীর পূর্বে শমসের গাজীর উথ্যান : ১৭৫০-১৭৬১ খৃঃ মতান্তরে ১৭১৫-১৭৬০ খৃঃ এই সময় কাল ত্রিপুরা রাজ্যের জন্য এক ক্রান্তি কাল। এই সময়ে যে কয়জন রাজা ত্রিপুরার সিংহাসনে অধিষ্টিত হয়েছেন তার মধ্যে সর্বশেষ মহারাজ কৃষ্ণমানিক্য ছাড়াআর কেহই রাজ্য শাসনে উপযুক্ত ছিলেন না। রাজা নামধারী এ সকল যোগ্যতাহিন ব্যক্তির সিংহাসন লাভ দারুন ভাবে ত্রিপুরার স্বাধীনতার উপর আঘাত হানে। ঠিক এ সময় শমসের গাজী নামে একঅমিতাতেজা বীর পুরুষের আবির্ভার হয়। অষ্টাদশ শতাব্দির মধ্যভাগে এই বীর বাঙ্গালীর জম্ম ভাটির দেশে বিরাট রাষ্ট্রিক আনোড় সৃষ্টি করিয়াছিল। তিনি নগন্য অবস্থা থেকে এই বিস্তীর্ন রার্জ্যরে অধিকর্তা হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। কিন্তু তারজষ, ক্ষ্যাতি যখন ভাটির দেশ ছাড়িয়া সুরে-বাংলার দিকে দিয়ে প্রক্ষিপ্ত হইতে ছিল তখনি মুর্শিদাবাদের দরবার ষড়ষন্ত্র সেইবিকাশোম্মুখ প্রতিভা কালসাগরে বিনিস হইয়া যায়। বাল্যকালে শমসের এর বীরত্ব : কবি শেখ মনহর রচিত “গাজী নামায়” শমসের গাজীর বাল্যকাল ও যৌবনের কিছু বীরত্বপূর্ণ ঘটনার উল্লেখ আছে। সেই ঘটনা ইতিহাসের অঙ্গ হিসাবে একই সূত্রে গ্রথিত হইয়া ফেনীর ইতিহাসকে করে আরো গৌরবান্নিত। শমসের এর অলৌকিক শক্তি ও বুদ্ধিমত্তা, চিল লোমহর্ষক। তিনি ছিলেন ধার্মিক, অলী-ফকীর ভক্ত । তাই দেখে তৎকালিন নিজামপুরের সামন্ত নরপতি (হিঞ্জুলীর) শাহজাদা খান মোহাম্মদ (দৈহিক শক্তিধর ও প্রতাপশালী নৃপাত) তাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেন। দক্ষিন শিকের জমিদার শমসের গাজী : দক্ষিন শিকের জমিদারীতে শমসের গাজীর “গদা হোসেন নামিয় দরবেশ এর ভবিষ্যত বাণী বাস্তব রূপ পাইতে লাগিল” গাজীর শক্তি ও ক্ষমতা দিন দিন বৃহৎ পাইতেছিল। যৌবনে তিনি যে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন পারিপার্শিক অবস্থায় উহারই প্রতিফলন দেখা যাইতেছে। বর্তমানে পানুয়া ঘাট। তখন জমিদার নাছির উদ্দিনের একটি বন কর ঘাট ছিল। ঐ পথ সে কালে দক্ষিণ শিক ও চট্টগ্রামের যাতায়াতের একমাত্র পথ। পানুয়া ঘাট দিয়ে ডাকাতেরা দক্ষিণশিকে প্রবেশ করত দরিদ্র মানুষের ধন-সম্পদ লুঠ করে ছলে যেত, ডাকাত পাহারার জন্য পানুয়া ঘাটে একটি কেল্লা স্থাপিত হয় এবং সেখানেসবসময় একদল সিপাহি পাহারা মোতায়েন থাকিত ঘটনা ক্রমে একবার ডাকাতের সঙ্গে সংঘর্ষে কেন্নার প্রধান সেনাপতি নিহত হয়। এই অবস্থায় শমসের জমিদারের দেওয়ান যোমনাকে বাধ্য করিয়া কেল্লার প্রধান অধ্যাক্ষ পদে অধিষ্ঠিত হন। একদিন শমসের, জমিদার তনয়া দৈযা বিবির পানি গ্রহণ করিয়া বসিলেন এবং বাছির নামক এক কর্মচারির মাধ্যমে তার বাসনা জমিদারের কাছে পৌচান। জমিদার নাছির মোহাম্মদ ইহা শুনিয়া ক্ষিপ্ত হন। বাছির কোন ভাবে প্রাণে বাছিয়া আসিল ভীত কম্পিত অবস্থায় গাজীর সামনে উপস্থিত হন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করিয়া জমিদার নাছির মোহাম্মদ এর সাথে শমসের যুদ্ধে লিপ্ত হন। শমসের প্রথমে অত্বরক্ষার জন্য যুদ্ধ করলের পরে জমিদার নূর মোঃ ভূইয়ার নিকট হইতে পাঁচশত সন্য নিয়ে যুদ্ধ পরিচারনা করেন ও উক্ত যুদ্ধে শমসের “চন্দ্রবান” নামক এক প্রকার দাহ্য ও বেধক অশ্র ব্যবহার করেন। যুদ্ধে খাসি ও কাসি সহ জমিদার পরিবারের অনেকে প্রাণ হারান। এই যুদ্ধে অসামান্য বিজয়ের পুরস্কার স্বরুপ শমসের গাজী দক্ষিণ শিকের জমিদারীর মালিক হলেন কিন্তু যার জন্য এত যুদ্ধ প্রাণ হানী তার আত্বাহতী গাজীকে শোকাহত করে। মরি জাফর আলী খাঁ তখন বাংলার নবাব। খন্ডল যুদ্ধ : মোহারাজার কর রেযাতের তিন বৎসর শেষ।শমসের পুর্ব শর্ত মোতাবেক কর প্রদানকরিলেনই না। উপরন্তু তিনি যে কোন বিপদের জন্য শক্তি সঞ্চয় করিতে লাগিলেন। তিনি খাসিয়া ও রাঢ়দের কিছু ভাড়াটিয়া সন্য সংগ্রহ করিলেন। বীর শমসের এর জোষ্ট ভ্রাতা গোলাম আলী ত্রিপুরা বন্ধী তাকে উদ্ধারের জন্য ৬০ জন সৈন্য উদয়পুরে প্রেরণ করেন তারা ছদ্ব বেশে রাজ সন্য দলে ভর্তি হয় অতপর গোলাম কে উদ্ধার করে নিয়ে আসে শমসের এখন একজন প্রতাপশালী জমিদার বিপুল ঐশ্বর্য্যরে অধিকারী তার অসংখ্য সৈন্য- সামন্ত। গাজী ভ্রাতার পলায়রে পর গাজী মোহারাজের সঙ্গে যুদ্ধেও ঘোষনা দেন। এই যুদ্ধে শমসের এর সেনা প্রধান অশেষ বিরত্বের পরিচয় দেন। এই সময় কালে ভূলুয়া পরগনা (নোয়াখালী) লাটে এবং গাজী নবাব সরকার হইতে উক্ত পরগনা ইজারা নিয়াছিলেন। * চট্টগ্রামের বিজয় : জনশ্রুতি, পুথি ও গবেষকদের ধারনা মতে “শমসের গাজী নিজামপুরের শামান্ত খান মোহাম্মদ ভূলুয়ার সাহায্যে চট্টগ্রাম অভিজান চালান ও দখল করিয়া নেন। হাবিবুল্লা খাঁ বলেন শমসের ১৭৫২-৫৩সালে চট্টগ্রামের শাষন ক্ষমতায় অধিষ্ঠীত হন। উল্লেখ্য শমসের ত্রিপুরা বিজয়, ভূলুয়া ও মেহেরকুলের অধিপত্য বিস্তার ১৭৫০-৫১ খৃঃ করেন। কুমিরা যুদ্ধ : কৈয়ারা দিখির খনন কাজের মাটিয়ালদের ভোজ-দেওয়ার জন্য শমসের গাজী বিনা অনুমতিতে চট্টগ্রামের বড় বড় দীঘির মাছ ধরে এনেছিলেন। গাজীর এই অচরনে চট্টগ্রামের নবাব আগাবাকের ও নবাব কর্মচারি গাজী হত্যার সিদ্ধান্ত নেন। কৌশলে তারা গাজীকে চট্টগ্রাম আমন্ত্রন জানান প্রাণে মারার জন্য। চট্টগ্রাম পৌঁছে, গাজী খবর পান এবং কৌশলে তার অনুচরবর্গ সহ পিচনে সরিয়া কুমিরা খানের দিকে চলে আসেন।এই জায়গাটি গিরি পথের ন্যায় ও জঙ্গলকীর্ণ ছিল কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি। শেখ আনিছ নবাব বাহিনি নিয়া আগে থেকেই কুমিরা খাল বরাবর গাজীকে ঘিরে ফেলেছে। পেছনে চট্টগ্রাম শহর আগা বাকের তার বাহিনি নিয়ে প্রবল শক্তিতে ধাওয়া করিয়া কমিরায় দিকে আসিতেছে। উপায় না পাইয়া গাজীএকটি টিলায় আত্তগোপন করেন। বিপদগ্রস্ত গাজীর খবর পাইয়া গাজীর অকৃত্রিম বন্ধু নিজামপুরের অধিপতি শাহজাদা খান মোহাম্মদ সৈন্য সামন্ত লইয়া কুমিরার রনাঙ্গনে অবতির্ণ হইলেন। এবং নবাব বাহীনি পরাজিত হন। সেদিন গাজী ও খানের বন্ধুত্বের নতুনদার উম্মোচিত হয়। মোবারক গোনার যুদ্ধ : চট্টগ্রামে ইতিহাসে দেখা যায় শমসের গাজীর দুশমন চট্টগ্রামের শাসন কর্তা আগা বাকের। শমসেরের বিরুদ্ধে এক অভিযানে বাহির হন আগা। বাহির বইয়া দক্ষিন শিকের মোবারক গোনা নামক স্থানে এসে উপস্থিত হন। এই স্থানটি নিজামপুরের উত্তরে ফেনী নদীর তীরে অবস্থিত শমসের সর্ব শক্তিদিয়া নবাব সন্যদের প্রতিহত করে এবংধাওয়া করে ময়নামতি পাহাড় পর্বত চাড়াইয়া নেন। (সূত্রঃ বাকের-সাদেক প্রবন্ধে। নবনূর পত্রিকা-১৯০৫ ইং)। শমসের গাজীর শাসন ব্যবস্থা : শমসের গাজী ছিলেন এক বিচক্ষন কুটুবুদ্ধি সম্পন্ন রাষ্ট্র নায়ক তার শাসন নীতির মৌলিক আদর্শ ছিল “দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন” অত্যাচারিদের তিনি নিজ হাতে শাস্তি দিতেন প্রজা কুলে মঙ্গলই ছিল তারব্রত ধর্মের কোন বৈশম্য ছিলনা যেবর্গি হাঙ্গামায় নবাব আলিবদ্দি খাঁ প্রতিরোধে ব্যর্থ সেখানে শমসের গাজির তিক্ষ তরবারি বর্গী দস্যুদের কবল থেকে মানুষকে রক্ষা করেছে। অভ্যন্তরীন শাসনের নিয়ম কানুন ছিল খুব কড়া কোন ব্যাপারেই ব্যকিত্রম হওয়ার উপায় ছিল না। গাজী ছিলেন একজন জ্ঞান পিপাসু তিনি প্রাসাদেই খুলেছিলেন শিক্ষালয়। তিনি মক্তরের জন্য হাফেজ এনেছেন, যাতে দরিদ্র ছেলে মেয়েরা আরবী শিক্ষা নিতে ধর্মিয় শিক্ষার জন্য তিনি সুদুর দেওবন্দ থেকে এনেছেন মৌলভি, ষুগীদিয়ায় থেকে গুরু মহাসয় ও ফার্সি শিক্ষার জন্য ঢাকা থেকে এনেছেন মুন্সী। শমসের গাজী তারঅধিনস্ত সকল এলাকায় দ্রব্যাদি ক্রয় বিক্রয়ের জন্য মূল্য নির্ধারণ করে দিতেন। ৮২ সিক্কা ওজনের এক সের দ্রব্যের কত মূল্য হইবে তাহার তালিকা প্রত্যেক বাজারে টাঙ্গানো থাকতো। এই নিয়মের ব্যকিক্রম হইলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা ছিল। গাজীর শাসন আমল (১৭৬০-৬১) বর্তমান ফেনীর একখানা দ্রব্য মূল্যে তালিকাঃ-চাউল প্রতিসের ১ পয়সা, লংকা ৯ পয়সা, গুড় ২ পয়সা, লবন ২ পয়সা, পেয়াজ-রশুন ২ পয়সা, ডাল ২ পয়সা, মুগ ২ পয়সা, সরিষার তৈল ৩ আনা, ঘৃত ৪ আনা, মটর ২ আনা, অড়হর ২ পয়সা ও কাসাস তুলা প্রতিসের ১ পয়সা শমসের গাজীর শাসনাধীন পরগনা সমূহ : খন্ডল, জগৎপুর, দক্ষিণশিক, আরামরাবাদ-ফেনী, শিতাকুন্ড-চট্টগ্রাম, তিষ্ণা-চৌদ্দগ্রাম, চৌদ্দগ্রাম, খাঞ্জা নগর, মেহের পুর, বাগা সাইর, পার্টি করা, বলদা খাল, কদবা, নূর নগর, গঙ্গামন্ডল, সরাইল- কুমিল্লা, বিশালগড় সিলেট, আটজঙ্গল সিলেট, ভাটিদেশ ও শ্রীহউ-সিলেট। গাজীর পতন : তীক্ষ কুট বুদ্ধি সম্পন্ন শমসের গাজী, ত্রিপুরার রাজ্য হারা যুবরাজ ত্রিপুরা রাজ্য পূর্ণ উদ্ধারের চেষ্টায় মুর্শিদাবাদের নবারের সরনাপন্ন হন। শমসের ও আগা বাকেরের শক্রতাকে কেন্দ্র করে বাংলা পূর্ব দিগন্তে যে গন্ডোগেলের সূচনা হয় সে সুযোগই ত্রিপুরা রাজ পরিবারের লোকেরা মুশির্দাবাদের নবারের সাহায্য কামনা করে। শমসের নবাব সরকারের বাৎসরিক কর প্রদান অব্যাহত রাখে নবাবকে খুশি রাখার জন্য উপহার সরুপ হাতি প্রেরণ করে মুর্শিদাবাদে। এবং তৎকালিন ঢাকার নায়েব নাজীম হোসাই উদ্দিনের নিকট স্বীয় কণিষ্ঠা কন্যা মনু বিবির বিবাহ দিয়া তাহাদেরকে হাতে রাখেছিলেন। কিন্তু শমসের এর মত এক জন মুসলিম বীরের আকুতি নবারের কর্ণেপ্রবেশ করে নাই। যুবরাজ কৃষ্ণমনি ও ঢাকার নায়েব নাজিম জসারত খাঁরহীন ষড়ষন্ত্রের কবলে পড়িয়া গাজীকে সমুলে ধংস করাই তাদের উচিৎ মনে হইল। নবারের সুসজ্জিত বাহিনি ও ত্রিপুরায় যুবরাজ সম্মিলিত ভাবে দক্ষিণশিক ও ত্রিপুরায় অতর্কিত অভিযান চালায় সম্মিলিত শক্তির কাছে শমসের গাজী শোচনিয়ভাবে পরাজীত হয়। গাজীকে বন্দি করা হয়। বন্দি অবস্থায় প্রথমে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ঢাকার নাজিম জসারত খার বন্দিদশা হইতে শমসের পলায়ন করে। তবে দ্রত জসারত খাঁর হাতে তিনি পুনরায় বন্দি হন। এরপর গাজীকে মুর্শিদাবাদে বেশ কিছুদিন বন্ধি করে রাখা হয়। জনশ্রুতি আছে যে আগা বাকের ও জসারত খাঁ গৃন্য চক্রান্তে শমসের গাজী মুর্শিদাবাদ হইতে রংপুর আসার পথে গোড়ারঘাটে নিহত হন। সেখান দৈহিক নিযাতনের মাধ্যমে মতান্তরে তোপের মুখে প্রাণ হারান (১৭৬১ খৃঃ) একই ঘটনায় ঢাকা তদান্নীত নায়েব নাজিম এবং শমসের গাজীর জামাতা হোসাইন উদ্দিনকে ও হত্যা করা হয়।

  1. হীরকডানা
  2. দৈনিক সংগ্রাম
  3. সাপ্তাহিক
  4. http://www.shaptahik.com/v2/?DetailsId=382 সাপ্তাহিক