অষ্টক গীত ও নৃত্য: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Ashiq Shawon (আলোচনা | অবদান)
Ashiq Shawon (আলোচনা | অবদান)
১৩ নং লাইন: ১৩ নং লাইন:
বিভিন্ন অঞ্চলে একে বিভিন্ন নামে চিহ্নিত করা হয়; যেমনঃ ওপার বাংলার মুর্শিদাবাদ ও মালদহ অঞ্চলে “অষ্টকগান” নামে, এপার বাংলার বৃহত্তর কুষ্টিয়া অঞ্চলে ‘‘অষ্টগান’’ নামে, ফরিদপুর / বরিশাল অঞ্চলে “অষ্টক গীত / নৃত্য” নামে এটি পরিচিত।<br />
বিভিন্ন অঞ্চলে একে বিভিন্ন নামে চিহ্নিত করা হয়; যেমনঃ ওপার বাংলার মুর্শিদাবাদ ও মালদহ অঞ্চলে “অষ্টকগান” নামে, এপার বাংলার বৃহত্তর কুষ্টিয়া অঞ্চলে ‘‘অষ্টগান’’ নামে, ফরিদপুর / বরিশাল অঞ্চলে “অষ্টক গীত / নৃত্য” নামে এটি পরিচিত।<br />




==শ্রোতা-দের শ্রেণী==
অষ্টক গীত / নৃত্য সাধারণত নিম্নবর্ণের সনাতন ধর্মাবলম্বী ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী যেমনঃ দাস, নমশুদ্র, ঘরামি, জেলে, জোলা ও রাজবংশীরা পালন ও উপভোগ করে থাকে। যেহেতু এটি সাধারণতঃ বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘুরে পরিবেশন করা হয়; তাই এখানে গ্রামের গৃহবধু থেকে শুরু করে তার কোলের শিশুটি পর্যন্ত সকলেই দর্শক-শ্রোতা হিসেবে উপস্থিত থাকেন।
<br />


==প্রচলিত অঞ্চল-সমূহ==
==প্রচলিত অঞ্চল-সমূহ==

১৫:৫৭, ১৬ অক্টোবর ২০১২ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

বাংলার লোকজ উৎসবের অন্যতম প্রধান ধারা “গাজন”-এর শাখা “নীলের / শিবের গাজন” উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষতঃ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে জমে উঠা লোকজ মেলায় যা চৈত্রের শেষ-তিন দিন বিভিন্ন ধরনের গান ও আচার-অনুষ্ঠানাদি পালনের মাধ্যমে সমাপ্ত করা হয় তার অন্যতম প্রধান অনুষ্ঠান হলো অষ্টক গীত ও নৃত্য

সাধারণ ধারণা

চিরায়ত বাঙালির সংস্কৃতিতে ধর্ম এবং কর্ম – এই দু’য়েরই রয়েছে সমান অংশগ্রহণ। এদেশের কৃষিজ উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে আমরা দেখতে পাই নৃত্য-গীতের দ্বারা চলে ঈশ্বর আর অবতারদের তুষ্ট করার নিরন্তন প্রক্রিয়া। বাংলা ষড়ঋতুর পরিক্রমায় বসন্তের শেষ ভাগে ও গ্রীস্মের পূর্ব-ভাগে অনুষ্ঠিত হয় গ্রামীন জনপদের অন্যতম প্রধান লোকজ-উৎসব “চৈত্র-সংক্রান্তী”। এসময়ই মূলতঃ বাংলার লোকজ উৎসবের অন্যতম প্রধান ধারা “গাজন”-এর শাখা “নীলের / শিবের গাজন” অনুষ্ঠিত হয় এবং এই উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষতঃ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে জমে উঠে এক-ধরনের লোকজ মেলার যা চৈত্রের শেষ-তিন দিন বিভিন্ন ধরনের গান ও আচার-অনুষ্ঠানাদি পালনের মাধ্যমে সমাপ্ত করা হয়। আর এ-সময় এ অঞ্চলের কৃষিজীবী মানুষ তাদের চলমান ঐতিহ্য অনুসারে পরিবেশন করে থাকে অষ্টক গীত / নৃত্যের।

বাংলাদেশের ও পশ্চিমবঙ্গের পূর্বাংশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজ সংস্কৃতির অন্যতম একটি প্রধান উপাদান হলো এই অষ্টক গীত / নৃত্যের পরিবেশনা; যা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান অবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তার প্রেয়সী শ্রীরাধিকা দেবীর প্রণয়-লীলার পটভূমিতে রচিত। এটি এ-অঞ্চলের অধিবাসীদের অন্যতম প্রধান লোকজ উৎসব “চৈত্র-সংক্রান্তী”-এর সাথেই মূলতঃ সম্পর্কিত তবে এটি শিবের স্থলে রাধা-কৃষ্ণের প্রেম-লীলা বিষয়ক আখ্যান ও লোকপুরাণ অবলম্বনে পরিবেশিত হয়ে থাকে। এর পরিবেশনাতে গ্রামের ছোট ছোট ছেলে-ছোকরারা শ্রীকৃষ্ণ, শ্রীরাধিকা দেবী ও রাধার সখী গোপীদের সাজ সেজে দুই দলে বিভক্ত হয়ে গান ও নাচ সহযোগে সাধারণতঃ রাধা-কৃষ্ণের “নৌকা-বিলাস” পালা অভিনয় করে থাকে।

“চৈত্র-সংক্রান্তী” উৎসবের কয়েকদিন পূর্ব হতে গ্রামের বিভিন্ন বাড়ির সামনে একদল শিল্পী গানের মাধ্যমে অনুষ্ঠান আয়োজনের লক্ষ্যে অর্থ সংগ্রহ করে; যেখানেও আমরা অন্যান্য বিভিন্ন ধরণের গীত / নৃত্যের পরিবেশনার মধ্যে কখনো কখনো অষ্টক গীত / নৃত্য-এর পরিবেশনা দেখতে পাই। আর এক্ষেত্রে বিষয়-বস্তু হিসেবে থাকে শিব, রাধা-কৃষ্ণ, নিমাই সন্ন্যাসী, গৌরী, বক্ষ্রা, বিষ্ণু, চন্ডিদাস-রজকিনী, বেহুলা-লখিন্দর এই অষ্ট-প্রসঙ্গ।

উৎপত্তি ও নামকরণ

ঠিক কি কারণে বা কোথা থেকে “অষ্টক” নামক গীত / নৃত্যের উদ্ভব ঘটেছে সে সম্পর্কে সঠিকভাবে কোনো তথ্য-বৃত্তান্ত জানা যায় না; বরং এই বিষয়ে নান-ধরনের মতামত প্রচলিত রয়েছে। কেউ বলেন, “এতে আটটি বৈষ্ণবীয় প্রসঙ্গ থাকায়”; কেউ বলেন, “প্রতি দলে আট জনে মিলে রাধা-কৃষ্ণের উক্তি-প্রত্যুক্তিমূলক নাট্যধর্মী গীত পরিবেশন করায়”; কারো মতে, “এটি শ্রীকৃষ্ণের অষ্টপ্রহরের লীলা-সংক্রান্ত নাট্যগীতি হওয়ায়”- একে “অষ্টক গীত / নৃত্য” বলা হয়। আবার এ সম্পর্কে কোন কোন গবেষকের মতে, “এ-সব গানে সনাতন ধর্মীদের অষ্ট-অবতার রাধা, কৃষ্ণ, সুবল, বিশাখা, ললিতা, বৃন্দা, বড়িমাই ও বলরাম-এর বিভিন্ন কার্য-চরিত্রের সমন্বয় ঘটেছে বলে এটি অষ্টক গীত / নৃত্য বলে পরিচিত”; বিপরীতে অপর একদল বলেন, “অবতার শ্রীকৃষ্ণ তার অষ্ট বা আটজন সখীকে নিয়ে লীলা করতেন এবং এ-গানে সেই উপাখ্যান আলোচিত হয় বলে একে অষ্টক গীত / নৃত্য বলে”। অন্য-দিকে, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, এই গীত / নৃত্যে “বাসলী দেবী”-এর বন্দনাও রয়েছে, যা মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম নিদর্শন বড়ু চন্ডীদাস রচিত “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন” কাব্যের ভণিতায়ও লক্ষ্যণীয়; তাই বলা যায় উৎস যা-ই হোক না কেন, লোক-সংস্কৃতির এই ধারাটি সুদূর প্রাচীন কাল হতে এদেশের লোক-মানসের সাথে প্রচলিত প্রথার একটি অংশ হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে।

বিভিন্ন অঞ্চলে একে বিভিন্ন নামে চিহ্নিত করা হয়; যেমনঃ ওপার বাংলার মুর্শিদাবাদ ও মালদহ অঞ্চলে “অষ্টকগান” নামে, এপার বাংলার বৃহত্তর কুষ্টিয়া অঞ্চলে ‘‘অষ্টগান’’ নামে, ফরিদপুর / বরিশাল অঞ্চলে “অষ্টক গীত / নৃত্য” নামে এটি পরিচিত।


শ্রোতা-দের শ্রেণী

অষ্টক গীত / নৃত্য সাধারণত নিম্নবর্ণের সনাতন ধর্মাবলম্বী ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী যেমনঃ দাস, নমশুদ্র, ঘরামি, জেলে, জোলা ও রাজবংশীরা পালন ও উপভোগ করে থাকে। যেহেতু এটি সাধারণতঃ বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘুরে পরিবেশন করা হয়; তাই এখানে গ্রামের গৃহবধু থেকে শুরু করে তার কোলের শিশুটি পর্যন্ত সকলেই দর্শক-শ্রোতা হিসেবে উপস্থিত থাকেন।

প্রচলিত অঞ্চল-সমূহ

দেশ বিভাগের পর সনাতন ধর্মীদের একটি বড় অংশ ওপার বাংলায় চলে যাওয়ায় তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের সাথে সম্পর্কিত লোকজ উৎসবগুলোও ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে। অষ্টক গীত / নৃত্য বর্তমানে ওপার বাংলার মুর্শিদাবাদ এবং মালদহ জেলার অন্যতম প্রধান লোকজ উৎসব হলেও আমাদের দেশের কেবলমাত্র নিম্নবর্ণের সনাতন ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত অঞ্চলেই এর প্রসার লক্ষ্য করা যায়। বর্তমানে এদেশের বৃহত্তর খুলনা, যশোহর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর ও বরিশাল অঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে অষ্টক গীত / নৃত্যের প্রচলন রয়েছে।

শিল্পী-দের কথা

অষ্টক গীত ও নৃত্য এদেশের অস্তায়মান লোকজ উৎসবের একটি অন্যতম প্রধান উপাদান; অতীতে এর পরিবেশক কয়েকজন প্রখ্যাত শিল্পী থাকলেও বর্তমানে এদের প্রচার ও প্রসার বলতে গেলে প্রায় শূণ্যের কৌঠায়। বাংলাদেশে অষ্টক গীত ও নৃত্যের স্বনাম-ধন্য কিছু শিল্পীর মধ্যে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা থানার বালিয়াঘাট গ্রামের স্বরূপ চন্দ্র বিশ্বাস, নিরাপদ বিশ্বাস এবং বিষ্ণুপদ মণ্ডল; নড়াইলের বাহিরডাঙা গ্রামের স্বভাবকবি বিপিন সরকার, ভাদুলিডাঙা গ্রামের সুবোধ বিশ্বাস অন্যতম। বর্তমানে যেসব দলের নাম আলোচিত হয়ে থাকে তাদের মধ্যে রয়েছে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপার রঞ্জিত কুমার বিশ্বাস-এর, নড়াইল জেলার ভাদুলিডাঙা গ্রামের সুবোধ বিশ্বাস-এর, কুষ্টিয়া জেলার মিরপুরের হোসেন আলী-এর, নড়াইল জেলার হাতিয়ারার নিখিল গোস্বামী-এর এবং বাহিরডাঙা গ্রামের বিপিন সরকার-এর অষ্টক গীত ও নৃত্যের দল।

যদিও সনাতন ধর্মানুসারী জনসাধারণ তাদের অন্যতম-প্রধান লোকজ উৎসব “চৈত্র-সংক্রান্তি”-তে অষ্টক গীত ও নৃত্য পরিবেশন করে থাকেন, কিন্তু ক্ষেত্র-বিশেষ তাদের পরিবেশনায় মুসলমান দু’একজন বাদ্যকর / কুশীলবকে অংশ নিতে দেখা যায়। এখানে উল্লেখ্য যে, ২০০০ সালের দিকে কুষ্টিয়া জেলার কিছু অঞ্চলে অষ্টক গীত ও নৃত্যের পরিবেশক কয়েকটি মুসলমান দলের উদ্ভব ঘটেছে যারা বিভিন্ন পালা-পার্বনে অষ্টক গীত ও নৃত্য পরিবেশন করে।